বন্যা
উপকূলে অশনিসংকেত: কয়রায় অসময়েও ভাঙছে বাঁধ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নদী ভাঙনে প্রতি বছর প্লাবিত হওয়া খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে কয়রার মানুষ চরম আতঙ্কে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, জোয়ার-ভাটার তীব্রতা এবং নদীর গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা উপকূলীয় এই অঞ্চলের প্লাবন-ঝুঁকিও বাড়ছে।
এদিকে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন আশার আলো জাগালেও কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মেগা প্রকল্পে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার পরও অবৈধভাবে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে তা বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এ ছাড়া গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে নদী চরের সবুজ বনায়ন। যার ফলে বাঁধের স্থায়িত্ব কমছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, গেল শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দোশহালিয়া থেকে হোগলার মধ্যকার একটি অংশের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয়রা সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করেন। এ ছাড়া নদীতে পানির চাপ ও কোনো প্রকার ঝড়ো বাতাস ছাড়াই গত ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ করে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ধসে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বাঁধটির বিশাল অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে প্লাবিত হয় সংলগ্ন এলাকা। পরের দিন ভাটার সময় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হলেও তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত ১১টার পর থেকেই নদীর পাড়ের মাটি সরে যাওয়ার অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে সেখানে গিয়ে দেখেন, বাঁধের বড় বড় খণ্ড নদীতে ধসে পড়ে ২০০ মিটারের মতো বাঁধ ভেঙে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের স্থায়ী সংস্কার এবং নদী খননে অবহেলার কারণে এই অঞ্চলে ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ধানচর, শামুকপোতা, কুতুবেরচর, গাবতলা ও খোলপেটুয়া পাড়ের বেশ কয়েকটি এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মাটিয়াভাঙ্গার বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ সেদিন রাতের ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘চোখের সামনে দিয়ে বাঁধটা নদীতে চইলে গেল। মনে হচ্ছিল, আজই বুঝি সব শেষ; বাড়িঘর সবকিছুই বুঝি তলাই যাবেনে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ‘প্রতিদিনই নদী এগিয়ে আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে তিনটি বাড়ি নদীতে চলে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে জরার্জীণ থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
মাটিয়াভাঙ্গা বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশটি মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুই বছর যাবৎ বিভিন্ন প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও তাতে রয়েছে চরম ধীরগতি। মাটিয়াডাঙ্গার ওই অংশটি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় থাকলেও সংস্কারে গুরুত্ব দেননি ঠিকাদার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৪/১ ও ১৩–১৪/২) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চরবনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গার ভাঙনকবলিত এলাকাটিও এই প্রকল্পের অংশ।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘সুন্দরবনঘেঁষা আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনার পাশে থাকা এ বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা গিয়েছিল। বিষয়টি আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ তার ভাষ্যে, ‘অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারা কাজ করা হয়েছিল তখন। তাই গতরাতে আগের ফাটলটা হঠাৎ বড় রূপ নিয়ে ধসে গেছে।’
রাতে গ্রামবাসী ও পাউবো মিলে বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে এলাকা প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নদীর ভাঙন ঠেকাতে রিং বাঁধ কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, রিং বাঁধের স্থায়িত্ব খুব স্বল্প। যেকোনো মূহুর্তে সেটি ভেঙে যেতে পারে। দ্রুত যদি মূল বাঁধ সংস্কার করা না হয়, তাহলে ধ্বসের পরিধি আরও বাড়তে পারে।
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেখানে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে, তার আশপাশ থেকেই বালু উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া নদীর চর থেকে মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে নদীর চরের গাছ কেটে বনায়ন নষ্ট করা হচ্ছে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাগরিক সমাজের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ সালের ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রত্যেক বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো না কোনো এলাকা ভেঙে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে এলাকা প্লাবিত হাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলেও শীত মৌসুমে প্লাবিত হলো। শীতকালে এমন ভাঙন এর আগে কখনো দেখিনি।
‘আমাদের প্রাণের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে সরকার বরাদ্দ দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু বরাদ্দের সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
বিষয়টি কি শুধুই প্রকৃতির তাণ্ডব, নাকি বাঁধের কাঠামোগত দুর্বলতাও—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর মাটিয়াডাঙ্গা এলাকার মেগা প্রকল্পের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে পাউবোর সাতক্ষীরা–২ বিভাগ। ওই বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, ‘কাজ চলমান অবস্থায়ই বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি। সকাল থেকে জোরেসোরে আমাদের বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’
৭ দিন আগে
শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১৩২, এখনও নিখোঁজ ১৭৬
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’র কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ১৭৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
দক্ষিণ এশীয় এই দ্বীপদেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র স্থানীয় সময় শনিবার (২৯ নভেম্বর) রাতে জানায়, দুর্যোগকবলিত হয়ে প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, রাতের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বহু এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা এখনো পৌঁছাতে পারেনি।
গত সপ্তাহ থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও সড়ক প্লাবিত হয় এবং চা বাগান-প্রধান মধ্যাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমিধস শুরু হয়। দুর্যোগের কারণে সরকার স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করে; স্থগিত করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা।
১৭ দিন আগে
শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১২৩, নিখোঁজ আরও ১৩০
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’র কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত ১৩০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
দক্ষিণ এশীয় এই দ্বীপদেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকেন্দ্র শনিবার (২৯ নভেম্বর) জানায়, দুর্যোগকবলিত হয়ে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, রাতের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বহু এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা এখনো পৌঁছাতে পারেনি।
গত সপ্তাহ থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও সড়ক প্লাবিত হয় এবং চা বাগান-প্রধান মধ্যাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমিধস শুরু হয়। দুর্যোগের কারণে সরকার স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করে; স্থগিত করা হয় বিভিন্ন পরীক্ষা।
১৮ দিন আগে
শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে নিহত বেড়ে ৩১
শ্রীলঙ্কায় গত সপ্তাহ থেকে টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যায় নিহত বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। দুর্যোগের কারণে দেশটির বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানায়, নিহতদের মধ্যে ১৮ জনই রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পূর্বে কেন্দ্রীয় প্রদেশের চা বাগান এলাকা বাদুল্লা ও নুয়ারা ইলিয়ায় ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন। ভূমিধসের কারণে এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলে আরও অন্তত ১৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও সড়কে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে অনেক জলাশয় ও নদী প্লাবিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে। প্লাবনের ফলে কিছু প্রাদেশিক সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে পাথর, কাদামাটি ও গাছপালা রেললাইনের ওপর পড়ায় সেখানে ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। স্থানীয় টেলিভিশনে দেখা গেছে, শ্রমিকরা লাইনের ওপর জমে থাকা মাটি-পাথরের স্তুপ সরানোর চেষ্টা করছেন। কিছু এলাকায় বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে গেছে।
আরও দেখা যায়, নৌবাহিনীর যানবাহনে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কলম্বো থেকে প্রায় ৪১২ কিলোমিটার পূর্বে আম্পারা শহরের কাছে বন্যার স্রোতে একটি গাড়ি ভেসে যাচ্ছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানায়, গভীর নিম্নচাপজনিত এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় ৪ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০ দিন আগে
ফুঁসছে তিস্তা, উত্তরাঞ্চলের কৃষকের মনে ফের বন্যা আতঙ্ক
উত্তরাঞ্চলে আবারও ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আজ রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ডালিয়া পয়েন্টে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ১৩ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় যেকোনো সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ কারণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি আরও বাড়বে। এতে লালমনিরহাটসহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
৯৪ দিন আগে
তিন বছরেও সংস্কার হয়নি জগন্নাথপুরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সড়ক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ কিলোমিটার সড়ক এখনো সংস্কার হয়নি। শুধু ২০২২ সালের বন্যায়ই উপজেলার ছোটবড় গুরুত্বপূর্ণ ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার প্রায় ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে সংস্কারকাজ শুরু হলেও ৭০ কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এখনো সংস্কারের অনুমোদন হয়নি।
এরই মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি সেতুর টেন্ডার হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জানা গেছে। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন ও জনসাধারণকে চরম ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
২০২২ সালের বন্যায় কলকলিয়া ইউনিয়নের কলকলিয়া-তেলিকোনা (চণ্ডীঢহর) সাদিপুর পয়েন্টসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আছিমপুর-শিবগঞ্জ সড়ক, জালালপুর সড়ক, রানীগঞ্জ-বাগময়না সড়ক, শ্রীরামশী-নয়াবন্দর সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কসহ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক।
এলজিইডির বেশিরভাগ সড়কেই খানাখন্দ থাকায় সেগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী পড়ছে। এ ছাড়াও ইটের কার্পেটিং করা এবং মাটির রাস্তার অধিকাংশ ভাঙাচোরা। বর্ষার মৌসুমে এসব সড়কপথে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় জনসাধারণকে।
কলকলিয়ার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিগত তিন বছর ধরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর একটিও সংস্কার করা হয়নি। এর মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা মারাত্মক। ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়, বাধ্য হয়েই আমরা চলাচল করি।’
আরও পড়ুন: রংপুরে মহাসড়ক সংস্কারে অনিয়ম ধরল সেনাবাহিনী
মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসী গ্রামের মো. হাসন আলী বলেন, ‘বছরের পর বছর যায়, শুধু শোনা যায় যে ভাঙা সড়কের টেন্ডার হইছে, কিন্তু পরবর্তীতে আর কাজ হয় না। মেঘবৃষ্টির দিন ভাঙা সড়কের গর্তে পানি জমে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’
রানীগঞ্জের বাগময়না গ্রামের মো. আলমগীর মিয়া বলেন, ‘আমাদের একমাত্র সড়কটি বন্যায় বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তবু একবারও সংস্থার করা হয়নি। অনেক কষ্ট করে যানবাহনে আমাদের চলাচল করতে হয়।’
উপজেলার ভুক্তভোগী জনসাধারণের দাবি, আগামী বর্ষার মৌসুম আসার আগেই যেন ভাঙা সড়কগুলোর সংস্কার করা হয়।
জনসাধারণের ভোগান্তির এসব বর্ণনায় সমর্থন দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
এ বিষয়ে রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় রানীগঞ্জ ইউনিয়নের অনেকগুলো রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ভাটি অঞ্চলের সঙ্গে একমাত্র রানীগঞ্জের যোগাযোগ রাস্তা বাগময়া-হলিকোনা সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ ছাড়া আছিমপুর হয়ে শিবগঞ্জ রাস্তাটিরও একই অবস্থা। এমন অসংখ্য সড়ক সংস্কারের অভাবে মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে।’
পাইলগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নজম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় উপজেলার সঙ্গে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে নিয়মিত ভোগান্তি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, পাইলগাঁও ইউনিয়নে এলজিইডির বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। সেগুলোর সংস্কার প্রয়োজন হলেও এখনো তা করা হয়নি।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালে জগন্নাথপুর উপজেলায় প্রায় ৮৫ কিলোমিটার সড়ক ও কয়েকটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বছরই এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে সংস্কারের জন্য সদরদপ্তরে পাঠাই যাতে দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সিলেট বিভাগসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যায় সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সবকটি জেলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রকল্প চালু করতে করতে ২০২৩ সাল চলে আসে। এর মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলায় ৯টি সেতু ও কিছু সড়ক সংস্কারের অনুমোদন পায়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্যেই ২০২৪ সালের বন্যা চলে আসে। বন্যার কারণে সড়কগুলোর সংস্কারকাজ আমরা পুরোদমে শুরু করতে পারিনি।’
আরও পড়ুন: সড়ক ও সেতুর পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও শেখ মইনউদ্দিন
তিনি জানান, ২০২৫ সালে বেশ কিছু সংস্কার কাজ অনুমোদিত হয়ে এসেছে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। পৌরসভাসহ উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নে ২ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর-শিবগঞ্জ সড়কে ২.৫ কিলোমিটার, জগন্নাথপুর-কেশবপুর হয়ে এড়ালিয়া বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, এড়ালিয়া থেকে লামা রসুলপুর পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের টেন্ডার ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে।
এই প্রকৌশলী বলেন, ‘এভাবেই আমাদের বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সেতুগুলোর টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং টিকাকারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার বর্ষার আগে কাজ শুরু করতে না পারলেও বর্ষার পরপরই কাজ শুরু হবে।’
১৩৬ দিন আগে
মেরামত হয়নি বেড়িবাঁধ, বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে ফেনীবাসী
ফেনীর তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো সেসব বাঁধ মেরামত করা হয়নি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পার না হতেই বন্যায় আবারও বাঁধ ভাঙায় আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।
আকাশে মেঘ জমলেই আতঙ্ক দেখা দেয় ফেনীর নদীতীরের বাসিন্দাদের মনে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই এ বছর আবারও বৈরী আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। সাগরে নিম্নচাপ বা টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দেখলেই কপালে পড়ছে শঙ্কার ভাঁজ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ফেনীতে গত শনিবার থেকে দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ভারী বৃষ্টির কারণে শহরের বেশ কিছু নিচু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
অপরদিকে, গত ২০ জুলাই বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করলেও নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধ মেরামত করতে না পারায় গত ২১ জুলাই ভারতের উজানের পানির চাপে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে চিথলিয়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়।
টেকসই বাঁধ নির্মাণসহ ৮ দফা দাবিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অভিমুখে পদযাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মহিপাল পানি উন্নয়ন বোর্ড অভিমুখে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করে বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে মানববন্ধন করে যাচ্ছে। সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত ও ফেনী প্রবাসী উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতায় এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে, পরশুরামে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ৫৬টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এরই মধ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে আবারও নদীর পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, বেড়িবাঁধে ভাঙন
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বার্তা অনুযায়ী, দেশের বেশ কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। টানা বৃষ্টি হলে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি আবারও বেড়ে যাবে।
গত ৮ জুলাই ভয়াবহ বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৪২টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ওইসব স্থান দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ; ক্ষতি হয়েছে ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিতে স্থানীয় আবু তালেব রিপন বলেন, ‘বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থানগুলো এখনো মেরামত হয়নি। বৃষ্টি বেড়ি গেলেই ভাঙনকবলিত বাসিন্দারা আবারও বন্যার কবলে পড়বেন। তাই বাঁধ-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন।’
পরশুরামের নিজ কালিকাপুরের বাসিন্দা শফিক আহম্মদ বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় সব হারিয়েছি। বাশেঁর বেড়ার ঘরে জোড়াতালি দিয়ে বসবাস করছি। রাত এলেই ভয়ে থাকি, কখন পানি এসে আবার সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধের যে স্থান দিয়ে পানি ঢুকেছিল সেই বাঁধটির কাজ এখনো হয়নি। ভারি বৃষ্টি হলেই সেখান দিয়ে পানি ঢুকবে।’
ফুলগাজী উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘গত বছরের বন্যা আতঙ্কের কারণে বৃষ্টির শুরু হওয়ায় স্থানীয় লোকজন বন্যার আশঙ্কায় রাত জেগে ঘরের সামনে বসে থাকে।’
পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের গত ৮ জুলাইয়ের বন্যায় বসতঘর হারানো মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশে মেঘ জমলে শরীরে কাপন শুরু হয়। নদীর পাড়ে ভাঙ্গা স্থানে গিয়ে বসে থাকি, কখন আবার পানি লোকালয়ে ঢুকে আবারও নিঃস্ব করে দিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় প্রতিটি রাত আতঙ্কে কাটতে হয়।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার দি নিউ ট্রেড লিংকের স্বত্ত্বাধিকারী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পরশুরামের পশ্চিম অলকা গ্রামের মুহুরী নদীর ৮০ মিটার ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হয়েছিল। রাতে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে গিয়ে মাটি খনন যন্ত্রসহ মেরামত শ্রমিকদের বিভিন্ন সরঞ্জাম পানির স্রোতে নিয়ে যায়। পানি কমে গেলে আবারও বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হবে।’
আরও পড়ুন: নিম্নচাপ: পটুয়াখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘চলতি বছরের ৮ জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় পরশুরামের ১৫টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু গত ২০ জুলাই দ্বিতীয় দফা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নদীর পানি কমে গেলে আবার মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
১৩৭ দিন আগে
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, ধুবনি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ধুবনি এলাকায় একটি পুরনো বাঁধ ভেঙে গেছে, ফলে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।’
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টায় হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই পানি বাড়তে থাকে এবং বিকেলের দিকে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে দ্রুতগতিতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে লোকালয়ে। বর্তমানে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নদীপাড়ের মানুষ ও পাউবো জানায়, কয়েক দিন ধরে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় উজান থেকে আসছে পানি। ফলে তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা অতিক্রম করে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বাড়ছে, দেখা দিতে পারে বন্যার আশঙ্কা
গাতকাল রাত ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার। ডুবে গেছে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ।
১৪০ দিন আগে
বন্যায় বারবার ভেসে যায় স্বপ্ন, টেকসই বাঁধ চায় ফেনীবাসী
বর্ষা শুরু হতে না হতেই বন্যার আশঙ্কা উদয় হয় ফেনীবাসীর মনে। বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ এই জেলায় যেন এক পরিচিত পুনরাবৃত্তি, বছর বছর ফিরে আসে একই দুর্যোগ, আর থেকে যায় দগদগে ক্ষত। প্রশ্ন ওঠে, টেকসই বাঁধ নির্মাণ কি হবে না? ফেনীবাসী কি রক্ষা পাবে না বন্যার ভয়াবহ থাবা থেকে?
শনিবার (১২ জুলাই) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান। সে সময় স্থানীয়রা টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য তার কাছে দাবি জানান। জবাবে ফেনীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৩৪০ কোটির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ভারতের উজান থেকে নেমে আসা বাঁধভাঙা পানি পরশুরাম ও ফুলগাজী থেকে গড়িয়ে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভেঙে ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর অন্তত ৩৪ হাজার ৬০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের আংশিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। বন্যার্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের বিপদ আরও বেড়েছে।
এখন ধীরে ধীরে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে, আর ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। পরশুরামে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ধসে পড়েছে। ফুলগাজীতে পানিতে ডুবে পচে গেছে রোপা আমন ধান। আবার কারো ধান বালুর স্তুপে ঢেকে গেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো কৃষক।
আক্ষেপ করে ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকার বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম জানান, বছর না ঘুরতেই আবারও পানিতে ডুবতে হয়েছে। সব জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলে জুলাই-আগস্ট মাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সবমিলিয়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এখানে জন্মগ্রহণ করে ভুল করেছি।
শুধু রেজিয়াই নন, বারবার একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জেলার উত্তরের ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লাখো মানুষকে। এবারও তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ স্থানে ভাঙন, ৩৫ গ্রাম প্লাবিত
ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা আলী আজ্জম বলেন, বাঁধের ভাঙন স্থানে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকছে। সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গত বছরের বন্যার মতো এবারও বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও আমাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না।
গাইনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পিতা রাণী বলেন, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির সংকটে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের জন্য প্রতি বছর এ জনপদে ভাঙন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখন টেকসই বাঁধই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একমাত্র সমাধান।
১৫৭ দিন আগে
বন্যার পর ফেনীতে সাপ আতঙ্ক, গৃহবধূর মৃত্যু
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় সাপের কামড়ে নারীর মৃত্যু
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
১৫৮ দিন আগে