সোমবার রাতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করেন স্ত্রী সামিরা আক্তার। সামিরার সাথে তার বাবা আলী হোসেনও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
খুন হওয়া আবদুর রহমান (৫২) চকপাড়ার পাশের গাজীপুর গ্রামের নাসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি জমি কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন।
মঙ্গলবার র্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলার শ্রীপুর পৌর সভার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকায় তিন তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে রহমানের ঝলসানো অবস্থায় গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে ঘুমের মধ্যে গলাকেটে হত্যা করে এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দিয়ে মরদেহ ঘরের ভেতরে ফেলে রাখা হয়। কয়েকদিনে মরদেহটি পচে দুর্গন্ধ বের হলে এলাকাবাসির খবরের ভিত্তিতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
নিহত আবদুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ ঘটনায় সামিরা, সামিরার বাবা ও মাকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ হত্যা মামলার মূল আসামি শ্রীপুর থানার চকপাড়া এলাকার সামিরা আক্তার ও তার বাবা মোহাম্মদ আলী হোসেনকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
সামিরার বরাত দিয়ে র্যাব আরও জানায়, সামিরা ছিলেন আবদুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী। আবদুর রহমান ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী। দুইজনের বয়সের পার্থক্য ছিল ২২ বছর।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বামী রহমান ব্যবসায়ীক পাটনার রতনকে বাসায় নিয়ে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করেন। রাত ১১টার দিকে রতন চলে যান। ভোর ৩টার দিকে তিনি ঘরে থাকা দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় রহমানকে গলাকেটে খুন করেন। পরে মরদেহ তোশকে মুড়িয়ে রাখেন। মরদেহ যাতে চেনা না যায়, সেজন্য এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেন। মরদেহটি অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে তিন দিন ফ্ল্যাটেই অবস্থান করেন সামিরা।
পরে তিনি পালিয়ে প্রথমে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়ী এলাকায় এক বান্ধবীর বাসায় দুই দিন আত্মগোপন করেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে পালিয়ে মামার বাসা নওগাঁ এবং গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন।
র্যাব জানায়, ২০১৬ সালে আবদুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে ওঠেন। একই গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে সামিরা ও রহমান ছিলেন পূর্ব পরিচিত। ওই বছর সামিরা টঙ্গী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
পূর্ব পরিচয় সূত্রে তিনি রহমানের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতেন। রহমান তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে স্ত্রীর অবর্তমানে কৌশলে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে টঙ্গীর বাসায় ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন রহমান। পরবর্তীতে ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে রহমান দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেন। তারপর থেকে সামিরা শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবদুর রহমান তাকে বিয়ে করে শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করতেন।
বিয়ের পর থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত রহমান কখনও ব্যবসায়ীক স্বার্থে, আবার কখনও বিপুল পরিমান টাকার বিনিময়ে তার পাটনারদের সাথে তাকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন। না করলে নির্যাতন করতেন। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রহমানের কাছে ডিভোর্স চান তিনি। এতে উল্টো তাকে এবং তার মা-ভাইকে খুনের হুমকি দেন রহমান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আবদুর রহমানের ওপর প্রতিশোধ নিতে খুনের পরিকল্পনা করেন।