ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা থেকে হারিয়ে যাওয়া ছোট আসমা জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০ বছর পর নিজের মা-বাবা ও ভাই-বোনের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
রবিবার দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার কনভেনশন হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জোহরা খাতুন আসমাকে তার মা রোকেয়া বেগম, ভাই হানিফ মিয়া ও বোন রানু বেগমের কাছে ফিরিয়ে দেন নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেল।
এ সময় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আসমার আশ্রয়দাতা ফাতেমা জোহরা সীমা, মনোয়ারা বেগম ও টেলিফোন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন কিসলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আসমার আশ্রয়দাতা ও লালন-পালনকারী ফাতেমা জোহরা সীমা বলেন, ২০০১ সালে চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়া আসমা নামের শিশু বাসায় কাজ করার জন্য পথ থেকে নিয়ে যায় একটি পরিবার। সেখানে থাকাকালীন অবস্থায় তাকে মারধর করা হয় বলে সে ওই বাসা থেকে পালিয়ে আবার পথে বেরিয়ে পড়ে।
পরে চট্টগ্রামে বসবাসরত নোয়াখালীর জনৈক ফেরদৌসী বেগম কান্নারত অবস্থায় আসমাকে পেয়ে কয়েকদিন নিজ বাসায় আশ্রয় দেন। কিন্তু কেউ শিশুটির খোঁজ না নেয়ায় তিনি আসমাকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
তিনি জানান, পরে সেখান থেকে নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন কিসলুর বাসায় গৃহস্থালী কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি মাইজদী তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রায় পাঁচ বছর অবস্থানের পর আরও দুই বাসায় ছয় বছর থাকার পর পুনরায় ফরহাদ হোসেন কিসলুর বাসায় ফিরে আসে। ফরহাদ হোসেন কিসলুর সহধর্মিণী ফাতেমা জোহরা সীমা ফিরে আসার পর আসমাকে তার বাবার বাড়ি একলাশপুরে পাঠিয়ে দেন।
সেখানে ফাতেমা জোহরা সীমার বাবার বাড়িতে গৃহনির্মাণের কাজ চলছিল। তখন আসমার সাথে এক নির্মাণ শ্রমিকের পরিচয় হওয়ার পর পালিয়ে গিয়ে তারা চট্টগ্রামে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে একটা কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। হঠাৎ স্বামী তাকে না জানিয়ে প্রবাসে চলে যায়। উপায়ন্তর না দেখে সন্তান নিয়ে আসমা আবার নোয়াখালীর ফরহাদ হোসেন কিসলুর বাসায় ফিরে আসে।
এভাবে জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফিরে আসা আসমার শেকড়ের খোঁজ পাওয়ার জন্য ফরহাদ হোসেন কিসলুর সহধর্মিণী সীমা স্থানীয় সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নড়াইগ্রাম বাড়ির সূত্র ধরে।
সাংবাদিক মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্থানীয় সাংবাদিক আরজু মিয়ার মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইমুতে ভিডিও কলে কথা হয় আসমার মা ও ভাইয়ের সাথে। হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ২০ বছর পর মেয়েকে দেখে আসমার মা রোকেয়া বেগম, ভাই হানিফ মিয়া এবং বোন রানু বেগমকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
আসমার মা রোকেয়া বেগম তার মেয়েকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে। আমি কখনো ভাবিনি আমার সাত বছর বয়সী হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ২০ বছর পর খুঁজে পাব।’