জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মঙ্গলবার ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
এদিন সরকারি ছুটি হলেও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল ১০টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান: স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
পরে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা এবং সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা জানাবে।
পরে বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং সরকারি, আধা-সরকারি ভবন ও উন্মুক্ত স্থানেও আলোকসজ্জা করা হবে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি রেডিও স্টেশন ও টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, শিল্পকলা ও পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবে।
দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনামূল্যে খোলা রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সমর্থক, বিদেশি বন্ধুসহ সর্বস্তরের জনগণকে; যারা আমাদের অধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রেখেছেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, 'আমি আশা করি, বিগত বছরগুলোতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং আর্থ-সামাজিক সূচকে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যের উপর ভিত্তি করে আগামী দিনগুলোতে আমরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।’
‘দেশের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে জাতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথ সুগম হোক- মহান স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, 'এই শুভক্ষণে আমি দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার সুদৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা সরকার পরিচালনা করছি। তাছাড়া আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের বাস্তবায়ন অগ্রগতি আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। এসব কারণে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা ও দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, 'আসুন, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তোলার শপথ নিই, যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেখেছিলেন।’
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি