বিশেষ সংবাদ
করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের টিকা নেই, পুরনো মজুদ ৩২ লাখ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সম্প্রতি সংক্রমিত করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের কোনো টিকা নেই। তবে আগের মজুদ করা ৩২ লাখ টিকা আছে যার মেয়াদ কয়েক মাস।
গত এক মাসে নতুন করে দেশে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে ১ হাজার ৪০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
সে হিসাবে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনার সিকুয়েন্সিং তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে আগে থেকে বিদ্যমান ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট XFG এবং XFC শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই সাব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হার অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন অবধি মোট ৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যার সবকটি জুন মাসের প্রথম ১৭ দিনে। নতুন করে মহাখালীর বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আক্রন্তরা, বাড়ছে পরীক্ষার চাপ।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত
নতুন করে আবার করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে টিকা নিয়ে। আদৌ পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা মজুদ আছে কিনা, থাকলেও তার কার্যকারিতা কতখানি—এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের এখনো কোনো টিকা আনা হয়নি দেশে, এমনকি কোনো টিকা কমিটিও গঠন হয়নি এখন পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) বিভাগের লাইন ডিরেক্টর হালিমুর রশিদ বলেন, ‘সব মিলিয়ে ৩২ লাখের মতো টিকা আছে। ২০২৪-২৫ সালের ইউএস-সিডিসির গাইডলাইন-মাফিক যেসব টিকা আছে, সেগুলো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জন্য প্রযোজ্য। এ ছাড়া বাংলাদেশের আগের টিকাও ব্যবহার করা যাবে।’
নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের জন্য আলাদা করে কোনো টিকা আনা হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে রশিদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নতুন সাব ভ্যারিয়েন্টের টিকা আসেনি, তবে টিকা আনার কাজ চলছে। শিগগিরই টিকা কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সংক্রমণ বাড়লেও দেশের মানুষের টিকা দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই উল্লেখ করে রশিদ বলেন, ‘টিকা নিয়া নানা ধরনের গুজব চালু আছে যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মানুষ নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ—প্রথম তিন মাসে মাত্র ৪৩ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭, দ্বিতীয় ডোজ ৫, বুস্টার ডোজ ১৬ এবং চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন ১৫ জন।
আরও পড়ুন: করোনায় আরও দুই মৃত্যু, শনাক্ত ১৮
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যারা আগে কখনো কোভিডের টিকা নেননি, তাদের মধ্যেই টিকা নেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আতঙ্কিত হয়ে সবার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট শ্রেণির কিছু মানুষ আপাতত টিকা নিলেই চলবে।
১৯৩ দিন আগে
চুনিয়াগাড়ির বেহাল তিন সড়কে থমকে আছে সম্ভাবনা
নওগাঁ সদর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ গ্রাম চুনিয়াগাড়ি। চারপাশে ধানখেত, পুকুর আর শান্ত গ্রামীণ জীবনের ছবি; তবে গ্রামে ঢুকতেই বদলে যায় চিত্র। রাস্তা যেন ধানের জমি! খানাখন্দে ভরা কাদাপথ পেরিয়ে চলতে হয় শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগী আর দিনমজুরদের।
চুনিয়াগাড়ির বাসিন্দাদের এখন শুধু একটাই দাবি— ‘রাস্তা চাই’। কারণ এই তিনটি ভাঙাচোরা গ্রামীণ সড়ক যেন তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য বাধার দেওয়াল তুলে দিয়েছে।
চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার ৯ নম্বর চণ্ডিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত চুনিয়াগাড়ি গ্রামটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত। গ্রামের ছোট চুনিয়াগাড়ি থেকে বড় চুনিয়াগাড়ি যাওয়ার প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত মাটির রাস্তা। যে রাস্তা দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই রাস্তার খানাখন্দ ভরে যায় বৃষ্টির পানিতে। তখন দেখে বোঝার উপায় থাকে না—এটি রাস্তা নাকি ফসলের জমি।
আবার গ্রামের বটতলি থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত আরেকটি আধা কিলোমিটার সড়কেরও বেহাল দশা। এই সড়কে ইট বিছানো থাকলেও বহু বছর মেরামত কিংবা সংস্কার না করার কারণে সড়কের একাধিক জায়গায় ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট গ্রামীণ যানবাহন চলাচলের ঝক্কি পোহানো নো লাগেই, অনেকসময় গাড়ি উল্টে স্থানীয়দের আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আরও পড়ুন: বর্জ্যে বিপন্ন হাজীগঞ্জ, ডেঙ্গু-শ্বাসকষ্টে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ
এ ছাড়া, গ্রামের তালতলি থেকে বিশ্ববাঁধ সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশের অবস্থাও বেহাল। বর্ষার সময় এই সড়ক দিয়ে বাইরের কেউ চলাচল করতে চান না। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দাদের সেই সুযোগ নেই। দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই প্রতিনিয়ত কষ্ট করেই গলার কাঁটা এই তিনটি গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
প্রভাবিত হচ্ছে গ্রামের শিক্ষাব্যবস্থা
চুনিয়াগাড়ি গ্রামের তালতলি-বিশ্ববাঁধ সড়কের বেহাল দশার কারণে বর্ষা মৌসুমের পুরোটাজুড়েই ভয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যায় না। এমনকি গ্রামের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক যোগদান করলেও দুর্গম পরিস্থিতির কারণে তারা অন্যত্র চলে যাওয়ার তোড়জোড় করেন।
ছোট চুনিয়াগাড়ি থেকে বড় চুনিয়াগাড়ি যাওয়ার সড়কটির করুণ অবস্থার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাচলের সময় রাস্তার গর্তের পানিতে পড়ে গিয়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কাদায় লুটোপুটি খেতে হয় বলে জানান অভিভাবকরা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বড় বাধা
চুনিয়াগাড়ির কৃষকরা ফসল ফলাতে পিছিয়ে নেই, কিন্তু তা বাজারে পৌঁছানো বিরাট এক ঝক্কির ব্যাপার।
সড়কের বেহাল দশার কারণে ছোট ছোট গ্রামীণ বাহনগুলো গ্রামে যেতে চায় না। ফলে এই গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য স্থানীয় পর্যায়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়।
আরও পড়ুন: জামালগঞ্জে পরিত্যক্ত সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল, দুর্ভোগে ৩৫ গ্রামের মানুষ
সরেজমিনে দেখা যায়, বটতলী থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তায় বিছানো ইট অনেক আগেই উঠে গেছে; তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে করে পোল্ট্রি খামারিদের মুরগি পরিবহন কিংবা কৃষকের ধান বিক্রি—সবকিছুতেই যুক্ত হয়েছে লোকসানের ঝুঁকি।
১৯৪ দিন আগে
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: তেলের দামে অনিশ্চয়তা, হুমকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি
ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। এমতাবস্থায়, সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহত উত্তেজনার ফলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো সারা বিশ্বে তেলের দাম বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক রুট ব্যাহত হওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহের উপর সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির গতিপথকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে ড. রায়হান বলেন, ক্রমবর্ধমান রপ্তানিমুখী অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ নির্বিঘ্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্যের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশেরও বেশি। এটিও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যাঘাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য নিরাপদ বাণিজ্য রুট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বাজারে স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।
ড. রায়হান আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা আমদানির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত—বিশেষ করে হরমুজ প্রণালী দিয়ে যাতায়াতের সঙ্গে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক শিপিং করিডোর—যা বিশ্বের তেল সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পরিচালনা করে। এই রুট দিয়ে জাহাজ চলাচলে যেকোনো ব্যাঘাত দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
পড়ুন: সয়াবিন তেলের দাম বাড়লো লিটারে ১৪ টাকা
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, তেল সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকে ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) উভয়ই রেকর্ড দাম বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত, বিশেষ করে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৯০ থেকে ১২০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। বাংলাদেশের মতো আমদানি নির্ভরশীল দেশগুলোকে এই ধরনের পরিস্থিতি আকাশচুম্বী আমদানি ব্যয় মেটাতে হতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর একজন বিশিষ্ট ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ‘আমদানি তেলের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তিনি সতর্ক করে দেন, তেলের দাম বৃদ্ধি ‘বিশ্ববাজারে পণ্যের দামের ব্যারোমিটার’ হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ খাতে মুদ্রাস্ফীতি হবে ও পারিবারিক বরাদ্দেও ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।
জ্বালানি উদ্বেগের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্ব বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলকেও হুমকিতে ফেলবে। লোহিত সাগরে চলমান হুতিদের হামলা এরই মধ্যে ইউরোপে প্রধান জাহাজ চলাচল রুটগুলোকে ব্যাহত করেছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ খরচ ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে।
দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সম্ভবত এই ব্যাঘাতগুলোকে আরও খারাপ করবে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও তৈরি পণ্য আমদানির খরচ বাড়াবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য শিপিং খরচও বাড়বে। এটি তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতাকে কমাবে, যা সময় মতো ও সাশ্রয়ী সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।
মধ্যপ্রাচ্যে আকাশপথ বন্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল রুটগুলো আরও জটিল হয়ে উঠবে। যার ফলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন—উভয় ক্ষেত্রেই পরিচালন ব্যয় বাড়াবে।
পড়ুন: বাংলাদেশে সস্তায় তেল সরবরাহ করবে আরামকো: রিজওয়ানা
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ইউএনবিকে বলেন, জ্বালানি ঘাটতির মধ্যেও পোশাক শিল্প তার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জের পরে মূল্যবৃদ্ধি বা সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার মতো আরেকটি ধাক্কা ভয়াবহ হতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং বৈদেশিক মুদ্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস রেমিট্যান্সও সম্ভাব্য ঝুঁকির সম্মুখীন, যদিও সেটি পরোক্ষ ঝুঁকি।
যদিও সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা এই অঞ্চলে লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান এবং উপার্জনকে প্রভাবিত করতে পারে।
যেসব দেশে বাংলাদেশি কমীরা কাজ করছেন সেসব দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হলে ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে। এতে ক্রমবর্ধমান আমদানি পরিশোধের কারণে চাপে থাকা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও চাপে পরতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্প্রতি ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি পুনরুদ্ধার হয়েছে।
এই রিজার্ভ বাহ্যিক ধাক্কার ঝুঁকিতে রয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধি ও জাহাজ পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ের ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দ্রুত কমে যেতে পারে রিজার্ভ। এর ফলে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটানো ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
অর্থনীতিবিদরা সরকারকে জরুরি কৌশল তৈরি করে সতর্ক ও সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছে বিকল্প জ্বালানি উৎস তৈরি, বিকল্প বাণিজ্য রুট সন্ধান ও বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতার আঘাত কমাতে তৈরি পোশাক খাতকে পরিকল্পিত সহায়তা দেওয়া।
পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে বাড়লেও মার্চে অপরিবর্তিত জ্বালানি তেলের দাম
তারা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্র প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে ও জনসংখ্যার উপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়তে পারে।
১৯৫ দিন আগে
মানুষের থালা থেকে পাখির ঠোঁটে: চরাঞ্চলে বিলুপ্তির পথে কাউন
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে একসময়ের পরিচিত ও পুষ্টিকর খাদ্যশস্য কাউন আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষিজীবী মানুষের খাবারের অংশ হয়ে থাকা এই শস্য এখন আর চরাঞ্চলের মাঠে আগের মতো দেখা যায় না। জেলার প্রত্যন্ত চরের কৃষকরা কাউন চাষ ছেড়ে ঝুঁকছেন বেশি লাভজনক ও উচ্চ ফলনের ফসলের দিকে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে জেলায় কাউনের চাষ নেমে এসেছে মাত্র ৬০ হেক্টর জমিতে। অথচ গত বছরও ৪২০ হেক্টর জমিতে কাউন চাষ হয়েছিল। দুই দশক আগে অন্তত বিশ হাজার হেক্টর জমিতে এ শস্যের চাষ হতো।
একসময় যে চরভূমিতে সোনালি কাউনের ঢেউ উঠত, সেখানে এখন চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুড়িগ্রামের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বর্তমান ধারায় পরিবর্তন না এলে এক দশকের মধ্যেই চরাঞ্চল থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে কাউন। এটি শুধু ফসলচক্রের পরিবর্তন নয়, বরং একটি গ্রামীণ খাদ্য ঐতিহ্যের অবক্ষয়।’
কাউন বা ফক্সটেল মিলেট শুষ্ক সহনশীল ও কম খরচের একটি শস্য। বন্যা বা দুর্ভিক্ষের সময়গুলোতে চরবাসীর ভরসা ছিল এই কাউন। ধানের চেয়ে অনেক কম পানি ও সার লাগে বলে দরিদ্র কৃষকরা সহজে এটি চাষ করতেন এবং ভাতের বিকল্প খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন। তবে সময় বদলেছে। এখনকার কৃষকেরা ভাবেন লাভের কথা।
‘কাউনে লাভ নেই’, বলছিলেন নাগেশ্বরীর চর বামনডাঙ্গার কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫), ‘গত বছর পাঁচ বিঘায় (চাষ) করেছিলাম, এবার করেছি এক বিঘায়। প্রতি বিঘা থেকে চার থেকে ছয় মণ কাউন পাওয়া যায়। প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়; কিন্তু খরচ পড়ে আড়াই হাজার টাকা। হিসাব মেলে না।’
১৯৬ দিন আগে
ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে বাগেরহাটের নারীদের হাতে তৈরি পাখির বাসা, খেলনা
নারকেলের ছোবড়া, কাপড়ের টুকরা, তুলা আর সুতা—দেখতে খুব সাধারণ, অথচ এই উপকরণগুলো দিয়েই বাগেরহাটের নারীরা তৈরি করছেন এমন সব পণ্য, যেগুলোর চাহিদা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপের বাজারে।
পাখির বাসা, কুকুর-বিড়ালের ঘরবাড়ি, খেলনা, স্লিপার, ফুলের টব কিংবা সফট টয়—সবই তৈরি হচ্ছে নারীদের নিপুণ হাতে। এরপর তা রপ্তানি হচ্ছে বেলজিয়াম, জার্মানি ও গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা রোজী আহমেদের গড়া কারখানা ‘মার্সাস অর্গানিক প্রোডাক্ট’ এখন রপ্তানির পাশাপাশি নারী কর্মসংস্থানের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলা এই কারখানাটিতে এখন প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন নারী কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কেউ গৃহবধূ, কেউ কলেজপড়ুয়া। কেউ নারকেলের ছোবড়া কেটে ছাঁচ বানাচ্ছেন, কেউ কাপড়ের সেলাই করছেন, কেউবা খেলনার ভেতর তুলা ভরছেন। নিপুণ হাতে তারা পণ্যগুলো তৈরি করছেন পরিপূর্ণ রপ্তানিযোগ্য রূপে।
এই কারখানায় সরজমিনে গেলে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের নিচতলা ও পাশের একটি একতলা ভবনের পাশাপাশি একটি টিনশেড ঘরজুড়ে চলছে নানা ধরনের পণ্য তৈরির কাজ। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন নারী সেখানে কাজে ব্যস্ত। তৃতীয় তলায় চলছে পাখির বাসা তৈরির কাজ, একতলা ভবনে তৈরি হচ্ছে স্লিপার ও অন্যান্য সামগ্রী। প্রতিটি পণ্যের নানা ধাপ—কাটিং, সেলাই, রঙ করা, গুছিয়ে প্যাকিং—সবই হচ্ছে নারীদের হাতে। নিজ হাতে তৈরি এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে জেনে কর্মীদের চোখেমুখেও ঝলমল করে গর্ব।
১৯৭ দিন আগে
ছড়াচ্ছে করোনা, বাড়ছে মাস্কের দাম
দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে না বাড়তে এরইমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন এক দল ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অতিরিক্ত দামে মাস্ক কিনে পরতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে রাজধানীর বাবুবাজার মাস্কের পাইকারি দোকানগুলো ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। করোনা সংক্রমণে মাস্কের চাহিদা বাড়ায় ভিড় বাড়ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের।
কম দামে মাস্ক পাওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও রীতিমতো উল্টোচিত্রের মুখোমুখি হোন তারা—প্রতি বক্স সার্জিক্যাল মাস্ক রীতিমতো দ্বিগুণ দাম বিক্রি হচ্ছে।
শাহজাহানপুর রেলওয়ের কাছে মাস্ক ব্যবসা করেন মিঠু। তিনি জানান, এতদিন ৬০-৬৫ টাকা দামে প্রতি বক্স মাস্ক কিনলেও আজকে বাজারে একই মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কোনো ধরনের দামাদামির ধার ধারছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ বাড়লেও সব রোগীর করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই: স্বাস্থ্যের ডিজি
১৯৭ দিন আগে
১০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের অর্থনীতির কী হাল?
ঈদের ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে বন্ধ সরকারি অফিস, ব্যাংক-বিমা, বন্দর, কলকারখানা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন থেকে শুরু করে দেশের উৎপাদন খাতে এক রকমের স্থবিরতা নেমে এসেছে- বলছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে রাজধানীর এমন বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এতদিন পেরোলেও শুরু হয়নি দৈনন্দিন বেচা-কেনা এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম।
দীর্ঘ ছুটিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে কাওরানবাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবার ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও পণ্য সরবরাহ সেভাবে শুরু হয়নি।
কাওরানবাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী মোনতা গাজি বলেন, ‘সবজি থেকে শুরু করে অন্যান্য পণ্য মাত্র আসতে শুরু করেছে। একদিকে শহরে মানুষ কম, অন্যদিকে আড়তের কর্মচারীরা ছুটিতে থাকায় বেচাকেনা এক রকমের বন্ধ।’
একই অবস্থা পুরান ঢাকা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী এবং সদরঘাটের আড়তেও। পণ্য পরিবহন মন্থর হওয়ায় ধীর গতিতে চলছে সরবরাহ এবং বাজার ব্যবস্থাপনা।
সদরঘাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, ‘মৌসুমি ফল, মাছ, সবজি সব ধরণের পণ্য পরিবহণ চলছে ধীর গতিতে। রবিবারের আগে পুরোদমে কাজ শুরু হবে বলে মনে হয় না।’
পড়ুন: ঈদে বেনাপোল বন্দরে ১০ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বৈদেশিক রপ্তানি কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাংলাবান্ধা, ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর বন্ধ ১০ দিন; এতে করে স্থলবন্দরের বাণিজ্য একেবারেই স্তিমিত।
চট্টগ্রাম বন্দর সচল থাকলেও একেবারে ধীর গতিতে চলছে পণ্য খালাস। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটিতে আছে বেশিরভাগ কর্মী। পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় চাপ কম থাকলেও কর্মী অভাবে দেরি হচ্ছে জাহাজ পণ্য খালাসে।
কারখানা মালিক এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, এভাবে গড়পড়তা ঈদের ছুটি দেওয়ায় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে দীর্ঘ ছুটির পর ঈদুল আজহায়ও এমন ছুটিতে কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ তাদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মুখে। এ অবস্থায় ঈদুল ফিতরে ৯ দিন ছুটি দেওয়া হলো, এবার ১০ দিন। দেশের অর্থনীতির সবকটি খাত বন্ধ হয়ে আছে। এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না। যেখানে একদিন বন্ধ দিয়ে পরদিন কারখানা চালু রাখা উচিত, সেখানে ১০ দিন ধরে সব বন্ধ রেখে বসে থাকার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।’
তাসকিন বলেন, ‘এমন না মানুষ ১০ দিন ছুটি কাটিয়ে পূর্ণোদ্যমে কাজে যোগদান করবে। ঈদের আমেজ কাটতে কাটতে যাবে আরও এক সপ্তাহ। যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাসে ২০ দিনই বন্ধ থাকে সেটির বিরূপ প্রভাব যেমনি মালিকদের ওপর পড়বে, একইভাবে ভোগাবে শ্রমিকদেরও।’
১০ দিনের ঈদের ছুটির যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টানা ১০ দিন ছুটি দেওয়া একটি বড় সিদ্ধান্ত- এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে হয় না সরকার অংশীজনদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এছাড়া স্বাভাবিকভাবেই দেশের অর্থনীতিতে এত লম্বা ছুটির আংশিক প্রভাব এড়ানোর সুযোগ নেই।’
অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছুটিতে থাকলেও কারখানা ছুটির বেলায় কারখানা আইন মেনে ছুটির দেওয়ার পরামর্শ দেন এ গবেষক।
পড়ুন: ঈদুল আজহা উপলক্ষে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১০ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের দীর্ঘ ছুটি সমস্যা সৃষ্টি করে উল্লেখ করে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘লম্বা ছুটিতে গেলেও বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক উইং সচল রাখা খুব জরুরি ছিল। যেমন- এখন দেশের সবকটি ব্যাংক বন্ধ। যেসব ব্যাংক বা ব্যাংকের উইং আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত তাদের ১০ দিন বন্ধ দিলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চাইলে এই লম্বা ছুটিতে বিশেষায়িত বেশ কয়েকটি ব্যাংক খোলা রাখা যেত।’
এই দীর্ঘ ছুটিতে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের সুবিধা হলেও কীভাবে সীমিত মানুষ দিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা যায়—তার কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ছিল না। আগামীতে পরিকল্পনামাফিক ছুটি দিয়ে ক্ষতি এড়ানোর আহ্বান জানান এ অর্থনীতিবিদ।
১৯৮ দিন আগে
ঈদের লম্বা ছুটিতে আম নিয়ে বিপাকে নওগাঁর চাষি-ব্যবসায়ীরা
ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের টানা ছুটিতে ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে আমের বেচাবিক্রি। এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। টানা ১০ দিন ব্যাংক, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে আম নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় দিন পার করছেন সেখানকার কারবারিরা।
সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটির মধ্যে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত গরম পড়ছে। এর ফলে আম্রপালি জাতের আম একযোগে পাকতে শুরু করেছে। অথচ এই সময়ে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে মানুষজন কম। ঈদের ছুটিতে সবাই রয়েছেন গ্রামে। আবার কুরিয়ার সার্ভিস এবং পরিবহন ব্যবস্থাও এখন বন্ধ। ফলে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে আম পৌঁছাতে না পারলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আম্রপালি জাতের আম আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে আসার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, বৈরী আবহাওয়া, গাছে আগাম মুকুল আসা-সহ নানা কারণে এ বছর আম্রপালি জাতের আম ৮-১০ দিন আগে পাকতে শুরু করেছে।
সাপাহার উপজেলার সিমু শিপলা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে লাভের আশায় ৪০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের আম গাছ লাগিয়েছিলাম। এ বছর গাছে আমও ধরেছে ভালো। কিন্তু সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’
তিনি জানান, এ বছর সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে আম ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঈদের টানা ১০ দিন ছুটি থাকায় ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে আমের তেমন কোনো বেচাকেনা নেই। পচে যাওয়ার কারণে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মণ আম ফেলে দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আম সংগ্রহ শুরু, আসছে আঁটি, গুঁটি ও বোম্বাই
সাখাওয়াত হোসেনের অভিযোগ, আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশের দিন বলা হয়েছিল, যদি কারো আম আগাম পেকে যায়, তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিয়ে গাছ থেকে আম পাড়া এবং বিক্রয় করা যাবে। কিন্তু গত কয়েক দিন ঈদের ছুটিতে ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে আবেদন করে আম পাড়ার অনুমতি পাননি। ফলে প্রতিদিনই লক্ষাধিক টাকার আম অবিক্রিত থাকছে এবং তা ফেলে দিতে হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসে গেলে তারা অনুমতির জন্য ইউএনও অফিসে যেতে বলে। আবার ইউএনও অফিসে গেলে তারা কৃষি অফিসে যেতে বলে। প্রতিদিন শত শত আমচাষি অনুমতির জন্য এই দুই অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও বুধবার বিকাল পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এই সমস্যার কারণে আমচাষিরা গাছ থেকে আম পাড়তে পারছেন না। যার কারণে আমাদের লোকসান দিন দিন বেড়েই চলেছে।’
সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিসের বেঁধে দেওয়া আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর আম পাড়া সম্ভব হচ্ছে না। বৈরি আবহাওয়া আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালেন্ডারে ঘোষিত তারিখের ১০-১২ দিন আগেই আম পেকে গেছে।
তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ পাকা আম নিয়ে আমরা পড়েছি ভীষণ বিপদে। প্রতিদিন প্রত্যেক আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে আম বিক্রি না হওয়ায় অবিক্রিত আম ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আম একটি দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য। এটি সংরক্ষণ করার কোনো পদ্ধতি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তাই প্রতিদিনের আম প্রতিদিনই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ১০ দিন ঈদের ছুটি থাকার কারণে ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস পরিবহন বন্ধ, সর্বোপরি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা আম কেনাবেচা নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছেন। আমচাষিদের কথা বিবেচনা করে আম চাষ হয়—এমন স্থানগুলোতে ব্যাংক খোলা এবং কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখলে এ ক্ষতি উৎরে যাওয়া সম্ভব হতো।’
একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনও।
তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আম্রপালি জাতের আম মণপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই উচ্চ মূল্যের আম অবিক্রিত থেকে আড়তেই পচে যাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছে। চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার আম পচেগলে নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা।’
আরও পড়ুন: নওগাঁয় এবার ৪ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা
ইমাম হোসেন বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মানতে গিয়ে আজ আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আগামীতে ভাগ্যে কী আছে, তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন!’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের আমের ক্যালেন্ডারে আম পাড়ার যে তারিখ নির্ধারণ করা ছিল, চলতি বছর তা থেকে তিন দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকা এবং কুরিয়ার ও পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলছেন, তার সম্ভাবনা নেই।’
‘জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিস সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। এটাও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো আম অগ্রিম পাকা শুরু করে, তাহলে স্থানীয় ইউএনও অফিস অথবা কৃষি অফিসের অনুমতিসাপেক্ষে আম পাড়া যাবে। সেক্ষেত্রে কেউ আবেদন করলে তাকে আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আকস্মিক অতিরিক্ত গরমে আমের কোনো ক্ষতি হবে না। নওগাঁয় চলতি বছরে আমের বাজার থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি সফল হবে।’
১৯৯ দিন আগে
করোনার চোখ রাঙানি: পর্যটকপ্রিয় রাঙ্গামাটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যাপক প্রস্তুতি
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে পার্বত্য পর্যটন-জেলা রাঙ্গামাটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
কাপ্তাই হ্রদ, পাহাড় ও বনঘেরা রাঙ্গামাটি প্রায় সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে। তবে চলতি ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে অন্যান্যবারের চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা, নৌযান চলাচল এবং স্থানীয় জনসমাগম মিলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ঈদের ছুটি ঘিরে বাড়তি ভিড় এবং ভারতের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বিবেচনায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, প্রয়োজনে আইসোলেশন, ঘাটগুলোতে স্বাস্থ্য ডেস্ক স্থাপন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস মজুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যেসব স্থানে ভিড় বেশি, সেসব জায়গায় স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা আগেই প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঘাটগুলোতে পর্যটকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার এবং আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারি
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। মারাত্মক অসুস্থ হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের অনুরোধ করছি।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, করোনা মহামারিকালে রাঙ্গামাটিতে ৭৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়। তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবারও একটি সম্ভাব্য সংক্রমণ ঢেউয়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের এই ঢল নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলার প্রতিটি স্তরে সমন্বিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি যেন করোনার নতুন ঢেউয়ে তার স্বাভাবিক ছন্দ না হারায়, সেই লক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা
এদিকে, কোভিডের নতুন ধরন মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে নজরদারি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদারে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন ধরনের কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে অধিদপ্তর। সেগুলো হলো—
সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং উপস্থিত হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক পরা
৩. হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লা ঝুড়িতে ফেলা
৫. ঘনঘন সাবান-পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা
৭. আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
১. জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা
২. রোগীর মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া
৩. রোগীর সেবাদানকারীদেরও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা
৪. প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে, আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) যোগাযোগ করা।
২০০ দিন আগে
চামড়ার বাজারে এবারও হতাশা, গোড়ায় গলদ রেখে দাম নির্ধারণ
এবারের ঈদুল আজহায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার বর্ধিত নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হয়নি বলে অভিযোগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, মূল সমস্যা সমাধান না করে চামড়ার দাম বাড়ালেই বাজার চাঙ্গা হবে না।
কোরবানির প্রথম ৭২ ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে সবচেয়ে বেশি চামড়া এসেছে লালবাগের পোস্তায়। কাঁচা চামড়ার এ আড়তে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শহরের নানা জায়গা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছেন চামড়া। তবে তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন দর অনুযায়ী, এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ট্যানারির হিসাব অনুযায়ী, ৩০ বর্গফুট কিংবা এর চেয়ে বেশি আকারের চামড়াকে বড়, ২০ বর্গফুটের ওপরের চামড়াকে মাঝারি এবং ২০ বর্গফুটের নিচের চামড়াকে ছোট চামড়া হিসেবে ধরা হয়।
এ হিসাবে সর্বনিম্ন দাম ধরলেও একটি বড় চামড়ার দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০ টাকা, মাঝারি ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ১৫ ফুটের ছোট চামড়ার দাম হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করতে পারছেন। এর চেয়ে বেশি দামে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘কোরবানির দিন বিকালে প্রতি পিস চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ৯০০ টাকা দাম বলে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও ক্রেতা পাওয়া যায়নি।’
একই অভিযোগ জানিয়ে আরেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মিলন সরকার বলেন, ‘কেউ ফুট মেপে চামড়া কেনেনি। পিস হিসেবে গড়পড়তা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছি। সরকার দাম বাড়িয়েছে শুনে মাদরাসা–লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।’
আরও পড়ুন: অনভিজ্ঞতার কারণে চামড়া নষ্ট হয়েছে, মেলেনি কাঙ্ক্ষিত দাম: শিল্প উপদেষ্টা
কেন সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে পোস্তার আড়তদাররা জানান, এবার চামড়ার বাজার আগেরবারের চেয়েও খারাপ। নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে লোকসান দিয়ে ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করতে হবে।
এ বিষয়ে কাঁচা চামড়ার সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘যারা চামড়ায় অর্থলগ্নি করত, এবার তাদের অনেকেই এ ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী আগের সরকারের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তারা পলাতক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হাতে নেই নগদ টাকা। আগে যে ব্যবসায়ী ১০ হাজার পিস চামড়া কিনতেন, এবার তারা কিনছেন ৫ হাজার পিস করে।’
এ ছাড়া পোস্তায় প্রচুর নষ্ট চামড়াও এসেছে উল্লেখ করে টিপু বলেন, ‘৩০ শতাংশেরও বেশি চামড়া পচে গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না লাগিয়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছেন। বিক্রি করতে করতে অনেক চামড়া হয় পচে গেছে, না হলে মান হারিয়েছে। সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না দিয়ে চামড়া এনেছেন। এতেও দাম অনেক কমেছে।’
২০১ দিন আগে