বিশেষ সংবাদ
চলতি মাসে আরও ২০০ মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করবে সরকার
চলতি মাসে আরও ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেলচালিত ব্যয়বহুল বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করবে সরকার। এর মধ্যদিয়ে এই বছরে মোট ১ হাজার মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ করার জন্য চলতি বছর চারটি বেসরকারি কোম্পানির ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম তালিকা করা হয়েছে।
সেগুলো হলো- বাংলা ট্র্যাকের ৩০০ মেগাওয়াট (যশোর ১০০ মেগাওয়াট ও দাউদকান্দি ২০০ মেগাওয়াট), এগ্রেকোর ২০০ মেগাওয়াট (আওড়াহাটি ১০০ মেগাওয়াট ও ব্রাহ্মণগাঁও ১০০ মেগাওয়াট), এপিআর এনার্জির পানগাঁও ৩০০ মেগাওয়াট এবং প্যারামাউন্টের বাঘাবাড়ির ২০০ মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে এবং বাকি ২০০ মেগাওয়াট আগস্টে বন্ধ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, এসব প্ল্যান্ট বন্ধ হলে বছরে সরকারের প্রায় ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
আরও পড়ুন: চলতি বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করবে
বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ অনুযায়ী, দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। যার মধ্যে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট, যা মোট সক্ষমতার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিপিডিবি’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেলের মাধ্যমে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ছিল ১৫৪ দশমিক ১১ টাকা। যেখানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর খরচ ছিল ৩ দশমিক ৪৬ টাকা। অন্যদিকে, কয়লাচালিত প্ল্যান্টের জন্য এটি ছিল ৯ দশমিক ১৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক প্ল্যান্টের জন্য খরচ ছিল ১১ দশমিক ১০ টাকা।
বিপিডিবির আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্কিন ডলার ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায়, উৎপাদন খরচও অনেক বেড়ে গেছে।’
তিনি জানান, সব বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) মার্কিন ডলারের দামের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তির অধীনে ডলারে অর্থ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে: চীনা কর্মকর্তা
বিপিডিবি’র ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তাই যদি মার্কিন ডলারের বর্তমান দাম এবং ডিজেলের বর্তমান দাম তুলনা করা হয়, তবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ২০২১-২২ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে অনেক বেশি হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডিজেলচালিত প্ল্যান্টের ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের শুল্ক ১৭২ দশমিক ৫ টাকার বেশি। কারণ বর্তমান ডলারের দাম ১০৯ টাকা। অথচ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তা ছিল ৮৫ টাকা।
তিনি আরও বলেন, একইভাবে লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা, ২০২১ সালের নভেম্বরে তা হয় ৮০ টাকা এবং গত বছরের আগস্টে তা বেড়ে হয় ১১৪ টাকা।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ব্যয়বহুল এই ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকদের ১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার বা ১১ হাজার ২৮১ দশমিক ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেছেন, ব্যয়বহুল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি খুবই ইতিবাচক।
তিনি ইউএনবিকে বলেছেন, ‘ব্যয়বহুল ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে চালু রাখা অর্থহীন... সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাকি সব ডিজেলচালিত প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া।’
আরও পড়ুন: মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলের ৩ বিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে
‘গবেষণা ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধের চেষ্টা অন্ধের পথ হাঁটার মতো’
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পর পেরিয়েছে প্রায় দুই যুগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন শিকড় গেঁড়ে বসেছে এ রোগের ভাইরাস। চরিত্র পাল্টে আরও শক্তিশালী হয়েছে ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী মশা এডিস। ২০১৯ সালেই ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল ডেঙ্গু। সেই ভয়াবহতাও অতিক্রম করেছে চলতি বছর। তবে রোগ নির্মূলে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার গ্লানিই বয়ে বেড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে গবেষণার ঘাটতি, ভুল ও অপরিপকল্পিত নগরায়ণ, কর্মপরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাব এবং বৃহৎ পরিসরে জনগণকে সম্পৃক্ততার ব্যর্থতার কথা বলেছেন চিকিৎসক, গবেষক, কীটতত্ত্ববিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, কোনো একটি রোগ প্রতিরোধ বা নির্মূল করতে চাইলে গবেষণাই প্রধান ও প্রথম উপায়। গবেষণা আমাদের পথ দেখায় এবং শত্রুকে চিনিয়ে দেয়। তাই গবেষণা ব্যতিরেকে ডেঙ্গুর মতো একটি রোগ প্রতিরোধের কাথা চিন্তা করা অন্ধের পথ হাঁটার মতো।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে কাতর রাজধানী, হাসপাতালে সিট সংকট
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর সঙ্গে তিনটি বিষয় ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা দেশে আসলে খুবই কম হচ্ছে। যেমন ডেঙ্গু ভাইরাসের ধরন, এটি কাদের বেশি আক্রমণ করে, এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট জটিলতাগুলো এবং পূর্ববর্তী অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হলে কী হতে পারে- এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা হচ্ছে না। অন্য দিকে এ ভাইরাসের যে টিকা সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ন্যূনতম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
লেনিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অন্য ধরনের এডিস মশাও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। কতভাগ অন্য এডিস মশা আর কতভাগ আবাসিক বা ইজিপ্টি মশা ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, এর উপরেও তেমন কোনো গবেষণা করা হচ্ছে না।
এডিস মশার চরিত্র বদল, প্রজননস্থল পরিবর্তন হয়েছে এবং রোগের উপসর্গও বদলেছে। এ বিষয়ে ব্যাপক পরিধিতে এবং বহুকেন্দ্রে যে গবেষণা করা দরকার সেটিও হচ্ছে না বলে দাবি করেন এ চিকিৎসক।
তিনি বলেন, এটিকে প্রতিরোধের জন্য তিন ধরনের গবেষণা দরকার। প্রাক-গবেষণা, প্রাদুর্ভাব চলাকালীন গবেষণা ও পরবর্তী গবেষণা। সেগুলোর কোনোটাই হচ্ছে না।
গবেষণা ঘাটতির কথা উল্লেখ করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কতটা কার্যকর হচ্ছে সেটার ওপরও গবেষণা দরকার। ডেঙ্গুর চরিত্র পরিবর্তনের বিষয়েও বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা দরকার। সিটি করপোরেশনের তো সেইভাবে ডেডিকেটেড কীটতত্ববিদ দেখি না বা কোনো একটি গবেষণা সেল আছে যারা সারা বছর গবেষণা করছে। এখন তো ডেঙ্গু শুধু বর্ষাকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
গবেষণা ঘাটতির পাশাপাশি নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতার কথাও জানালেন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব।
তিনি বলেন, ‘নগর পরিকল্পনার ভিত্তিতে জনগণের মাত্রাকে অন্তর্ভুক্তিতে এনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া কোনো পথ নেই। আমাদের সড়কগুলো উঁচু ও একই উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে। একারণে পূর্বে ও পশ্চিমে কিছু জায়গায় অল্প বৃষ্টিতে পকেটে জল আটকে থাকে। যেগুলোকে জলের থিরতা বা অনেকে জলজট বা জলাবদ্ধতা বলে। জুরাইনের আশপাশের অঞ্চল, কলাবাগান, কাঠালবাগান অঞ্চলজুড়ে এরকম অসংখ্য জায়গায় পানি আটকে থাকছে এবং ডেঙ্গুর লার্ভার প্রজনন স্থল গড়ে উঠেছে।’
চার বছরে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে অভিযান চালানোর পর এডিসের লার্ভা ৫০ থেকে নেমে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে বেসমেন্টে বেশি এডিস মশার উপস্থিতি দেখা গেছে। এটিকে ত্রুটিযুক্ত নির্মাণ ব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেছেন এই স্থপতি।
এ ছাড়া জলবায়ুর পবির্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে সরাসরি ডেঙ্গুর সম্পর্ক আছে বলে জানান তিনি।
এই স্থপতি বলেন, তিন-চার বছর আগের বর্ষা আর এখনকার বর্ষার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি না হয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়া এবং মাঝে মাঝে তীব্র খরা এডিস লার্ভার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ।
নগরপরিকল্পনার ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, যেকোনো নগরের জন্য সবুজ, জলাধার ও ধুসর এলাকার সমন্বয় দরকার। কিন্তু আমাদের শহরগুলোর সবুজ ধ্বংস করা হচ্ছে, জলাধার নষ্ট করা হচ্ছে। আর ধুসর অংশ বা কংক্রিটের পরিমাণ বাড়ছে। এতে উষ্ণায়ন বাড়ছে। যা ডেঙ্গুর বিস্তারের জন্য খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর জলাধারগুলো যেভাবে পরিষ্কার করার কথা বা পানির প্রবাহামনতা ফিরিয়ে আনার জন্য যে কাজগুলো হয় তা খুবই স্বল্প পরিমাণে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় খালগুলো মেরে ফেলা হয়েছে।
প্রথম দিকে সিটি করপোরেশন যেভাবে খালগুলো উদ্ধারে কাজ করছিল সেগুলো পরে স্তিমিত হয়ে গেছে বলে দাবি করেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
তিনি বলেন, প্রচুর কালভার্ট আছে যেগুলো ময়লা-আবর্জনা জমে পানির প্রবাহমানতা নষ্ট হয়েছে। আসলে নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে যে পরিকল্পনা দরকার, সেটি একদমই নেই।
কোলকাতার সফলতার উদাহরণ টেনে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ফগিং নির্ভরতা থেকে থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা করতে হবে। আবার নগর পরিকল্পনার যেসব ভুলের কারণে মশার উৎপাদন বেড়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। বক্স কালভার্ট বা খালগুলোর প্রবাহমানতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়মগুলো মানতে হবে। সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার কথা বলেছেন এই দুই পরিকল্পনাবিদ। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে ব্যবহার করে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেন তারা।
একই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে আত্মতৃপ্তি ও আত্মস্লাঘা থেকে সরে আসার আহ্বানও জানান।
সেই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য ভ্যাক্সিন থাকলে তার ব্যবস্থাও করতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্থপতি ইকবাল হাবিব।
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, মানুষের আচরণ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, পানির সমস্যার কারণে পানি জমিয়ে রাখা নানা কারণে ডেঙ্গু বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী ভ্যাক্সিন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৭-৮ ধরনের ভ্যাক্সিন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ডেন ভ্যাক্সিয়া। এটি শুধু ৯-৪৫ বছরের মানুষকে দেওয়া যাবে এবং আক্রান্ত হওয়ার আগে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এটি প্রয়োগের আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে আগে আক্রান্ত হয়েছিল কি না। এই পরীক্ষায় ভুল হলে বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদাতা মায়েদের দেওয়া যাবে কি না বা দিলে কোনো ক্ষতি হবে কি না সে বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
জাপানের তাগেদা ফাউন্ডেশনের তৈরি কিউডেংকা ভ্যাক্সিনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে জানান এই গবেষক।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন না আসার কারণে দায়ী ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ ডেন-১,২,৩,৪। যখন এর ভ্যাক্সিন নিয়ে কাজ করা হয়, তখন এর চার সেরোটাইপ একসঙ্গে নিয়ে আসতে হয়। এ কারণে ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন সফলভাবে তৈরি করা এবং মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা কঠিন।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে, হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ডেন ভ্যাক্সিয়া খুব বেশি কার্যকরী নয়। বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা এখনো তৈরি হয়নি। এ ছাড়া এটি এখনো অনুমোদিত নয়।
দেশে ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব ডেঙ্গুর জন্য গবেষণা সেল তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। ডেঙ্গু যেহেতু যাচ্ছে না, সেজন্য একটি গবেষণা সেল তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার ব্যাপকভাবে গবেষণা শুরু হয়ে যাবে। এ ছাড়া আমাদের গবেষণার জন্য তো রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রয়েছে। ওখানেও কাজ হচ্ছে।
ডেঙ্গু জ্বর ও এর বহনকারী ভাইরাস বা এডিস মশা নিয়ে কী ধরনের গবেষণা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহ্মিনা শিরীন ইএনবিকে বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা দেয়। সেগুলো দেখার জন্য প্রতি বছর সেরোটাইপ করা হয়। বিগত বছরগুলোতে সেরোটাইপে যেভাবে পরিবর্তন আসছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার থেকে অনেক দ্রুত পরিবর্তন আসছে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করছি আমরা।
তিনি বলেন, এবছরের শুরুতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কীটতত্ববিষয়ক জরিপ করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে বলে দিয়েছে এবার ভয়াবহতা বাড়বে। বিভিন্ন অঞ্চলে মশার ঘনত্ব বেড়েছে। কোন কোন অঞ্চলে বেশি ঘনত্ব ছিল তা তারা চিহ্নিত করেছে। এসব নিয়ে কিছু কিছু কাজ হয়েছে।
আরও পড়ুন: এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩০০ ছাড়াল
এডিস মশার বৈশিষ্ট্য, প্রজনন ক্ষেত্র, রোগের উপসর্গ পরিবর্তন হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে আইইডিসিআর থেকে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. তাহ্মিনা বলেন, এ বিষয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখাই গবেষণা করে। কীটতত্ত্ববিষয়ক গবেষণা আমরা করি না। এখন পর্যন্ত কিরিনি। তবে ভবিষ্যতে চিন্তা আছে, যদি সুযোগ হয় তাহলে আমরা করব। যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যেই রয়েছে। এটা উনারাই করছে।
তিনি আরও বলেন, রোগের তীব্রতা কেন বাড়ছে- এখানে আমাদের গবেষণার একটা জায়গা আছে। মশা নিয়ে গবেষণা মূলত কীটতত্ত্ববিদেরাই করেন।
আইইডিসিআর ডেঙ্গুর কোন বিষয়গুলো গবেষণা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কীটনাশকগুলো বাজারে আছে বা ব্যবহার হচ্ছে সেটার কার্যকারিতা দেখে আইইডিসিআর।
কীটতত্ত্ববিদ, নগরপরিকল্পনাবিদ ও চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন কর্ম পরিকল্পনা, জরিপ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ কয়েকটি বিষয়ে সমন্বয় ও গবেষণার ঘাটতিও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পেছনে একটি বড় কারণ। এসব বিষয়ে সমন্বয় কতটা সম্ভব হচ্ছে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। এ বিষয়ে আরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গু নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা কতটা হয়েছে জানতে চাইলে ডা. তাহ্মিনা শিরীন বলেন, ‘খুব বেশি যে এগিয়েছি আমরা তা বলতে পারি না। তবে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন গবেষণার উদ্যোগ নেবে বিএসএমএমইউ
অক্টোবরে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে চালু হবে ১২ বোর্ডিং ব্রিজ: বেবিচক
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে আংশিকভাবে চালু করা হবে।
রবিবার (৬ আগস্ট) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মফিদুর রহমান ইউএনবিকে এসব জানান।
তিনি বলেন, টার্মিনালের নির্মাণ কাজ বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে।
ঢাকা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালটির আয়োতন ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার। এটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে ১ কোটিরও বেশি যাত্রীসেবাসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাও দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে থাকায় তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ৩০টিরও বেশি এয়ারলাইনসের ১২০ থেকে ১৩০টি উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করে।
প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দু’টি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। সে হিসেবে ঢাকা বিমানবন্দর বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন টার্মিনালে একটি পার্কিং অ্যাপ্রোন থাকবে যা ৩৭টি উড়োজাহাজ ধারণ করতে সক্ষম হবে। এতে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থাও থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে।
দ্রুত, আরও ভালো সেবা
যাত্রীদের দ্রুত ও উন্নত সেবা প্রদানের জন্য পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি আলাদা বেল্ট স্থাপন করা হবে।
টার্মিনালে ১৫টি সেলফ-সার্ভিস কাউন্টারসহ ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার এবং ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ ৬৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে।
সিএএবি সূত্র জানায়, বিশ্বমানের টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল গাড়ির পার্কিংও নির্মাণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে জাপান: বেবিচক চেয়ারম্যান
ডেঙ্গু: স্যালাইন সংকটের আশঙ্কায় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ফ্লুইড স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১০-১২ গুণ। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলো স্যালাইন সংকটে পড়তে পারে।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। বিশেষত আইভি স্যালাইন। তবে দেশে যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ওষুধের দোকানে কথা বলে এ আশঙ্কার কথা জানা যায়।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, মাতুয়াইল শিশ মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে।
এসব হাসপতালে ঘুরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে স্যালাইন সংকটের কথা জানা গেছে।
রোগীদের আশঙ্কা, সরকারি খরচে দেওয়া আইভি ফ্লুইড সরবরাহ শিগগির বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে স্যালাইন সংকটে পড়তে পারে।
সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সদর হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ করে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক: টিআইবি
তবে স্যালাইনের নিজস্ব উৎপাদন না থাকায় বিভিন্ন বেসরকারি ফার্মা কোম্পানি থেকে কিনে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির ইউএনবিকে বলেন, স্যালাইন তো আমরা উৎপাদন করি না। বেসরকারি ফার্মা কোম্পানিগুলো থেকে কিনতে হয়। আমরা আবার খুচরা মূল্যে স্যালাইন বা ওষুধ কিনি না। আর কোম্পানিগুলোও রাতারাতি এত চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। পারলেও প্রচলিত দামে তো কিনতে পারি না।
ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কারণে গড়ে কী পরিমাণ ফ্লুইডের চাহিদা বেড়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, গত বছর ৬০ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চাহিদা ছিল। এরমধ্যে ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ব্যাগ দিতে পেরেছি। এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০-১২ গুণ বেশি ফ্লুইড লাগছে। ইডিসিএলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন না থাকায় বেরসকারি বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানি থেকে কিনে সারাদেশে হাসপাতালে সরবরাহ করা হচ্ছে।
পানির জন্য হাহাকার, গাইবান্ধায় পাটচাষিরা বিপাকে
গাইবান্ধার পাটচাষিদের অবস্থা এখন অনেকটাই তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন পানির জন্য।
পানির অভাবে জাগ (পানিতে ডুবিয়ে পচানো) দিতে পারছেন না কেটে রাখা পাট। বাধ্য হয়ে জমিতে স্তূপ করে রেখে অপেক্ষা করছেন পানির জন্য। আবার কেউ কেউ পানি নেই বলে না পাট কাটছেন না।
পাটচাষি ও মোল্লার চরের ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সরকার জানান, তোষা পাটের ব্যাপক চাষ হয় গাইবান্ধার ১৬৫টি চরাঞ্চলে। কিন্তু এবছর অনাবৃষ্টি, খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে বিপাকে পড়েছে পাটচাষিরা।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা সদর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা এবং নিচু জলাশয় শুকিয়ে গেছে। তাই কারণে এই ভরা মৌসুমে পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
গুনভরি এলাকার পাটচাষি মহিউদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে স্তূপ করে রেখেছি অনেকদিন ধরে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করছি; কিন্তু বন্যা বা বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে স্তুপ করে রাখা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবান এই পাট পচানোর ব্যবস্থা করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে এলাকার নিচু জলাশয়ে ও পুকুরে সেচ দিয়ে পাট পচানোর ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু জলাশয় ও পুকুরে সেচ দেওয়া পানিও থাকছে না। দু-তিন দিনের মধ্যেই সেই পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে।’
গাইবান্ধা জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে সাঘাটা উপজেলায় ৩ হাজার ২ হেক্টর, গাইবান্ধা সদরে ৯৪৫, সাদুল্লাপুরে ৪৮০, গোবিন্দগঞ্জে ৬৪১, ফুলছড়ি উপজেলায় ৪ হাজার ৩৯০, পলাশবাড়িতে ২৯০ এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ভরা মৌসুম হওয়ায় ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু হয়েছে।
পাট পচানোর জন্য ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ মণ পাট উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়।
চর কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা রেজা মেম্বার জানান, তিনি ২০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বাধ্য হয়ে কিছু পাট তিস্তা নদীতে পচাতে দিয়েছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের শাহিন মিয়া জানান, তার বাড়ির আশেপাশের পুকুরে পানি নেই। ১০দিন হল পাট কেটে জমিতে স্তুপ করে রেখেছেন। পানি না থাকায় পচানোর জন্য জাগ দিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে জমিতে তার পাট শুকিয়ে গেছে। সেচ দিয়ে পানি ভর্তি করে পচানোর ব্যবস্থা করা হলেও পানি দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, তারপরও পাটের রং নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামের নদীর পানিতে ডুবে বর্গাচাষির মৃত্যু
চলতি বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করবে
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও ৫০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে সরকারি সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, গ্রিড ও অফ-গ্রিড বিদ্যুৎসহ দেশের মোট স্থাপন করা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ক্ষমতা বর্তমানে ২৮ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যে এটি ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট হবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি অব্যবহৃত থাকবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট।
অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ বিশেষ করে, ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদনে কোনো বড় পরিবর্তন নেই।এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রধানত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছরের একই সময় পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট।
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে: চীনা কর্মকর্তা
বর্তমানে আরও ৩ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে রয়েছে যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে এই বছর গ্রিডে ৫ হাজার ৫৪৩ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। যদিও এই সময়ের মধ্যে চাহিদা আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মজার ব্যাপার হলো সমস্ত নতুন বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে আসছে, সরকারি প্ল্যান্ট থেকে নয়।’
তবে, বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে ভাড়ায় চালিত প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিশাল বৃদ্ধিতে খুশি হতে পারে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বা পরিচালন ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে এটি কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত অর্থবছর (২০২২-২৩) আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ২৬ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছিল এবং এই চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে।’ ২০২১-২২ অর্থবছর যার পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা।
ক্যাপাসিটি পেমেন্টের সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো- দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র এক বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেলেও পেমেন্টের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ প্রদান করা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।
আরও পড়ুন: খুলনায় তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) অধীনে এক ধরনের জামানতযুক্ত পেমেন্ট। বেসরকারি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ নিলেও সেই অর্থ দিতে হয়, না নিলেও দিতে হয়।
বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়বে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরই মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বা সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীর এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স পাওয়ার এলএনজি-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে ৭১৮ মেগাওয়াট, এলএনজি-ভিত্তিক জিই-সামিট মেঘনাঘাট-২ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৯০ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে এলএনজি-ভিত্তিক ইউনিক গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে গ্রিডে।
সরকারি পরিসংখ্যানে আরও জানা গেছে, বিপিডিবি তহবিলের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। কারণ বেসরকারি খাতে এটির বকেয়া বিল এখন এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে বেসরকারি খাতের মে ও জুলাইয়ের বিল যোগ করা হলে তা ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।’
বিদ্যুৎ খাতের পরিস্থিতিকে আমদানিনির্ভর জ্বালানি সরবরাহের উপর ভিত্তি করে ভুল নীতির ফলাফল উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিপিডিবির বোঝা কমাতে ‘বিদ্যুৎ নেই পেমেন্ট নেই’ পদ্ধতি চালু করতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বন্ধে কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে ‘ফোর্স ম্যাজেউর’ প্রয়োগ করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, সরকারকে আমদানি-ভিত্তিক এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তথ্য সংগ্রহ করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
ছিটমহল বিনিময়: ৮ বছরে বদলে গেছে দাসিয়ারছড়া
ছিটমহল বিনিময়ের ৮ বছরে বদলে গেছে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলো।
যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ নাগরিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ বিলুপ্ত ছিটমহলের ঘরে ঘরে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ভারতের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অন্তর্ভূক্ত হবার পর সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে।
দীর্ঘদিনের সেই স্মৃতিকে স্মরণ করার জন্য সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে কালিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনাসভা,মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
এছাড়া কুড়িগ্রাম জেলা সদরে উত্তরবঙ্গ জাদুঘর আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।
গত ৮ বছরে ১ হাজার ৬৪৩ একরের দাসিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ১৮টি ছিটমহলে বাস্তবায়িত হয়েছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প।
একসময়ের অন্ধকারাছন্ন পরিবেশ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। শতভাগ বিদ্যুত,অলিগলিতে পিচঢালা পথ,স্বাস্থ্যকেন্দ্র,সামাজিক নিরাপত্তা,যুব প্রশিক্ষণ,ভূমির সমস্যা সমাধান আর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঘুচে গেছে।
দাসিয়ারছড়ায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও চারটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে বিলুপ্ত ছিটমহলের সর্বত্র।
প্রায় ১০ হাজার লোকসংখ্যার দাসিয়ারছড়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে বিদ্যুত সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন,তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও ব্যাপকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। যুব প্রশিক্ষণের জন্য আইসিটি সেন্টার স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: ৪৬ বছর বয়সে দাখিল পাশ করলেন কুড়িগ্রামের রহিমা
অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও পাঁচটি সেতু নিমার্ণ করা হয়। সরকারি খরচে নিমার্ণ করা হয় মসজিদ ও মন্দির। সড়কের দু’পাশে লাগানো ‘বাসক গাছ’ যোগ করেছে বাড়তি সৌন্দর্য।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দাসিয়ারছড়ায় শতভাগ সেচের আওতায় আনা হয়েছে কৃষি জমি। তিন হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়িতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি স্থাপন করেছে ১৫টি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র।
এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ১৪ টি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র। সেখানকার বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড। এসব উন্নয়নে জীবনচিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে এখানকার মানুষের জন্য।
তবে এত কিছুর পরেও পৃথক ইউনিয়ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় কিছুটা অতৃপ্তি রয়েছে দাসিয়ারছড়াবাসীর।
বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ছিটমহল আন্দোলনের অন্যতম নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘‘৬৮ বছরে যা পাই নাই,তা দুই বছরে পেয়েছি। ছিটমহলের মানুষ এখন নিজের পরিচয়ে আত্মনির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ‘মুজিবনগর’ নামে নামকরণ হয়েছে। তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছিমহলবাসী মুক্তি পেয়েছে। তাই দাসিয়ারছড়ায় ‘হাসিনানগর’ নামে একটি ইউনিয়ন পরিষদের দাবি সবার।’’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নিবার্হী অফিসার সুমন দাস জানান, ‘‘ছিটমহলে ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। মূল স্রোতধারায় ছিটমহলবাসীকে আনতে সরকারি নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে হবে।’’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সৌখিন মাছ শিকারির খোঁচায় ১৬ কেজির বোয়াল!
সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ৫ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে অনেক।
সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে।
সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমা এবং বনবিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বিভাগের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বিভাগে গণনার কাজ শুরু করা হবে। তবে পশ্চিম বিভাগে ক্যমেরা ট্র্যাকিং শেষে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।
সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালীরা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।
১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।
২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।
১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন আব্দুল ওয়াজেদ
সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া দেশে এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না
সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন জাতীয় পরিকল্পনা। আর মশা নিধন করতে পারলেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন ইউএনবিকে বলেন, সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এডিস রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। ঢাকাসহ সারাদেশে মশা নিধন করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের একটি নির্দেশনা আছে। অনেকগুলো কাজ ব্যক্তিগতভাবে করা যায়, আবার অনেকগুলো ব্যক্তিগতভাবে করা যায় না। আপনার ফ্ল্যাট পরিচ্ছন্ন করতে গেলে সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞ কর্মী, ফ্ল্যাট মালিক সমিতির স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয় লাগবে। আর মশা নিধন করতে পারলেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমে আসবে। মশা নিধনে সমন্বিত একটা চেষ্টা না থাকলে শুধু প্রচার করলে হবে না।
তিনি আরও বলেন, শুধু জরিমানা করে জনস্বাস্থ্যের সমস্যার সমাধান হবে না। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এলে জনগণ দরজাই খুলবে না,ঢুকতে দেবে না। ঢুকলেই জরিমানা করবেন। একটি হটলাইন দিয়ে দিয়েছেন মশক আছে কি না জানানোর জন্য। কে ফোন দিয়ে জরিমানা ডেকে নিয়ে আসবে। এসে লার্ভা পাবেন আর জরিমানা করবেন। সাধারণ বিষয়ে জরিমানা হতে পারে, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে জরিমানা দিয়ে জনগণকে দূরে সরিয়ে দিয়েন না। কমিউনিটি সম্পৃক্ততার যেই কাঠামো স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশিকায় দেওয়া আছে সেটা অনুসরণ করুন।
ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনের তুলনায় কিচ্ছু নেই। পুরো শহরে মশক নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় প্রতি ওয়ার্ডে ১১ জন শ্রমিক কাজ করছেন। অথচ ঢাকা শহরের একটি ওয়ার্ডে লাখের বেশি লোক থাকে। এখানে স্থানীয় সরকার বিভাগে যেই নির্দেশিকা তাতে বলা আছে, প্রয়োজনে ১০টি বা তার বেশি ভাগ করে গলি-মহল্লাসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। সেখানে ১১ জন কর্মী নয়, সঙ্গে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী লাগবে। সেই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে কাতর রাজধানী হাসপাতালে সিট সংকট
ডেঙ্গুতে কাতর রাজধানী, হাসপাতালে সিট সংকট
ফুটপাতে বসে পুরোনো কাপড় সেলাই করে দুমুঠো ভাতের যোগান আসে রাজধানীর সায়েদাবাদের রাবেয়া বেগমের। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে ডেঙ্গু জ্বর।
দুই ছেলে রাব্বী ও হাসান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ভর্তি করেন মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে গেছে বলে তাদের হাসপাতাল ছাড়ার ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক।
বাসায় নেওয়ার পর আবার জ্বর আসে দুই ছেলের। ফের নিয়ে আসেন মুগদা হাসপাতালে। ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। সেখানেও দুই ছেলের জন্য দুটি বেড পাননি। হাসপাতালের মেঝেতে এক বিছানায় দুই ছেলেসহ তিনি কোনো রকমে পার করছেন দিন-রাত।
রাবেয়া বেগম জানান, হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার পর আবার জ্বর আসে। একই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথায় কাতরাতে থাকে ছেলেরা। রাব্বীর বয়স চার বছর তিন মাস এবং হাসানের বয়স ১৯ মাস। দুই ছেলেকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসে মেঝেতে এক বেডে নিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই তার।
ক্ষুব্ধ রাবেয়া বলেন, দুই ছেলের জন্য আলাদা বেড চেয়েছি বার বার। এক বেডে তিনজন কীভাবে থাকা সম্ভব? ওয়ার্ড বয়রা খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। বলছে এক বেডে থাকতে পারলে থাকেন না হলে চলে যান। তাই বাধ্য হয়ে এক বেডে দুই ছেলে নিয়ে তিনজনে মিলে থাকছি।
একই সঙ্গে চিকিৎসা নিয়েও অভিযোগ করেন রাবেয়া।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকের কথায় একবার বাড়ি ফিরলেও আবার আসতে বাধ্য হয়েছি। দুই ছেলের জ্বর সারছে না। সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা। ছেলেরা বসতেও পারছে না। ডাক্তার ও নার্সরা বলছেন, সারবে। কিন্তু ছেলেদের কষ্ট তো সইতে পারছি না।’
হাসপাতাল থেকে সুস্থতার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেও আবার আসতে হচ্ছে হাসপাতালে। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এমন আরও কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে। কেউ বলছেন তড়িঘড়ি করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমন অভিযোগ করেন জুরাইন থেকে ২১ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসা রিনা আকতার। ছেলে রায়হানের ডেঙ্গু পরীক্ষার রেজাল্ট পজেটিভ হলে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করেন ১৬ জুলাই। ২১ চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেও নানা সমস্যা হচ্ছিল। অবস্থার অবনতি হলে ২৫ জুলাই আবার হাসপাতালে এলে চিকিৎসকেরা ভর্তি করতে পরামর্শ দেন। তারও ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে।
ছোট্ট শিশুটিকে কাতরাতে দেখা যায়। নানাভাবে তার সমস্যার কথা বোঝানোর চেষ্টা করছে অবুঝ শিশুটি। রিনা আকতার জানালেন, ব্যথায় হাত নাড়াতে পারছে না রায়হান। তাই কান্নাকাটি ও চিৎকার করছে।
এ বিষয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপতালের পরিচালক নিয়াতুজ্জামান জানান, কমপ্লিকেটেড রোগী বা যারা এর আগেও আক্রান্ত হয়েছে এবং অন্য রোগে আক্রান্ত যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, কিডনি, ক্যান্সার তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা একটু বেশি।
তিনি বলেন, করোনার ক্ষেত্রে যেমন সুস্থ হওয়ার পরবর্তী সময়ের জটিলতা ছিল, এবার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও কিছুটা দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে শতভাগ সেরে উঠা যায়। কিন্তু যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের স্বাভাবিক সুস্থতা ফিরে আসতে কিছুটা দেরি হয়। এ কারণে এবার আমরা এরকম কিছু কিছু জটিলতা দেখতে পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: দেশে ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭৩১