বিশেষ সংবাদ
লাকসামে রেললাইনের পাশে বিদ্যালয়, ঝুঁকিতে শতাধিক শিক্ষার্থী
শিশুদের শিক্ষাজীবনের শুরুটা হয় প্রাথমিক স্কুল পা রাখার মাধ্যমে। আনন্দ ও উচ্ছাসের সঙ্গে শিশুরা শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চান অভিভাবকরাও। কিন্ত কুমিল্লার লাকসামের তপইয়া ময়ুরেন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকরা।
তপইয়া ময়ুরেন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নেই সীমানা প্রাচীর। পাশ দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। এতে বিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষকরা। এমতাবস্থায় ঝুঁকির কথা ভেবে অভিভাবকরাও সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এখানে দ্রুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানিয়েছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরাও।
সূত্রমতে, লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের পাশে লাকসাম উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের তপইয়া গ্রামে তপইয়া ময়ুরেন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ১১৫জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ঝুঁকিমুক্ত হলে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হয়তো আরও বেশি হতো।
আরও পড়ুন: রেললাইন ছেড়েছেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা, ট্রেন চলাচল শুরু
তপইয়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী আবদুল ওয়াদুদ খোকন বলেন, এখানে মনপাল, তপইয়া ও কৃষ্ণপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন।
সীমানা প্রাচীর না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। এখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কৃষ্ণপুরের অভিভাবক রাশিদা খাতুন বলেন, ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকি। কখন না ট্রেন আসে। কখন আবার সে রেললাইনে উঠে পড়ে।
স্কুলের শিক্ষক বিদ্যুত পাল বলেন, ট্রেন এলে আমরা রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে যাই। যাতে শিক্ষার্থীরা রেল লাইনে উঠতে না পারে। এছাড়া এলাকাবাসীও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তৎপর থাকেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে উপজেলায় আবেদন করেছি। দুই বছর ধরে এই বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সেটি অনুমোদন হবে।
আরও পড়ুন: নাটোরে আবারও ভেঙেছে রেললাইন
৩২১ দিন আগে
জামালগঞ্জে জলাশয় শুকিয়ে অবাধে মাছ নিধন, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা জামালগঞ্জ। অসংখ্য ছোট বড় হাওর, নদী-নালা, খাল-বিল সমৃদ্ধ জামালগঞ্জ এক সময় দেশিয় মাছে ভরপুর ছিল। রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, শোল-গজার, কালি বাউশ, টেংরা, পাবদা, শিং-মাগুর ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের ভান্ডার ছিল উপজেলাটি।
কালের বিবর্তনে এবং মনুষ্য সৃষ্ট নানা সমস্যা ও প্রকৃতিবিনাশী কার্যকলাপে ধ্বংস হচ্ছে দেশিয় মাছের ভান্ডারখ্যাত হাওর। অনেক প্রজাতির মাছ এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তির পথে আরও অনেক প্রজাতির মাছ। হাওরে প্রতিবছর মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, চায়না দুয়ারীসহ কারেন্ট জাল ও বিল শুকিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য। হাওরে এখন অর আগের মতো দেশিয় মাছ ও শামুক-ঝিনুক, কচ্ছপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী তেমনটা চোখে পড়ে না।
বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ইজারাদার ও সুবিধাভোগী দল শ্যালো মেশিন বসিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছে। এমনকি বিলের তলা শুকিয়ে কাদা মাটির গভীর থেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মাছ বের করে বংশ নিপাত করছেন তারা।
অভিযোগ আছে, বিগত সরকার ব্যক্তির নামে ইজারা প্রথা বাতিল করে মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যাতে করে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। মৎস্যজীবী সমিতির নামে বিল নিয়ে তৃতীয় পক্ষ হচ্ছে সুবিধাভোগী। নামমাত্র টাকায় বিক্রি হয়ে যায় অনেক সমিতি। বছরের পর বছর ধরে চলছে মৎস্য ও জীববৈচির্ত্য নিধন। প্রশাসনের চোখের সামনে মৎস্য আইন ভঙ্গ করে ছোট বড় সরকারি বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করছে সুবিধাভোগীরা। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু-একটা অভিযান চালালেও— তা লোক দেখানো। বর্তমান সরকারের আমলেও ধারাবাহিকভাবে বিল শুকিয়ে দেদার মাছ শিকার চলছে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২০ একর পরিমাণের নিচে ৪১টি বিল রয়েছে— যার আয়তন ১৫৬ দশমিক ৩০ হেক্টর। আর ২০ একর পরিমাণের উপরে ৩৯টি বিল— যার আয়তন ১ হাজার ৯১১ দশমিক ৩০ হেক্টর। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দিঘা, বাইম দাইর, গঙ্গাধরপুর নদী জলমহালের একাংশ (উরা বিল) শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হয়েছে। একের অধিক শ্যালো বসিয়ে বিল শুকানো চলছে দিরাই-চাতল গ্রুপ, আয়লা-ছাগাইয়া গ্রুপের চিনাইধরা, ধলাপাকনা, ঢালিয়া ও নয়াখাল নাইন্দা জলমহালে।
দিরাই চাতল বিলের ইজারাদার হরিনগর-নোয়াগাঁও-নলোয়ারপাড়-জগন্নাথপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন বলেন, ছয় বছরের জন্য উন্নয়ন স্কিমে দিরাই চাতল বিল পেয়েছি। বিল ভরাট ও মাটিতে গ্যাস হওয়ার কারণে মাছ থাকে না। বিল খননের জন্য জেলা প্রশাসক স্যার, জামালগঞ্জের ইউএনও স্যার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়েছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে খনন কাজ শেষ করব।
উল্লেখ্য, গত দুই বছরও (২০২৩-২৪) খননের কথা বলে বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করা হয়েছে। অথচ জলমহালে কোনো খনন কাজ করা হয় নাই। বিভিন্ন বিলে বার বার ইজারা আইন ভঙ্গ করছে এসব মৎস্যজীবী সমিতি।
পাগনার হাওরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৎস্যজীবী বলেন, আমরা বর্ষায় মাছ ধরলে জাল পোড়ানো হয়। এখন বিল শুকিয়ে মাছ ধরায় তাদের কিছুই হয় না। টাকা থাকলে সব কিছু করা যায় এ দেশে। কয়দিন পরে হাওরে আর মাছ পাওয়া যাইত (যাবে) না। বিষ মাইরা মাটির তল থেকে মাছ বের করে। এখন তো আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।
সমাজকর্মী মো. আব্দুর রব বলেন, হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। ইজারাদার বিল শুকিয়ে অবাধে মাছ আহরণ করছে। যারা বিল শুকাচ্ছে তাদের শক্তির উৎস কোথায়? এভাবে বিল শুকিয়ে মাছ ধরলে দেশিয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। যে সমস্ত সমিতি ইজারা আইন ভঙ্গ করে তাদের প্রতিহত করতে হবে। প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
জামালগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. কামরুল হাসান বলেন, আমি বিভিন্ন জলমহালে প্রতিদিন তদারকি করছি। কোথাও শ্যালো মেশিন দিয়ে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করতে দেখলে, সঙ্গে সঙ্গে মেশিন বন্ধ করছি। দীঘা ও বাইম দাইর জলমহাল শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় সমিতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যে সমস্ত সমিতি ইজারা আইন ভঙ্গ করবে— তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া আছে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে যারা বিল শুকিয়ে মাছ ধরে— তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি আপনার মাধ্যমে জানলাম জামালগঞ্জে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সমিতির নিবন্ধনের বৈধ-অবৈধতার বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, মৎস্যজীবী সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে সমবায় অফিস। সমিতির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকীন নূর বলেন, দিরাই-চাতল খননের জন্য অনুমতি নিয়েছে। যে অংশটুকু খননের জন্য অনুমতি নিয়েছে সেইটুকুই শুকাবে। যে সমস্ত বিল শুকিয়ে মাছ ধরা হয়েছে, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ইজারাদার বিল শুকিয়ে মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছে। তাদের ইজারা চুক্তি বাতিল করা হবে। কোনো অজুহাত দেখিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ নেই ইজারাদারের।
দিরাই-চাতল বিল শুকানোর প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো অনুমতি দেই নাই।
৩২২ দিন আগে
মেহেরপুরে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ, কৃষকের বাঁচবে সময় কমবে শ্রম
কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলস কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এমনিই একটি উদ্ভাবন হলো ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে যেমন কৃষকের সময় ও শ্রম খরচ কমবে তেমনি লাভবান হবেন। এরই অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ মৌসুমে ব্লক প্রদর্শনীর মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে গাংনী উপজেলায়।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলার গোপালনগর গ্রামের গড়ানের মাঠে সমলয় পদ্ধতিতে এই চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনও প্রীতম সাহা বলেন, কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
এবছর মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলায় ১০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরোধান চাষাবাদের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধান চাষের জন্য বীজতলার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপন করে তিন সপ্তাহে মধ্যে ধানের চারা উৎপাদন করা এবং যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপণ, সার প্রয়োগ পরিচর্যা এমনকি ধান কাটা ও মাড়াই হবে যন্ত্রের সাহায্যে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে ব্লক প্রদর্শনীর মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে জমিতে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
‘সমলয়’ পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদে শ্রমিক সঙ্কট নিরসন, উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ ও সময় বাঁচবে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন।
তিনি জানান, বোরো মৌসুমে গাংনী উপজেলা গোপলনগর গড়ান মাঠ এলাকায় জমিতে সাড়ে ৪ হাজার প্লাস্টিকের বিশেষ কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে মাটিতে জৈব সার সংমিশ্রণে প্লাস্টিকের ট্রেতে ধান বীজ বপন করা হয়েছে। সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদে বীজ বপন থেকে সার প্রয়োগ ও ধান কাটা মাড়াই সবকিছু করা হবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে।
তিনি বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ, কৃষকেরা অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকরণ হওয়ার কারণে শ্রমিক সংকট নিরসন হবে। ফসলের ভালো ফলনসহ বিভিন্ন সুবিধা পাবে কৃষকরা। তাই এই অঞ্চলের কৃষকদের সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে।
এসময় ওই এলাকার দুই শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, চলতি বছরে এজেলার ১৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় গাংনী উপজেলার গোপালনগর গ্রামে ৬০ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে রাইস-ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এছাড়া সদর উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের মাঠে ৬৫ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে এই পদ্ধতিতে ধান রোপন করা হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা (ডিডি) বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো, সমলয় এবং শ্রম সাশ্রয় করা। তিনি বলেন, কৃষকের স্বার্থে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। এ প্রযুক্তির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে। ফলে তারা লাভবান হবেন।
৩২৩ দিন আগে
খুলনা এখন মাদক চোরাচালানের বড় রুট, যাচ্ছে ঢাকা ও সীমান্তের ওপারে
মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে খুলনা। মাদক কারবারিরা নানা কৌশল অবলম্বন করে কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে যশোর রুটে ইয়াবা চোরাচালান করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সড়কপথকে মাদক কারবারিরা রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে।
তবে খুলনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাদক উদ্ধারসহ মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( কেএমপি)’র সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের অভিযানে রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম (২৫) এবং ইমরান খানকে (৩১) আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার পিস ইয়াবা, ৪টি এক হাজার টাকার জাল নোট, ২টি মোবাইল ফোন ও গ্রেপ্তারককৃত রোহিঙ্গার কাছ থেকে বাংলাদেশের ভূয়া এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। খুলনায় এই প্রথম সর্বোচ্চ ইয়াবার চালানটি আটক করা হয় গতকাল।
আটক ইমরান খান জানায়, রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম যশোর কোতয়ালি থানার ঘোষপাড়া পালবাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে এবং তারা দুজনে মিলে নানা কৌশল অবলম্বন করে কক্সবাজার থেকে খুলনা হয়ে যশোর রুটে ইয়াবা চালান করে। ইমরান যশোরের কেশবপুর থানার শ্রীফলা গ্রামের মো. শহিদুল খানের ছেলে এবং রোহিঙ্গা তৌহিদুল ইসলাম কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং ক্যাম্প- ১ ইস্ট, এ ১৬ ব্লকের বাসিন্দা মোজার মিয়ার ছেলে।
খুলনা মেট্রোপলিটনের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কুতুবউদ্দিন জানান, এই প্রথম কেএমপি’র সর্বোচ্চ ইয়াবার চালানটি আটক করেছেন তারা। এর আগে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘মাদক নিয়ে বিবাদে’ বগুড়ায় বন্ধুর হাতে যুবক নিহত
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গা তৌহিদুল করিম এর কাছ থেকে একটি ভুয়া বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, জব্দকৃত মাদকের উৎস, পরিবহনে সহায়তাকারী, অর্থ লগ্নিকারীসহ মাদকের গডফাদারদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চোরাকারবারিরা সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা থেকে খুলনার চুকনগর অথবা আরেক সীমান্তবর্তী জেলা যশোর থেকে কেশবপুর হয়ে চুকনগর এবং অভয়নগর হয়ে ফুলতলায় বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে।
অন্যদিকে, যশোরের বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনকেও মাদক বহনের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। এদিকে, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে ভারত থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য খুলনা শহরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই চক্রের সদস্যরা সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে সুকৌশলে নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিবহন করছে। শহরের জিরো পয়েন্ট ও খানজাহান আলী থানার পথের বাজার এলাকা এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনে করে মাদকদ্রব্য দৌলতপুর ও খুলনা স্টেশনে পাচার হচ্ছে বলে জানা যায়। মাদক পাচারের কাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তালিকায় জানানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে লুকিয়েও মাদক পাচার হচ্ছে। এরপর বিভিন্ন স্তরের কারবারিদের হাত ঘুরে এসব মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রায় প্রতিদিনই মাদকদ্রব্যসহ ব্যবসায়ীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা অনেকেই আবার একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এ ছাড়া খালিশপুর থানা এলাকায় ৪৪টি, খুলনা সদরে ১৪টি, খানজাহান আলীতে ১৪টি, লবণচরায় ১১টি, দৌলতপুরে ১০টি, আড়ংঘাটায় ৭টি, সোনাডাঙ্গায় ৬টি এবং হরিণটানা থানা এলাকায় ৩টি স্থানে মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা হওয়ার তথ্য ওই তালিকায় উঠে এসেছে। এছাড়া তেরখাদা উপজেলার ৭টি, দাকোপে ৯টি, পাইকগাছায় ৪টি, কয়রায় ২টি গ্রামে এবং বটিয়াঘাটায় ২টি গ্রাম, দিঘলিয়ায় ৩টি এলাকায় এবং রূপসা উপজেলার তিনটি গ্রামসহ পাশের এলাকায় মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় বলে জানা যায়।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সোনাডাঙ্গার বাসস্টান্ড থেকে ৪৪টি বাস যাতায়াত করে। ফলে এগুলোর মাধ্যমে যশোর, সাতক্ষীরাসহ সীমান্ত এলাকায় মাদক চোরাচালান হয়ে থাকে। এর মধ্যে অনেক মাদক ঢাকায় প্রবেশ করে, আর কিছু মাদক সীমান্ত অতিক্রম করে যায়।
আরও পড়ুন: অবৈধ মাদকের হটস্পট কারওয়ান বাজার রেলওয়ে
৩২৪ দিন আগে
৩ দিবস ঘিরে জমজমাট গদখালি ফুলের বাজার, শত কোটির ফুল বিক্রির প্রত্যাশা
বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি অঞ্চলের ফুলচাষিরা। আসন্ন তিনটি দিবসকে সামনে রেখে নিজেদের খেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাদের আশা সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হতে পারবেন।
সরজমিনে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১৩ ধরণের ধরনের ফুল।
বৃহস্পতিবার(৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গদখালীতে ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত বাহারি সব ফুল নিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছেন তারা। হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল ফুটে যাওয়া বাজারে ফুলের জোগানও বেশি। গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। মাত্র দুই দিন ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুন। যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা দরে। গত বৃহস্পতিবার সেই গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা দরে। ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন সামনের এই তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
আরও পড়ুন: শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য যশোরের চাষিদের
এদিন বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৮- ১০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, জিপসি আঁটি প্রতি ৪০-৫০ টাকা, গাধা প্রতি হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে ৮-১২ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩-৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎসব যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দাম ততই বাড়ছে।
ফুল চাষি পলাশ হোসেন বলেন, ১০ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত দুদিন আগে গোলাপের দাম ছিল ৫ টাকা। আজ ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হতে পারবেন।
ফুল চাষি সোহান হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। এবছর ফুলের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে। এখন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে দিবসগুলোতে দাম আরও বাড়বে এবং লাভবান হতে পারব।
কুষ্টিয়া থেকে ফুল কিনতে আসা ফুল ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন বলেন, প্রায় ১৫ হাজার টাকার ফুল কিনেছি। গোলাপ ফুলটা বেশি কিনেছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর বেশি লাভ হবে বলে আশা করা যায়।
গদখালি ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে ফুল বেচাকেনা বেশি হয়। তিন দিবসকে ঘিরে গদখালী বাজারে ফুলের বেচাকেনা জমে উঠেছে। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দামও ততই বাড়ছে। বাজার দর ভালো পেয়ে ফুলচাষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সকলেই খুশি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি অঞ্চলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করেন চাষিরা। প্রায় ৬ হাজার চাষি এ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: গদখালীতে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা চাষিদের
৩২৪ দিন আগে
ঢাকায় কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি ঢাকা। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দূষণে শহরটি অনেক আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার ওপর গড়ে উঠেছে যত্রতত্র প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এতে করে ভুগতে থাকা এই শহরটির ওপর নতুন করে চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মত, শিক্ষাকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি হয়েছে, যা সুষ্ঠু নগর-পরিকল্পনার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতীতের সরকারগুলো মালিকপক্ষকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় শিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে ঢাকার বর্তমান জনসংখ্যা দুই কোটি ৪৬ লাখের বেশি। আর ঢাকাকে বিশ্বের বসবাসের সবচেয়ে অনুপযোগী শহরের একটি বলছে ইআইইউ গ্লোবাল লাইভেবিলিটি ইনডেক্সের ২০২৪ সালের সমীক্ষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যটতা বসবাসের অনুপযুক্ত, ঢাকার অবস্থান তারও নিচে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ৫৩টি পাবলিক ও ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যদিও এই পরিসংখ্যানে ইবাইস ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কোনো তথ্য যুক্ত করা হয়নি।
আরও পড়ুন: কৃষি সুরক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে বাকৃবি-মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা
২০২২ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ১৭টি, আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬৯টি। অর্থাৎ সরকারি-বেসরকারি মোট ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ৮৬টি। দেশের ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৪১ হাজার ৯৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার ৫১৩ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৮৩ জন। অন্যদিকে, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৭১ জন।
২০২২ সালের পর গত তিন বছরে আর কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি ইউজিসি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। সীমিত আসন সংখ্যা এবং জাতীয় শিক্ষা বাজেটে উচ্চশিক্ষাখাতে বরাদ্দ ঘাটতি থাকার কারণে উচ্চশিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায়, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের আদলে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার।
ঢাকায় কেন এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণের কারণেই ঢাকায় এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউজিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এ জেলায় বর্তমানে ৫৭টি প্রাইভেট ও ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
ঢাকায় এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কিনা—জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘কথা হচ্ছে, প্রয়োজন থাকলেও যেখানে-সেখানে যেমন-তেমন লেখাপড়া করানো আর সার্টিফিকেট দেওয়া—এটা তো সার্টিফিকেট বাণিজ্য! এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এজন্য কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করাও দরকার বলে মনে করেন এই শিক্ষা অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘এটির দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের। তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ধারা ৬ এর ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, পাঠদানের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমন রুম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষের জন্য পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকতে হবে।
৩ উপধারায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যূন ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে।
ঢাকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশই কিন্তু এই শর্ত পূরণ করছে না—প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘ইউজিসি কয়দিন পরপর বলে যে ক্যাম্পাস করতে হবে, কিন্তু শিক্ষার মান নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া হয় না। কী পড়ানো হচ্ছে এবং কী প্রয়োজনে এগুলো হচ্ছে—সেটি আগে দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের কারণে এমনটি করা হয়েছে। ঢালাও বাণিজ্যিকীকরণ তো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাইভেট খাতের বিকাশ ঘটলে সমস্যা নেই, কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে তো তাদের আসতে হবে! কয়দিন পরপর বলেন—প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে হবে। অথচ শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের একটি উপায়। এ ব্যাপারে তাই আইন কঠোর করতে হবে।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেছে স্বীকার করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠান বড় বড় ক্যাম্পাস করে চলে গেছে, বেশিরভাগই গেছে; কিন্তু বাকিরা গরজ করছে না, আইনের তোয়াক্কাই করছে না। এই তোয়াক্কা করানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।’
নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে বেমানান
ঢাকা শহরের এত এত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এটা একেবারেই বেখাপ্পা। যেখানে আমরা বিক্রেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছি, সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে আরও কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।’
‘এমনকি যখন বিকেন্দ্রীকরণের কথা ওঠে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নিয়ে যেতে বলা হলো, তখনও আশুলিয়াসহ ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে তারা ক্যাম্পাস স্থাপন করল। অথচ ঢাকার বাইরে এতগুলো বিভাগীয় শহর আছে, জেলা শহর আছে; সেখানে যদি এসব বিশ্ববিদ্যালয় যেত, তাহলে ঠিক হতো।’
উদহারণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন রংপুর থেকে একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকায় এসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সেখানে হতো, তাহলে তারা সেখানে বসেই লেখাপড়া করতে পারতেন।’
আগের সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের এই অধ্যাপক।
তার ভাষ্যে, ‘বিগত সময়ে যারা মন্ত্রী ও আমলা ছিলেন, তারা তাদের মতো করে পরিচিত লোকজনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারে বিকেন্দ্রীকরণ নীতি নিয়ে ভাবার মতো সময় তাদের ছিল না।’
ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ইচ্ছামাফিক এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ তারা ঢাকা ছেড়ে যেতে চাননি। এর ফলে এটি নগরীতে অনেক বেশি চাপ তৈরি করেছে। এতগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শহরের জন্য কখনোই ভালো কিছু নয়। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তগুলো নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।’
ঢাকা বিকেন্দ্রীকরণের বিপরীত
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকারগুলো তাদের মতামতের বিপরীতে গিয়ে ঢাকাকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গ তুলে নগর-পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ায় যাওয়া মানে সেটি ঢাকার বাইরে নয়। পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ঢাকার (জেলার) মধ্যেই কোথাও জমি ভরাট করে তৈরি হয়, তাহলে সেটিকে ঢাকার বাইরে যাওয়া বলে না। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে নতুন জেলা কিংবা বিভাগীয় শহর হতে হবে। সেটাকে বলে বিকেন্দ্রীকরণ।’
তার অভিযোগ, ‘ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে সরে গিয়ে যদি আশুলিয়া কিংবা বিরুলিয়ায় ক্যাম্পাস স্থাপন করা হয়, তাহলে সেটিকে বিকেন্দ্রীকরণ বলে না। আর এ কারণে ঢাকার আয়তন বাড়ছে, গ্রেটার ঢাকা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বলতে একেবারে ঢাকা জেলা পার হতে হবে, কিন্তু তারা বলছেন ঢাকা শহর ছাড়লেই হবে। সরকার আসলে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রাহ্য না করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমনটি হয়েছে।’
তার সঙ্গে একই মত পোষণ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি—সবই ঢাকাকেন্দ্রিক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এগুলোকে বিকেন্দ্রিকরণ করা উচিত।’
ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হচ্ছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ শিক্ষক। বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। ঢাকার বাইরের মানুষও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারেন, সেরকম কার্যক্রম প্রণয়ন করা উচিত।’
ঢাকার সবকিছুই অপরিকল্পিত
কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ঢাকায় কোনোকিছুই পরিকল্পনামফিক করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে আমাদের যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোকে কোয়ালিটি এডুকেশনের (মানসম্পন্ন শিক্ষা) দিকে নিয়ে যেতে চাই।’
ড. আনোয়ার বলেন, ‘এই চিন্তা মাথায় রেখে মানের ঘাটতি থাকলে নতুন করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় করতে আমরা সর্বাত্মক নিরুৎসাহিত করব। পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে দেশে এখন ১৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এত ছোট দেশে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়! একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে দুইশ থেকে পাঁচশ বিঘা পর্যন্ত জমি লাগে এবং আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ খুবই কম।’
‘অধিকাংশ জমি জলাভূমি ও কৃষিজমি। এসব ভরাট করে আমাদের উন্নয়নের অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, হোক সেটা পাওয়ার প্ল্যান্ট কিংবা ইন্ডাস্ট্রি। এসবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যায় একটা কমপোনেন্ট, যেটা আসলে খুব অল্প জায়গা নিচ্ছে। তবে খুব সচেতনভাবে এ বিষয়টির পরিচালনা করা দরকার।’
নগর-পরিকল্পনাবিদরা তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারি পর্যায় থেকে যদি আসে, পলিসিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটাকে উৎসাহিত করব। শিক্ষার সঙ্গে সোসাইটিকে কমিউনিকেট করার জন্য যে ধরনের পলিসি ও কাঠামোগত সাপোর্ট দরকার, সেটা ডেভলপড করা অত্যন্ত জরুরি।’
পরিকল্পিত শহর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেই দিক থেকে নগরের সিভিক ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে কোন কোন কম্পোনেন্টগুলো থাকবে, কোথায় থাকবে, সেটা কতটা থাকবে, কতটা থাকলে ওভারক্রাউডেড হবে না, নগরীর বাসিন্দাদের জন্য ক্ষতিকর হবে না—সেই জিনিসগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
ধীরে ধীরে ঢাকা থেকে বেরোচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ। তার কথায়, ‘এখন সবগুলোই আস্তে আস্তে শহরের বাইরে যাচ্ছে। আমাদের তিন বিঘা জমি যেটা দরকার, এক একর জমি দরকার—সেটা করতে গিয়েই সবাই ঢাকার বাইরে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় তো ঢাকার বাইরেই ছিল, কিন্তু ওটা এখন শহর হয়ে গেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ও ঢাকার প্রান্তে চলে গেছে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য তিন বিঘা জমির যে রিকোয়ারমেন্ট আছে, সেটা তারা কোথায় পাবে? এগুলো ঢাকার বাইরে শিফট করতে একটু সময় নিচ্ছে, তবে শিফট করার প্রক্রিয়া চলমান আছে। আর শিফট না করলে তো (আমরা) সার্টিফাই করছি না!’
আরও পড়ুন: ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণিসম্পদ ডিজিকে বাকৃবির সংবর্ধনা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করার নিয়ম রয়েছে, কিন্তু সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘আমরা মনিটর করছি। যারা ঢাকার মধ্যে আছে, সেগুলোকে আমরা সনদের জন্য এন্টারটেইন (বিবেচনা) করছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢাকার বাইরে যাচ্ছে, তারা কনভোকেশন করতে পারছে না, কিছুই করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটা সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এগোতে চাই। খবরদারি কিংবা জুলুমে আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের একটা মেকানিজম আছে, সেটা পূর্ণ না করলে তারা কনভোকেশন কিংবা অন্যকিছু করতে পারে না। ফলে ওরা নিজেদের স্বার্থেই ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে।’
৩২৫ দিন আগে
সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার: প্রধান সূচক বাড়লেও বেহাল দশা এসএমই খাতে
সপ্তাহব্যাপী লাগাতার উত্থানে রাজধানীর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এক নাগাড়ে বেড়েছে সূচক, লেনদেন এবং বাজার মূলধন। তবে প্রধান সূচক বাড়লেও সপ্তাহ ভালো যায়নি এসএমই খাতে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ কার্যদিবসে (২-৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৭ পয়েন্ট। সূচকের ৫১১২ পয়েন্ট এক সপ্তাহের লেনদেনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১৭৯ পয়েন্টে। এতে করে এক সপ্তাহে ডিএসইক্স বেড়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বেড়েছে ডিএসই'র বাকি দুই সূচকও। শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এক সপ্তাহের লেনদেনে ব্লু-চিপ কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৯ পয়েন্ট।
প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ সূচক বাড়লেও এবারের সপ্তাহ ভালো যায়নি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শেয়ার এসএমই খাতে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই'র এসএমই সূচক কমেছে ৪৯ দশমিক ৯ পয়েন্ট, যা আগের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কম।
ব্যবসায়ীরা এসএমই খাতের এ বেহাল দশার জন্য দায়ী করছেন চলমান উচ্চ সুদের মুদ্রানীতিকে।
আরও পড়ুন: উত্থানের ধারা অব্যাহত পুঁজিবাজারে
নিজেদের বেহাল দশা প্রসঙ্গে কাপড় ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন বলেন, এসএমই খাতের এসব ব্যবসা অনেকটাই ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। সুদের হার বেশি হওয়ায় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার সাহস করছেন না। এতে করে ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে না। একদিকে বিনিয়োগের অভাব, অন্যদিকে ঋণ গ্রহণে অনীহা এবং পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে দেশের এসএমই খাত টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে এসএমই খাতের বর্তমান দুরাবস্থার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী তারেক হোসেন বলেন, কোম্পানির ভালো-মন্দের ওপরে পুঁজিবাজারে দাম ওঠানামা অনেকখানি নির্ভর করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাজার খারাপ হওয়া এ খাতের সূচকেও শনির দশা চলছে।
তবে সাপ্তাহিক বিবেচনায় সার্বিকভাবে লেনদেন বেড়েছে শেয়ারবাজারে। সপ্তাহ শেষে পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ার এবং ইউনিট কেনাবেচার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকা, যা এর আগে ছিল ১ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা।
বেড়েছে প্রতিদিনের গড় লেনদেনও। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ৩৩৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা। এতে করে সপ্তাহান্তে লেনদেন বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।
লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে ডিএসই'র বাজার মূলধনও। পাঁচ দিনে ডিএসই'র বাজার মূলধন বেড়েছে ৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।
পুরো সপ্তাহজুড়ে দরবৃদ্ধির তালিকায় ছিল বেশিরভাগ কোম্পানি। দাম বেড়েছে ২৬৫ কোম্পানির, কমেছে ১০৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, নতুন কমিশন কখনোই বাজারে হস্তক্ষেপ করে না। এতে করে বাজার নিজের গতিতে চলার সুযোগ পায়। সে হিসাবে রাতারাতি পুঁজিবাজার ফুলেফেঁপে ওঠে না, আবার বিনিয়োগকারীদের ভরাডুবিও হয়না। সব মিলিয়ে কমিশনের বাজারমুখি সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেছে গেল পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেনে।
পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেনে দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ারের মধ্যে এ ক্যাটাগরির কোনো কোম্পানি নেই। তালিকায় থাকা কোম্পানির মধ্যে পাঁচটি বি গ্রুপের এবং বাকি পাঁচ জেড গ্রুপের। অন্যদিকে দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানির মধ্যে এ ক্যাটাগরির কোম্পানি আছে চারটি।
সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দাম বাড়তে থাকায় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশের আগ্রহ তৈরি হয়েছে নিম্নমানের কোম্পানির শেয়ারের প্রতি। এতে করে ঝুঁকি নিয়েই পুঁজিবাজারে নিজেদের অর্থলগ্নি করছেন তারা।
বাজারে নিম্মমানের কোম্পানির শেয়ারের সোরগোল প্রসঙ্গে ডিএসই'র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, এখনো বাজারে তারল্য সংকট বিদ্যমান আছে। বাজারে তারল্য সংকট চলতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ে। তারা রাতারাতি মুনাফা করতে গিয়ে কিংবা পূর্বের হওয়া লোকসান সামাল দিতে নিম্নমানের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা বেশিরভাগ কারসাজির ঘটনা ঘটে এসব কোম্পানির শেয়ার কেন্দ্র করেই।
খাতভিত্তিক শেয়ারে এতদিন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুবিধা করতে না পারলেও গত পাঁচ কার্যদিবসে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এ দুটি খাত। তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫, কমেছে ৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬ ব্যাংকের শেয়ারের দাম। সপ্তাহ শেষে ব্যাংকের শেয়ারের সামগ্রিক দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশ এবং শেয়ার ক্রয়বিক্রয়ের পরিমাণ ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে টানা উত্থানে শেষ হলো সপ্তাহ
অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সর্বসাকুল্যে কোনো শেয়ারের দাম কমেনি। তালিকাভুক্ত ২৩ কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২২ এবং অপরিবর্তিত আছে ১ কোম্পানির শেয়ারের দাম। পাঁচদিনে এ খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ এবং হাতবদলে ক্রয়-বিক্রয় ছাড়িয়ে গেছে ১১৫ শতাংশ।
আগের তুলনায় পুঁজিবাজারে রিটার্ন বেড়েছে ১ শতাংশের ওপর। এরমধ্যে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি রিটার্ন দিয়ে শীর্ষে আছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংক খাতে রিটার্ন বেড়েছে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলতি মাসে ঘোষিত হওয়া নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে অনেকে প্রত্যাশা করছেন নতুন করে সুদের হার না বাড়ানোর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে, এবারের মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমূলক। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে এ মুদ্রানীতি ঘোষিত হবে। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
৩২৫ দিন আগে
নানা অব্যবস্থাপনায় জাবিতে কমেছে অতিথি পাখির আগমন
শীতের আড়মোড়া ভাঙতেই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জলাশয়ের পানিতে ভেসে থাকা শাপলা পাতার ওপর অতিথি পাখির জলকেলি, দলবেঁধে উড়ে যাওয়া, আবার ফিরে এসে পানিতে বসা, জলাশয়ের বুক চিরে এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছোটাছুটি করা ও মনোমুগ্ধকর কিচিরমিচির শব্দ— শীতকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাশয়ের চিত্র এমনই দেখা যেত। কিন্তু এখন যেন সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। জাবিতে কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখির সংখ্যা।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় শীতকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে অতিথি পাখিরা আসত। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে জাবির লেকগুলোতে প্রথমবারের মতো অতিথি পাখি আসে। এরপর ২০১৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবন-সংলগ্ন লেক, বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র (ওয়ালইড লাইফ রেসকিউ সেন্টার), জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল-সংলগ্ন লেক ও পরিবহন চত্বরের পেছনের লেকগুলো অতিথি পাখির মূল অভয়ারণ্য। এখন লেকগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুখরিত ক্যাম্পাস। তবে দুই তিন বছর আগের তুলনায় তা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
অতিথি পাখি আসার আগে তাদের সুস্থ ও সুন্দর আবাসস্থল নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ দায়িত্বে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত লেকগুলো পরিষ্কার করে থাকে। তাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতে প্রশাসন ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন সচেতনতা ও তথ্যমূলক ব্যানার, ফেস্টুন টানায়। এ বছরও এসব উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় নির্বিচারে অতিথি পাখি শিকার, বিক্রি হচ্ছে বাজারে
অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয় জলাশয়গুলোতে ফোটা লাল শাপলা। লাল শাপলার চাদরে পাখিদের বিচরণের দৃশ্য মন কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।
প্রতি বছর শীতপ্রধান দেশ মঙ্গোলিয়া, নেপাল, সাইবেরিয়া ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে। অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের শুরুর দিকে দেশে আসতে শুরু করে পাখিরা। বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখিদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক, পাতারি অন্যতম। এ ছাড়াও আছে খঞ্জনা, পান্তামুখী, নর্থগিরিয়া, কমনচিল, কটনচিল, পাতিবাটান, পান্তামুখী, বুটি হাঁস, বৈকাল ইত্যাদি প্রজাতির পাখি। তবে জলাশয়গুলোয় পাতি সরালির বিচরণই বেশি লক্ষণীয়।
অতিথি পাখি দর্শনের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে ভোরে ও সূর্য ডোবার আগে। এ সময় পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায় জলাশয়ের ওপর। নিভু নিভু সূর্যের আলো, শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে শত শত পাখির কিচিরমিচির শব্দে এ সময়ে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাইরের অনেক দর্শনার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে অতিথি পাখি দেখতে ছুটে আসেন তারা।
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা হৃদয় হাসান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতি বছরই আপনাদের ক্যাম্পাসে আসি অতিথি পাখি দেখতে। ঢাকা শহরে এই সুযোগটি নেই। বাসার ছোট ছেলেমেয়েদের এনেছি এবার। তারাও এই সময়টা খুব উপভোগ করছে।’
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, আগের তুলনায় গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আনাগোনা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোর পাখিদের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জলাশয়ে পাখিরা থাকে, সেগুলো এখন তাদের বসবাস-উপযোগী নয়। জলাশয়গুলোর আশপাশে অধিক লোকসমাগম ও শব্দদূষণই এর প্রধান কারণ।’
‘পরিবহন চত্বরের পেছনে যে লেক, সেই লেকের ধারে সারা দিনই লোকজন থাকে। এর জন্য পাখিরা ওই লেকে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাছাড়া অন্যান্য লেকেও এবার পাখির সংখ্যা খুবই কম।’
ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় যে লেক, সেটি হচ্ছে ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার-সংলগ্ন লেকটি। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় ওই লেকে পাখির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে লেকটি এখন পানা দিয়ে ভরে গেছে। পরিষ্কার না হওয়ায় পাখিরা পুরো লেকজুড়ে বসতে পারে না। অল্প কিছু অংশে পাখি বসে। তবে এবার প্রশাসন লেকটি পরিষ্কার করেনি। আমি নিজে প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কয়েকবার অবগত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিথি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত না করা হলে পাখির সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগরের অতিথি পাখি তথা সকল বন্যপ্রাণীর জন্য সুষ্ঠু প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, ‘এ বছর গতবারের তুলনায় পাখি বেশ কম এসেছে। আটটি লেকের মধ্যে মাত্র দুটিতে পাখি বসতে দেখা গিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই পাতি সরালি। ডব্লিউআরসি-সংলগ্ন লেক বাদে, অপর একটি লেকে পাখি বসলেও মাত্র দুই হাজারের কাছাকাছি পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে । অধিকাংশ লেক কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় পাখিরা সেখানে বসতে চায় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য, কিন্তু ক্যাম্পাসে এসে দেখছি উল্টো চিত্র। আগের মতো আর পাখি নাই। জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘অতিথি পাখির সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে— এ ব্যাপারে আমরা অবগত। কিন্তু প্রশাসনের উচ্চ স্তরের সদিচ্ছার অভাবের কারণেই দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।’
অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, গাছ কাটা, লেক ভরাট ও পরিষ্কার না করাসহ আরও কিছু সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে পারলেই অতিথি পাখির আগমন আবারও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব লেক পরিষ্কার করা হয়েছে সেখানে আবার স্থানীয় জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ কম হওয়ায় বুনো হাঁসগুলো বসছে না, যদিও মাছ শিকারি পাখিগুলো, যেমন— পানকৌড়ি, সাপপাখি, মেটে মাথা কুড়া ঈগল ইত্যাদি এখানে পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘আসলে এটা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের সমস্যা নয়, পুরো দেশেই বর্তমানে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের জাবিতে যে বিষয়টা, পাখির আবাসস্থল লেকগুলো ঠিক আছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন এবং এগুলোর আলো পাখির আবস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কেননা পাখিদের বিচরণ স্বভাবতই রাতে বা ভোরবেলায় বেশি হয়ে থাকে।’
‘আমরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে গত ৩ জানুয়ারি পাখি মেলার আয়োজন করে দেশবাসীকে আসলে পাখি আবাসস্থল সংরক্ষণ আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মেসেজটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘পাখি কমে যাওয়ার জন্য বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু উচু ভবন নির্মাণ, যা পাখিদের বিচরণে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও রয়েছে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ (অতিরিক্ত যানবাহন থেকে তৈরি শব্দদূষণ) ও পাখির খাদ্য সংকট। পাখি আসলে ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে, কিন্তু এই খাদ্যের অভাবে পাখির সংখ্যা কমে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপনারা দেখবেন যে, পুকুরগুলো পরিষ্কার করে প্রতিটি পুকুরে পাখির বসার জন্য নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লেক সংস্কার করেছি আট লাখ টাকা ব্যয়ে। এছাড়া আগে পুকুরগুলো লিজ দেওয়া হতো, কিন্তু বর্তমানে পাখির খাদ্যের কথা চিন্তা করে আর লিজ দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা বিবেচনায় রেখেছি, কীভাবে পাখির আগমন বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশে আবহমান জীববৈচিত্র্যের এক অপরুপ সৌন্দর্য এই অতিথি পাখির আগমন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেই অতিথি পাখি জাহাঙ্গীরনগর থেকে সরে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
৩২৫ দিন আগে
মন্ত্রণালয়ে আটকে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ
২০ বছর আগে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার পথ বাসে যেতে লাগত সোয়া ঘণ্টা। অথচ এত বছর ধরে দেশে এত উন্নয়নের পরও এখন লাগে পৌনে দুই ঘণ্টা। সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায়, এই প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে সুনামগঞ্জবাসীর।
কথাগুলো বলছিলেন এই মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি খসরুল আলম।
অপ্রশস্থতার কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানজট থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি একটি নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও প্রায় এক বছর ধরে তা মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগ বলছে, এ মহাসড়কের দুটি স্থান মিলে পাঁচ দশমিক আট কিলোমিটার সড়ক চার লেন করাতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর সিলেট তত্ত্বাবধায়ক অফিস থেকে দরপত্র গ্রহণ শেষে তা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সেটি সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাবার কথা, অথচ এখনও সরকারি ক্রয় কমিটিতে যায়নি এই প্রকল্প।
সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ২৫ লাখ মানুষের জেলা সুনামগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ট্রাক মিলিয়ে অন্তত ১২শ গাড়ি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। পাশাপাশি পাঁচ হাজারের বেশি সিএনজিচালিত তিন চাকার যানসহ অসংখ্য ছোটবড় গাড়ি চলে এই সড়কে। অথচ সড়কটির কেবল জেলা শহরের তিন দশমিক আট কিলোমিটার ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়ার থেকে ওয়েজখালী পাড় হয়ে পৌর কলেজ পর্যন্ত এবং উজানীগাঁও থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদর পাড় হয়ে সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট পর্যন্ত চার লেন সড়ক করার উদ্যোগ নিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা।
ওই প্রকৌশলী জানান, এই দুইটি স্থান চার লেনে উন্নীত করতে দরপত্র আহ্বান করার পর তা গ্রহণও করা হয়েছে। পরে এগুলো অনুমোদনের জন্য সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাওয়ার কথা, কিন্তু তা এখনও হয়নি।
তিনি জানান, সরকারি ক্রয় কমিটি থেকে অনুমোদনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় কাজ। তবে ক্রয় কমিটিতেই দরপত্র এখনও পৌঁছেনি, ফলে প্রক্রিয়াটি থেমে আছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দেওয়া তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের পাঁচটি পরিবহন মালিক সমিতির প্রায় পাঁচশ গাড়ি প্রতিদিন সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে চলাচল করে। এছাড়া সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিদিনঅন্তত ৮০টি আন্তঃজেলা বাস আসা-যাওয়া করে। ছাতক ও দিরাই থেকেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পথ দিয়েই যাওয়া আসা করে বাসগুলো। সব মিলিয়ে আন্তঃজেলা বাসের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে যাবে।
এছাড়া জেলাজুড়ে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আছে আরও প্রায় পাঁচশ, ট্রাক আছে একশর মতো। এসব যানবাহনের যাতায়াতও এই পথ হয়েই।
এর পাশাপাশি সম্প্রতি ছোট যানবাহনের চলাচলও বেড়েছে। জেলায় বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশাই আছে পাঁচ হাজার তিনশর মতো। অবৈধ মিলিয়ে এই সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এগুলোর বেশিরভাগেরই যাতায়াতের প্রধান পথ সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক। এ ছাড়াও জেলায় লেগুনা আছে প্রায় দুইশ। ২৪ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক এত যানবাহনের চাপ নিতে পারে না বলে দাবি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের।
আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্য, জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ককে দ্রুত চার লেনে উন্নীত করতে হবে। সেই সঙ্গে সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি সড়কটিও স্থানে স্থানে চার লেনে উন্নীত করা প্রয়োজন।’
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের দুটি স্থান মিলে পাঁচ দশমিক আট কিলোমিটার সড়ক চার লেন করার দরপত্র ২০২৪ সালের জুলাই মাসেই হয়েছিল। দরপত্র গ্রহণ শেষে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সরকারি ক্রয় কমিটিতে যাবার কথা। তবে এখনও সেটি সরকারি ক্রয় কমিটিতে যায়নি বলে জেনেছি আমরা।’
কবে নাগাদ ক্রয় কমিটি হয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে—জানতে চাইলে ‘ধারণা নেই’ বলে জানান এ কর্মকর্তা।
৩২৬ দিন আগে
বন্ধ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি থামাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে কবে
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল); প্রায় ৩ বছর ধরে কোম্পানিটির কারখানা ও প্রধান কার্যালয় বন্ধ থাকালেও পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির শেয়ারের রমরমা লেনদেন হচ্ছে, যা রীতিমতো বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হিসাব বলছে, গত এক বছরে কোনো ধরনের উৎপাদন না হওয়ার পরও মাত্র ৭ টাকায় থাকা কেপিপিএলের শেয়ারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ৫৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৩০ টাকার ওপরে।
ডিএসসির ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, কোম্পানিটির নিজস্ব নামের কোনো ওয়েবসাইট নেই। লকপুর গ্রুপ নামে যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া আছে সেটিও বর্তমানে অকার্যকর। এছাড়া কোম্পানিটিতে যোগাযোগের যেসব নম্বর দেওয়া হয়েছে তার সবকটিই বন্ধ, নেই কোনো কোম্পানি প্রতিনিধির নাম কিংবা মোবাইল নম্বরও।
সরেজমিনে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার লকপুরে অবস্থিত প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বহুদিন ধরে লকপুরের আওতাধীন বেশিরভাগ কোম্পানি বন্ধ আছে।
কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন লকপুরের পাশাপাশি ছিলেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ২০১৩-২১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে বন্ড জালিয়াতি ও অর্থপাচারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরবর্তীতে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
২০২১ সালের মার্চে আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী-কন্যার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এতে লকপুর গ্রুপের আওতাধীন ধুঁকতে থাকা এ কোম্পানিটি ২০২১ সালেই কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।
কেপিপিএলে হিমায়িত মাছ ও খাবারের মোড়কজাত করা হতো বলে জানান কোম্পানিটির সাবেক কর্মীরা। শুধু কেপিপিএল নয়, লকপুর গ্রুপের আরেক প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্টারন্যাশনালও বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দায়িত্বশীল কাউকে না পাওয়া গেলেও লকপুর গ্রুপের সাবেক কর্মী হাবিবুর রহমান জানান, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় লকপুরের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। তবে বর্তমানে এই গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানেই কোনো ধরনের উৎপাদন হচ্ছে না। শুরুতে আড়াইশ থেকে তিনশর মতো কর্মী ছিল কেপিপিএলে, তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই বন্ধ।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর প্রতিনিধিদল খুলনার রূপসায় কেপিপিএলের কারখানা পরিদর্শন শেষে জানায়, প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ আছে। অথচ, উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হয়ে ওঠে কারসাজিকারকদের প্রিয় মাধ্যম। গত এক মাসের হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৫০ শতাংশের বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল এলাকার এক ব্রোকারেজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এবারই প্রথম নয়, এর আগেও কেপিপিএলের শেয়ার নিয়ে কারসাজিকারকরা বড় রকমের মুনাফা তুলে নিয়েছে। বর্তমানে ডিএসইর সফটওয়্যারের দুর্বলতাকে কাজে লাগাচ্ছে একটি চক্র। কিন্তু এক্ষেত্রে ডিএসই শুধু চিঠি কিংবা সতর্কবার্তা দিয়েই চুপ থাকছে।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সর্বশেষ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কেপিপিএলের অস্বাভাবিক শেয়াদরের কারণ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ডিএসইকে চিঠি দিয়েছে।
একই দিনে ডিএসই জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক লেনদেনের কারণ জানতে চেয়ে কেপিপিএলকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো জবাব আসেনি।
এত কিছুর পরও কেন বিএসইসি শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না—এমন প্রশ্নে কমিশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘কোম্পানির ব্যাপারে কমিশন সরাসরি নির্দেশনা দিতে পারলেও ডিএসইর উচিত নিজেদের মতো করে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা। এ ব্যাপারে এক্সচেঞ্জের সহায়তা লাগলে বিএসইসি প্রস্তুত আছে।’
আরও পড়ুন: উত্থানের ধারা অব্যাহত পুঁজিবাজারে
বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা প্রায় সবাই জানেন যে, কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ এবং এর শেয়ার কেনাবেচা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু বাজারে তারল্য সংকট থাকায় এবং এতদিনের লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেনেশুনেই ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা।
তারেক হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ার ভালো নাকি খারাপ, সেটি বিনিয়োগকারীরা জানলেও সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় ভুল করেন। কিন্তু কমিশন বা এক্সচেঞ্জ হাউজ জেনেশুনে কেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কেন খারাপ কোম্পানি তালিকা থেকে বের করে দেয় না—সেটিই বড় প্রশ্ন।’
উৎপাদনে থাকার সময়ও কেপিপিএল লোকসানি কোম্পানি ছিল। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা লোকসান করে। পরে ২০২০ সালে ৬ কোটি টাকা লাভ হলেও, ২০২১ সালে লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টাকায়। কোম্পানিটির দেওয়া সর্বশেষ ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ লভ্যাংশ দেয় শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
এত বছর লভ্যাংশ না দেওয়া একটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাখার যৌক্তিকতার প্রশ্ন তুলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি কোম্পানি ৬ মাসের বেশি উৎপাদনে না থাকলে তাকে তালিকাভুক্ত রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অথচ বছরের পর বছর ধরে কেপিপিএলের উৎপাদন বন্ধ, অন্যদিকে এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বাজারে চলছে কারসাজি। এখানে ডিএসইর উচিত, সরেজমিনে তদন্ত করে কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে বের করে দেওয়া। কেপিপিএলের মতো কোম্পানি বাজারে রাখা মানে কারসাজিকারকদের প্রশ্রয় দেওয়া।’
কেন কেপিপিএলকে পুঁজিবাজার থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে না?—জবাবে কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে ডিএসইর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগে বেশ কয়েকবার কোম্পানিটি ডিলিস্টিং (নিবন্ধন বাতিল) করার পরও কমিশনের চাপে পুনরায় লিস্টিং (তালিকাভুক্ত) করতে হয়েছে। সে সময়ে ডিলিস্টিং নিয়মতান্ত্রিক হয়নি—এমন যুক্তিতে ক্ষতিকারক এসব কোম্পানিকে আবারও বাজারে জায়গা দেওয়া হয়। এরপর থেকে এক্সচেঞ্জ হাউজ এসব ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ কমিয়ে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন চলছে দুই পুঁজিবাজারে
বাজারে বাজে কোম্পানির প্রাদুর্ভাব নিয়ে ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘গত এক দশকে বাজারে ভালো কোনো আইপিও আসেনি। ফলে বাজে কোম্পানির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এসব কোম্পানিকে পুঁজি করেই কারসাজিকারকরা নিজেদের ফায়দা লুটছে।’
তিনি বলেন, ‘চাইলেই স্কয়ার, এসিআই কিংবা ভালো কোনো কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেপিপিলের মতো ভুঁইফোড় এসব কোম্পানি বাজার অস্থিতিশীল করছে, বিপদে ফেলছে বিনিয়োগকারীদের।’
কোম্পানিটির ২০২২ সালের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কেপিপিএলের মূল শেয়ারের প্রায় ৬০ শতাংশই আছে বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি ৩৯ শতাংশ কোম্পানির পরিচালক এবং ১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার থেকে কেপিপিএলের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে বাইব্যাক আইন চালু করার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই জানিয়েছে, এক্সচেঞ্জ হাউজের রেগুলেটরি বিভাগ গুরুত্বসহকারে ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করছে। টানা কারসাজি আর ভরাডুবির পর নতুন কোনো অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে সামান্য, দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির
৩২৬ দিন আগে