বিশেষ সংবাদ
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্ছ্বাস
বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঘোষণায় ছাত্র ও সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ক্যাম্পাস জীবনে গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ ক্যাম্পাসে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যা একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার আশাও জাগিয়েছে।
এর তাৎপর্য তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হলে গোটা বাংলাদেশে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জুলাই-আগস্টের গণজাগরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার জাগিয়েছে এবং আমরা গতানুগতিক রাজনৈতিক চর্চার বাইরে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চাই।’
কায়েম ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার একই সুরে বলেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে। তিনি বলেন, 'যেহেতু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তাই নির্বাচন হলে আমরা তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।’
সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের ভূমিকা ও বাজেট বরাদ্দে স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনাসহ ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ডাকসুর কার্যক্রম কার্যকর করতে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করবে।’
নির্বাচনি সুষ্ঠুতা নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি আবাসিক হলগুলোতে অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ভোটের সময় নিয়ে সতর্ক হওয়ার বিষয়ে বলেছেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ট্রমা থেকে ক্যাম্পাস ও জাতি এখনও সেরে উঠছে। খুব তাড়াতাড়ি বা খুব দেরিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ব্যাহত হতে পারে। ইতিবাচক ও উৎসবমুখর নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অপরিহার্য।’
সংস্কারের আহ্বান
বাম ছাত্র সংগঠনের জোট গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিক অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ‘আমরা চাই ডাকসু নির্বাচন দ্রুত হোক, তবে তা যেন ২০১৯ সালের একতরফা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হয়।’
সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থীদের জন্য সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান সিদ্দিক।
ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারে কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তার জোট সমমনা প্রার্থী দেবে।
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম: ঢাবি শিক্ষকের পদাবনতি
একই দাবি জানান বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের অযাচিত ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত নয়, তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাকে বাধ্য থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোও অনুষদে স্থানান্তর করে অধিকতর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
জমজমাট ক্যাম্পাস
এই ঘোষণাটি ক্যাম্পাসকে নির্বাচনি হাওয়ায় ভাসিয়েছে, শিক্ষার্থী এবং সংগঠনগুলো একটি সম্ভাব্য পরিবর্তনমূলক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিকে বদলে দিতে পারে। বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি ও গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
নির্বাচনকে ঘিরে আগামীর পথচলা চ্যালেঞ্জিং। শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি ও নির্বাচনে কারচুপি প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন নির্বাচনের সময়সীমা চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন প্রত্যাশা স্পষ্ট।
শিক্ষার্থীরা আশা করে, দীর্ঘদিনের এই নির্বাচন শুধু তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারই পূরণ করবে না, সারা দেশে ইতিবাচক পরিবর্তনের নজির স্থাপন করবে।
আরও পড়ুন: সাবেক ডাকসু ভিপি নূরের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা খারিজ
৩৮০ দিন আগে
শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরবাসী, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৫০ রোগী
মেহেরপুরে তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কয়েকদিনের অব্যাহত শীতে যবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে নামছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চারদিক। এই সময়ে দরিদ্র শীতার্ত মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
গত কয়কদিন ধরেই মেহেরপুরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার সময় চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। যা চলতি বছরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বুধবারও (১২ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৭ শতাংশ।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, এখন থেকে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা আরও কমবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহও শুরু হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর একটু আগেই শীত পড়া শুরু করেছে মেহেরপুর জেলায়। গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এই এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, শুক্রবার আকাশে কুয়াশা রয়েছে ও নিম্নচাপের কারণে আকাশ মেঘলা। আগামীকালও একই আবহাওয়া থাকতে পারে। শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। আজ থেকে তাপমাত্রা আরও কমবে।’
এদিকে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে গতি কমিয়ে এবং হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। প্রচণ্ড শীতে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলও জবুথবু হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে মানুষ গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছে।
এদিকে গত কয়েকদিনের হাড় কাঁপানো শীতে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।
৩৮১ দিন আগে
নারায়ণগঞ্জে শীতের কাপড় বিক্রির ধুম
নারায়ণগঞ্জ শীতের আমেজ বাড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ছেয়ে গেছে গ্রামাঞ্চলের পথ-ঘাট। শহরাঞ্চলে সকালের দিকে হালকা কুয়াশা দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিলীন হয়ে যায়। রোদের দেখা মিললেও তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে এসেছে, বাতাস শুষ্ক হয়ে উঠছে।
পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আসায় মানুষের পোশাক-আশাকেও আসছে পরিবর্তন। কানটুপি, হাত মোজা, সোয়েটার, জ্যাকেটসহ নানান গরম কাপড় পরতে শুরু করেছেন অনেকেই।বাজারে বাড়কে শুরু করেছে শীতের পোশাকের চাহিদা।
নারায়ণগঞ্জে ফুটপাথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিপণি-বিতানে ব্যবসায়ীরা শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছেন। চাষাড়া হকার্স মার্কেট, সলিমুল্লাহ রোড, বঙ্গবন্ধু রোড, শায়েস্তা খাঁ রোডসহ নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে সড়কের পাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পোশাকের পসরা বসিয়েছেন। ছোট বাচ্চা, তরুণ-তরুণী, মুরুব্বিসহ প্রায় সব বয়সিদের জন্য মিলছে গরম কাপড়। নতুন, পুরাতন উভয় ধরনের পোশাক মিলছে এইখানে। রঙিন সোয়েটার, ডেনিম-লেদার জ্যাকেট, উলের হাত মোজা পায়ের মোজা, কানটুপি, র শালসহ নানান পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।
চাষাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, হকার্স মার্কেটের সামনে বেশ কয়টি দোকানে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। দোকানগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। বাছাই করে পছন্দের পোশাক কিনছেন তারা। কেউ নিজের জন্য, কেউ সন্তানের জন্য অথবা কেউ বাবা-মায়ের জন্য পোশাক কিনছেন।
সকাল থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। তবে সন্ধ্যার পর ক্রেতাদের ভিড় জমে যায় বলে জানান বিক্রেতারা। তারা বলছেন, শীতের মৌসুম উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের পোশাক মজুদ করা হয়েছে। ঠান্ডা পড়ায় মানুষের শীতের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করেন দোকানগুলোতে।
দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা, চায়না, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক রয়েছে বিক্রেতাদের কাছে। মার্কেট, ফুটপাথ দুই জায়গাতেই শীতের গরম কাপড় বিক্রি শুরু হয়েছে। মার্কেটগুলোতে কাপড়ের দাম বেশি থাকে। ফুটপাথে নতুন, পুরাতন বিভিন্ন রকমের কাপড় পাওয়া যায়। এসব দোকানে সাশ্রয়ী দামে বাছাই করে ভালো কাপড় নেওয়া যায়।
চাষাড়ায় দীপ হোসাইন ফাহিম নামে এক বিক্রেতা বলেন, শীতের প্রথম থেকেই বেচাকেনার ধুম পড়ে। এই সময়টাতে ভালো বিক্রি হয়, শীতের শেষের দিকে পোশাক বিক্রি কম হতে থাকে। এবার চায়না, ফিলিপাইন থেকে ফুল স্লিভ ভেলভেট টি-শার্ট এনেছি। তরুণদের মধ্যে এর বেশ চাহিদা রয়েছে, তাই বিভিন্ন ডিজাইনের ভারী কাপড়ের টি-শার্ট সংগ্রহ করেছি। বেচাকেনা ইদানিং ভালো হচ্ছে।
মো. সাইফুল ইসলাম নামে অপর এক বিক্রেতা বলেন, শীত আসছে বলে সোয়েটার, জ্যাকেট, মোটা কাপড়ের ফুল স্লিভ টি-শার্টসহ নানা ধরনের শীতের পোশাক বিক্রি করছি। বিকাল ৪টা থেকে এইখানে বসি রাত ১০টা পর্যন্ত। আমাদের কাছে ছোট, বড় সব ধরনের সাইজের কাপড় আছে। বাচ্চা, নারী, পুরুষ সব বয়সের ও সব সাইজের কাপড় আছে। নিজের মতো করে ক্রেতাদের বেছে নিতে হবে।
তিনি বলেন, মার্কেট থেকে যে মোটা কাপড়ের গেঞ্জি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা রাখবে, সেটা আপনারা এইখানে ১০০ টাকায় পাবেন। বাইরের থেকে কাপড় এলে বেশিরভাগ কাপড় পাইকারিতে বিক্রি হয়। এছাড়াও আরেকটি অংশ ফুটপাতে বিক্রি হয়।
মা ও মেয়েকে নিয়ে ফুটপাতে গরম কাপড় দেখছেন শিমু আক্তার। কাপড় দেখার মাঝে তিনি বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে বলেছে, এবার নাকি শীত বেশি পড়বে। তাই আমার মেয়ের জন্য শীতের পোশাক কিনব। সন্ধ্যায় আমার মা ও মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছি। শীতের কাপড় ফুটপাত থেকে কেনা হয়। রিভারভিউ মার্কেট থেকেও কেনা হয়। বড় বড় শপিংমলের চাইতে ফুটপাতেই কাপড় বেশি কেনা হয়। এখন চাষাড়ায় দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছি। এইখানে কম দামে ভালো কাপড় পাওয়া যায়। দুটো দোকানে কাপড় দেখেছি। সামনে কয়েকটা দোকান দেখা বাকি।
ফুটপাতের একটি স্টলে লেদার জ্যাকেট বাছাই করতে করতে জাহাঙ্গীর নামে এক ক্রেতা বলেন, জীবিকার তাগিদে আমি বহুদিন ধরে ইউরোপে বসবাস করছি। দেশে এসেছি কিছু দিন আগে, বিদেশে আবার ফিরতে হবে। সেখানে অনেক ঠান্ডা, তাই এখান থেকেই শীতের পোশাক নিয়ে নিচ্ছি। আমি নিজ দেশের পোশাক পছন্দ করি, বিদেশি পোশাক খুব কম পরি। মূলত, আমাদের দেশের তৈরি পোশাকই বিদেশে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডিং, সিল দিয়ে শুধু দাম বেড়ে যায়।
লতা দেবনাথ নামে এক তরুণী বলেন, শীত নেমেছে, তাই শীতের জন্য গরম কাপড়ের পোশাক কিনতে হবেই। বাবা-মায়ের জন্য পোশাক কেনাকাটা করতে হবে। তাই মাকে সঙ্গে নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছি। ফুটপাতে দামের তুলনায় ভালো শীতের কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি কালেকশনও আছে। সময় নিয়ে বাছাই করে কাপড় নিতে হয়।
তাসমিয়া আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, শীত এসে পড়েছে, তাই বাচ্চাদের ও স্বজনদের জন্য গরম কাপড় কিনতে বেরিয়েছি। ফুটপাত ও শপিংমল দুই জায়গাতেই পোশাকের কেনাকাটা হয়। পছন্দমতো স্বল্প দামে ভালো কাপড় নেওয়ার চেষ্টা করি। চাষাড়ায় ফুটপাতে দোকানগুলো দেখছি। ভালো কাপড় পেলে নেওয়া হবে।
৩৮১ দিন আগে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে বেহাল দশা, হুমকিতে অর্থনীতির গতি
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নোয়াপাড়া সহ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশেরও একই হাল।
এছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পর্যন্ত দুই লেনের সড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সড়কের এই বেহাল অবস্থায় বিশেষ করে পণ্য বোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। যার ফলে যানবাহনের গতি কমেছে এবং ঘন ঘন যানযটের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে যানজটের ভোগান্তি এবং ধুলো দূষণ যাত্রীদের জন্য প্রতিদিনের অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।
চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার একটি বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
মহাসড়কের বাইরে কুমিল্লার অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কও বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক খানা-খন্দ ও সরু হওয়ায় চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্য ভ্রমণকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
যাত্রী ও চালকদের ওপর প্রভাব
কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের (বাস মালিক সমিতি) সভাপতি জামিল আহমেদ খন্দকার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, 'কুমিল্লায় মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চালক-যাত্রী উভয়কেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট, ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মিনিবাস চালক আবুল হোসেন প্রতিদিনের ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সরু রাস্তা, ভারী যানবাহন এবং গর্ত সব মিলিয়ে চালকদের জন্য একটি নিয়মিত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুজাফফরগঞ্জ থেকে আসা যাত্রী আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশটি তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাঁদপুর অংশে যাতায়াত অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক বন্যা ও ভারী বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'আমরা ১৫ দিনের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছি।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের বৃহত্তম বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগকারী প্রধান সড়ক হিসেবে কাজ করে।
এই মহাসড়কটি গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষির মতো শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনকে সহজতর করে, যা আমদানি-রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এই রুট দিয়ে পরিচালিত হয়। যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরে।
যানজট নিরসন ও বাণিজ্য করিডোর হিসেবে মহাসড়কটির সক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য মহাসড়কটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বেহাল দশা শুধু সড়ক নিরাপত্তাই নয়, দেশের অর্থনৈতিক গতিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৮ কিলোমিটার যানজট
৩৮২ দিন আগে
সংশোধিত এডিপিতে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' প্রকল্প বাদ, হতে পারে বড় সংকোচন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাদ দেওয়ায় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বড় ধরনের সংকোচনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ছাত্র-গণ অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্পকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তা ছেঁটে ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একনেকের সভায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নেওয়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় অনুযায়ী ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।
একনেক সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় উন্নয়ন বাজেট ছোট হবে।’
চলতি অর্থবছরের চার মাসে রেকর্ড সর্বনিম্ন ৮ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। এই নিম্ন বাস্তবায়ন বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২-১৩ শতাংশ।
সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতি ধীর রয়েছে। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের হার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গৃহীত অনেক প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ব্যয়ের তুলনায় ভালো ফল বয়ে আনবে না।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে মনে হয়নি এগুলো কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে। তাই আমরা সেগুলো বাদ দিয়েছি। সাধারণত সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট কিছুটা সংকুচিত হয়, এবার অনুপাতটা বেশি হবে।’
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে একনেকে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যেত।
‘তবে এবার বাস্তবায়ন পর্যায়ে দুর্নীতিমুক্ত ও অনিয়মমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দায়ী থাকবে’ বলে জানান তিনি।
এ কারণে চলমান প্রকল্পগুলোতে সংশোধন আনা হয়েছে। এমনকি বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতেও তাদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, 'ঋণদাতাদের ঋণ দেওয়ার সময় কিছু শর্ত থাকে, তাদের বোঝানোর পর সংশোধন করা হয়।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে অনেক চলমান প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় ধীরগতির সম্মুখীণ হতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পগুলো সচল রাখতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সরকার।
একনেক ব্রিফিংয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, মন্ত্রণালয়গুলো স্থিতিশীল অবস্থায় নেই, তাই নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করে সেই প্রস্তুতিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো ধাঁচের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দিয়ে উদ্ভাবনী ও নতুন ধরনের প্রকল্পের ওপর জোর দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গভীর চিন্তা-ভাবনা করে প্রকল্প প্রণয়ন করতে বলেছেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রকল্পটি ব্যয়ের বিপরীতে একাধিক ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন।
তারা বলেছেন, নতুন ধরণের এবং উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রস্তুত করা সময়সাপেক্ষ বিষয়।
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে এনইসি।
২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং বাকি ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে।
নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি সমীক্ষা প্রকল্প, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ৮০টি প্রকল্পসহ মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩২১টি।
আরও পড়ুন: অর্থের প্রবাহ বাড়াতে এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুত করার উদ্যোগ সরকারের
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে
সে হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপি নিয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ), আবাসন খাতে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা (৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ), স্বাস্থ্যসেবা ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৮০ শতাংশ), স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন খাত ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা (৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ), কৃষি খাত ১৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ), পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা (২ দশমিক ৪৫ শতাংশ) এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা (১ দশমিক ২৫ শতাংশ)।
শীর্ষ ১০ খাতের বিপরীতে মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা (মোট এডিপির ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ)।
২০২৫-২২ অর্থবছরের নতুন এডিপি অনুযায়ী, বরাদ্দ গ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৮ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১৫ শতাংশ), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ), বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা (১১ দশমিক ২৮ শতাংশ), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা (৬ দশমিক ২৪ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা(৫ দশমিক ৩১ শতাংশ), রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা (৫ দশমিক ৩১ শতাংশ), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৪০ শতাংশ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (৪ দশিমিক ০১ শতাংশ) এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা (৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।
১০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরীতে মোট বরাদ্দ প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, যা সামগ্রিক এডিপি ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হার প্রায় শতভাগের প্রত্যাশা
৩৮৩ দিন আগে
জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাভোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে: উপদেষ্টা আজম
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, যারা জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা দাবি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরাসহ প্রতিবেশী সবাই সজাগ (কনসার্ন)। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করছে। বিভিন্ন সাংগঠনিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে আমরা সবাই কনসার্ন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিগত আন্দোলনের সময় ইমেজ সংকটে পড়ে গেছি। কোটাভিত্তিত একটা আন্দোলন ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয় শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এটি আলোচিত হয়েছে যে মুক্তিযোদ্ধারা সুবিধাভোগী, সুবিধা গ্রহণ করেছে।
ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এই ইমেজ সংকট কাটানোটা আমার জন্য প্রথম দিকের কাজ ছিল। সেটার জন্য যে পদ্ধতি নেওয়ার দরকার সেটি গ্রহণ করেছি। এখানে অনেক মামলা আছে। মামলাগুলোর আদালতে নিষ্পত্তি করার জন্য লড়াই (কনটেস্ট) করে আগাতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, জামুকা গঠিত হয়েছে, জামুকার সভা হয়েছে। সেখানে অনেক ফাইন্ডিং বেড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আসতে পারে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা যাতে মূল্যায়ন হয়। যারা মাঠে যুদ্ধ করেছে, যারা নানা আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছে সবাইকে সমান আঙ্গিকে সম্মান দিতে হবে। যারা রিয়েলি মাঠে যুদ্ধ করেছে মুক্তিযোদ্ধারা মানতে পারছে না। এটার বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা ছিল। তারমধ্যে যেটি যুক্তিক সেটি আমরা চূড়ান্ত করব।
তিনি আরও বলেন, জামুকা গঠিত হয়েছে আইনের ধারায়, অথচ এত বছর হলেও এটার কোনো বিধি রচিত হয়নি। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, কার কাছে কে দায়ী হবে, এটার জন্য বিধি রচিত হওয়ার কথা। কিন্তু, কোনো বিধি রচিত হয়নি। ফলে একটা তুগলগি কারবার হয়েছে। আমি বলেছি, উনি বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এরকম ২/১ জন ইন্টারভিউ নিয়ে হতে পারে না। এটি বিধি অনুসারে হওয়া উচিত ছিল।
তিনি বলেন, এখনো সুনির্দিষ্ট করতে পারিনি কত মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটেড হয়েছে। স্থানীয় তারা( মুক্তিযোদ্ধারা) প্রশ্নের সম্মুখীন। সঠিক মুক্তিযোদ্ধা কারা তার যাচাই হওয়া উচিত। এই তালিকা চূড়ান্ত হওয়া উচিত ছিল ১৯৭২ সালেই। যুদ্ধের পর পর হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কারণ সব মানুষের কাছে তথ্য ছিল। তখন তালিকা করা সহজ ছিল। সেটা না হয়ে বলা হচ্ছে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা এত পবিত্র, সেখানে আরোপিত কিছু গ্রহণ করতে পারি না। যদি বস্তুনিষ্ঠতা থাকতো তাহলে প্রতিটি শহীদের একটা গল্প থাকতো। যিনি যুদ্ধে গেছেন কমিটিতে গেছেন, আদর্শিকভাবে গেছেন। এই শহীদদের এরকম গল্প আমরা বেশি পাই না।
উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ২৮৬ জনকে শহীদের ভাতা দেওয়া হয়। তাহলে আমরা এত বড় সংখ্যা বলি, এরা কেন ভাতা পাবে না। মন্ত্রণালয়ে প্রথমে আমি এসে জিজ্ঞাসা করলাম এদেরকে তালিকা হওয়ার কথা। তালিকাটা কই। তারা বলছে স্যার তালিকা নাই। বলছে গণসই, আমি বলছি গণসই তালিকাটা কোথায়? সেটাও নাই।
যারা এইসব আরোপিত করেছে,মানে যুদ্ধের পবিত্রতার উপরে যারা এসব আরোপিত করেছেন, সেটার জন্য কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি।
আপনি ৩০ লাখ শহীদ এটিকে তাহলে আরোপিত বলছেন ? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটার তো কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নেই। আমার মনে হচ্ছে তো এটা আরোপিত। কারণ এটার তো একটা পরিসংখ্যান থাকবে। এই সংখ্যা কোথায় থেকে আসছে। গুনেছে কে? এখনকার শিশুদের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, এটার তো কোনো বস্তুনিষ্ঠ পরিসংখ্যান নাই। তো পরিসংখ্যান ছাড়া এটা আসলো কোথা থেকে?
আপনি কি এটির ফ্যাক্ট ফাইন্ড করবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ৫০ বছর পরে এসে এটি কি সম্ভব? এটা ফ্যাক্ট ফাইন্ড কিভাবে সম্ভব ? হওয়া তো উচিত ছিল। এটা ৩ কোটি হলেও আমার আপত্তি নাই। যদি এটার কোনো একটা বস্তুনিষ্ঠতা বা এটার একটা পরিসংখ্যান পাওয়া যেত, এটার একটা গণনা পাওয়া যেত, তাহলে তো কোনো সমস্যাই ছিল না।
আরও পড়ুন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি, ২ পুলিশকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিরঙ্গনাদের কথা বলছি। আমরা বিরঙ্গনাদের কে ভাতা দিচ্ছি। অবশিষ্ট বিরঙ্গনারা কোথায়? কেউ বলে লজ্জায় বলে নাই, আসে নাই, এটা সঠিক কথা না। এটা হওয়ার কথা না। এটার বাস্তবভিত্তিক কোনো প্রমাণ নাই। তাহলে কেন বাড়িয়ে বলছি। একজন নারী যুদ্ধের জন্য নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে, এটা হিমালয় পর্বতের মতো বিষয়।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আমরা যাচাই বাছাই করছি। বর্তমান তালিকা আমরা ডোমেইনে হোস্ট করে দিচ্ছি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। এরপর নিচে একটা আপত্তি ফরম যুক্ত করে দিয়েছি। সেখানে বলেছি, এরা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, আপনার কোনো আপত্তি থাকলে জানাতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, এসব আপত্তি ফরমগুলো সংগ্রহ করে আমরা যাচাই বাছাইয়ে যাব। যেগুলো মামলা হয়েছে, মামলাগুলোতেও আমরা অংশ নেব। সেখানে আদালত থেকে যদি রায় পাওয়া যায়, তাহলে মামলার রায় বাস্তবায়নে যাব।
কতগুলো মামলা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩ হাজার ৭৭৭টির মতো মামলা আছে।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা ভাতা নিচ্ছেন, তাদের ভাতার টাকা ফেরত বা কি ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি এরকম কোনো সুনির্দিষ্ট ফাইন্ডিংস পাই তাহলে ব্যবস্থা নেবো। কারণ রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করার জ্যন শাস্তিও দিবো। তাহলে হয়তো অনেকের বোধোদয় হবে, আমরা তাদের থেকে নিস্কৃতিও পাবো।
তিনি আরও বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা সেজে আছেন, তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে, তারা যদি সঠিক প্রমাণ না দিতে পারে তাহলে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাতিল করব। তারা যে দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুবিধাগুলো নিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনব। যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জামুকা কাউন্সিল সদ্য গঠিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদটাও গঠন হবে খুব শিগগিরই। তাদের মাধ্যমে এ সহযোগিতাগুলো নেব।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই জানি, সবার মনে লজিক্যাল একটা প্রশ্ন এটি। যখন ভাতা ছিল ৩০০ টাকা তখন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য কেউ আসে নাই। যখন সুবিধা আসা শুরু হয়েছে, চাকরিতে সিনিয়রিটি, চাকরিতে বয়স বৃ্দ্ধি, চাকরি হওয়া এবং ভাতা যখন বাড়ছে, তখন তারা এইসব ছিদ্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আসছে- আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধ করে নাই।
আরও পড়ুন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি, ২ পুলিশকে কারাগারে প্রেরণ
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা তখন ৯০ ভাগ ছিল কৃষক এবং গরীব। তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সুবিধা নেওয়ার তখন সুযোগ ছিল না। তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিবে সেই যোগ্যতাও ছিল না। দীর্ঘকাল মানুষ এসব বিষয় নিয়ে উচ্চসিত ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণত গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। এখনো যদি গ্রামে যান, গ্রামের মানুষের মধ্যে কারা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধা না, আসল তথ্য জানতে পারবেন।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নতুন করে করবেন কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, না তালিকা করব না। যে তালিকা আছে, সেটি থেকে কারা মুক্তিযোদ্ধা না সেই তালিকা বের করব। বর্তমানে তালিকা থেকে অ-মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করে বের করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, এটা আমার কাছে সবসময় বিস্ময়কর মনে হয়। দেখেন মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার ৫০ বছর পার হয়েছে। এটা কিন্তু একদিন দুদিনের ঘটনা নয়। অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। তার সন্তানরা এসে বলছেন আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই বিষয়গুলো আমরা কীভাবে নীরিক্ষা করব। এটার তো একটা নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ত বলছে সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল। অধিকাংশ জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারাই অনাচারে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন।
সুযোগ-সুবিধা ও ভাতা বেশি দেওয়ায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আসছে। তাহলে কি এই সুযোগ বা ভাতা কমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, না, যে সুযোগ সুবিধা ও ভাতা আছে তা কমানোর কোন উদ্যোগ নেই।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা তারা মনে করেছেন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না। এই ধারণা সঠিক ছিল না। সচিব সহ যারাই ভুয়া
মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, দুই লক্ষ সাত হাজার ছয়শত চৌষট্টি জন মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পাচ্ছেন। তারমধ্যে রয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিরঙ্গনা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
আরও পড়ুন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকরি: ৮ পুলিশের বিরুদ্ধে চার্জশিট
৩৮৩ দিন আগে
এবার বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজের বদলে বিজয় মেলা হবে
এবার বিজয় দিবসকে উৎসব মুখর করতে সারা দেশে বিজয় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
ইউএনবিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ইউএনবিকে বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের জাতির জন্য অনন্য দিন। ৯ মাস যুদ্ধ করে জাতি এই বিজয় অর্জন করেছে। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিল।একসময় গ্রামে ও সারা দেশেই এই বিজয় উৎসব হতো। ধীরে এই উৎসব নিস্ক্রিয় ছিল। এবার সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় মেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে চারু, কারু মেলার সঙ্গে কৃষি পণ্যের মেলা হবে। তার সঙ্গে দেশীয় পণ্য পরিবেশন করা হবে। মেলায়, শিশু, নারী, পুরুষ সবার অংশগ্রহণ থাকবে। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সবাই আনন্দ উপভোগ করবে। পাশাপাশি স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠান হবে।’
আরও পড়ুন: উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সঙ্গে জাতিসংঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ
উপদেষ্টা বলেন, আগে যে প্রচলিত কুচকাওয়াজ হতো, এতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকত না, সেখানে স্কাউট ও সেচ্ছাসেবকরা থাকত। তার সঙ্গে অন্যান্য বাহীনি থাকত। এতে সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না।এবার শিশু, নারী, পুরুষ সব শ্রেণির জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এবার কুচকাওয়াজ হচ্চে না। কারণ সেনাবাহিনী এখন সারাদেশে ব্যস্ত। এটার জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় আছে। তাই এবার প্যারেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এটার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন।’
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাতীয় স্টেডিয়ামে আগে প্রধানমন্ত্রী পোগ্রামে যেতেন। এবার প্রধান উপদেষ্টা যাবেন কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, না উপদেষ্টা যাবেন না। এরকম প্রোগ্রাম হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় প্রোগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তেমনি ঢাকায় এখানকার জেলা প্রশাসন করবে।
উপদেষ্টা বলেন, আগে প্রশাসন করত কুচকাওয়াজ, এখন প্রশাসন মেলার আয়োজন করবে। সেখানে স্ব স্ব এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সব পর্যায়ের জনগণ অংশ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
তিনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি জাতীয় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাবেন। সেখানে অনুষ্ঠান আছে। তারপর রায়ের বাজার যাবেন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: দারিদ্র্যকে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনায় কাজ করছে সরকার: ফারুক ই আজম
৩৮৪ দিন আগে
থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মান ও সক্ষমতা নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে সেবাগ্রহণকারী এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের। অন্যদিকে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরাও।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহণকারী ও বিশেষজ্ঞরা।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে কী বুঝায়
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে, যাত্রীর বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গোর মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে বোঝায়। ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ৩৫টির মতো এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা।
থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
দুই বছরের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সম্প্রতি জানিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করেছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের জন্য বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দুই বছরের মধ্যে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি কাজ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে বিদেশি স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিমানের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিরাপত্তা সপ্তাহ উদযাপন
নানা অভিযোগ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর
একটি এয়ারলাইন্স যেই বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে সেখানকার চেক-ইন কাউন্টারের পাশে কর্মী দেওয়া থেকে শুরু করে ব্যাগেজ সেবা, কার্গো সেবা ইত্যাদি জায়গায় সর্বত্র পর্যাপ্ত কর্মী দেওয়ার কথা রয়েছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারের। তবে, জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কর্মী দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অথচ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সেবা নিতে অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংএ থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে।
বিমানের পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় এয়ার অ্যারাবিয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০ জনেরও বেশি নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে ইন্ডিগো এয়ার বিমানবন্দরে ২৫ জন এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ৬০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) গণশুনানিতে একাধিক বিদেশি এয়ারলাইন্স অভিযোগ করেছে, বিমান তাদের কাছ থেকে চার্জ নিলেও সময়মতো গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে না। ব্যাগেজ প্লেনে পৌঁছতে দেরি হওয়ার কারণে এয়ারলাইন্সগুলো সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে পারছে না। পাশাপাশি ব্যাগেজ বেল্টে দেরিতে লাগেজ দেওয়ায় যাত্রীরা এয়ারলাইন্সের ওপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। এতে অনেক এয়ারলাইন্সের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে (গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দেরিতে লাগেজ পাওয়া ও চুরির অভিযোগ শোনা যায়। সর্বশেষ চলতি বছর চেন্নাইগামী ফ্লাইটের এক যাত্রীর ব্যাগ থেকে ৬ হাজার ৮০০ ইউরো অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করে বিমান।
সৌদি থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা এক যাত্রী শিপন ইউএনবিকে বলেন, যতবার দেশে আসি লাগেজ পাওয়াটা মনে হয় সোনার হরিণ। কারণ একটা আতঙ্ক থাকে লাগেজ থেকে কিছু চুরি গেল কি না। বা লাগেজ কাটা কি না। এবার ভালোভাবে লাগেজ পেয়েছি কিন্তু অনেক সময় লেগেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার এ টি এম নজরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম থাকলেও তাদের জনবল নেই। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল চালাতে গিয়েই তারা হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম থাকতে পারে, তবে তাদের বিষয়ে যাত্রীদের মতামত ভালো নয়। বিমান যেহেতু দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে, টার্মিনাল পরিচালনায় তাদের সক্ষমতা ও মানসিকতা কেমন হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।তবে আন্তর্জাতিক মানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম ইউএনবিকে বলেন, বিশ্বের কোথাও কোনো একটি সংস্থা এককভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে না। সেখানে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান।
তিনি আরও বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে তা বলা যায় না।
এভিয়েশন অপারেটর'স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক।
তিনি আরও বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মনোপলি ভেঙে একাধিক কোম্পানিকে দেওয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয়, বরঞ্চ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙা সম্ভব হলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ ইউএনবিকে বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতার জন্য নতুন নতুন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতার বিষয়টি আমরা দেখছি। দুই বছর যে আমরা হাত দিয়ে বসে থাকব বিষয়টা এমন নয়।যদি তার ক্ষমতার ঘাটতি হয় বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলনে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করা হবে। জনবল সংকট দূর করা হবে।
কবে নাগাদ চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ পর্যায়ে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও এক বছর লাগবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ইউএনবিকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সেবার মান আধুনিক হবে। টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে যাতে আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে সে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কোনোভাবেই খারাপ মান বা কোনো এয়ারলাইন্স বা যাত্রী থেকে যেন কোনো অভিযোগ না আসে, সে বিষয়ে আমরা কথা বলছি।
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী: আইএসপিআর
৩৮৪ দিন আগে
অর্থের প্রবাহ বাড়াতে এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুত করার উদ্যোগ সরকারের
অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ সচল করার লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সরকার নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের অনুমোদিত এডিপি প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের হার বাড়াতে পারব বলে আশা করছি।’
তবে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে দুর্নীতিমুক্ত ভালো ও উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় সরকার। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী যে কোনো দিক থেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঠিকাদার নিয়োগসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে নানা অনিয়ম হয়। এর ফলে বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল।
উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সরকারি অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়েছে। এতে বাস্তবায়নের হার অনেকাংশে কমে যায় এবং অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা অবশ্যই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করব। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব ভালো প্রকল্পের কথা ভাবছি এবং যেগুলো নতুন প্রকল্প পরিচালক পেয়েছে সেগুলো দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে।’
গণ অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেক করে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র ৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করে সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের রেকর্ড গড়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২-১৩ শতাংশ।
বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেয়।
এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বাজেট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপিসহ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
৩৮৪ দিন আগে
সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা ব্যর্থ, ভারতবিরোধী অবস্থানে বিএনপি
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে তাদের দলের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা দৃশ্যত ব্যর্থ হওয়ায় তারা আরও শক্ত ও প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে, বিশেষ করে ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের ব্যাপক বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দলকে এই অবস্থান নিতে হয়েছে বলে দাবি করছেন তারা।
বিএনপি নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নেওয়ায় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণ বিশ্বাস করে ভারত ধর্ম কার্ড ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এমন অবস্থায় প্রধান ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে ভারত কী করছে এবং সেখানে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বিএনপি চুপ করে থাকতে পারে না। আমরা যদি চুপ করে থাকি তাহলে মানুষ আমাদের ভুল বুঝবে এবং ইসলামী দল এর সুযোগ নেবে বলে আমরা জনপ্রিয়তা হারাতে পারি। তাই আমরা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি।’
তিনি বলেন, আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা, ভারতীয় নেতাদের বাংলাদেশবিরোধী বিবৃতি এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে চলমান অপপ্রচার ও ভুল তথ্য জনগণ এবং বিএনপির মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিএনপি প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারত সম্মান দেখাবে
বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন,‘এর ফলে বিএনপির অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে, যার ফলে দলের হাইকমান্ড ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণার জন্য দলের তিনটি সহযোগী সংগঠনকে নির্দেশনা দিয়েছে।’
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য বন্ধের দাবি জানিয়ে এবং ভারতে বাংলাদেশি মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করে এবং সেখানে স্মারকলিপি দেয়।
ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে বুধবার(১১ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চও করবেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিলেও তারা এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ২২ সেপ্টেম্বর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং এই সময় তারা ইতিবাচকতা আনতে এবং রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের রূপরেখা তুলে ধরেন।
বিএনপি নেতা বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে একটি বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করেছি। এতে তাদেরকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একচেটিয়া সম্পর্ক থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু আমরা অবাক হয়েছি, ভারত তার অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও নড়েনি।’
তিনি আরও বলেন, তারা এখনো ভারত সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান।
আরও পড়ুন: ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমাদের বর্তমান অবস্থানের মাধ্যমে আমরা মূলত ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছি। যাতে তারা বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে একচেটিয়া সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যদি তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে তবে আমরা প্রতিদান দেব, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অতীতের ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে আগ্রহী হওয়ায় তিনি সতর্কতার সঙ্গে ভারতবিরোধী মন্তব্য এড়িয়ে চলেছেন। ‘তবে এখন এটা নির্ভর করছে ভারতের ওপর। যদি তারা এগিয়ে না আসে তবে চীনসহ অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারদের দিকে মনোনিবেশ করে আমাদের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, চীন শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন করলেও ইতোমধ্যেই তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি ভারতবিরোধী বা ভারতপন্থী দল হতে চায় না। ‘বিএনপি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী থাকবে এবং ভারতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকবে।’
লন্ডনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি রাজনৈতিক দল বিদ্যমান পরিস্থিতি ও বাস্তবতা এবং দেশের স্বার্থের ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কারণ প্রতিবেশী দেশটির কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের মিডিয়া বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিএনপি সরকার করলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে তিনি বলেন, 'ভারতের সঙ্গে আমাদের নীতি নির্ভর করবে আমাদের চাহিদা ও স্বার্থের ওপর। কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো আঘাত আমরা সহ্য করব না। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের মানুষের পালস বোঝার চেষ্টা করা এবং সে অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান ঠিক করা।
তিনি বলেন, ভারত এরই মধ্যে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু করেছে। ‘এখন তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক হারালে তারা কীভাবে একা এগিয়ে যাবে, তা ভারতকে ভাবতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। ‘তারা এখনো শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের বক্তব্য ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ভারতের এই আধিপত্যবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।’
আরও পড়ুন: রামপুরা ব্রিজের কাছে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা
৩৮৪ দিন আগে