বিশেষ-সংবাদ
কয়রায় সাইক্লোন সেল্টার সংকট, নেই নারী-শিশুর পৃথক ব্যবস্থা
প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ খুলনার কয়রা উপজেলায় চাহিদার তুলনায় নেই সাইক্লোন সেল্টার। বিদ্যমান ১১৭টি সাইক্লোন সেল্টার দুর্যোগের সময় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য খুবই অপ্রতুল। আর এসবের মধ্যে আবার নারী ও শিশুদের পড়তে হয় নতুন আরেক ভোগান্তিতে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপজেলার অনেক মানুষকে একই রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সেখানে পর্যাপ্ত থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। নেই নারী-পুরুষের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থাও। এ কারণে দুর্যোগের সময় চরম সংকটে পড়তে হয় এই উপজেলার বাসিন্দাদের।
দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসে নারী ও শিশুবান্ধব সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এলাকাবাসী জানায়, সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ৭টি ইউনিয়নের ১৩১টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।
কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, শিবসা ও আড়পাঙ্গাসীয়া নদী বেষ্টিত উপজেলাবাসী সারা বছরই থাকেন আতঙ্কগ্রস্ত।
আরও পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
প্রতি বছর কোনো না কোনো অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল খোঁজে। সে সময় একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো সাইক্লোন সেল্টার।
প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্ফান, ইয়াস, রিমেলের আতঙ্ক কেটে গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক কাটেনি উপকূলীয় জনপদ কয়রাবাসীর। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে দুর্যোগের সময় ৩ লক্ষাধিক মানুষের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে ৯৮টি।
ফায়েল খায়ের ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে ১৯টি।
কয়রার সর্ব দক্ষিণের জনপদ জোড়শিং গ্রামের মিজানুর রহমান (৫০) বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিটি মুহূর্তে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংবাদ বয়ে আনে দুর্দশা। তারপরেও সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে বসবাস করছি। দুর্যোগকালীন সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা প্রয়োজন।
উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের নারী নেত্রী মুর্শিদা আক্তার বলেন, এই অঞ্চলে দুর্যোগকালীন সময় আশ্রয় নেওয়া সাইক্লোন সেল্টারগুলো নারী ও শিশু বান্ধব নয়। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সেখানে গর্ভবতী, বয়সন্ধীকালীন ও পিরিয়ড নারীদর আশ্রয় নিতে হয়। তাই নারীবান্ধব সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা এখন জনমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়রায় অনেক বেড়িবাঁধ অরক্ষিত, আতঙ্কে খুলনার উপকূলবাসী
কয়রা সদর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিনা আক্তার লাইলি বলেন, কয়রায় কোন সাইক্লোন সেল্টারে আলাদা টয়লেট নেই। তাই প্রতিটি সেল্টারে নারীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সমন্বয়ক নিরাপদ মুন্ডা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদী ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৬টি ইউনিয়ন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। সেজন্য ৬টি ইউনিয়নে আরও সাইকোন সেল্টার নির্মাণ করা দরকার।
জেজেএসের সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী শেখ নাজমুল হুদা বলেন, কয়রা সদর, দক্ষিণ বেদকাশি ও উত্তর বেদকাশি ৩টি ইউনিয়নের সাইক্লোন সেল্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কমিটিগুলো সক্রিয় করার কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া প্রস্তুতি প্রকল্পের মাধ্যমে দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন জিনিসপত্র সিপিপি সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
উপেজলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মামুনার রশিদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার মানুষ। দুর্যোগের সময় ওইসব মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আরও সাইক্লোন সেল্টার প্রয়োজন। যা রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কয়রাবাসীর আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্ববধানে আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপকূল অতিক্রম করে খুলনার কয়রায় অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল
২ ঘণ্টা আগে
জিকের সেচ পাম্প চালু, বোরো-আউশ আবাদে সুবিধা পাবেন কৃষকরা
দীর্ঘ কয়েক বছর প্রয়োজনের সময় কাঙ্ক্ষিত সেচ সুবিধা না পাওয়া গেলেও এবার মৌসুমের শুরুতেই পানি মিলছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে। এতে শুধুমাত্র কুষ্টিয়া জেলাতেই ১১ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে সেচ সুবিধা পাবেন পাশ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরাও। বোরো আবাদে কৃষকের বিঘা প্রতি খরচ অন্তত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে।
কৃষক ও সংল্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার অন্তত ১১ হাজার হেক্টর জমিতে এবার জিকের পানিতে বোরো আবাদ হবে। মাসখানেক খালে পানি পেলেই তাদের খরচ বাঁচবে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর যদি পানি পুরো মৌসুমজুড়েই থাকে, তাহলে ব্যয়ের মাত্রা অনেকটাই নেমে আসবে কৃষকের। এছাড়াও পেঁয়াজসহ বেশকিছু মাঠে থাকা ফসলও উপকৃত হবে এই জিকের পানিতে।
পদ্মায় পানি সংকট ও জিকের সেচ পাম্প নষ্ট থাকায় গত দুই থেকে তিন মৌসুম ধরেই ঠিকমতো পানি মিলছে না কৃষকদের। গত বছর মৌসুমের শেষভাগে পানি আসলেও তাতে কৃষকের কোনো লাভ হয়নি। তবে আগেভাগে পানি পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, আমরা ধরেই নিয়েছি জিকের পানি পাব না। সেই হিসেব করেই চারা রোপন করা। এখন জিকের পানি তাদের জন্য বাড়তি বোনাস হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
এ সময় অন্যান্য কৃষকরা জানান, যেসব জমিতে খালের পানি যাবে না, তারাও পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গত দুই তিন মৌসুমে তাদের এলাকার পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এতে ঠিকমতো পানি ওঠে না শ্যালো ইঞ্জিনে। ক্যানেলে পানি থাকলে এবার আর এই সমস্যায় পড়তে হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কুষ্টিয়ার উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এই পানিতে ধান চাষে কৃষক ভালো মুনাফা পাবেন। বোরো মৌসুমে সেচ বাবদই বেশি ব্যয় করতে হয় কৃষককে। তাছাড়া অন্যান্য ফসলও সুবিধা পাবে। তবে আউশ ধান যারা লাগাবে তারা বেশি সুবিধা পাবেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে কৃষকরা আউশ ধানের বীজতলা শুরু করবেন। আর রোপন শুরু হবে আরো ২০ থেকে ২৫ দিন পর।
তিনি আরও জানান, জেলায় এবছর বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৬ হাজার হেক্টর জমিতে।
জিকে সেচ ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, গত বছর খালে পানি সরবরাহ না করায় অনেক সমস্যা হয়। অনেক জমি অনাবাদি ছিল। সেচ সরবরাহ সচল হলে ফসল উৎপাদন বাড়বে। পরিবেশও রক্ষা হবে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের পাম্প ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, গত ৬ মার্চ থেকে সচল একটি পাম্প দিয়ে জিকে খালে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। অপর একটি পাম্পও সচল করার জন্য কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসেই পাম্পটি সচল করে জিকে খালে পানি সরবরাহ করা যাবে। তবে আরেকটি পাম্প একেবাইে অকেজো। সেটি কোনোভাবেই মেরামত যোগ্য নয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরী
২০০৯ সালে জাপানের একটি কোম্পানি থেকে ৩টি বড় পাম্প এনে স্থাপন করা হয়। তবে গত বছর তার দুটি বিকল হয়ে পড়ে। অন্যটি পানির অভাবে গত বোরো আবাদের সময় বন্ধ রাখতে হয়। জাপানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা পরিদর্শন করেছেন। কিছু যন্ত্রাংশ ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। বাকি যন্ত্রাংশ বন্দরে এসেছে।
তিনি জানান, পদ্মার ভেড়ামারা পয়েন্টে পানির লেভেল ৪ দশমিক ৪০ মিটার রয়েছে। ৪ দশমিক ২০ মিটার পর্যন্তও পানি সরবরাহ করা যাবে। এর নিচে নামলে পানি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। ৩টি পাম্প একসঙ্গে চালু থাকলে প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৯০০ কিউসেক পানি আবাদি জমিতে দেওয়া সম্ভব হয়। একটি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৩শ’ কিউসেক পানি পাওয়া যায়।
গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের আওতাধীন জেলা চারটি হলেও বোরো মৌসুমে মূলত কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, ৪টি জেলায় জিকের খাল বিস্তৃত। জিকের পাম্প হাউস আধুনিকায়নসহ খাল সংস্কারের জন্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার টাকা কাটছাঁট করে সেটি ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি বড় ও ৫টি ছোট পাম্প স্থাপন করা হবে। খাল সংস্কারসহ গাছ লাগানো হবে। নতুন পাম্প স্থাপন করা হলে পদ্মার পানি ৩ সেন্টিমিটারের নিচে নামলেও পানি সরবরাহ সচল থাকবে।
সূত্র জানায়, ১৯৫৯ সালে প্রধান পাম্প হাউজের কার্যক্রম চালু হয়। ১৯৬২ থেকে ৬৩ সালে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে জিকে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। তখন চাষযোগ্য ফসলি জমি ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ হেক্টর। পরবর্তীতে পাম্পের ক্যাপাসিটি কমার সঙ্গে সঙ্গে জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর। শুরুতে তিনটি পাম্প দিয়ে বছরে ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ আক্টোবর পর্যন্ত) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি উত্তোলন করা যেত। বাকি ২ মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাম্প তিনটি বন্ধ রাখা হত। ৩টি পাম্প সচল থাকলে ৪ জেলার ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন, ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
৪ ঘণ্টা আগে
ফরিদপুরে জমে উঠছে ঈদের বাজার
ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন মার্কেটে জমে উঠেছে ঈদবাজার। বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় বাড়ছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। এবার ভালো ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিউ মার্কেট, চকবাজার, হাজী শরিয়াতুল্লাহ বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো পোশাক কিনছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন ঈদবাজার করতে।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত দুই ঈদ বাজারের তুলনায় এবারে হয়তো ভালো ব্যবসা হবে আমাদের। আমরা যে পণ্যগুলো নিয়ে হাজির হয়েছি; তা ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে।
চকবাজার কাপড় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা সাদ্দাম হোসেন জনি বলেন, এবছর রোজার শুরুতেই ব্যবসা জমতে শুরু করেছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা বেশ কেনাকাটা করছেন।
শনিবার (৭ মার্চ) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে এসব মার্কেটে বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। কেনাকাটায় নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও নেই পিছিয়ে। তাছাড়া নিত্য-নতুন ডিজাইনের ঝলেমলে বাহারি পোশাক চলে আসায় কাস্টমারদের চাহিদা বাড়ছে।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী বনি হোসেনসহ দোকানিরা জানান, বেচাকেনার শীর্ষে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শার্ট-প্যান্ট, মেয়েদের শাড়ি, চুড়ি, থ্রি-পিস ও বাচ্চাদের পোশাক ইত্যাদি।
এবার রমজানে শুরুর দিক থেকেই প্রায় সব দোকানে বেচাকেনা ভালো। এ বিষয়ে বিপ্লব সরকার নামে এক দোকানি জানান, অন্যান্য বছর থেকে এ বছর বেচাকেনা ভালো। তবে নিম্নবিত্তদের বেশিরভাগের ভরসা ফুটপাত।
কেননা ফুটপাতে যে পণ্যটি তিনশ থেকে চারশ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, অভিজাত মার্কেটে সেটির দাম অনেক বেশি।
১ দিন আগে
খুলনার ভাটায় কাঠে পোড়ানো হচ্ছে ইট, নেই সরকারি পদক্ষেপ
সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খুলনার বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইটভাগুলোতে কাঠে পোড়ানো হচ্ছে ইট। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে অনেক ইটভাটা। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব ভাটা দেদার চালিয়েছেন মালিকরা। আর এসব ইটভাটার বেশিরভাগের মালিকানা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ২০০টি ইটভাটার মধ্যে ৭৯০টির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে এমন সব ইটভাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। ফলে মালিকানাধীন সকল ভাটার বৈধ কাগজপত্র গত ১ মার্চের মধ্যে স্ব-স্ব উপজেলার সহাকারি কমিশনার (ভূমি) দপ্তরে বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ইটভাটার মালিক বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপর্যুপরি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খুলনার বিভিন্ন উপজেলার ইটভাটায় কয়লার ব্যবহার কমিয়ে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। ফলে খুলনা অঞ্চলের বাতাসে বাড়ছে দূষণ। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের। সংকুচিত হচ্ছে নদী। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
আইন অনুযায়ী, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা, কৃষি জমি এলাকায় স্থাপন করা যাবে না ইটভাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার আলাইপুরে ইবিএম ব্রিকস নামের ইটভাটাটি আলাইপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলেও কর্ণপাত করছে না ভাটার মালিক।
এদিকে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার দায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রূপসা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রূপসা উপজেলার ৯টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৯টি ইটভাটা মালিককে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুয়ায়ী গত ৩ মার্চ রূপসা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার ২২টি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভাটা মালিকদের অল্প সময়ের মধ্যে ভাটা গুটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অপ্রতিম কুমার চক্রবর্ত্তী।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া বাজার পেরিয়ে কিছুটা সামনে গেলেই দেখা যায় ইট তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ। মেসার্স নূরজাহান ব্রিকস নামের এ ভাটায় নিম্নমানের কয়লার সঙ্গে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পোড়ানো হচ্ছে ইট। নদীর তীরবর্তী, কৃষি জমি ও লোকালয়ে হওয়ায় অনেক ভাটাকে ছাড়পত্র দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এসব ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।
বিগত সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছিলেন খুলনা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বন্ধ রয়েছে তার ইটভাটা। অজ্ঞাত কারণে এ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডুমুরিয়ার আতলিয়া ইউনিয়নে খর্নিয়া এলাকায় হরি নদীর তীরে সেতু ব্রিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ভাটা গড়ে তোলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। মন্ত্রীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কখনো মুখ খুলতে সাহস পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ভাটাগুলোতে কাঠ ও মাটি পুড়িয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি হওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ভাটায় কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যান এসব দিনমজুর শ্রমিক।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম নামের ইটভাটা। পাইকগাছায় কৃষি জমির মধ্যে এআরবি ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, এসকেবি ব্রিকসে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিলে একই চিত্র পাওয়া যায়।
১ দিন আগে
রমজানে বাজার নিয়ে স্বস্তিতে চাঁদপুরবাসী
এমনিতেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে রমজান এলেই তা বেড়ে যায় আরও। এ নিয়ে দেশের ক্রেতা সাধারণের অভিযোগের শেষ নেই। তবে এবারের রমজানে চাঁদপুরে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। নিত্যপণ্যসহ ইফতারের প্রায় সব খাদ্যসামগ্রীর দাম সহনীয় র্পযায়ে। ফলে স্বস্তিতে রয়েছেন জেলার নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
জেলা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। রমজানে পণ্যের দামে কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি।
চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কালো বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, লেবু ৪০-৬০ টাকা হালি, কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকা কেজি, আলু ২৫-৩০ কেজি, টমেটো ও গাজর ৩০-৪০ টাকা কেজি এবং খিরা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া লাউ আকার ভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে, যা আগে থেকেই এমন দামে বিক্রি হয়ে আসছিল।
জেলা শহর ও শহরতলীর প্রত্যেকটি কাঁচাবাজারে, যেমন: পাল বাজার, পুরানবাজার, বিপনীবাগ বাজার, নতুনবাজার ও ওয়ারলেস বাজারে এসব পণ্যের প্রচুর সরবরাহ লক্ষ করা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছের দামও রয়েছে আগের মতোই।
জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও রাস্তার পাশে সকালে ভ্যানে করে সবুজ শাকসবজি ও ছোট ও মাঝারি সাইজের মাছ আরও একটু সস্তায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাং-জুস-গ্লুকোজে সয়লাব রমজানের বাজার
তবে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা বাজারে বিক্রি করতে দেখা না গেলেও গোপনে কেউ কেউ বিক্রি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য নিষেধাজ্ঞার সময়ে তার দাম নাকি আকাশচুম্বী; কেজি বিক্রি হয়ে থাকে ৩ হাজার টাকা দরে। আর ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি আড়াই হাজার টাকার আশপাশে।
২ দিন আগে
ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন, ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
দীর্ঘ সময় ধরে পেঁয়াজ চাষাবাদের সুনাম রয়েছে ফরিদপুর জেলার। পেঁয়াজ উৎপাদন করে থাকে এ জেলার চাষিরা। পাটের পরে ধান ও পেঁয়াজ আবাদে চাষিদের আগ্রহ রয়েছে। কারণ এ জেলার মাটি পাট পেঁয়াজ ও ধান উৎপাদনে উৎকৃষ্ট। পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলার স্থানটি দখলে রেখেছে ফরিদপুর।
গত এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হচ্ছে ফরিদপুরে। দেশের সরকারি পেয়াঁজ বীজের চাহিদার মোট ৫০ শতাংশ বেশি বীজ সরবরাহ করে ফরিদপুরের চাষীরা। আর এই কৃষি পণ্যটি উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে তারা ( জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা)।
এজন্যই এই বীজকে 'কালো সোনা' বলে এ অঞ্চলের মানুষ। সেই বীজ (কালো সোনা) উৎপাদনে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে এখন চাষিরা। চলতি মৌসুমে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা কৃষি বিভাগের।
জেলার সদর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী ও সদরপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু, সাদা কদম ফুলের সমারোহ।
সরজমিনে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠজুড়ে পেঁয়াজের সাদা ফুল দেখা মেলে। এই খেতগুলোতে এখন কৃষক কৃষানিরা পরিবারেরর সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে সাদা কদমে হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন। কোথাও আবার আগাছা পরিষ্কার ও কদম পচা রোথে ঔষধ স্প্রে করছে।
এ মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো উৎপাদনের পর ফরিদপুরে বাম্পার ফলন হয়েছে পেঁয়াজ বীজ আবাদেও।
অম্বিকাপুরের কৃষানী শাহেদা বেগম ও লাভলী পারভিন জানান কিভাবে কালো সোনা খ্যাত পেয়াঁজ বীজ উৎপাদন হয়, ছোট শিশুর মতো যত্ন করতে হয় এই বীজ উৎপাদনে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবাদ শুরু হয়ে ফলন উঠবে এপ্রিল-মে’তে। এরপর এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে করা হয় আবাদ ও বিক্রি। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করতে আসে শ্রমিকরা। তারা জানায় বীজের খেতে কাজ করেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা।
পাবনা থেকে ফরিদপুরে পেয়াঁজ বীজ খেতে কাজ করতে আসা আনোয়ার, কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুর রহমান প্রামানিক, রহিম মোল্লা, শইব্রাহিম শেখ'র মতো বেশ কয়েজন শ্রমিক জানান, এ মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পেঁয়াজ চাষাবাদের কাজে যুক্ত হতে ফরিদপুর অঞ্চলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আসছে।
তারা জানান, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি পেঁয়াজের বীজ ঘরে তোলা পর্যন্ত। ভালো দানা উৎপাদন করতে পারলে মালিকের যেমন লাভ হয়, তেমনি আমাদেরও আর্থিক পরিবর্তন আসে জীবনমানের।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে: ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক
এদিকে মাঠের পর মাঠ বীজের সাদা ফুলের সৌর্ন্দয্য দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছে মাঠগুলোতে। নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে তুলছেন সেলফি। আবার দলবেধে এসে করছেন সুটিং।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের চাহিদার অর্ধেক বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়। এবছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের বীজেরে চাহিদা সর্বত্র রয়েছে। প্রকার ভেদে এর বাজার মূল্য দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত ওঠে। এই কৃষি পণ্যটির বাজারমূল্য অধিক হওয়ায় ‘কালো সোনা’ বলে অভিহিত করে।
সম্প্রতি কয়েক বছর হলো পেঁয়াজ বীজ খেতে মৌমাছির উপস্থিতি কমে গেছে। এ কারণে পরাগায়নের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা চাষিদের ফুলের উপর হাত দিয়ে পরাগায়ন কিভাবে করতে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এবছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। দিন দিন পেয়াঁজ বীজ আবাদের চাষির সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি জানান, এবারের আবহাওয়া ভালো থাকায় ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬৪ টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে পেঁয়াজের চাষ বেড়ে দ্বিগুণ
৩ দিন আগে
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ, কেজি ৫০ টাকা
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ। ফলের দোকানে পসরা সাজিয়ে কিংবা ভ্যান করে বিক্রি হচ্ছে রসালো এই ফল। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।
বিভিন্ন জাত ও নানা সাইজের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বাগেরহাট বাজারে। ক্রেতাদের কাছে যেকোনো ফলের চেয়ে তরমুজের চাহিদা বেশি। ইফতারিতে তরমুজের প্রাধান্য বেশি। এছাড়া এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে আলদাভাবে তরমুজ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সাইজের তরমুজ পথচারীদের নজর কাড়ে। পথচারী থেকে শুরু করে করে অনেকে যানবাহন থামিয়ে তরমুজ ক্রয় করছেন। তিন কেজি থেকে শুরু করে আট কেজি ওজনের তরমুজ দেখা গেছে সেখানে।
আরও পড়ুন: চাষ না হলেও দক্ষিণের তরমুজে ভরপুর চাঁদপুর
পথচারী হালিম শেখ বলেন, ‘রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা এত তরমুজ এই মৌসুমে প্রথম দেখা গেলো। ৫০ টাকা কেজি দরে ৬ কেজি ওজনের একটি ক্রয় করে সে।
মিল্টন, আলম, তৌহিদ, অমলসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতারা জানান, তরমুজ তাদের অনেক পছন্দ। একারণে দাম যাই হোক; তারা তরমুজ ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, ৫০ টাকা তরমুজের কেজি তাদের কাছে বেশি হয়ে গেছে। মৌসুমের প্রথম ফল ও তরমুজ তাদের সবার পছন্দ থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় ছোট সাইজের তরমুজ ক্রয় করেছেন।
হাবিব হোসেন পটুয়াখালী চাষিদের জমি থেকে প্রায় দেড় হাজার তরমুজ ক্রয় করে ট্রাকবোঝাই করে বাগেরহাট মিঠাপুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসা করছি। মিঠাপুকুর পাড়ে বিক্রি জন্য স্তূপ করে তরমুজ রাখা হয়েছে। ট্রাক থেকে তরমুজ নামানোর পর থেকে ক্রেতারা আসছেন তরমুজ ক্রয় করতে। খুচরা প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এভাবে তরমুজ বিক্রি করতে পারলে বেশ টাকা লাভ হবে।’
এছাড়া এই মৌসুমে তরমুজ বাজারে প্রথম উঠছে। এ কারণে দাম একটু বেশি বলেও জানান তিনি। কয়েকদিন পরে তরমুজের দাম কমে আসবে বলেও জানান হাবিব হোসেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘সারাবছরজুড়ে কমবেশি তরমুজ পাওয়া যায়। তরমুজের প্রধান মৌসুম মার্চ মাস।’
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ হচ্ছে। এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো। তরমুজ হাট-বাজারে নতুন আসায় এর দামও বেশি।’
উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার আরও বলেন, ‘গ্রীষ্ম ও শীতকালে বেশি তরমুজ চাষ হয়। গ্রীষ্মকালের তরমুজের চারা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়।’ এছাড়া ড্রাগন কিং, পাকিজা, বিগফ্যামিলি, এশিয়ান ও বাংললিংকসহ বিভিন্ন নামে হাইব্রিড তরমুজ চাষ করা হয়েছে বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।
৪ দিন আগে
‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাং-জুস-গ্লুকোজে সয়লাব রমজানের বাজার
জিনজিরা; ঢাকার উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জের এই স্থানটির খ্যাতি এক বিশেষ কারণে—নকল পণ্য উৎপাদনে এই জায়গার জুড়ি মেলা ভার। মেশিনারি, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে প্রসাধনী, নকল খাদ্যসামগ্রী—কী উৎপাদন হয় না সেখানে! স্থানটির এতই খ্যাতি যে, দেশে নকল কোনো পণ্য বোঝাতে ‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাগ লাগিয়ে দেন অনেকে।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পবিত্রে রমজান মাসে জিনজিরায় তৈরি নকল ট্যাং, জুস ও গ্লুকোজে ইতোমধ্যে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সেসব সরবরাহ করছে। মফস্বল পর্যায়ের গ্রাহকরা এসব নকল খাদ্যসামগ্রী কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
চিকিৎসকদের মতে, এসব ভেজাল পণ্য পাকস্থলি ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জেনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, মান্দাইল, আমিরাবাগ, বোরহানিবাগ, শুভঢ্যা, আগানগর, কালীগঞ্জ ও কাজিরগাঁও এলাকায় রমজান মাসে সৃষ্ট চাহিদার কথা মাথায় রেখে নকল ও ভেজাল অরেঞ্জ ও ম্যাংগো ড্রিঙ্কস পাউডার (ট্যাং) এবং বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির মোড়ক নকল করে কিটক্যাট, মিমিসহ বিভিন্ন ধরনের চকলেট তৈরি ও বিক্রি চলছে দেদারসে।
বিগত সময়ে র্যাবের পক্ষ থেকে বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় এই সমস্ত ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কারখানা প্রায় একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর র্যাবের পক্ষ থেকে ভেজালবিরোধী তৎপরতা একেবারেই নেই। এই সুযোগে আসাধু ব্যবসায়ীরা আবার জেগে উঠেছে নতুন রূপে।
সরজমিনে উপজেলার গদাবাগ, মুক্তির বাগ, আমিরাবাগ, নেকরোজ বাগ, খোলামোড়া, জিয়ানগর ও তেঘরিয়া, শুভঢ্যা, আগানগর কালীগঞ্জ, কাজিরগাঁও ও আব্দুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও নকল শিশুখাদ্য তৈরি করে অতি চতুরতার সঙ্গে সেসব বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে।
মুক্তিরবাগ এলাকায় একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক হাত দিয়েই বোতলে ভরছেন ভেজাল জুস। এই কাজে হাতে গ্লাভস পরার প্রয়োজনীয়তাও মনে আসেনি তাদের। মাথায় চুলের জাল (হেয়ারনেট) না পরেই অরেঞ্জ ড্রিংকস বোতলজাত করছেন তারা। আবার অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার মোড়কজাত করার সময় বাতাসে তা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায়, সেজন্য ফ্যান বন্ধ করে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে করে তারা ঘেমে একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছেন।।
সেখানে কথা হয় কারখানাটির ম্যানেজার শাকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের বিএসটিআই ও পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। তবে দেখতে চাইলে সেগুলো দেখাতে পারেননি তিনি।
ল্যাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটে ল্যাব না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাছে রেসিপি আছে। সেই অনুযায়ী আমরা ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই। পরে আমাদের বিক্রয়-প্রতিনিধি পণ্যগুলো বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করেন।’
এ সমস্ত ভেজাল ও কৃত্রিম রং মিশ্রিত অরেঞ্জ ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই ভালো। এখানে সবকিছুই হজম হয়ে যায়। কয়েক বছর যাবত তো এই প্রোডাক্ট মার্কেটে বিক্রি করছি; কোথাও থেকে কখনও কোনো দুঃসংবাদ এখনও পাইনি।’
তবে এসব ভেজাল খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোজিনা আমিন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরী
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম রং মিশ্রিত ভেজাল ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকস সবচাইতে বেশি লিভার ও কিডনিকে আক্রান্ত করে এবং শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।’
এই চিকিৎসকের মতে, ‘ছোট শিশুদের জন্য এগুলো আরও বেশি ভয়াবহ, কারণ এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।’
৪ দিন আগে
সুনামগঞ্জের ৩ উপজেলার ১০ জলমহালের মাছ লুট, নির্বিকার প্রশাসন
প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ উপজেলায় ঘোষণা দিয়ে ইজারাকৃত বৈধ জলমহালের মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লুটে নেওয়া হয়েছে তিন উপজেলার অন্তত ১০টি জলমহালের মাছ। মাইকিং করে জলমহালের আশপাশের কয়েক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা জলমহালগুলোর কোটি কোটি টাকার মাছ লুটে নেয়।
সর্বশেষ বুধবার(৫ মার্চ) দিরাই উপজেলার মেধা বিল ও বেতরগাং জলমহাল এবং জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিল লুট করেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে লুট চালালেও হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে যেন অসহায় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় দুদলের সংঘর্ষে আহত ২০, ভাঙচুর ও লুটপাট
এদিকে, জলমহালের কোটি কোটি টাকার মাছ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ইজারাদাররা। সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, বুধবার দিরাই উপজেলার মেধা ও বেতর বিলে জাল, পলো, কুচাসহ বিভিন্ন মাছ ধরার যন্ত্র হাতে হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়। মিছিল দিয়ে তারা পানিতে নেমে লুটে নেয় মাছরাঙ্গা মৎস্যজীবী সমিতির নামের ইজারাকৃত বিলের কোটি টাকার মাছ। একই কায়দায় জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিলেও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে মাছ লুটে নেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন ও বিলের ইজারাদার জানান, আগের রাতেই মাইক ও মুঠোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিল লুটের খবর। ভোর থেকে বিলের পাড়ের জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মাছ শিকারের সরঞ্জামের পাশাপাশি সঙ্গে দেশীয় অস্ত্রও নিয়ে আসেন উচ্ছৃঙ্খল জনতা। দিরাই-শাল্লা উপজেলার শ্যামারচর, ললোয়াারচর, মাইতি, চন্দ্রপুর, ইসলামপুর, সন্তোষপুর, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁও, চিকাডুপি, বল্লবপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরিফপুর, কাশীপুরসহ আশপাশের গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন দিরাই-শাল্লার কামান ও লাইরা দীঘা, সতোয়া নদী, মেদা বিল ও বেতরগাং জলমহালের মাছ লুটে জড়িত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিল লুটের খবর পেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে লুট না করার জন্য আকুতি জানান ইজাোদার। তাতেও কাজ না হলে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ভোরে বিলে উপস্থিত হয়েও রক্ষা করতে পারেননি নিজেদের জলমহাল। হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে অসহায় ছিল পুলিশ ও ইজারাদার। লুটে নেওয়া হয় কোটি টাকার মাছ। জলমহাল লুটের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
আরও পড়ুন: লুটপাটে কাজে আসছে না ‘মুহুরী সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’
মাছরাঙ্গা সমবায় সমিতির সভাপতি রুশন মিয়া বলেন, মাইকে ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ এসে আমাদের সমিতির জলমহাল লুটে নিয়ে গেছে। আমরা বাঁধা দিয়েও পারিনি। আমাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবো এটা আমাদের জানা নেই।
এদিকে, গত রবিবার সকালে দিরাই উপজেলার মেঘনা জলমহালের একটি বিল ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ লুটে নেয় হাজারো মানুষ। এরপর সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইরা-দীঘা ও চনপইট্টা বিলের পাইলের (অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মাছ বড় করা) প্রায় কোটি টাকার মাছ লুটে নেয় বিল এলাকার ৮-১০ হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কাছের কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির সতোয়া নদীর মাছ লুট করে দিরাই ও শাল্লার ১০-১৫টি গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল মানুষ।
কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। প্রতি বছর ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দেই। তিন বছর অন্তর অন্তর মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও ১০-১৫ হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ দুই দিনে আমাদের জলমহালের কোটি টাকার বেশি মাছ লুটে নিয়ে গেছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েন বলে জানান তিনি।
জলমহাল লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন বলেন, দিরাই-শাল্লার জলমহাল লুটের বিষয়টি আমরা অবগত। ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জে জলমহাল লুট করার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ জড়িত। তাজাড়া পলো, টেঁটা, কুচ দিয়ে সংঘব্ধভাবে মাছ ধরতে আসে। এসব জলমহাল সরকারি ইজারার আওতায়। এই জলমহালগুলো লুটের কারণে আগামীতে ইজারা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। এর ফলে দেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। এতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিঘ্নিত হবে। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আমি অনুরোধ করব, তারা যেনো এসব কাজ থেকে বিরত থাকেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদাররা যদি আইনি পদক্ষেপ নিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে অনুরোধ করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন: বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার লুট’
৪ দিন আগে
দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরী
নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে উঠছে না শিল্পপ্রতিষ্ঠান। জেলার পুরাতন বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ করা দেড় শতাধিক প্লট কার্যত হেলায় ফেলে রাখা হয়েছে।
অনুকূল পরিবেশ নেই—এমন অজুহাতে সেখানে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এমন ভঙ্গুরাবস্থার কারণ হিসেবে বিগত সরকারের লুটপাট আর স্বজনপ্রীতিকে দায়ী করছেন তাদের অনেকে।
জানা যায়, শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে নরসিংদীর শিবপুরে ১৫ দশমিক ৩৯ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পর নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্পনগরীটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভিসা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ ইতালি দূতাবাসের
সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে উপজেলার সৈয়দনগরে ৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে শিল্পনগরীটির সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সরকার। ২০২২ সালের জুন মাসে এই কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। তবে এখন পর্যন্ত বর্ধিত অংশে গড়ে উঠেনি তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে গিয়ে শিল্পনগরীতে কেবল দুটি শেড আর একটি ব্যক্তিগত বসতবাড়ি চোখে পড়ে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও প্রকৃত শিল্প-উদ্যোক্তা কিংবা ব্যবসায়ীদের প্লট দেওয়া হয়নি। বিগত সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে মদদপুষ্টদের প্লট বরাদ্দ দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। ফলে নামেমাত্র প্লটগুলোর দখল নিলেও শিল্পনগরীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে না।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, শিল্পের প্রসারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও যথাযথভাবে প্লট বরাদ্দ না দেওয়া ও সরকারের ভুল নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্প। পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে প্লট হস্তান্তরসহ আরও বিশাল অঞ্চল নিয়ে বিসিক সম্প্রসারণের দাবি করেছেন তারা।
বিসিকের এই প্রকল্পের সম্প্রসারিত অঞ্চলের দেড় শতাধিক প্লটের বরাদ্ধ কারা পেলেন?—বিসিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এর উত্তর মেলেনি ১৫ দিনেও। কোনো দিয়েও সহায়তা করেননি তিনি। তার দাবি, এ-সংক্রান্ত তালিকাও নাকি মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হবে!
এদিকে, শিপন টেক্সটাইলের স্বত্ত্বাধিকারী সুবল সাহা জানান, নরসিংদী বিসিকে প্লট বরাদ্দ পেলেও নিরাপত্তার কারণে কাজ শুরু করতে পারছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিকে দুদকে পদায়ন গ্রহণযোগ্য নয়: টিআইবি
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে প্লট পেয়েও যারা এখনও সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না, তাদের নোটিশ করা হয়েছে। উপযুক্ত জবাব পাওয়া না গেলে যথাযথ আইনের মাধ্যমে প্লট বাতিলসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিসিক শিল্পনগরী চালু হলে মালিক—শ্রমিকরা লাভবান হবেন। পুরাতন বিসিকে ৯৫টি এবং সম্প্রসারিত অঞ্চলে ১৬৮টিসহ মোট ২৬৩টি প্লট যথাযথ ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগলে নরসিংদীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে লাখো মানুষের।
তাই শিগগির এই বিষয়টি আমলে নিয়ে এই শিল্পনগরীর কার্যক্রম সচল করতে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিক—এটাই স্থানীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা।
৫ দিন আগে