বিশেষ-সংবাদ
বর্জ্যে বিপন্ন হাজীগঞ্জ, ডেঙ্গু-শ্বাসকষ্টে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই পরিকল্পনার অভাবে দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস উঠেছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরবাসীর। জেলার অন্যতম সমৃদ্ধ এই পৌরসভা ও উপজেলা শহরটির অনেক স্থান এখন পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে।
প্রতিদিন এই পৌরসভা এলাকায় প্রায় ৬০ টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, আর তা ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে, খোলা জায়গায় ও জলাশয়ের ধারে। নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্পট না থাকায় এভাবে বর্জ্য ফেলা ছাড়া উপায় নেই। আর এতে করে শহরের পরিবেশ তো ভয়াবহ আকারে দূষিত হচ্ছেই, সেইসঙ্গে নানা রোগব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজীগঞ্জ পৌরসভা ২০০৪ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা এই পৌর শহরের আয়তন ২০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার। স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার। এ ছাড়া প্রতিদিন উপজেলা ও আশপাশের গ্রাম থেকে স্কুল-কলেজ, কেনাকাটা, অফিস-আদালতের কাজে আসেন আরও অন্তত ৫০-৬০ হাজার ভাসমান মানুষ।
কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয় এমন বাণিজ্যিক এই শহরে নেই কোনো নির্দিষ্ট বর্জ্য নিষ্কাশন কেন্দ্র।
পৌর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন পৌর এলাকা ও আশপাশের হাটবাজার থেকে প্রায় ৩০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অতিরিক্ত বর্জ্য মিলিয়ে দৈনিক মোট বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ টনে।
আরও পড়ুন: জামালগঞ্জে পরিত্যক্ত সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল, দুর্ভোগে ৩৫ গ্রামের মানুষ
কিন্তু দীর্ঘদিনেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট জমি বা স্পট নির্ধারণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে মিঠানিয়া সেতু এলাকা, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের ডাকাতিয়া সেতুসংলগ্ন স্থান, কচুয়া সড়কের রেলগেট এলাকা এবং ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
২০২ দিন আগে
জামালগঞ্জে পরিত্যক্ত সেতু দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল, দুর্ভোগে ৩৫ গ্রামের মানুষ
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের দৌলতা নদীর উপর ৯৫ মিটার তেরানগর সেতুটি ৩৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। নির্মাণের সময়ে ত্রুটি থাকায় অল্প সময়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ঘোষণা করা হয়েছে পরিত্যক্ত। তবুও ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অটোরিকশা সিএনজি, মোটরসাইকেল, ট্রলিসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা বলছেন, পুরোনো এই সেতুর নির্মাণকালেই ত্রুটি ছিল। এ কারণে ২২ বছরের মাথায় যানবাহনের ভার সইতে পারছে না সেতুটি। এদিকে নতুন সেতু নির্মাণে এলাকাবাসীকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেই। একারণে চলাচলকারী মানুষজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার চলাচলের ভরসার সেতুটি ৩৫ গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেমন্তে এটি ছাড়া ফেনারবাক ইউনিয়নের এসব গ্রামের সাথে যোগাযোগের আর কোন উপায় নেই। জানা যায়, তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত নজির হোসেন উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জামালগঞ্জে চারটি সেতু নির্মাণ করেন। সাচনা বেহেলী রোডে চৌধুরী বাড়ির পাশে, সাচনা পলক গ্রামের পিয়াইন নদীতে, তেরানগর দৌলতা নদীর উপর তেরানগর সেতু, দৌলতপুর বীনাজুরার কানাইখালী নদীর উপর তেরানগর সেতু।
আরও পড়ুন: সুরমার ভাঙনের কবলে ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক
এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৪ সালে শেষ হয়। ওই সময়ে এই পথে সাইকেল, মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন চলতো না। হেঁটে সেতু দিয়ে চলাচল করতেন ৩৫ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। গেল প্রায় ২০ বছর হয় জামালগঞ্জ হয়ে তেরানগর সেতু পার হয়ে ফেনারবাক ইউনিয়নের লক্ষীপুর বাজার, নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত পাকা সড়ক হয়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে শতশত মোটরসাইকেল অটোরিকশা, সিএনজি, মিনিট্রাক, ট্রলি চলাচল করে। একটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুইটি বাজার, একটি মাদরাসা এবং প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সড়ক যোগাযোগের পথ যুক্ত হয়েছে এই সেতুকে ঘিরে।
এছাড়াও মাতারগাঁও, রাজাপুর রসুলপুর লালপুর দৌলতপুর, উজান দৌলতপুর, রাজাবাজ, খোজারগাঁও, বীনাজুরা তেঘরিয়া গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাঁও, ইনাতনগর, বিজয় নগর, কাশীপুর, উদয়পুর লক্ষীপুর ভেদারপুর ফেনারবাক, চাটনিপাড়া, নাজিমনগর হটামারা, উদয়পুর ছাড়াও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া, নূরনগর, আলীনগর, ইসলামপুর, সেচনী, রফীনগর ইউনিয়নের খাগাউরা, সেচনী, কিত্তাগাঁও, স্বজনপুরসহ ১২টি গ্রামের মানুষকে এই ব্রিজ পার হয়েই যাতায়াত করতে হয়।
গেল কয়েকবছর হয় ভারী যানবাহন সেতুর উপর উঠলে কাঁপতে থাকে এটি। প্রতি বছরেই উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করে অর্থের অপচয় হয়। কিছু দিনের মধ্যেই আবার খানাখন্দসহ সেতুর রেলিং ও অ্যাপ্রোচ ভেঙে যায়। ২০১৪ সালে সেতুটি জামালগঞ্জ এলজিইডি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। পরিত্যক্ত লেখা সাইনবোর্ড টাঙানোর পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে শত শত যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট গর্ত এবং খানাখন্দে ভরা। মাঝে মাঝে কিছু গর্ত ইট বালু দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হলেও, বাকী গর্তগুলোর উপর দিয়ে প্রতিদিন চলছে শতশত যানবাহন।
আরও পড়ুন: ভাঙন-ঝুঁকিতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট
অটোরিকশা চালক নাসির বললেন, প্রতিদিন সেতুর গর্তে পড়ে কোনো না কোনো গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপতে থাকে, মনে হয় হেলে পড়ে যাবে। সেতুর রেলিং গাড়ির ধাক্কায় ভেঙে আরও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সংকীর্ণ এই সেতু দিয়ে দুইটি গাড়ি একসঙ্গে চলাচল করতে পারে না।
স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ২০১৪ সালে সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়, কিন্তু নতুন করে সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ শতাধিক মানুষ। এছাড়াও ছাগল ভেড়া গবাদিপশু মারা গেছে অর্ধশত। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন ৩৫ গ্রামের মানুষ। বিগত দিনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আশ্বাস দিলেও নতুন সেতুর বাস্তবায়ন হয়নি।
নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত চন্দ্র সরকার বললেন, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, কেউ খবর রাখছে না। সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলে দায় কে বহন করবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দ্রুত দৌলতা নদীর উপর সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের সকলের।
ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, এই সেতু দিয়ে ৪০ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও প্রতিদিন শতশত যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করছে। এতে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের আগেই সমুদ্রে বিলীন কুয়াকাটার ‘মেরিন ড্রাইভ’
জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, দৌলতা নদীর উপর তেরানগর সেতুটি ২০০২ সালে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য করা হয়েছিল। তখন এই উপজেলার কোথাও গাড়ির যোগাযোগ ছিল না। এখন এই সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ি চলাচল করছে। সেতুটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় থেকে প্রকল্পের আওতায় দৌলতা নদীর সেতুসহ এই সংস্থার মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে আরও কয়েকটি সেতুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশাকরি, আগামী অর্থ বছরে অর্থ বরাদ্দ হবে এবং এই এলাকার জনসাধারণের অতিগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নতুন করে করা যাবে।
২০৩ দিন আগে
কারাগারে 'ঈদ খাবার উদ্যোগে’ শিক্ষার্থীদের সহায়তা, বন্দীদের মুখে হাসি
ঈদের উৎসবের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দীদের জন্য বাসায় তৈরি খাবার বিতরণে স্থানীয় স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছেন। তবে উদ্যোগটি ব্যতিক্রম ও সহানুভূতিপূর্ণ।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদসহ বড় উৎসবগুলোতে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্দিদের স্বজনরা বিশেষ খাবার নিয়ে আসেন। এসব খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সঠিকভাবে বিতরণ করা একটি সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য কাজ। এই প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর করতে কারা রক্ষীদের সহায়তায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষিত কারারক্ষীদের তত্ত্বাবধানে খাবার পরীক্ষা, পরিদর্শন ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বিতরণে সহায়তা করছেন।
উদ্যোগে অংশ নেওয়া একজন কলেজছাত্র বলেন, ‘শুরুতে একটু ভয় লাগছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটি আমাদের সামাজিক ও মানবিক দায়িত্বের অংশ। বন্দিরাও মানুষ, তাদের জন্য কিছু করতে পারা গর্বের।’
তবে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সংবেদনশীল পরিবেশে যুক্ত করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিছু মহল।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন ইউএনবিকে বলেন, শিক্ষার্থীরা কারাগারের বাইরে নিরাপদ এলাকায় কাজ করছেন এবং সব সময় নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। তারা শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা দিচ্ছেন, কারা রক্ষীদের দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করছেন না।
আরও পড়ুন: দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক মেয়র আইভী
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, এই প্রথম স্থানীয় শিক্ষার্থীরা এই ধরনের উদ্যোগে জড়িত হয়েছেন। যদি এটি সফল হয়, তাহলে দেশের অন্যান্য কারাগারেও এই মডেলটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন জাহাঙ্গীর কবির জানান, ঈদের দিন বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। এরপর রোববার থেকে তিন দিন ধরে স্বজনরা খাবার আনছেন। এই দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষামূলকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। সফল হলে এটি অন্যান্য কারাগারেও চালু হতে পারে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কেরাণীগঞ্জ কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, উদ্যোগটি চালু থাকবে কিনা- তা নির্ভর করবে এর ফলাফল ও নিরাপত্তা মূল্যায়নের ওপর। আপাতত এটি বন্দিদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে এবং যুব সমাজের মধ্যে মানবিক কাজে সম্পৃক্ততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
শিক্ষাবিদরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা যেমন বাড়ে, তেমনি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধও গড়ে ওঠে।
২০৩ দিন আগে
ঈদের দিনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবিহীন হাসপাতাল, ভোগান্তিতে রোগীরা
লালবাগ থেকে হাড় ভেঙে যাওয়া চাচাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসতাপালে এসেছেন আকাশ নামে যুবক। তার চাচাকে জরুরী ভিত্তিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার প্রয়োজন হলেও তা মেলেনি, এমনকি ডাক্তাদের দেখাও মেলেনি। অথচ হাসপাতালের নির্দেশনাতে বলা রয়েছে, সব রোগীদের জন্য ডাক্তার ও প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা সবসময়ই বহাল থাকবে।
শনিবার (৭ জুন) সরেজমিনে ঢামেকে দেখা মেলে জাহিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির। তিনদিন আগে সিলেট থেকে এসেছেন তিনি। সিমেন্টের বস্তা বহন করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত তা বুকে পড়ে ভেঙ্গে যায় কয়েকটি হাড়। চিকিৎসা নিতে এতে বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও মিলছে না কোনো সেবা।
এসবের পাশাপাশি রয়েছে আরও এক গুরুতর সমস্যা। হাসপাতালে আগত অধিকাংশ রোগীর অভিযোগ, নার্সরা অসৌজন্যমূলক আচরন করেন, পাশাপাশি সেবা প্রদানেও উদাসীনতা দেখান তারা। নার্সদের এমন ব্যবহারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগীরা।
সেবা নেই বেসরকারি হাসপাতালে
রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেবা নিতে এসেছেন মিমি (৩৫)। তিনি বলেন, ‘আমার শরীর খারাপ লাগায় জরুরি বিভাগে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। একজন বিশেষজ্ঞ দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখান থেকে জানানো হলো, ঈদের দিন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই।’
জরুরি দায়িত্বে থাকা ডাক্তার শাখাওয়াত জানান, ডিপার্টমেন্ট অনুযায়ী ডাক্তারদের ডিউটি ভাগ করা আছে। তবে ঈদের দিন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। রবিবার থেকে দুজন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকবেন বলে জানান তিনি।
ইবনে সিনার কাস্টমার কেয়ার থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাস্টমার কেয়ার অফিসার বলেন, ‘আমাদের সম্পূর্ণ সেবা চালু হবে ১৪ তারিখ। সব ডাক্তার ১৪ জুন থেকে জয়েন করবেন।’
ইনডোরে যারা ভর্তি রয়েছেন তাদের জরুরি প্রয়োজনে কে দেখবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে রোগী যে চিকিৎসকের আওতায় ভর্তি আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা সেবা দেবেন। ঈদের দিন কোনো ডাক্তার আসেননি।’
প্রসূতি বিভাগ খোলা রাখার ব্যাপারে বলেন, ‘যদি সেরকম রোগী আসে, জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার মতো চিকিৎসক আছেন।’তবে শনিবার কোনো ডাক্তার এই বিভাগেও ছিল না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: কোরবানির মাংস কাটতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহত শতাধিক, হাসপাতালে ভিড়
একই চিত্র দেখা যায় আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল হাসপাতালেও। খবর নিয়ে জানা যায়, সেখানেও ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন অর্থাৎ ৮ জুন কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন না। সেক্ষেত্রে সেবা নিতে আসা অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে বলে জানান সেখানকার একজন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
২০৪ দিন আগে
এবারও চামড়া নিয়ে হতাশা, দাম ওঠেনি হাজারও
রাজধানীতে চামড়ার দাম প্রতি ফুটে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে তার প্রভাব পড়েনি বাস্তবে, আগেরবারের মতো এবারও কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
প্রতি বর্গফুট গরুর চমড়ার দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চামড়া বিক্রি হয়েছে গতবারের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কুরবানিদাতাদের থেকে তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
উত্তরার চামড়া ব্যবসায়ী হেফাজ উল্লাহ বলেন, ‘কুরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে রীতিমতো বিপদে পড়তে হয়েছে। এই এলাকায় ভালো মানের চামড়ার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এর ওপরে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা যায়নি।’
বাড্ডার চামড়া ব্যবসায়ী সিরজা বলেন, ‘কাঁচা চামড়ার চাহিদা এবারও তলানিতে। ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। একটি ভ্যান আর দুইজন লেবার নিয়ে যে খরচ হয়েছে তার তুলনায় মুনাফা হয়নি বললেই চলে। সারাদিনের কষ্ট বৃথা।’
খিলক্ষেতের চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ‘আগে জানলে এত দাম দিয়ে চামড়া কিনতাম না। প্রতিবারই ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এতে আমাদের মধ্যেও দাম দিয়ে চামড়া কেনার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: কাঁচা চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে কড়া অবস্থানে বিজিবি
তবে এ ব্যাপারে ট্যানারি পরিচালক ও এজেন্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ দেয়া প্রস্তুতকৃত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারি থেকে কাঁচা চামড়া কেনায় দাম কম পড়েছে। তবে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় সব চামড়া কেনা হয়েছে; এমন তথ্য ভুল দাবি করেছেন তারা। অনেক ভালো মানের চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়ও কেনা হয়েছে বলে জানান ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, গতবারের মতো এবারেও ছাগলের চামড়া চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে দিয়েছেন, অনেকক্ষেত্রে দাম উঠেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।
এবারের ঈদে সবমিলিয়ে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকরা যার সিংহভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঈদের প্রথম দিনেই।
২০৪ দিন আগে
ছুটিতে বন্ধ হাসপাতাল, দুর্ভোগ লাঘবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
ঈদের ঠিক দুইদিন আগে, যখন উৎসবের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে রাজধানী, তখন অন্ধকার নেমে আসে জামাল আহমেদের জীবনে। রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হিসেবে কর্মরত জামাল (ছদ্মনাম)। একাধিক আঘাত ও হাড় ভেঙে যাওয়ার পর তাকে তড়িঘড়ি করে কাছাকাছি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি সামান্য প্রাথমিক চিকিৎসা পান এবং বিলম্ব না করে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বলা হয় তাকে।
কিন্তু বাংলাদেশে ঈদের সময় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাওয়া যেন সোনার হরিণের পিছনে ছোটার মতো। অবশ্য জামালের কপাল মন্দ নয়। তিনি দুর্ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে একজন অস্থি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান। ঠিক সময়ে ক্লিনিকে পৌঁছেও জামাল পড়ে যান অসংখ্য রোগীর ভিড়ে। আহত বা অসুস্থ মানুষদের নীরবে যন্ত্রণায় অপেক্ষা করতে দেখেন তিনি। বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে জামাল সেখানে দীর্ঘ দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করেন, এই আশায় যে কখন তার ডাক পড়বে।
তবে এ ধরনের দুর্ভোগ বাংলাদেশর প্রেক্ষাপটে কোনো ব্যতিক্রম নয়। সাধারণ দিনেও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া কঠিন; আর ঈদের সময় তো কথাই নেই।
ঈদের খুশিতে দেশ যখন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে, তখন অনেক হাসপাতালই নিস্তব্ধতায় ডুবে যায়। চিকিৎসাসেবার ব্যস্ত গুঞ্জন চাপা পড়ে নিরব কান্না আর অবহেলিত রোগীর আহাজারিতে।
যে ক্লিনিকে জামাল অপেক্ষা করছিলেন, সেখানে প্রায় ৯০ শতাংশ চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন। তারা আনন্দে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন। কিন্তু রোগীদের জন্য কোনো ঈদ নেই, নেই কোনো আনন্দ, কেবল যন্ত্রণা আর অশ্রুর মধ্যেই সহ্যের এক কঠিন পরীক্ষা।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহ পর চক্ষু হাসপাতালে জরুরি সেবা চালু
চলতি বছর বাংলাদেশে ৫ জুন থেকে টানা ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়, যা সারা দেশকে এক উৎসবমুখর শান্তির আবরণে ঢেকে দেয়।
কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মতো জায়গায় এই শান্তি যেন অবহেলার অন্য নাম। হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া না গেলেও জরুরি সেবার চাহিদা জোয়ারের মতো বেড়েই চলেছে।
গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ে ফাঁকা করিডোর আর চিকিৎসকদের শূন্য চেয়ারের দৃশ্য।
প্রতিবারের মতো এবারও এই সংকটের গুরুত্ব অনুধাবন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এগিয়ে এসেছে এবং একটি বিস্তৃত নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে ঈদের ছুটি রোগীদের জন্য অব্যাহত কষ্টে পরিণত না হয়।
ঈদ হোক বা না হোক — চিকিৎসাসেবা চলতেই হবে
ঢামেকের উপপরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসকদের ছুটি ভাগ করে দিয়েছি। জরুরি সেবা ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে।’
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটি ও ঢাকা মেডিকেলের চিরাচরিত রোগীর চাপ বিবেচনায় রেখে আমরা নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমানও একই ধরনের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘বহির্বিভাগের সেবা ৬ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে আইসিইউ, লেবার রুম, অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি সেবা চালু থাকবে। ঈদের দিন রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। ৫ জুন নিয়মমাফিক সব সেবা চালু থাকবে এবং ৯ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সব বিভাগ চালু থাকবে। ১৩ জুন হাসপাতাল বন্ধ থাকবে, তবে ১৪ জুন থেকে আবার খুলে যাবে, এমনকি অন্য অফিস বন্ধ থাকলেও শনিবারও খোলা থাকবে।’
আরও পড়ুন: চারদিন ধরে বন্ধ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট, বিপাকে রোগীরা
এ ছাড়া, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য এবং দুটি মূল নির্দেশনা দিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য, যাতে সারা দেশে জরুরি চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত না হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান নির্দেশনাসমূহ সংক্ষেপে
• জরুরি বিভাগে ডিউটিতে চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে — প্রয়োজনে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।
• লেবার রুম, জরুরি অপারেশন থিয়েটার ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে।
• ঈদের আগে-পরে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে পর্যাপ্ত জনবল বজায় থাকে।
• প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জনস্বার্থ ও জরুরি সেবার ধারাবাহিকতা বিবেচনায় রেখে ছুটি অনুমোদন করতে হবে।
• জেলা পর্যায়ে কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে এবং সিভিল সার্জন বা বিভাগীয় পরিচালকদের আগেই জানাতে হবে।
• বিভাগীয় প্রধানদের প্রতিদিনের কার্যক্রম তদারকি করতে হবে এবং এক্স-রে ও ল্যাবসহ গুরুত্বপূর্ণ ডায়াগনস্টিক
সেবাসমূহ সচল রাখতে হবে।
• জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, স্যালাইন, রিএজেন্ট ও সার্জিকাল সরঞ্জামের পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে।
• অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সর্বদা সচল রাখতে হবে।
• হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাধ্যতামূলক।
• অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
• প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডিউটিরত স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগে থাকতে হবে এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হবে।
• যদি প্রধান কর্মকর্তা ছুটিতে থাকেন, তাহলে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং তার যোগাযোগ তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
• ঈদের দিন ভর্তি রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে তা বিতরণ নিশ্চিত করবেন।
• বহির্বিভাগ (ওপিডি) ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্ধ রাখা যাবে না — কিছুটা নমনীয়তা রাখা হলেও মূল নিয়মটি বজায় থাকবে।
বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নির্দেশনা
ক. নিবন্ধিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি ও মাতৃত্বসেবা নিশ্চিত করতে হবে।খ. প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনে রেফারকৃত রোগীর জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।গ. কোনো জরুরি অবস্থা বা দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ডিজিএইচএসকে জানাতে হবে।
ডিজিএইচএসের পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান ইউএনবিকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে আমাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় আমরা তাদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে নিবন্ধিত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টার জরুরি ও মাতৃত্বসেবা নিশ্চিত করা।’
অন্ধকারের মাঝে আশার আলোএই ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে ঈদের ছুটিতে নিস্তব্ধ করিডোর, অশ্রুসজল অপেক্ষা, অবর্ণনীয় কষ্টের যে ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় —— তা পরিবর্তিত হয়ে দায়িত্বশীল চিকিৎসাসেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
আহমেদ ও তার মতো হাজারো মানুষের জন্য এক মুহূর্তের বিলম্বই সারাজীবনের কষ্টের কারণ হতে পারে। ছুটি যেন কখনোই সুস্থতার পথে বাধা না হয়। যখন জাতি ঈদ উদযাপন করছে, তখন হাসপাতালগুলোকে মনে রাখতে হবে — ব্যথা কখনো ছুটি নেয় না।
২০৫ দিন আগে
সুরমার ভাঙনের কবলে ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক
বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই সুরমা নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। এর ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক। যেকোনো সময় সড়কটি ভেঙে সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এর আগে, ২০২২ সালের বন্যায় সড়কটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর সংস্কার চলাকালীনই আবার ভাঙনের মুখে পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মাজারের পাশে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। যা গত তিন-চার দিনে ভাঙন পাকা সড়কের পাশে চলে এসেছে।
এ ছাড়াও, মাছুখালী ব্রিজের অ্যাপ্রোচের পশ্চিমাংশ ভেঙে যাওয়ায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় সড়কটি ভেঙে সুরমায় বিলীন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তারা জানান, ২০২২ সালের বন্যায় এই সড়কটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে সড়কটিতে সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের শেষার্ধ্বে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে মেরামত কাজ চলমান থাকা অবস্থায়ই আবার দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।
আরও পড়ুন: নদীভাঙন, দারিদ্র্য আর অবহেলার মাঝেও স্বপ্ন দেখে যারা
এদিকে, নতুন সংস্কার কাজের বিভিন্ন অংশেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে ও ধসে যেতে শুরু করেছে। সড়কের মল্লিকপুর ও মাছুখালী অংশে নদীভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেছেন অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সড়কের মল্লিকপুর ও মাছুখালী অংশের নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। ভাঙনরোধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
২০৬ দিন আগে
কোরবানির পশু নিয়ে বাকৃবি গবেষকের পরামর্শ
কোরবানির হাটে পশু আনা থেকে শুরু করে কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে নিরাপদ, বৈজ্ঞানিক ও জনস্বাস্থ্যবান্ধবভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক, ইন্টার ডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটির (আইআইএফএস) পরিচালক এবং ভেটেরিনারি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভ্যাব) সভাপতি ড. মো. মাহবুব আলম।
সম্প্রতি ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু চিনে বাছাই করা, তার যত্ন এবং বেশকিছু সতর্কতার কথা উঠে আসে এই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপচারিতায়।
সুস্থ ও অসুস্থ পশুর বৈশিষ্ট্য
কোরবানির পশু শুধু কিনলেই হবে না, সেটি সুস্থ কিনা, কিংবা কোনোপ্রকার রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে পশুটিকে মোটাতাজা করা হয়েছে কি না— এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন ড. মাহবুব আলম।
সুস্থ পশুর লক্ষণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সুস্থ পশু এমনিতেই চঞ্চল থাকবে, জাবর কাটবে, নাক ও মাজল ভেজা থাকবে। বিশেষ করে গরু, মহিষ বা ষাঁড়ের ক্ষেত্রে চামড়া টানটান ও পিঠের কুঁজ মোটা হবে, সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুস্থ পশুর চোখ উজ্জ্বল থাকবে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি সেটি সজাগ থাকবে। এ ছাড়া খাবার দিলে আগ্রহ নিয়ে খাবে এবং স্বাভাবিকভাবে মলমূত্রও ত্যাগ করবে।’
আরও পড়ুন: কোরবানি: হাটগুলোতে জমে উঠছে পশু কেনাবেচা
অসুস্থ পশুর মধ্যে দুর্বল, ঝিমানো, কম চলাফেরা, খাবারে অনীহার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। পাশাপাশিস এ ধরনের পশুর মুখ দিয়ে লালা পড়বে, শরীর থলথল করবে ও কান নিচের দিকে ঝুলে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্টেরয়েড বা হরমোন প্রয়োগ করা পশু
পশুকে পেশিবহুল ও মাংসল দেখানোর উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোরবানির পশুর শরীরে স্টেরয়েড ট্যাবলেট বা ইনজেকশন প্রয়োগের প্রবণতা বেড়েছে। অনেক অসাধু খামারি এবং পশু ব্যাবসায়ীই এ ধরনের কাজ করে থাকেন।
স্টেরয়েড প্রয়োগ করা পশুর মাংস খাওয়া মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় তা বিপজ্জনকও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এই ধরনের পশু চিনব কীভাবে, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের এই অধ্যাপকের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরু হবে অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির; তারা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না, বিশেষ করে পশুর উরুতে অনেক মাংস রয়েছে বলে মনে হবে।’
আবার শ্বাস-প্রশ্বাস ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেও গরুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায় বলে জানান তিনি।
ড. মাহবুব বলেন, ‘ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে। তাছাড়া এ ধরনের একটি গরুকে প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।’
হাটে চকচকে চামড়ার যে গরু সহজেই নজর কাড়বে, সেটিই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তিনি।
তার ভাষ্যে, ‘মানুষের শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।’
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ
‘অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে পশুর শরীর মোটা দেখায়। এ ধরনের পশুর শরীরে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।’
তার মতে, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনাই ভালো, কারণ বেশি চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া ঠিক নয়। তার ওপর স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরুগুলো বেশি মোটা হয়ে থাকে। তাই দেশি জাতের গরু কেনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কারণ হিসেবে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা পশুর সঙ্গে অনেকসময় নানা রকম সংক্রামক রোগ চলে আসার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশুগুলোও অনেক ক্লান্ত থাকে। ফলে পশুটি সুস্থ নাকি অসুস্থ, তা সঠিকভাবে বোঝা যায় না।’
এ ছাড়া দিনের আলো থাকতে থাকতেই কোরবানির পশু কিনে ফেলা উচিত বলে জানান তিনি। কারণ রাতের বেলায় অনেকসময় রোগাক্রান্ত পশু দেখে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
ব্রয়লার ফিড খাওয়ানোর ঝুঁকি
গরু মোটাতাজা করতে ব্রয়লার ফিড খাওয়ানো মারাত্মক বিপজ্জনক বলে মনে করেন অধ্যাপক মাহবুব।
এ বিষয়ে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গরুকে অনেক খামারি মনে করেন মুরগির ফিড খাওয়ালে গরু মোটা হয়, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। এই ফিডের কারণে গরুর চামড়ার নিচে পানি জমে, যার ফলে গরুকে নাদুসনুদুস দেখায়; কিন্তু জবাই করার পর দেখা যায় মাংস হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায় এবং ওজনও কম হয়।
তিনি জানান, মুরগি ও গরুর হজম প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়ায় গরু এই ফিড হজম করতে পারে না। ফলে কিডনি, লিভার, ফুসফুসে পানি জমে এবং এতে গরুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ ছাড়া ব্রয়লার ফিডে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন, এনার্জি ও স্টার্চ গরুর দেহে অতিরিক্ত তাপ, চর্বি ও মেটাবলিক হিট তৈরি করে, যা হিটস্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও পেটের নানা সমস্যার কারণ হয়।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ ড. ইউনূসের
এই ফিডে থাকা উপাদান গরুর মাংসের মানও নষ্ট করে জানিয়ে নিরাপদ মোটাতাজাকরণে গরুর জন্য উপযুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবহার জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কোরবানির পশুর রোগ নির্ণয়
এই পশু বিশেষজ্ঞের মতে, শরীরের গঠন, হাঁটার ভঙ্গি বা অবস্থান দেখে পশুর হাড় বা পেশিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। আবার চামড়ার কিছু অংশ ঘষে চর্মরোগ, যেমন: চুলকানি, ছত্রাক সংক্রমণ বা অ্যালার্জির মতো সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
এ ছাড়াও পশুর, বিশেষ করে গরুর ক্ষেত্রে চামড়ায় গুটির মতো ফোলা ফোলা ছোট ছোট গোটা দেখে এলএসডি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
পাশাপাশি ক্ষুরের অস্বাভাবিকতা, যেমন: খুব মোটা ও বাঁকা হওয়া শরীরের ভেতরের কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার লালচে চোখ ও কর্নিয়ার ক্ষত দেখে চোখের রোগ নির্ণয় করা যায় বলে জানান তিনি।
২০৭ দিন আগে
টিকিটের কালোবাজারি রোধে বড় বড় রেলস্টেশনে দুদকের অভিযান
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কালোবাজারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি, আর্থিক অনিয়ম, যাত্রী হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকার কমলাপুরসহ আটটি বড় রেলস্টেশনে অভিযান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ২৮ মে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এসব স্টেশনে একযোগে অভিযান শুরু করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম। টিকিটের কালোবাজারি বন্ধে দুদক বিশেষ নজর দিয়েছে বলেও জানান আকতারুল ইসলাম।
কমলাপুর রেলস্টেশনের প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট ও দিনাজপুর রেলস্টেশনে এসব অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনলাইনে টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি
কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘পশ্চিমাঞ্চলের যেসব যাত্রী আগামী ৫ জুন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৬ মে সকাল ৮টায় অনলাইনে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এ সময় প্রথম ৩০ মিনিটেই টিকিট কিনতে ২ কোটি ৯৭ লাখ হিট বা টিকিট কেনার চেষ্টা করা হয়।’
আরও পড়ুন: নিমিষেই শেষ অনলাইনে ট্রেনের টিকিট, কেন?
এর আগের দিন ২৫ মে দুপুর ২টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বিক্রি শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটেই ১ কোটি ৯৪ লাখ হিট হয়। তারও আগে, সকাল ৮টায় রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রির সময় সর্বোচ্চ ২ কোটি ৭৬ লাখ হিট রেকর্ড হয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেনে ঈদযাত্রা ঘিরে এবার সারা দেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬৫টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে রবিবার (১ জুন) দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৬২ হাজার ২৫৮টি টিকিট।
আগামী ৫ জুন ঢাকা থেকে সারা দেশে যাতায়াতের জন্য ৩৩ হাজার ৯২৪টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২৪টি ট্রেনে ১৬ হাজার ৫৭৬ আসন এবং পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২১টি ট্রেনে ১৭ হাজার ৩৪৮ টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫৮১ টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া, ৪ জুনের জন্য ঢাকা থেকে সারা দেশে যাতায়াতের জন্য ৩৪ হাজার ২০টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২৪টি ট্রেনে ১৬ হাজার ৫৭৬টি আসন এবং পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১টি ট্রেনে ১৭ হাজার ৪৪৪টি টিকিট।
এবার শুধু ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মোট আসন সংখ্যা থাকছে ৩৩ হাজার ৩১৫টি। পাশাপাশি ২৩টি পূর্বাঞ্চল এবং ২০টি উত্তরাঞ্চলগামী ট্রেনের জন্য কমিউটার, মেইল ও লোকাল সার্ভিসে আরও ৪৭ হাজার টিকিট বরাদ্দ করা হয়েছে।
টিকিট বিক্রির গতি নিয়ে প্রশ্ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মেসবাহউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা শুনেছি হাজার হাজার টিকিট দুই মিনিটে শেষ হয়ে যায়। টিকিট দুই মিনিটে বিক্রি হতে পারে, যদি সেটি কোনো দ্রুততম সার্ভার হয়; কিন্তু এত সক্ষমতা-সম্পন্ন সার্ভার আমাদের দেশে আছে কি না, এটি একটি প্রশ্ন।’
আরও পড়ুন: প্রতারণা: অ্যাপ ও সরাসরি কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট কেনার পরামর্শ
দীর্ঘদিন ধরেই ছুটির সময় ট্রেনের টিকিট বিক্রি ঘিরে কালোবাজারির যে অভিযোগ রয়েছে, তার প্রভাবেই এমনটি হতে পারে বলে ধারণা এই শিক্ষকের।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশেষজ্ঞরাও ড. মো. মেসবাহউদ্দিন সরকারের এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করে দেশের সার্ভারের এই দ্রুতগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম জানান, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমের তথ্যমতে, তাদের সিস্টেম প্রতি পাঁচ মিনিটে ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি করার সক্ষমতা রাখে।
তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে যত হিটই আসুক, সিট তো নির্দিষ্ট। দাঁড়ানো টিকিটসহ বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার। হিট মানেই টিকিট পাওয়া যাবে, এমন নয়।’
কালোবাজারির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ এপ্রিল যোগদান করেছি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি বা কাউকে অবৈধ টিকিট বিক্রিতে জড়িত অবস্থায় ধরিনি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ চলমান রয়েছে।’
এত দ্রুত টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় টিকিট পাওয়া নিয়ে ঈদে ঘরমুখী মানুষের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। এতে কর্তৃপক্ষের ওপরও স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার চাপ বাড়ছে।
২০৯ দিন আগে
কোরবানি: হাটগুলোতে জমে উঠছে পশু কেনাবেচা
ঈদুল আজহার প্রস্তুতি জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় অস্থায়ী গবাদিপশুর হাট গড়ে উঠতে শুরু করেছে। জমে উঠছে পশু কেনা-বেচাও।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আসা শুরু করেছেন এবং হাটগুলোও দ্রুত কোরবানির পশুতে ভরে উঠছে। এরইমধ্যে ব্যাপক পশু কেনা-বেচার মৌসুম শুরু হচ্ছে ঢাকায়।
স্থানীয়ভাবে যেগুলোকে ‘কোরবানি হাট’ বলা হয়, সেগুলো প্রতি বছর ঈদুল আজহা শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে বসে, যাতে পর্যাপ্ত পশুর চাহিদা মেটানো যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে সরকারি হাটগুলো সাধারণত ঈদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে বসতে থাকে।
এই বছর, মে মাসের শেষ সপ্তাহে কার্যক্রম শুরু হয়, যখন মফস্বল এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু, ছাগল এবং মহিষ নিয়ে আসেন। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী দেশ ভারতের ও নেপালের কিছু পশুও এসেছে। কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এই সংখ্যাটা সীমিত।
আরও পড়ুন: কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ
২০২৫ সালে, ঢাকা শহরে ১৮টি সরকারি গবাদিপশুর হাট বসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে, গাবতলী—শহরের একমাত্র স্থায়ী হাট, সাথে সাদেক হোসেন খোকা প্লে-গ্রাউন্ড, ধোলাইখাল, বাসিলা, কমরাঙ্গীরচর, ইস্টার্ন হাউজিং, মিরপুর ও উত্তরা সেক্টর ১৫-এর মতো অস্থায়ী স্থানগুলো।
এছাড়াও কিছু এলাকায় অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট হাট গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন হাট পরিদর্শনে দেখা গেছে দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে। অধিকাংশ বাঁশের কাঠামো তৈরি হয়েছে, বিক্রেতারা ও কৃষি খামার মালিকেরা তাদের স্থান চিহ্নিত করেছেন সাইনবোর্ড দিয়ে।
শহরের দৃশ্যমান পরিবর্তন হচ্ছে, পশু বোঝাই পিকআপ-ট্রাক ব্যস্ত রাস্তায় চলাচল করছে এবং তৈরি হচ্ছে ত্রিপলের ছাউনিযুক্ত অস্থায়ী খাঁচা।
তবে ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, ‘কয়েক বছর ধরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে গরু পালনে ব্যয় বেড়েছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি।’
গাবতলী হাটের পাশ দিয়ে নিয়মিত অফিসে যান মিরপুরের বাসিন্দা জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন অফিস যাত্রায় গাবতলীর পাশ দিয়ে যাই। বাজারটি এখনই বেশ ভিড়, দাম খুব বেশি। লোকজন পছন্দের পশু কিনতে দরকষাকষি করছেন।’
এ বছর খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে কথা বলেন পাবনা থেকে এক পশু ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পরিবহন খরচ বেড়েছে। জ্বালানি দাম ও টোলের কারণে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা চমক আশা করেন, কিন্তু আমাদের অনেক খরচ হয়েছে।
দনিয়া কলেজ মার্কেটে ফরিদপুর থেকে আসা আব্বাস আলী তার ছয়টি বলদ নিয়ে বললেন, ‘মানুষ দামাদামি করছেন। কিন্তু বিক্রি কম হচ্ছে। শুরুতে অবশ্য বিক্রি কম হওয়ারই কথা।’
এ সময়ে পশুখাদ্য বেড়ে যাওয়া ও পরিবহন খরচের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা
হাট এলাকায় সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনগুলো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মোবাইল পশুচিকিৎসা সেবা, সিসিটিভি নজরদারি ও বিশেষ নিরাপত্তা টহল।
প্রতারণা ও চুরি প্রতিরোধে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাও চালু করা হচ্ছে। অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রির প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পশুর হাটের ভিড় এড়াতে ও লেনদেনের সুবিধার কারণে লোকজন অনলাইন মাধ্যমে পশু ক্রয় করছেন।
তবে কয়েকটি সমস্যা রয়ে গেছে। হাট এলাকা সংলগ্ন সড়কে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুর বর্জ্যের কারণে স্যানিটেশন সমস্যা বাড়ছে। অনিয়মিত ও বেআইনি হাটগুলোর বিস্তার তত্ত্বাবধানে জটিলতা সৃষ্টি করছে, আবার চাহিদা ও সরবরাহে ওঠানামা দামেও প্রভাব ফেলছে।
তবুও কোরবানির উৎসাহ কমেনি। গবাদিপশুর হাট এখন পুরো গতিতে চলছে। যার মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরে এক দুর্দান্ত ব্যবসায়িক মৌসুম শুরু হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা সুরক্ষিত ও সফল মৌসুমের প্রত্যাশায় রয়েছেন, যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলন ঘটছে।
আরও পড়ুন: কোরবানির চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিতে সংরক্ষণে সহায়তা দেবে সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা
লেনদেনের জন্য ব্যাংকের সময় বাড়ল
কোরবানি মৌসুমে আর্থিক লেনদেনের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে হাট সংলগ্ন ব্যাংক শাখাগুলোকে ৩ জুন থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। অস্থায়ী ব্যাংক বুথও গড়ে তোলা হচ্ছে বাজারে, যেখানে নগদ জমা, উত্তোলন ও হিসাব খোলার সেবা প্রদান করা হবে।
আবহাওয়ার সতর্কতা
জুনের প্রথমার্ধে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় সিটি কর্পোরেশনগুলো হাট এলাকায় দ্রুত নর্দমা ব্যবস্থা বাড়াচ্ছে। কুষ্টিয়া থেকে আসা কামরুল হালকা রসিকতা করে বলেন, ‘ঈদের আগে বেশি বৃষ্টি হলে হাটগুলোতে কাদা মেলা হবে—শান্তিতে পশু কেনাবেচা সম্ভব হবে না।’
তবুও ঢাকা দৃঢ়সংকল্পে এগিয়ে চলছে। পশুর হাট কেবল বাণিজ্যের উৎস নয়, আস্থা, ধৈর্য্য ও উৎসর্গের স্মারক হিসেবে রয়ে গেছে।
২১০ দিন আগে