বিশেষ-সংবাদ
সুনামগঞ্জে হাওরে দায়সারা প্রকল্প, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
সুনামগঞ্জে হাওরের কান্দা কাটা গর্ত ভরাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া প্রকল্প দায়সারা প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। কৃষিবান্ধব এ প্রকল্পে মোটেও রক্ষা হয়নি হাওরের স্বার্থ। এরই মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও শেষ পর্যায়ে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় বছরে কাজ হয়েছে নামমাত্র।
পাউবো’র প্রকল্প কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদনের সঙ্গে সরেজমিনে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কৃষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাউবো ও ঠিকাদার উভয়ে বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা লুটপাটে তৎপর রয়েছে - এমন অভিযোগ কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের।
একাধিক হাওরের গর্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেরকম বাস্তবতাই চোখে পড়েছে। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ না জেনে, না বুঝে করা হচ্ছে বলে দাবি সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো)।
জামালগঞ্জের হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরের গর্ত (বাঁধে মাটি নেওয়ার ফলে সৃষ্ট গর্ত) ভরাটে এ উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে পাউবো ও ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ ২০ শতাংশও হয়নি। হাওর অভ্যন্তরে অসংখ্য গর্ত থাকার পরও কোনো গর্তই পুরোদস্তুর ভরাট করেনি ঠিকাদার। কিছু কিছু গর্তে খুবই সামান্য বালু ফেলা হয়েছে। আবার বেশিরভাগ গর্ত আগে যেরকম ছিল এখনও সে রকমই আছে। প্রায় দেড় বছর মেয়াদের এ প্রকল্পে সময় ক্ষেপণ ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হাওরপাড়ের মানুষ এ কাজের ব্যাপারে তেমন কিছু জানেও না। প্রাক্কলন তৈরির আগে ও পরে পাউবো এ নিয়ে কৃষকের সাথে কথা বলার প্রয়োজনও মনে করেনি। গর্তে বিটবালু ফেলে না ফেলে অনেকটা চুপিসারে এ কাজের ইতি টানতে চাইছে সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: নড়াইলে লবণাক্ততায় তিন ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত
টেকসই বাঁধ, জীববৈচিত্র্য ও গোচারণ ভূমি রক্ষাসহ হাওরের নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গর্ত এলাকা পরিদর্শনে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে হাওরের নিরাপত্তা ও কৃষকের ভাগ্য নিয়ে পরিহাস করা ছাড়া কিছুই মনে হয়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জরুরি বন্যা পুনঃনির্মাণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় জেলার দশটি হাওরে বরাদ্দ হয়েছে ১৪ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে জামালগঞ্জে ৩ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার, তাহিরপুরে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার, বিশ্বম্ভরপুরে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৮১ হাজার, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর মিলে ৫ কোটি ২১ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
এ প্রকল্পের কাজ পায় নেত্রকোণার অসীম সিংহ ও টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৩০ মে পর্যন্ত রয়েছে। সময় ফুরিয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নদী থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ভিটবালু দিয়ে হাওরের পুরোনো গর্ত ভরাটের কথা উল্লেখ আছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে।
এর মধ্যে পাউবো’র হিসাব অনুযায়ী জামালগঞ্জে ৫৫ ভাগ, তাহিরপুরে ৩৫ ভাগ, ধর্মপাশা-মধ্যনগরে ১৩ ভাগ এবং বিশ্বম্ভরপুরে ১৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিলের ১৫ ভাগ অর্থ ছাড় হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো। সবকিছু মিলে কাগজপত্রে কাজের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে জামালগঞ্জে। কিন্তু জামালগঞ্জের হালি, শনি ও মহালিয়া হাওরের সরেজমিনের চিত্র বলছে সেখানে ২০ ভাগের বেশি কাজ হয়নি। স্থানীয় কৃষক ও হাওর সচেতন মানুষও পাউবো’র এমন কাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছে।
মহালিয়া হাওরে মদনাকান্দি গ্রামের গরু চড়াতে আসা সুশীল দাস বলেন, ‘শুনছি গর্ত ভরাটের ডাক হইছে। যেডা ভরছে এইডা মনে করইন চার ভাগের এক ভাগ হইছে। যদি পুরাপুরি ভরাড হইত, তাহইলে হাওরে ঘাস হইলনে, গরু ঘাস খাইলনে, বান্ধের (বাঁধের) শক্তি থাকলনে, বাঁন ভাঙবার ভয় থাকলনানে, হাওর তল হইলনানে। এই ভরাডে হাওরের উপকার হওয়ার কথা। কিন্তু উপকার হইল কই? ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কার্তিক মাসে দেখছি কিছু কিছু জায়গা ভরাট করতাছে। পরে দেখছি তারা ড্রেজার লইয়া গেছে গা। এরপরে গর্ত ভরবার লাগি আর ড্রেজার আনা হইছে না।’
আরও পড়ুন: বরাদ্দ সংকটে হুমকিতে পবিপ্রবির ঐতিহ্যবাহী দুটি লেক
বেহেলী ইউনিয়নের আছানপুর গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য মো. ইউছুফ মিয়া বলেন, হালি হাওরের হেরাকান্দি অংশে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে। কোন গর্তই পুরোপুরি ভরাট করা হয়নি। এতে করে হাওরবাসীর কোনো উপকার হবে না। যারা কাজ করেছে তারাই লাভবান হবে।
মহালিয়া হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সিরাজুল হক তালুকদার বলেন, সর্ব সাকূল্যে মহালিয়া হাওরের গর্ত ২০ শতাংশ ভরাট হয়েছে। যে কাজ হয়েছে, তাতে হাওরের কোনো কাজে আসবে না। যে সময় ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে, তখন জিজ্ঞেস করলে তারা জানিয়েছে হাওরের গর্ত সম্পূর্ণ ভরাট করা হবে। কিন্তু কাজ না করেই তারা সবকিছু নিয়ে চলে গেছে।
কাজের ভালো-মন্দ তদারকির জন্য কোনো টিমকে আসতে দেখেননি জানিয়ে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও মদনাকান্দি গ্রামের কৃষক দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ড্রেজিংয়ের পাইপ দিয়ে শুধু পানিই এসেছে বালু আসেনি। বালু না আসলে তো গর্ত ভরাট হবে না। শুধু লোকদেখানো কাজ হয়েছে। কোনো গর্তই ভরাট হয়নি। শুনেছি এ কাজ বাইরের এক কন্ট্রাক্টরের। তবে হরিপুরের ভজন তালুকদার এ কাজ তদারকি করছেন।
হাওর থেকে ফিরে জামালগঞ্জ উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আক্কাছ মুরাদ বলেন, গর্ত ভরাটে কোটি টাকার প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়েছে লাখ টাকার। অধিকাংশ গর্তে মাটিই পড়েনি। কিছু গর্তের দুই-এক জায়গায় সামান্য ভিটবালু ফেলা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, দিনের পর দিন এভাবে আমাদের বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কোটি কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের বিপরীতে হাওরের কোনো উপকারই হচ্ছে না।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এসব প্রকল্প দেওয়া হয় মূলত লুটপাটের জন্য। এ ব্যাপারে হাওরপাড়ের মানুষের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা নেই। হাওরে গর্ত ভরাটের যে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় লোকজন তার কিছুই জানে না। কৃষকদের না জানিয়ে প্রকল্প নেওয়া মানে বরাদ্দ গিলে খাওয়ার পথ তৈরি করা। আর পাউবো তাই করে বেড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় সুনামগঞ্জের কৃষকরা
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, অনেক গর্তই ভরাট হয়েছে। বাকিগুলো করা হবে। হাওরে বিল-বাদাল আছে, বলা হচ্ছে মাছ মারা যাবে। কৃষকরা বলছেন জমির ফসল নষ্ট হবে। সে কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। সময় যদিও শেষ পর্যায়ে, তবে সময় আরও বাড়ানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির যে অভিযোগ সে ব্যাপারে অনেকেই অনেক কিছু জানে না। যতটুকু কাজ হয়েছে তার চেয়েও অনেক কম বিল দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ বিল ছাড় হয়েছে। তাহলে অনিয়ম ও দুর্নীতি কোথায় হলো?
এ ব্যাপারে সাব-কন্ট্রাক্টর (সহ-ঠিকাদার) ভজন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
২৪৪ দিন আগে
নড়াইলে লবণাক্ততায় তিন ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত
নড়াইলের নদী-খালের পানিতে ক্রমেই লবণাক্ততা বাড়ছে। এই পানি সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকরা। বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে চাষাবাদ করতে হচ্ছে তাদের। এতে বোরো আবাদসহ বিভিন্ন ফসল উপাদনে সেচ খরচ বাড়ছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে বেশিরভাগ তিন ফসলি জমি এখন আস্তে আস্তে এক ফসলিতে পরিণত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা।
যশোর মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইন্সিটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানি কর্মকর্তা ড. মো. মোতাসীম আহম্মেদ বলেন, নড়াইল জেলার মধুমতি নদীর লোহাগড়া উপজেলার কালনাঘাট, কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বাড়ইপাড়া, নড়াইল সদর উপজেলার চিত্রা নদীর আউড়িয়া এবং আফরা নদীর তুলারামপুর পর্যন্ত এই নদীর পানি বছরের একটা সময়ে লবণাক্ত থাকে।
তিনি আরও বলেন, নড়াইল জেলায় ২০০০ সালে একটি জরিপ প্রতিবেদনে পানিতে প্রথম লবণাক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। তখন এর এরিয়া ছিল ১৬ হাজার হেক্টর জমি। পরে ২০০৯ সালের জরিপে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে লবণাক্ততা ধরা পড়ে। এরপর গত বছর একটি জরিপ করা হলেও এর ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি মনে করেন, ফারাক্কা দিয়ে পানি প্রবাহ যত বেশি থাকবে এ অঞ্চলের নদ ও খালের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ তত কম থাকবে। ফারাক্কার পানি প্রবাহ কম থাকলে নদী ও খালের পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যাবে। এছাড়া বৃষ্টিপাত যত বেশি হবে পানিতে লবণের মাত্রা তত কম হবে। যে বছরে বৃষ্টি কম হয় সেই বছর লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সেচ উপযোগী পানিতে লবণের স্বাভাবিক মাত্রা ধরা হয় ০.৭৫ ডি/এস মিটার। পানিতে লবণের মাত্রার বেশি হলে সেচ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জেলার বিভিন্ন নদী ও খালের পানিতে লবণের মাত্রা ১.৭৫ ডি/এস মিটার পর্যন্ত দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: সেচ সংকটে শান্তিগঞ্জের কয়েকশ হেক্টর জমি, হুমকিতে বোরো ফসল
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলার আয়তন ৯৬৮ বর্গ কিলোমিটার। আট লাখ মানুষ এই জেলায় বসবাস করেন। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় এই জেলার ৮২ শতাংশ মানুষ কৃষি এবং মৎস শিকারের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর জেলার প্রান্তিক কৃষক বোরো আবাদ করেন।
এমন বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। সদর উপজেলার বাশভিটা গ্রামের কৃষক পবিত্র মজুমদার বলেন, এ বছর তিনি দুই একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ১৫ বছর আগে নদী কিংবা খালের পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিয়েছি। কিন্তু এখন আর দিতে পারছি না।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী-খালের পানিতে লবণের মাত্রা বেশি। বাধ্য হয়ে স্যালোমেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এ বছর সেচ খরচ বাবদ তাকে গুণতে হচ্ছে ২২ হাজার টাকা। খাল কিংবা নদী থেকে পানি দিতে পারলে এই টাকাটা সাশ্রয় হতো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু পবিত্র মজুমদারই নন। জেলার বিভিন্ন নদী-খাল-বিল ও জলাশয়ের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেচ কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন তার মতো কয়েক লাখ কৃষক।
কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক পিকুল শেখ বলেন, আগে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে সেচ দিতে খরচ হয়েছে দুই হাজার পাচশত টাকা। নদী-খালের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় স্যালোমেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলে জমিতে সেচ দিতে খরচ পড়ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, যে জমিতে লবণ পানি ঢোকে সেই জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং সারও বেশি লাগে। আগে একই জমিতে তিন ফসল ফলাতাম। এখন বেশি টাকা খরচ এবং লবণের পানিতে জমি নষ্ঠ হওয়ার ভয়ে এক ফসলও ফলাতে পারছি না।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, যে এলাকায় লবণ পানি ঢুকছে সে সকল এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে বাধ্য হয়ে সার বেশি ব্যবহার করছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তিনি দাবি করেন, এ সকল এলাকার কৃষকদের লবণ সহিঞ্চু ফসল চাষাবাদের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফসলি জমির মাটিকাটায় ২ স্কেভেটর অকেজো ও ৪ ট্রাক জব্দ
নড়াইল কৃষি অধিদপ্তর খামার বাড়ি উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. জসিম উদ্দীন বলেন, বিভিন্ন বিল এলাকায় যে সমস্ত খাল ভরাট হয়ে জোয়ার-ভাটা কমে গেছে সেগুলো পুনঃখনন করতে হবে। জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। কৃষকরা নদী ও খালের পানি ব্যবহার করতে পারলে তাদের আর্থিক সাশ্রয় হবে। তখন আবারো তিন ফসলি ফলাতে পারবে কৃষকরা। তিনি দাবি করেন ধানের পাশাপাশি গম, ভুট্টা,সূর্যমুখিসহ বিভিন্ন লবণ সহিঞ্চু ফসল চাষাবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা সে লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছেন।
২৪৬ দিন আগে
বরাদ্দ সংকটে হুমকিতে পবিপ্রবির ঐতিহ্যবাহী দুটি লেক
অবহেলা আর অযত্নে ক্রমেই ঝুঁকিতে পড়ছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)-এর স্বপ্নিল সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক, ঐতিহ্যবাহী লাল কমল ও নীল কমল লেক। লেকদুটির পার্শ্ববর্তী মাটি সরে গিয়ে এমব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জলবায়ু ও দুর্যোগপ্রবণ আবহাওয়ায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের একাধিক শিক্ষক জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাবে লেকদুটির পাড় ভেঙে পড়ছে। বিশেষ করে লাল কমল লেকের পাশে অবস্থিত প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো নারিকেল গাছ ও এক যুগেরও বেশি বয়সী মেহগুনি গাছগুলোর গোড়ার মাটি সরে গিয়ে গাছগুলো এখন যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার আশঙ্কায় আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করলেও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট। তবুও আমরা পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।’
আরও পড়ুন: বৈসাবিকে ঘিরে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ফেরাতে মারমাদের উদ্যোগ
তিনি আরও বলেন, ‘লাল কমল ও নীল কমল নামের দুটি লেক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই দুটি লেক শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। তাই লেক দুটির চারপাশে পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে এ বিষয়ে বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানান উপাচার্য। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা ইউজিসির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং বিশ্বাস করি, কমিশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের বাজেট থেকেই অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেবেন।’ তিনি গণমাধ্যমসহ সব মহলের সহায়তা কামনা করেন, যাতে এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ক্যাম্পাস গড়তে আমাদের প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের উপপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মুহাইমিনুল আলম ফাইয়াজ, কৃষি অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার ও ড. মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘লেকদুটির প্রাকৃতিক পরিবেশ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, স্থানীয় বাসিন্দা ও লেকের পাড়ের মেহগনি গাছগুলোতে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই লেক ঘিরেই পবিপ্রবির জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন: রূপসা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ
আইন অনুষদের শিক্ষার্থী মীর মো. নুরুননবী, ইএসডিএম অনুষদের শিক্ষার্থী ও ইএসডিএম ক্লাবের সভাপতি আফিয়া তাহমিন জাহিন এবং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারদিন হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন ক্লাস শেষে আমরা এখানের দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজের ওপর ও লেকের পাড়ের বেঞ্চের ওপর বসে একটু স্বস্তি খুঁজি। কিন্তু এখন চারপাশের ভাঙা পাড় ও গাছের হেলে পড়ার ভয়ে আতঙ্ক নিয়ে হাঁটতে হয়। এটা শুধু সৌন্দর্যের নয়, নিরাপত্তার বিষয়ও।’
কর্মচারী সমিতির সদস্য মো. মোশারেফ হোসেন, মাসুম বিল্লাহ, রেদোয়ানুল ইসলাম রমজান ও কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে লেক পাইলিংয়ের দাবি জানিয়ে আসছি। এটা অল্প পয়সায় মেরামতের কাজ নয়, ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ তারা যেন এবছরের বিশেষ অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে আমাদের এটার স্থায়ী সমাধান করে দেন।’
পর্যটক হিসেবে আগত জয়পুরহাট জেলার রোজিনা আক্তার বলেন, ‘এমন শান্ত পরিবেশ খুব কম জায়গায় পাওয়া যায়। কিন্তু ভাঙা পাড় আর ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো দেখে হতাশ হয়ে যেতে হয়। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতা মো. শহীদ সরদার, সাইদুর রহমান খান, রিয়াজ কাঞ্চন ও কামাল হোসেন বলেন, ‘এই লেক দেখতে অনেক মানুষ আসে, আমাদের দোকানপাটও চলে ভালো। কিন্তু যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের রুজি-রোজগারও বন্ধ হয়ে যাবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, শিক্ষার পরিবেশ, জননিরাপত্তা এবং স্থানীয় অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে জাবিতে চালু হলো ইলেকট্রনিক কার্ট গাড়ি
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সচেতন মহল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)র প্রতি অনতিবিলম্বে এ বছরের বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে লাল কমল ও নীল কমল লেকের চারপাশে টেকসই পাইলিং ও সংরক্ষণের ব্যবস্থার জোর দাবি জানিয়েছেন।
২৪৭ দিন আগে
ফুলবাড়ীতে সংস্কার হচ্ছে না সড়ক, ভোগান্তিতে মানুষ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বালারহাটের আদর্শ মোড় থেকে তিনকোণা পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ মিটারের সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। ওই সড়কে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। খানাখন্দে ভরা সড়কটি এখন মানুষের চলাচলের অযোগ্য।
সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। সড়কের পিচ ও ইটের খোয়া উঠে গিয়ে ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাধ্য হয়ে কাদাযুক্ত বৃষ্টির পানি মাড়িয়ে লোকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলাচল করছেন। ওই সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় পানির ছিটা পথচারীর শরীরে যাচ্ছে।
সড়কের দুই পাশে স্থাপনা থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এ পানি শুকাতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে।
স্থানীয় বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বালারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুরুষাফেরুষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাফল্য কিন্ডারগার্টেন, আশা ও গ্রামীণ ব্যাংক ও গজেরকুটি ও বালাতাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বালারহাট বিজিবি ক্যাম্প এই সড়ক দিয়েই যেতে হয় এবং ওই সড়কের পাশেই নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ।
আরও পড়ুন: পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মোবাইল কোর্ট, ৪৫০০০ টাকা জরিমানা আদায়
প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন সড়কটি দিয়ে। স্কুল-কলেজ যাতায়াতের সময় সড়কের কাদাপানি ছিটকে পোশাক-পরিচ্ছদে পড়ে নষ্ট হওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সব সময় অভিভাবকরা থাকছেন চরম দুশ্চিন্তায়। মোটরসাইকেল, অটোভ্যান, অটোরিক্সা, বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায়শই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
অন্য দিকে বালারহাট বাজারের পশ্চিম দিকে নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাওডাঙ্গা ভূমি অফিস ও বালারহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গরু ও সুপারি পট্টী, বালারহাট ডিএস দাখিল মাদরাসা যাওয়ার মূল সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানিতে পরিণত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারও পথচারী।
বালারহাট বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রেজা, পিটন পাল, আবু তারেক ও রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘বালারহাটর সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গরবার হাট বসে। বালারহাটে পশ্চিমে অযোগ্য সড়কের পাশেই বসে গরু, ছাগল ও সুপারির হাট৷ কাপড়-চোপড়।’
‘অন্য দিকে নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে ধান, আসবাবপত্র, হাঁস-মুরগি ও সাইকেলসহ সব ধরনের জিনিস এই বাজারে বেচাকেনা হয়। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই বাজারে। এই বাজার থেকে সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। অথচ সামান্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পাকা সড়কে পানি জমে থাকছে। চেয়ারম্যান, মেম্বররা এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করেন। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না,’ বলেন তারা।
আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শুভশ্রী রায়, তানজিলা আক্তার ও নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী হিয়ামনি জানান, ‘প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। বিকল্প সড়ক না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কাদাযুক্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। বৃষ্টির সময়তো একদমই চলাচলের অনুপযোগী থাকে। এমনকি বর্ষা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।’
২৪৮ দিন আগে
জাকসু নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, কী বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো?
যোবায়ের হোসেন জাকির, জাবি, ২৩ এপ্রিল (ইউএনবি)- ২৪’র জুলাই আন্দোলনের পরে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে ছাত্রসংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির দাবি ওঠে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদগুলো সচলে উদ্যোগী হয়। এই যাত্রার সবচেয়ে এগিয়ে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তোড়জোড়।
রাজনীতি সচেতন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জোড়ালো দাবির মুখে জাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। সেইসঙ্গে জাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় গত ৩১ ডিসেম্বর।
তফসিল ঘোষণার পরে ক্যাম্পাসে বিভক্ত হয়ে পড়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। দ্রুত জাকসু নির্বাচনের দাবিতে অনড় অবস্থানে চলে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, ইসলামি ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং বর্তমানে সক্রিয় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ।
অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ কিছু সংস্কার শেষে জাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এরপরও জাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একে একে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে থাকে জাবি প্রশাসন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় গত ১০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৫ জানুয়ারি এবং নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয় ২৫ জানুয়ারি।
এছাড়া নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশেদুল আলমকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, পরিবেশ পরিষদ গঠন, আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে জাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রস্তাব তৈরি এবং এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কাছে চিঠি দিয়ে তাদের মতামত গ্রহণ ইত্যাদি কার্যাদিও সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ, পরামর্শ চাইলন জাকসু নির্বাচনের বিষয়ে
সবশেষ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল গত ১ ফেব্রুয়ারি। পরে ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মতানৈক্য এবং বিভাজনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গত ৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।
২৪৯ দিন আগে
প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সর্বোচ্চ, কাজে স্থবিরতা
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জনপ্রশাসনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থামছে না। মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সংস্থায় শীর্ষ পদে বা সচিব ও সমমর্যাদার পদে ধারাবাহিকভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এতে নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পদোন্নতির স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা কমে যাচ্ছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চুক্তিতে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করলেও বর্তমান সরকার নিজেরাই একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে চলেছে। বাড়ছে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সংখ্যা, যার ফলে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, নিয়মিত কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ জমছে।
প্রেক্ষাপট
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ওই দিনই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়। পরদিন, ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর পর থেকেই প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা দীর্ঘদিন চাকরি থেকে বাইরে ছিলেন, দীর্ঘ ৭/৮ বছর পর তাদের হঠাৎ চুক্তিতে ফিরিয়ে আনা হলে কাজ বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কাজের গতি কমে গেছে। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ২২ ডিসি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সচিব, সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার পদ রয়েছে ৮৪টি। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে ১৭ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে রয়েছেন। এর আগে শীর্ষ পদে একসঙ্গে এতসংখ্যক কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে মোট ওএসডি আছেন ১২ জন। তবে বর্তমানে অন্যান্য পদে প্রশাসনে সবমিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিকের উপরে ওএসডি কর্মকর্তা রয়েছেন।
বর্তমানে শীর্ষ পদে যারা চুক্তিতে আছেন
৫ আগস্টের পর যারা চুক্তিতে, যেসকল কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এমএ আকমল হোসেন আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এজেএম সালাহউদ্দিন নাগরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) কাইয়ুম আরা বেগম, বিশ্বব্যাংকে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শরীফা খান, সচিব মর্যাদায় পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মাহফুজুল হক চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন।
চুক্তি বাড়ার কারণ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সময় শীর্ষ পদে থাকা বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি থাকতে হচ্ছে। তাদের বছরের পর বছর পদোন্নতি দেয়নি। তাদের সময়ে সময়ে দলীয়করণ ও নিয়ম-নীতিহীন পদায়ন-পদোন্নতির কারণে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে গত সরকারের সময়ে বঞ্চিত আমলাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হয়। যে কারণে পট পরিবর্তনের পর পরিস্থিতির প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বেড়েছে।তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমে যাবে
এসব কর্মকর্তা আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী আমলাদের ওএসডি করা হয়, অনেককে আবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বিষয়ে- ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’- এর সভাপতি সাবেক সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ইউএনবিকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ভারে প্রশাসন ন্যুব্জ। ফ্যাসিস্ট আমলেও মতোই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন: জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে থাকছে শতাধিক সুপারিশ: কমিশন প্রধান
‘এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
‘কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে কোনো প্রক্রিয়ায় অনুসরণ ব্যতিরেখে ভিনদেশী নাগরিককেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোনো কোনো পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও ১/১১ এর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
সাবেক এই সচিব বলেন, এসব কর্মকর্তা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির করার কাজে সচেষ্ট আছে। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রে বিশেষ উপদেষ্টাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা। কাজেই অবিলম্বে সকল চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।
একই বিষয়ে সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার ইউএনবিকে বলেন, ‘চুক্তিতে বেশি নিয়োগ দিলে যারা নিচ থেকে ওপরে উঠে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। তাই চুক্তি কমিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে ওএসডি ব্যবস্থা, সেটি পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। এটি শুধু আমাদের দেশে। আর ওএসডি সরকারের একটি মহা অপচয়। ওএসডি ব্যবস্থায় মূলত কোনো কাজ করানো ছাড়াই এই বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে হচ্ছে সরকারকে। এই ব্যয় এক ধরনের অপচয়ের শামিল।
১২ জন ওএসডি সচিব
১২ জন ওএসডি সিনিয়র সচিবদের মধ্যে রয়েছেন মো. মোস্তফা কামাল, মো. মশিউর রহমান ও মো. মনজুর হোসেন। সচিব হিসেবে ওএসডি আছেন মো. সামসুল আরেফিন, মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, মো. আজিজুর রহমান, মো. নুরুল আলম, মো. খায়রুল আলম শেখ, ফরিদ উদ্দিন আহমদ, রেহানা পারভীন, শফিউল আজিম ও একেএম মতিউর রহমান।
সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ওএসডি আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ৩৩ কর্মকর্তাকে গত ১৯ জানুয়ারি ওএসডি করা হয়, যারা যুগ্মসচিব হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই কারণে এর আগে ১২ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। আর বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি ও এসপি থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর বা এর বেশি, তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি ২২ জন সাবেক ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদের দুই দিনের রিমান্ড
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নিয়োগ পদোন্নতি শাখা থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামাত ট্যাগ লাগিয়ে বহু কর্মকর্তাকে বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়। অনেককেই ওই অবস্থায়ই নীরবে চোখের জল ফেলে চাকরি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে চাকরির মেয়াদ শেষে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের পুরস্কার ছিল এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
২৫০ দিন আগে
সাদা ধোঁয়ায় কার নাম ভাসবে ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হিসেবে?
পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন বেশ আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও আসছে সামনে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ এই ধর্মীয় গুরু নির্বাচন করা হবে। বাংলাদেশ সময় সোমবার (২১ এপ্রিল) ৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিস মারা যাওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করে ভ্যাটিকান। এরপর বিশ্বব্যাপী পরবর্তী পোপ নির্বাচন নিয়ে চলছে আলোচনা।
পোপ হিসেবে ১২ বছর দায়িত্ব পালনের পর মৃত্যু হয় ফ্রান্সিসের। ক্যাথলিক চার্চের নতুন নেতা কে হবেন, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ১৩৯ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এই পোপ।
কে হচ্ছেন পরবর্তী পোপ?
এখনো উত্তরসূরি নির্বাচন হয়নি। পোপ নির্বাচনের জন্য কলেজ অফ কার্ডিনালস রয়েছে। এতে জ্যেষ্ঠ ক্যাথলিক পাদ্রিদের অনেককেই নিযুক্ত করেছেন সম্প্রতি মারা যাওয়া পোপ ফ্রান্সিস নিজেই। যারাই মূলত পরবর্তী পোপ নির্বাচন করবেন।
তবে পোপ হওয়ার জন্যও পূরণ করতে হবে কিছু শর্ত। এর মধ্যে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই হতে হবে ব্যাপ্টিস্ট ও রোমান পুরুষ ক্যাথলিক। যদিও এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কার্ডিনালরা শতাব্দী ধরে তাদের পদ থেকে এককভাবে কাউকে নির্বাচিত করে আসছেন।
সারা বিশ্বে বর্তমানে ২৪০ জনেরও বেশি কার্ডিনাল রয়েছেন। তারা সাধারণত আজীবন এই পদবি ধারণ করে থাকেন।
কিভাবে নতুন পোপ নির্বাচন হবে?
রীতি অনুযায়ী পোপের মৃত্যু হলে বা পদত্যাগ করলে ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা পোপ সম্মেলনে ভোট দেন। বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য পোপদের সম্মেলনটি সিস্টিন চ্যাপেলে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। যেখানে সম্ভাব্য পরবর্তী পোপের বিষয়ে আলোচনা করেন কার্ডিনালরা।
আরও পড়ুন: প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যেভাবে ধর্মের পথে পা বাড়ান পোপ ফ্রান্সিস
পোপ নির্বাচনের জন্য সাধারণত ভোটার সংখ্যা ১২০ জনে সীমাবদ্ধতা থাকলে বর্তমানে যোগ্য ভোটার হিসেবে রয়েছেন ১৩৮ জন। ভোটাররা গোপন ব্যালটে পোপ নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন। আর এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন ৯ জন কার্ডিনাল। তবে ঐতিহ্যগতভাবে পোপ নির্বাচনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে এই শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভোটের কার্যক্রম কয়েক পর্বে অব্যাহত থাকে।
নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি পর্বে ব্যালট কেমিক্যাল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসময় কালো বা সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়। যেটি মূলত ফলাফলের সংকেত দেয় বিশ্ববাসীকে। এরমধ্যে কালো ধোঁয়া সংকেত দেয় যে সিদ্ধান্ত হয়নি। আর সাদা ধোঁয়া সংকেত দেয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। সর্বশেষ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর একজন শীর্ষ কার্ডিনাল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা থেকে নতুন পোপের নাম ঘোষণা করেন।
কখন শুরু হবে পোপ নির্বাচনের সম্মেলন?
পোপের মৃত্যু বা পদত্যাগের দুই বা তিন সপ্তাহ পর সাধারণত পোপ নির্বাচনের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পোপের মৃত্যুর পর নয়দিন শোক পালন করা হয়। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে থাকা কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানে আসেন।
২০১৩ সালের পোপ সম্মেলনে ফ্রান্সিসকে পোপ নির্বাচন করা হয়। তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ। ষোড়শ পোপ বেনেডিক্টের পদত্যাগের মাত্র ১২ দিন পর তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কত সময় লাগে নতুন পোপ নির্বাচনে?
নতুন পোপ নির্বাচনে কতটা সময় লাগবে তা নির্ভর করে কার্ডিনালদের বিভক্তির ওপর। এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করতে একদিন বা এক সপ্তাহ এমনকি তারও বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।
আরও পড়ুন: পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থার অবনতি
প্রতিদিন সম্মেলনে পোপ নির্বাচনের জন্য চার দফা ভোট দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন কার্ডিনালরা। ৩৩টি পর্বে ভোটগ্রহণেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে শীর্ষ দুই প্রার্থী দ্বিতীয় দফার ভোটে মুখোমুখি হবেন।
সর্বশেষ তিনটি পোপ নির্বাচনে তুলনামূলক কম সময় লেগেছে। এই নির্বাচনগুলোতে মাত্র কয়েক দিন লেগেছে। তবে পোপ নির্বাচনে দীর্ঘ সময় লাগারও ইতিহাস রয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে ১২৭১ সালে পোপ গ্রেগরি দশমকে নির্বাচন করতে সময় লেগেছিল তিন বছর।
পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য শীর্ষ প্রার্থী যারা
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য পোপ নির্বাচন পরিষদের ১৩৮ সদস্যের মধ্যে ১১০ জন কার্ডিনালকে মনোনীত করেছেন। এসব কার্ডিনাল ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় অবস্থান করছেন, যা আগের নির্বাচকদের তুলনায় বেশি বৈচিত্র্যময়।
সারা বিশ্ব থেকে কার্ডিনাল মনোনয়ন পোপ ফ্রান্সিসের বিশ্বব্যাপী চার্চের সম্প্রসারণ নীতিকে তুলে ধরে। সবচেয়ে কম বয়সী কার্ডিনালের বয়স ৪৫ বছর, যিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী একজন ইউক্রেনীয় ধর্মযাজক।
এর ফলে এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে যে, এবার শতাব্দীর পর প্রথমবারের মতো পরবর্তী পোপ আফ্রিকা, এশিয়া অথবা অন্য কোনো অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হতে পারে, নিতে পারে গির্জার নেতৃত্ব।
পিটার তুর্কসন (ঘানা)
তুর্কসন আফ্রিকার প্রভাবশালী কার্ডিনালদের মধ্যে শীর্ষ একজন। তিনি জাস্টিস অ্যান্ড পিসের পন্টিফিকাল কাউন্সিলের সাবেক প্রধান। এছাড়া তিনি কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ফ্রিডোলিন অ্যাম্বোঙ্গো, কিনশাসার আর্চবিশপ। অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, পরিবেশগত সমস্যা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। জাতিসংঘে আফ্রিকান জনগণের অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
লুইস আন্তোনিও ট্যাগলে (ফিলিপাইন)
আরেকজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী হলেন ফিলিপাইনের প্রাক্তন আর্চবিশপ ট্যাগলে পোপ। যিনি ফ্রান্সিসের বিশেষ পরামর্শদাতা ছিলেন। লাতিন আমেরিকার ক্যাথলিকদের জন্য তার ভূমিকার জন্য পরিচিত তিনি। তিনি ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দরিদ্রদের প্রতি যত্ন নেওয়ার ওপর জোর দেন।
পিটার এর্দো (হাঙ্গেরি)
শীর্ষস্থানীয় রক্ষণশীল প্রার্থী হিসেবে দেখা হয় হাঙ্গেরীয় কার্ডিনাল পিটার এর্দোকে। তিনি পূর্ব খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্কের সেতু হিসেবে কাজ করতে পারেন। তিনি আইন এবং ধর্মীয় তত্ত্বে বিশেষজ্ঞ এবং পোপ ফ্রান্সিসের একজন ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ছিলেন।
আরও পড়ুন: পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন
তিনি একটি আধুনিক গির্জার পক্ষে কাজ করছেন এবং সমকামীদের বিরুদ্ধে পোপের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন। এসটারগম-বুদাপেস্টের আর্চবিশপ এরদো ঐতিহ্যবাদী অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের কাছে পৌঁছানোর পক্ষে ছিলেন এবং গির্জার মধ্যে ঐক্যের ‘ব্যাপক প্রয়োজনের’ ওপর জোর দিয়েছিলেন।
পিয়েত্রো প্যারোলিন (ইতালি)
এই তালিকায় রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে ভ্যাটিকান সরকারের প্রধান হিসাবে কাজে নিযুক্ত পিয়েত্রো প্যারোলিন। পোপ ফ্রান্সিসের সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন ইতালির এই কার্ডিনাল। শীর্ষ কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য তিনি সকল কার্ডিনালের কাছে পরিচিত। তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং ভ্যাটিকানের কূটনৈতিক কার্যক্রমে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
তার কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে এই পদে নিযুক্ত করেন। কূটনীতি, প্রশাসন এবং বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে গভীর অভিজ্ঞতা তাকে পোপ হওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।
ম্যাটেও মারিয়া জুপ্পি (ইতালি)
পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ইতালির কার্ডিনাল বোলোগনার আর্চবিশপ ম্যাটেও মারিয়া জুপ্পি। ক্যাথলিক সমাজে একটি প্রগতিশীল কণ্ঠস্বর, বিশ্ব শান্তির জন্য পোপ ফ্রান্সিসের বিশেষ শান্তির দূত হিসেবে ইউক্রেনে নিযুক্ত হয়েছেন এই কার্ডিনাল। তিনি বিশেষত সেন্ট’ইজিডিও রোমান সম্প্রদায়ের সদস্য এবং অভিবাসী ও সমকামী ক্যাথলিকদের জন্য তার ভূমিকার জন্য সুপরিচিত। গত কয়েক বছরে ইউরোপীয় শান্তি ও মানবাধিকার বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান রয়েছে।
এছাড়াও বিশপদের সিনডের মহাসচিব ও মাল্টার কার্ডিনাল মারিও গ্রেচ শীর্ষ প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন। পোপ নির্বাচনের সময় ভ্যাটিকানের কী হবে?
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভ্যাটিকানের সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন একজন জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল। যাকে বলা হয় ক্যামারলেঙ্গো। ক্যামারলেঙ্গো মূলত পোপ মারা যাওয়ার পর কিংবা পদত্যাগের পর নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কালে ভ্যাটিকানের দায়িত্ব পালন করাকে বোঝায়। চার্চের মতবাদ বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এই ক্যামারলেঙ্গোর থাকে না।
বর্তমান ক্যামারলেঙ্গো হলেন আয়ারল্যান্ডের বংশোদ্ভুত কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। তিনি ভ্যাটিকানের সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
২৫১ দিন আগে
ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় সুনামগঞ্জের কৃষকরা
সুনামগঞ্জের হাওরে পুরোদমে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধান কাটা আর কেনাবেচা নিয়েও আলোচনা মুখে মুখে। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। তারা ধারণা করছেন, সরকার প্রতিমণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও, হয়তো সেটি পাবেন না।
রাজনীতিবিদ ও কৃষক সংগঠকদের পরামর্শ সরকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এবং বেশি সংখ্যক কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে পারলেই কেবল ধানের নির্ধারিত মূল্য পাবেন কৃষকরা। অর্থাৎ মিলার ও ফড়িয়ারা তখন বাধ্য হবে উপযুক্ত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে।
বাজারে ধানের মূল্য কি পরিমাণ বাড়বে বা কমবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে রবিবার(২০ এপ্রিল) জেলা ধান ক্রয় কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্তের উপরই।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে এখন জোরেশোরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত হাওর ও হাওরেরে বাইরের খেত মিলিয়ে ২৪ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই করা হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পাশাপশি খরচের জন্য ধান বিক্রয়ও করছেন কৃষকরা। এক্ষেত্রে বিপদগ্রস্ত কৃষকরা মিলার ও ফড়িয়াদের কাছে কম দামে অগ্রিম বিক্রয় করছেন ধান। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন, সরকার ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তখনই ধান বিক্রি করবেন তারা।
বিশ্বম্ভরপুরের করচার হাওরপাড়ের মুক্তিখলার এক কৃষক জানান, ধান কাটানোসহ অন্যান্য খরচ চালানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম এনেছি। তাদের কথা দিয়েছি শুকনো ধান দেব প্রতিমণ ১০০০ টাকা দরে।
আরও পড়ুন: কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
একই এলাকার আরেক কৃষক মহিবুর রহমান বলেন, সাত কেয়ার (তিন কেয়ারে এক এক একর)জমিতে ধানচাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে চার কেয়ার বর্গা (আধা আধি দেবার চুক্তিতে) করেছেন। চার কেয়ার শ্রমিক দিয়ে কেটেছেন, সাত ভাগে একভাগ দেবার চুক্তিতে। ধান পেয়েছেন প্রতি কেয়ারে ২২ মণ। সব মিলিয়ে ১৫০ মণের মতো ধান পাবেন তিনি। ১৫ থেকে ২০ মণ ধান বিক্রয় করবেন। সরকার ধান কেনা শুরু করলে গোডাউনে এক টন দেবার চেষ্টা করবেন। না হলে মহাজনের আড়তে নিয়ে যাবেন ১৫ থেকে ২০ মণ ধান।
জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের রহিমাপুরের কৃষক মুকুল রায় বলেন, ব্যাপারী (ধান কাটার শ্রমিক) মিলাইতে পারিনি। কাল-পরশু কাটানোর চেষ্টা করবো। ভরতপুর থেকে শ্রমিক আনার চেষ্টা করছি। তারা বলেছে কেয়ারে ৩০০ টাকা নগদ এবং সাত ভাগের এক ভাগ দিতে। হাওরে হারভেস্টার মেশিন (ধান কাটার যন্ত্র) নামে না। এজন্য বিপদে পড়েছি। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর শুকিয়ে, আমরা দুই তিন ভাই মিলে দুই তিন টন ধান বিক্রি করবো। সরকারি গুদামে দিতে পারলে ভালো হত। এর আগে কোনো সময়ই দিতে পারিনি।
তাহিরপুরের বড়দলের সামায়ুন আহমদ বলেন, বিগত সময়ে ৫০ থেকে ৬০ জনের কৃষি কার্ড একজন নিয়ে গেছে। এই টাউটরাই ধান দিয়েছে। খাদ্য গোদামে ধান দিতে গেলেও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের বিদায় করেছে। এবার যদি সুযোগ পাই খাদ্য গোদামে ধান দেবার চেষ্টা করবো।
সামায়ুন জানান, বারো কেয়ার (এক হাল) জমি করেছেন। ছয় কেয়ার জমির ধান কেটেছেন, বাকী আছে ছয় কেয়ার। সব মিলিয়ে ২৫০ মণ ধান পাবেন।
২৫১ দিন আগে
ব্যর্থ প্রেমিক থেকে যেভাবে পোপ ফ্রান্সিস হয়ে ওঠেন হোর্গে বারগোগ্লিও
ইউরোপেীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা আর বাংলাদেশ সময় দুপুর থেকেই সারা বিশ্বের প্রধান খবর হয়ে গেছেন পোপ ফ্রান্সিস। এর আগেও একাধিকবার তিনি বিশ্ব গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তবে এবারের শিরোনামটি সবচেয়ে ব্যথিত—মারা গেছেন নন্দিত এই ধর্মীয় নেতা।
দারুণ দারুণ সব উদ্যোগ নিয়ে আর খবরের শিরোনাম হতে হবে না তাকে। ৮৮ বছরেই জীবনযাত্রা শেষ হলো এই ধর্মযাজকের। তবে শুরুতে কিন্তু ধর্মের আশপাশেও ছিলেন না তিনি। ছিলেন রসায়ন প্রযুক্তির শিক্ষার্থী। নামও ছিল ভিন্ন—হোর্গে মারিও বারগোগ্লিও।
১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের ফ্লোরেসে জন্মগ্রহণ করেন হোর্গে মারিও বারগোগ্লিও। রেলের কর্মী বাবা হোসে মারিও বারগোগ্লিও এবং গৃহিণী মা রেগিনা মারিয়া সিভোরির পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছিলেন হোর্গে।
পরিবারটি ছিল ইতালীয় অভিবাসী, মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী শাসনামলে পালিয়ে তারা আর্জেন্টিনায় আশ্রয় নেন।
শৈশব ও প্রাথমিক জীবন
শৈশবে খুবই সাধারণ পারিবারিক আবহে বড় হয়ে ওঠেন হোর্গে, যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতার প্রভাব তার ব্যক্তিত্ব গঠন করে।
বুয়েনস এইরেসের রামোস মেহিয়া শহরে অবস্থিত উইলফ্রেদ বারন দে লস সানতোস আনহেলেস স্কুলে শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক পাঠ নেন তিনি। পরবর্তীতে এসকেলা তেকনিকা নাসিওনাল (ন্যাশনাল টেকনিকাল স্কুল) থেকে রসায়ন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
২৫১ দিন আগে
খুলনায় লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, তদারকির ঘাটতির অভিযোগ
রমজানে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে খুলনার বাজারে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগের ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ এখন খুলনার পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। নগরীর পাইকারি বাজার ঘুরে সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ টাকায়। শনিবার ( ১৯ এপ্রিল) দিনজুড়ে নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। তদারকির ঘাটতিতে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।
হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাড়তি দামের কারণ হিসাবে জানা গেছে, বাজারে সরবরাহের জন্য কৃষকের কাছ থেকে যারা সরাসরি পেঁয়াজ কেনেন, তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুত শুরু করেছেন। ওই চক্রটি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের অজুহাত সামনে এনে বাজারে অস্থিরতার পাঁয়তারা করছে। এমন অজুহাতে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজের অবৈধ মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
খুলনার বাজারে পেঁয়াজের এমন দামের পরিবর্তনে ক্রেতা সাধারণ দিশেহারা এবং সামনে আরও দাম বৃদ্ধির ব্যাপারেও শঙ্কিত। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও সামনে আরও দাম বাড়তে পারে এমন শঙ্কায় অধিকাংশ ভোক্তারা বাড়িতে পেঁয়াজ মজুত করছেন। যে কারণে স্বাভাবিক কেনাবেচার তুলনায় বর্তমানে নগরীর বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশ বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় পেঁয়াজের বাজার রমজানের মতো সহনীয় রাখতে সাধারণ ভোক্তারা সংশ্লিষ্টদের প্রতি অবৈধ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা সূত্র থেকে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম কারা বাড়িয়েছে, তা চিহ্নিত করে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: মোংলা-চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে চালু হচ্ছে কনটেইনারবাহী জাহাজ চলাচল
শনিবার (১৯ এপ্রিল) খুলনা নগরীর পাইকারী পেঁয়াজের বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে খুলনায় ঝিনাইদহের শৈলকূপা, লাঙ্গলবাঁধ, ফরিদপুর রাজবাড়ীর পানশা, কুষ্টিয়ার কুমারখালি, পানথি, চৌরঙ্গী, রাশগ্রাম, শ্মশান, চাঁকমোহড়া, হাজিরহাটসহ বিভিন্ন হাট ও মোকাম থেতে বাজারে সরবরাহের জন্য কৃষকের কাছ থেকে যারা সরাসরি পেঁয়াজ কেনেন, তারা সেই পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে অবৈধভাবে মজুত শুরু করেছেন। পাশাপাশি বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য পাইকাররা পেঁয়াজের যে দাম বলছেন, তারা (মজুতকারী) কয়েক মাস পর বাড়তি দামে ওই পেঁয়াজ বিক্রির হিসাব ধরে বাড়তি দামে কিনছেন। যে কারণে মোকামে বা হাটে পেঁয়াজের দামে বর্তমানে ঊর্ধ্বগতি। তারা (ব্যাপারীরা) বলছেন, যদি পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বন্ধ করা যায়, তবে দাম আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বর্তমানে মোকামে প্রতি মন পেঁয়াজ কেনা লাগছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪৫-৪৭ টাকা। এরপর পাইকারি ঘর পর্যন্ত পৌঁচ্ছাতে খরচ রয়েছে। সামান্য লাভে তো বিক্রি করতেই হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের আগুনের কারণ না জানাতে পারলেও ১৮ সুপারিশ কমিটির
পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিপরীতে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা নগরীর পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। যে সময় যে দামে কিনি, সেই সময় সেই দামে বিক্রি করি, সামান্য লাভে বিক্রি করি। খুলনা বাজারে পেঁয়াজের হঠাৎ ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ইতোমধ্যে সিন্ডিকেট শুরু হয়ে গেছে। ঈদের আগে অর্থাৎ রমজানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ তারা কিনেছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। ঈদের পর তা ৪০ টাকা এবং এখন কেনা লাগছে ৬০ টাকা দরে। শনিবার নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা খুচরা বাজারে পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬০ টাকা ও দৌলতপুর বাজারে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে দেখা গেছে।
দৌলতপুর পাইকারি কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা জাহিদ জানান, বাজারে ফের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। রোজা ও ঈদে বাজারে এক প্রকার স্বস্তি ছিল। হঠাৎই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করে ফেলছে। যে পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতাম, এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেনা লাগছে। পেঁয়াজের দামের এমন গতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে দাম আরও বাড়বে। সরকারের উচিত হবে রোজা ও ঈদে যেভাবে বাজার তদারকি করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, এখনো একইভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এতে আমাদের মতো ভোক্তারা একটু হলেও স্বস্তিতে থাকবে।
কেসিসির সোনাডাঙ্গা পাইকারী বাজারে ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে চাহিদার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ভোক্তা ভাবছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে, ওই শঙ্কায় তারা বাসা-বাড়িতে পেঁয়াজ মওজুদ শুরু করেছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এল.সি পেঁয়াজ আসবে না, ওই শঙ্কায় পেঁয়াজ মজুত করছে। এ কারণে চাহিদা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদার কারণে দাম বাড়তি। তবে আশা করা যাচ্ছে সামনে দাম কমে যাবে।
মের্সাস জোনাকী ভান্ডারের সত্বাধিকারী আবু সুফিয়ান জানান, বর্তমানে মোকামে পেঁয়াজের দাম বেশি। মোকামে মজুত করার জন্য কৃষকের কাছ থেকে অনেকে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনছে। যে কারনে ব্যাপারীদেরও বাজার ঠিক রাখতে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কেনা লাগছে। ওই প্রভাব গোটা বাজারের উপর পড়ছে।
খুচরা বিক্রেতা হারুন মোড়ল জানান, ‘দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। তবে যতটুকু জানি পেঁয়াজ মজুত করার কারণে দাম বাড়তি।’
নগরীর ময়লাপোতা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার জানান, সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজার থেকে বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৪ টাকা কেজি দরে কেনা লাগছে। এরপর খরচ আছে, খুচরা ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যে সময় যেমন কেনা, সেই সময় সময় তেমন দামে বিক্রি করি। রাখি বা মজুতের কারণে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
নগরীর নিউ মার্কেট বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কালু জানান, দাম তো আর আমাদের হাতে নেই। পাইকারি বাজার হতে যে দামে কিনি, সামান্য লাভে বিক্রি করি। গতকাল সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজার থেকে ৫৩ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। খরচ-খরচা বাদে কয় টাকা দরে বিক্রি করব বলেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। যখন দাম কমবে, তখন কম দামে বিক্রি করব।
এ ব্যাপারে সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা জানান, সরকার রমজানে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে করলেও সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো সক্রিয়। তার প্রমাণ কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুন হয়েছে। সিন্ডিকেটদের যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, যদি বাজার তদারকি জোরদার না করা যায়, তবে বাজার আবার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। পেঁয়াজের সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কঠোর ভূমিকায় থাকতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম জানান, খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে আমরা নিয়মিত তদারকিসহ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত করলে ওই ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসাবে জরিমানা আরোপসহ আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু পেঁয়াজের মজুতকে কেন্দ্র করে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অবগত করা হয়েছে, এ ব্যাপারে বাজার তদারকির করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কোনো ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত নিয়মনীতির বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
২৫৩ দিন আগে