বিশেষ-সংবাদ
খুলনার ভাটায় কাঠে পোড়ানো হচ্ছে ইট, নেই সরকারি পদক্ষেপ
সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খুলনার বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইটভাগুলোতে কাঠে পোড়ানো হচ্ছে ইট। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে অনেক ইটভাটা। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব ভাটা দেদার চালিয়েছেন মালিকরা। আর এসব ইটভাটার বেশিরভাগের মালিকানা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
বিভাগের ১০ জেলায় এক হাজার ২০০টি ইটভাটার মধ্যে ৭৯০টির নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে এমন সব ইটভাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। ফলে মালিকানাধীন সকল ভাটার বৈধ কাগজপত্র গত ১ মার্চের মধ্যে স্ব-স্ব উপজেলার সহাকারি কমিশনার (ভূমি) দপ্তরে বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ইটভাটার মালিক বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপর্যুপরি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খুলনার বিভিন্ন উপজেলার ইটভাটায় কয়লার ব্যবহার কমিয়ে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। ফলে খুলনা অঞ্চলের বাতাসে বাড়ছে দূষণ। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের। সংকুচিত হচ্ছে নদী। বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
আইন অনুযায়ী, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা, কৃষি জমি এলাকায় স্থাপন করা যাবে না ইটভাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার আলাইপুরে ইবিএম ব্রিকস নামের ইটভাটাটি আলাইপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠির ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলেও কর্ণপাত করছে না ভাটার মালিক।
এদিকে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার দায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি রূপসা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রূপসা উপজেলার ৯টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৯টি ইটভাটা মালিককে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুয়ায়ী গত ৩ মার্চ রূপসা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার ২২টি ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভাটা মালিকদের অল্প সময়ের মধ্যে ভাটা গুটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অপ্রতিম কুমার চক্রবর্ত্তী।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া বাজার পেরিয়ে কিছুটা সামনে গেলেই দেখা যায় ইট তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ। মেসার্স নূরজাহান ব্রিকস নামের এ ভাটায় নিম্নমানের কয়লার সঙ্গে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পোড়ানো হচ্ছে ইট। নদীর তীরবর্তী, কৃষি জমি ও লোকালয়ে হওয়ায় অনেক ভাটাকে ছাড়পত্র দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু এসব ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।
বিগত সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছিলেন খুলনা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বন্ধ রয়েছে তার ইটভাটা। অজ্ঞাত কারণে এ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডুমুরিয়ার আতলিয়া ইউনিয়নে খর্নিয়া এলাকায় হরি নদীর তীরে সেতু ব্রিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ভাটা গড়ে তোলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। মন্ত্রীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কখনো মুখ খুলতে সাহস পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ভাটাগুলোতে কাঠ ও মাটি পুড়িয়ে সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি হওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ভাটায় কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যান এসব দিনমজুর শ্রমিক।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম নামের ইটভাটা। পাইকগাছায় কৃষি জমির মধ্যে এআরবি ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, এসকেবি ব্রিকসে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিলে একই চিত্র পাওয়া যায়।
২৯৪ দিন আগে
রমজানে বাজার নিয়ে স্বস্তিতে চাঁদপুরবাসী
এমনিতেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে রমজান এলেই তা বেড়ে যায় আরও। এ নিয়ে দেশের ক্রেতা সাধারণের অভিযোগের শেষ নেই। তবে এবারের রমজানে চাঁদপুরে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। নিত্যপণ্যসহ ইফতারের প্রায় সব খাদ্যসামগ্রীর দাম সহনীয় র্পযায়ে। ফলে স্বস্তিতে রয়েছেন জেলার নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
জেলা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। রমজানে পণ্যের দামে কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি।
চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কালো বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, লেবু ৪০-৬০ টাকা হালি, কাঁচামরিচ ৫০-৬০ টাকা কেজি, আলু ২৫-৩০ কেজি, টমেটো ও গাজর ৩০-৪০ টাকা কেজি এবং খিরা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া লাউ আকার ভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে, যা আগে থেকেই এমন দামে বিক্রি হয়ে আসছিল।
জেলা শহর ও শহরতলীর প্রত্যেকটি কাঁচাবাজারে, যেমন: পাল বাজার, পুরানবাজার, বিপনীবাগ বাজার, নতুনবাজার ও ওয়ারলেস বাজারে এসব পণ্যের প্রচুর সরবরাহ লক্ষ করা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছের দামও রয়েছে আগের মতোই।
জেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ও রাস্তার পাশে সকালে ভ্যানে করে সবুজ শাকসবজি ও ছোট ও মাঝারি সাইজের মাছ আরও একটু সস্তায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা ও খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাং-জুস-গ্লুকোজে সয়লাব রমজানের বাজার
তবে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা বাজারে বিক্রি করতে দেখা না গেলেও গোপনে কেউ কেউ বিক্রি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য নিষেধাজ্ঞার সময়ে তার দাম নাকি আকাশচুম্বী; কেজি বিক্রি হয়ে থাকে ৩ হাজার টাকা দরে। আর ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি আড়াই হাজার টাকার আশপাশে।
২৯৫ দিন আগে
ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন, ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
দীর্ঘ সময় ধরে পেঁয়াজ চাষাবাদের সুনাম রয়েছে ফরিদপুর জেলার। পেঁয়াজ উৎপাদন করে থাকে এ জেলার চাষিরা। পাটের পরে ধান ও পেঁয়াজ আবাদে চাষিদের আগ্রহ রয়েছে। কারণ এ জেলার মাটি পাট পেঁয়াজ ও ধান উৎপাদনে উৎকৃষ্ট। পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলার স্থানটি দখলে রেখেছে ফরিদপুর।
গত এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হচ্ছে ফরিদপুরে। দেশের সরকারি পেয়াঁজ বীজের চাহিদার মোট ৫০ শতাংশ বেশি বীজ সরবরাহ করে ফরিদপুরের চাষীরা। আর এই কৃষি পণ্যটি উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে তারা ( জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা)।
এজন্যই এই বীজকে 'কালো সোনা' বলে এ অঞ্চলের মানুষ। সেই বীজ (কালো সোনা) উৎপাদনে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে এখন চাষিরা। চলতি মৌসুমে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা কৃষি বিভাগের।
জেলার সদর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী ও সদরপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু, সাদা কদম ফুলের সমারোহ।
সরজমিনে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠজুড়ে পেঁয়াজের সাদা ফুল দেখা মেলে। এই খেতগুলোতে এখন কৃষক কৃষানিরা পরিবারেরর সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে সাদা কদমে হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন। কোথাও আবার আগাছা পরিষ্কার ও কদম পচা রোথে ঔষধ স্প্রে করছে।
এ মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো উৎপাদনের পর ফরিদপুরে বাম্পার ফলন হয়েছে পেঁয়াজ বীজ আবাদেও।
অম্বিকাপুরের কৃষানী শাহেদা বেগম ও লাভলী পারভিন জানান কিভাবে কালো সোনা খ্যাত পেয়াঁজ বীজ উৎপাদন হয়, ছোট শিশুর মতো যত্ন করতে হয় এই বীজ উৎপাদনে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবাদ শুরু হয়ে ফলন উঠবে এপ্রিল-মে’তে। এরপর এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে করা হয় আবাদ ও বিক্রি। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করতে হচ্ছে।
পেঁয়াজের এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করতে আসে শ্রমিকরা। তারা জানায় বীজের খেতে কাজ করেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা।
পাবনা থেকে ফরিদপুরে পেয়াঁজ বীজ খেতে কাজ করতে আসা আনোয়ার, কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুর রহমান প্রামানিক, রহিম মোল্লা, শইব্রাহিম শেখ'র মতো বেশ কয়েজন শ্রমিক জানান, এ মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পেঁয়াজ চাষাবাদের কাজে যুক্ত হতে ফরিদপুর অঞ্চলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আসছে।
তারা জানান, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি পেঁয়াজের বীজ ঘরে তোলা পর্যন্ত। ভালো দানা উৎপাদন করতে পারলে মালিকের যেমন লাভ হয়, তেমনি আমাদেরও আর্থিক পরিবর্তন আসে জীবনমানের।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে: ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক
এদিকে মাঠের পর মাঠ বীজের সাদা ফুলের সৌর্ন্দয্য দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছে মাঠগুলোতে। নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে তুলছেন সেলফি। আবার দলবেধে এসে করছেন সুটিং।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের চাহিদার অর্ধেক বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়। এবছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের বীজেরে চাহিদা সর্বত্র রয়েছে। প্রকার ভেদে এর বাজার মূল্য দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত ওঠে। এই কৃষি পণ্যটির বাজারমূল্য অধিক হওয়ায় ‘কালো সোনা’ বলে অভিহিত করে।
সম্প্রতি কয়েক বছর হলো পেঁয়াজ বীজ খেতে মৌমাছির উপস্থিতি কমে গেছে। এ কারণে পরাগায়নের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা চাষিদের ফুলের উপর হাত দিয়ে পরাগায়ন কিভাবে করতে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এবছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। দিন দিন পেয়াঁজ বীজ আবাদের চাষির সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি জানান, এবারের আবহাওয়া ভালো থাকায় ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬৪ টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে পেঁয়াজের চাষ বেড়ে দ্বিগুণ
২৯৬ দিন আগে
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ, কেজি ৫০ টাকা
বাগেরহাটে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ। ফলের দোকানে পসরা সাজিয়ে কিংবা ভ্যান করে বিক্রি হচ্ছে রসালো এই ফল। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।
বিভিন্ন জাত ও নানা সাইজের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বাগেরহাট বাজারে। ক্রেতাদের কাছে যেকোনো ফলের চেয়ে তরমুজের চাহিদা বেশি। ইফতারিতে তরমুজের প্রাধান্য বেশি। এছাড়া এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে আলদাভাবে তরমুজ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সাইজের তরমুজ পথচারীদের নজর কাড়ে। পথচারী থেকে শুরু করে করে অনেকে যানবাহন থামিয়ে তরমুজ ক্রয় করছেন। তিন কেজি থেকে শুরু করে আট কেজি ওজনের তরমুজ দেখা গেছে সেখানে।
আরও পড়ুন: চাষ না হলেও দক্ষিণের তরমুজে ভরপুর চাঁদপুর
পথচারী হালিম শেখ বলেন, ‘রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা এত তরমুজ এই মৌসুমে প্রথম দেখা গেলো। ৫০ টাকা কেজি দরে ৬ কেজি ওজনের একটি ক্রয় করে সে।
মিল্টন, আলম, তৌহিদ, অমলসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতারা জানান, তরমুজ তাদের অনেক পছন্দ। একারণে দাম যাই হোক; তারা তরমুজ ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, ৫০ টাকা তরমুজের কেজি তাদের কাছে বেশি হয়ে গেছে। মৌসুমের প্রথম ফল ও তরমুজ তাদের সবার পছন্দ থাকায় প্রয়োজনের তুলনায় ছোট সাইজের তরমুজ ক্রয় করেছেন।
হাবিব হোসেন পটুয়াখালী চাষিদের জমি থেকে প্রায় দেড় হাজার তরমুজ ক্রয় করে ট্রাকবোঝাই করে বাগেরহাট মিঠাপুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসা করছি। মিঠাপুকুর পাড়ে বিক্রি জন্য স্তূপ করে তরমুজ রাখা হয়েছে। ট্রাক থেকে তরমুজ নামানোর পর থেকে ক্রেতারা আসছেন তরমুজ ক্রয় করতে। খুচরা প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এভাবে তরমুজ বিক্রি করতে পারলে বেশ টাকা লাভ হবে।’
এছাড়া এই মৌসুমে তরমুজ বাজারে প্রথম উঠছে। এ কারণে দাম একটু বেশি বলেও জানান তিনি। কয়েকদিন পরে তরমুজের দাম কমে আসবে বলেও জানান হাবিব হোসেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, ‘সারাবছরজুড়ে কমবেশি তরমুজ পাওয়া যায়। তরমুজের প্রধান মৌসুম মার্চ মাস।’
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা জাতের হাইব্রিড তরমুজ চাষ হচ্ছে। এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো। তরমুজ হাট-বাজারে নতুন আসায় এর দামও বেশি।’
উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার আরও বলেন, ‘গ্রীষ্ম ও শীতকালে বেশি তরমুজ চাষ হয়। গ্রীষ্মকালের তরমুজের চারা নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে রোপণ করা হয়।’ এছাড়া ড্রাগন কিং, পাকিজা, বিগফ্যামিলি, এশিয়ান ও বাংললিংকসহ বিভিন্ন নামে হাইব্রিড তরমুজ চাষ করা হয়েছে বলে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।
২৯৭ দিন আগে
‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাং-জুস-গ্লুকোজে সয়লাব রমজানের বাজার
জিনজিরা; ঢাকার উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জের এই স্থানটির খ্যাতি এক বিশেষ কারণে—নকল পণ্য উৎপাদনে এই জায়গার জুড়ি মেলা ভার। মেশিনারি, গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে প্রসাধনী, নকল খাদ্যসামগ্রী—কী উৎপাদন হয় না সেখানে! স্থানটির এতই খ্যাতি যে, দেশে নকল কোনো পণ্য বোঝাতে ‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাগ লাগিয়ে দেন অনেকে।
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পবিত্রে রমজান মাসে জিনজিরায় তৈরি নকল ট্যাং, জুস ও গ্লুকোজে ইতোমধ্যে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সেসব সরবরাহ করছে। মফস্বল পর্যায়ের গ্রাহকরা এসব নকল খাদ্যসামগ্রী কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
চিকিৎসকদের মতে, এসব ভেজাল পণ্য পাকস্থলি ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জেনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, মান্দাইল, আমিরাবাগ, বোরহানিবাগ, শুভঢ্যা, আগানগর, কালীগঞ্জ ও কাজিরগাঁও এলাকায় রমজান মাসে সৃষ্ট চাহিদার কথা মাথায় রেখে নকল ও ভেজাল অরেঞ্জ ও ম্যাংগো ড্রিঙ্কস পাউডার (ট্যাং) এবং বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির মোড়ক নকল করে কিটক্যাট, মিমিসহ বিভিন্ন ধরনের চকলেট তৈরি ও বিক্রি চলছে দেদারসে।
বিগত সময়ে র্যাবের পক্ষ থেকে বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় এই সমস্ত ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কারখানা প্রায় একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর র্যাবের পক্ষ থেকে ভেজালবিরোধী তৎপরতা একেবারেই নেই। এই সুযোগে আসাধু ব্যবসায়ীরা আবার জেগে উঠেছে নতুন রূপে।
সরজমিনে উপজেলার গদাবাগ, মুক্তির বাগ, আমিরাবাগ, নেকরোজ বাগ, খোলামোড়া, জিয়ানগর ও তেঘরিয়া, শুভঢ্যা, আগানগর কালীগঞ্জ, কাজিরগাঁও ও আব্দুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও নকল শিশুখাদ্য তৈরি করে অতি চতুরতার সঙ্গে সেসব বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে।
মুক্তিরবাগ এলাকায় একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক হাত দিয়েই বোতলে ভরছেন ভেজাল জুস। এই কাজে হাতে গ্লাভস পরার প্রয়োজনীয়তাও মনে আসেনি তাদের। মাথায় চুলের জাল (হেয়ারনেট) না পরেই অরেঞ্জ ড্রিংকস বোতলজাত করছেন তারা। আবার অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার মোড়কজাত করার সময় বাতাসে তা যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায়, সেজন্য ফ্যান বন্ধ করে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে করে তারা ঘেমে একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছেন।।
সেখানে কথা হয় কারখানাটির ম্যানেজার শাকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের বিএসটিআই ও পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। তবে দেখতে চাইলে সেগুলো দেখাতে পারেননি তিনি।
ল্যাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটে ল্যাব না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাছে রেসিপি আছে। সেই অনুযায়ী আমরা ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই। পরে আমাদের বিক্রয়-প্রতিনিধি পণ্যগুলো বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করেন।’
এ সমস্ত ভেজাল ও কৃত্রিম রং মিশ্রিত অরেঞ্জ ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই ভালো। এখানে সবকিছুই হজম হয়ে যায়। কয়েক বছর যাবত তো এই প্রোডাক্ট মার্কেটে বিক্রি করছি; কোথাও থেকে কখনও কোনো দুঃসংবাদ এখনও পাইনি।’
তবে এসব ভেজাল খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোজিনা আমিন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরী
তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম রং মিশ্রিত ভেজাল ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকস সবচাইতে বেশি লিভার ও কিডনিকে আক্রান্ত করে এবং শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।’
এই চিকিৎসকের মতে, ‘ছোট শিশুদের জন্য এগুলো আরও বেশি ভয়াবহ, কারণ এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।’
২৯৭ দিন আগে
সুনামগঞ্জের ৩ উপজেলার ১০ জলমহালের মাছ লুট, নির্বিকার প্রশাসন
প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ উপজেলায় ঘোষণা দিয়ে ইজারাকৃত বৈধ জলমহালের মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লুটে নেওয়া হয়েছে তিন উপজেলার অন্তত ১০টি জলমহালের মাছ। মাইকিং করে জলমহালের আশপাশের কয়েক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা জলমহালগুলোর কোটি কোটি টাকার মাছ লুটে নেয়।
সর্বশেষ বুধবার(৫ মার্চ) দিরাই উপজেলার মেধা বিল ও বেতরগাং জলমহাল এবং জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিল লুট করেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে লুট চালালেও হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে যেন অসহায় প্রশাসন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় দুদলের সংঘর্ষে আহত ২০, ভাঙচুর ও লুটপাট
এদিকে, জলমহালের কোটি কোটি টাকার মাছ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ইজারাদাররা। সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, বুধবার দিরাই উপজেলার মেধা ও বেতর বিলে জাল, পলো, কুচাসহ বিভিন্ন মাছ ধরার যন্ত্র হাতে হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়। মিছিল দিয়ে তারা পানিতে নেমে লুটে নেয় মাছরাঙ্গা মৎস্যজীবী সমিতির নামের ইজারাকৃত বিলের কোটি টাকার মাছ। একই কায়দায় জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিলেও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে মাছ লুটে নেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন ও বিলের ইজারাদার জানান, আগের রাতেই মাইক ও মুঠোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিল লুটের খবর। ভোর থেকে বিলের পাড়ের জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মাছ শিকারের সরঞ্জামের পাশাপাশি সঙ্গে দেশীয় অস্ত্রও নিয়ে আসেন উচ্ছৃঙ্খল জনতা। দিরাই-শাল্লা উপজেলার শ্যামারচর, ললোয়াারচর, মাইতি, চন্দ্রপুর, ইসলামপুর, সন্তোষপুর, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁও, চিকাডুপি, বল্লবপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরিফপুর, কাশীপুরসহ আশপাশের গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন দিরাই-শাল্লার কামান ও লাইরা দীঘা, সতোয়া নদী, মেদা বিল ও বেতরগাং জলমহালের মাছ লুটে জড়িত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিল লুটের খবর পেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে লুট না করার জন্য আকুতি জানান ইজাোদার। তাতেও কাজ না হলে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ভোরে বিলে উপস্থিত হয়েও রক্ষা করতে পারেননি নিজেদের জলমহাল। হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে অসহায় ছিল পুলিশ ও ইজারাদার। লুটে নেওয়া হয় কোটি টাকার মাছ। জলমহাল লুটের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
আরও পড়ুন: লুটপাটে কাজে আসছে না ‘মুহুরী সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’
মাছরাঙ্গা সমবায় সমিতির সভাপতি রুশন মিয়া বলেন, মাইকে ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ এসে আমাদের সমিতির জলমহাল লুটে নিয়ে গেছে। আমরা বাঁধা দিয়েও পারিনি। আমাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবো এটা আমাদের জানা নেই।
এদিকে, গত রবিবার সকালে দিরাই উপজেলার মেঘনা জলমহালের একটি বিল ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ লুটে নেয় হাজারো মানুষ। এরপর সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইরা-দীঘা ও চনপইট্টা বিলের পাইলের (অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মাছ বড় করা) প্রায় কোটি টাকার মাছ লুটে নেয় বিল এলাকার ৮-১০ হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কাছের কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির সতোয়া নদীর মাছ লুট করে দিরাই ও শাল্লার ১০-১৫টি গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল মানুষ।
কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। প্রতি বছর ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দেই। তিন বছর অন্তর অন্তর মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও ১০-১৫ হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ দুই দিনে আমাদের জলমহালের কোটি টাকার বেশি মাছ লুটে নিয়ে গেছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েন বলে জানান তিনি।
জলমহাল লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন বলেন, দিরাই-শাল্লার জলমহাল লুটের বিষয়টি আমরা অবগত। ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জে জলমহাল লুট করার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ জড়িত। তাজাড়া পলো, টেঁটা, কুচ দিয়ে সংঘব্ধভাবে মাছ ধরতে আসে। এসব জলমহাল সরকারি ইজারার আওতায়। এই জলমহালগুলো লুটের কারণে আগামীতে ইজারা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। এর ফলে দেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। এতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিঘ্নিত হবে। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আমি অনুরোধ করব, তারা যেনো এসব কাজ থেকে বিরত থাকেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদাররা যদি আইনি পদক্ষেপ নিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে অনুরোধ করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন: বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার লুট’
২৯৭ দিন আগে
দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরী
নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে নরসিংদীর বিসিক শিল্পনগরীতে গড়ে উঠছে না শিল্পপ্রতিষ্ঠান। জেলার পুরাতন বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ করা দেড় শতাধিক প্লট কার্যত হেলায় ফেলে রাখা হয়েছে।
অনুকূল পরিবেশ নেই—এমন অজুহাতে সেখানে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এমন ভঙ্গুরাবস্থার কারণ হিসেবে বিগত সরকারের লুটপাট আর স্বজনপ্রীতিকে দায়ী করছেন তাদের অনেকে।
জানা যায়, শিল্প সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে নরসিংদীর শিবপুরে ১৫ দশমিক ৩৯ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পর নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্পনগরীটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভিসা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ ইতালি দূতাবাসের
সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে উপজেলার সৈয়দনগরে ৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে শিল্পনগরীটির সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সরকার। ২০২২ সালের জুন মাসে এই কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। তবে এখন পর্যন্ত বর্ধিত অংশে গড়ে উঠেনি তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে গিয়ে শিল্পনগরীতে কেবল দুটি শেড আর একটি ব্যক্তিগত বসতবাড়ি চোখে পড়ে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও প্রকৃত শিল্প-উদ্যোক্তা কিংবা ব্যবসায়ীদের প্লট দেওয়া হয়নি। বিগত সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে মদদপুষ্টদের প্লট বরাদ্দ দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। ফলে নামেমাত্র প্লটগুলোর দখল নিলেও শিল্পনগরীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে না।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, শিল্পের প্রসারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও যথাযথভাবে প্লট বরাদ্দ না দেওয়া ও সরকারের ভুল নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্প। পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে প্লট হস্তান্তরসহ আরও বিশাল অঞ্চল নিয়ে বিসিক সম্প্রসারণের দাবি করেছেন তারা।
বিসিকের এই প্রকল্পের সম্প্রসারিত অঞ্চলের দেড় শতাধিক প্লটের বরাদ্ধ কারা পেলেন?—বিসিক কর্মকর্তার কাছ থেকে এর উত্তর মেলেনি ১৫ দিনেও। কোনো দিয়েও সহায়তা করেননি তিনি। তার দাবি, এ-সংক্রান্ত তালিকাও নাকি মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হবে!
এদিকে, শিপন টেক্সটাইলের স্বত্ত্বাধিকারী সুবল সাহা জানান, নরসিংদী বিসিকে প্লট বরাদ্দ পেলেও নিরাপত্তার কারণে কাজ শুরু করতে পারছেন না তিনি।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি মামলার আসামিকে দুদকে পদায়ন গ্রহণযোগ্য নয়: টিআইবি
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে প্লট পেয়েও যারা এখনও সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন না, তাদের নোটিশ করা হয়েছে। উপযুক্ত জবাব পাওয়া না গেলে যথাযথ আইনের মাধ্যমে প্লট বাতিলসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিসিক শিল্পনগরী চালু হলে মালিক—শ্রমিকরা লাভবান হবেন। পুরাতন বিসিকে ৯৫টি এবং সম্প্রসারিত অঞ্চলে ১৬৮টিসহ মোট ২৬৩টি প্লট যথাযথ ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগলে নরসিংদীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে লাখো মানুষের।
তাই শিগগির এই বিষয়টি আমলে নিয়ে এই শিল্পনগরীর কার্যক্রম সচল করতে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিক—এটাই স্থানীয় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা।
২৯৮ দিন আগে
২০৫০ সাল নাগাদ মুটিয়ে যেতে পারেন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ
আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক, এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী স্থূল বা মুটিয়ে যেতে পারেন বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যা অকাল মৃত্যু, রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়াসহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না-হলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ৩১ শতাংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী মুটিয়ে যাওয়ার কারণে নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবেন।-খবর গার্ডিয়ানের
গত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী স্থূলতাজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।
বর্তমানে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ২১১ কোটি এবং ৫-২৪ বছর বয়সী ৪৯ কোটি ৩০ লাখ শিশু ও তরুণ-তরুণী ওজন বেশি বা স্থূলতায় ভুগছেন। এই সংখ্যা ১৯৯০ সালে ছিল যথাক্রমে ৭৩ কোটি এক লাখ ও ১৯ কোটি ৮০ লাখ।
আরও পড়ুন: ক্রুড অয়েলে পারদের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে ঢাবির গবেষক দল
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এই গবেষণার প্রধান লেখক এমানুয়েলা গাকিদু বলেন, বিশ্বে স্থূলতা যেভাবে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, তা অবশ্যই অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি একে সমাজের ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেন।
গবেষণামতে কেবল উত্তর আফ্রিকা,মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকাতেই ২০৫০ সাল নাগাদ এক তৃতীরয়াংশ শিশু ও তরুণ-তরুণী (প্রায় ১৩০ বিলিয়ন) স্থূলতায় ভুগবেন। যা দেশগুলোর সমাজ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে শিশুরা আগের প্রজন্মের তুলনায় দ্রুত হারে ওজন বৃদ্ধি করছে এবং স্থূলতা অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে বলে জানান গবেষকরা। তারা বলেন, এতে তরুণ বয়সেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে ১৯৬০-এর দশকে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ ২৫ বছর বয়সে স্থূলতায় আক্রান্ত ছিলেন, সেখানে ১৯৯০-এর দশকে জন্মানোদের মধ্যে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে জন্মানো পুরুষদের মধ্যে এটি ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩ মার্চ) ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দরিদ্র দেশগুলোকে স্থূলতার প্রভাব নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫ শতাধিক গবেষকের অংশগ্রহণে বাকৃবিতে বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গবেষকরা বলেন, উচ্চ বিএমআইয়ের (স্থূলতা) কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অধিক সংখ্যক অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই দেশগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে মত দেন তারা।
ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি ফোরামের প্রধান নির্বাহী জোহানা রালস্টন বলেন, ‘স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সমাজের ওপর স্থূলতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।’ সীমিত সম্পদের দেশগুলোর জন্য এই প্রভাব মোকাবিলা করা আরও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
২৯৯ দিন আগে
স্ট্রবেরি চাষে ভাগ্য খুলেছেন ‘চাকরির বাজারে ব্যর্থ’ জাহিদ
ছয় বছর আগে স্নাতক পাস করেন লালমনিরহাটের জাহিদ হোসেন বসুনিয়া। তারপর চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছোটাছুটি করেন কয়েক বছর। তবে দীর্ঘ চেষ্টাতেও কোনো কিনারা করতে না পেরে নিজেই কিছু শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন এই যুবক। এরপর শুরু করেন স্ট্রবেরি চাষ, আর তাতেই মেলে সাফল্যের দেখা। অল্পদিনের মধ্যেই বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন জাহিদ বসুনিয়া।
লালমনিরহাট জেলার মহেন্দ্র নগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মনোরম গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ। ইতিহাসে স্নাতক পাস করে চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ২০১৯ সালে পুরোপুরিভাবে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষ শুরু করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। প্রথম মৌসুমেই তিন বিঘা জমিতে ১৮ হাজার স্ট্রবেরির চারা রোপন করেন তিনি।
জাহিদ জানান, ২০২৩ সালে বগুড়া জেলা সদর থেকে টিস্যু কালচারের স্ট্রবেরি চারা নিয়ে এসে ডিসেম্বর মাসে জমিতে সেগুলো রোপণ করেন তিনি। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার জমিতে প্রায় ১০ হাজার গাছ রয়েছে। প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম দিকে এর ফল সংগ্রহ শুরু হয়। এরইমধ্যে এই গাছগুলো থেকে গত দুদিনে ৭০ কেজির মতো স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি পাইকারিতে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
জাহিদের ভাষ্যে, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমানিরহাট জেলা সদর এলাকার লোকজন তার স্ট্রবেরি কিনে নিচ্ছেন। সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে এগুলো চাষ করেছেন তিনি। তাই তার স্ট্রবেরি নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে আগ্রহও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ‘আগামী এক মাস গাছগুলো থেকে নিয়মিত ফল পাওয়া যাবে। এরপর যদি গাছের বাড়তি যত্ন এবং উপরে শেড তৈরি করে দেওয়া হয়, তাহলে আরও ২ মাস পর্যন্ত ফল তোলা সম্ভব।’
আরও পড়ুন: খাদ্য গুদামে আমন ধান দিচ্ছেন না বাগেরহাটের চাষিরা
বিক্রয় পদ্ধতি
স্ট্রবেরি চাষের পর তা বিক্রির লক্ষ্যে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন বলে জানান জাহিদ।
শুরুতে তিনি খেতের স্বাস্থ্যবান স্ট্রবেরির কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। অনলাইন প্লাটফর্মে এভাবে প্রচারের ফলে স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন বলে জানান তিনি। বলেন, ‘ফেসবুকে আমার জমির স্ট্রবেরিগুলোর সুন্দর সুন্দর ছবি দেখেই অনেকে এগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ যোগাযোগও করেন। আর এভাবেই ফল তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থা হয়ে যায়।’
তবে বর্তমান অবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না এই উদ্যোক্তা। তার আশা লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে স্ট্রবেরি চাষ করতে পারবেন তিনি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহ আলম মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাহিদ বসুনিয়া একজন সফল কৃষক। চাকরি না পেয়ে নিজে স্বাবলম্বী হতে তার সামান্য জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। এতেই সাফল্য পেয়ে যান তিনি। তার এই সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক এই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে আশা জেগেছে বাগেরহাটের চাষিদের, টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
শুধু জাহিদ নয়, জেলার অন্য স্ট্রবেরি চাষীদেরও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে এই ফল চাষে সফলতা পেতে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।
২৯৯ দিন আগে
গোয়েন্দা নজরদারিতে সাবেক সরকারের ডিসি-এসপি-পদস্থরা
গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের তিনটি আমলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বর্তমানে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা কর্মকর্তারাও নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না, কারণ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আতঙ্ক তাদের তাড়া করছে।
বিশেষ করে, ওই সময়ে ডিসি (জেলা প্রশাসক), এসপি (পুলিশ সুপার) এবং সচিব পদে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা এখন গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল আসছে। যার ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা গত ১৭ বছর পদোন্নতি না পেয়েও বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে প্রশাসনে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে নতুন করে অস্থিরতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রশাসনে আতঙ্ক ও বদলির হিড়িক
বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন, সাবেক ডিসি, এসপি এবং সচিবদের ওএসডি করা ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কারণে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষত, যারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মন্ত্রীদের পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) এবং বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলক বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাকু গ্রেপ্তার
যেসব কর্মকর্তারা নজরদারিতে
গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার ক্ষেত্রে বিগত আওয়ামী লীগের সময় অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিরা রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এরই মধ্যে—৬৫ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর পাঠানো হয়েছে অথবা ওএসডি করা হয়েছে। তথ্যমতে, চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ২২ জন সাবেক ডিসিকে (বর্তমানে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আর ৩৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে আরও ১২ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছিল। কয়েকজন সচিবকেও ওএসডি ও অবসরে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত
সরকারি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন—তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারাও নজরদারির বাইরে থাকছেন না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের উপদেষ্টা কমিটি আরও অনেক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে। যারা গত ১৭ বছরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে কাজ করেছেন তারা এই তালিকাভুক্ত বলে জানা যায়। এমনকি গত তিন মেয়াদে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন—এমন অনেককে এরই মধ্যে ওএসডি করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
সরকারের এমন পদক্ষেপের পরও এখনো প্রশাসনে কাঙ্ক্ষিত গতিশীলতা ফেরেনি। সমন্বয়হীনতার কারণে সচিব, পিএসসির সদস্য, ডিসি পদে নিয়োগ দিয়েও তা বাতিল করতে হচ্ছে। বদলি ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া ঠিকমতো পরিচালনা করতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা
বিএনপি আমলে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ (ব্যাকডেটেড) পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, গ্রেড-১ পদে ৪১ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
ডিসি পদে বড় পরিবর্তন আসছে
সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আসতে চলেছে। বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুনদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে।
প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন
প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ খালি— তা প্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে। আগের সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি ও গুরুত্বহীন দপ্তরে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
সরকার যা বলছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে যেসব ডিসি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন—তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি। ওখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমাদের যে ব্যবস্থা-যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম, তারা ওএসডি হবেন। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি, তারা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্য থেকে যেসব ডিসি ওএসডি হয়েছেন এবং বাধ্যতামুলক অবসরে গিয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে—তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পরেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ছাড় নেই। দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) মামলা দেওয়া হবে।’
সচিব জানান, সরকার কারও বিরুদ্ধেই অবিচার এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করবে না। আওয়ামী লীগের সময়ে নির্বাচনে দায়িত্বে যেসকল কর্মকর্তা ছিলেন— তারা দোষী প্রমাণিত হলে উপদেষ্টা পরিষদের কমিটিতে যাওয়ার পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। অপরাধ অনুযায়ী ওএসডি এবং বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হবে। তবে সরকার এ ব্যাপারে কারো সঙ্গে অবিচার করবে না।
প্রশাসনে এমন অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বদলির পরবর্তী ধাপে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৩০০ দিন আগে