বিশেষ-সংবাদ
মানিকগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে বিকল ডায়ালাইসিস যন্ত্র, ভোগান্তিতে কিডনি রোগীরা
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পাঁচটি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের চারটি গত পাঁচ মাস ধরে বিকল থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে বাড়তি টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিটে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়। প্রথমদিকে লোকবল সংকটের কারণে ডায়ালাইসিস দেওয়া যেত না। এভাবে বছরখানেক পার হয়ে যায়। ২০২২ সালে ডায়ালাইসিসের লোকবল বাড়ানো হলে ৫টি যন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু হয়।
২০২৩ সালের দিকে দু-একটি যন্ত্র নষ্ট হতে শুরু করে। বাকী যন্ত্র গুলো দিয়ে কোনোমতে কাজ চালানো হয়। এরই মধ্যে টানা এক বছর নষ্ট ছিল দুইটি যন্ত্র। পরে সেগুলোকে মেরামত করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ মাসে একে একে চারটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য তিনি ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি নিমিউয়ের একটি কারিগরি দলের সদস্যরা যন্ত্রগুলো দেখে গেছেন।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
গত ২ ফেব্রুয়ারি অপর এক পত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালককে ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য জানায়। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো সরবরাহ করা হয়। ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান একাধিকবার মেরামত করেছিল। কিন্তু মেরামতের কিছুদিন পর আবার নষ্ট হয়ে যায়। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি নিমিউ থেকে জরিপ প্রতিবেদন (সার্ভে রিপোর্ট) দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ওয়ারেন্টির মেয়াদকাল নেই, সার্ভিস ও অপারেশন ম্যানুয়াল নেই এবং চুক্তিনামা না থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোনোটির পাওয়ার সাপ্লাইয়ে আবার কোনোটির মাদারবোর্ড সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কোনো কোনো রোগীকে এক বা দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। বর্তমানে একটি ডায়ালাইসিস যন্ত্রের মাধ্যমে সপ্তাহে চারজন রোগীকে ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি প্রায় ৪০ জন রোগী সিরিয়ালে রয়েছেন। তবে যন্ত্রগুলো নষ্ট হওয়ায় তাদের ডায়ালাইসিস করানো যাচ্ছে না। প্রত্যেক রোগী প্রতিবার ৪০০ টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারেন। বাইরে থেকে ডায়ালাইসিস করতে রোগীকে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা খরচ হয়।
জয়রা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন নামে এক কিডনি রোগী জানান, ‘ প্রতি সপ্তাহে আমাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ৪০০ টাকা খরচে হাসপাতাল থেকে করছিলাম। এখন যন্ত্র নষ্ট থাকায় প্রাইভেট একটি হাসপাতালে প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
আরও বেশ কয়েকজন কিডনি রোগীর সঙ্গে কথা হলে তারা প্রত্যেকেই বলেন, গরীব অসহায় রোগীরা বাড়তি টাকা খরচে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: চরম সংকটে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা
মানিকগঞ্জ জেলা ড্যাবের সভাপতি ও জেনারেল হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, কিডনি রোগীদের জরুরি চিকিৎসার মাধ্যমই হচ্ছে কিডনি ডায়ালাইসিস করা। এ হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ চারটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র বিকল হওয়ায় কিডনি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। যন্ত্রগুলো সচল না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস যন্ত্রগুলো মেরামত বা নতুনভাবে স্থাপনে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
৩০০ দিন আগে
জাবিতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা, বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকি: কী ভাবছে প্রশাসন?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই আবাসিক হলগুলোতে চরম মাত্রায় বাড়তে শুরু করে মশার উৎপাত। দরজা-জানালা বন্ধ করলেও নিস্তার নেই। মশার কয়েল বা অ্যারোসল যেন কোনো কাজেই আসছে না। দিনের বেলাতেও টানাতে হয় মশারি। তবুও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
এর ফলে ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের নির্ঝঞ্জাট ঘুমে; বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় সম্ভাবনা। অন্যদিকে ক্লাস, পরীক্ষায় অংশ নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য।
বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান বিদ্যমান থাকলেও মশার উপদ্রবে জাবি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দিনের বেলায় মশার উৎপাত না থাকলেও রাতের বেলা শুধু আবাসিক হলগুলোতেই নয় বরং পুরো ক্যাম্পাসেই ছড়িয়ে পড়ে মশা। ফলে বেড়েছে মশাবাহিত রোগীর সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসিক হলগুলোর আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের জলাশয়, পয়ঃনিষ্কাশননালী ও ময়লা-আবর্জনা গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ বাকৃবি গবেষকের
মশা নিধনে বিভিন্ন আবাসিক হলে একাধিকবার স্প্রে করা হলেও মশা কমার পরিবর্তে মশার আক্রমণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের অভিযোগ মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ গুলো যথেষ্ট নয়। হলগুলোর আশেপাশের জলাশয়গুলো কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা জমে মশা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। মশার এসব অভয়ারণ্য গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সারাবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনা বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
সরজমিন দেখা যায়, মশা নিয়ন্ত্রণে ঔষুধ নিয়ম মাফিক ছিটানো হয় না। ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গায় দূর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে জমে থাকে অপরিষ্কার পানি। লেকগলোর আশপাশ ভরে আছে ঝোঁপঝাড়ে।
এছাড়া যত্রতত্র জমে আছে ময়লা-আর্বজনার স্তূপ। ঝোঁপঝাড় পরিষ্কারের কোন বালাই নেই। ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতায়ও নেই কোন অভিযান। বাতাস উঠলে ধুলোবালিতে ছেয়ে যায় ক্যাম্পাস। নর্দমায় জমে থাকা অপরিষ্কার পানিতে মশা-মাছি ডিম পেড়ে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে নেই কার্যকরী কোন পদক্ষেপ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কী বলছেন?
কামালউদ্দিন হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেদোয়ান মিয়া বলেন, ‘আগে এতো মশা ছিলো না। এখন মশার জ্বালায় রুমে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। রুমে কয়েল জ্বালালেও মশা কমছে না। পড়াশোনা তো হচ্ছেই না। কয়েকদিন পর পর জ্বরে ভুগতে হয়।‘
প্রীতিলতা হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমা রোজ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরে সবকিছুই সুন্দর, শুধু মশারা অসুন্দর। দিনের বেলা কম থাকে কিন্তু সন্ধ্যা হলেই মশার উৎপাত শুরু হয়ে যায়।’
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখন আমার টিউটোরিয়াল পরীক্ষা চলছে। এতো মশা যে রুমে পড়াই যাচ্ছে না। মশারীর ভিতরে থেকে পড়ছি। না জানি কবে অসুস্থ হয়ে যাই।’
আরও পড়ুন: মশা নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে: ডিএনসিসির সিইও
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়তে আসা অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিমেল হাসান বলেন, ‘সামনে আমার পরীক্ষা। মশার উপদ্রবে হলে পড়া হয়না। তাই লাইব্রেরিতে আসছি, এখানেও মশা। তাই কয়েল নিয়ে আসছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ কী?
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী বলেন, ‘আমরা হলে সপ্তাহে দুইবার করে স্প্রে করতেছি। তবুও মশা কমছে না।’
এছাড়াও হলের দায়িত্বরত কিছু কর্মচারীদের নিয়ে আশেপাশের ঝোঁপঝাড় পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে মশা নিধনে এরবেশি আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান এই অধ্যাপক।
মশা নিধনে প্রত্যেকটি হল এবং অফিস আলাদাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরাও আমাদের হলে নিয়মিত স্প্রে করছি। এছাড়া তো আপাতত কিছু করার নেই। হলের আশেপাশে ঝোঁপঝাড় আর নর্দমা থাকার কারণে মশার উপদ্রব টা একটু বেড়ে গিয়েছে।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের সদ্য সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘আমি এখন আর হল প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে নেই, তবে আমি মনে করি মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।’
এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সেজন্য নিয়মিত মশা নিধনের জন্য স্প্রে করতে,ঝোঁপঝাড় ও নর্দমা পরিষ্কার রাখতে পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলেন, ‘আমার ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা চলছে। হলে মশার উপদ্রবে থাকা যায়না। পড়াও হচ্ছে না। দুইদিন থেকে আমার জ্বর। তাই আজকে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসছি। আমার মতো আরও অনেকেই এসেছে।’
আরও পড়ুন: মশা নিধনে ৫৩ বছরে বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হয়নি: উপদেষ্টা
৩০০ দিন আগে
ওভালকাণ্ড: পুতিনের পৌষমাস, জেলেনস্কির সর্বনাশ!
কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ—বাংলা ভাষার অতি প্রচলিত এই প্রবাদটির অর্থ এই ভাষাভাষী মোটামুটি সবাই জানে, যার অর্থ— এক পক্ষ সমস্যায় পড়লে অন্য পক্ষের সুবিধা হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির অপদস্ত হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের স্বার্থ ব্যাখ্যায় এই প্রবাদটিই হয়ে উঠেছে অতি প্রাসঙ্গিক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। ওই ঘটনার পর রুশ মিডিয়াগুলোকে নানাভাবে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
অবশ্য দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেন নিয়ে নিজের যে অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প, তাতে এরকম কিছু যে ঘটতে চলেছে—তা অনেকটাই ছিল অনুমেয়।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের এই বিবাদ রাশিয়ার জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। একদিকে, এতদিন ধরে যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনে ও সামরিক সহায়তায় ইউক্রেন দেশটির আক্রমণ প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা করে আসছিল, ইউক্রেনের মাথা ওপর থেকে সহায়তার সেই হাত সরে গিয়েছে। অন্যদিকে, খনিজ চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বাগিয়ে নিতে কিয়েভের যে আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে হলেও জ্বলছিল, তাও নিভে গেছে দপ করে।
আরও পড়ুন: মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন, চলছে প্রস্তুতি
তাই রাশিয়া এবং দেশটির গণমাধ্যগুলো ট্রাম্পের প্রশংসায় হয়ে উঠেছে পঞ্চমুখ, ট্রাম্পের মাধ্যমে তারাই যেন এক হাত নিয়েছে জেলেনস্কিকে!
ট্রাম্প–জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই উন্মাদের (জেলেনস্কি) মুখের ওপর একদম সত্যি কথা বলেছেন যে, কিয়েভের শাসনকাঠামো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে খেলছে।’
ট্রাম্পের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) ঠিক কাজই করেছেন। তবে এটিই যথেষ্ট নয়, কিয়েভকে সামরিক সহায়তা দেওয়াও বন্ধ করতে হবে।’
ইউক্রেনের মিত্র দেশ পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করায় বেশ খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল মস্কো।
ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প ইউক্রেনে ইউরোপের শান্তিরক্ষীদের সহায়তা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন; এতে চিন্তা বাড়ছিল মস্কোতে। তবে শুক্রবারের ওভাল অফিসে যে কাণ্ড হলো, তাতে নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ক্রেমলিন।
ওভাল অফিসের ঘটনার পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘ট্রাম্প ও ভ্যান্স যেভাবে এই জঘন্য ব্যক্তিকে (জেলেনস্কি) আঘাত করা থেকে নিজেদের বিরত রাখলেন, সেটি সংযম প্রদর্শনের এক অলৌকিক ঘটনা।’
এ ঘটনায় ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে কিছু না বললেও রুশ প্রেসিডেন্ট যে খুশি হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছে, ‘নিঃসন্দেহে প্রেসিডেন্ট এই তামাশা উপভোগ করেছেন। তিনি এখন ইউক্রেন থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন।’
এছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিন ফোনালাপ করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওই সূত্র। ফোনালাপে (ইউক্রেনের ক্ষমতায়) জেলেনস্কির বিকল্প নিয়ে কথা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: শূন্যহাতে ফিরলেও প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
সম্প্রতি জেলেনস্কির ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকার বৈধতা নিয়ে একই সুরে কথা বলতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে।
মূলত জেলেনস্কিকে সরিয়ে রুশ-সমর্থিত কাউকে ইউক্রেনের মসনদে বসানোর বাসনা পুতিনের নতুন নয়। বেশ আগে থেকেই তিনি এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে এসেছেন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রই এই ধারণার অন্যতম প্রধান বিরোধী হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও আশ্চর্যজনকভাবে এবার পুতিনের সুরে সুর মেলাতে দেখা গেছে ট্রাম্পকে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে শিগগিরই আলোচনার টেবিলে বসতে জেলেনস্কিকে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।
সে সময় জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তি নিশ্চিত করতে হয় তাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, অথবা তার দেশকে হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির বৈধতা নিয়ে ট্রাম্প আগেই যেহেতু প্রশ্ন তুলেছেন, তাই শুক্রবারের ঘটনা পুতিনকে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে অব্যশই সুবিধা দেবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য অ্যালেক্সি পুশকভ এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, হোয়াইট হাউসও এখন জেলেনস্কিকে সরিয়ে ইউক্রেনের ক্ষমতায় নতুন কাউকে বসানো নিয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করবে বলে তার বিশ্বাস।
তবে ট্রাম্প-জেলেনস্কি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়কেই চূড়ান্ত বিজয় হিসেবে না দেখে রাশিয়াকে কৌশলের সঙ্গে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ফিওদর লুকানভ। ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত স্বভাবের কারণে তিনি এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভর্ৎসনার শিকার হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার হাত সরিয়ে নিলেও ইউক্রেনকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার।
এর আগে, জেলেনস্কির প্রশংসা করে এক এক্স পোস্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন লিখেছিলেন, ‘আপনার এই ব্যক্তিত্ব ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মানিত করেছে।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যে রাজকীয় অভ্যর্থনা ও পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন জেলেনস্কি
জেলেনস্কিকে সাহসী ও নির্ভীক থাকতে অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি একা নন, আমরা রয়েছি আপনার পাশে।’
তবে শুধু আশ্বাস নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হওয়ায় এখন ইউরোপ কিয়েভকে ঠিক কতটা সহায়তা দেবে কিংবা ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে কি না—এর ওপর নির্ভর করছে ইউক্রেনের ভাগ্য।
অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের হাত ধরে ইউক্রেন জয় পাবে না কি যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেন জয় করবে রাশিয়া—তা-ই এখন দেখার অপেক্ষা।
৩০১ দিন আগে
৪০ বছর পর কুর্দিদের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কিসের ইঙ্গিত
তুরস্কের সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ চার দশক ধরে চলা সংঘাত অবসানে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)।স্থানীয় সময় শনিবার (১ মার্চ) পিকেকে সমর্থিত গণমাধ্যম ফিরাত নিউজ এসেন্সির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় কুর্দিরা।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কারাবন্দি কুর্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান কুর্দিপন্থি ডিইএম পার্টির একটি প্রতিনিধিদল। সে সময় পিকেকেকে অস্ত্র সমর্পনের আহ্বান জানান তিনি।আরও পড়ুন: তুরস্ককে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান ড. ইউনূসের
দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে উল্লেখ করে বিদ্রোহী দলটিকে চিরতরে বিলুপ্ত করারও আহ্বান জানান সংগঠনটির প্রধান।
তুরস্ক সরকারের সঙ্গে চলা বিদ্রোহের কারণে ১৯৯৯ সাল থেকে কারাগারে রয়েছেন ওজালান। ওই সাক্ষাতের পরই নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে পিকেকে নেতা ওজালানের আহ্বান বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের (পিকেকে) পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না।
ওজালানের এই ঐতিহাসিক ঘোষণা তুরস্ক সরকার ও পিকেকের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নতুন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
গত অক্টোবরে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের জোটের অংশীদার দেভলেত বাহচেলি এই শান্তি আলোচনা শুরু করেন। সে সময় ওজালানের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি সহিংসতা পরিত্যাগ করে বিলুপ্ত হলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এই ডানপন্থী রাজনীতিক।
এরদোয়ানের গদি বাঁচাতেই কি এই উদ্যোগ?
তুরস্কের রাজনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এলো। মূলত তুরস্কের মসনদে টিকে থাকতে ডিইএম পার্টির সমর্থনের বিকল্প নেই এরদোয়ানের। কারণ দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, পুনরায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি পাবেন না এরদোয়ান।
নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে কিংবা সংবিধান অনুসারে আগাম নির্বাচন আয়োজনে সংসদে ডিইএম পার্টির সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে, আর এতে করে নিজের গদি বাঁচাতে পারেন এরদোয়ান।আরও পড়ুন: এরদোগানের সমালোচনায় পোস্ট, তুরস্কে বিরোধী দলীয় নেতা গ্রেপ্তার প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কে গণতন্ত্র, কুর্দি জনগণের অধিকার ও কারাবন্দি ওজালানের জেলের পরিবেশ উন্নত করার দাবি জানিয়ে আসছে ডিইএম পার্টি। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ওজালানের সাম্প্রতিক ঘোষণা শান্তি আলোচনাকে গতিশীল করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এ বিষয়ে তুরস্ক সরকার এখনও সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
তুরস্কে সরকারি পক্ষ ও কুর্দিদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। দেশটির জনসংখ্যার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জাতিগতভাবে কুর্দি। তবে কয়েক প্রজন্ম ধরে দেশটির সরকার কুর্দিদের বিষয়ে কঠোর নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণেই নিজেদের অধিকার আদায়ে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সংগ্রাম করে আসছে কুর্দিরা।
কে এই ওজালান
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আবদুল্লাহ ওজালান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বামপন্থি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে তিনি পিকেকে গঠন করেন, যাদের প্রধান দাবি ছিল তুরস্কের ভেতরে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠন। ছয় বছর পর দেশের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে সংগঠনটি।
সশস্ত্র কার্যকলাপ পরিচালনা করার কারণে সরকারের কোপের মুখে ১৯৭৯ সালে সিরিয়াতে পালিয়ে যান ওজালান। সেখানেই ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি। কিন্তু তুরস্কের চাপের মুখে তাকে নির্বাসিত করতে বাধ্য হয় সিরিয়া।
পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে কেনিয়া থেকে তাকে আটক করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারই তার ঠিকানা।
পিকেকের কার্যক্রম
ওজালানের পিকেকে ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে একটি স্বাধীন কুর্দিরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বিদ্রোহ শুরু করে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন চালায় তারা। সে সময়ও সশস্ত্র সংগ্রাম অব্যাহত রাখে গোষ্ঠীটি।
গোষ্ঠীটিকে তুরস্ক ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
৩০২ দিন আগে
বিয়ানীবাজারের সেই চিরচেনা অভয়ারণ্যগুলোতে এবার পাখির বিচরণ কম
অতিথি পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজার। উপজেলার জলাশয়, জলাধার, খাল, বিল, নদী নালায় দেখা মিলছে না অতিথি পাখির। দশ বছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন বিল, ঝিল, নদী, নালা ও খালগুলোতে শীতের মৌসুম আসতে না আসতেই নানা রকম ও আকৃতির অতিথি পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত হতো প্রকৃতি।
বিয়ানীবাজারে উজাড় হচ্ছে বনভূমি, কংক্রিটের ভারে তলিয়ে যাচ্ছে ঘাসভরা মাটি। ফসলের খেত দখল করছে কীটনাশক। উন্নয়নের কাছে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য বয়সি গাছ। এর ফলে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে পাখিদের কোলাহলমুখর সবুজ দুনিয়া।
বিয়ানীবাজারের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে না। বাড়ির আঙিনায় পাখিদের কিচিরমিচির ডাক, গাছের ডালে ডালে ঝাঁকবেঁধে উড়ে আসা পাখিদের সেই কলকাকলি নেই। অথচ একসময় গাছে গাছে, ঝোপে-ঝাড়ে, মাঠে-ঘাটে, বিলে-ঝিলে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনায় দোয়েল, টিয়া, ঘুঘু, কাক, কোকিলসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল। বাড়ির পাশেই সড়কের ধারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছে সুনিপুণভাবে বাসা তৈরি করে বাবুই পাখির সংসার পাতার চোখ জোড়ানো দৃশ্য দেখা যেত।
উপজেলার চিরচেনা অভয়ারণ্যগুলোতেও এবার পাখির বিচরণ নেই। শীতের আমেজ শুরু হলেই উপজেলার মুড়িয়ার হাওরসহ ছোট-বড় বিলে বিভিন্ন অতিথি পাখির ঢল নামতো। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে হাওর ও বিলের পানি শুকাতে শুরু করেলে সেখানে পুঁটিসহ ছোট ছোট মাছ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে নামতো অতিথি পাখি। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে রেশমি শীতের ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে আবারো ভবঘুরে হয় অতিথি পাখিগুলো। কিন্তু বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে অতিথি পাখি আসার হার কমে গেছে।
আইন অনুযায়ী অতিথি পাখি ধরা আর শিকার নিষিদ্ধ হলেও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় শিকার করা হয় পাখি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শিকারীরা ধান খেতগুলোতে নানা ধরনের বিষ প্রয়োগ করেই পাখিদের কাবু করে। পাশাপাশি আছে জালের মাধ্যমে পাতা ফাঁদ, যেগুলোতে খুব সহজেই পাখি ধরা পড়ে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মবিন হাই বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, নগরায়ণ, বনাঞ্চল উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, পাখির বিচরণক্ষেত্র সংকট, বাসস্থান ও খাদ্য সংকট, অবাধ শিকার ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা এবং যথাযথ সংরক্ষণের অভাবেই পাখি বিলুপ্তির মূল কারণ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. শামীম হোসেন জানান, নির্বিচারে বন-জঙ্গল কেটে আবাসভূমি হ্রাস করা হচ্ছে। এর ফলে পাখির বিচরণ ও বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, অতিথি পাখিরা এ এলাকায় এসে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার আগের মতো পায়না। শীতের কারণেই কিন্তু অতিথি পাখিগুলো এ এলাকায় আসতো। জলবায়ুর পরিবর্তন ও এলাকায় অতিথি পাখির বিচরণ কমে যাওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
৩০৩ দিন আগে
বিনা লাভে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছেন চাঁদপুরের শাহ আলম
পবিত্র রমজান আসলেই খাদ্য পণ্যের দাম বাজারে হু হু করে বেড়ে যায়। এটি নতুন কোনো চিত্র নয়, প্রতি বছর বাজারে এমনটি ঘটে। এমনি বাস্তবতায় এক অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মুদি ব্যবসায়ী শাহ আলম। দাম বৃদ্ধিকারী সব সিন্ডিকেটকে পেছনে রেখে আসন্ন মাহে রমজানে ইফতার সামগ্রী দাম কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। লাভ ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মধ্য চরকুমিরা গ্রামে শাহ আলম মালের এই মুদি দোকান। পাশে নিজ বাড়ি। গেল দু’বছর পবিত্র মাহে রমজানে কেজিতে মাত্র এক টাকা লাভে ইফতার সামগ্রী বিক্রয় করেন তিনি। অবশ্য এবারও কেজিতে এক টাকা লাভে উপজেলার ভাটিয়ালপুর এলাকায় তার নিজের অন্য একটি দোকানে ইফতারের ৮ রকমের পণ্য সামগ্রী বিক্রি করছেন তিনি। সেটা তার ভাই ও বোন দেখাশুনা করছেন। তবে আরেক দোকানে লাভ ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য।
শাহ আলম বলেন, নিজ বাড়ির পাশে কোন লাভ ছাড়াই কেনা দামেই পবিত্র মাহে রমজানের ৮টি ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে— মুড়ি, ছোলা, খেসারির ডাল, বেসন, চিড়া, চিনি, খেজুর ও সয়াবিন তেল।
দোকানে মুল্য তালিকা সাঁটানো রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও তার দোকান পরিদর্শন করেছেন।
যে দামে রমজানের পণ্য কেনা, সেই দামেই বিক্রি করছেন তিনি।
সরজমিনে গেলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘বছরের ১১ মাসই তো ব্যবসা করি, এই মাসে কোনো ব্যবসা (লাভ) করব না। পাশে আমার আরেকটি মুদির দোকান রয়েছে। গরিব- মেহনতি মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য এবছর রমজানে ক্রয় মূল্যেই রোজাদারের জন্য আটটি খাদ্য পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করার সিদ্বান্ত নিয়েছি। এখন থেকেই শুরু করছি এসব পণ্য বিক্রি।’
অন্যান্য বছর রমজানে মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিক্রয় হলেও এবার রমজান মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল বিক্রয় করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী শাহ আলম।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার রমজানের মালপত্র বিক্রির অর্ডার পেয়েছেন এ এলাকার লোকজন ও প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে।
তার দোকান পরিদর্শন করে দেখা যায়, শাহ আলম, তার ভাতিজা সাকিবসহ (১৯) এসব পণ্য সামগ্রী প্যাক করছেন। দোকানে মালামালে পূর্ণ।
৩০৩ দিন আগে
অবৈধ ড্রেজিং চলছেই, ভাঙন ঝুঁকিতে পদ্মাপাড়ের ৭ গ্রাম
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে রয়েছে অন্তত ৭টি গ্রামের বাসিন্দারা।
নদী যেভাবে ভাঙছে, তাতে ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রামগুলোর অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে; আর ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে সম্প্রতি বাঁধ নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে পদ্মা পাড়ের এসব গ্রামের মানুষের।
জেলার চরভদ্রাসন উপজেলা সদরের টিলারচর, ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী, সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী, হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরাসহ অন্তত সাতটি গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সবুল্যা শিকদার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ হরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের শুরা খালের মাথা থেকে গাজিরটেক ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এবং উপজেলা সদরের সবুল্যা শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সুপারির বাগান এলাকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এসব এলাকা-সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। যার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা না হলে নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা কোনোভাবেই রক্ষা পাবে না।
আব্দুর রশিদ নামের ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ বলেন, এইখানে নদী থেকে গত সরকারের সময় যেভাবে মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু কাটা হয়েছে, এখন লোক পরিবর্তন হয়ে সেই একইভাবে চলছে বালু কাটা। সরকার বদলালেও এই অবৈধ কাজ থেমে নেই। তাদের কাছে (অবৈধ বালু উত্তেলনকারী) আমরা নদী পাড়ের মানুষ অসহায়।
পাউবোর আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চরভদ্রাসন উপজেলার জাকেরেরশুরা বাজারে প্রস্তাবিত নদীর পাড় রক্ষার প্রকল্পের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। পরে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা।
ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রকল্পের গুরুত্বের বিষয়ে স্থানীয় জনমত ও নদীপাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। প্রকল্পটি হওয়া জরুরি, তবে তার আগে দরকার বালু লুটেরাদের তাড়ানো।’
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ‘সোয়া তিন কিলোমিটার নদীতীর অরক্ষিত অবস্থায় আছে এবং এটাকে প্রোটেকশনের (নিরাপত্তা) মধ্যে নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এছাড়া বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে যে, প্রকল্পের সুবিধাভোগী এলাকাবাসীর মতামত নিতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গণশুনানি করা হয়েছে এবং মতামত অনুযায়ী দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটির অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
ফরিদপুর পাউবো সূত্রে জানা যায়, প্রায় সোয়া ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪’শ কোটি টাকা। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে চলতি বছরে কাজ শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা শেষ হবে। আর এতে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদীপাড়ের হাজারো মানুষ।
৩০৩ দিন আগে
সরকারি সুবিধাবঞ্চিত গেজেটের ১৩৯৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের এক হাজার ৩৯৯টি পরিবার গেজেটভুক্ত হওয়ার পরও পাচ্ছেন কোনো প্রকার সরকারি সুযোগ সুবিধা। তবে গেজেট প্রকাশ হওয়ার ২০ বছর পার হয়ে গেলেও এসব শহীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আবেদন করেননি বলে দাবি কর্মকর্তাদের। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও পরিবারগুলোর নেওয়া হয়নি কোনো খোঁজ, করা হয়নি যোগাযোগ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ‘শহীদ, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ আদেশ, ২০২১’ অনুযায়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সুবিধা দেওয়া হয়। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিন দফায় গেজেটে ৬ হাজার ৭৫৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এরমধ্যে ৫ হাজার ৩৫৮ জনের পরিবার আবেদন করে ভাতা নিচ্ছেন। অবশিষ্ট ১ হাজার ৩৯৯ জন কোনো ভাতা নিচ্ছেন না।
পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে এ পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ঠিকানাসহ তালিকা জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করা হলে সরকারের উদ্যোগেই তাদের সব-সুযোগ নিশ্চিত করা বলে জানান এই উপদেষ্টা।
ফারুক ই আযম বলেন, স্বাধীনতার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর শহীদদের তালিকা হয়েছে। ‘মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভাতা পেয়ে থাকেন। বেসামরিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট হয়েছে প্রথমে ২০০৩ সালের ৬ অক্টোবর। সামরিক শহীদদের গেজেট হয়েছে ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল। পুলিশ ও বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট হয়েছে ২০০৫ সালের ১৫ জুন। শহীদদের তালিকায় মোট নাম এসেছে ৬ হাজার ৭৫৭ জনের।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গেজেটভুক্তদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৫৮ জন ভাতা পাচ্ছেন। অবশিষ্ট এক হাজার ৩৯৯ জন কোনো ভাতা পাচ্ছেন না। তারা ভাতা না পাওয়ার কারণ কর্মর্তাদের কাছে যখন তিনি জানতে চেয়েছেন, তারা বলেছেন—এদের পরিবার কখনও আবেদন করেনি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি তাদের প্রশ্ন করেছিলাম— রাষ্ট্র কী কোনোদিন জানতে চেয়েছে তারা কারা? তারাই রাষ্ট্র এনেছে। যারা রাষ্ট্র এনেছে তারা কৃষক, তারা শ্রমিক, তারা এত চালাক চতুর লোক না, এরা বোকা লোক। তারা এসব বোঝে না, তারা গেজেট বোঝে না। তালিকা বোঝে না।’
তিনি বলেন, ‘যিনি শহীদ হয়েছেন তার স্ত্রী হয়তো গৃহবধূ ছিলেন, সে তো গেজেট বোঝে না। রাষ্ট্র কেন তার কাছে গেল না?’
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদেরকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা হারে সম্মানি ভাতা এবং বছরে ২৩ হাজার টাকা হারে ২টি উৎসব ভাতা, ২ হাজার টাকা নববর্ষ ভাতাসহ আরও কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে জানা গেছে।
ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমি ডিসি সম্মেলনে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছি, কল্যাণ ট্রাস্টও সেখানে (পরিবারের খোঁজে) যাবে। সব ডিসিদের বলা হয়েছে, যারা ভাতা নিচ্ছেন না, এমন শহীদদের তালিকাও তাদের দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে যেতে হবে। গিয়ে আমাকে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে যে এ শহীদদের খোঁজ করা হয়েছে। তাদের কেউ আছে, কী নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট নিয়েছি, তাদের আলাদা করেছি। জেলার ভিত্তিতে আলাদা করেছি এবং জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠিয়েছি।’
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো সম্মান ও সুবিধা নেয়নি কিংবা পাচ্ছে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এত বছরে কেউ কী এটার খোঁজ নেয়নি- জিজ্ঞাসা করলে কর্মকর্তারা বলেছেন, না কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। যারা কল্যাণ ট্রাস্টে ছিল তাদের কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না। মন্ত্রণালয়ের তো ছিলই না। আমি কৌতুহল থেকে এ বিষয়টি দেখতে গিয়ে এটি পেয়েছি।’
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে জানা যায়, তিন ক্যাটাগরিতে (শহীদ, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা) ১৮ হাজার ২০০ জন বা তাদের পরিবারকে ভাতা দেওয়া হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক হাজার ৩৯৯ জনের পরিবার ভাতা নিচ্ছেন না। তারা আবেদন করেননি। ফলে ভাতা পাননি।
আরও পড়ুন: শুধু রণাঙ্গণের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী: উপদেষ্টা
অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হলে শুরু হবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তের কাজ
বিভিন্ন জেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে শত শত অভিযোগ এসেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ হয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পুনর্গঠন করতে পারব। সেখানে আমরা একটা এডহক কমিটি করে দেব। এরপর জামুকা, এডহক কমিটি, প্রশাসন যৌথভাবে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে বলেছিলাম যেসব অমুক্তিযোদ্ধা স্বেচ্ছায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে চলে যাবেন, তাদের ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেব, তাদের শাস্তির আওতায় আনব না। সেই সুবাদে ১০ থেকে ১২ জনের মতো পেয়েছি— যারা স্বেচ্ছায় চলে যেতে আবেদন করেছেন। তারা জাতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন যে, তারা এটা অন্যায় করেছিলেন। তাদের যাতে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি।’
‘ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনগুলো থেকে একটি দাবি জানানো হয়েছে, স্বেচ্ছায় চলে যেতে সরকার যাতে সময় নির্ধারণ করে দেয়। তারা বলেছেন, আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত যাতে সময় বেধে দেওয়া হয়। আমরা তাদের এ দাবি বিবেচনা করছি।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরিকারীদের বিচার
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটা পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় যারা ছিল, তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।’
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ, এ ব্যাপারে একটা অভিযোগ জামুকাতেও জমা পড়েছে। আগামী সভাতে আমরা এটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিচেনায় নেব, আলোচনা করব।’
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে বিপুল অর্থ
আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৯৩ শিক্ষার্থী
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বিপুল অর্থ আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি ব্যাংকে রয়েছে।
উপদেষ্টা ফারুক ই আযম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের বড় ফান্ড আছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সব টাকা নিয়ে রেখেছে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে। যে ব্যাংকে ১০ কোটি ফেরত দিতে পারে না। সেখানে কল্যাণ ট্রাস্ট ১৬৭ কোটি টাকা জমা রেখেছে। এ টাকা কবে ফেরত পাবে আল্লাহই জানেন।
তিনি বলেন, ‘কেউ না কেউ তো এ ধরনের ব্যাংকে টাকা রেখে সুবিধা নিয়েছেন। এ বিষয়গুলো আমরা দেখছি।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় ৯০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী
উপদেষ্টা জানান, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রায় ৯০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।,‘আমরা সেখানে যাচাই-বাছাই করব। কারো কোনো আপত্তি থাকলে— তা আমাদের জানাতে পারবেন। আমরা সেটা দেখব।’
মুক্তিযোদ্ধাদের মামলা নিষ্পত্তিতে আলাদা বেঞ্চ চাওয়া হবে
আরও পড়ুন: রবিবার সিলেটে মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীকে দাফন করা হবে: মেয়ে সামিরা
উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন বিষয়ে ২ হাজার ৭০০টির মতো মামলা রয়েছে। ‘এ মামলাগুলো একটা ডেডিকেটেড বেঞ্চে শেষ করার জন্য প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎ চেয়েছি। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে একটা আলাদা বেঞ্চ চাইব, যাতে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের মামলা অগ্রধিকার ভিত্তিতে আমরা শেষ করতে পারি।
৩০৫ দিন আগে
ছাতকে গ্যাস-চুনাপাথরের অভাবে চালু হচ্ছে না সিমেন্ট কারখানা
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর তীরে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাতক সিমেন্ট কারখানা। বর্তমানে এটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) একটি প্রতিষ্ঠান।
কারখানার উৎপাদন বাড়াতে উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণে ২০১৬ সালে ৬৬৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিআইসি। সেই খরচ বাড়িয়ে ৮৯০ কোটি টাকা করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ মে খরচ বাড়িয়ে এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা করা হয়। এতে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ।
বিদ্যমান পুরোনো, অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদনক্ষম ওয়েট প্রসেস পদ্ধতির পরিবর্তে ড্রাই প্রসেসের দৈনিক দেড় হাজার মেট্রিক টন (বছরে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন) উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নতুন জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ক্লিংকার ফ্যাক্টরি স্থাপন এবং বিদ্যমান সিমেন্ট ফ্যাক্টরির উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৫০০ টন ন্যূনতম ১৫ বছর ধরে রাখার লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়।
প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বান্তব অগ্রগতি ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্রকল্পের ভারতের অংশের রোপওয়ে ছাড়া কারখানার অন্য সব প্ল্যান্টের নির্মাণ ও এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
তবে রোপওয়ে (রজ্জুপথ) নির্মাণ ও নতুন গ্যাসলাইন স্থাপন শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্প কাজের মেয়াদ আরোও ১ বছর বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
সুনামগঞ্জে এক হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বান্তবায়িত হচ্ছে ‘ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উৎপাদন পদ্ধতি ওয়েট প্রসেস থেকে ড্রাই প্রসেসে রূপান্তরকরণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মোট ব্যয় হয় ৮৩১ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই কারখানার নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু প্রধান কাঁচামাল গ্যাস ও চুনাপাথরের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কারখানাটি। ভারত থেকে চুনাপাথর আনার জন্য দুই দেশে রোপওয়ে (খুঁটি পুঁতে তারের মাধ্যমে পথ তৈরি করে চুনাপাথর আনার পদ্ধতি) নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি সিলেট থেকে কারখানা পর্যন্ত গ্যাস আনার জন্য নতুন সঞ্চালন লাইনও স্থাপন করা হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে জং ধরছে হাজার কোটি টাকার ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। জং ধরা থেকে কারখানাকে রক্ষা করতে নিয়মিত ‘ট্রায়াল রান’ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত কোমোরাহ লাইমস্টোন মাইনিং কোম্পানি (কেএলএমসি) থেকে রোপওয়ের মাধ্যমে চুনাপাথর আমদানি করত ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি। এই রোপওয়ের ১১ কিলোমিটার অংশ পড়েছে বাংলাদেশে। ভারতে পড়েছে পাঁচ কিলোমিটারের একটু বেশি। ছাতক সিমেন্টের নতুন কারখানার জন্য যে পরিমাণ চুনাপাথর প্রয়োজন হবে, তা আগের রোপওয়ে দিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার বাংলাদেশ অংশের রোপওয়ে এরই মধ্যে ভেঙে বিক্রিও করে দেওয়া হয়। নতুন করে রোপওয়ে নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পে থাকলেও ভারতের অনুমতি না পাওয়ায় সেটির কাজও এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে, ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির সময় ভারত চুনাপাথর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে কারখানাটি কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ভারত সরকার কেএলএমসির নিবন্ধন নবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে চুনাপাথর আসা বন্ধ থাকে। যদিও এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চুনাপাথর আমদানির চুক্তি ছিল ছাতক সিমেন্ট কারখানার। এখন আমদানির বিষয়টি নির্ভর করছে কেএলএমসির অনুমোদন পাওয়ার ওপর।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বস্তিগুলোতে নেশার ছোবল
গত ৮ ডিসেম্বরের এক সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, কেএলএমসির মাইনিং অনুমোদন এবং ভারতীয় অংশে রোপওয়ে মেরামত/প্রতিস্থাপনের অনুমোদন না পাওয়ার কারণে রোপওয়ের কাজের জন্য প্রকল্প বিলম্বিত করা হচ্ছে। কেএলএমসি থেকে ছাতক সিমেন্ট কারখানা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রোপওয়ের মধ্যে চার দশমিক ছয় কিলোমিটার পড়েছে ভারতীয় অংশে। উভয় অংশের ১৭ কিলোমিটার রোপওয়ে নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে সাধারণ ঠিকাদার চীনের নানজিং সি-হোপ সিমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি। তবে ভারতীয় অংশে ৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার রোপওয়ে স্থাপনের কাজ সাধারণ ঠিকাদারের উপ-ঠিকাদার হিসেবে কেএলএমসি সম্পাদন করবে। কেএলএমসির সঙ্গে সিসিসিএল-বিসিআইসির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। বিধায় তারা রোপওয়ে মেরামত কাজের জন্য সিসিসিএলের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। সিসিসিএল ছাড়া অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করতে পারবে না বলে তারা জানায়। চুক্তি সম্পাদিত হলে শিগগির কাজটি শুরু করা যাবে বলে কেএলএমসি আশ্বন্ত করেছে।
প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বাদশা এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কেএলএমসির প্রস্তাব অনুযায়ী চুক্তি করতে হলে সাধারণ ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতীয় রোপওয়ে স্থাপন কাজের জন্য প্রাক্কলিত মূল্যের সম পরিমাণ অর্থ সাধারণ ঠিকাদারের চুক্তি থেকে কর্তন করে সিসিসিএলের মাধ্যমে কেএলএমসির অনুকূলে এলসি স্থাপন করা যেতে পারে।
সাধারণ ঠিকাদার এ বিষয়ে একমত পোষণ করে এবং তাদের কাজের সুযোগ সংশোধন করে চুক্তি সংশোধন করতে হবে বলে নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) জানান যে, চুক্তির কোনো অংশে পরিবর্তন করতে হলে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ ঠিকাদার অথবা রোপওয়ে কাজের জন্য সাধারণ ঠিকাদারের নিয়োগ করা উপ-ঠিকাদারের মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করা যেতে পারে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা কেএলএমসি ও সাধারণ ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন এবং ভারত-বাংলাদেশ অংশের নতুন রোপওয়ে স্থাপন কাজ দ্রত সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেন।
আরও পড়ুন: শুধু রণাঙ্গণের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী: উপদেষ্টা
সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর যে প্রন্তাব তৈরি করেছে, সেখানে ৪৩ কিলোমিটার নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। নতুন পাইপলাইন নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এত দিন ছাতক অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের মূল লাইন থেকে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করত। কিন্তু নতুন কারখানায় যে পরিমাণ গ্যাস লাগবে, তা এ লাইন থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই কারখানাটি চালু করতে গ্যাস সরবরাহের জন্য আলাদা সংযোগ লাইন লাগবে। কিন্তু কারখানাটি স্থাপনে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, তাতে গ্যাসলাইন স্থাপনের বিষয়টি ছিল নয়।
সর্বশেষ প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর যে প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেখানে ৪৩ কিলোমিটার নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। বিসিআইসি জানায়, প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন দেড় হাজার মেট্রিক টন, যা আগের উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বেশী। নতুন পাইপলাইন স্থাপন, বর্তমান পাইপলাইন অপসারণ (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) এবং গ্যাস সংযোগ প্রদানের কাজটি জেজিটিডিএসএলের তত্ত্বাবধানে এবং তাদের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পাইপলাইন স্থাপনের কাজটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জেজিটিডিএসএলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এছাড়া কাজটি দ্রুত শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য গত ৭ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পেট্রোবাংলায় চিঠি দেওয়া হয়। পেট্রোবাংলার অনুমোদন পেলে জেজিটিডিএসএল দ্রুত নতুন গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে শিগগির গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজটি শুরু করা হবে। ‘দীর্ঘদিন কোনো যন্ত্রপাতি পড়ে থাকলে জং ধরাটা স্বাভাবিক। মূল কারখানার কাজ হয়ে গেছে। গ্যাসলাইন টানতে হবে, টাকাও পেয়েছি। কিন্তু গ্যাসের অনুমতি মিলছে না। যন্ত্রপাতি জং ধরা ঠেকাতে আমরা ১৫ দিন পর পর সচল রাখছি।’- বিসিআইসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) গাজী কামরুল হোসেন। যে কারণে আবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বিসিআইসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অংশে রোপওয়ে স্থাপনের কাজটি যথাসময়ে সম্পন্ন হলেও ভারতীয় অংশে রোপওয়ে স্থাপনের কাজটি সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক বছর সময়ের প্রয়োজন। বর্ষার মৌসুম শুরু হলে অতি বৃষ্টি ও বন্যার জন্য কাজ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া সিলেট থেকে কারখানা পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের কাজটির অনুমোদন এখন পর্যন্ত পেট্রোবাংলা থেকে পাওয়া যায়নি। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদিত মেয়াদ অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: টাকা দিলেই মিলত জন্ম সনদ, সুযোগ নিয়েছে রোহিঙ্গারাও
৩০৫ দিন আগে
টাকা দিলেই মিলত জন্ম সনদ, সুযোগ নিয়েছে রোহিঙ্গারাও
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন ছুটিতে। এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি সদস্যকে হাত করে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে কোনোপ্রকার বাছবিচার ছাড়াই একের পর এক জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করেছেন পারভেজ। এমনকি রোহিঙ্গারাও টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে জন্ম সনদ নিয়েছে।
সম্প্রতি বিষয়টি সবার সামনে এলে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এলাকার কেউ নিয়ম অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করলে মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও তা ইস্যু নিয়ে কোনো তাড়া দেখা যায় না। অথচ টাকা দিয়ে এখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই জন্ম সনদ নিয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
তাদের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ নেওয়ার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, রংপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অধিবাসীরা বুধল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ বানিয়েছেন। এসব সনদে তাদের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ২ নম্বর বুধল ইউনিয়ন পরিষদ।
বিদেশ গমন, বিয়ে, নতুন ভোটার হালনাগাদ ও বয়স বাড়ানো-কমানোসহ নানা প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে নানা জায়গার মানুষ সুযোগের ‘সদ্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: ১০ বছর ধরে নেই কোনো মুসলিম শিক্ষক, ইসলাম শিক্ষা পড়াচ্ছেন হিন্দু শিক্ষকরা
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ও সনদ ইস্যুর পর তা প্রিন্ট করতে হলে প্রসাশনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দিষ্ট সার্ভার অ্যাকাউন্ট ও ওটিপির প্রয়োজন হয়। তাহলে চেয়ারম্যাচের অগোচরে কীভাবে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি ঘটল, তা জানতে চাইলে দুধল ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুল রহমান (শফিক) বলেন, ‘২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমি ছুটিতে ছিলাম। এ সময় প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সাদেক মিয়া। আমার অনুপস্থিতিতে তার সঙ্গে আঁতাত করেই ইউপি সচিব পারভেজ এই জালিয়াতি শুরু করেন।’
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করে ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তারকে দিয়ে তারা সেগুলো প্রিন্ট করাতেন বলে জানান শফিক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ছুটি থেকে ফিরে গত ২২ জানুয়ারি আমি অফিস শুরু করলে এক ব্যক্তি টেলিফোনে বিষয়টি আমাকে জানান। তারপর আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হই।’
‘পরে পারভেজকে এ বিষয়ে ধরলে চাপে পড়ে তিনি দায় স্বীকার করেন। এমনকি স্ট্যাম্পে লিখিতও দেন তিনি।’
ইউপি সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২০২৩ সালেও সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রসাশকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। সে সময় আবেদন করা হলেও শুরুতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদেই কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে তাকে কসবা উপজেলা খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা ফারজানা আক্তারের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘আমাকে চাপ দিয়ে সুমন পারভেজ স্যার এসব কাজ করাতেন। ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে পারি নাই। সব সময় তিনি আমাকে চাপের মধ্যে রাখতেন।’
নারী উদ্যোক্তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ হাসিলে সুমন পারভেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে সমর্থন দেন শফিক চেয়ারম্যানও। বলেন, ‘তার (পারভেজ) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে মশার উপদ্রব, নগরজুড়ে উদ্বেগ
কথা হয় চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা সাদেক মেম্বারের সঙ্গেও। তার দাবি, তাকে বিষয়টি বুঝতে না দিয়ে পাসওয়ার্ড নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইউএনবিকে মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘২/৩ দিনে প্রায় পৌনে দুইশ মানুষের জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে এখান থেকে। অন্য জায়গা থেকে আবেদন করে সে (পারভেজ) ইউনিয়ন পরিষদে এন্ট্রি করে পিডিএফ আকারে নিয়ে যেত।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘এমন ঘটনা সব জায়গাতেই হচ্ছে, শুধু আমার জেলাতে হয়েছে—এমন নয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা আমি শুনেছি। তদন্তে তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সুমন পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নেন। তবে নিজের অসুস্থতা এবং মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে অজুহাতে সংবাদটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন তিনি।
৩০৫ দিন আগে