বিশেষ-সংবাদ
শুধু রণাঙ্গণের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী: উপদেষ্টা
১৯৭১ সালে যারা রণাঙ্গণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন শুধু তারাই মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাবেন। অন্যান্য যারা দেশ-বিদেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জনে কাজ করেছেন তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ইউএনবিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান আইনের সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতরা ‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতি পাবেন: উপদেষ্টা ফারুক
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, পরিবর্তন আনার জন্য ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫'র খসড়া করে এ বিষয়ে অংশীজনদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। খসড়াটি মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
সনদধারী অমুক্তিযোদ্ধাদের অপসারণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে আমরা কিছু সংশোধন আনতে চাচ্ছি। বড় ধরণের সংশোধন আসবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা রণাঙ্গনে সারাসরি যুদ্ধ করেছেন এবং যারা নানা আঙ্গিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। বিদেশে জনমত গঠন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে, প্রশাসনিক দায়িত্বে মুজিবনগরে নানান পর্যায়ে যারা কাজ করেছে সবাইকে আলাদা করা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সরাসরি রণাঙ্গণে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন—তারা হবেন মুক্তিযোদ্ধা। আর যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন—তারা হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।’
তিনি বলেন, ‘ভাতা কিংবা সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোনো আপত্তি কারো নেই। শুধু যারা রণাঙ্গণে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন—তাদের স্ট্যাটাসটাই (উপাধি) যাতে মুক্তিযোদ্ধা থাকে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। তাদের মধ্যে প্রবল একটা আপত্তি যে, যারা রণাঙ্গণে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে তাদের সঙ্গে অন্যদের যাতে একই ক্যাটাগরিতে বিচার না করা হয়। আমিও তো তাদের মতো সেই রকম যোদ্ধা। আমি মনে করেছি তাদের এ দাবিটা অনেক ন্যায্য। কারণ, আমি নিরাপদে থেকে সহযোগিতা করেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য নানানভাবে কাজ করেছি। এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়। তবে সেটা সেভাবেই সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত, সেটা সেভাবেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের সঙ্গে জাতিসংঘের গোয়েন লুইসের সাক্ষাৎ
বিদ্যামান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা
বর্তমান আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা তুলে ধরে ফারুক ই আজম বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রাম-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিচ কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইপিআর নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নিম্নবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকরা, উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন। এটা বর্তমান আইনে বলা হয়েছে।’
বর্তমান সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ভারতে গিয়ে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যারা বিদেশে থেকে যুদ্ধের ওপর জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত, মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যারা পরবর্তীতে গণপরিষেদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, বীরঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক; স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া মেডিকেল দলের সব সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল বলেও জানান উপদেষ্টা।
খসড়া অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া’ অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, নতুন অধ্যাদেশে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিতা সকল নারী (বীরাঙ্গনা); মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া ফিল্ড হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারীকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান আইনে সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছে। কারো নির্দেশে না। বর্তমান সংজ্ঞায় সেটি কারো নির্দেশিত বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমরা যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু কারো ডাকে সাড়া দিয়ে গিয়েছি। এটা তো তেমন না। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, আমরা দেশ-জাতি-মানুষকে ভালোবেসে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করতে গেছি। হয় আমরা জীবন যাবে, না হয় শত্রুর জীবন। একমাত্র ভালোবাসাই মানুষকে জীবন দেওয়ার মতো একটা প্রেক্ষিতে নিয়ে যেতে পারে। কারো নির্দেশ কেউ জীবন দিতে যেতে পারে না।
খসড়া অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, এরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন পর্যায় থেকে খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে জনমত নিয়েছি। সেই মতামত আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বসেছি। তারাও নানা রকমের মতামত দিয়েছেন। আমাদের খসড়া ও তাদের মতামত মোডিফিকেশন করে আগামী জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সভায় চূড়ান্ত করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে অধ্যাদেশের ভেটিংও হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন দিতে এত সংস্কারের প্রয়োজন নেই: ফারুক
আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে জামুকার সভা হবে জানিয়ে ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমরা আশা করছি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এটা উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাতে পারব।’
মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে সর্বনিম্ন বয়স মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারিত আছে। কিন্তু এটা নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে রায়ে ভিন্ন কিছু না থাকলে এ বয়সই বহাল থাকবে। মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত চেষ্টা করা হচ্ছে। আদালত ১২ বছর ৬ মাস বহাল রাখলে প্রচুর অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ যাবেন।’
উপদেষ্টা জানান, মুক্তিযোদ্ধা সকল সংগঠন একটা দাবি জানিয়েছে, ভুল তথ্য দিয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা নিয়েছেন, তারা ক্ষমা চেয়ে ২৬ মার্চের মধ্যে আবেদন করলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য। এটি বিভিন্ন সংগঠনের দাবি। এ বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এ বিষয়ে আমরা ইতিবাচক বিবেচনায় রেখেছি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন দেশে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৯৮ জন। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গেজেটভুক্ত মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭৬ জন।
৩০৬ দিন আগে
সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার দাবি পর্যটকদের
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে আবারও সরাসরি বাঘের বিচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন পর্যটকরা। বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বড় কটকা এলাকায় পর্যটকরা একটি বাঘকে সাঁতার কেটে খাল পার হতে দেখেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে প্রাপ্তবয়স্ক ওই বাঘটি সাঁতরিয়ে খাল পার হচ্ছিল বলে জানান পর্যটকরা। এ নিয়ে এক মাসের মধ্যে সুন্দরবনে পর্যটকরা ৪টি বাঘ দেখতে পেয়েছেন। সুন্দরবনে খুব কাছ থেকে নিজের চোখে বাঘকে দেখতে পেয়ে বেজায় খুশি তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ দেখে বলা যায়, সুন্দরবনে আগের চেয়ে বাড়ছে বাঘের সংখ্যা। ২০২৪ সালের অক্টোবরের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি।
বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবন। আর বাঘ প্রতিনিয়ত হুমকি উপেক্ষা করে সুন্দরবনে টিকে আছে। বাঘ রক্ষা করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পর্যটকরা বলছেন, বাঘ রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না। সুন্দরবন রক্ষা করতে পারলে বাঘ রক্ষা হবে। আর বাঘ রক্ষা হলে সুন্দরবন রক্ষা হবে।
জানা গেছে, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ এবং ধরা নামে দু’টি সংগঠন যৌথভাবে সুন্দরবন ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে আগামী এক বছরে তাদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কর্মশলার আয়োজন করে। নারী-পুরুষ ও শিশুসহ নানা বয়সের ৪১ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ‘দি সেইল’ নামে জলযানটি ৩ দিনের ট্যুরে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মোংলা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই জলযানটি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা খাল দিয়ে কচিখালী যাওয়ার পথে বড় কটকা খালের মুখে পৌঁছালে পর্যটকরা একটি বাঘকে সাঁতরিয়ে খাল পার হতে দেখে। এসময় বাঘ বাঘ বলে পর্যটকদের মধ্যে হৈ-চৈই পড়ে যায়। প্রায় দেড় মিনিট ধরে তারা বাঘটি প্রত্যক্ষ করেন। উচ্ছাস আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ওই জলযানে থাকা সব পর্যটকদের মধ্যে। অনেকে বিরল ওই দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনে ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করেন।
ওই জলযানে কর্মশলায় অংশ নেওয়া পশুর রিভার ওয়াটার কিপার মো. নূর আলম বুধবার দুপুরে ইউএনবি জানান, দি সেইল নামে জলযানে সুন্দরবন ঘুরতে ঘুরতে তারা আগামী এক বছরের জন্য কর্মপকিল্পনা গ্রহণ করছিল। তাদের জলযানটি বনের বড় কটকা খালের মুখে পৌঁছালে দূর থেকে খালের মধ্যে কিছু একটা দেখতে পায়। জলযানটি কাছে নিয়ে তারা দেখে একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ খাল সাঁতরিয়ে পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছে।
মো. নূর আলম আরও জানান, বিগত ২৫ বছরে তিনি কমপক্ষে ৩০ বার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এই প্রথম তিনি সুন্দরবনে নিজের চোখে বাঘ দেখতে পেয়েছেন। বাঘ দেখার পর তার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি মনে হয়েছে। সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ প্রত্যক্ষ করার এই দৃশ্য তার কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে তিনি জানান।
জাহাজে থাকা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী শরীফ জামিল জানান, বিগত ২০ বছরে তিনি ৫০ বারের বেশি সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এই প্রথম নিজের চোখে সরাসরি বাঘ প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। ছবি এবং ভিডিওতে বাঘ দেখা আর সামনা সামনি নিজের চোখে বাঘ দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। বাঘ যে কত সুন্দর এবং শক্তিশালী প্রাণি— তা সামনা সামনি না দেখলে অনুধানন করা যায় না। তার চোখের সামনে দিয়ে বিশাল একটি খাল সাঁতরিয়ে বাঘটি তীরে উঠার পর তার বিশালতা এবং সৌন্দর্য্য তাকে মুগ্ধ করেছে।
শরীফ জামিল আরও বলেন, বাঘ রক্ষা করতে না পারলে সুন্দরবন রক্ষা করা যাবে না। বাঘ দেখার পর এমন ধারণা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন দিন দিন ধ্বংসের মুখে। সুন্দরবনে প্রজাপতি যে পরাগয়ন সেটাও বাঘ বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ধরে রাখতে না পারলে বাঘ এবং সুন্দরবন কোনোটাই রক্ষা করা যাবে না। এজন্য সুন্দরবন একে অপরের পরিপূরক। বাঘ রক্ষা করা মানে সুন্দরবন রক্ষা করা, সুন্দরবন রক্ষা করা মানে বাঘ রক্ষা করা বলে মনে করেন জামিল।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনে বাঘের বিচরণ এখন অনেক বেশি। প্রায়ই সুন্দরবনের নদী-খাল এবং বনের মধ্যে বনের কার্যালয়ের আশেপাশে বাঘের দেখা মিলছে। সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন নিরাপদ রাখতে তারা চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ যাতে নিরাপদে থাকে, এজন্যও তারা সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনে বাঘ বিভিন্ন সময়ে নদী-খাল সাঁতরিয়ে এপার ওপার যাওয়া আসা করে। সুন্দরবনে বাঘ দেখা স্বাভাবিক বিষয়। প্রতি তিন বছর পর পর সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে সুন্দরবনে নানা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পর্যটক ও বন বিভাগ জানায়, ১৮ জানুয়ারি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার কটকা অভয়ারণ্য এলাকার বেতমোর নদীর পাশে তিনটি বাঘ দেখতে পান। এমভি আলাস্কা লঞ্চ কটকা এলাকা অতিক্রম করার সময় সুন্দরবন ভ্রমনকারী দেশি-বিদেশি পর্যটকরা একই সময় পাশাপাশি তিনটি বাঘ দেখেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল এলাকায় একটি খালে বন বিভাগের স্টাফরা একটি বাঘিনী দেখতে পেয়ে ছিল। গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কটকা-কচিখালী এলাকায় ৪টি বাঘ দেখতে পায় বন বিভাগের স্টাফরা। এছাড়া বিভিন্ন সময় বন বিভাগের কার্যালয়ের পাশে বাঘ ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে পর্যটকদের নজরে পড়ে বাঘ।
বন বিভাগের তথ্য মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে ‘ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে’ সুন্দরবনে বাঘ গণনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবরের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি। এর আগে ২০১৮ সালে একইভাবে গণনা করে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে গণনার ফলাফল অনুসারে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
৩০৭ দিন আগে
রাজধানীর বস্তিগুলোতে নেশার ছোবল
রাজধানীর বস্তিবাসীদের মানবেতর জীবনের নানা দিক নিয়ে গল্প নতুন নয়। তবে সেখানকার মানুষ কতটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, সেটা নিয়ে সব সময়ই নানা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে সম্প্রতি সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ঘুরে তাদের জীবন-চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করে ইউএনবি।
তাদের নানা সংকটের মাঝেও সম্প্রতি আবির্ভাব হয়েছে নতুন এক সংকটের। মাদকের করাল গ্রাসে বুঁদ হয়ে যাচ্ছে ঢাকার বস্তিগুলো। কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ, এমনকি মাঝবয়সী ব্যক্তিরাও নেশায় আসক্ত হয়ে সমাজ, সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে কথা হয় সাদিয়া (ছদ্মনাম) নামের এক কিশোরীর সঙ্গে। সে জানায়, তার বাবা আগে কাজ করতেন, এখন সারা দিন নেশা করে পড়ে থাকেন। তাই বিভিন্ন বাসায় কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতে হচ্ছে তার ও তার মায়ের।
ছোট্ট ঘরে এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন আতিয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ছেলেটা আগে একটা দোকানে কাম করত, কিন্তু কয়দিন হয়, নেশার পাল্লায় পইড়া আর কামে যায় না।’
আরও পড়ুন: রাতে মাদক কারবারির স্ত্রীর ঘরে এএসআই, লাঠিপেটা
‘আমি আগে দুইটা বাসায় কাম করতাম, কিন্তু এহন ৬টা বাসায় কাম কইরাও সংসার চলে না। ছেলেটাকে নেশার টাকা না দিলে গায়ে হাত তোলে।’
সিফাত নামের ১৬ বছরের কিশোর একটি দোকানে কাজ করে। স্কুলেও ভর্তি হবে বলে জানায় সে।
সিফাত বলে, ‘আমাদের এখানে আমার অনেক বন্ধু আগে কাজ করত, কিন্তু এখন আর করে না; নেশা করে।’
কী নেশা করে—জানতে চাইলে সে বলে, ‘ইয়াবা, বিভিন্ন ট্যাবলেট, গাঁজা, আরও অনেক কিছু।’ কোত্থেকে আনে?—উত্তরে জানায়, ‘বার আছে, রাজাবাজার থেকে আনে। মা-বাবাও জানে না। তাদের থেকে টাকা নিয়ে নেশার জিনিস কেনে।’
বস্তির জীবন
কড়াইল বস্তিতে এক রুমের ভাড়া সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকছেন অনেকে।
আসমা খাতুন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘এদিকে কাজের খুব অভাব। মাসে ৪-৫ হাজার টাকা দিয়ে সারা দিন কাজ করতে বলেন মালিকরা। কিন্তু আমাদের বাসা ভাড়াই সাড়ে তিন-চার হাজার টাকা। কাজ না পেয়ে অনেক মহিলারা ভিক্ষা করে। অনেকে আবার অনৈতিক কাজের সঙ্গেও জড়িয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই নেশা করে। যারা নেশা করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও নেশার কারণে খারাপ হয়ে গেছে। আবার যারা কাজ পায় না, তাদের অবস্থাও খারাপ।’
মিরপুরের রূপনগরের দুয়ারীপাড়ার বস্তি ঘুরেও দেখা যায় প্রায় একই চিত্র।
সেখানে ছোট্ট ঘরে থাকা রুপা (১৪) বলে, ‘আমার মা, আমি, বাবা আর আমার ছোট বোন এখানে থাকি। বাবা আগে কাজ করত। এখন নেশা করে পড়ে থাকে। আমি আগে স্কুলে পড়তাম। বাবা কাজ বন্ধ করার পর আমিও মায়ের সঙ্গে বাসায় কাজ করি, না হলে সংসার চলে না।’
বাসিন্দাদের মতে, কয়েক হাজার মানুষ বাস করে এ বস্তিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোর বলে, ‘আমিও মাঝে মাঝে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশা করতাম। পরে বাবা টের পেয়ে মারধর করে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে, কিন্তু বন্ধুরা বেশিরভাগই নেশা করে।’
এদিকে মালিবাগ রেলগেটে ভাসমানভাবে যুগ যুগ ধরে বাস করছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে জহুরুল হক থাকেন তার স্ত্রীকে নিয়ে। শীত, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পলিথিনে বানানো ঘরে থাকেন তারা।
যারা দুবেলা খেতে পান না, পাবলিক টয়লেটে প্রতিবার ৫-১০ টাকা করে দৈনিক অন্তত ২০-২৫ টাকাও দিতে হয়, যেটা সামান্য আয়ে তাদের জন্য বাড়তি খরচ। এটা বিনামূল্যে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তারা।
পড়াশোনাও করছে অনেকে
আরও পড়ুন: মরণঘাতী ড্রাগ ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ থেকে বাঁচতে করণীয়
নাসিমা নামের একজন বলেন, ‘আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। আমার বোনের দুই ছেলে; একজন কলেজে, আরেকজন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।’
বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক রাসেল সরোয়ার বলেন, ‘কড়াইল বস্তির দুই অংশ মিলে প্রায় কয়েক লাখ মানুষ বাস করে। আমরা প্রতিদিন অভিযান চালাই এবং গড়ে ৫/৬ জনকে আটক করি। নেশায় আসক্ত অনেক ছেলে রয়েছে; এদের মধ্যে যুবক বেশি। আসলে জন্ম থেকেই এমন পরিবেশে বড় হয় তারা, তাই সহজে ভালো কিছু শেখে না।’
‘তবে এর মধ্যে অনেকে পড়াশোনা করে ভালো অবস্থানেও চলে যায়। মা-বাবা কাজ করে যা আয় করে, সেটা দিয়ে বস্তিতে থেকেও সন্তানদের পড়াচ্ছেন। এই সংখ্যাটা কম হলেও এটা অনেক পজিটিভ সাইড।’
নেশার পেছনে কারণ নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের বেড়ে ওঠার জন্য পরিবারের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নিম্নবিত্ত ও বস্তির দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষগুলোর জীবন শুরুই হয় অভাব-অনটনের মধ্যে। ছেলেমেয়েকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ তারা পান না। সেক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক পরিবার হয়তো সন্তানকে পড়াশোনা করাতে পারেন। তবে বেশিরভাগই অভাবের তাড়নায় নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়।’
ঢাকার বস্তিবাসী তরুণ ও যুবকদের মধ্যে মাদকের ক্রমবর্ধমান ছোবল কেবল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংকট নয়, বর্তমানে এটি সামাজিক জরুরি অবস্থায় পরিণত হয়েছে। আসক্তি যেহেতু শুধু আর্থিক ক্ষতিই করে না, বরং সামাজিক অবক্ষয়েও ইন্ধন জোগায়, তাই শিক্ষা, কাজের সুযোগ ও পুনর্বাসন কর্মসূচিসহ ব্যাপকভাবে বস্তিবাসীর জীবনের ওপর ইতিবাচক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আসক্তি ও দারিদ্র্যের চক্রে পড়ে গোটা প্রজন্মের হতাশার ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
রাজধানীতে পাঁচ হাজারের বেশি বস্তি রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ কড়াইল বস্তিই ৫০ হাজারের বেশি মানুষের আবাসস্থল।
আরও পড়ুন: বনশ্রীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘স্বর্ণালংকার লুট’
তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বের শহুরে জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের বাস বস্তিতে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১১০ কোটি মানুষ শহরে বস্তি কিংবা বস্তির মতো পরিবেশে বসবাস করছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী ৩০ বছরে আরও ২০০ কোটি মানুষের ঠিকানা হবে বস্তি।
ক্রমবর্ধমান এই নগর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেকসই আবাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
৩০৮ দিন আগে
খাদ্য গুদামে আমন ধান দিচ্ছেন না বাগেরহাটের চাষিরা
বাগেরহাটে এবছর আমন ধানের ফলন ভাল হয়েছে। ধানের ফলনে লবণাক্ত এই অঞ্চলের চাষিরা খুশি। ফলন ভাল হলেও চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের চাষিরা খাদ্যগুদামে আমন ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেনি। ফলে এবছর বাগেরহাট জেলায় এখনও পর্যন্ত এক ছটাক পরিমাণও আমন ধান সংগ্রহ হয়নি।
হাট-বাজারের চেয়ে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহের মূল্যে মণ প্রতি প্রায় ১০০ টাকা কম ছিল। একারণে চাষিরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করেনি।
এছাড়া সিন্ডিকেট এবং নানা ধরণের নিয়ম কানুনের কারণে চাষিরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে চাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে।
চাষিরা বলছেন, সরকারিভাবে চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহজে ধান কেনা উচিত। সেই সঙ্গে হাট-বাজারের চেয়ে সরকারি সংগ্রহ মূল্যে বেশি থাকতে হবে।
খাদ্য বিভাগ বলছে, শেষ সময় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাগেরহাটে আমন ধান সংগ্রহ হওয়ার আর সম্ভবনা নেই। হাট-বাজারের চেয়ে সরকারি মূল্যে কম থাকায় এখনও পর্যন্ত এক ছটাক পরিমাণও আমন ধান ঢোকেনি সরকারি গুদামে।
আরও পড়ুন: ঐতিহ্যের তালপাখা, ব্যস্ত বাগেরহাটের কারিগররা
জানা গেছে, সরকার অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মৌসুমে আমন ধান-চাল সংগ্রহ চলবে। বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলা থেকে তিন হাজার ৯০২ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরকারিভাবে সংগ্রহের মূল্যে প্রতিমণ ধান ১ হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু, হাট-বাজারে ধান ১ হাজার ৪০০ থেকে, ১ হাজার ৪২০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি।
জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে, সরকারিভাবে বাগেরহাট সদরে ৪০৯ টন, মোড়েলগঞ্জে ১১৩৯ টন, রামপালে ৫০৫ টন,শরণখোলায় ৪৭৮ টন, মোংলায় ১৬০ টন, ফকিরহাটে ২৮৪ টন, মোল্লাহাটে ২০৭ টন, কচুয়ায় ৩৩৭ টন এবং চিতলমারী উপজেলায় ৩৮৩ টন ধান সংগহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলা থেকে ৩ হাজার ৩০৪ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ পরিমাণ চাল সংগ্রহ হয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের সাইফুর রহমান নাথু জানান, তার প্রায় ২০ বিঘা ধানের জমি রয়েছে। তাদের জমিতে আমন এবং বোরো ধানের চাষ হয়। গত মৌসুমে সরকারি গুদামে আমন ধান বিক্রির জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, নিয়ম কানুন আর নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেনি। একারণে এই মৌসুমে তিনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রির চেষ্টা করেনি।
ফতেপুর গ্রামের তরুন কুমার পাল জানান, এবছর সে চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছে। বিঘা প্রতি ৩০ মন করে ১২০ মন ধান ফলেছে। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানে আদ্রতা একটু বেশি এবং চিটা থাকলে সরকারি গুদামে ধান নিতে চায় না। এছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে দৌড় ঝাপ করতে হয় বলে সে জানতে পেরেছে। আর এবছর হাট-বাজারে ধানের মূল্যে বেশি ছিল। সে কারণে তিনি সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না।
বাগেরহাট সদরের বারুইপাড়া গ্রামের শেখ মুহাম্মদ মিজান জানান, দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছে। ধান মারাই করার পর বাড়ি থেকে ব্যাপারী এসে ধান ক্রয় করে নিয়ে গেছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হয় এমন খবর তিনি জানেন না।
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে আশা জেগেছে বাগেরহাটের চাষিদের, টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শাকিল আহমেদ জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে কৃষি কার্ড অথবা আইডি কার্ড থাকতে হবে। এর পর কৃষি বিভাগ থেকে অনুমোদন দেওয়ার পর কৃষকরা জনপ্রতি ১২০ কেজি থেকে ৩ হাজার কেজি পর্যন্ত ধান গুদামে নিয়ে আসতে পারবেন। ধানের আদ্রতা ১৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার প্রতিমণ আমন ধান সংগ্রহের মূল্যে ১ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হলে টাকা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা দেওয়া হবে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শাকিল আহমেদ আরও জানান, জেলায় ৩ হাজার ৯০২ টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলায় এক ছটাকও ধান সংগ্রহ হয়নি। ধান সংগ্রহের সময় প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ চলবে। এই সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে চাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯২ শতাংশ সংগ্রহ হয়েছে বলে তিনি জানান।
এক ছটাকও আমন ধান সংগ্রহ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে শাকিল আহমেদ জানান, হাট-বাজারের তুলনায় সরকার নির্ধারিত সংগ্রহের মূল্য কম হওয়ায় কারণে চাষিরা ধান বিক্রি করার জন্য তাদের কাছে আসছেন না। এছাড়া মুক্তবাজার অর্থনীতি হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের অধিকাংশ ধান উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়েছে। ফলে ধানের স্বাভাবিক সহজলভ্যতা ছিল না।
হাট-বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয়ের পরামর্শ দিলেন ওই খাদ্য কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ১২শ’ পাখি উদ্ধার, ফিরল আপন ঠিকানায়
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান, জেলায় এবছর ৭৩ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। মোট দুই লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। জেলায় মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮ জন কৃষক পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার আমন ধান চাষি রয়েছেন। এবছর জেলায় আমন ধানের ফল ভাল হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে আরও সহজে ধান ক্রয়ের পরামর্শ দিলেন কৃষি কর্মকর্তা।
৩০৯ দিন আগে
জৈন্তাপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন, সেচ-পরিবহন সমস্যায় কৃষকরা
শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেটের জৈন্তাপুরের বিভিন্ন হাওর ও পাহাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় চাষ হওয়া তরমুজ বাজারজাতের পাশাপাশি ট্রাকে করে যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে।
সরজমিনে দেখা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর তীরবর্তী সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারিঘাট দক্ষিণ বাজার এলাকায় রাস্তার দুই পাশে বিশাল তরমুজের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যাবসায়ীরা।
দিনভর চলছে বেঁচাকেনা। কোনো কোনো সময় পিকনিকে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা গাড়ি থামিয়ে তরমুজ কিনছেন। আবার ব্যাপারীরা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে তরমুজ ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এ বছরের পুরো উপজেলায় তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৭০ টন, যা ইতোমধ্যে অর্জিত হওয়ার পথে।
আরও পড়ুন: রাঙ্গামাটিতে আনারসের ব্যাপক ফলন, হতাশায় কৃষকরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬৫০ জন কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তাদের মধ্য ১১০ জন কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রদর্শনী। পাশাপাশি প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে বীজ, সার ও বালাইনাশক।
তবে সবচেয়ে আশার কথা হলো, তিন থেকে চার বছর আগে জৈন্তাপুর উপজেলায় বছরের পর বছর অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকা বিন্নাউরা জমিগুলোতে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। সে সময় উপজেলার ২০ হেক্টর অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে আরও ৫ হেক্টর অতিরিক্ত অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরও জানানো হয়, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় বাংলালিংক, আনারকলি ও গ্লোরী জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয় নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে। এ মৌসুমে নিজপাট ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ইউনিয়নের মধ্যে চারিকাঠায় ১৫ হেক্টর, দরবস্ত ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর, ফতেহপুর ইউনিয়নে ৩ হেক্টর ও চিকনাগুল ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়।
২ নম্বর জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালমান আহমেদ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি চাতলারপাড় এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসে ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার মোট উৎপাদন খরচ হয় ২ লাখ টাকার মতো। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তরমুজ তিনি বিক্রি শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ তিনি বিক্রি করেছেন। মৌসুমের শেষে আরও ৪ লাখ টাকার ফসল বিক্রির আশা করছেন তিনি।
তবে তিনি লাভের পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও তুরে ধরেন। এরমধ্যে অনত্যমত হলো এই অঞ্চলে পানি সেচের জন্য জ্বালানি খরচে কিছু বাড়তি টাকা ব্যয় হয়। তাছাড়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় তরমুজ পরিবহনে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
তিনি আরও বলেন গত তিন মাসে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে তার মাঠে পাঁচজন কৃষক কাজ করে থাকেন। তাদের দৈনিক মজুরি ৭০০ টাকা।
একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ভিত্রিখেল এলাকার কৃষক নুর উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাকে তরমুজের উপর প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বছর সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার ব্যয় হয় ১ লাখ ৪ হাজার টাকার মতো। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার তরমুজ। মৌসুমের শেষে আরও ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বলেও আশাবাদী তিনি। সেই সঙ্গে ভিত্রিখেল এলাকায় তরমুজ চাষে সেচ ও পরিবহনসহ কিছু সমস্যার কথা তিনি তুলে ধরেন।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে সেচের সুবিধা না থাকার কারণে ভার দিয়ে বহন করে পানি এনে তরমুজ গাছে দিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ১৫০ ফুট হেঁটে ভার বহন করে পানি আনতে হয় কৃষকদের। সরকারি খরচে একটি ডিপটিউবয়েল স্থাপন করা অথবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ভর্তুকি দিয়ে একটি সেচ পাম্প সরবরাহের আহ্বানও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উচ্চ মূল্য ফসল প্রদর্শনী প্রযুক্তিতে কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জৈন্তাপুর থেকে ক্লাইমেট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যনেজমেন্ট প্রকল্প (ডিএই অংশে)'র বাস্তবায়নে কৃষি ও কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে বীজ, সার ও বালাইনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়াসহ ফসলের মাঠ তদারকিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে থাকেন।
আরও পড়ুন: কয়রায় সরিষার রেকর্ড চাষাবাদ, বাম্পার ফলন
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনাবাদি বিন্নাউরা ২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করে সফলতা অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে উপজেলার অনাবাদি বিন্নাউরা জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
৩১০ দিন আগে
ঐতিহ্যের তালপাখা, ব্যস্ত বাগেরহাটের কারিগররা
ঋতুতে বসন্ত। এখনও কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হয়। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে গরম আসছে। গরমের মধ্যে শরীর শীতল করতে তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে। তালপাতার পাখার নাম শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। প্রযুক্তির এই যুগেও গ্রীষ্মকালে শহর,বন্দর, গ্রামগঞ্জে এখনও তালপাতার পাখার ব্যবহার রয়েছে। তালপাতার পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়াতে এরই মধ্যে গ্রামে গ্রামে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পরে হাট-বাজার, মেলাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে দোকানে দোকানে নানা রঙের তালপাতার পাখা দেখা মিলবে। যুগযুগ ধরে তালপাতার পাখা তৈরিতে খ্যাতি রয়েছে বাগেরহাটের ফকিরহাটের মানসা গ্রামের। এখানে তালপাতার পাখা তৈরি করে জীবন চলে অনেকের। এখন ওই গ্রামের কয়েকটি পরিবার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শুক্রবার(২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নের মানসা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তালগাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঁচা পাতা কেটে মাঠ-ঘাটসহ বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় রোদে শুকানো হচ্ছে। শতশত তালের পাতা যেখানে সেখানে ছড়ানো রয়েছে। আবার কোনো কোনো স্তুপ করে রাখা রয়েছে পাতা। রিক্সাভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা পাতা আনা হচ্ছে গ্রামে। দিনে রোদ আর রাতে শিশির মাখার পরের দিন ওই পাতা কেটে মাপমতো আকার দেওয়া হচ্ছে। এর পর পাখা তৈরির কারিগড় নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজনের হাত বদল হয়ে তালপাতার পাখা পূর্নতা পাবে।
আরও পড়ুন: বর্ণিল আয়োজনে ঢাবিতে বসন্ত বরণ
তালগাছের নানা ব্যবহার রয়েছে আমাদের সমাজে। তালগাছ, তালপাতা এবং তালপাতার পাখা নিয়ে গান, গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ রয়েছে। তালগাছের নানা ব্যবহারের পাশাপাশি নানা গল্পকাহিনী রয়েছে।
মানসা গ্রামের তালপাতার পাখা তৈরির কারিগড় নয়ন ফকির জানান, তাদের গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার সরাসরি তালপাতার পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। বংশপরম্পরায় তারা তালপাতার পাখা তৈরি করে আসছে। তাদের গ্রামে তৈরি তালপাতার পাখার অনেক সুনাম রয়েছে। একারণে হাটে-বাজারে তাদের তৈরি পাখার ব্যাপক চাহিদা। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন থেকে তাদের গ্রামে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন পাখা তৈরির প্রাথমিক কাজ চলছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের হাতে পরিপূর্ণভাবে পাখা তৈরি হবে।
নয়ন ফকির আরও জানান, প্রথমে তারা কাঁচা তালপাতা ক্রয় করে বাড়িতে এনে একদিন রোদে শুকায় এবং একরাত শিশিরে রাখে। এর পর কেটে পাখার মাপমতো করে স্তুপ দিয়ে রাখা হয়। তার পর বাঁশ, রঙ এবং সুতার ব্যবহার করে একাধিক হাত বদল হয়ে পরিপূর্ণ পাখা তৈরি হয়। পাইকারদের অর্ডার অনুযায়ী ছোট-বড় নানা সাইজের বিভিন্ন রকম পাখা তৈরি করেন তারা।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় আবারও জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা
৩১০ দিন আগে
আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ রোধে মাথা ব্যথা নেই সরকারের
জালের মতো অলিগলিতে পরিপূর্ণ ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের একটি। উন্নয়নের জোয়ারে দূষণে হাবুডুবু খাচ্ছে এই নগরীর বাসিন্দারা। কবে যে সতেজ বাতাসে তারা প্রাণভরে শ্বাস নিয়েছেন, অনেকেই তা ইয়াদ করতে পারবেন না। এর ফলে শহরে প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকায় লাখো প্রাইভেটকার, বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান ও ডবল ডেকার বাসসহ হরেক রকমের গাড়ি প্রতিটি মুহূর্তে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এসব গাড়ি থেকে কালো মেঘের মতো বেরিয়ে আসে ধোঁয়া।
এর পাশাপাশি নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও কলকারখানার দূষণ ঢাকার বাতাসকে আরও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। এসবের সঙ্গে এসে মিশছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দূষিত বায়ু।
বাংলাদেশের মোট বায়ুদূষণের ৩৫ শতাংশই আশপাশের দেশগুলো থেকে আসছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আন্তঃদেশীয় এই দূষণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে ঢাকায় এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা বাসিন্দাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের একটিতে রূপান্তরিত হয় ঢাকা। বর্তমানে এই শহরে গড় গাড়ি চালানোর গতি ঘণ্টায় সাড়ে চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির কাছাকাছি।
বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুসারে, ঢাকার বাতাস সবসময়ই বিশ্বের সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর তালিকার উপরের দিকে থাকে। কখনও কখনও তা ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে ওঠে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ২০৯ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। শুধু তা-ই নয়, দূষণের স্কোরে ডবল সেঞ্চুরি পার করেছে বিশ্বের একটিমাত্র শহর—ঢাকা। ঢাকার এই বাতাস নাগরিকদের জন্য ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’।
দূষণ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে বায়ুদূষণের যে সার্বিক অবস্থা ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার এ বছরের জানুয়ারিতে দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ঢাকায় জানুয়ারিতে একাধিক দিন বায়ুদূষণের মান ৩০০-এর বেশি হয়েছে।
২০২৩ সালে বাংলাদেশে পিএম ২.৫ মাইক্রোনের গড় ঘনত্ব ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বার্ষিক বায়ুমান নির্দেশনার চেয়ে ১৬ গুণ বেশি।
আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম জানান, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে যে দূষণ বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে সেইসব দেশে যে দূষণ যায়, সেটিই হচ্ছে আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ।
আন্তঃসীমান্ত দূষণের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘হিমালয় থেকে, আবার ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও চীনের একটি অংশ থেকে দূষণ বাংলাদেশে আসে। এতে পুরো বাংলাদেশের ওপর দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। শীতকালে এটা বেশি আসে।’
ড. আবদুস সালাম বলেন, ‘পার্টিকেল যত ফাইনেস্ট (সূক্ষ্ম) হবে, তত বেশি সময় ধরে তা বাতাসে ভেসে বেড়াতে ও দ্রুত ভ্রমণ করতে পারবে।’
গত ২৫ বছর ধরে বায়ুদূষণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপক।
তিনি আরও বলেন, ‘শীতকালে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এ দূষণ বাংলাদেশে আসে। বর্ষাকালে কিছু জিনিস বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়। বাংলাদেশে যদি ১০০ শতাংশ বায়ুদূষণ থাকে, তার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসে বাইরের দেশ থেকে।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আইনুন নিশাত বলেন, ‘বাতাসের যে গতিবেগ, তাতে ভারত থেকে দূষণ আসাটা স্বাভাবিক। একসময় উত্তর দিক থেকে, আবার একসময় দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস (বাংলাদেশে) আসে। এই প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব দিক থেকেও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়। এই সময়ে আমাদের পাশের দেশ ভারতের দূষিত বায়ুর কিছু অংশ আমাদের এখানে আসে।’
তিনি বলেন, ‘এটা আসে প্রাকৃতিকভাবে, তারা যে জোর করে দূষণ পাঠায়—এমন না। এ অঞ্চলের সবাই যদি বায়ুদূষণ রোধ করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
রাস্তার ধুলা বায়ুদূষণ নয়!
অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, রাস্তার ধুলাই বায়ুদূষণ, কিন্তু সেটা ঠিক নয়। রাস্তার ধুলা বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া বায়ুদূষণ নয়। রাস্তার ধুলা বড় বড় পার্টিকেল (কণা), এগুলো নাকের ভেতরে ঢুকতে পারে না। যেগুলো নাকের মধ্যে ঢুকতে পারে না, সেগুলো মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন তিনি এভাবে, ‘পার্টিকেলের (কণা) আকার যত ক্ষুদ্র হবে, সেটা ততই ক্ষতিকর হবে। বড় পার্টিকেলগুলো নাকের মধ্যে ঢোকে না, যে কারণে মানুষের তত ক্ষতি করে না। রাস্তার ধুলা পাবলিক ন্যুইসন্স (অস্বস্তি) তৈরি করে মাত্র, এটা সত্যিকারের বায়ুদূষণ নয়।’
তার মতে, বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
তিনি বলেন, ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) দুই দশমিক পাঁচ কিংবা তার চেয়ে ছোট এক মাইক্রোমিটারের সমান, যেটাকে আল্ট্রাফাইন পার্টিকেল বলে। সেগুলো মানুষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আল্ট্রাফাইন পার্টিকেল একেবারে ছোট আকারের। এর মধ্যে কিছু আছে, যেগুলো আজকে গ্যাস থাকে, কাল পার্টিকেলে রূপান্তরিত হয়—সেগুলো মানুষের ক্ষতি করে।’
‘সিএনজি মেশিন ট্রিলিয়নের বেশি আল্ট্রাফাইন পার্টিকেল তৈরি করে। তারপর বড় বড় গাড়ি থেকে ব্ল্যাক কার্বন, ব্রাউন কার্বন ও পার্টিকেলসহ সবকিছু নির্গত হয়। পুরোনো প্রাইভেটকার থেকেও এসব দূষণ বের হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই কারণে এটা বের হয়। তার একটা হচ্ছে, এগুলো পুরনো, আরেকটা হচ্ছে এগুলোর কলকব্জা ঠিকমতো কাজ করে না।’
‘গাড়ি যত পুরোনো হয়, তত তার কানভার্শন এফিশিয়েনসি (রূপান্তর ক্ষমতা) কমে যায়। এতে দূষণ বাড়তে থাকে।’
৩১১ দিন আগে
টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন সিলেটের
বাংলাদেশে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দৈনন্দিন বাড়তি বর্জ্যের পরিমাণ চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে পরিবেশ দূষণ, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ডাম্পিং রোধে কার্যকর, টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। উন্নত দেশগুলো যখন এই বর্জ্যকে সম্পদে রুপান্তর করছে—আমরা তখন সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হিমশিম খাচ্ছি।
এশিয়া ইউরোপ ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি ১৫ বছরে এর শহুরে বর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুন হচ্ছে। বাংলাদেশে ৯০’র দশকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৬ টন মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট তৈরি হতো, যা ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুসারে ২৫ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর জন্য এই বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই যখন সামগ্রিক চিত্র, তখন টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনন্য এক উদাহরণ তৈরি করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। দেশের প্রথম এবং একমাত্র সিটি করপোরেশন হিসেবে বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনায় কর্তৃপক্ষ লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির একটি ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি। এই ফ্যাসিলিটি স্থাপনে এবং বর্জ্যের টেকসই সমাধানে সিলেট সিটি করপোরেশন পাশে পেয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশকে। একটি প্লাস্টিক ও পলিথিন মুক্ত শহর সিলেটবাসীকে উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করছে তারা।
সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৭৫ টন বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য তৈরি হয়, যার একমাত্র ঠিকানা লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ড। বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এই বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংগ্রহ করেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। সংগ্রহের পর কিছু রিসাইক্লেবল পণ্য তারা আলাদা করেন এবং বিক্রি করেন। বাকী সকল অপচনশীল বর্জ্য নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা হয় এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে যার আয়তন প্রায় ৮ একর যেখানে ডাম্প করা রয়েছে আনুমানিক ৮ লাখ টন বর্জ্য। এই বর্জ্যের টেকসই সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
সিলেট সিটি করপোরেশন এর প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলীম আবদীন এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী কোনো সমাধান আসেনি।
বাংলাদেশে একমাত্র লাফার্জহোলসিম’র ছাতক প্ল্যান্টে আমদানি বিকল্প পণ্য ক্লিংকার উৎপাদন হয়। ক্লিংকার তৈরির সুবিধা থাকায় এই প্ল্যান্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ রয়েছে। এর সুবিধার নাম জিওসাইকেল।
বাংলাদেশে জিওসাইকেলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক লতিফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেট সিটি করপোরেশনের সঙ্গে টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। এরপর শুরু হয় সিলেটে লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি বসানোর কাজ। ফ্যাসিলিটি বসানোর পর তা উদ্বোধন করা হয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং এখান থেকে বর্জ্য নেওয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের মে মাসের ১৪ তারিখে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে মশার উপদ্রব, নগরজুড়ে উদ্বেগ
লতিফুর রহমান আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে ৬০ টনেরও বেশি বর্জ্য এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে ছাতকে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। আগামীতে এর পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির। এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল দ্রব্য বিশেষ করে প্লাস্টিক ও পলিথিন পৃথক করা হয় এই ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে। তারপর কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা নিয়ে যাওয়া হয় সিমেন্ট প্ল্যান্টে।
এই ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সকল বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করতে সাত থেকে আট বছর সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
সিমেন্ট প্ল্যান্টে এই বর্জ্যগুলো নিয়ে তা সিমেন্ট কিল্নে প্রেরণের উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর তা বিশেষ একটি ফিডারের মাধ্যমে সিমেন্ট কিলনে পাঠানো হয়। এই কিলনে ক্লিংকার তৈরির জন্য প্রয়োজন ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রায় সমস্ত বর্জ্য কো-প্রসেস হয়ে যায় যার কোনো অবশিষ্ট পরিবেশে ফেরত আসে না। বর্তমানে জিওসাইকেল প্রযুক্তির মাধ্যমে বছরে প্রায় এক লাখ টন বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। এর সক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে কোম্পানিটি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘লাফার্জহোলসিম জিওসাইকেল প্রযুক্তির মাধ্যমে যে সেবা দিচ্ছে তা প্রশংসার দাবিদার। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবিহীন একটি সবুজ নগরী উপহার দেওয়ার যে লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জনে লাফার্জহোলসিম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘লাফার্জহোলসিম সবসময়ই টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে। কোম্পানির টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমাধান জিওসাইকেল পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদিত এধরনের একমাত্র পদ্ধতি। এর মাধ্যমে আমরা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধা দিয়ে আসছি। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি বর্জ্যবিহীন দেশ উপহার দেওয়া।’
একই পদ্ধতিতে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোকে সহযোগিতা করতেও কোম্পানিটি আগ্রহী বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট সিটি করপোরেশনের ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি ও ছাতকে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের সিমেন্ট প্ল্যান্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ঘুরে দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করার পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনে এই ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানান, ‘অতীতে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করলেও সফলতা আসেনি। লাফার্জহোলসিমের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি বাস্তবসম্মত এবং এর মাধ্যমে উভয়েই লাভবান হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোর জন্য উদাহরণ হতে পারে।’
এই প্ল্যান্টের কার্যক্রম সচল রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণও করেন তিনি।
এশিয়া ইউরোপ ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে যে পরিমাণ বর্জ্য প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে— তার শতকরা ৫৫ ভাগ যেখানে সেখানে ফেলা হয়। আর যতটুকু সংগ্রহ করা হয়, তার বড় একটা অংশ মাটিতে স্তুপ করে রাখা হয় কিংবা পুড়িয়ে ফেলা হয়—যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর নেতিবাচক ফলাফল আমরা ভোগ করছি প্রতিদিন। যার অন্যতম উদাহরণ হতে পারে জলাবদ্ধতা। শহরগুলোর খাল, ডোবা এবং ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে না, অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় হলো—সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
ইউএনএফপিএ'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অবস্থার জন্য প্রধান কারণ হলো দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে এই সমস্যাটি বাড়তে থাকবে।
আরও পড়ুন: মানহীন হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকিতে দেশ
৩১১ দিন আগে
রাঙ্গামাটিতে আনারসের ব্যাপক ফলন, হতাশায় কৃষকরা
সুস্বাদু হানি কুইন জাতের আনারসের জন্য রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বিখ্যাত হলেও কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় আগাম হানি কুইন আনারসের ব্যাপক ফলন হয়েছে। তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় সংকটে পড়েছেন চাষিরা। ফলে বাগানেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে পাকা হানি কুইন আনারস।
রাঙ্গামাটি জেলায় সাধারণ জায়েন্ট কিউ ও হানি কুইন নামের দুই জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। জেলার নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও বরকলসহ বিভিন্ন উপজেলায় হানি কুইন জাতের আনারস বেশী চাষ হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলার খামাড়ি ঢলা চান চাকমা বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে এবছর ব্যাপকহারে হরমোন প্রয়োগ করায় আগাম হানি কুইন জাতের আনারসের ব্যাপক ফলন হয়েছে। মূলত মে ও জুন মাসে আনারস বাজারে আসলেও এবার জানুয়ারিতেই আনারস বাজার আসতে শুরু করেছে।
নানিয়ারচর উপজেলার খামারি আব্দুল করিম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিশেষ পদ্ধতিতে হরমোন ব্যবহার করে সারা বছর উৎপাদন হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল এই জাতের আনারস। আকারে বড়, স্বাদে মিষ্ট হলেও বাজারে এই আনারসের ক্রেতা নেই। দাম কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
কৃষক ও বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত আনারস কৃষকরা ইঞ্জিন বোটে করে রাঙ্গামাটি শহরের সমতাঘাট, তবলছড়ি, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং রির্জাভ বাজারে নিয়ে আসছে। সেখান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে ট্রাকে করে জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই আনারসের দাম পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষক ও বিক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
৩১৩ দিন আগে
কুমিল্লার চান্দিনায় বেহাল সড়কে ভোগান্তিতে ৫ গ্রামের মানুষ
কুমিল্লার চান্দিনায় মাত্র দেড় কিলোমিটার সড়কের ভগ্ন দশায় এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। উপজেলার এতবারপুর থেকে মাইজখার পর্যন্ত ওই আঞ্চলিক সড়কটি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রয়েছে বেহাল অবস্থায়। শীতকালে ধুলা-বালি আর বর্ষায় কাদা পথচারীদের প্রতিনিয়তই ফেলছে বিপদে। পরিবেশ দূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন স্কুলগামী কোমলমতি শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা। সড়কের এই অংশটি মেরামত করে পিচঢালাই করা হলে গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।
আরও পড়ুন: নরসিংদীতে বাইপাস সড়ক নির্মাণ বন্ধে চার দিনের আল্টিমেটাম
পূর্ব মাইজখার মহিলা দাখিল মাদরাসা থেকে আলীকামোড়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ও চিলোড়া বাশার হুজুরের বাড়ির পূর্ব পাশ থেকে চিলোড়া বাজার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। কয়েকবছর আগে ইটের সলিং করা হলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ইট নষ্ট হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সড়কটিতে। কয়েক জায়গায় পুকুর ও মৎস্য প্রকল্পের কারণে পাড় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সড়কটি, ফলে অনেক স্থান ভেঙ্গে গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা করেন মাইজখার, পূর্ব অম্বরপুর, চিলোড়া, আলীকামোড়া, এওয়াজবন্দসহ আশেপাশের গ্রামগুলোর প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে এই মানুষগুলো আরও দুর্ভোগে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৩১৪ দিন আগে