বিশেষ-সংবাদ
রপ্তানিতে আশা জেগেছে বাগেরহাটের চাষিদের, টমেটো যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়
বাগেরহাটে শীত মৌসুমের শেষ দিকে এসে টমেটোর ক্রেতা খুব একটা পাওয়া যাচ্ছিল না। হাট-বাজারে টমেটোর যেন ছড়াছড়ি। চাহিদা কমে যাওয়ায় কোনো কোনো চাষি জমি থেকে টেমেটো তোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চাহিদা মতো মূল্য না পাওয়ায় চাষিরা টমেটো চাষে আগ্রহ হারাতে বসেছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে বাগেরহাটের টমেটো চাষিদের ভাগ্যে খুলতে শুরু করেছে।
ভাগ্য বদলের সূচনাটি হয়েছে বিদেশে টমেটো রপ্তানির মাধ্যমে। বাগেরহাট থেকে বিদেশে টমেটো রপ্তানি এটিই প্রথম উদ্যোগ। এরই মধ্যে বাগেরহাটের চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করে ৪০ টন টমেটো মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। দেশি বায়ারের মাধ্যমে এসব টমেটো রপ্তানি করা হয়। আগামী ৪দিনের মধ্যে আরও ২৬ টন টমেটো রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। রপ্তানির খবরে চাষিরা টমেটো চাষে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। রপ্তানিকারকদের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকার টমেটো চাষিদের যোগাযোগ করার কাজ চলছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। টমেটোর পাশাপাশি আগামীতে বাগেরহাট থেকে নানা ধরণের সবজি বিদেশে রপ্তানি হবে— এমন আশার কথা শুনিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ।
যেসব জাতের টমেটো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, বাহুবলী, বিউটিফুল-২,বিপুল প্লাস, পিএম-১২২০, এবং মিন্টু সুপার। এসব টমেটো উচ্চ ফলনশীল জাতের এবং সুস্বাদু।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিন ধরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে,বিভিন্ন এলাকায় জমিতে এবং মৎস্যঘেরের পাড়ে গাছে গাছে কাঁচা-পাকা টমেটো ঝুলছে। অনেক জমিতে নারী-পুরুষ মিলে গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলছেন। আবার মূল্য কম থাকার কারণে কোনো কোনো জমির টমেটো না তোলায় গাছে শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। হাট-বাজারে টমেটোর ছড়াছড়ি। ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে হ্যান্ডমাকিং করে টমেটো বিক্রি করা হচ্ছে। হাটে-বাজারে খুচরা কেজি প্রতি টমেটো ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও পাইকারিতে এর অর্ধেক দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরই বাগেরহাটে শীত মৌসুমের এই পর্যায়ে (ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে) চাষিদের টমেটো বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়। একারণে চাষিরা দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট থেকে টমেটো রপ্তানির জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল।
বাগেরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবছর দুই হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৩৫ টন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে জেলায় এবছর ৭৭ হাজার ৩৫০ টন টমেটো উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হেক্টর প্রতি ৪০ টন পর্যন্ত টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এখনও গাছে গাছে টমেটো ঝুলছে। একথায় বাগেরহাটে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিতলামারী উপজেলায় ৮৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শ্যামপাড়া গ্রামের মাধব মন্ডল জানান, এবছর সে তিন বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি। টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। টমেটোর চাহিদা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। একারণে পাকা টমেটো ঝরে পড়ছে মাটিতে। টমেটো চাষ করে এবছর তাকে লোকসান গুনতে হবে।
চিতলমারীর চড়বানিয়ারি গ্রামের আরেক চাষি শৈলেন নাথ জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছে। তার ৮ বিঘা জমিতে গাছে গাছে পাকা টমেটো ঝুলছে। এখন পাইকারি বাজারে ৩ থেকে চার টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। যে দামে টমেটো বিক্রি হচ্ছে তাতে করে টমেটো তুলতে শ্রমিকের মজুরির টাকা উঠছে না। একারণে টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে এসে তার মতো এলাকার সব চাষিদের টমেটো নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিক্রি করতে না পারায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে টমেটো নষ্ট হচ্ছে। টমেটো বিদেশে রপ্তানি করার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বরগুনায় ১৪৭ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১৪, যোগদান করেননি ৯ জন
৩২৮ দিন আগে
বরগুনায় ১৪৭ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত ১৪, যোগদান করেননি ৯ জন
বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। আর ১৪ জন রয়েছেন অনুমোদিত ছুটিতে। চিকিৎসক সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলায় ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হলেও যোগদান করেছেন মাত্র ৪জন। এতে জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা।
১২ লক্ষাধিক জনসংখ্যার উপকূলীয় এ জেলার চিকিৎসা সেবার ভঙ্গুরতা ও চিকিৎসক সংকট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বাসিন্দাদের মধ্যে। স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ জবাবদিহিতা না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোরতা অবলম্বন করলে পদায়নকৃত চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করতে বাধ্য হতো।
প্রায় ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপকূলীয় জেলার সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও জনবল পদায়নের দাবিতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো প্রতিকার ও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন অফিসে মোট ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২৮ জন। এর মধ্যে আবার ১৪ জন অনুমোদিত ছুটিতে থাকায় বর্তমানে কর্মস্থলে আছেন মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক। এর উপর আবার রয়েছে অন্যান্য জনবলের সংকট।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জেলায় ১৩ জন নতুন চিকিৎসককে পদায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু, তাদের মধ্যে যোগদান করেছেন মাত্র ৪ জন। আর বাকীরা এখনো যোগদান করেননি। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
জেলার পাথরঘাটা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজে-কলমে কর্মরত মাত্র ৪ জন। তাদের মধ্যে আবার ২ জন আছেন অনুমোদিত ছুটিতে। এছাড়া বাকি দু’জনের মধ্যে একজন এম. এস. রেসিডেন্সি কোর্সে যাবেন। বাকী একজন দিয়ে চলবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বামনা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৫ জন। কিন্তু একজন অনুমোদিত ছুটিতে এবং আরেকজন যাবেন এমডি কোর্সে। বেতাগী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছে ৫ জন। তার মধ্যে একজন অনুমোদিত ছুটিতে, একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং আরেকজন এমডি কোর্সে যাবেন। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৪ জন। যার মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং আরেক এমডি কোর্সে যাবেন। তালতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। এছাড়া বরগুনা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৩ জনের বিপরীতে ৭ জন থাকলেও তাদের মধ্য থেকে ৪ জন বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং সিভিল সার্জন অফিসের ২ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে আছেন মাত্র একজন।
গেল বছরের ১৮ ডিসেম্বর বরগুনার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করার পরও যোগদান না করা চিকিৎসকরা হলেন- ডা. নুর-ই জান্নাতুল ফেরদৌস, ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. পথিক বিশ্বাস, ডা. মো. রাকিবুল হাসান, ডা. মানা শায়ন্তা ঘোষ, ডা. রাফসানা রউফ, ডা. মো. ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. মো. সাইফুর রহমান ও ডা. বুশরা নওরীন।
আরও পড়ুন: বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন
বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ চিকিৎসককে পদায়ন করার পরও তারা যোগদান করছেন না। তার দাবি, চিকিৎসকদের যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারার কারণে এমন সুযোগ নিচ্ছেন তারা।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সুদীর্ঘ বছর স্বাস্থ্য বিভাগে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই। যার কারণে ইচ্ছেমত নিয়োগ অথবা বদলির রেওয়াজ চলমান।
তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরি করে সরকারের নির্দেশনা মানবেন না এটা হতে পারে না। এখান থেকে বেড়িয়ে না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সুফল আসবে না।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘বরগুনা জেলায় চিকিৎসক সংকট তীব্র। এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে ১৮ ডিসেম্বর ১৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৪জন যোগদান করলেও বাকীরা এখনো যোগদান করেনি। এ বিষয়ে দু’দফায় চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বদলি আদেশে ৩ দিনের মধ্যে যোগদান করার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী এটা তারা করতে পারেন না।’
আরও পড়ুন: চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউয়ের ১৫ জন বরখাস্ত
৩২৯ দিন আগে
লুটপাটে কাজে আসছে না ‘মুহুরী সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’
ফেনীর মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হয়েছে লুটপাট। এ যেন পুকুর নয়, সাগরচুরির গল্প। নিজ দেশে দেউলিয়া জার্মানির একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে এ প্রকল্পের ঋণের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে পালিয়েছে। এর ফলে কৃষকের কাজে আসছে না ৫৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্প।
এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও কৃষকরা বলছেন কোনো কাজেই আসছে না। মাঠে অবকাঠামো থাকলেও স্কিমগুলো অকেজো হয়ে আছে। গত আগস্টের বন্যাকে দায়ী করছেন কর্তৃপক্ষ। পানির অভাবে মাঠ এখন শুকিয়ে চৌচির। কৃষকরা আবাদ করতে পারছে না ধানসহ অন্যান্য ফসল।
প্রকল্পের তথ্য মতে, বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে খাল থেকে জমিতে সেচের পানি সরবরাহ পদ্ধতি চালু করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ফেনীতে মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মাঝে করোনার কারণে বছর দুয়েক কাজ বন্ধ থাকে। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অর্থায়নে এ প্রকল্পের ৯টি প্যাকেজের মাধ্যমে এ প্রকল্পে কাজ করে। ফেনী জেলার পাঁচটি উপজেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৬ ও ৭ নম্বর প্যাকেজের প্রাক্কলিত মূল্যের ১৩ শতাংশ বেশি মূল্যে প্রায় ১৫৭ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার কাজ পান জার্মানির লুডভিগ ফাইফার হোচ-উন্ড টিফবাউ জিএমবিএইচ অ্যান্ড কোম্পানি কেজি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ফেনীর মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের ৫৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের ৮৫০টি স্কিমের মধ্যে হস্তান্তর হয়েছে ৩৩৭টি স্কিম। এর মধ্যে চালু হয়েছে মাত্র ২৬৮টি। যেগুলো চালু হয়েছে সেগুলোর সিংহভাগই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রকল্পের ৬ ও ৭ নম্বর প্যাকেজে ফেনীর পাঁচটি উপজেলা ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এ পর্যন্ত সেচ সুবিধা পেয়েছে মাত্র প্রায় ৩ হাজার হেক্টর।
প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী এক নম্বর গ্রেডের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন নম্বর গ্রেডের ইট দিয়ে গাঁথুনি ও কংক্রিট দিয়ে ঢালাই কাজ করা হয়। কিছু জায়গায় ছাদ ঢালাইয়ের কাজে পাথরের পরিবর্তে নিম্নমানের কংক্রিট দিয়ে ঢালাই কাজ সম্পন্ন করা হয়। ভিটি বালূ দিয়ে প্লাস্টার, গাঁথুনি এমনকি ঢালাইয়ের কাজও করেছেন তারা। কোথাও সিলেকশন বালির ব্যবহার হয়নি। নিম্নমানের ইউপিভিসি পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। ভ‚গর্ভস্থ পাইপের দুই পাশে ও নিচে ৬ ইঞ্চি ওপরে ১২ ইঞ্চি বালি দেওয়ার কথা। মাঠে ড্যামেজ পাইপ ও ওয়েস্টেজ পাইপের টুকরা আগুনে পুড়িয়ে জোড়াতালি দিয়ে স্কিম নির্মাণের ঘটনাও রয়েছে।
স্কিমের নির্ধারিত দৈর্ঘ্যের কম পাইপ স্থাপন করে বাড়তি দৈর্ঘ্য দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়। যার কারণে পানির ওভার ফ্লো হচ্ছে এবং স্কিমের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ডিস্ট্রিবিউশন বক্সে অন্তত ৬০ শতাংশ রড কম ব্যবহার করে ১০০ শতাংশ রডের বিল উত্তোলন করেছে। যেকোনো একটি ডিস্ট্রিবিউশন বক্স চেক করলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ছাদে কার্যাদেশের চেয়ে ৫০ শতাংশ রড কম ব্যবহার করেছে- যা প্রকল্পের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে। নির্মাণকাজে কার্যাদেশ অনুযায়ী রড ব্যবহার না করে নিম্নমানের স্ক্র্যাপ রড, বাংলা রড ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ তদারকির কথা থাকলেও তা হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের ৬ ও ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায় ১৫৭ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ১৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার পর সরকারের কাছে তাদের পাওনা প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে তাদের জামানতের পরিমাণও প্রায় ১৬ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সবশেষ জমা বিলের প্রায় ১৭ কোটি টাকা দেওয়া হলে সরকারের কাছে অবশিষ্ট থাকবে প্রায় ছয় কোটি টাকা। যা জামানতেরও কম
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
সরেজমিনে দেখা যায়, অবকাঠামোর অস্তিত্ব ঠিক থাকলেও পানি সরবরাহের অধিকাংশ স্কিমই অকেজো। কোথাও বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার নেই আবার কোথাও নেই মিটার। ফেনী সদর উপজেলার কালিদহে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করছে- উঠছে না পানি।
আফসার উদ্দিন নামের এক কৃষক বলেন, স্কিম চলবে কিভাবে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারই নেই। কয়দিন পর পর চুরি হয়ে যায়। এই কৃষক জানান, ট্রান্সমিটার চুরির ঘটনায় স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনও জড়িত রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন এ প্রকল্পটিতে চলেছে লুটপাট। পুকুর নয়, সাগরচুরি হয়েছে। কৃষকের স্বার্থে কথা বললেও হয়েছে উল্টোটা। কৃষক তেলের পাম্পে পানি তুলে সেচ দিলেও যে খরচ হয় এই প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থায় খরচ ধরা হয়েছে তার চেয়েও বেশি।
আজগর উদ্দিন নামের সোনাগাজীর আমিরাবাদের এক কৃষক বলেন, আগে তেল দিয়ে পাম্পের মাধ্যমে যেভাবে পানি তোলা হতো। কথা ছিলো সেই খরচ থেকে এই পদ্ধতিতে খরচ কমবে। কিন্তু সেটা না হয়ে হচ্ছে উল্টোটা। পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন বলছে কৃষক এই পর্যন্ত প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না তারা। ৮শ’র অধিক পাম্পের বেশির ভাগ অকেজো। কর্তৃপক্ষ কাজ না করে বন্যার অজুহাত সামনে এনেছেন। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছে দ্রুত সেচ ব্যবস্থা সচল করতে না পারলে প্রভাব পড়বে আবাদে।
মুহুরী সেচ প্রকল্প পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন কামরান বলেন, কাগজে-কলমে ৮'শর বেশি পাম্প থাকলেও তিন শতাধিকের বেশি পাম্প কখোনোই চালু ছিল না। কর্তৃপক্ষ আগস্টের বন্যাকে ক্ষতির জন্য দায়ী করলেও প্রকল্পে লুটপাটের কারণেই এমন দশা।
ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম বলেন, জমিতে ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রলি দিয়ে চাষের পর ভূগর্ভস্থ পানি লাইনে নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারের কারণে অধিকাংশ জায়গায় দেবে গেছে। ফলে সঠিকভাবে পানি প্রবাহ হচ্ছে না। অনেক জায়গায় পাইপ ভেঙে যাওয়ায় পানি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে না।
নুরনবী বলেন, সিমেন্টের পাইপে কোনো রড বা জালি ব্যবহার না করায় পাইপ ফিটিংয়ের সময় অনেক পাইপ ভেঙে গেছে। তা ছাড়া শুকনো মৌসুমে খালে পানি থাকে না। খাল থেকে পানি উত্তোলন করে দেওয়ার এ স্কিমে কৃষকের কোনো উপকারে আসবে না। গভীর নলকূপ হলে কৃষক কিছুটা হলেও সুফল পেত।
একই গ্রামের স্কিম ম্যানেজার আবদুল মতিন বলেন, কৃষকের দেওয়া টাকায় বৈদ্যুতিক প্রিপেইড মিটারে টাকা ঢুকিয়ে কৃষকদের প্রাপ্য পানি তিনি তাদের দিতে পারছেন না। ফলে কৃষকরা তাকে টাকা দিচ্ছেন না। এভাবে বেশি দিন স্কিম চালানো সম্ভব নয়। চালু হওয়া ৮১টি স্কিমের বিষয়ে এমন অভিযোগ কৃষকদের।
কালিদহ এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তৈয়ব বলেন, আগস্ট মাসের বন্যায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সরকারিভাবে সার, বীজ ও প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পানির অভাবে অনেক কৃষক সবজিসহ ধান চাষাবাদ করতে পারছেন না। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কৃষকরা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চলতি বছরের আগস্টসহ কয়েক দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে প্রকল্পটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষে কিছু স্কিম চালু হয়েছিল। কৃষক সুফলও পেতে আরম্ভ করেছিল। কিন্তু, আগস্ট মাসের বন্যা পুরো প্রক্রিয়াকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। সেসব মেরামত করে চালুর চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
ফেনীতে কৃষিখাতের উন্নয়নে ৫৬২ কোটি টাকা বরাদ্দে মুহুরী সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পে (আইএমইপি) অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এরশাদ আলী নামে এক ব্যক্তি। অনিয়ম নিয়ে তার লিখিত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বছরের জানুয়ারিতে তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মাহফুজা আক্তারকে আহ্বায়ক করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব যতন মার্মা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
৩৩০ দিন আগে
সুনামগঞ্জের পাটলাই নদীতে নৌজটের পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর তাহিরপুরের অধিকাংশ ব্যবসায়ী কয়লা ও পাথর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। উপজেলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বালু-পাথর আর কয়লা। উপজেলার সীমান্ত নদী পাটলাইয়ে নাব্যতা সংকটে তৈরি হয়েছে নৌজট। বর্ষায় ভারতের পাহাড় থেকে আসা পলিতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে এই সহজ নদীপথে প্রতিবছর আটকা পড়ে শত শত পাথর ও কয়লাবাহী নৌযান। নদীর মাঝে আটকে খাবার-দাবার ছাড়াই অসহায়, নিরাপত্তাহীনতা দিন কাটাতে হয় নৌ শ্রমিকদের।
বিগত কয়েক বছর ধরে নদীতে নৌজট লেগে দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ। প্রত্যেক বছরই ভেকু দিয়ে নদী খনন করে সাময়িক নৌজট ছাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, ভেকু দিয়ে খনন কাজের সময় মাটি নদীর পাড়ে রাখতে হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাড়ে রাখা মাটিগুলো আবার নদীতে পড়ে তলদেশ ভরাট করে ফেলে। এর স্থায়ী সমাধান কেন হচ্ছে না— এর কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসে নানা অভিযোগ।
অভিযোগ আছে, একটি সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে নদীতে মাটি, বালুর বস্তা ফেলে নৌজট লাগিয়ে রাখছে। নৌজটের স্থায়ী সমাধানের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিলে সেটাও আটকে দেয় অভিযুক্তরা। অভিযুক্ত হিসেবে সামনে আসছে সাবেক ও বর্তমান দুই সহোদর মেম্বারের নাম। আর তাদের পেছনে কলকাটি নেড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারাও। অভিযুক্ত স্থানীয়রা ড্রেজিংয়ে বাধা দিলে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও সহায়তা পায়নি বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ সুনামগঞ্জের সদ্য বিদায়ী সহকারী পরিচালক সুব্রত সাহা বলেন, নৌজট থেকে মুক্তি পেতে গত বছর সুলেমানপুর এলাকায় পাটলাই নদীতে আড়াই কিলোমিটার এলাকা ড্রেজারের মাধ্যমে খনন করার উদ্যোগ নেই আমরা। এতে বাধা দেয় সিরাজ ও এমদাদ মেম্বার নামের দুইজন। লোকজন দিয়ে মানববন্ধনও করায়। সুলেমানপুরের পিছনে খেয়াঘাটের কাছে ড্রেজার নিয়ে আসলে, বাঁশের সেতুর কারণে ড্রেজার ঢুকতে পারেনি। খুলে দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমাকে জানালেও তিনি কোনো সহযোগিতা করেননি। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করলে মাটি দূরে নিয়ে কোথাও ফেলা যেত। এতে আর মাটি নদীতে ফিরে আসতো না।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে পেঁয়াজের চাষ বেড়ে দ্বিগুণ
তিনি আরও বলেন, এখানে জট লেগে থাকলে স্থানীয় কিছু মানুষের সুবিধা হয়। পণ্যবাহী নৌযান থেকে চাঁদাবাজি করা যায়। জট খুলে দেওয়ার নামে তারা প্রতি নৌকা থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নেন। এজন্য নদীর কিছু জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে বালুর বস্তা, মাটি ফেলে ভরাট করা হয় নৌজট লাগার জন্য।
এই দুর্ভোগ নিরসনে কারোরই সহায়তা পাওয়া যায় না। সহায়তা করলে আমরা সুনামগঞ্জের নদীপথে আরও অনেক কিছু করতে পারতাম। অসহযোগিতার কারণে মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। তবে অভিযুক্ত দুই সহোদর সাবেক মেম্বার সিরাজ ও বর্তমান মেম্বার এমদাদ ড্রেজিংয়ে বাধা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
চাঁদাবাজির বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করে তারা বলেন, এটি কোন নদী নয়। এটি একটি খাল। এখানে ড্রেজিং করে নদী খনন করলে আমাদের হাওর নষ্ট হবে। ফসল রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই আমরা বাঁধা দিয়েছি। আমরা যখন বাঁধা দেই তখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল কর, স্থানীয় যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমানও সঙ্গে ছিলেন। পলাতক থাকায় আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে তৎকালীন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পাটলাই নদীতে প্রত্যেক বছর নৌজট লাগার কারণে ড্রেজিং করে খননের উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। পরে স্থানীয়দের বাঁধায় আর সেই কাজ করা যায়নি।
বিআইডব্লিউটিএএর সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, পাটলাই নদীতে নৌজট লাগায় আমরা লংভুম ভেকু দিয়ে খনন করে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে সুনামগঞ্জের সকল নদীপথে যেখানে চলাচলে বিঘ্ন হবে আমরা সেখানে খনন করব।
আরও পড়ুন: মৃত্যুফাঁদের মহাসড়ক আর কতকাল?
৩৩০ দিন আগে
মৃত্যুফাঁদের মহাসড়ক আর কতকাল?
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মাদরাসাছাত্র ফাহিম। বয়স মাত্র সাত বছর। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ইয়াতিম হয়ে পড়ে সে। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার বাবা-মা, বড় ভাই ও খালাসহ পরিবারের চার সদস্য।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফাহিমের পরিবারকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন।
পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে ফাহিমের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তায় ঝুলে গেছে তার ভবিষ্যৎও।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
পরদিন বাসচালক নুরুন্নবীকে আটক করা হয়। তবে, তদন্তে জানা গেছে, ওই চালকের বৈধ লাইসেন্স এবং বাসটিরও ফিটনেসের ছাড়পত্র ছিল না।
এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো— সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত হারানো প্রাণের একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র।
দুই বছর আগে ফরিদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী ভাইকে হারানো ঢাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ওপর দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। সব অংশীজনকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি।’
উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৬ হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২৯৪ জন নিহত ও ১২ হাজার ১৯ জন আহত হয়েছেন।
সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ পথচারী এবং ১৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী ছিলেন।
শুধু ঢাকায় ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৪৮২ জন আহত হয়েছেন।
দুঃখজনকভাবে, ১৩টি দুর্ঘটনায় স্বামী- স্ত্রী এবং সন্তান একসঙ্গে মারা গেছেন। বছরজুড়ে দুর্ঘটনায় সকল সদস্যের মৃত্যুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অন্তত চারটি পরিবার।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আরেকটি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অস্পষ্ট।
সরকারি পরিসংখ্যানগুলো প্রায়শই কেবল ঘটনাস্থলে মৃত্যুর সংখ্যাটি রেকর্ড করে। তবে পরে হাসপাতালে প্রাণহানিগুলোর হিসাব প্রায়শই বাদ পড়ে যায়।
বিশ্বে ৩০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলোর তথ্য রেকর্ড করা হয়। কিন্তু, বাংলাদেশে সেই ধরনের ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সড়কে নতুন যানবাহনের প্রচলন দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ‘আগে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের এতটা প্রচলন ছিল না। এটিকে গণপরিবহন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়— এখন যা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, অদক্ষ চালকের গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো রাস্তায় ব্যাপকভাবে চলাচল করছে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়।
তালুকদার বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৮০ শতাংশই মাথায় আঘাত পেলেও হেলমেট ব্যবহারের হার বাড়েনি।’
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ কলেজছাত্র নিহত
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্তি গতি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দায়ী।
তিনি গাড়ির গতিতে প্রযুক্তিগত মনিটরিং, চালকদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিকূল কর্মপরিবেশ, অনির্ধারিত মজুরি এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা বেপরোয়া গাড়ি চালান। দুর্ঘটনা কমাতে তাদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।’
তিনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।
এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮
শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রবর্তন করা হয়। আইনটি উদ্দেশ্য ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রাণহানি ঘটটে অভিযুক্তের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।
২০১৯ সালে সরকার যখন আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিল, তখন পরিবহন সমিতিগুলো ধর্মঘট শুরু করে। যার ফলে বেশ কয়েকটি মূল বিধান প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে যায়।
অধ্যাপক তালুকদার বলেন, কোনো আইন বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্যতা, কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা নিরূপণের জন্য শুনানি করা উচিত।
কিন্তু ২০১৮ সালের পথ নিরাপত্তা আইনের কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আইনে একাধিক বিধান থাকলেও একসঙ্গে সবগুলো প্রয়োগ করলে পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে ও সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
তিনি আরও বলেন, আরও ভাল আইনের প্রয়োগে প্রয়োজন। কারণ, অপরাধীরা প্রায়শই প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রক্ষা পায়।
তিনি সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষাকে একাডেমিক পাঠ্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালুর সুপারিশ করেন।
বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ২০২৩ সালের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বেশিরভাগ দেশে, পথচারীদের সুরক্ষার চেয়ে মোটরগাড়ি অগ্রাধিকার পায়।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, 'বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা একটি গুরুতর বিষয়। কারণ, দুর্ঘটনা কেবল জীবনই ধ্বংস করে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে।
ফাহিমসহ অসংখ্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আইনের কঠোর প্রয়োগ, পদ্ধতিগত সংস্কার এবং ব্যাপক জনসচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটবে এবং পরিবারগুলোকে তছনছ করে দেবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই যুবকের মৃত্যু
৩৩১ দিন আগে
মেহেরপুরে বোরো চাষে সার-কীটনাশক নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা
মেহেরপুরের ৩ উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১৯ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করতে জেলায় ৯৭৮ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস জানায়, শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্যেও কৃষকরা ইরি-বোরো চাষে মনোযোগী হয়েছেন। ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। কৃষকরা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠান্ডা পানিতে নেমে বীজ তোলার পাশাপাশি জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এছাড়া আগাম আলু উত্তোলনের পর ফাঁকা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ চলছে। গ্রামে গ্রামে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার হাইব্রিড ও উপশী জাতের ধানের চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রি-২৮, ব্রি-৬৩, ৫০, ৫৮, ৭৪, ৮৯ সহ স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। হাইব্রিড এবং উপশী জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের মতে, বীজ, সার এবং শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি চাষাবাদে কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তবে আগাম চারা রোপণ এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে ফসল উৎপাদনে ভালো ফল আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এবছর আবহাওয়া ও বীজ ভাল থাকায় চাষীদের বীজতলার অবস্থা ভালো। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি উপকরণের প্রাপ্যতায় নিধার্রিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের রঙিন স্বপ্ন নতুন ফসলের ফলনে গোলা ভরার। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এ মৌসুমে বাম্পার ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
গাংনীর বাওট গ্রামের কৃষক ছাদ আলী জানান, এবছর আবহাওয়া ভাল ও বীজও ভাল পাওয়া গেছে তাই ফলনও ভালো হবে। গতবছর আবহাওয়া খারাপ ছিল বীজও খারাপ ছিল তাই চাষিরা ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
শুকুরকান্দি গ্রামের আমির হামজা জানান, ধান চাষ করতে প্রথমেই কৃষক হোঁচট খাচ্ছে। খুচরা সারের দোকানগুলোতে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। এছাড়া কীটনাশকের দামও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। সার কীটনাশকের দোকানগুলোতে সার মিলছে না। অথচ, অতিরিক্ত দাম দিলেই তারা সার বের করে দিচ্ছেন।
গাংনীর মাইলমারী গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিক সারের কোনো সংকট আছে বলে আমি মনে করি না। যে সারের দাম ১ হাজার টাকা। দোকানদারকে নির্ধারিত দাম দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ, ১ হাজার ৪০০ টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের উচিৎ নিয়মিত তদরকি (মনিটরিং) করা। নাহলে কৃষকরা এবার ধানের আবাদ করতে গিয়ে মরে যাবে।
আরও পড়ুন: দেশ থেকে সার সংকট জাদুঘরে পাঠানো হবে: কৃষি সচিব
৩৩১ দিন আগে
উলিপুরে ৫ বছরেও পুনঃনির্মাণ হয়নি দুই সেতু, ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যায় ভেঙে যাওয়া দু্টি সেতু ৫ বছরেও পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ৩টি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। সেতুর অভাবে এখন পাকা সড়কটি দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে পারছে না এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন ওই এলাকার শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীরা।
ফলে সড়ক থাকলেও সেতুর অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত পূর্ব পাড়ের মানুষ দুই উপজেলা থেকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তবকপুর, ধামশ্রেণী ও চিলমারী উপজেলার থানাহাট, বানীগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত পূর্ব অঞ্চলের মানুষের দুই উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার জন্য কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের চুনিয়ার পাড় হতে উলিপুর আজমের মোড় পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক ও দুটি সেতু ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালের বন্যায় তবকপুর ইউনিয়নের আমতলী সেতু ও চুনিয়ার পাড় সেতুটি দেবে যায় এবং সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই তখন থেকে সেতুর অভাবে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীর ডোমারে স্বাধীনতার পর থেকে নেই সেতু, ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার
এলাকাবাসী জানান, সড়কটি পাকা করায় দুই উপজেলার সঙ্গে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সেতু দুটি দেবে যাওয়ায় আবারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। চুনিয়ার পাড়ের দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকমে চলাচল করা গেলেও আমতলীর দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে কোন কিছুরই চলাচল সম্ভব নয়। গ্রামবাসী বাধ্য হয়ে চলাচলের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে দেবে যাওয়া সেতুর পাশ দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে কোনো রকমে মানুষ ও বাইসাইকেল পারাপারের ব্যবস্থা করেছিল। কিছুদিন চলাচলের পর সে সাঁকোটিও ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে মানুষজন হেঁটে জমি দিয়ে চলাচল করলেও পানি হলে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা বা চার চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ বয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য উপজেলার বাজারে নিয়ে যেতে পাচ্ছে না।
বিষ্ণু বল্লভ গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, সড়কটি হওয়ার পর রিকশা, অটোরিকশা জেএসএ, সিএনজিসহ ছোট বড় যান চলাচল করত। ফলে আমাদের খুব সুবিধা হয়েছিল। এখন সব বন্ধ, তাই পায়ে হেঁটে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়।
ট্রাক ড্রাইভার বকুল মিয়া জানান, ডিউটি শেষ করে ট্রাক মালিকের ঘরে রেখে রাত বিরাতে অটোতে চড়ে বাড়ি আসতাম। এখন হেঁটে বাড়িতে আসতে হয়।
উলিপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ নেই। সড়কটি নির্মাণের পর আমরা এই এলাকার মেয়েরা স্কুল ও কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সেতু দেবে যাওয়ায় আমাদের কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ১৪ বছরেও হয়নি সেতু, ভেলায় চড়েই স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
অটোচালক আব্দুল খালেক জানান, সড়কটি পাকা হলে অটো চালিয়ে সংসার চলাতাম। এখন সে রোজগারে ভাটা পড়েছে।
আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, সড়ক নির্মাণের পর গ্রামীণ বাজারটি জমজমাট হয়েছিল। কিন্তু সেতু দেবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাজারে এখন আর আগের মতো লোকজন আসে না, ব্যবসায় মন্দা চলছে।
৩৩২ দিন আগে
গোখাদ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, চাঁদপুরে কৃষকের মাথায় হাত
বিক্রি না হওয়ায় চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া এখন গোখাদ্যে রূপ নিয়েছে। এতে লাভ তো দূরের কথা, খরচ তোলা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় কৃষকরা।
সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে এমনটাই দেখা গিয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, চাঁদপুর সদর উপজেলা, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও উত্তরসহ কয়েকটি উপজেলায় গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে এবার মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। ফলে চাহিদার অতিরিক্ত কুমড়া বিক্রি করতে পারছেন না কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার আশিকাটি, চানখার দোকান ও দেবপুরে অবিক্রিত কুমড়া এখন গোখাদ্য হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনতে পাইকাররা আসতেন। ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে তারা নিয়ে যেতেন মিষ্টি কুমড়া। এতে চাষীদের সব কুমড়া যেমন বিক্রি হয়ে যেত, তেমনি ভালো দাম পাওয়ায় বেশ লাভও হতো। কিন্তু এবার তেমনভাবে পাইকারদের দেখা নেই। ফলে জমিতেই পাকতে শুরু করেছে কুমড়া। এমতাবস্থায় ক্ষতি এড়াতে এসব কুমড়া স্থানীয় হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কুমড়ার কমবেশি আবাদ হলেও সদর ও হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী এলাকার পলিবিধৌত আশিকাটি, সেনগাঁও, ঘোষেরহাট, শাহমাহমুদপুর, দেবপুর, মহামায়া, বিমলের গাঁও, বাকিলা, সাদ্রা, অলিপুর, শ্রীনারায়ণপুর প্রভৃতি গ্রামে ব্যাপক আকারে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে।
পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা, লাউ ও শসার আবাদও হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। সেইসঙ্গে এবার বেড়েছে ফলন। তাই চাহিদার তুলনায় যোগান বেড়ে যাওয়ায় শুরু থেকেই শাক-সবজির দাম কম পাচ্ছেন চাষীরা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, মৌসুমি নিরাপদ শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত বেশি উর্বর। তাই শাক-সবজি চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিমাণ বাড়ছে।
এ বছর শুধু হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৬১৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে বলে জানান দিলরুবা খানম।
ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয় ২৮৬ হেক্টর জমিতে। সেই তুলনায় এ বছর কুমড়ার আবাদ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তার ওপর পাইকার, ছোট ক্রেতা ও ব্যবসায়ী না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কৃষকদের এসব কুমড়া বিভিন্ন বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে লাভ অল্প হলেও কুমড়াগুলো অন্তত বিক্রি হয়ে যাবে।’
উপজেলার কৃষকদের মুখেও একই কথা, চলতি মৌসুমে বলাখাল, অলিপুর, সাদ্রা, শ্রীনারায়ণপুর গ্রামে ব্যাপক আকারে কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। তবে এসব কুমড়া বিক্রির শেষ সময় চললেও বাজরে তেমন চাহিদা নেই।
তাদের দাবি, প্রতি বছরের এই সময়ে খেতের প্রায় ৯৫ শতাংশ কুমড়া বিক্রি হয়ে যায়। অথচ, এবার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারেননি অনেক কৃষক। ফলে বিপাকে পড়েছেন তারা। কোনোমতে খরচ তুলতে তাই গরুর খাদ্য হিসেবে এসব কুমড়া বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে।
তেমনই একজন দেবপুরের লোকমান হাওলাদার। গরুকে খাওনোর জন্য মাত্র ৮ টাকা কেজি দরে তার কাছ থেকে কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। কুমিল্লার নিমশার এলাকার এক ব্যবসায়ীও ওই দরে গোখাদ্য হিসেবে তার কাছ থেকে কুমড়া নিয়েছেন বলে জানান এই কৃষক।
দেবপুরের অনেক কৃষক আবার সড়কের পাশে বিক্রির উদ্দেশ্যে রেখে দিলেও কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না। ফলে সড়কের ধারে পচে যাচ্ছে তাদের কুমড়াগুলো।
৩৩৩ দিন আগে
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে পেঁয়াজের চাষ বেড়ে দ্বিগুণ
লাভজনক হওয়ায় সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে বেড়েছে পেঁয়াজের চাষ। এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। দিনরাত একাকার করে খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার কৃষিবিভাগের কার্যক্রম পাশের ধর্মপাশা উপজেলা থেকে পরিচালিত হয়। তবে সমন্বয় ও কৃষকদের পরামর্শদানে উপজেলা কৃষিবিভাগের তৎপড়তা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবছর মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন চাষিরা। তাই চলতি অর্থবছরে শুধু মধ্যনগর উপজেলায় প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন চাষিরা। এর মধ্যে উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে। সারা উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে ১০ জন কৃষককে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের মো. বাসেত ভূঁইয়া জানান, বাজারে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রয় হওয়ায় অতীতের তুলনায় বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, কীটনাশক সহায়তা পেয়েছি। জমিচাষ, চারা রোপণ, পরিচর্যাসহ প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে, প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
একই ইউনিয়নের তেলীগাঁও গ্রামের কৃষক রিপন মিয়া বললেন, এক বিঘা জমিতে চারা রোপণ করছি। এবার সাড়ে ৩ হাজার টাকার পেঁয়াজের বীজ কিনতে হয়েছে।
সবমিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ পাব বলে আশা করছি। উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের রুপনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক বললেন, ভরা মৌসুমে কৃষকরা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করে চাষাবাদে হতাশ হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অসময়ে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার বললেন, চলতি অর্থবছরে এ উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার মাঠের হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৪০ হেক্টরের অধিক জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এ উপজেলার কৃষকদের সবসময় কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর পেঁয়াজের চড়া দাম থাকায় এই বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মো. আনোয়ার হোসেন বললেন, হাওরে মশলা ফসলের সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে, এ বছর মধ্যনগর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় নতুন জাতের পেঁয়াজ প্রদর্শনীর বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হিলি দিয়ে ফের পেঁয়াজ ও আলু আমদানি শুরু
৩৩৪ দিন আগে
সামাজিক মাধ্যমে সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকিতে বাংলাদেশ
প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ প্রত্যেককে জ্ঞানের এক অভূতপূর্ব জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এটি ইতিবাচকতার পাশাপাশি নেটওয়ার্কভিত্তিক অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধির পথকেও প্রশস্ত করেছে। আর এসব অপরাধের অনেকগুলোই ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টেলিগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো তথ্য চুরি হচ্ছে। এছাড়া জালিয়াতি থেকে শুরু করে অনলাইন জুয়া এবং ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমকে সহজতর করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
পারস্পরিক যোগাযোগ এবং ব্যবসার জন্য মানুষ যত বেশি ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকছে, অপরাধীরা এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে তত বেশি পরিমাণে ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর সুযোগটি লুফে নিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে সাধারণ সাইবার অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিচয় হ্যাকিং, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং স্ক্যাম এবং জুয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেইলিং
সাইবার ক্রাইমের সবচেয়ে পীড়াদায়ক ধরনগুলোর একটি হলো ব্ল্যাকমেইলিং।
২৫ বছর বয়সী শোভা (আসল নাম নয়) ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে জড়ানোর সময় তার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় হিসাবে যা শুরু হয়েছিল তা শিগগিরই ভিডিও কলের সময় ছবি প্রকাশের জন্য অনুপযুক্ত অনুরোধে পরিণত হয়েছিল।
শোভা লোকটিকে বিশ্বাস করে মেনে নিল। কিন্তু এর পরপরই তার আচরণ খারপ দিকে মোড় নেয়। তিনি বড় অঙ্কের টাকা দাবি করতে শুরু করেন এবং যখন তিনি তা অস্বীকৃতি জানান, তখন তিনি তার ছবি এবং ভিডিও অনলাইনে প্রকাশের হুমকি দেন।
পরিস্থিতি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। কিন্তু একজন সিনিয়র মেন্টর এবং বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের সহায়তায় শোভা লোকটির অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। তবে ঘটনার মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াতে হয়েছে অনেক দিন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: সিলেটে সাইবার অপরাধ চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার: র্যাব
ফেসবুকের ভুয়া পেজের মাধ্যমে প্রতারণা
আরেকটি প্রচলিত সমস্যা হলো অনলাইনে প্রতারণা, বিশেষ করে ভুয়া ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, অনিক (ছদ্মনাম) একটি আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য ফেসবুক পেজ থেকে একজোড়া ব্র্যান্ডেড জুতা অর্ডার করেছিলেন, যা ব্যাপক পর্যালোচনা এবং একটি বড় অনুসরণকারী বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
পেজটিতে অগ্রিম পেমেন্টের প্রয়োজন ছিল, যা অনিক সরল বিশ্বাসে করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, জুতা আর পৌঁছাল না হাতে। এমন পরিস্থিতিতে বিক্রেতার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও অনিক ব্যর্থ হন এবং অগ্রিম দেওয়া অর্থ আর ফেরত পাননি।
দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়— অনেক ভুক্তভোগী প্রতিদিন একই ধরণের প্রতারণার শিকার হন।
হানি ট্রাপে তরুণরা
সম্ভবত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামনে আসা সবচেয়ে উদ্বেগজনক সাইবার অপরাধগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘হানি ট্র্যাপ।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই ফাঁদ বা প্রতারণা সাধারণত ফেসবুক থেকে শুরু হয়। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে ভিডিও কল করা হয়।
প্রতারক একজন নারী সেজে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথোপকথনে জড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের পুরোপুরি নগ্নভাবে ভিডিও কল করতে বলবে।
এরপর ভুক্তভোগীর আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করাই এই কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত লক্ষ্য।
অপরাধীরা প্রায়শই বাংলাদেশের বাইরে থেকে এসব কাজ করে। এসবের বেশিরভাগই ভারত থেকে করা হয়।
ভুক্তভোগীদের মানসিক ও আবেগীয় প্রভাব ভয়াবহ হয়। কেউ কেউ অবিরাম প্রতারণার কারণে আত্মহত্যাসহ চরম পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে যায়।
বাড়ছে অনলাইন জুয়া
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, অনলাইন জুয়া একটি বিপজ্জনক আসক্তি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের যুবকদের মধ্যে।
দ্রুত উপার্জনের লোভ, স্মার্টফোনের মাধ্যমে জুয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সহজে ব্যবহারের সুযোগ একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করেছে।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার শাহজাহান হোসেন বলেন, প্রকাশ্যে জুয়া প্রতিরোধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ এখনো দুর্বল।
তিনি বলেন, সাইবার জুয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আমাদের নেই। তবে সরকারের নতুন উদ্যোগে এসব সমস্যা মোকাবিলা করা অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
অনলাইন জুয়াখেলার বিপজ্জনক প্রলোভন নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এসব আরও বেড়েছে, যা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আসক্তি এবং আর্থিক ক্ষতিতে ফেলছে।
ইনস্টাগ্রাম: হয়রানির জন্য একটি কেন্দ্রস্থল
ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোও সাইবার অপরাধের উৎস হয়ে উঠেছে।
নাজমুল ইসলাম ব্যাখ্যা করেছেন, ইনস্টাগ্রামে সবচেয়ে সাধারণ অপরাধগুলোর মধ্যে একটি হলো সাইবার স্টকিং। অপরাধীরা নাগরিকদের হয়রানির জন্য প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে। কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রোফাইলে পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগিয়ে বাস্তব জীবনে তাদের শনাক্ত করে এবং ভয় দেখায়।
ইনস্টাগ্রামে আরেকটি প্রচলিত অপরাধ হলো জালিয়াতি। অপরাধীরা নকল পণ্য বা পরিষেবাদির বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে। এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনগুলো প্রায়শই সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাইবার অপরাধের উদ্দেশ্য
এই সাইবার অপরাধগুলো বেশিরভাগের পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হলো অর্থ উপার্জন বা চাঁদাবাজির ইচ্ছা। অপহরণ, জালিয়াতি বা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমেই হোক না কেন, অপরাধীরা আর্থিক লাভের কারণে এসবে অনুপ্রাণিত হয়, প্রায়শই নির্দোষ ব্যক্তিদের ক্ষতি করে।
কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান
এই সাইবার অপরাধ বাড়তে থাকায় বিশেষজ্ঞরা আরও শক্তিশালী আইন এবং এর আরও কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এই অপরাধের জটিলতা এবং ক্রমবর্ধমান প্রকৃতি এটিকে একটি অবিরত চ্যালেঞ্জ পরিণত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাইবার ক্রাইমের শিকড় প্রযুক্তির মধ্যে থাকতে পারে। তবে এর প্রভাব খুব বাস্তব। ভুক্তভোগীদের মানসিক, আর্থিক এবং শারীরিকভাবে প্রভাবিত করে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই আধুনিক যুগে এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনসাধারণ এবং কর্তৃপক্ষ উভয়েরই সতর্ক ও সক্রিয় হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় সাইবার অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১০৩ তাইওয়ানি আটক
৩৩৫ দিন আগে