বিশেষ-সংবাদ
সংকট পেরিয়ে কবে প্রত্যাশা পূরণ করবে দেশের রেলসেবা
চট্টগ্রাম থেকে আসা শহিদুর রহমান থাকেন রাজধানীর উত্তরায়; তার পরিবার থাকে বন্দরনগরীতে। এতে প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করতে হয় তাকে। এই যাতায়াতে ট্রেন তার পছন্দের পরিবহন। এই বাহনের প্রতি তার আবেগ মিশে আছে।
‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমি ট্রেনযাত্রা পছন্দ করি, আমার পরিবারেরও পছন্দ। উত্তরাতে থাকি। ঢাকার মধ্যে যাতায়াতেও মেট্রো ব্যবহার করি,’ ট্রেনযাত্রায় নিজের আগ্রহের কথা বলছিলেন তিনি।
কিন্তু তার এই যাতায়াতে চ্যালেঞ্জও কম নয়। অনেকটা খেদ প্রকাশ করেই বলছিলেন, ‘কাউন্টার থেকে আমি টিকিট কিনতে পারছি না, এমনকি অনলাইনেও না। ফলে কালোবাজারির ওপরই আমাকে নির্ভর করতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, কালোবাজারি হলেও আন্তরিকতার সঙ্গে তারা আমার বাসায় টিকিট পৌঁছে দেয়।’
শহিদের মতো বহু মানুষ ট্রেনভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কিন্তু দেশের রেলপথ ব্যবস্থা তাদের এই ভ্রমণকে স্বস্তিদায়ক করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। যাত্রীদের প্রত্যাশার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারছে না তারা।
রেলওয়ে প্রকল্পে এ পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও দেশের যোগাযোগের প্রধানতম এই পরিষেবাটি এখনও অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। ফলে যাত্রীদের কাছে ক্রমেই এটি পছন্দের বাহন হয়ে উঠলেও তাদের প্রত্যাশা পূরণ থেকে এখনও অনেক দূরে রয়েছে ট্রেন যোগাযোগব্যবস্থা।
রেলওয়ে খাতের যত চ্যালেঞ্জ
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৪টি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকার আরও ৩২টি প্রকল্প এখনও অসম্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কাজের ধীরগতি ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেশের রেলওয়ে খাতের অনেক প্রকল্প ভুগছে। এছাড়া পর্যাপ্ত জনবল ও পুরনো সরঞ্জামের মতো সীমাবদ্ধতা তো আছেই। পাশাপাশি সমন্বিত কৌশলের অভাবে নতুন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতিও কম।
সূত্রের দাবি, ইঞ্জিন, কোচ ও জনবলের ঘাটতি রেল পরিষেবার সম্প্রসারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে যে রাজস্ব আয় করে, তা পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য অপর্যাপ্ত। এর ফলে এই খাতে আর্থিক চাপ বাড়ছে যা রেলসেবার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, তহবিল তছরুপ ও কালোবাজারির কারণে ট্রেনের ওপর মানুষের আস্থা আরও কমে যাচ্ছে। রেলখাতের অগ্রগতির ধারা ব্যাহত করতে এগুলো বড় ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক ইউএনবিকে বলেন, চলাচলের জন্য দেশের মানুষের কাছে ট্রেন অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও অদক্ষ কর্মী ও সরকারের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে সংকটে ভুগছে রেলওয়ে খাত।
এর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সেবা দেওয়ার মানসিকতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।
ড. শামসুলের মতে, রেলওয়ে পরিষেবার উন্নতির পরিবর্তে কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির প্রতি ঝোঁক বেশি। আবার নৌপথ, আকাশ ও সড়কপথের পরিবহনে বেসরকারি সংস্থাগুলো মূল ভূমিকা পালন করলেও রেলপথ পুরোপুরি সরকার-নিয়ন্ত্রিত। এর ফলে এই খাতের কর্মীদের রেলের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও লাভের দিকে মনোযোগ কম, আর সঠিক তদারকির অভাবে নানা পর্যায়ে অব্যবস্থাপনাও রয়েছে। এতকিছুর পর রেলওয়ে যখন কর্মীদের খরচ তুলতে ব্যর্থ হয়, তখন সরকারকে আবার ভর্তুকি দিতে হয়। ফলে লাভজনক করার অমিত সম্ভাবনা থাকলেও উল্টো খরুচে খাতে পরিণত হয়েছে রেলওয়ে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে রেলওয়ে খাত যেখানে যাত্রীসেবার মাধ্যমে লোকসান পুষিয়ে কন্টেইনার পরিবহনের মাধ্যমে রাজস্ব আয় করে থাকে, বাংলাদেশে সেখানে জবাবদিহিতা ও পেশাদারত্বের অভাবে এই সম্ভবনা কখনও আলোর মুখ দেখেনি।’
এ সময় রেলওয়ের উন্নয়নে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর করিয়ে উন্নয়ন তহবিলের অপব্যবহারের মতো কাজের জন্য বিগত সরকারের সমালোনাও করেন তিনি।
রেলওয়ের উন্নয়নে এই পরিষেবার কাঠামোগত সংস্কার, স্বচ্ছতা ও আংশিক বেসরকারিকরণের সুপারিশ করেন অধ্যাপক শামসুল হক। পাশাপাশি এই খাতের সম্ভাবনাগুলো নির্ণয় করে সেগুলো কার্যকর করতে একটি পেশাদার পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এই প্রকৌশলী।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়, রেলখাতে লভ্যাংশ তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় এর কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের জবাবদিহিতার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশেও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে জানিয়ে রেলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি আউটপুট নিয়ে আসতে না পারেন, তাহলে (দায়িত্ব থেকে) সরে দাঁড়ান।’
উপদেষ্টার মতামত
রেলের সংকট কাটাতে নতুন কোনো পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে কিনা—জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ইউএনবিকে বলেন, ‘অতীতে যা ঘটেছে, তা তো আমরা পরিবর্তন করতে পারি না! তবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কাজ করছি।’
‘এখন লোকোমোটিভের ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো সংগ্রহের কাজ চলছে। কোচের সংখ্যা বাড়ানো এবং ওয়ার্কশপ ও মেরামতের সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এ সময় জয়দেবপুর-ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি রুটে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর পরিকল্পনার কথা জানান করেন উপদেষ্টা। বলেন, ‘আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা-নরসিংদী ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এই সার্ভিস চালু হওয়ার কথা রয়েছে।’
উচ্চ চাহিদা মেটাতে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে অতিরিক্ত একজোড়া ট্রেন চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আগে রেললাইন ও স্টেশন সম্প্রসারণ করা হলেও ইঞ্জিন ও কোচের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। আমরা আমাদের সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।’
নতুন দিনের সম্ভাবনাময় ঢাকা মেট্রোরেল
রাজধানীবাসীর যাতায়াতের ভোল পাল্টে দিয়েছে সম্প্রতি চালু হওয়া মেট্রোরেল পরিষেবা। ঢাকার নিদারুণ যানজট থেকে মুক্ত করে যাতায়াতে নগরবাসীর স্বস্তি ফেরাতে বর্তমানে এমআরটি-৬ লাইন চালু রয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি লাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
ঘণ্টায় ৬০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে মেট্রোরেলের নকশা করা হয়েছে। গতি, নিরাপদ ভ্রমণ ও স্বস্তিদায়ক পরিষেবার কারণে ঢাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে সময় লাগেনি মেট্রোরেলের। পাশাপাশি, দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
যাত্রীদের অভিজ্ঞতা
কম খরচ ও সরাসরি যোগাযোগের কারণে ট্রেন দেশের লাখো মানুষের কাছে একটি অপরিহার্য পরিবহন।
ঢাকার মিরপুরে বসবাসরত সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ট্রেনে চড়ার মাধ্যমে যানজটে আটকে থাকতে হয় না। এতে পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা পাওয়া যায়, তেমনই পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া যায়। তাই শহরের (ঢাকা) ভেতরে হোক কিংবা বাইরে, সুযোগ থাকলে ট্রেনেই যাতায়াত করি।’
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কায়সার আহমেদ বলেন, ‘নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে ট্রেন আমার প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। ট্রেনে খরচ কম ও নির্ভরযোগ্য, ফলে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করা আমার জন্য সহজ হয়। তবে সময়সূচি ও সেবার প্রতি যদি রেল কর্তৃপক্ষ আরেকটু মনোযোগ দেয়, তাহলে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ—যারা নিয়মিত ট্রেনে চড়ে—তাদের জন্য আরও সুবিধা হতো।’
ট্রেন যে আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব, তা জাহাঙ্গীর ও কায়সার উভয়েই স্বীকার করেন। তাদের মতে, একই পরিমাণ জ্বালানি খরচে বাস বা অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় অনেক বেশি যাত্রী ও মালামাল বহন করে ট্রেন। তাই এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
উন্নয়নের সুযোগ
রেলখাতের উন্নয়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে ১৮ হাজার ৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
রেলওয়ের অবকাঠামো ও আন্তঃনগর পরিষেবার উন্নয়ন এবং কন্টেইনার পরিবহন বাড়ানোর মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ওই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডিসেম্বরে পদ্মাসেতু দিয়ে নতুন রুট উদ্বোধনের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০ বছর মেয়াদি ব্যাপক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রেলওয়ে খাতে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৫টি প্রকল্পের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—২ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, ৪৪টি জেলাকে এই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা এবং গেজ ব্যবস্থাকে মানসম্মত করে পরিচালন সক্ষমতাকে সুবিন্যস্ত করা।
সেই সঙ্গে সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে রেলওয়ের সমন্বয়কেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় একটি সমন্বিত জাতীয় পরিবহন কাঠামো তৈরি হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
উন্নত দেশ থেকে যে শিক্ষা নেওয়ার আছে
রেলওয়ে খাতের উন্নয়নের জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে বাংলাদেশ।
রেল যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নত নিরাপত্তা ও দক্ষতাসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে জাপানের শিনকানসেনের মান অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ। এছাড়া, পণ্য পরিবহন আরও সহজ ও লাভজনক করার লক্ষ্যে ভারতের বিশেষায়িত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনার উন্নয়নকল্পে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ অনুকরণীয় হতে পারে। এছাড়া পণ্য পরিবহনে সড়কপথের পরিবর্তে কীভাবে ট্রেনের পরিবেশ ও কৌশলগত সুবিধা গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে ইউরোপের সাফল্য থেকে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের রেলওয়ে-ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গেজ পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও বহুমাত্রিক পরিবহনের সমন্বয়সাধনের জন্য কৌশলগত কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি, বাংলাদেশ রেলওয়েকে বিশ্বমানের পরিবহন সেবায় পরিণত করতে পরিচালন দক্ষতার উন্নয়ন, কর্মীদের জবাবদিহিতা ও রেলখাতের স্বচ্ছতা বাড়ানো অপরিহার্য।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাপের কারণে সাশ্রয়ী রেলযোগাযোগের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন-যাত্রা এগিয়ে নিতে রেলওয়ে খাতে সাফল্যের বিকল্প নেই। এই খাতের সত্যিকারের উন্নয়ন করা গেলে কেবল যোগাযোগ ও পরিবহন খাতেই গতিশীলতা বাড়বে না, সামগ্রিকভাবে জাতীয় অগ্রগতিতেও এটি অপরিসীম ভূমিকা রাখবে।
৩৩৫ দিন আগে
বাকৃবি: ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক মাত্র ৮ জন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবায় বর্তমানে মাত্র ৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তাসহ নিয়মিত চিকিৎসক ৬ জন ও খণ্ডকালীন চিকিৎসক ২ জন। তবে দীর্ঘদিন যাবত ৫ মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় ন্যূনতম সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কয়েক প্রকার ওষুধেই সীমাবদ্ধ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা সময় এ নিয়ে ওঠে আলোচনা-সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হেলথকেয়ারে সেন্টারে বর্তমানে কর্মকর্তা আছেন ১০ জন এবং কর্মচারী ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন নিয়মিত, ৭ জন মাস্টার রোলে, আর ৩ জন কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় ঘাটতি মেটাতে অন্য শাখা থেকে ৩ জন কর্মচারীকে এনে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কাজ। তাছাড়া সেখানে কোনো নার্সের পদ নেই, নেই কোনো বিশেষায়িত ইউনিট, কোনো ডেন্টাল ইউনিটও নেই।
আরও পড়ুন: ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণিসম্পদ ডিজিকে বাকৃবির সংবর্ধনা
হেলথ কেয়ারের ডেন্টাল বিভাগে ১৪ বছর আগে সর্বশেষ একজন খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি কোনো নতুন চিকিৎসক। বিভাগটির ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও এখন প্রায় অকেজো।
এছাড়া হেলথকেয়ার সেন্টারে ৭ প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, চর্মরোগের মলম ও প্যারাসিটামল বিনামূল্যে প্রদান করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় বহিরাগত রোগীর সংখ্যা সেখানে বেশি থাকে। তাছাড়া লিফট বন্ধ থাকায় হাঁটা-চলায় অক্ষম রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হেলথকেয়ার সেন্টারের নিচ তলার টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, কোনোটার দরজা ভাঙ্গা। হেলথকেয়ারের বাইরেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়, বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয় সেখানে। দিনের বেলা কখনও সেন্টারটির বারান্দা মোটরসাইকেল রাখার পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। তাছাড়া হেলথকেয়ার সেন্টারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা কয়েকবছর আগে থেকেই নারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক আবাসনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী হাসান তপু বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে (হেলথকেয়ার সেন্টারে) গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। সেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই; পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছালো।’
অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা ও সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। তা পাওয়া খুব জটিল প্রক্রিয়া। ডাক্তারের সিগনেচার থেকে শুরু করে আরও অনেক নাটক। তার ওপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙা, সাইরেন ঠিক নেই, বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স তো নয়, যেন লক্কর ঝক্কর কোনো গাড়ি!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. সাঈদুর রহমান (শওকত) বলেন, ‘আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি মহোদয় ও অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই এটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দেব।’
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোনো ওষুধ কেনে না। সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা আছে। ওষুধের গুণগত মান ও মূল্য দেখেই এসব ওষুধ কেনা হয়।
হেলথকেয়ার সেন্টারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তিনি জানান, একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো, যা এখন করা হয় ২৮টা; তার মধ্যে ১৫টা টেস্টই করা হয় নামমাত্র মূল্যে। ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে অনেক কম, ছাত্রদের জন্য প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ছাড়। তাছাড়া এক্সরের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন।
অ্যাম্বুলেন্সের কাঠামোগত ত্রুটি ও সময়মতো না পাওয়ার বিষয়ে নিয়ে ডা. সাঈদুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্ভুক্ত। দুইটা অ্যাম্বুলেন্স এর মধ্যে একটা সব সময় থাকে, একটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে—সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙা কি না, জ্বালানি আছে কি না—সব দেখে পরিবহন শাখা।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘হেলথকেয়ারের ডাক্তার সংকটের ব্যাপারে আমরা অবগত। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তা নিরসরণে কাজও শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই এই সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ওষুধের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করলেন বাকৃবির অধ্যাপক
৩৩৬ দিন আগে
নির্মাণের ২০ বছর পেরুলেও অচলাবস্থায় ফেনী ট্রমা সেন্টার!
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে ফেনীর মহিপালে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়। মহাসড়কের ফেনী অংশের ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক।
জানা যায়, ২০০২ সালের ৯ মে ফেনী ট্রমা সেন্টারের তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের কাজ শুরু হয়। এক একর জায়গার ওপর ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই। আর ৩০ অক্টোবর ট্রমা সেন্টারের বহির্বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেন্টারটি প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। দীর্ঘ ২০ বছরেও চালু হয়নি ফেনী ট্রমা সেন্টার।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি এবং জনবলসংকটে খুঁড়িয়ে চলছে সেন্টারের সেবা কার্যক্রম। ফেনী ট্রমা সেন্টারে রয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ), অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজির জন্য আছে উন্নতমানের যন্ত্রপাতিও। কিন্তু নেই সেগুলোর চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ। রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য নেই পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও। এভাবেই অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে ফেনী ট্রমা সেন্টার। কোনোভাবে চালু আছে শুধু বহির্বিভাগের সেবা। দুরাবস্থা দেখলে মনে হয় যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিজেই ‘ট্রমায়’ ভুগছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত
সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া মূল উদ্দেশ্য হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের ফেনী জেনারেল হাসপাতাল বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত ৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে ট্রমা সেন্টারের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে অবহিত করে ও ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টার চালুর জন্য প্রয়েজনীয় জনবলের চাহিদা জানিয়ে একটি আবেদন পাঠান সিভিল সার্জন ডা. সিহাব উদ্দিন।
দেশের চারটি ট্রমা সেন্টারের মধ্যে একমাত্র ফেনী ট্রমা সেন্টার চালু আছে। কিন্তু সেখানে নেই পর্যাপ্ত জনবল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফেনীর মহিপালে ২০০৪ সালে নির্মাণ করা হয় ট্রমা সেন্টারটি। ২০০৬ সালের ৩০ অক্টোবর ট্রমা সেন্টারের বহির্বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ফেনীর ২০ শয্যাবিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারে অনুমোদিত পদ ২০টি। এর বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১০ জন। তাদের মধ্যে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিষ্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) ও সাতজন নার্স আছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেসথেসিয়া) পদে একজনকে পদায়ন করা হলেও তাকে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে পাঠানো হয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো সার্জারি), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি), একজন নার্স, ড্রাইভার, অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ওয়ার্ড বয়, আয়া, ল্যাবরেটরি এসিস্ট্যান্ট, অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া দারোয়ান ও সুইপারসহ তিনজন আউটসোসিং পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে সিভিল সার্জন ২০টি পদের বিপরীতে মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ৩১ জনের জনবলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন।
ট্রমা সেন্টারের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাইফুল আলম জানান, এখানে প্রতিদিন বর্হিঃবিভাগে সাধারণত ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিকাশিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ছোটখাটো আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কখনো হাড়ভাঙা ও দুর্ঘটনায় আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগী এলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন রোগী বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
সরেজমিনে ফেনী পৌর শহরের মহিপাল সংলগ্ন ট্রমা সেন্টারটিতে দেখা যায়, লোকবল না থাকায় ট্রমা সেন্টারের এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি, জেনারেটর এবং অপারেশন থিয়েটার ও প্যাথলজি ল্যাবের প্রায় সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় রোগীদের শয্যা রয়েছে। নিচতলায় এক্স-রে কক্ষ ও ল্যাব। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করায় নষ্ট হচ্ছে এক্স-রে ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি। একদিনও ব্যবহার করা হয়নি যন্ত্রপাতিগুলো। দোতলা ভবনটির অধিকাংশ কক্ষই ছিল বন্ধ।
ট্রমা সেন্টার-সংলগ্ন মহিপাল এলাকার বাসিন্দা নুরুল আফছার বলেন, প্রতিদিন মহিপালের ওপর দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, টেম্পো, অটোরিকশা চলাচল করে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় লোকজন আহত হয়। কিন্তু ট্রমা সেন্টারে গিয়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কখনো পাওয়া গেলেও তারা চিকিৎসা না দিয়েই ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
ফেনী ট্রমা সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাইফুল আলম জানান, এক্স-রে যন্ত্রটি গত ১৬ বছরে একবারও ব্যবহার করা হয়নি। একটি ইসিজি যন্ত্র থাকলেও পেপার না থাকায় ব্যবহার করা হয় না। দুটি অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র কখনো ব্যবহার হয়নি। একটি অটোক্লেভ (জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্র) যন্ত্র বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) কিছু যন্ত্রপাতি দেওয়া হলেও ওটি চালু করা হয়নি। দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। এগুলো ভালো আছে নাকি নষ্ট হয়ে গেছে— সেটা তো না দেখে বলা যাবে না।
ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশীদ বলেন, গত এক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। সড়কের পাশে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটি চালু হলে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমে আসত। ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় দুর্ঘটনার শিকারদের ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠাতে হয়। এতে করে রোগীর রক্তক্ষরণ ও গুরুতর রোগীদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় মারাও যায়। মহাসড়ক থেকে সদর হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। কিন্তু শহরের যানজট পেরিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, জনবল ও অবকাঠামো-সংকটের কারণে বর্তমানে শুধু বহির্বিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। সংকটের কথা একাধিকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ।
আরও পড়ুন: যশোরে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় নিহত ১
৩৩৭ দিন আগে
ছেলে দুবাই শহরে, বৃদ্ধ পাঁচু মিয়ার ঠাঁই ঝুপড়ি ঘরে
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই-গান্না আঞ্চলিক সড়কের বালিয়াখাল এলাকায় রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বৃদ্ধ পাঁচু মিয়া। নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসে। আশা ছিল, বৃদ্ধ বয়সে যে কটাদিন বাঁচবেন সে কটাদিন অন্তত শান্তিতে কাটাবেন। তবে সেই কপাল হয়নি পাঁচু মিয়ার। ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে থাকলেও ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবার ঠিকানা হয়েছে এখন রাস্তার পাশের একটি ঝুপড়ি ঘর।
পলিথিন আর ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি দিয়ে মোড়ানো ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন পাঁচু মিয়া। প্রায় ৩০ বছর ধরে রাস্তার ধারেই বসবাস ৭৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ। তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরি করে বিক্রি এবং নরসুন্দরের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ চালান তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বাড়ি ছিল পাঁচু মিয়ার। নব্বইয়ের দশকে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বালিয়াখাল বাজারে সেলুনের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। সেই দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই চালাতেন সংসার।
১০ বছর আগে পাঁচু মিয়ার মেয়ে নিমবিয়া মারা যান। তার বছর পাঁচেক পর মারা যান তার স্ত্রী সরভানু বেগম। এরইমধ্যে কষ্টের টাকায় ছেলে মিন্টু মিয়াকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে ৭/৮ বছর থাকার পর দেশে চলে আসেন মিন্টু মিয়া। এরপর দুবাই চলে যান তিনি। ছেলে দুবাই যাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে বাবা পাঁচু মিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই।
৩৩৭ দিন আগে
অবৈধ মাদকের হটস্পট কারওয়ান বাজার রেলওয়ে
মাদক ও ইয়াবার হটস্পট হিসেবে পরিচিত রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেলওয়ে এলাকা। এখানে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ীরা রাস্তায় অপরাধীদের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা কৌশল প্রয়োগ করে চালাচ্ছেন মাদকের ব্যবসা। এর একটি হলো— ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে তারা বলে থাকেন 'তামাক-বাবা' লাগবে কি?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) শিথিল মনোভাবের কারণে এলাকাটিতে প্রকাশ্যে ও অবাধে চলছে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিক্রি।
সম্প্রতি কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাদক বিক্রির জন্য ক্রেতাদের অপেক্ষা করছেন মাদককারবারীরা। আরও ক্রেতারাও প্রকাশ্যে তাদের কাছে কিনছেন মাদক। যেন জমে উঠা একটি হাট-বাজার!
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মাদক ব্যবসায়ী ঝর্ণা পরিচয় দিয়ে আমাদের সংবাদদাতার কাছে এসে জানতে চান, 'তামাক-বাবা' লাগবে কিনা।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে মাদকসহ ছাত্রনেতা আটক, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ
ইউএনবির এই সংবাদদাতা কী বোঝাতে চেয়েছেন— তা বুঝতে পারছেন না বলে জবাব দিলে ঝর্ণা ব্যাখ্যা করেন, তামাক মানে গাঁজা। যা গাঁজা বা হেম নামেও পরিচিত এবং বাবা অর্থ নিষিদ্ধ ইয়াবা বড়ি।
ইউএনবির এই প্রতিবেদক দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ছোট প্যাকেট গাঁজা ১০০ টাকা এবং একটি ইয়াবা বড়ির দাম ৩০০ টাকা।
এরই মধ্যে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, তার হেরোইন লাগবে কিনা? যার দাম পড়বে ৩০০ টাকা পড়বে বলে জানান তিনি।
তাদের কাছ থেকে এলাকায় অবৈধ মাদক ব্যবসার বিষয়ে কিছু তথ্য পেতে ইউএনবির এই প্রতিবেদক ওই নারীর কাছ থেকে এক পুরিয়া গাঁজা কেনেন।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে ঝর্ণা বলেন, এই অঞ্চলে বেশ কিছু নারী ও যুবক অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী বেশ কয়েকজন লাইনম্যানও আছেন।
সেখানে পুলিশ, র্যাব বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ততটা সক্রিয় নয়। কিন্তু যখন তারা তা করে, বেশিরভাগ সময় তারা কোনো না কোনোভাবে আগাম সতর্কতা পায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য অভিযান সত্ত্বেও ঢাকা মহানগরীর কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকা অবৈধ মাদক বিক্রির প্রধান হটস্পট হিসেবেই রয়ে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীরা দায়মুক্তি নিয়ে কাজ করায় তারা ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রেললাইনের ধারে, বিশেষ করে পাইকারি মাছের বাজার এলাকায় শিশু ও নারী মাদক ব্যবসায়ীরা গোপনে অবৈধ মাদক বিক্রি করেন।
এছাড়া তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত রেললাইনের বিভিন্ন অংশ একাধিক অপরাধী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েকটি স্থানীয় ডিএনসি কর্মকর্তাসহ কিছু আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সুরক্ষা বা মৌন সম্মতি পান, যা এই অবৈধ ব্যবসাকে বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে তুলেছে।
সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে বড় আকারের অভিযানসহ নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এলাকায় মাদক ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে মাসে এলাকায় মাদক ব্যবসা গুঁড়িয়ে দিতে প্রায় এক হাজার সদস্যের একটি বড় দল নিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে, গোপনীয়তার অভাবের জন্য এই অভিযানটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েঠিল। কারণ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে আগাম অভিযানের ঘোষণা দেওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের পালানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল।
যদিও ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে, তবে অনেকে দিনমজুর বা রাস্তার বিক্রেতা বলে জানা গেছে। যাদের অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোন স্পষ্ট সংযোগ নেই। এতে করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের অকারণে ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পরে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) আরেকটি অভিযান চালালেও তাতেও সীমিত ফল পাওয়া যায়। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইয়াবা এবং গাঁজা জব্দ করেছে। তবে সমালোচকদের দাবি, এই অভিযানগুলোতে মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে ফেলার জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ বা দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ঘাটতি রয়েছে। মাঝেমধ্যে শীর্ষ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং জব্দ হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে মাদক ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
চলমান মাদক ব্যবসার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রয় এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতায় বাড়াচ্ছে। এর ফলে কিছু ব্যবসা তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায় বা স্থানান্তরিত হয়। আশেপাশের পিতামাতারাও শিশু এবং তরুণদের উপর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যারা প্রায়শই এই ব্যবসার সংস্পর্শে আসে।
কারওয়ান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ বলেন, অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে অবৈধ বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধে এবং কারওয়ান বাজার রেলওয়ে এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে আরও ভাল সমন্বয়, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততাসহ ব্যাপক সংস্কার আবশ্যক।
আরও পড়ুন: 'মাদক সম্রাট' সেলিম গ্রেপ্তার
এ বিষয়ে র্যাব-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খলিদুল হক হাওলাদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকায় প্রকাশ্যে অবৈধ মাদক বিক্রির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএনসির মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসা রোধে ডিএনসির অপারেশনাল টিম ওই এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, বরং চাহিদা কমানো প্রয়োজন। চাহিদা বাড়লে সরবরাহ বাড়বে। চাহিদা কমাতে তারা সারাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা মোটিভেশনাল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে।
ডিএনসি মহাপরিচালক বলেন, অভিভাবকদের পারিবারিক পর্যায়ে তাদের সন্তানদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, যাতে তারা (শিশুরা) মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ে।
কারওয়ান বাজারের অবৈধ মাদকের হটস্পট সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন ইউএনবিকে বলেন, গত ৩ থেকে ৪ মাসে তারা অন্তত ৫০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছেন।
এছাড়া ডিএমপির গোয়েন্দা শাখাও (ডিবি)মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। এতো কিছুর পরও অবৈধ মাদকের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
ওসি বলেন, মাদকের অবৈধ ব্যবসা রোধে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ দল প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের বেপরোয়া মাদক সাম্রাজ্য বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের
৩৩৮ দিন আগে
যশোরে অবৈধ ইটভাটার রমরমা বাণিজ্য
অবৈধ ইটভাটায় সয়লাব হয়ে গেছে যশোর। জেলায় মোট ১৪৪টি ইটভাটা থাকলেও সেগুলোর ১১৪টিই অবৈধ বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ও ডিসির লাইসেন্স না থাকায় ওই ভাটাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা নেই। এমনকি জেলার কোনো ভাটাই সব শর্ত পূরণ করেনি।
পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে বেশিরভাগ ভাটা। জিগজ্যাগ পদ্ধতির মাত্র ৩০টি ইটভাটা এখন পর্যন্ত মোটামুটি আইনসিদ্ধভাবে চলছে বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের।
যশোরের বেশিরভাগ ভাটার বৈধতা না থাকায় বিষয়টি এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও উঠে আসে। তবে সম্প্রতি অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানিয়েছেন, গত এক মাসে ১৮টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। শিগগিরই অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদে কাজ শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: শেরপুরে ৮ ইটভাটাকে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা
২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইটভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়। নির্দিষ্ট এলাকায় ইটভাটার জায়গা, ভাটার দূরত্ব ও সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশনাও সে সময় দেওয়া হয়। এমনকি, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে পাস হয়।
ধারা-৪ এ সংশোধন এনে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়, চলমান যেকোনো আইনে যা কিছুই থাক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করলে কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। কিন্তু যশোরের প্রেক্ষাপটে এ সবের ব্যত্যয় ঘটে আসছে ২০১৩ তো পরের কথা, ২০১৯ সালের সংশোধনী আইনের পর থেকেও।
পবিবেশ আইন অনুযায়ী, এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, বাগান জলাভূমি, কৃষি জমি, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার বা ১ হাজার মিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে ভাটাগুলো এখন জিগজ্যাগ পদ্ধতির হতে হবে। ১২০ ফিট চিমনীর সনতনি ভাটা এখন আর আইনসিদ্ধ নয়, কিন্তু যশোর জেলার অধিকাংশ ভাটার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে চলেছে।
আইনের ব্যত্যয় ঘটলেও অনেকে এর আগে ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছেন। যদিও বিধি অনুযায়ী, পরিবেশ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার ভেতরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনোপ্রকার অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দিতে পারবে না। অথচ এর আগে অনেকেই নানা বাঁকা পথে হাসিল করেছেন ছাড়পত্র।
জেলায় এমন ভাটাও রয়েছে, যেখানে এক কিলোমিটার তো দুরের কথা, ২০ গজের মধ্যেই রয়েছে বসতবাড়ি, ১০০ গজের মধ্যে ঘনবসতি গ্রাম রয়েছে। ভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো শর্তই মানা হয়নি।
আবার সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবেও চলছে কয়েকটি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, আবাসিক এলাকায় ধানি ও কৃষি জমি নষ্ট করে নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ, শতাধিক পরিবারের বসতি গ্রামসহ রয়েছে স্পর্শকাতর অনেক প্রতিষ্ঠান। বিগত সময়ে পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এক কিলোমিটারের মধ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে—জেলায় এমন ভাটার সংখ্যা রয়েছে ১১০টি। এর অনেকগুলো জিগজ্যাগ হলেও পরিবেশ আইন মানা হয়নি। শর্ত পূরণ না করেই চলছে এসব ভাটার কার্যক্রম। যে কারণে অবৈধ ভাটার তালিকায় পড়েছে সেগুলো। ওই তালিকা থেকে বছর কয়েক আগে ৩৩টি ভাটার ব্যাপারে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা সদর দপ্তরের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। আইনগত বৈধতা না থাকায় ওই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। তারপরও ভাটাগুলোর অধিকাংশই এখন চলছে বহাল তবিয়তে।
সুত্রের দাবি, ডিসির লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাগুলো চলায় সেগুলোর বেশিরভাগের পাশেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা; নষ্ট হয়েছে কৃষি জমি; নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আবাসিক এলাকায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার অবৈধ ১১৪টি ভাটার ওপর সম্প্রতি নজরদারি শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ও ৮ জানুয়ারি জেলার ১৮টি অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে অধিদপ্তর। আইনগতভাবে না হলেও পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলে একে একে সেগুলো উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এছাড়া জেলায় খাতা-কলমে এখন যে ৩০টি বৈধ ভাটা আছে, তাদের ব্যাপারেও নতুন করে খোঁজখবর নেবে অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে ৪ ইটভাটায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা
এ ব্যাপারে এমদাদুল হক ইউএনবিকে বলেন, ভাটা-সংক্রান্ত সব অসঙ্গতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামা হচ্ছে। সব ধরনের দেন-দরবার উপেক্ষা করে জনস্বার্থে এবং এলাকার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে অবৈধ সব ভাটা উচ্ছেদে কাজ শুরু হয়েছে। অনেক ভাটার আংশিক ভেঙে দেওয়াও হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে।
তার ভাষ্যে, যশোরে (পরিবেশ নিয়ে) কোনো অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। আগে কী হয়েছে সেটি বিবেচ্য নয়, এখন সব ভাটাই বিধি অনুযায়ী চালাতে হবে। পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩৩৯ দিন আগে
টিকটক ডোবালেন ট্রাম্প, ত্রাতাও হলেন তিনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে টিকটক নিষিদ্ধে নেওয়া উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সেই তিনিই এবার ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপটির ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন। যদিও টিকটককে একেবারে স্বস্তি না দিয়ে একটা প্যাঁচ রেখে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেওয়ার পর টিকটক নিষেধাজ্ঞার আইন কার্যকরে আরও ৭৫ দিন বিলম্ব করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি।
তবে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে সচল রাখতে হলে দেশটির সরকারকে অর্ধেক মালিকানা দিতে হবে বলেও এ সময় আভাস দিয়েছেন ট্রাম্প।
শুধু তাই নয়, চীনকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘টিকটকের সঙ্গে মার্কিন চুক্তির অনুমোদন দিতে বেইজিং যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে রাজস্ব আরোপ করা হবে।’
জনপ্রিয় অ্যাপটি নিষিদ্ধের আইন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখায় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিনের শেষভাগে অ্যাপল ও গুগলসহ মার্কিন অ্যাপ স্টোর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় টিকটক।
তখন এক বার্তায় টিকটক জানায়, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে টিকটিক নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রে একটি আইন কার্যকর করা হয়েছে। যে কারণে এখন থেকে ব্যবহারকারীরা আর অ্যাপটিতে ঢুকতে পারবেন না।’
কিন্তু পরের দিনই আবার অ্যাপ স্টোরে দেখা দেয় টিকটক। পরে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘টিকটক ফিরেছে, আমাদের হাতে এটির কোনো বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুন: টিকটক বন্ধ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে!
৩৪২ দিন আগে
ঝিনাইদহে সার সংকটে পেঁয়াজ চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে রাসায়নিক সারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় নির্ধারিত সময়ে ডিলারের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না সার। তবে বাইরের দোকানে মিললেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা।
অপরদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এসব অনিয়মের খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যহত হবার শঙ্কায় রয়েছেন শত শত কৃষক। তবে ডিলাররা বলছেন, তারা যে বরাদ্দ পাচ্ছেন, তাতে উপজেলার কৃষকদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
উপজেলার ধাওড়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বুকভরা আশা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে রোপন করেছেন পেঁয়াজ। ভালো ফলনের আশায় নিয়মিত পরিচর্যার কাজও করছেন। কিন্তু সার সংকটের ফলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চিন্তার ভাজ চোঁখে মুখে ফুটে উঠছে। সঠিক সময়ে পেঁয়াজ খেতে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলন বিপর্যয়ে পুঁজি হারানোর চিন্তাও গ্রাস করছে তাকে।
এদিকে ডিলারদের মাধ্যমে চাহিদা মতো সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। তবে অতিরিক্ত টাকায় খোলা বাজারে মিলছে সার, এমন অভিযোগ এই কৃষকের।
শুধু শরিফুল ইসলামই নয়, তার মতো শত শত কৃষকদের অভিযোগের তীর ডিলারদের দিকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলাররা থাকেন না স্ব-স্ব স্থানে। দোকান খুলে বসেছেন পৌর এলাকায়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চড়া দাম দিলে খোলা বাজারে অল্প পরিমানণে পাওয়া যাচ্ছে এই সার। পেঁয়াজ আবাদের ভরা মৌসুমে সার সংকটে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে দ্রুত সার সংকট নিরসনের দাবি তাদের।
রফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে ডিলারের কাছে সার আনতে গেলে সার দিচ্ছেন না ডিলাররা। বলছেন আমাদেও কাছে সার নেই। আবার খোলা বাজারে গেলে সার মিলছে, তবে দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
উপজেলার মদনডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপন করেছি। ভালো ফলনের আশায় নিয়মিতই পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছি। তবে সার সংকটের কারণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় আছি। যদি সময় মতো পেঁয়াজ খেতে সার প্রয়োগ করতে না পারি তাহলে ফলন বিপর্যয়ে আমার সব পুঁজি হারাতে হবে। তবে ডিলারদের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছি না। তাইতো অতিরিক্ত টাকায় খোলা বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে সার।
আবুল হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘সার প্রয়োজন ৬ বস্তার, কাজ ফেলে রেখে ডিলারের কাছে গিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে পাওয়া যাচ্ছে এক বস্তা। একবস্তা সার নিয়ে কি করব?
ইসমাইল নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘সময়মতো জমিতে সার প্রয়োগ না করতে পারলে পেঁয়াজের ফলন ভাল হবে না। তাতে পুঁজি হারাতে হবে। এমন হলে পরের বছর থেকে আর পেঁয়াজ চাষ করব না।’
এদিকে ডিলারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নেই, সেকারণেই এ সংকট দেখা দিয়েছে।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান, কৃষকরা সার ঘরে মজুদ করে রাখায় এ সংকওট দেখা দিয়েছে। তা না হলে চাহিদা অনুযায়ী প্রতি কৃষক সার পেত। তবুও চেষ্টা করছি সব কৃষককেই পরিমাণমত সার দিতে। তবে ভালো ফলনের জন্য কৃষকদের নিয়মিত নানারকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে শৈলকুপা উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমি। যেখানে, ইউরিয়া, টিএসপি, ডিওপিসহ রাসায়নিক সারের চাহিদা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার মেট্টিক টন।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
৩৪২ দিন আগে
ঝুলে গেছে সিদ্ধিরগঞ্জ লেক প্রকল্পের কাজ
অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বেড়েছে জনসংখ্যা। এলাকাটিতে শুধু রপ্তানিমুখী আদমজী ইপিজেডেই কাজ করেন প্রায় লাখের কাছাকাছি শ্রমিক। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ।
ক্রমবর্ধমান শিল্পপ্রতিষ্ঠান আর বাড়িঘরের কারণে অঞ্চলটি অনেকখানি হারিয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য— ক্ষেত্র বিশেষে নেই বললেই চলে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়াতে আর নগরবাসীকে হাতিরঝিলের পরিবেশ উপহার দিতে সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন বড় প্রকল্প হাতে নেয় সিটি করপোরেশন। এসব প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ লেক।
সবশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পুনঃখনন, সড়ক, ড্রেন, ওয়াকওয়ে ও ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মে দুই ধাপে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ আটকে যাওয়ায় জনভোগান্তি চরমে
নাসিক ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা পুল থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং লেকটির ওপর মোট ছয়টি সেতু নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।
মূলত জাইকার অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর বছরখানেকের মধ্যে তা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে করোনা মহামারি আর অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণে সেই কাজের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু, তা পেরিয়ে হয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবুও লেকের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের মাত্র ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে লেক খননে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন তৈরিতে ৪ কিলোমিটার, আরসিসি সড়ক সাড়ে ৫ কিলোমিটার, সিসি ব্লক দিয়ে খালের পাড় বাঁধাই, ডিভাইডার ওয়াল নির্মাণে সাড়ে ৫ কিলোমিটার, একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, নৌকা চালনার ৯টি ঘাট, তিনটি ভাসমান মঞ্চ, তিনটি ওয়াটার গার্ডেন, তিনটি ঝুলন্ত বাগান, ৯টি পাবলিক টয়লেট, দুটি ফোয়ারা, দুটি ওয়েটিং শেড, ১৫টি প্ল্যান্টার বক্স, ২৮টি ডাস্টবিন, সড়কবাতি সিঙ্গেল ২৮টি এবং ডাবল ১৮২টি, দোলনা ছয়টি, সুইং স্লাইড দুটি, সাতটি ঢেঁকিকল, সেতুর মই তিনটি, ১৩২টি সিটিং বেঞ্চ, তিনটি আরসিসি সেতু এবং তিনটি ফুটওভার ব্রিজ।
লেকের কাজটি শুরু হওয়ার পর থেকে হাতিরঝিলের আদলের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন নগরবাসী। এটি এখন বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে।
লেকে হাঁটতে আসা সালাম নামের এক যুবক বলেন, ‘প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর যেভাবে বলা হয়েছিল তার কিছুই দেখতে পেলাম না। এক বছরের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। আমরা নিয়মিত এই লেকে হাঁটি— আড্ডা দেই। আমরা চাই লেকের কাজটি সম্পন্ন হোক। তাতে আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারব।’
জামাল নামের আরেকজন বলেন, ‘ডিএনডি লেকের কাজ অর্ধেক করেই আটকে রাখা হয়েছে। কাজটি শেষ হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী আজগর হোসাইন বলেন, প্রকল্পটি ৫ দশমিক ২ কিলোমিটারের। এরমধ্যে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি মূলত জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ছিল। হঠাৎ জাইকা তা বন্ধ করে দেওয়ায় কাজটি শেষ হয়নি। এখন বাকি যে অংশটুকু রয়েছে, সেটুকু নতুন করে বাজেটের পর শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে নিরাপত্তা জোরদার করে খুলে দেওয়া হয়েছে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান
৩৪৩ দিন আগে
হাতিরঝিল: ভয়ের এক নৈসর্গিক স্থান
মনোরম দৃশ্য ও জনতার সরব পদচারণার জন্য বিখ্যাত ঢাকার হাতিরঝিল ক্রমেই ভয় ও অপরাধ রাজ্যে পরিণত হচ্ছে।
ঢাকার অভ্যন্তরের এই মনোরম জায়গাটি পরিবার, দম্পতি এবং পর্যটকদের কাছে একটি পছন্দের গন্তব্য হলেও এলাকাটির অন্ধকার দিকটি ক্রমেই উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
হাতিরঝিল পরিদর্শন এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এর সৌন্দর্যের প্রশংসা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে শঙ্কার মিশ্রণের তথ্যই উঠে এসেছে।
রায়হান মাসুদ নামে বাড্ডার এক বাসিন্দা প্রায়ই তার ছোট সন্তানকে নিয়ে এই লেকে বেড়াতে আসেন।
কথার ফাঁকে তিনি তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার বাচ্চা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এখানে আসতে পছন্দ করে, তাই আমি দিনের বেলা তাদের নিয়ে আসি। তবে এলাকাটি অনিরাপদ মনে হয়, বিশেষ করে সন্ধ্যার অন্ধকার নামার পর। আমরা প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের খবর পাই, তাই সন্ধ্যা নামার আগেই চলে যাই।’
কেউ কেউ আবার নিজের বাসার কাছের ভয়ের কথাও প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা তাদের পাড়ায় একটি চুরির ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি বলছিলেন, ‘মালিকের কাজ থেকে ফেরার আগে এক সন্ধ্যায় আমার সামনের বাড়িটিতে ডাকাতি হয়। আমরা তাদের চিৎকার শুনে দেখি বাড়িটি লুটপাট করা হয়েছে। সম্ভবত ধরা পড়ার ভয়ে চোর চক্র কিছু নিয়ে যাওয়ার আগেই পালিয়ে গেছে।’
হাতিরঝিলে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। কিশোর এবং মধ্যবয়সী ব্যক্তিরা দলে দলে জড়ো হয়। তবে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
রাত ১১টা পর্যন্ত চলাচলকারী স্থানীয় বিক্রেতারা বলছেন, গভীর রাতে পরিবেশ বদলে যায়।
এক বিক্রেতার বলেন, ‘আমরা চলে যাওয়ার পর থেকেই মাদক সেবন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে শুরু করে।’
পুলিশের পর্যবেক্ষণ
হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক রাজু আহম্মেদ জানান, ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিল চুরি ও ছিনতাইয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বেশিরভাগ অপরাধী মাদকাসক্ত, প্রায়শই বেকার এবং নিম্ন-আয়ের পরিবার থেকে আসা। এলাকার ঘনবসতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে এসব অপরাধ তারা সহজেই করে থাকেন।’
পুলিশ পরিদর্শক আহমেদ হাতিরঝিলে মাদক সেবনের ব্যাপকতার দিকেও ইঙ্গিত করেন। ‘এখানকার বেশিরভাগ মাদকাসক্ত গাঁজা সেবন করে, যার মধ্যে কিশোর, রিকশাচালক এবং এমনকি ধনী ব্যক্তিরাও রয়েছে যারা গাড়িতে করে অ্যালকোহল পান করতে আসেন। বড় মাদকের চালান বিরল হলেও ছোট আকারের চালান খুবই সাধারণ ঘটনা। আমরা যাদের ধরে ফেলি তাদের আটক করি, কিন্তু বড় আকারের গ্রেপ্তার সীমিত।’
গ্রেপ্তার ও জামিনের চক্র
আহমেদ আরও বলেন পুলিশ প্রতিদিন শত শত গ্রেপ্তার করছে। ‘সকালের দিকে আমাদের সেলগুলো মাদক সেবন বা ঘোরাঘুরির জন্য আটক ব্যক্তিদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। তবে তাদের বেশিরভাগই দ্রুত জামিন পেয়ে যান। যাদের মধ্যে আগে বড় ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরাও থাকেন। তাদের সহযোগীরা প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে।’
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলের আদলে সুতিভোলা খাল সাজানো হবে: ডিএনসিসি মেয়র
এলাকার দুর্বলতা স্বীকার করলেও পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হাতিরঝিলকে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেনি।
আহমেদ বলেন,‘আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করি, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।’
ছয় মাসের অপরাধ চিত্র
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে হাতিরঝিল এলাকায় ১৯টি খুন, চারটি ধর্ষণ, ২৩টি চুরি, ১৬টি আত্মহত্যা ও ছয়টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
যদিও প্রকাশ্য স্থানে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি, এই অপরাধগুলো প্রায়শই নিকটবর্তী বাড়িতে ঘটে, তদন্ত চলছে।
এসব ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করছি।
শান্ত নগরীর হাতিরঝিল ভয়ংকর অপরাধ এলাকায় রূপান্তর ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি।
স্থানীয়রা জানান, আপাতত নিরাপত্তা সতর্কতার কারণে এর সৌন্দর্য অনেকখানি ম্লান হয়েছে। কারণ দর্শনার্থীদের এর সৌন্দর্য উপভোগ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলে লেক থেকে গাজী টিভির নিউজরুম এডিটরের লাশ উদ্ধার
৩৪৪ দিন আগে