বিশেষ-সংবাদ
ডিভোর্স: কেমন আছেন ঢাকার একক মায়েরা
দেশে বর্তমানে ডিভোর্স বা বিয়েবিচ্ছেদের হার বেড়েছে। অন্তত পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। এর সঙ্গে ক্রমশ পরিচিত পাচ্ছে একটি টার্ম— সিঙ্গেল মাদার বা একক মা। সন্তান হওয়ার পর ডিভোর্স হলে বেশিরভাগ সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকছে। ফলে নিজের পাশাপাশি সন্তানকে বড় করে তোলার সংগ্রামের ভেতর দিয়েই চলছে একক মায়েদের জীবন।
রাজধানীতে বসবাসরত এমনই কয়েকজন একক মায়ের জীবনের গল্প জানা গেল তাদের মুখে।
তামান্না তিথি (ছদ্মনাম)। ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় থাকেন ৩২ বয়সী এই নারী।
তিথি বলেন, ‘কোনো মেয়েই শখ করে ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে যায় না। আমাদের সমাজে একটা মেয়ের একা থাকাটাই মানুষ বাঁকা চোখে দেখে। আমি ডিভোর্সের পর মানুষ চিনেছি খুব ভালোভাবে।’
‘আপনজনরা দূরে সরে গেছে; নিজের পরিবারও পাশে নেই। তবুও সন্তানকে একটা টক্সিক (বিষাক্ত) সম্পর্কের ভেতর রাখার চেয়ে, স্লো পয়জন গ্রহণ করার মতো ধীরে ধীরে মরে যাওয়ার চেয়ে একবারে কষ্টকে স্বীকার করা ভালো। যেটা ঘটে গেছে, সেটা মেনে নিয়ে চলছি। একা ছেলেকে নিয়ে কষ্ট হয়, তবে মানসিকভাবে শান্তিতে আছি—এটাই অনেক।’
এই নারী মনে করেন, জীবনে সংগ্রাম থাকবেই, উত্থান-পতনও থাকবে। কিন্তু একটা মেয়ে যদি স্বাবলম্বী হয়, তবে তার সঙ্গে কেউ না থাকলেও জীবন অতটা কঠিন হয় না। পায়ের নিচে মাটি থাকা খুব জরুরি।
রেহনুমা দিশা (ছদ্মনাম) থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। সাড়ে ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকেন তিনি।
দিশা বলেন, ‘আমরা (স্বামী-স্ত্রী) একসঙ্গেই ছিলাম, তবে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করেছি (সম্পর্ক) ঠিক করার, কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাডজাস্টমেন্ট (সমন্বয়) হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কখনও মারাত্মক ঝগড়া হয়নি, কিন্তু সব কিছুতে ছিল মতের অমিল। যেটা নিয়ে মনোমালিন্য ছিল, শ্বশুড়বাড়ির মানসিক অত্যাচারও ছিল।’
‘সব মিলিয়ে আর পারছিলাম না। তবে আমার একটা সুবিধা—বাচ্চাকে আমার মা-বাবার কাছে রেখে অফিসে যেতে পারি। কিন্তু সেখানেও অনেকের কটু কথা শুনতে হয়। প্রতিবাদ তো সবাই করতে পারে না আর করে লাভও নেই। তাই নিজের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করি। বাচ্চার জন্য চাকরিটা ধরে রেখার চেষ্টা করি।’
তিনি বলেন, ‘মা-বাবার ওপর আর্থিকভাবে এখন আর নির্ভর করা সম্ভব নয়। এমনিতেই মেয়েকে নিয়ে তাদের কাছে থাকি।’
একেকজন একক মায়ের সংগ্রাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও শব্দটা একই— সিঙ্গেল মাদার।
সিঙ্গেল মাদার টার্মটি বাকি সবার মতো একই হলেও ৩৫ বছর বয়সী এশা করিমের (ছদ্মনাম) জীবনসংগ্রাম আরও কঠিন।
৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে তিনি থাকেন বনশ্রীর একটি বাসায়। পেশাগত কারণে বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয়।
তার কথায়, ‘অনেকদিন ধরে সেপারেশনে (আলাদা) ছিলাম। তখন আমার মেয়েকে দেখার জন্য আরেকটা কিশোরী মেয়েকে রেখেছিলাম। আমি অফিসের কাজে বাইরে থাকলেও ওর কাছে আমার মেয়ে খুব ভালো থাকত।’
কিন্তু ওই মেয়েটি চলে যায় একসময়। পরে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকে নতুন (কাজের) লোক ঠিক করলেও মেয়ে তার সঙ্গে থাকতে সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করে না। ফলে নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এই নারী।
আরও পড়ুন: বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে যা বললেন রাজ
তিনি বলেন, ‘(মেয়ে) প্রচুর কান্নাকাটি করে। একান্ত বাধ্য হয়ে তাকে তার বাবার কাছে আপাতত রেখেছি। সুযোগ পেলেই দেখে আসি বা ছুটির দিনে আমার কাছে নিয়ে আসি। মাত্রই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। কিছু সময় অফিসের কাজের ফাঁকে স্কুলে গিয়ে দেখে আসি।’
এখন বাবার সঙ্গে থাকলেও তিন-চার মাস পর সেখানে রাখার আর উপায় থাকবে না। এই ভাবনায় এখন থেকেই দুশ্চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে চলছেন তিনি।
‘তখন মেয়েকে কীভাবে রাখব সেটা ভেবে অস্থির লাগে। এদিকে মেয়েকে সপ্তাহের কয়টা দিন দূরে রাখতেও প্রতি মুহুর্তে হাহাকার লাগে। মেয়েকে ভিডিও কল দিলেই বলে— মা, আমাকে তোমার কাছে একেবারে নিয়ে যাও। এটা একটা মায়ের জন্য যে কতটা কষ্টের, তা যারা এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন। এই কষ্ট আমি অনুভব করি প্রতিনিয়ত।’
‘তবু ওর জন্য বাঁচতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্বাবলম্বী হয়ে নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।’
সাজিয়া সাবরিনা (ছদ্মনাম), বয়স ৩৬। সন্তান নিয়ে মা-বাবা, ভাই-ভাবির সংসারে থাকেন মোহাম্মদপুরে। স্বামীর প্রতারণা সামনে আসার পর হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। চাকরি করেন না, কিন্তু মেনেও নিতে পারেন না। ৪ বছরের মেয়ে ও ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি।
তিনি বলেন, ‘আমি সুশিক্ষিত, কিন্তু ভালো পরিবারে বিয়ে হওয়ায় চাকরিটা করা হয়ে ওঠেনি। নিজেরই তেমন ইচ্ছে ছিল না। আর এই বয়সে চাকরি পাওয়াও কঠিন। দুইটা সন্তানসহ মা-বাবার কাছে বোঝা না হলেও ভাই-ভাবির কাছে যে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই—সেটা বুঝি। সেলাইয়ের কাজ শিখে সেই আয় সংসারে দেই, পাশাপাশি সন্তানদের পড়াই।’
তার কথায়, ‘আত্মসম্মান বাঁচিয়ে ওখান থেকে চলে এসেছি। কিন্তু এখানে কষ্ট করে পড়ে আছি শুধু সন্তানদের কথা ভেবে। এখন বুঝি জীবনের পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। তাই স্বামীর যা কিছু থাকুক, একটা মেয়ের স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরি।’
আরও পড়ুন: শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা সানিয়া মির্জার পরিবারের
‘মেয়ের জন্য ভেবেছিলাম কম্প্রোমাইজ করে থেকে যাই সম্পর্কের টানাপোড়েনের এই সংসারে। কিন্তু যখন দেখি, আমাকে কথার মাধ্যমে নির্যাতন করা দেখে মেয়ে ট্রমাটাইজড (মানসিক চাপে ভোগা) হয়ে যাচ্ছে, তখন সেই সম্পর্কে থাকার চেয়ে বেরিয়ে আসা সম্মানজনক মনে করেছি।’
‘একটা সম্মানজনক পেশায় থাকার পরও অনেককেই এমন মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে দেখেছি।’
তবে দুজন মানুষ আলাদাভাবে ভালো মানুষ হলেও তাদের মতের অমিল হওয়া, অ্যাডজাস্টমেন্ট না হওয়া স্বাভাবিক বলে স্বীকার করে নেন এই নারী। এমন ক্ষেত্রে সন্তানের ভালোর জন্য বিচ্ছেদের পরও কেউ কারও প্রতি অভিযোগ না করে একটা সুস্থ সম্পর্ক রাখা যায় বলে মনে করেন তিনি।
আরও বলেন, ‘আমি কখনোই বিচ্ছেদের পক্ষে না, তবে সম্পর্কে সাবলীল না হলে সেটা কারও জন্যই ভালো কিছু নিয়ে আসে না। সেক্ষেত্রে বেরিয়ে আসাই ভালো। বিচ্ছেদ সবসময় যে নেগেটিভ তা নয়, কিছু সময় মানসিক শান্তি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’
‘অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। তবে সমাজ আগের চেয়ে বদলেছে। আগে ডিভোর্স হলে মেয়েদের শুধু কটুবাক্যই শুনতে হতো। এখন পজিটিভলি সাপোর্ট দেয় সহকর্মী, বন্ধুসহ অনেকেই।’
যা বলছে পরিসংখ্যান
দেশে ডিভোর্সের হার নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে স্থূলবিচ্ছেদের হার শূন্য দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। তবে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস–২০২২ নামের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে তা বেড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞের মত
বিয়েবিচ্ছেদের কারণ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক এবং উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করছে। ডিভোর্সকে শুধু একটা তকমা দিয়েই কারও জীবনকে বিচার করা উচিৎ নয়। সবাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
আগের তুলনায় মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়াও বিচ্ছেদের একটা বড় কারণ বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তার মতে, পরনির্ভরশীলতা মানুষের মনকে দুর্বল করে। শুধু স্বনির্ভর না হওয়ার কারণে অনেকে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বয়ে নিয়ে চলে।
তিনি বলেন, তবে ডিভোর্সের আগে সন্তান থাকলে এখনও তাকে ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান বলা হয়। মানুষ যেমন জীবনের তাগিদে একসঙ্গে থাকে, তেমনি জীবনের প্রয়োজনেই আলাদা হয়। কাজেই এই বিষয়গুলো সন্তানের মনে যেন বিরূপ প্রভাব না ফেলে, তার জন্য ছোট থেকেই তাদের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে। সন্তান যার কাছেই থাকুক, মা-বাবাকে বোঝাতে হবে— তুমি একা নও। যেটা ঘটে গেছে সেটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা।
এক্ষেত্রে এই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সন্তানদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। মা-বাবার আলাদা থাকা যে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয় এবং হতেই পারে— সেটা সন্তানকে বোঝাতে হবে।
প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে আধুনিক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সর্বোপরি, বড় ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলে বিচ্ছেদ কাম্য নয়। একে-অপরের মতের, চিন্তার ভিন্নতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে পারলে বিয়েবিচ্ছেদের মতো বিষয় অনেকাংশেই এড়ানো যায়।
আরও পড়ুন: রাকিবের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানালেন মাহি
৩৪৪ দিন আগে
এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের নজর ছোট ও গণমুখী প্রকল্পে
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে ছোট হলেও গণমুখী উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অর্থনীতি এখন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে একনেকের কয়েকটি সভায় উপদেষ্টারা এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়— এমন ছোট ছোট প্রকল্প বাছাই করতে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সংশোধিত বাজেটে এডিপি সংকোচন করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
ইউএনবিকে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'তবে এসব ছোট প্রকল্প অবশ্যই স্থানীয় জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে উপকারী হতে হবে, এটিই বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভায় স্পষ্টভাবে বলা হয়, সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু ভালো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়।
এ বিষয়ে একনেক সভায় এসব প্রকল্প থেকে যারা উপকৃত হবেন তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো উন্নয়ন করার সময় প্রথমে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কোনো সেচ প্রকল্প কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নেওয়া হলে- তা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা করে তাদের প্রচলিত সেচ প্রক্রিয়া ও নতুন সেচ ব্যবস্থার প্রতি তাদের মনোভাব সম্পর্কে জানতে হবে।
তিনি বলেন, ‘নতুন সেচ প্রকল্পটি যদি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা না করে রাজধানী শহর থেকে নকশা করা হয় তাহলে তা ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। কারণ, স্থানীয় জনগণ হয়তো এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না, বা ব্যবহার করতে উৎসাহিত হবেন না।’
পরিকল্পনা কমিশনের এই কর্মকর্তা বলেন, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে কোনো বড় প্রকল্প চালু করলে ভালো রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ নাও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাই সরকার এডিপি বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে স্থানীয় পরামর্শ নিয়ে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়।’
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের গত বাজেটে পাস হওয়া ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: অর্থের প্রবাহ বাড়াতে এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুত করার উদ্যোগ সরকারের
ছাত্রনেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।
আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপির ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান ও নতুন প্রস্তাবিত সব প্রকল্প পর্যালোচনায় বিলম্বের পাশাপাশি অর্থ ছাড়ে ক্রমবর্ধমান বিলম্বকে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইএমইডি কর্মকর্তারা।
এছাড়া আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনেক ঠিকাদার প্রকল্পগুলো ছেড়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন: সংশোধিত এডিপিতে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' প্রকল্প বাদ, হতে পারে বড় সংকোচন
৩৪৫ দিন আগে
বিএনপির অবস্থান বদল, বছরের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচন দাবি
বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া বিএনপি হঠাৎ করেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। কারণ, সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, একটি মহল ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তারা বলেন, বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তাদের দল সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো উদ্যোগও তারা মেনে নেবে না— সেটিও স্পষ্ট করা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তাদের দল সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সেমিনার, আলোচনা ও অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে মনোনিবেশ করতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে।
আরও পড়ুন: আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত সপ্তাহে বলেছেন, তার সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন যে ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছেন। ‘ এটিকে সরকারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার চিন্তার একটি ইঙ্গিত বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ ছাড়া একটি ইসলামপন্থী দলের শীর্ষ নেতা সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে কথা বলছেন।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, 'আমাদের স্থায়ী কমিটির গত দুটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের এই উদ্যোগ অহেতুক সংসদ নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত। তাই আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা না করে জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছাত্রনেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তায় সরকার গঠনে কাজ করছেন। ‘তারা আগাম জাতীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন, কারণ নির্বাচনের আগে তাদের দলকে সংগঠিত করতে এবং সারা দেশে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য সময়ের প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বন্ধ করায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রশংসা করল বিএনপি
বিএনপি নেতা বলেন, ‘এজন্য তারা সরকারকে প্রথমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। তাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির সুযোগ করে দিচ্ছে। আমরা সরকারের সমর্থন নিয়ে কোনো দল গঠন করতে চাই না, সংস্কার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নামে যৌক্তিক কারণ ছাড়া নির্বাচন পেছাতেও চাই না।’
তিনি বলেন, তাদের স্থায়ী কমিটিও প্রধান উপদেষ্টার ন্যূনতম ভোটদানের বয়স ১৭ বছর করার পরামর্শের বিরোধিতা করেছে। ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভোটার হওয়ার জন্য বর্তমানে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং এটি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।’
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে আগ্রহী হলেও ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
তিন দিন পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এমন ঘটনাবলির পরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আগস্টের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। 'আমরা সবার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই।'
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা এখন পরিষ্কারভাবে বলছি, জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সেই যৌক্তিক সময়সীমা। নির্বাচন কমিশন যেহেতু নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত, তাই সরকার এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছি না।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের জনগণ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচন করবে, যে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে এই প্রথা চলে আসছে।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছে এমন নজির নেই। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করারও প্রয়োজন নেই। আমরা চাই সরকার জাতীয় নির্বাচনের দিকে পুরোপুরি নজর দিক।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকার তাদের নির্বাচনের দাবির প্রতি কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তা দেখার জন্য তারা এখন অপেক্ষা করবেন।
তিনি বলেন, 'তারা যদি ইতিবাচক সাড়া না দেয়, তাহলে আমরা সমমনোভাবাপন্ন দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করব।’
আরও পড়ুন: বিএনপির সঙ্গে দুরুত্ব নয়, সুসম্পর্ক রয়েছে জামায়াতের: ডা. তাহের
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, বর্তমান সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব জাতীয় নির্বাচন করা, অন্য কোনো নির্বাচন নয়। ‘তাই, কত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে আমরা অন্য কোনো নির্বাচনের কথাও ভাবছি না।’
৩৪৭ দিন আগে
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফ্যাক্ট চেকিং, অগ্রগতি কতখানি?
গেল বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট রাতে গণমাধ্যমকর্মী কামরুল ইসলামের কাছে খবর আসে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী বাংলাদেশের থানাগুলোতে আটকা পড়েছে এবং তারা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে। ফেসবুক ফিডেও এ সংক্রান্ত অসংখ্য ভিডিওতে দাবি করা হয়— এক রাতের মধ্যে ভারত বাংলাদেশ দখলের পাঁয়তারা করছে। পরদিন সকালে তথ্য যাচাই করে কামরুল জানতে পারেন পুরো ব্যাপারটিই ছিল গুজব এবং ডাহা মিথ্যা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আজগুবি, বানোয়াট, গুজব, অপতথ্য এবং মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি নিত্যদিনের ঘটনা। বাংলাদেশি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ওয়াচের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রক্রিয়ায় ৬৩৮টি অপতথ্য ছাড়ানো হয়েছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়িয়েছে গত বছরের আগস্টে। একমাসে বিভিন্ন মাধ্যমে ৯১টির বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয়। আগস্ট মাসে ছড়ানো অপতথ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ভুয়া খবর। এর বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু, ইসরায়েলে ইরানের হামলা, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য অপতথ্য ছড়িয়েছে বছরজুড়ে।
যারা এ ধরনের অপতথ্য ছড়ান তারা সিংহভাগ সময়ে সহজ মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগমাধ্যমকে। সাধারণ মানুষ এ ধরণের তথ্য দেখেন এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিজের পেজে বা অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। এতে করে বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে মুহূর্তেই ভুল তথ্য পৌঁছে যায় এবং মানুষ সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখায়। অনেক সময় এর ফলাফল হয় ভয়াবহ।
কোনো ধরনের ফ্যাক্ট চেক না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্যের বন্যা বয়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ফ্যাক্ট ওয়াচের গাইডেন্স এডিটর অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, যারা অপতথ্য ছড়ায়, তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মোক্ষম সময় এবং সুযোগ খুঁজে নেয়। বেশিরভাগ অপতথ্য এমনভাবে ছড়ানো হয়, যা কিনা মানুষের আবেগকে নাড়া দেয়। মানুষ আবেগের বশবর্তী হয়ে যাচাই-বাছাই না করেই সেসব তথ্য বিশ্বাস করে এবং শেয়ার করে। এতে রীতিমতো গুজবের বন্যা বয়ে যায়।
এমনটাই ঘটেছিল গণমাধ্যমকর্মী কামরুল ইসলামের বেলায়। কামরুল বলেন, 'সেদিন রাতে আমি তথ্য যাচাই না করেই আমার সহকর্মীদের ফোন দিয়ে জানাই এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তারাও সেটি যাচাই-বাছাই না করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ ধরনের ভিডিও শেয়ার দিতে থাকে। বাকিরাও হয়তো এভাবেই তথ্যগুলো নিজেদের অজান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো রাতটা ছিল গুজব আর অপতথ্যের মধ্য দিয়ে কাটানো একটা সময়।'
অধ্যাপক সুমন বলেন, 'বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা দেখে তা ক্রসচেক করে না। এটা সত্যি-মিথ্যার থেকেও তাদের কাছে বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে। এটা তার আবেগকে নাড়া দিচ্ছে কিনা এবং সে চায় বাকিরাও তার সঙ্গে আপ্লুত হোক।'
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা করা হয়েছে: শ্রম উপদেষ্টা
মেটা ফ্যাক্ট চেকিং
সম্প্রতি মেটা (ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ) যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ফ্যাক্ট-চেকিং ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতদিন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে মেটার তথ্য,ছবি ও ভিডিও'র ফ্যাক্ট-চেকার হিসেবে কাজ করা আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের (আইএফসিএন) বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মার্ক জাকারবার্গ জানান, প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং পাশাপাশি পোস্টে অতিরিক্ত সেন্সরশিপ আরোপ করছে।
নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে আইএফসিএন বলছে, ফেক্ট-চেক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং মেটা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতী। বারবার মেটাকে রাজনৈতিক নেতাদের অপতথ্য ছড়ানো প্রসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও প্রতিষ্ঠানটি থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
যেভাবে মেটা যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ফ্যাক্ট-চেকিং থেকে সরে এসেছে একইভাবে এশিয়াসহ অন্যান্য দেশেও নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চাইলে গুজব এবং অপতথ্যের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যাবে বলে মতো বিশ্লেষকদের।
আরও পড়ুন: ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার গুজব ও ভুয়া ভিডিও প্রত্যাখান দিল্লির
এ ব্যাপারে বার্তাসংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেক এডিটর কদরউদ্দিন শিশির বলেন, মেটার ফ্যাক্ট-চেকিং থেকে সরে আসা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইউরোপ বা এশিয়ার ওপর আরোপ করা মেটার জন্য কঠিন হবে। ইউরোপের আইনেই আছে, কোনো প্ল্যাটফর্ম থেকে মিথ্যা নিউজ শেয়ার হলে বা অপতথ্য ছড়ালে দায়ী হবে খোদ প্ল্যাটফর্ম। একইভাবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশে অনেক ভুয়া নিউজের জন্য দাঙ্গা এবং সংঘর্ষের মতো ঘটনা আছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্যও নানা বিষয়ে মোটা দাগে ফেসবুকে ছড়ানো ভুল তথ্যকে দায়ী করা হয়। এমন একটি স্পর্শকাতর অঞ্চলে মেটা ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধ করে দিলে সেটা মোটেই ভালো ফল বয়ে আনবে না।
মেটার সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো প্রসঙ্গে শিশির বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত মেটাকে এখানে ফ্যাক্ট-চেকের পরিধি আরও বাড়াতে চাপ প্রয়োগ করা। এছড়া ফ্যাক্ট চেক শুধু মেটার ওপর ছেড়ে না দিয়ে অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো উচিত। ইউটিউবে কোনো ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ব্যবস্থা নেই। অথচ এই প্ল্যাটফর্মকে অনেক অপতথ্য ছড়ায়। এটিও বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাংবাদমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেকিং
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তার বড় একটি অংশ গুজব কিংবা অপতথ্য- এমন অভিযোগ তুলেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ৭৩ শতাংশ বিশ্বাস করেন মূলধারার গণমাধ্যমে হরহামেশা অপতথ্য ছড়ানো হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র না, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও মূলধারার গণমাধ্যম থেকেও ভুল সংবাদ প্রকাশের তালিকা কোনো অংশে কম নয়।
এ প্রসঙ্গে এএফপির শিশির বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় সংবাদমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেক ডেস্ক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে এ ধরণের কোনো ডেস্ক নেই। এতে করে একটি সংবাদ সঠিক নাকি ভুল অনেক সময় সংবাদকর্মী নিজেই তা যাচাই করেন না বা জানেন না কীভাবে যাচাই করতে হবে। গণমাধ্যম অফিসে ফেক্ট-চেকার থাকুক বা না থাকুক, একজন সাংবাদিক ফ্যাক্ট-চেকিং না জানলে কোনোদিনও ভালো সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারবেন না।
স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং কমিশন
ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য মেটা বা তৃতীয় কোনো পক্ষের ওপর নির্ভর করা বর্তমানে এসে বুদ্ধিদীপ্ত কোনো পদক্ষেপ হতে পারে না বলে মনে করেন গণযোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা থাকে করপোরেট ফ্যাক্ট-চেক প্রতিষ্ঠানের নিজ সুবিধা আদায়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, সরকার গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের উচিত দেশে স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেক কমিশন গঠনের সুপারিশ করা। ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান যদি সরকার মদদপুষ্ট কিংবা করপোরেট সুবিধাপুষ্ট হয়, তাহলে নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট উঠে আসবে না।
স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে একইভাবে ফ্যাক্ট-ওয়াচের অধ্যাপক সুমন বলেন, ফ্যাক্ট চেকের জন্য মেটার ওপর নির্ভরশীল হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল ভালো হবে না। মানুষের মধ্যে গণমাধ্যম সচেতনতা বাড়াতে হবে। একটি সংবাদ বা তথ্য কীভাবে যাচাই করতে হয়, সেটি শিখলে সাধারণ মানুষই এক একজন ফ্যাক্ট চেকার হয়ে উঠতে পারবেন।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে সেনাবাহিনী জড়ো হয়নি, গুজব ছড়ানো হয়েছে
৩৪৯ দিন আগে
মানিকগঞ্জে বেড়েছে শীতজনিত রোগ, বেশি আক্রান্ত শিশু-বয়স্করা
মানিকগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক শীতজনিত রোগী চিকিৎসকের শরনাপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের বেডে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক শীতজনিত রোগী ভর্তি থাকছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীতজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। এমতাবস্থায় বেডের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের সূত্রমতে, ২৫০ শয্যার জেলার জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এদের মধ্যে ৬০ ভাগই শীতজনিত রোগী।
তিনি বলেন,নবজাতক ও শিশু ওয়ার্ডে ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়ায়, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ ভর্তি হচ্ছে শিশুরোগী। স্থান সংকুলন না হওয়ায় অনেক শিশুরোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকেই প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। ওই সময় থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীও বাড়তে থাকে। ডিসেম্বর মাসের পুরোটা সময়ে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। বহির্বিভাগ ও ভর্তিরোগী বাড়তে থাকে আশঙ্কজনক হারে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে
মানিকগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এবিএম তৌহিদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক।
গত ডিসেম্বর মাসে বহির্বিভাগে প্রায় ৯ হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে ২ হাজার ১১২ জন শিশু ও ৯৭২ জন বয়স্ক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। একই সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আরও ২২৫ শিশু ও ৮৮ বয়স্ককে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
আর চলতি মাসের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বহির্বিভাগে প্রায় তিন হাজার শীতজনিত রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৬২ জন শিশু ও ৩১৬ জন বয়স্ক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। একই সময়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ড, শিশু ও নবজাতক বিভাগে ভর্তি হওয়ায় ৭১৫ শিশু ও ৩৮২ জন বয়োবৃদ্ধকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, শীতে কুয়াশা, ধুলাবালির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়ায়। কুয়াশার কারণে ব্যাকটেরিয়া ওপরে উঠতে পারে না, নিচে ঘুরে বেড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসগুলো খুব সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। সাধারণত লোটা ভাইরাসের কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ব্রঙ্কাইটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস শিশু ও বয়স্কদের সহজেই আক্রান্ত করে। নিউমোনিয়ার কারণে যেসব ভাইরাসগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলো সহজেই শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসকে আক্রান্ত করছে।
জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। এতে হিমশিমে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। নির্ধারিত ২০ বেডের অতিরিক্ত আরও ১০ থেকে ১৫ জন রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: শীতজনিত রোগে মাগুরার হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর ভিড়
৩৪৯ দিন আগে
মাস্টারপ্ল্যানে চলছে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন, বাড়বে সক্ষমতা
মোংলা বন্দরে আউটার ও ইনারবার ড্রেজিংয়ের পর এবার ‘পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ নামে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ৮ জানুয়ারি একনেকের সভায় অনুমোদন হওয়া ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে মোংলা বন্দরের এ প্রকল্পটিও রয়েছে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর মোহনা হিরণ পয়েন্ট দিয়ে হারবাড়িয়া পর্যন্ত আউটারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। আর বর্তমানে ইনারবার ড্রেজিং চলমান।
আরও পড়ুন: মোংলায় পশুর চ্যানেলে ২ জাহাজের সংঘর্ষ, জেলে নিখোঁজ
বর্তমানে বন্দর চ্যানেলের ইনারবার ড্রেজিং শেষ হলে ৯ দশমিক ৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দর জেটিতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারবে। আর বন্দরের চ্যানেলের ড্রাফ ধরে রাখতে ‘পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ নামের এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দর সূত্র জানায়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়েছিল এই সমুদ্র বন্দরটি। সে সময় বন্দরটি অচল হয়ে পড়ার মূল কারণ ছিল- বন্দরের আউটার ও ইনারবার চ্যানেলে ড্রেজিং না করা। যেকারণে ঐ সময়ে চরম নাব্যসংকট দেখা দেওয়ায় জাহাজ ভিড়তে পারত না বন্দরে। মাসের পর মাস জাহাজ শূন্য হয়ে অচলাবস্থা ছিল বন্দর জুড়ে।
এছাড়া বন্দরের আউটারবার (বর্হিনোঙ্গর) ও ইনারবারে (অভ্যন্তরীণ) নাব্য সংকটের কারণে কনটেইনারবাহী ৯ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে না পারায় কনটেইনারাইজড মালামাল আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। ২০২০ সালে ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার আউটারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়। এখন আউটারবার চ্যানেল দিয়ে বর্তমানে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ অনায়াসে আসা যাওয়া করছে। পরে বন্দর জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারে ৯ দশমিক ৫০ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ আনার জন্য পশুর চ্যানেলের জয়মনিরঘোল হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার নৌপথ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের ইনারবারে ২১৬ দশমিক ০৯ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ২০২১ সালের ১৩ মার্চ মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের প্রায় ২৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদীপথের ইনারবার (অভ্যন্তরীণ চ্যানেল) ড্রেজিং শুরু হয়। এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বৃদ্ধি করে তা এখনও চলমান। সেই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: ২ বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
এই প্রকল্প দিয়ে ২১৬ দশমিক ৯ লাখ ঘনমিটার বালু ড্রেজিং করা হবে।
চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি ঠিকাদার হিসেবে জয়েন্ট ভেঞ্চারে এই ড্রেজিং কাজ করছে। ইনারবার ড্রেজিংয়ের উত্তোলিত পলিমাটি ও বালু ফেলার জন্য ১ হাজার ৫০০ একর জমির বরাদ্দ নেওয়ার কথা থাকলেও তা চলমান রয়েছে।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
বন্দরকে সচল রাখতে পর পর ৩টি প্রকল্প গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে আউটারবার ড্রেজিং শেষ হয়েছে, এখন ইনারবার ড্রেজিং কাজ চলমান।
গত বুধবার মোংলা বন্দরের জন্য ‘পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ নামের একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে একনেকে। এ প্রকল্পটির মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
প্রকল্পটি চলতি বছরের (২০২৫) সালে জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
মোংলা বন্দরে ‘পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ প্রকল্পও পরিকল্পনায় রয়েছে। এটিও জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হবে।
আরও পড়ুন: কুশিয়ারার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম মানুষ
‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হবে। এটি বাস্তবায়ন করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মেয়াদকাল ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
এছাড়া ‘গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম এবং ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস)’ প্রকল্পটি ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছে, যা নৌপরিবহন অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে নিয়মিত পশুর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। প্রথম আউটারবার ড্রেজিং শেষ করে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মোংলা বন্দর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আমরা সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি। দেশের তিনটি বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেট্রোরেল প্রকল্পের সব ইকুইপমেন্টসহ দেশের বড় বড় প্রকল্পের মালামাল এই বন্দর দিয়ে আনলোড হচ্ছে। এ বছর বন্দরে রেকর্ড সংখ্যক জাহাজের আগামন-নির্গমনসহ রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বন্দরকে আরও গতিশীল ও আধুনিক করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এর মধ্যে কিছু প্রকল্প শেষ হয়েছে এবং কিছু চলমান।
শাহীন রহমান আরও বলেন, বর্তমানে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ইনারবার বা অভ্যন্তরীণ চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে এবং পশুর চ্যানেল সংরক্ষণ ড্রেজিং শুরু করতে যাচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মযজ্ঞ শেষ হলে মোংলা বন্দরের নাব্যসংকট নিরসনসহ গতিধারা ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, একটি বন্দরকে এগিয়ে নিতে দরকার মাস্টারপ্ল্যান। আমরা বন্দরকে নতুন রূপে সাজাতে একটি বড় মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছি বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: বছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজের চাপ
৩৪৯ দিন আগে
কুশিয়ারার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম মানুষ
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন মানুষ। ভাঙনে এরই মধ্যে নদীপাড়ের অনেকেই হারিছেন বসতভিটা। কেউ কেউ বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজর দিচ্ছে না- এমন অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর রানীগঞ্জ সেতুর জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব জালালপুর, ভাঙাবাড়ি, বাঘময়না পর্যন্ত থেমে থেমে নদী ভাঙছে। কয়েক মাসে নদীতে চলে গেছে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার জায়গা। এতে কমপক্ষে ৪০টির বেশি ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে খোলা জায়গায় বসবাস করছেন। আবার অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীর পাড়েই বসবাস করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাইলগাঁও ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের আল আমিন, পাইলগাঁও শাপলা ব্রিক ফিল্ডের মালিক ফারুক মিয়াসহ অনেকে অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে মাটি নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে নদী ভাঙনের কবলে কয়েক গ্রামের বাসিন্দা
এলাকার অনেকে অভিযোগ করেন, প্রতিদিন আল আমিন নামে এক ব্যক্তি নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি করছেন। তিনি প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে মাটি বিক্রি করছেন। বালিশ্রী ও বাগময়না এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। অনেকে বাড়িঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙন থামার আশায় কেউ কেউ শুধু বাড়ির চাল (ছাউনি) খুলে অন্য জায়গায় রাখলেও খুঁটি ও বেড়া খুলছেন না।
এমতাবস্থায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে পাইলগাঁও ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে মসজিদ ও স্কুলও। তবে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিদ্যুতের খুঁটি। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতেও বন্ধ করা যাচ্ছে না নদীর ভাঙন।
রানীনগর গ্রামের বাসিন্দা প্রমদ দাস বলেন, ঘর ছিল। হঠাৎ ফাটল, রাতে নদীর ভাঙনে সেই ঘর ডুবে গেছে। এখন আমার বাড়ি নদীতে।
রানীনগর গ্রামের বুলাই রবিদাস বলেন, প্রতি বছর নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে কিছু ভূমিখেকো। তাই নদী ভাঙনে অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এখনো নদীর পাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে। মাটিগুলো বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রূপসায় নদী ভাঙন, ৫২৫ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
কল্পনা রানী দাস নামে এক নারী বলেন, ‘কে করে দেবে আমাদের ঘরবাড়ি? ছোট একটি ঘরে আমরা দুজন থাকি। হয়তো রাতে থাকতে পারব না। ঘর ভেঙে নিয়ে যাবে নদীতে। কীভাবে থাকব, কীভাবে চলব, কে আমাদের খাওয়াবে বলতে পারছি না। ’
বালিশি গ্রামের আশরাফুল হক বলেন, ‘আমরা ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মানববন্ধন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
পাইলগাঁও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নজমুদ্দিন বলেন, কুশিয়ারা নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি হচ্ছে, এতে এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সবুজ কুমার শিল বলেন, ‘নদীর ভাঙন রোধে কিছু জায়গায় আমরা জিওব্যাগ ফেলছি। নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিতে পারবে না। যারা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া এ বছরও এলাকায় নদীভাঙন রোধে কাজ চলছে। এরই মধ্যে আমরা একটি প্রকল্প তৈরি করে এটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। এটি পাস হলে ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলে স্থায়ী একটি বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করব।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রি হচ্ছে শুনেছি। আমরা দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। নদীর পাড় কাটা যাবে না। আমি তহশিলদারকে বলে দিয়েছি বিষয়টি দ্রুত দেখার জন্য।’
আরও পড়ুন: নদী ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে: পানিসম্পদ উপদেষ্টা
৩৪৯ দিন আগে
কয়রায় সরিষার রেকর্ড চাষাবাদ, বাম্পার ফলন
খুলনার কয়রা উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। উপজেলার আমাদী, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা সদর, উওর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চারপাশের সরিষা খেতগুলো শুধু সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে।
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠও।
কখনও সবুজ, কখনও সোনালি, কখনও-বা হলুদ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে ফসলের মাঠ। বিকাল হলেই মাঠগুলোতে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: খুলনায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা
সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে। বর্তমানে সরিষা একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হওয়ায় কয়রায় ধীরে ধীরে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কয়রা উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। সরিষা চাষে উপজেলার ২০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে প্রত্যেক কৃষক পেয়েছেন ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার এবং ১ কেজি সরিষার বীজ।
কালনা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছরে ৭ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। গত বছরও ৫ বিঘা জমিতে সরিষা লাগিয়েছিলাম, ফলন বাম্পার হয়েছিল। এ বছরও বাম্পার হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের তরুণ কৃষক আশরাজ্জামান লিটন বলেন, আমি কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছর আমি প্রথমবার সরিষা লাগিয়েছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। যদি কোনো দুর্যোগে আঘাত না হানে, তাহলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে।
বেদকাশী গ্রামের কৃষক মোহর আলী গাইন বলেন, আমি প্রতি বছর সরিষা লাগাই। এ বছরে ২ বিঘা জমিতে সরিষা লাগায়েছি। ভালো ফলন হয়েছে।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের প্রত্যাশা
কম খরচে সরিষা চাষে বাম্পার ফসল পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়রা উপজেলায় সূর্যমুখীর পাশাপাশি সরিষার ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। এবার অতিবৃষ্টির কারণে আমন দেরিতে হওয়ায় সরিষার আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তেরের পরামর্শে কৃষক ভাইয়েরা বিনা চাষে সরিষার আবাদ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছেন।
৩৫০ দিন আগে
চাঁদপুরে অর্ধেকে নেমে গেছে সবজির দাম, দুশ্চিন্তায় কৃষক
পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত চাঁদপুরের সব হাটবাজারে বেশিরভাগ শাকসবজির দাম ৩/৪ সপ্তাহ আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে স্বস্তি এলেও ফসল চাষের খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাচীনতম পাল বাজারের পাইকারি আড়তে শীতকালীন শাকসবজির সমাহার। দৈনিক কয়েক টন শাকসবজি আড়তে আসছে বলে জানান বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।
প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাকসবজি নিয়ে শহরের ১০ নম্বর ঘাটে ভিড়ছে নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌযান চাঁদপুর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের প্রায় ৩০টি চরাঞ্চল থেকে তরতাজা শাকসবজি নিয়ে এই বাজারে আসে।
সেসব পণ্য ঘাটে নামানোর পর বাজারের ২০-২৫টি পাইকারি আড়তে নেওয়া হয়। এরপর পাইকারি মূল্যে সেখান থেকে কিনে নিয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তা বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজার, পাল বাজারের খুচরা বাজার, নতুন বাজার, পুরান বাজার, ওয়ারলেস বাজার, মিশন রোডের চৌরাস্তা বাজার, শহরতলীর আনন্দবাজার, বাবুরহাট, শাহতলী ও মহামায়া বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শাকসবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কম দামে সবজি পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।
এসব বাজারে বর্তমানে নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ ১০-১৫ দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া পেপে ৩০টাকা কেজি, ভালো মানের টমেটো ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা কেজি, গাজর ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা প্রতি পিস যা ৮-১০দিন আগে বিক্রি হতো ৪০-৫০ টাকায়, বাঁধা কপি ৩০ টাকা পিস, যা ৮-১০ দিন আগে বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকায়, ব্রকোলি ৫০-৬০ টাকা পিস, কাঁচা কলার হালি ৩০টাকা, করলা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, লাউ (মাঝারি সাইজ) ৪০ টাকা পিস, কাঁচা মরিচ ৪০-৪৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ৪০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা , ধুন্দল ও শসা ৩০ টাকা কেজি এবং খিরার কেজি বর্তমানে ২০ টাকা।
এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, কুমড়া শাক, মুলা শাক, কলমিশাক, কলাই শাকসহ সব ধরনের শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০/১৫ দিন আগেও এগুলোর দাম ছিল ৫০ টাকার আশপাশে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের সব বাজারেই আজকাল শাকসবজির আমদানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে নৌ ও সড়ক পথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি আসছে, তাই দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা চালাতে তাদের মুলধনও কম লাগছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ফল ও সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি: সেমিনার
৩৫১ দিন আগে
ঢাকায় রিকশার ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, কর্তৃপক্ষ নীরব
জনবহুল রাজধানী ঢাকার সর্বত্র রিকশার সংখ্যা বাড়ায় তীব্র যানজট হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করছেন নগরবাসীরা।
নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী সাইফুল আজম ইউএনবির প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘যানজটের ওপর দৃশ্যমান প্রভাব সত্ত্বেও রিকশার সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।’
ইউএনবির এক তদন্তে রিকশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ঘাটতি থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। যা তথ্য এবং সঠিক বাস্তবতার মধ্যে একটি উদ্বেগজনক পার্থক্য দেখা গেছে।
বর্তমানে ঢাকার ১০ শতাংশ বাসিন্দা ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহার করেন, ২৫ শতাংশ গণপরিবহন, ৫ শতাংশ অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ব্যবহার করেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশা: বাড়ছে উদ্বেগ
ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বৃদ্ধি শহরের যানজট সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়াই চলাচলকারী এই যানবাহনগুলো প্যাডেল রিকশা চালকদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও তারা যুক্তি দিচ্ছেন।
২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও এটি থামেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জারি করা আরেকটি নির্দেশনায় এ ধরনের রিকশা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ঢিলেঢালা আইন প্রয়োগের কারণে ঢাকার সড়কে এসব বাহনের লাগামহীন বৃদ্ধি ঘটছে।
অনুমোদন প্রদান এবং তথ্য বৈষম্য
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নামে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তিন দশক আগে প্যাডেল রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ, যানজটের জন্য এসব রিকশাই ভূমিকা রাখে ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯টি, যার মধ্যে ডিএনসিসির ৩০ হাজার ১৬২টি এবং ডিএসসিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ২১৭টি।
আরও পড়ুন: জুরাইন লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ, রেল চলাচল ব্যাহত
কিন্তু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় ঢাকায় প্যাডেল রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ নিবন্ধিত রিকশা।
নেপথ্যের শক্তি
রিকশাচালকদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, রাজনীতিবিদ, প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার কারণে রিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। এই গোষ্ঠীগুলো রিকশা খাতের মুনাফা এবং সরকারি রাজস্বে এর ন্যূনতম অবদান বিবেচনা করে অবৈধভাবে রিকশা পরিচালনার সুরক্ষা এবং সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এক দশকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্যাডেল রিকশাচালক জব্বার শোষণের গল্প শোনান: ‘আমরা যে অর্থ উপার্জন করি, তার বেশিরভাগই মালিকদের দিতে হয়। আমরা প্রতিদিনের সঞ্চয়, রাস্তার খরচ এবং যেকোনো ক্ষতির জন্য অর্থ দিয়ে থাকি। একটি রিকশা হারিয়ে গেলে কিস্তিতে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রিকশার মালিকানা ব্যয়বহুল এবং এলাকার উপর নির্ভর করে। গুলশান ও বনানীর মতো জায়গায় বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আমরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করছি, কিন্তু খুব কম আয় করি। ‘
আরও পড়ুন: ডিএমপির আশ্বাসে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত
আরেক রিকশাচালক সুমন আলী জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে সৃষ্ট সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এখন সবকিছুর দাম বেশি, তবে ব্যাটারিচালিত রিকশা আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পক্ষে এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ প্রায়ই আমাদের চেয়ে তাদের (ব্যাটারিচালিত রিকশা) বেশি পছন্দ করে।’
রিকশার মালিকানায় বিনিয়োগ
বিনিয়োগকারীদের জন্য রিকশার মালিকানা একটি লাভজনক সুযোগ করে দেয়। একটি নতুন বা মেরামত করা রিকশার ভাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর এমন রিকশার জন্য দৈনিক জমা দিতে হয় ২০০ টাকা।
পাঁচটি রিকশার জন্য এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে ছয় মাসের মধ্যে লাভবান হতে পারেন বিনিয়োগকারী। প্রতি সাড়ে ৫ মাসে ১০ শতাংশ ক্ষতির হার ধরে ৩ বছর ২ মাসে তাত্ত্বিকভাবে ৩২০টি রিকশার বহর তৈরি করতে পারেন তিনি। এতে পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাদ দিলে মাসিক আয় হবে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল
সাংগঠনিক শোষণ
ঢাকা বিভাগ রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ রিকশা মালিক লীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রিকশার নম্বর প্লেট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডিএসসিসি নিশ্চিত করেছে, ১৯৮৬ সাল থেকে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তবুও এই সংস্থাগুলো আদালতের স্থগিতাদেশের কথা উল্লেখ করে অনুমোদন দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
রিকশার গুরুত্ব
এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রিকশা ঢাকার পরিবহন ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো যাতায়াত, স্কুলে যাওয়া-আসা এবং বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে বিশেষত বর্ষার সময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। হিসাব অনুযায়ী, সারা বাংলাদেশে ১০ থেকে ৪০ লাখ রিকশা চলাচল করে, যারা প্রতিদিন আড়াই কোটি যাত্রী পরিবহন করে।
কিন্তু অটোরিকশার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে যানজট বেড়েছে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত গতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অনেক অটোরিকশা চালকের অভিজ্ঞতাও নেই, যারা সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও বিপদে ফেলছে।
যদিও রিকশা পরিবেশবান্ধব এবং কোনো ক্ষতিকর নিঃসরণ করে না, কিন্তু এগুলোর ধীর গতি ও ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ঢাকার যানজট বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রিকশা চালানোর রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশে। শুধু ঢাকায় এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিদিন চলাচল করছে।
২০২৩ সালে রিকশা ও রিকশাশিল্পকে বাংলাদেশের অস্পষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো।
রিকশার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি রাখে। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োগ ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা ঢাকার ইতোমধ্যে চাপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও অচল করে দেবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে বাধা নেই, সুপ্রিম কোর্টের স্থিতাবস্থা জারি
৩৫১ দিন আগে