বিশেষ-সংবাদ
নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের বিভেদ কী গভীর হচ্ছে?
গেল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত থাকায় আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে দীর্ঘদিনের দুই শরিক বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে গভীর বিভেদ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তাদের নেতারা পরস্পরকে তীব্র সমালোচনা করছেন, যা দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, অতীতে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের মধ্যে যে মাত্রার বৈরিতা হয়েছে তা নজিরবিহীন। কারণ উভয় দলই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করার চেষ্টা করছে।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসতে না পারলে ত্রয়োদশ সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হতে জামায়াত অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করতে পারে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তারা।
তবে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে এবং নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে বিএনপির জোটের অধীনে জামায়াতের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
বর্তমান টানাপোড়েন সত্ত্বেও বিএনপি ও জামায়াত উভয় দলের সিনিয়র নেতারা ইউএনবিকে বলেছেন, তারা তাদের ঐক্য নষ্ট করতে চান না। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন যেকোনো বিভক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসাকে সহজ করতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের পর দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়, প্রধানত ইসলামী ব্যাংকের দখল এবং অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নেওয়া নিয়ে সৃষ্ট বিরোধকে ঘিরে।
এরপরই জামায়াত নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে সারা দেশে 'দখল ও চাঁদাবাজি' করার অভিযোগ করেন।
বিএনপি প্রথমে কোনো মন্তব্য না করলেও ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, শুধু ভারত নয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই অস্থিরতাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: রিজভী-খসরুসহ বিএনপি-জামায়াতের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর জামিন
রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল ও টেন্ডার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করেন। জবাবে জামায়াত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ২৩ ডিসেম্বর রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক শক্তি মাত্র দু'টি- একটি সেনাবাহিনী, অন্যটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
পরে রিজভী জামায়াতপ্রধানের বক্তব্যকে হাস্যকর আখ্যায়িত করেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে 'ইসলামপন্থী দলের' ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, তারা (জামায়াত) ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে একাত্তরের ভূমিকাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে।
দল দুটির সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে কঠোর শব্দ বিনিময় করেছে এবং তাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শত্রুতাকে ঘি ঢালছে।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষত ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় এবং ১৯৯৯ সালে তারা আনুষ্ঠানিক জোট গঠন করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত তারা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল।
বিশেষ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে কিছু বামপন্থীসহ আরও অনেক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করার পর থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই দলের মধ্যে লক্ষণীয় মতপার্থক্য ও বিভেদ দেখা যাচ্ছে।
২০১৮ সালে জামায়াতকে উপেক্ষা করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করায় বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে নীরবতা পালন করায় জামায়াত বিএনপির প্রতি ক্ষোভ পোষণ করে। পরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর মতপার্থক্য মিটে গেলেও এখন আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতার অভিযোগ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরপরই জামায়াতের আমির প্রথম বিএনপিকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, 'একজন জালিম চলে গেলেও আরেকজনের দেশের লাগাম নেওয়া উচিত নয়।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বিএনপি আগাম নির্বাচনের দাবি জানালেও যাদের জনসমর্থন নেই তারা নির্বাচন চায় না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ ও আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে তারা সক্রিয়ভাবে সোচ্চার হলেও জামায়াত তাদের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্বাচন পেছাতে চায়।
তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জামায়াত এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে, যা বিএনপির অবস্থানের পরিপন্থী।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জামায়াত নেতাদের নেতিবাচক বক্তব্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, 'গত ৪৬ বছরে জামায়াত নির্বাচনী হিসাব-নিকাশে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও মনে হচ্ছে দলটি বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।’
টুকু বলেন, জামায়াত নেতাদের তাদের রাজনৈতিক বক্তব্যের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ বিএনপি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্রপন্থী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করছে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিএনপির কিছু নেতা পুরোনো শব্দ ও অবমাননাকর বাক্য ব্যবহার করে জামায়াতের বিরুদ্ধে কটুক্তি করছেন।
আকন্দ বলেন, 'জামায়াত সম্পর্কে এত পুরোনো বক্তব্য দেশের মানুষ গ্রহণ করেনি। তারা যদি এসব সেকেলে বক্তব্য গ্রহণ করতেন তাহলে জামায়াতের জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক সম্প্রসারণ বাড়ত না ‘
তিনি বলেন, জামায়াতের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় কিছু বিএনপি নেতা ঈর্ষা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন।
আকন্দ অবশ্য দাবি করেন, কিছু নেতা মৌখিক বাক্য বিনিময় করলেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উভয় দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই। আমিও মনে করি, দুই পক্ষের সম্পর্কের অবনতি হয়নি। কিছু নেতা হতাশা ও অহংকার থেকে মন্তব্য করছেন। এটা সাময়িক অবস্থান। মূল ঐক্য অটুট রয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করে তৃণমূলের সংগঠনকে উজ্জীবিত ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে চ্যালেঞ্জ করে জামায়াতপন্থী ছাত্রশিবিরও সব শিক্ষাঙ্গনে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্র পর্যায়ে নয়, দুই দলের তৃণমূল পর্যায়ে ফাটল ধরেছে। তবে নির্বাচনের আগে হয় দুই দল পুনরায় একত্রিত হবে, না হয় নতুন মেরুকরণ হবে।’
আরও পড়ুন: পদোন্নতির দাবিতে একট্টা হচ্ছেন সচিবালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা
৩৫২ দিন আগে
বছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজের চাপ
সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে বন্দরে ভিড়েছে মোট ২৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ। এতে করে ব্যস্ত সময় পার করছেন বন্দরের শ্রমিক-কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রুপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের মালামাল নিয়ে দুটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ মোংলা বন্দরে নোঙ্গর করে। এর ফলে বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে বর্তমানে ১৮টি জাহাজ অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সাড়ে ৭ মিটার গভীরতা ও ১৪২ দশমিক ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের বারমুডার পতাকাবাহী এমভি পাকান্ডা অ্যান্টিগা নামের একটি জাহাজ বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। জাহাজটিতে ১৯০টি টিউজ কন্টেইনার রয়েছে।
এছাড়া ২০৭টি টিউজ নিয়ে মার্কস ঢাকা নামে আরও একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ ৮ নম্বর জেটিতে ভেড়ার কথা রয়েছে। পানামার পতাকাবাহী এই জাহাজটি ১৮৬ মিটার বিশাল দীর্ঘ ও ৭ দশমিক ১০ মিটার গভীর।
পাশাপাশি রাশিয়ার পতাকাবাহী এমভি মেলিনা নামের একটি জাহাজ রুপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের জেনারেল কার্গো (মেশিনারি) বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দরের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান জানান, ২০২৫ সালের শুরুতে মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ১৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কয়লা, সার (জিপসাম, ড্যাপ, টিএসপি ও এমওপি), ক্লিংকার, এলপিজি ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে মোংলা বন্দর মোট ৪১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। এ সময়ে ১০ হাজার ৩৮৬টি টিউজ কন্টেইনার খালাস করা হয়।
প্রথম ছয় মাসে গাড়ি বহনকারী ১০টি জাহাজ থেকে ৫ হাজার ৬৩৭টি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে। এই সময়ে বন্দর দিয়ে সর্বমোট আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭১ টন পণ্য, যা থেকে ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪-এ মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কন্টেইনারবাহী জাহাজ ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
৩৫২ দিন আগে
সরিষা ও মধুতে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে নওগাঁর কৃষকদের
নওগাঁর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শর্ষে খেতে ফলন আসায় এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সরিষার এসব জমির পাশেই মৌ বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়েরই ভাগ্য বদলে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০টি মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন ৮২ জন মৌচাষি।
নওগঁ সদর, রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার, ধামইরহাট, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমির শর্ষেখেতে এসব মৌ বাক্স স্থাপনা করা হয়েছে। ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স থেকে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি (২৭০ মেট্রিক টন) মধু সংগ্রহ হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। প্রতি কেজি মধুর ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবার জেলায় সরিষার ফুল থেকে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে।
শর্ষেখেতে মৌখামার করে মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সবচেয়ে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় মৌখামারের সংখ্যাও বেশি। মান্দায় এ বছর ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিজুড়ে সমন্বিতভাবে সরিষা ও মৌচাষ হয়েছে। উপজেলার তেতুলিয়া, ভারশো, পরানপুর, কালিকাপুর ও ভালাইন ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে শর্ষেখেতের পাশে ৫০ জন মৌচাষি মৌখামার করেছেন।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, সরিষাখেতে মৌমাছির আনাগোনা থাকলে সরিষার ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়ে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌমাছি সরিষার ফুলে যে পরাগায়ন ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলন বাড়ে। যে সরিষাখেতে মৌমাছি আনাগোনা থাকে না সেখানে ফলন কম হয়।
আরও পড়ুন: মাদারীপুরে সরিষার বাম্পার ফলন, লাভের প্রত্যাশা
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত দুই-তিন বছর ধরে কৃষকেরা বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ করছেন। এছাড়া গত মৌসুমে সরিষার ভালো দাম পাওয়ার কারণেও এবার অনেক কৃষক সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি বিভাগ নানাভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সরিষা চাষে আগ্রহী করে তুলতে এ বছর ৫৭ হাজার কৃষকের প্রত্যেককে এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলায় উচ্চফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-১৫ ও বারি-১৭ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় টরি-৭ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। এসব জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।
সম্প্রতি জেলার মান্দা ও নওগাঁ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে সরিষার পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
গত বৃহস্পতিবার মান্দা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের সাটইল গ্রামের পাশে অবস্থিত একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে। মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। মাঠের পাশে একটি আমবাগানে ১৫০টি মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন মৌচাষি আবু বক্কর সুজন। পার্শ্ববর্তী পিরাকৈর মাঠে তার আরও একটি মৌখামার রয়েছে। ওই খামারে ১৫০টি মৌ বাক্স রয়েছে। সুজন ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য।
আবু বক্কর সুজন বলেন, মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছেন। ২০ দিন হলো তিনি সাটইল ও পিরাকৈর মাঠে মৌ বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০০টি বাক্স থেকে চার বার মধু সংগ্রহ করছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কেজি সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও দুই সপ্তাহ এসব মাঠ থেকে মধু পাওয়া যায়। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
মৌচাষি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৪ দিন হলো তিনি ওই মাঠে মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪০০টি বাক্স থেকে দুই বার মধু সংগ্রহ করেছেন। প্রতিবার একটি বাক্স থেকে ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৮০০ কেজি মধু সংগ্রহ করেছেন তিনি। আরও তিন সপ্তাহ ওই মাঠ থেকে মধু পাওয়া যাবে। সরিষার খেতে ফুল কমে গেলে তিনি মধু সংগ্রহের জন্য অন্য মাঠে চলে যাবেন।
সাটইল গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক মৌচাষির কাছ থেকে মৌখামারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ বছর ধরে নিজের সরিষাখেতের পাশে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। গত বছর ১০০টি বাক্স থেকে ১৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করেছি। এবার মধুর দাম বেশি। ১০০টা বাক্স থেকে আশা করছি, এবার ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হতে পারে। মৌসুমের সময় খামারে ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করে। মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মৌ বাক্সে স্থাপিত মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়।’
মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ এবার ১৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিল।
আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রতি বছর সাত থেকে আট বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। সাধারণত অন্যান্য বছরগুলোতে মাঠের নিচু জমিগুলোতে ডিসেম্বর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পানি জমে থাকতো। তবে এবার বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নভেম্বরের আগেই নিচু জমিগুলা থেকে পানি নেমে গেছে। বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত দুই-তিন মাস ১০ বিঘা নিচু জমি ফেলে না রেখে সেগুলোতেও সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা গাছে ফুল ভালো এসেছে। আশা করছি, ফলনও ভালো পাবেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নওগাঁয় এ বছর ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব জমির পাশে রবিবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০ মৌ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। বাক্সে থাকা মৌমাছি সরিষার ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করছে। এতে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হিসেবে মধু পাচ্ছেন মৌচাষিরা। সমন্বিত চাষে কৃষক ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। গত বছরও এ জেলায় সরিষাখেতের পাশে ৭ হাজার ৮০০ মৌ বাক্স বসেছিল। নওগাঁয় রবিশস্য সরিষার সঙ্গে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫১.৩৮ কোটি টাকার সরিষার ফলনের প্রত্যাশা চাষিদের
৩৫২ দিন আগে
সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: সংকটের শেষ কবে
দরজা-জানালা সব ভেঙে গেছে, দেওয়ালগুলো জরাজীর্ণ, খুলে পড়ছে চালের টিন; বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, শীত-রোদ-বৃষ্টি যাই হোক, ক্লাস করতে মন বসে না শিক্ষার্থীদের। এমনই পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে ফেনীর দাগনভূঞার সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরকারি হলেও বিদ্যালয়টিতে খেলার মাঠ নেই; নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষেরও সংকট। এক কথায়, একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযোগী যে পরিবেশটুকু দরকার তার ছিঁটেফোটাও নেই এখানে। শিক্ষার উপযোগী পরিবেশের অভাবে প্রতি বছরই বিদ্যালয়টিতে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে অভিভাবকেরা এই বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী নন বলে মত শিক্ষকদের।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ৪ কক্ষবিশিষ্ট একটি টিনশেড ঘরের মাধ্যমে সত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেই টিনশেডের ঘরটির অবস্থা-ই বর্তমানে জরাজীর্ণ।
আরও পড়ুন: ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় মেলা আয়োজিত
২০১১ সালে পুরনো স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজ দূরে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হলেও দুই শ্রেণিকক্ষের বেশি নেই নতুন ভবনে। তাই বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে শ্রেণি-কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে পাঠদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অপরদিকে, জরাজীর্ণ ভবনটি এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩৫৩ দিন আগে
ভারতে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব, হিলি-বেনাপোলে নেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
বিশ্বের কয়েকটি দেশের পর ভারতে হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস বা এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবের খবর প্রকাশ হলেও বাংলাদেশে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে দিনাজপুরের হিলি ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ সীমান্তে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই প্রতিদিন এই দুই চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করছেন অসংখ্য পাসপোর্টযাত্রী।
প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এই দুই গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করছে। ট্রাকগুলোর চালক ও হেলপাররাও এক দেশ থেকে এসে অন্য দেশে অবস্থান করছেন। তবে তাদেরও কোনোপ্রকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এইচএমপিভি ভাইরাস।
জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ থাকা, গলা ব্যথা ও হাঁচির মতো সাধারণ ফ্লু-জনিত অসুস্থতার লক্ষণগুলোই এই ভাইরাসের উপসর্গ। তবে আক্রান্ত হওয়ার পর এটি গুরুতর আকার ধারণ করে। শিশু ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এমন বয়স্ক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে কাম্বোডিয়ায় শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বিস্তার করতে করতে কিছুদিন আগে ভারতে এই ভাইরাসে দুই শিশু আক্রান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতায়ও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে। এমতাবস্থায় মনে আতঙ্ক নিয়ে ভারত যাওয়া-আসা করছেন পাসপোর্টযাত্রীরা।
ভারতে যাওয়ার পথে হিলি চেকপোস্টে নওগাঁর শ্যামল চন্দ্র বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি করোনার মতোই নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভারতে কয়েকদিন আগে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মনে আতঙ্ক থাকলেও কী করার, চিকিৎসার জন্য যেতেই হচ্ছে! ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়া আছে। আবার যদি ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয় তাহলে চরম বিপদে পড়ব। তাই বাধ্য হয়ে যাওয়া।’
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি এইচএমপিভি ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে হিলি চেকপোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতে চলাচল করা পাসপোর্ট যাত্রীদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: এইচএমপিভি ভাইরাস: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
৩৫৪ দিন আগে
অবশেষে শুরু হতে চলেছে সিলেট-ছাতক রেলপথ সংস্কার কাজ
চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই সিলেট-ছাতক রেলপথের সংস্কার কাজ শুরু হচ্ছে। গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন ছাতক বাজার স্টেশন পরিদর্শন শেষে এই তথ্য জানান।
এই রেলপথের সংস্কার কাজ শুরুর খবরে স্থানীয়দের মাঝে আশার আলো জেগেছে।
বিগত সরকারের সময় একনেকে সিলেট-ছাতক রেলপথ সংস্কার কাজের প্রস্তাবনা পাস হলেও তা শুরু করা যায়নি। এবার সেই কাজে গতি দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সেই সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সিলেট থেকে ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের বিষয়ে সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও এরপর অজ্ঞাত কারণে সেই কাজে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আরও পড়ুন: সংকটে জর্জরিত আলমডাঙ্গার রেলস্টেশন, নেই সংস্কারের উদ্যোগ
১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিম-উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ওই সময় জেলার রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। তার আগে এটি আখাউড়া-কুলাউড়া-সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালু, চুনাপাথর, কমলালেবু, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্যই মূলত ছাতক-সিলেট রেলপথটি নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল পরিবহনে ছাতক-দোয়ারাবাজার অঞ্চলসহ সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিদিন এই রুটে সকাল-বিকাল যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করত। সিলেট যাতায়াতে ট্রেনই ছিল এই অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা।
১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে নেয়। এরপর নানা অজুহাতে কমিয়ে দেওয়া হয় এই রেলপথে ট্রেন ও বগির সংখ্যা।
ছাতক থেকে ট্রেনে যাতায়াতে প্রায় ৪৫ মিনিটে সিলেট পৌঁছানো যায়। পথিমধ্যে খাজাঞ্চীগাঁও, সৎপুর ও আফজালাবাদ স্টেশনে ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করে। শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত ছাতক থেকে চুনাপাথর, সিমেন্ট, স্লিপার, বালু, বোল্ডার পাথরসহ বিভিন্ন মালপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে রেলপথে সড়ক পথের চেয়ে পরিবহন খরচ কয়েক গুণ কম হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যায় ছাতক বাজার স্টেশন থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ১২ কিলোমিটার রেল রোড এমব্যাংকমেন্ট ও রেলপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরই রেলপথটি পুনর্বাসন করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট থেকে ছাতক বাজার সেকশন (মিটার গেজ ট্র্যাক) পুনর্বাসন প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে সম্প্রতি অনুমোদনও দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রকল্পের কাজে ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মীর আখতার হোসেন লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৩৬৯ টাকা।
প্রকল্পটি একনেক থেকে ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্প-ব্যয়ের ৮০ শতাংশ ডলার এবং ২০ শতাংশ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা হবে।
শুরুর দিকে সিলেট থেকে ছাতক হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে দুটি পথের বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়, ৪৫ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অ্যালাইনমেন্টে টপোগ্রাফিক (ভূমি) জরিপের কাজ করা হয়েছে। এই রুটে আছে ৬৬টি ছোটবড় জলাভূমি। দক্ষিণ খুরমা ও শান্তিগঞ্জে দুটি স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। রেলপথ নির্মাণের জন্য সরাতে হবে ১২৮টি বসতবাড়ি ও অবকাঠামো। এজন্য কাটতে হবে সাড়ে ১৩ হাজার গাছ। পাঁচটি স্টেশনের জন্য ৫০ একরসহ মোট ৬১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এমন জটিল হিসাব-নিকাশের মুখে প্রকল্পটির কাজ আর সামনে এগোয়নি।
ছাতক বাজার ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি আফসার উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, ছাতক-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন এই অঞ্চলের শত শত মানুষকে ভোগান্তি নিয়ে সিলেটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সুনামগঞ্জ রেলপথ স্থাপিত হলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বড় পরিসরে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে ঝিনুক আকৃতির রেলস্টেশন
গুরুত্ব বিবেচনায় অতিদ্রুত রেলপথের কাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, ছাতক-সিলেট রেলপথ সংস্কারের অনুমোদনের পর শুক্রবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন ছাতক বাজার স্টেশন পরিদর্শন করেন।
তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি নাগাদ সংস্কার কাজ শুরু হবে। তবে সুনামগঞ্জে রেলপথ স্থাপনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
৩৫৫ দিন আগে
মিয়ানমারের বেপরোয়া মাদক সাম্রাজ্য বিপদ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের
জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যকার তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রদেশ শান রাজ্য হয়ে উঠেছে মাদক কারবারিদের তীর্থভূমি। আর তাদের কর্মচঞ্চল্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান আসে শান রাজ্য থেকে। ইয়াবার পাশাপাশি ওই রাজ্যে একরকম বিনা বাধায় উৎপাদিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস) ও হেরোইন। এতদিন বাংলাদেশে আইসের মতো মাদকের বিস্তৃতি না থাকলেও সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই জব্দ হচ্ছে সিনথেটিক এ মাদকের চালান।
সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ থেকে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ১ কেজি আইস জব্দ করে কোস্টগার্ড। তার আগে আগস্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে ২১ কোটি টাকা মূল্যের আইস ও ইয়াবার বড় চালান জব্দ হয়।
২০২৩ সালের পর ২০২৪ সালেও জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে আফিম উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হিসেবে মিয়ানমারের নাম দেখা যায়। শান রাজ্যের পাহাড়ি ঢালে চাষ হয় পপি, যার আঞ্চলিক নাম পিস ফ্লাওয়ার বা শান্তির ফুল। এই পপি ফুল থেকেই নানা প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হয় হেরোইন। হেরোইনের পাশাপাশি এই রাজ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ইয়াবা ও আইস কারখানা।
এতদিন মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরির ৩৭টি কারখানার খোঁজ পাওয়া গেলেও গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে।
ভৌগলিকভাবে শান রাজ্যের সীমান্তবর্তী দেশ চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস। ইয়াবা তৈরির প্রধান কাঁচামাল মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের বড় জোগান আসে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে অবস্থিত থাইল্যান্ড ও লাওস থেকে। এছাড়া আইস তৈরির আরেক কাঁচামাল এফিড্রিনের বড় সরবরাহক চীনের মাদক কারবারিরা। অনেক সময় ভারত থেকেও আসে কাঁচামালের চালান। সব মিলিয়ে প্রস্তুতকারক হিসেবে শান রাজ্যের কারখানাগুলোতে চলে মাদকের রমরমা উৎপাদন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে শান রাজ্যকে যুদ্ধবাজ নেতা, চোরাকারবারি এবং মাদকব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদকের কেন্দ্রভূমি এ রাজ্যটিতে এতদিন সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং নানা সময়ে স্থানীয়, এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতেন মাদক কারবারিরা। তবে বর্তমানে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় উৎপন্ন হচ্ছে ভয়ঙ্কর এসব নেশাদ্রব্য।
সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাদক কারবারিরা জানান, বর্তমানে এখানকার (মিয়ানমারের) সরকারব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছে। শান রাজ্যে একাধিক বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। সশস্ত্রগোষ্ঠীর অর্থের মূল জোগান আসছে মাদক থেকে।
তাদের তথ্য অনুসারে, ব্যবসা রমরমা হওয়ায় বেড়েছে প্রতিযোগিতা। এতে করে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ইয়াবা, আইস ও হেরোইনের দাম। যেখানে দেশটিতে এক ক্যান বিয়ারের দাম ১০ ডলার, সেখানে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ সেন্টে।
বাংলাদেশে বিস্তার
২০০৬ সালে বাংলাদেশের বাজারে প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি হতো ১ হাজার ২০০ টাকার ওপরে। সহজলভ্য হওয়ায় ২০২৩ সালে এর দাম নেমে আসে ৩০০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ইয়াবা বিক্রি করেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। রাজধানীতে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের বাজারে আসা এসব ইয়াবার চালান নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ইয়াবার প্রায় পুরো চালান আসে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ হয়ে তা দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার সঙ্গে সঙ্গে কারবারিরা আইস ও হেরোইনের চালানও পাঠাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এরা মাদক পাচারে অভিনব সব পন্থা ব্যবহার করছে। প্রতি মাসেই পরিবর্তন হচ্ছে মাদক পাচারের রুট।
অধিদপ্তরের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইয়াবা ও আইসের জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হটস্পট আছে। ঢাকার রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট এলাকা ইয়াবার একেকটি বড় জোন। এর বাইরে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর কালশী, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, কামরাঙ্গীরচর ও কারওয়ানবাজার এলাকায় ডজনখানেক সক্রিয় চক্র ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আইসের দাম বেশি হওয়ায় অভিজাত এলাকাগুলোতে এর বিস্তার বেড়েছে। গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো এলাকায় বর্তমানে কয়েকটি চক্র আইস বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকেই নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়কে বেছে নিয়েছে।
অনেকের ধারণা, ইয়াবা ও গাঁজার আধিক্যে দেশে হেরোইনের ব্যবহার কমে গেছে। তবে অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবারও নতুন করে হেরোইনের বিস্তার শুরু হয়েছে।
বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত কমবেশি হেরোইনের চালান দেশে প্রবেশ করছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান।
আশির দশকে বাংলাদেশে হেরোইনের বিস্তার ছিল ভয়াবহ। পরবর্তীতে ২০০০ সালের পর ফেনসিডিল এবং ২০১০ এর পর ইয়াবার প্রধান্যে হেরোইনের ব্যবহার অনেকটাই হ্রাস পায়। তবে বিগত চার বছর ধরে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন করে হেরোইনের চালান বাড়তে শুরু করেছে।
২০২০ সালে বিভিন্ন সরকারি বাহিনীর অভিযানে উদ্ধারকৃত হেরোইনের পরিমাণ ছিল ২১০ কেজি, যা ২০২৩ সালে বেড়ে ৭০০ কেজি ছাড়ায়। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ৩৫৭ কেজির বেশি হেরোইন জব্দ হয়েছে।
মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশে হেরোইন প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, শুধু টেকনাফ সীমান্ত ব্যবহার না করে হেরোইন পাচারকারীদের অনেকেই রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতকে।
সমাধান কী?
মাদকের বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বললেও আদতে এতটা কঠোর অবস্থানে সরকার নেই বলে মনে করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
ইউএনওডিসির গবেষণা অনুযায়ী, একটি দেশে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে তার ৯০ শতাংশই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে আসে মাত্র ১০ শতাংশ।
সেই হিসাবে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হয়ে আসা মাদকে দিনকে দিন নেশাদ্রব্যের বড় হটস্পটে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, জাতিসংঘ ১০ শতাংশ মাদক জব্দের কথা বললেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ আরও কম। বাংলাদেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। মাদক যখন সহজলভ্য হবে তখন এর বিস্তার বাড়বে— এটাই স্বাভাবিক।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই ইয়াবা, আইস বা হেরোইনের মতো মাদক প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করার ওপর জোর দেন এ বিশেষজ্ঞ।
৩৫৫ দিন আগে
ঢাকায় শব্দদূষণে দুঃস্বপ্নের রাত
পার্শ্ববর্তী নির্মাণস্থলে ইট ভাঙার বিকট শব্দে টানা নির্ঘুম দুই রাত কাটানোর পর ৯৯৯ নম্বরে কল করেন রোমেনা আহমেদ। স্বস্তি পেতে রাতের কাজ বন্ধ রাখতে পুলিশকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান তিনি। পুলিশ তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ায় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ওই ঠিকাদার।
তবে রোমেনা যে সমাধানটি পেয়েছেন, তা সবসময় পাওয়া সহজ নয়। কারণ, অনেকে নিশ্চিত নন যে, একই পরিস্থিতিতে পুলিশের সহায়তা পাওয়া যাবে কিনা।
নগরীতে বাড়ছে শব্দদূষণ
গত বছর তৃতীয়বারের মতো ঢাকা সফর করা কানাডিয়ান বিল ম্যাকলেইন তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কোলাহল অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ বার রাস্তায় চলাচলের সময় শব্দ আটকাতে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে হয়েছে।’
‘ঢাকার রাস্তায় পা রাখলে প্রায়ই মনে হয় যেন গাড়ির হর্নের শব্দের শহরে ঢুকে পড়া। গাড়ির চালকরা সবচেয়ে জোরে শব্দ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। মাত্র এক সেকেন্ড দেরি হলে কান ফাটানো হর্ন বাজানো শুরু হতে থাকে।’
বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্মাণ ক্ষেত্রগুলোর অবিরাম খটখট শব্দ। ধাতব বস্তু কাটার শব্দ, ইট ভাঙার শব্দ এবং জেনারেটরের শব্দ।
এই শহরে উচ্চ শব্দের কোনো লাগাম নেই। এমতাবস্থায় শহরে শান্তি বিরল হয়ে উঠেছে।
মালিবাগের বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘এখন তো রাস্তার বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রি করতে লাউডস্পিকার ব্যবহার করছে। এটা সহনীয় নয়, এসব বন্ধ করতে হবে।‘
২০১৭ সালে বাংলাদেশে মোটরযানে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে উচ্চ আদালত। কারণ এটি ১২০ ডেসিবেলের আকারে পৌঁছতে পারে এবং ৬০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে এই স্তরের সংস্পর্শে থাকলে তাৎক্ষণিক আঘাত এবং শ্রবণশক্তির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বাস্তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকার হাইকোর্টের নির্দেশনা ভুলে গেছে এবং ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহন এখনো তা ব্যবহার করছে।
মাসুদ নামে এক চাকরিজীবী বলেন, 'অফিসে পৌঁছানোর জন্য গণপরিবহন পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু, রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের হর্নের কারণে অপেক্ষার সময় ভয়াবহ হয়ে ওঠে।’
শব্দদূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ৬৫ ডেসিবেল (ডিবি) এর উপরে শব্দের মাত্রা দূষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। যার মধ্যে ৭৫ ডিবি ক্ষতিকারক এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও স্বাস্থ্যগত কারণে ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল।
বাংলাদেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় গ্রহণযোগ্য শব্দসীমা দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিনের জন্য ৫৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৪৫ ডিবি। মিশ্র অঞ্চলে দিনের জন্য ৬০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৫০ ডিবি। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনের জন্য ৭০ ডিবি এবং রাতের জন্য ৬০ ডিবি এবং শিল্পাঞ্চলে দিনের জন্য ৭৫ ডিবি এবং রাতের জন্য ৭০ ডিবি।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কিন্তু, ঢাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন বাসাবাড়িতে, কর্মস্থলে, স্কুল এমনকি হাসপাতালগুলোতে বিপজ্জনক মাত্রার শব্দের সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা অপরিবর্তনীয় শব্দ-প্ররোচিত শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অতিরিক্ত শব্দ দীর্ঘ সময় উৎপন্নের কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) ফ্রন্টিয়ার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শব্দ দূষণ শহুরে বন্যজীবনকেও ব্যাহত করে, পাখি, ব্যাঙ এবং পোকামাকড়ের মধ্যে যোগাযোগকে প্রভাবিত করে এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রতিবেদনে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। শুধুমাত্র ইউরোপে, দীর্ঘ সময় ধরে উৎপন্ন শব্দের কারণে বছরে ১২ হাজার অকাল মৃত্যু এবং ৪৮ হাজার নতুন ইসকেমিক হৃদরোগের জন্য দায়ী।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা
শব্দদূষণ রোধে গত বছরের ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকাকে 'নীরব এলাকা' ঘোষণা করা হয়।
এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ করা। আইন অমান্যকারীদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হতে পারে। এটি গেল ডিসেম্বর থেকে কঠোরভাবে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এই নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানটি কার্যকর করার দায়িত্বে রয়েছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী, নেই আইনের কার্যকর প্রয়োগ
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং পরে পুরো ঢাকা শহরে এটি বিস্তৃত করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোকেও শব্দদূষণ রোধে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার শর্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নীরব অঞ্চল: এখনও দেখেনি আলোর মুখ
সচিবালয়, আগারগাঁও এবং সংসদের মতো অঞ্চলে নীরব অঞ্চলগুলোর পূর্ববর্তী ঘোষণা সত্ত্বেও কোনো উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ পাওয়া যায়নি। সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (সিএপিএস) একটি গবেষণায় এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস) ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকার ১০টি স্থানে শব্দের মাত্রা নিয়ে বছরব্যাপী গবেষণা চালিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপ করা সমস্ত অঞ্চলে শব্দ গ্রহণযোগ্য সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষত, নীরব এলাকায় ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আবাসিক এলাকায় ৯১ দশমিক ২ শতাংশ, মিশ্র-ব্যবহারের এলাকায় ৮৩ দশমিক ২ শতাংশ, বাণিজ্যিক অঞ্চলে ৬১ শতাংশ এবং শিল্প অঞ্চলে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ শব্দের মাত্রা মানসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ-উপকূলীয় এলাকায় দূষণ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা গড়ে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, 'হর্ন বাজানো বন্ধ করতে পারলে ঢাকার শব্দদূষণ ৬০ শতাংশ কমাতে পারব।’
তিনি এ সমস্যা কার্যকরভাবে রোধে শক্তিশালী আইনি কাঠামো ও জনগণের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আগামীর করণীয়
সরকার ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ঢাকার আরও ১০টি সড়ককে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে। তাই বিশ্বের অন্যতম কোলাহলপূর্ণ শহরটিতে শব্দ দূষণ কমার আশা করা হচ্ছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি বলেছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে, যা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ক্ষমতা দেবে।
তিনি কেবল জরিমানা এবং কারাদণ্ডের চেয়ে আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জনসচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণই মূল বিষয়।
উপদেষ্টা বলেন, মানুষের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগবে, তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা হর্ন বাজানো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারি।
তিনি জরিমানা আরোপের আগে চালক এবং সাধারণ জনগণ উভয়কেই প্রশিক্ষিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন। শব্দ দূষণের বিষয়ে জনসাধারণের আচরণে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
আরও পড়ুন: শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
৩৫৬ দিন আগে
বাংলাদেশ-ইইউ সহযোগিতা: ঢাকায় আসছেন ইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান অংশীদারিত্ব পর্যালোচনা, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও কীভাবে বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানো যায়, তা খতিয়ে দেখতে ৩ দিনের সফরে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা আসছেন ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মালিকানার ইআইবি বিশ্বের বৃহত্তম বহুপক্ষীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।
বৈদেশিক নীতিগত অগ্রাধিকার, গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, ইইউ মাল্টিঅ্যানুয়াল ফাইন্যান্সিয়াল ফ্রেমওয়ার্ক (এমএফএফ) এবং দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় অর্থায়ন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিয়ার।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকসহ সূচিতে বেশ কয়েকটি বৈঠক রাখা হয়েছে।‘
জলবায়ু কার্যক্রম ইআইবি কার্যক্রমের একটি বড় অংশ হলেও এটি পরিবেশ, উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং দক্ষতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা (এসএমই), অবকাঠামো এবং সমন্বয়ের ওপরও দৃষ্টি দেয়।
ঢাকায় অবস্থানকালে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিয়ার অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ও রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি কেএফডব্লিউ, এএফডি, এডিবি, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, আইএফসি এবং জাইকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সকালের নাস্তা ও বৈঠক করবেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (ইউরোচ্যাম) সঙ্গে নৈশভোজে বৈঠক করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
উদ্বোধনকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি,বৃহত্তর ইইউ এফডিআই এবং বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিটুবি যোগাযোগের আরও নিবিড় সম্ভাবনা অন্বেষণ, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সাপ্লাই চেইনে টেকসই ও যথাযথ কার্যকর করতে ইউরোচ্যামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
সফর শেষে বৃহস্পতিবার তিনি গন্ধরবপুর পানি শোধনাগার পরিদর্শন করবেন।
আরও পড়ুন: ‘বাংলাদেশ এমন শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে যা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল’
অধ্যাপক ইউনূস সম্প্রতি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের রূপান্তরে সহযোগিতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। গত মাসে ঢাকা ও নয়া দিল্লিতে অবস্থিত ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে এক ইন্টারেক্টিভ সেশনে তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের জ্বালানি খাতের রূপান্তরে সহায়তা প্রদানের জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পরিবেশ অবশ্যই তাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বাংলাদেশ পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'একটি ক্ষেত্রে আমি খুবই আগ্রহী হয়ে উঠি- নবায়নযোগ্য জ্বালানি।’
ইআইবি সমতা এবং ঋণ প্রদানকারী কোম্পানি এবং প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে অর্থায়ন করে এবং বিনিয়োগ করে, যা ঋণ, সমতা এবং গ্যারান্টির মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিগত লক্ষ্য অর্জন করে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ অনুরোধে নীরব ভারত, অপেক্ষায় বাংলাদেশ
১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইআইবি ইউরোপ এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রকল্পে এক ট্রিলিয়ন ইউরোর বেশি বিনিয়োগ করেছে।
ইআইবির জলবায়ু ও জ্বালানি লক্ষ্যগুলো ইউরোপ এবং এর বাইরেও নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করছে।
এটি জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করে না এবং এটি জলবায়ু কর্ম এবং স্থায়িত্বের জন্য তার বিনিয়োগের ৫০ শতাংশেরও বেশি উৎসর্গ করে।
ইআইবি বিনিয়োগ সবুজ রূপান্তরকে সমর্থন করে।
ইইউ জলবায়ু ব্যাংক হিসাবে, ইআইবি প্যারিস চুক্তি - জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করছে।
তারা ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু ও পরিবেশের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং সেই লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে।
ইআইবির কার্যক্রম সবুজ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির ডিকার্বনাইজেশনকে ত্বরান্বিত করে এবং এটি জ্বালানি দক্ষতা এবং নবায়ণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করে, যা কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং জ্বালানির সুরক্ষা জোরদারে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা, চান সহায়ক পরিবেশ
ইআইবি বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় লড়াই করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং টেকসই চাষাবাদের উন্নয়ন ঘটায়।
উদ্ভাবন, ক্ষুদ্র ব্যবসা বা অবকাঠামোর জন্য ইআইবি যে প্রকল্পগুলো সমর্থন করে তা তাদের জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
ইআইবি গ্লোবাল, ইআইবির উন্নয়ন শাখা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে তার কার্যক্রমের জন্য ব্যাংকের সমস্ত সংস্থান নিয়ে আসে।
৩৫৬ দিন আগে
সুনামগঞ্জে অপরিকল্পিত সড়কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বোরো চাষিরা
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে একটি সড়কের কারণে বোরো ধানের আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে বোরো ফসল নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছে দুই গ্রামের শতাধিক কৃষক পরিবার।
বৃহস্পতিবার(২ জানুয়ারি) এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র বরারব একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রের তথ্য ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল গ্রামের পারুয়া হাওরে এখনও পানি থাকায় চলতি বোরো ধানের চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। গত বছরের চৈত্র মাসে স্থানীয় এলজিইডি’র আওতাধীন রৌয়াইল হিলালপুর পাবসস লিমিডেট নামের একটি সমবায় সমিতির উদ্যোগে হাওরের পাশ দিয়ে বালিশ্রী পনাচাতল সড়ক তৈরি করা হয়। সড়ক নির্মাণের সময় হাওরের পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে হাওর থেকে এখনও পানি নামেনি। যে কারণে বোরোর ভরা মৌসুমে চাষাবাদ করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষিরা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জের হাওরের পানি নিষ্কাশনে ধীরগতি, বিপাকে কৃষক
রৌয়াইল গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জামাল বলেন, বোরো আবাদের উপযুক্ত সময় এখন। কিন্তু হাওরে এখনও হাঁটু সমান পানি থাকায় বোরো ধানের চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এ কারণে বোরো ফসল নিয়ে রৌয়াইল ও আলমপুর গ্রামের শতাধিক কৃষক পরিবারে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরেক কৃষক সমুজ মিয়া বলেন, সড়ক নির্মাণের সময় পানি নিস্কাশনের পথ রাখা হয়নি, এজন্য হাওরে পানি আটকে আছে। আমরা বারবার পাবসস লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাইনি। এজন্য বাধ্য হয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছি।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
রৌয়াইল হিলালপুর পাবসস লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোতাহের আলী নুনু জানান, হাওরের পানি নিস্কাশনের জন্য যে জায়গায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেই জায়গাটি শুকিয়ে গেছে। তবে আমরা কৃষকদের বলেছি, হাওর ও কৃষকদের বাঁচাতে আপনারা যে উদ্যোগ নেবেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরকত উল্লাহ জানান, অভিযাগপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা এলজিইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় এলজিইডি কর্মকর্তা সোহবার হোসেন জানান, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হাওররক্ষা বাঁধের পিআইসি কমিটি গঠন
৩৫৮ দিন আগে