বিশেষ-সংবাদ
কানাডায় বাবা-মা নিয়ে স্থায়ী হওয়ার সুবিধা বন্ধ, বিপাকে বাংলাদেশিরা
এতদিন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কানাডায় স্থায়ী হওয়া সন্তানরা তাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি ও নানা-নানির জন্য স্থায়ী আবাসনের (পিআর) ব্যবস্থা করতে পারলেও ২০২৫ সালে এ ধরনের সুবিধা নতুন করে আর দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিষয়ক বিভাগ আইআরসিসি।
প্যারেন্ট অ্যান্ড গ্রান্ডপ্যারেন্টস স্পন্সরশিপের (পিজিপি) আওতায় নতুন বছরে আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছে আইআরসিসি। এতে করে কানাডার স্থায়ীভাবে বসবাসকারীরা আগের মতো বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির জন্য পিআরের ব্যবস্থা করতে পারবেন না।
আইআরসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে যারা পিজিপির আবেদন করেছিল নতুন বছরে শুধু সেসব আবেদনপত্র নিয়ে কাজ চলছে। তবে কেউ চাইলে দেশটির সুপার ভিসা সুবিধার আওতায় নিজের নিকটাত্মীয়দের কানাডা বসবাসের সুযোগ করে দিতে পারবেন। এ ভিসার আওতায় এক নাগাড়ে পাঁচ বছর কানাডা থাকার সুযোগ পাবেন তারা।
অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে ২০২৫ সালে আইআরসিসি ২০ শতাংশ পিআর সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বছরের শুরুতেই প্রভাব পড়েছে পিজিপি প্রোগ্রামের ওপর। আগের আবেদনের ভিত্তিতে পিজিপি প্রোগামে এ বছর সাড়ে ২৪ হাজার মানুষকে কানাডায় স্থায়ীকরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আইআরসিসি।
অভিবাসনে কড়াকড়ি
বিগত বছরগুলোতে কানাডা অভিবাসন নীতিতে উদার থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, বর্তমানে কানাডা অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে চায়।
অভিবাসনের ব্যাপারে কঠোর নীতির ফলে ২০২৫ সালে পিআর প্রোগ্রামের বাইরে কানাডায় বসবাসকারী অস্থায়ী ১২ লাখ বিদেশি দেশত্যাগে বাধ্য হতে পারেন- এমন তথ্য উঠে এসেছে টরন্টোভিত্তিক বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
এখন থেকে প্রতি বছর পিআর সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইআরসিসি। বিগত সময়ে প্রতি বছর পাঁচ লাখ পিআর দেওয়া হলেও এখন সেটি কমিয়ে ২০২৫ সালে ৩ লাখ ৯৫ হাজার অভিবাসীকে পিআর দেবে বলে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এ সুবিধা ২০২৬ সালে কমিয়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার এবং ২০২৭ সালে আরও কমিয়ে ৩ লাখ ৬৫ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৫ সালে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ৯৪ হাজার ৫০০ ফ্যামিলি অর্থাৎ পারিবারিক ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইআরসিসির। এর মধ্যে ৭০ হাজার ভিসা পাবে স্থায়ীভাবে দেশটিতে বসবাসকারীদের স্ত্রী-সন্তানরা।
ট্রুডো সরকার কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি থামানোর প্রয়াস হিসেবে এই নীতি গ্রহণ করেছে। ২০১৫ সাল থেকে উদারনীতির আওতায় বিগত এক দশকে কানাডায় অভিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন সুবিধা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাই অভিবাসনের ওপর কড়াকড়ি আরোপে অটুট থাকছে দেশটির সরকার।
বিপাকে বাংলাদেশিরা
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাশ জয় (৩৫) পাঁচ বছর ধরে কানাডার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে কানাডায় পিআর পাওয়া রীতিমতো দূরহ হয়ে উঠেছে। পিআর পেতে সরকার-নির্ধারিত নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করতে হয়, যার মান বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি। এতে যেসব বাংলাদেশি পিআর ছাড়া কানাডায় বাস করছেন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শুধু প্রসেনজিৎ নন, কানাডায় প্রায় এক দশক ধরে ব্যবসা করছেন সালাহউদ্দিন বাচ্চু (৩৭)। তিনি জানান, তার কানাডা যাওয়ার প্রথমদিকে চাইলে নিজ খরচে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে আসা যেত। দিন দিন এই অবস্থা কঠিন হয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ পিজিপির আবেদন করছেন আর সুযোগ পাচ্ছেন লটারিতে নাম ওঠা হাতেগোনা কয়েকজন।
কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ৬০-এর দশক থেকে কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের বসবাস শুরু হলেও ৮০’র দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত দুই দশকে কানাডায় বাংলাদেশির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এতদিন কানাডায় বাংলাদেশিদের কাজ পাওয়া কিংবা পিআর সুবিধার জন্য কোনো বেগ পেতে না হলেও দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এর ওপর পিজিপি সুবিধা বন্ধ হওয়ায় যারা পিআর পেয়েছেন, পরিবার নিয়ে তারাও পড়েছেন বিপাকে।
৩৫৮ দিন আগে
আবাসিক চরিত্র হারিয়েছে ঢাকা, ভবিষ্যত কী?
রাজধানী বনশ্রীর সি ব্লক দিয়ে রামপুরার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা সাল্লাহউদ্দিন বাবু (৪৭)। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে মেরাদিয়া থেকে রামপুরা পর্যন্ত অটোরিকশা নিয়েও মাঝপথে এসে সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। যানজটে থামকে আছে গোটা এলাকার অলিগলি। রিকশায় বসে সময় নষ্ট করার ফুরসত নেই।
কিছুটা বিরক্ত হয়েই এই প্রতিবেদককে তিনি বললেন, ‘আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠলেও বনশ্রী এখন আর সেই চরিত্র ধরে রাখতে পারেনি। স্কুল, মাদরাসা, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভরে গেছে এলাকাটি। সবকিছু করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এতে বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।’
বিশেষজ্ঞদের দাবি—কেবল বনশ্রীই না, অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত ধানমণ্ডি, গুলশান, বারিধারা ও বনানীও হারিয়েছে আবাসিক চরিত্র। মোহাম্মদপুর আর ওয়ারী এখন ঘিঞ্জি এলাকা। ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোর খুব কম ভবনই আছে, যেটা শুধু আবাসিক।
তারা বলেন, আবাসিক এলাকা মানুষকে অনেক কিছু দেয়। শুধু ঘুমানোর জন্য আবাসিক এলাকা না, সেখানে মানুষের থাকার জন্য মৌলিক প্রয়োজনগুলো থাকতে হবে, হতে হবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব। আবার আবাসিক এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণে বেশি শব্দ করা যাবে না, বেশি জোরে মাইক বাজানো যাবে না। পানি ও পয়োঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা থাকতে হবে যথাযথভাবে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ আটকে যাওয়ায় জনভোগান্তি চরমে
কিন্তু ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে এসবের কিছুরই বালাই নেই অভিযোগ করে আসছেন নগর ও পরিবেশবিদরা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) কোষাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম সুজন সেই কথাই বলছিলেন এই প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকা মিশ্র ও বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। যেমন, ধানমন্ডি। এটির মিশ্র মিশ্র ব্যবহার হচ্ছে। এটাকে এখন আর আবাসিক এলাকা বলা যাচ্ছে না।’
‘আশির দশকের শুরুর দিকে গড়ে উঠতে শুরু করে রাজধানীর উত্তরা। এখানের কোনো কোনো এলাকা, বিশেষ করে মূল রাস্তা থেকে দূরের এলাকাগুলো আবাসিক আছে। দিয়াবাড়িতে কিছু এলাকা আবাসিক হিসেবে গড়ে উঠছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কোনো কোনো এলাকা মিশ্র, কোনো কোনোটা আবাসিক,’ যোগ করেন তিনি।
এই পরিবেশবিদ বলেন, ‘আগে বাণিজ্যিক এলাকা বলতে মতিঝিল ও দিলকুশাকে বুঝতাম। এখন বিভিন্ন আবাসিক এলাকার কাছেও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠছে। যেমন গুলশান—এখানে মূল সড়কের কাছাকাছি এলাকা বাণিজ্যিক। ফলে এটাকে পুরোপুরি আবাসিক এলাকা না বলে মিশ্র বলা যায়। আবার, বারিধারার ডিওএইচএস এখনও আবাসিক এলাকা আছে।
মানুষের প্রয়োজনের কারণেই আবাসিক এলাকা মিশ্র ও বাণিজ্যিক হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
কেমন হওয়া উচিত আবাসিক এলাকা?
কেবল মানুষ ঘুমানোর জন্য কোনো এলাকাকে আবাসিক এলাকা নামে আখ্যা দেওয়া যায় না বলে জানান সুজন। তিনি বলেন, ‘এসব এলাকার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের সুযোগ থাকতে হবে। যেমন: খাবার ও ব্যবহার্য পানি, রান্নার জন্য গ্যাস/জ্বালানি, স্যানিটেশন/পয়ঃনিষ্কাশন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা (স্যুয়ারেজ), বিদ্যুৎ, প্রয়োজনীয় গাছপালা ও উন্মুক্ত স্থান—এগুলো মানসম্মতভাবে থাকতে হবে।’
‘মানুষের বিনোদন, শরীর চর্চা, খেলাধুলার সুযোগ থাকতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (চাল-ডাল-তেল-লবণ, শিশুখাদ্য ও ওষুধ) নাগালে পাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়), কর্মস্থল (ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান) বা অন্যত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করে সেখানকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা একটি পরিপূর্ণ ও মানসম্মত আবাসিক এলাকা পেতে পারি,’ যোগ করেন এই পরিবেশবিদ।
সুজন বলেন, ‘ঢাকায় মানসম্মত আবাসিক এলাকার ঘাটতি প্রকট। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দেখি। এক্ষেত্রে রাজউক-এর ব্যর্থতাকে মুখ্য বলে মনে করি। একইসঙ্গে রাজউক, সিটি উত্তর ও দক্ষিণ করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ), পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় জরুরি।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘হোম হচ্ছে সুইটহোম। সুইটহোম আবাসিক এলাকার একটা চরিত্র থাকে। দিনশেষে যখন এলাকায় ফিরবেন, তার একটি আবাসিক চরিত্র থাকতে হবে। সেটা আপনাকে অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে কোলাহল—সব ধরনের উৎপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।’
আরও পড়ুন: ধানমন্ডিতে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩
৩৫৯ দিন আগে
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন কাজ আটকে যাওয়ায় জনভোগান্তি চরমে
দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ছয় লেনে উন্নীতকরণের শেষ পর্যায়ের কাজ। আরও প্রায় এক বছর আগে সড়কটির সাইনবোর্ড থেকে চাঁদমারী পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু চাঁদমারী থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের।
নারায়ণগঞ্জ শহরের সারাদিন যানজট লেগে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ পরিণত হয়েছে এ সড়কটি। প্রায় প্রতিদিন সাইনবোর্ড থেকে চাঁদমারী পর্যন্ত কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া যানবাহন আসা যাওয়া করতে পারলেও প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। এছাড়াও চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ডে যেতে হলেও শুরুতেই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রাস্তাজুড়ে বড় বড় খানাখন্দের কারণেও যানবাহনগুলোকে হেলে দুলে চলাচল করতে হচ্ছে। অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনারও মুখোমুখি হতে হয় এই সড়কের যানগুলোকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেন এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই।
জেলার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা যায়, চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (লিংক রোড) নামেও পরিচিত। সড়কটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এ সড়কের পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা পরিষদ, এলজিইডি, জেলা কারাগার, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, বিজিবি-৬২, পিবিআই অফিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম।
ঢাকার পাশের এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা ও নতুন বসতি। ফলে বিদ্যমান সড়কে যানবাহন সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে বেসরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ বড় আকারের বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
এছাড়া লিংক রোডের উভয় পাশে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসসহ নানা শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। যে কারণে লিংক রোডটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনা করে জনগুরুত্বপূর্ণ লিংক রোডটি যথাযথ মানে উন্নীত করার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ডিপিপি প্রণয়ন করে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সে সঙ্গে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৮ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হলে সেটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ কাজের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন পায়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবার ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (আর-১১১) ছয় লেনে উন্নীতকরণে অনুমোদিত প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৬৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০৭ টাকা। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ৮ কিলোমিটার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। পরে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ৪৮৯ কোটি ধরা হয়।
তবে নির্ধারিত সময়েও প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছিল। এভাবে একের পর এক বর্ধিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পর এ কাজটি একেবারেই থেমে রয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হতে পারে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এই কাজ শেষ না হওয়ার চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীকে বছরের পর বছর ধরে।
যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই আশার বাণী শুনিয়ে আসছেন। সবশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এ প্রকল্পটিসহ সারা দেশে আটকে থাকা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের কাজ আটকে থাকার কারণ নিয়ে কথা হয়। সেই সঙ্গে এখনও সড়কে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা সড়কে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, চাঁদমারী এলাকায় কিছু স্থাপনা রয়েছে সেটি সরিয়ে নিতে না পারায় এবং শহরের প্রবেশমুখে নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবের কারণে কাজে বিলম্ব ঘটছে। তবে এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের জুনের আগে পুরো প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: লোকসানের মুখে মানিকগঞ্জের ফুলকপি চাষিরা
৩৫৯ দিন আগে
লোকসানের মুখে মানিকগঞ্জের ফুলকপি চাষিরা
মানিকগঞ্জে লোকসানের মুখে পড়েছেন এবার ফুলকপি চাষীরা। প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে তাদের এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৩ টাকায়।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হঠাৎ বৃষ্টির কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। যদি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতো, তবে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন বলে জানান তারা।
ফুলকপি চাষিরা জানান, গত বছরগুলোতে ফুলকপি চাষে লাভবান হওয়ায় এবছর তারা ব্যাপক আবাদ করেছেন। শীতের শুরুতে আগাম ফুলকপি বিক্রি করে বেশ ভালো লাভও করেছিলেন। প্রতি পিস আগাম ফুলকপি বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে কপি উৎপাদনের ভরা মৌসুম, যেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেছে। ফলে কপির দাম কমে গেছে। পাইকাররা অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে আগের মতো দাম দিয়ে কপি কিনছেন না।
বর্তমানে, ফুলকপির দাম মাত্র ২ থেকে ৩ টাকায় নেমে এসেছে, অথচ প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষকরা ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।
তারা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১২ হাজার টাকার চারা, ৩ হাজার টাকা হালচাষ, ১ হাজার ২০০ টাকা দিনমজুর, সার ও কীটনাশকের জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা, আর জমির মালিককে বছরে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মোট খরচের তুলনায়, ফুলকপি বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইউটিউব দেখে বস্তায় আদা চাষে সফল আরিফুল
৩৬১ দিন আগে
বাংলাদেশে সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবার ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের
অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রোগীদের জন্য প্রায়শই দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়া ভিড় এবং অপর্যাপ্ত যত্নের অভিযোগও অহরহ। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের সেবার চেয়ে মুনাফা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয়।
এই হতাশাজনক প্রেক্ষাপটের মধ্যে ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হিসেবে উজ্জল উদাহরণ সৃষ্টি করছে। প্রতিষ্ঠানটি মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের চক্ষুসেবা দিয়ে যাচ্ছে। যা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়।
একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ
১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত চক্ষুর চিকিৎসা সেবার প্রতিষ্ঠান।
একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাসপাতালটি প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজারের বেশি রোগীকে সেবা দিয়ে থাকে। সবার সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে একটি অভিনব ভর্তুকি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
আরও পড়ুন: কমিটি গঠন নিয়ে ইন্টার্নদের ধর্মঘট, শেবাচিমে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত
হাসপাতালের এই অভিনব পদ্ধতির ব্যাখ্যা করে পরিচালক গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমরা সাধারণত বহির্বিভাগে পরামর্শ, রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপত্রের জন্য ৫০ টাকা ফি নিই। আর প্রাইভেট সেবার ক্ষেত্রে চার্জ এক হাজার টাকা। প্রাইভেট পরিষেবা থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ অভাবীদের জন্য চিকিৎসা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এটি আমাদের মানের সঙ্গে আপস না করে ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।’
রেটিনা বা কর্নিয়াল পদ্ধতির মতো বিশেষায়িত চিকিৎসাগুলোর জন্য ২০০ টাকা খরচ হয়। কোনো লুকানো চার্জ ছাড়াই সমস্ত প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং ফলো-আপগুলো অন্তর্ভুক্ত করে।
রোগীদের অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি
বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালের পরিষেবার প্রশংসা করেন।
একটি ক্ষতিগ্রস্ত রেটিনার অস্ত্রোপচার করেছেন উত্তরার বাসিন্দা জেসমিন আরজু। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এখানকার পরিষেবা ব্যতিক্রমী। আমি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি, তবে আমি এখানে যে সেবা পেয়েছি তার সঙ্গে কোনোটিই মেলে না। স্টাফ, নার্স এবং ডাক্তার সবাই পেশাদার এবং সহানুভূতিশীল।’
আরও পড়ুন: ভেঙে পড়েছে খুমেকের চিকিৎসা সেবা, রোগীরা ভোগান্তিতে
একইভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ছানি অপারেশনের জন্য আসা জীবন মিয়া বলেন, ‘চিকিৎসক সতর্ক ছিলেন, এবং নার্সরা খুব মনোযোগী ছিলেন। আমি সত্যিই যত্নশীল বোধ করি।’
রেটিনার জটিলতার রোগী খুরশিদা বেগম কর্মীদের নিষ্ঠা তুলে ধরে বলেন, 'তাদের আচরণ ও আন্তরিকতা অতুলনীয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় এমন প্রতিশ্রুতি খুঁজে পাওয়া বিরল।’
উচ্চ মান বজায় রাখা
হাসপাতালের সফলতার পিছনে তার শক্তিশালী অবকাঠামো এবং কর্মীদের উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ রয়েছে।
এটি ১৩৫ জন চিকিৎসক, ২০০ চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং ১ হাজার ২৫০ জনেরও বেশি কর্মী সদস্য নিযুক্ত রয়েছেন। যারা নিরাপদ অস্ত্রোপচার এবং ব্যতিক্রমী রোগীর যত্ন নিশ্চিত করে থাকেন। চিকিৎসাগুলো জাপানি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) মেনে চলে, নির্ভুলতা এবং সুরক্ষার গ্যারান্টি দেয়।
নার্সিং ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের সহযোগী পরিচালক মো. মফিজুল ইসলাম হাসপাতালের মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা আমাদের সেবার মূল্যায়ন ও উন্নতির জন্য নিয়মিত ক্লিনিক্যাল অডিট এবং ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা পরিচালনা করি। এই ক্রমাগত শেখার প্রক্রিয়াটিতে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীরা জড়িত। আর এই প্রক্রিয়াটিই প্রতিটি বিভাগের উচ্চ মান বজায় রাখা নিশ্চিত করে।’
সাশ্রয়ী মূল্যের রোগী পরিষেবা
হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ রোগীদের সেবা সমানভাবে প্রাপ্তিযোগ্য। তিনবার খাবারসহ দৈনিক শয্যা চার্জ ৬০০ টাকা।
নার্স শ্রাবণী আক্তার জানান, ‘আমরা সামগ্রিক যত্ন প্রদানের চেষ্টা করি। শিশুদের ক্ষেত্রে পরিবারগুলোর জন্য আমরা এমনকি বিনামূল্যে দুধ সরবরাহ করি। প্রতিদিন, আমরা নতুন রোগীদের কাছ থেকে শিখি এবং আমাদের পরিষেবাগুলো উন্নত করার জন্য কাজ করি।’
পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত
দুর্নীতি, অনৈতিক চর্চা এবং রোগী হয়রানির জন্য প্রায়শই সমালোচিত স্বাস্থ্যসেবা খাতে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল রোগীদের কল্যাণে তার অবিচল মনোনিবেশের জন্য দাঁড়িয়েছে। এর বিশেষ ভর্তুকি পদ্ধতি কঠোর মানের ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের পরিষেবাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এটি অনুসরণ করার জন্য একটি মান নির্ধারণ করে দেয়।
সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং নৈতিক অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দিয়ে হাসপাতালটি বাংলাদেশে অধিকতর উত্তম স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে বিঘ্নিত স্বাস্থ্যসেবা
৩৬২ দিন আগে
সংশোধিত বাজেটে এডিপি সংকোচন করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া 'অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলের লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তালিকাভুক্ত প্রকল্পগুলোর অর্থ বিতরণের অনুমোদনে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এর ফলে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় অন্তত এক দশকের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ৮১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন ছিল বিগত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কোভিড-১৯ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পঙ্গু করে দিলেও সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরের তিনটি ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ অর্থবছরে ভালো ফলাফল করেছে।
ছাত্রনেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ১৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পাস করা ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে যা মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হার প্রায় শতভাগের প্রত্যাশা
আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপির ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান ও নতুন প্রস্তাবিত সব প্রকল্প পর্যালোচনায় বিলম্বের পাশাপাশি অর্থ ছাড়ে ক্রমবর্ধমান বিলম্বকে এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইএমইডি কর্মকর্তারা। এছাড়া আগস্টের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অনেক ঠিকাদার প্রকল্পগুলো পরিত্যাগ করেছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এডিপি বাস্তবায়নের নিম্নগতির কথা স্বীকার করে বলেন,সরকার পরিবর্তনের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জরুরি সংশোধিত বাজেট ঘোষণা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, সংশোধিত বাজেট ও সংশোধিত এডিপির পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সর্বোপরি যেসব প্রকল্প রাখতে চায় সেগুলো শেষ করার জন্য আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে পারবে। কর্মসংস্থান না বাড়ালে মানুষের ভোগান্তি কমবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এডিপি বাস্তবায়নের নিম্ন হার এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়া দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মুদ্রা সঞ্চালন বাড়ানোর লক্ষ্যে এডিপি বাস্তবায়নে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বেসরকারি খাতকে তাদের নতুন বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করার মতো পদক্ষেপ না থাকলে দেশ অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে পারে।
সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রকল্প, যা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উল্লেখযোগ্য বাতিলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা ও সেতু নির্মাণের জন্য একটি গ্রামীণ সংযোগ কর্মসূচি, নগর আধুনিকীকরণ প্রকল্প এবং জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো প্রকল্প।
আরও পড়ুন: অর্থের প্রবাহ বাড়াতে এডিপি বাস্তবায়ন দ্রুত করার উদ্যোগ সরকারের
অদক্ষতা, সক্ষমতার অভাব ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগগুলোকে প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলোর অনেকগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন না করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অপচয় হয়েছে এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
যে তিন কারণে প্রকল্প বাতিল করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
বাজেটের সীমাবদ্ধতা: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা সরকারের আর্থিক পরিস্থিতিকে আঁটসাঁট করেছে। মন্ত্রণালয় যুক্তি দিয়েছে যে, খাদ্য সুরক্ষা এবং জলবায়ু অভিযোজনের মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ খাতে সম্পদ পুনঃবণ্টন করা প্রয়োজন।
অদক্ষতা এবং কথিত অনিয়ম: কিছু প্রকল্প স্ফীত বাজেট, স্বচ্ছতার অভাব এবং বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ভুগছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয় এবং এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস: সরকার এমন উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে চায় যা সরাসরি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং টেকসই উন্নয়নকে সম্বোধন করে, যা তারা দাবি করে যে বাতিল হওয়া কিছু প্রকল্পের অভাব রয়েছে।
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোর দ্বৈত চ্যালেঞ্জ এবং এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সংশোধিত এডিপিতে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' প্রকল্প বাদ, হতে পারে বড় সংকোচন
৩৬৪ দিন আগে
২৪’র গণঅভ্যুত্থান, নতুন রূপে নির্বাচন কমিশন
২০২৪ সালে নির্বাচন কমিশন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে একটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে বলে ধরা হয়। একই বছরে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং মে ও জুন মাসে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন সেপ্টেম্বরে পদত্যাগের পর নভেম্বরে নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এছাড়া ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রবর্তনের জন্য দুটি কমিশন গঠন করা হয়। এর একটি ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং ড. তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করে। তবে এই নির্বাচন বিএনপিসহ কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল।
একতরফা নির্বাচনগুলো ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি, অনিয়ম, শক্তিশালী বিরোধী প্রার্থীর অনুপস্থিতি, সত্যিকারের ভোটারদের পছন্দ করার সুযোগ না থাকা এবং সমঝোতার বা বদলি প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল।
নির্বাচন কমিশন ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ঘোষণা করলেও সরকারি পরিসংখ্যান ও মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের মধ্যে অসঙ্গতি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে।
বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনের মতো ২০২৪ সালের নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল। উল্লেখ্য, বিএনপিসহ সত্যিকারের বিরোধী দলগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন পুরোপুরি বর্জন করে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
গত মে থেকে জুন পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে দেশের প্রায় ৪৬০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সহিংসতা, অনিয়মের কারণে বিএনপি ও তার মিত্রদের বর্জনের ফলে সেই নির্বাচনও বিতর্কিত হয়।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন
গত মার্চে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও কুমিল্লার মেয়র পদে উপনির্বাচন পরিচালনা করে ইসি।
সংস্কার কমিশন গঠন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং ড. তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
এই কমিশনগুলো বর্তমানে দেশের নির্বাচনি এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগ
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পাঁচ বছরের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে এসে পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার।
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শুরু করা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনটি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা, বিতর্কিত মন্তব্য এবং স্থানীয় নির্বাচনে অনিয়ম রোধে ব্যর্থতার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল।
পদত্যাগ ঘোষণার সময় হাবিবুল আউয়াল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পর্যায়ক্রমে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন।
দলভিত্তিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) এবং নির্বাচনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও আউয়াল কমিশন তার আমলে ৯৯২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৯৬টি উপজেলা পরিষদ, ৭১টি জেলা পরিষদ, ৯০টি পৌরসভা ও ১৬টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও উপনির্বাচন পরিচালনা করে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের বাছাই করার জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাছির উদ্দিনকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন। ২৪ নভেম্বর নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার,সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নাসির উদ্দিন প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেছেন যে, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের পরেই জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
কিন্তু নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই ইসি পুনর্গঠন নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
৩৬৬ দিন আগে
বরগুনায় খননের পরেও প্রাণ ফিরছে না খাকদোন নদীর
বরগুনা থেকে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র নৌপথ খাকদোন নদী। এই পথ দিয়েই ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে সব ধরনের নৌযান। বর্তমানে খাকদোন নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে নৌপথটি প্রায় বন্ধের পথে।
বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে লঞ্চ চলাচলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থকলেও শীত মৌসুমে পানি কমে যায়। ফলে নাব্যতা না থাকায়, বিশেষ করে ভাটার সময় লঞ্চগুলো বরগুনা পৌরসভার নদীবন্দর ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। এতে স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তবে খাকদোন নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন।
বরগুনার খাকদোন নদীর এ নৌরুটকে সচল রাখতে প্রায় প্রতি বছরই বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং বা খনন কাজ করা হয়। এমনকি সারাবছর ধরেই নদীতে ভাসমান অবস্থায় বাধা থাকে ড্রেজিং মেশিন। তবে বিভিন্ন সময়ে নদীতে ড্রেজিং করা হলেও ফিরছে না নদীর নাব্যতা। এতে শীত মৌসুম শুরু হলে ভাটার সময় পানি কমে গেলে লঞ্চসহ বড় নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো বরগুনার নদীবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারায় পৌরশহর থেকে প্রায় দুই-তিন কিলোমিটার দূরে নোঙর করতে হয়। আবার বরগুনা থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
খাকদোন নদীতে এমন ড্রেজিং নিয়ে বরগুনাগামী লঞ্চগুলোর বিভিন্ন স্টাফ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
নৌযান শ্রমিকরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে ড্রেজিং করার পরও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের দাবি, শুধু লোক দেখানো ড্রেজিং করা হয়। ফলে খাকদোন নদীর নাব্যতা ফিরে না।
বরগুনা থেকে ঢাকাগামী পূবালী-১ লঞ্চের মাস্টার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, শীত মৌসুমে খাকদোন নদীর নাব্যতা হারায়। এ সময় পানির সংকট দেখা দিলে লঞ্চ নিয়ে ঘাটে যেতে পারি না। নদীতে ড্রেজিং করা হলেও আশপাশের কিছু কিছু খাল রয়েছে যেগুলোতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে ওই খালগুলোর পানি খাকদোন নদীতে নামতে পারে না। এ কারণে স্রোত কমে গিয়ে নদী ভরাট হয়ে যায়। লঞ্চ চলাচল করতে স্বাভাবিকভাবে নদীতে দেড় মিটার পানি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মাঝেমধ্যে খাকদোন নদীতে এক মিটার পানি থাকে। এ সময় লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে দূরে নোঙর করে রাখতে হয়। এতে যাত্রীদের ওঠা-নামায় ভোগান্তির সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চ যাত্রা বাদ দিয়ে ভিন্ন উপায়ে সড়ক পথে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনেও সমস্যায় পরতে হয়। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং নদীর নাব্যতা ফেরাতে দীর্ঘ মেয়াদি ড্রেজিং পরিকল্পনা করতে হবে বলে জানান তিনি।
একই লঞ্চের আরেক মাস্টার মো. আবুল হোসেন বলেন, বড় নদীতে যে গতিতে আমরা লঞ্চ চালিয়ে আসি, খাকদোন নদীর নাব্যতা না থাকায় সেই গতিতে চালাতে পারি না। লঞ্চের গতি কম থাকায় বরগুনা নদীবন্দরে পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে আমাদেরও লঞ্চ চালাতে কষ্ট হয়। তবে খাকদোন নদীতে যদি সুন্দরভাবে উপযোগী করে ড্রেজিং করা হয় তাহলে আমাদের এ সমস্যা দূর হবে এবং লঞ্চে যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।
লঞ্চের স্টাফ মো. রিপন বলেন, ভাটার সময় যখন নদীর পানি শুকিয়ে যায় তখন লঞ্চ চালিয়ে আমরা ঘাট পর্যন্ত আসতে পারি না। এছাড়া যখন একেবারে পানি শুকিয়ে যায় তখন ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ঢলুয়া নামক এলাকায় যাত্রী নামাতে হয়। তবে বছরের পর বছর নদীতে ড্রেজিং মেশিন বাধা থাকতে দেখি, কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয় না। যদি খাকদোন নদীর ড্রেজিং সঠিকভাবে করা হয়, তাহলে আমরা ঘাট পর্যন্তই যাত্রী নিয়ে আসতে পারব।
বরগুনার স্থানীয় সচেতন নাগরিক মুরাদুজ্জামান টিপন বলেন, খাকদোন নদীতে নামমাত্র ড্রেজিং করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ড্রেজিং করা হয় না। ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে লঞ্চ থেকে যাত্রীদের নামতে হয়। অথচ ড্রেজার মেশিন নদীতে থাকলেও তারা নদী খনন করে না। মাঝেমধ্যে যে খনন করা হয় তা কেবল লোক দেখানো।
আরও পড়ুন: মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে চলছে মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা
বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিটির বরগুনা জেলা শাখার সদস্য আরিফুর রহমান বলেন, খাকদোন নদীতে প্রতিবছর অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। আমরা এই ড্রেজিংয়ের কোনো সুফল পাচ্ছি না। শীত মৌসুমে লঞ্চঘাট পর্যন্ত লঞ্চ আসতে না পারায় ঘাট থেকে অনেক দূরে নোঙর করে রাখতে হয় এবং সেখানেই যাত্রীদেরকে নামানো এবং ওঠানো হয়। ভবিষ্যতে খাকদোন নদীতে ড্রেজিংয়ের সুফল যদি না পাই তাহলে আমরা পরিবেশকর্মীরা খাকদোন নদীর নাব্যতা ফেরাতে বৃহৎ আন্দোলন করব। আমরা সরকারের সু-নজরের মাধ্যমে খাকদোন নদীর অপরিকল্পিত ড্রেজিং বন্ধ করে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করতে আহ্বান জানাই।
বরগুনা নদীবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা সৈয়দ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে নদীতে যখন জোয়ার থাকে তখন তেমন একটা সমস্যা হয় না। তবে ভাটার সময় বড় নৌযানগুলোর গতি কমিয়ে চালাতে হয়। এ মৌসুমে খাকদোন নদীর যে নাব্যতা সংকট দেখা দেয় তা সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিআইডব্লিউটিএয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নদীর গভীরতা এবং নদী পরিদর্শন করেছেন। এর পাশাপাশি নদীর নাব্যতা সংকট দূর করতে বন্দর কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের ড্রেজিং বিভাগকেও এ বিষয়ে অবগত করেছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, খাকদোন নদীই বরগুনা থেকে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র নৌপথ। এ পথ হয়েই লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করে। বর্তমানে খাকদোন নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে এ নৌপথটি প্রায় বন্ধের পথে। যদিও এখন পর্যন্ত জোয়ারের সময় লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তবে ভাটার সময় পৌঁছানো একটু কঠিন হয়। আমাদের এই নৌপথটি সচল রাখতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড, নাশকতার আশঙ্কা
৩৬৭ দিন আগে
বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড, নাশকতার আশঙ্কা
দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে সংঘটিত আগুনকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এলাকা। সেই স্থাপনায় মধ্যরাতে আগুন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে গোটা দেশের মানুষ।
তারা বলছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অনেক ঘটনার ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ের এই অগ্নিকাণ্ড।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র। আগুন লাগার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে।
সচিবালয়ে মধ্যরাতে লাগা এই আগুনের ঘটনা জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। ফেসবুকে নানাজন বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন তুলে তার উত্তর খুঁজছেন।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা- সমালোচনা। অনেকেই এই আগুনকে নাশকতা বলছেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তুলছেন প্রশ্ন অনেকে।
এদিকে গতকাল বুধবার(২৫ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি করে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন আমলারা। প্রশাসনে এমন চলমান অস্থিরতার মধ্যেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল।
আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে বলে মনে করেন সচিবালয়ের কাছে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ও সকল গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকে। আগুন লাগার পর কি একজনেরও চোখে পড়েনি। এটা কীভাবে সম্ভব।
অন্যদিকে সচিবালয়ে কর্মরত একাদিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একই সময়ে দুই জায়গায় আগুনের সূত্রপাত দেখে সন্দেহ তৈরি হয়েছে- এটি কি শর্ট সার্কিট না অন্য কিছু। বিষয়গুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগছে বলেও জানান তারা।
আগুনের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যর্থতা ছিল। তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগাতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।
তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি। এখানেও তাই হয়েছে। এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ছিল। হয়তো দুর্বৃত্তরা এই ছুটির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাতে পারে।এখানে ফায়ার সার্ভিস ছিল। ভেতরে ফায়ার স্টেশন আছে। আর ক্যামেরা তো আছেই। সার্বক্ষণিক দেখভালের লোক আছে। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক বা দুজন লোক ছিল না, দেড়-দুই শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী ছিল। তারা কি সবাই একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল? সেটা তো হতে পারে না।
এ ঘটনাকে নাশকতা বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ বলেন, ‘এটা ডিজাস্টার। কেউ চান্স নিয়েছে মনে হচ্ছে। গুরুত্ব সহকারে নাশকতার ঘটনা কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সচিবালয়ের আগুনকে সরাসরি নাশকতার অংশ হিসেবে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, এই আগুন স্যাবোটাজ, অবশ্যই এটা সন্দেহের শুরুতে রাখতে হবে। লাগানো আগুন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। এটা ধরে নিতে হবে যে, এই আগুনের মোটিভ কী হতে পারে? এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সচিবালয়ের চারটা ফ্লোরে আগুন, যেখানে চারটা কমিশন চলছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। এই আগুনের টার্গেটই হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া। কারণ কমিশনের জন্য বিভিন্ন সময় নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। যে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের সবকিছুর আগে বিবেচনায় রাখতে হবে যে এটা স্যাবোটাজ। যদি প্রথমেই ‘স্যাবোটাজ’ না ধরে তদন্ত করা হয় তাহলে ভুল হবে।
ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতাও তদন্ত দাবি
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) একেএম শাকিল নেওয়াজ ইউএনবিকে বলেন, সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপনে ১০ ঘণ্টা সময় নেওয়া অবিশ্বাস্য। সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ সে সব জায়গায় আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।
তিনি বলেন, ‘গতকাল ছুটির দিন ছিল। রাত দেড়টায় আগুন লাগলো, যেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটা পক্ষের ৪০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চলছে। কারা আল্টিমেটাম দিয়েছে তাদের ধরতে হবে। মধ্যরাতে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা লাগলো কেন- তাও দেখতে হবে।’
শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘যদি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হয়, তাহলে এক জায়গায় লাগার কথা। একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়। লাগানো হলেই তিন জায়গায় আগুন জ্বলবে। তো পুলিশ, আনসার, বিজিবি ছিল। চারদিকে লাইট বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কী করল? তাদের কী দুর্বলতা ছিল? বঙ্গবাজার ১০ গজের ভেতরে, সেই আগুনও তারা দ্রুত নেভাতে পারলো না। সচিবালয় কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান, সেখানেও তারা আগুন নেভাতে পারছেন না। এটা হয় না, মানা যায় না। তাদের ব্যর্থতাকেও তদন্তের বিবেচনায় আনতে হবে।’
৩৬৭ দিন আগে
মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তিতে চলছে মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা
প্রশাসনের নাকের ডগায় থেকেও মিরপুরের পল্লবী আলোকদি ঝিলপাড় বস্তিতে চলছে মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত জায়গা দখল করে অবৈধ বস্তি গড়ে তুলে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ইলিয়াস মোল্লার নিয়ন্ত্রণে চলছে এ অবৈধ ব্যবসা।
মাদক ও অস্ত্রের অবাধ কারবারের কারণে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে এই বস্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসবে বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সূ্ত্র জানায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে প্রায় ৩০০ সাংবাদিক পরিবারের জন্য আবাসন গড়ে তুলতে ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতিকে রাজধানীর পল্লবীর ঝিলপাড় মসজিদের পাশে ৭ একর জমি বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এই বিশাল জমি দখলে নেন ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস মোল্লা। জমির একাংশে তিনি বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেন এবং অন্য অংশে গড়ে তোলেন গরুর খামার। বস্তি, দোকান ও অস্থায়ী মার্কেট করার পর সেখানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার পানি সংযোগেরও ব্যবস্থা করেন ইলিয়াস। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকলেও নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে প্রতি মাসে ভাড়া তুলে চলেছেন তিনি।
সরকার পতনের পর দেশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিলেও এই বস্তিতে তার নিয়ন্ত্রণ অটুট রয়েছে। আত্মীয় ও দলীয় লোকের মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ইলিয়াস মোল্লা।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
৩৬৭ দিন আগে