বাংলাদেশ
রিয়াদে গণহত্যা দিবস পালিত
সোমবার (২৫ মার্চ) সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সব শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন: আজ গণহত্যা দিবস
দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা তৎকালীন ইপিআর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মানুষ।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ১৯৭১ সালে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরি। আর এ স্বীকৃতি আদায়ে সরকারের পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মিশন উপ প্রধান মো. আবুল হাসান মৃধা, ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফারুক বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন রিয়াদে বাংলাদেশি কমিউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যবসায়ী এম আর মাহাবুব।
আরও পড়ুন: ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা
বক্তারা সবাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সংঘটিত ভয়াল গণহত্যার বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করা হয়।
ভুটানের রাজার সফর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সাক্ষ্য: যৌথ বিবৃতি
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ সময় পুষ্পস্তবক অর্পণ, পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং একটি গাছের চারা রোপণ করবেন।
ভুটানের রানী জেটসুন পেমা ওয়াংচুকও রাজার সঙ্গে থাকবেন।
ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের আমন্ত্রণে ২৫ থেকে ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সফর করছেন।
সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বড় সাক্ষ্য।
এতে বলা হয়, রাজা ও রানীর বাংলাদেশ সফর দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও সুসম্পর্কের ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
রাজা ও রানী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রাষ্ট্রপতি রাজার সম্মানে মঙ্গলবার একটি ভোজের আয়োজন করবেন।
সোমবার রাজা ও রানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সফরকালে থিম্পুতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনে সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্য সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওএমএস) স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য, বাংলাদেশের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ভুটানের প্রতিযোগিতা ও ভোক্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই
এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতামূলক চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ভর্তির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সহযোগিতার বিদ্যমান গতি আরও সুসংহত করার জন্য, ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক এমবিবিএস আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উভয় পক্ষ বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে, যা অভিন্ন ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি বিশেষ বিষয়।
রাজা জিগমে তাকে এবং তার প্রতিনিধিদলের সদস্যদের আন্তরিক অভ্যর্থনা ও উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য গভীর প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণের অমূল্য সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ হিসেবে ভুটানের কথা স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ ও ভুটান ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চলাচল চুক্তি এবং এর প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে, যা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এ নিয়ে দুই পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য-যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত ঢাকা-থিম্পু
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই চুক্তি এবং এর প্রটোকল কেবল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের জন্যই অভূতপূর্ব হবে না বরং আন্তঃসংযুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে।
আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ অর্থনৈতিক সংহতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে উভয় পক্ষই সম্মতি প্রকাশ করেছে।
সড়ক, রেল ও জলপথের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংহতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করছে দুটি দেশই।
উন্মোচিত হলো নতুন এক দিগন্ত
ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জিলেফু থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের 'কুড়িগ্রামে' 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়ায় ভুটান বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানায়।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চল দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বৃহত্তর সমৃদ্ধি অর্জনে নতুন দিগন্ত যোগ করবে।
দুই পক্ষই ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
এই অঞ্চলের অভিন্ন শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উভয় পক্ষই বৈঠকে জানিয়েছে।
রাজা ২৬ মার্চ ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন এবং সেখানকার কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
বাংলাদেশ থিম্পুতে একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করতে যাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরেকটি মাইলফলক হবে।
আরও পড়ুন: ভুটানের রাজাকে ঢাকায় লাল গালিচা সংবর্ধনা
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক যোগাযোগ থাকায় উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তারা ভুটানের হিমালয়কে বাংলাদেশের কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে যুক্ত করে বাংলাদেশ ও ভুটানের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও জোরদার করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সফরে রাজা জিগমে পদ্মা সেতু পরিদর্শন করবেন, যা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের স্ব-অর্থায়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নির্মিত একটি স্মরণীয় অবকাঠামোগত সাফল্য।
অসাধারণ এই অবকাঠামো প্রকল্পটি যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সাক্ষ্য বহন করে।
রাজা জিগমে আড়াইহাজারের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন এবং সেখানকার অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ করবেন।
ঢাকায় অবস্থানকালে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতা এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মত বিনিময় করবেন রাজা।
ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভারত: হাছান মাহমুদ
ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান: স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
সব কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, '৫৪তম স্বাধীনতা দিবসে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসি এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ও অনলাইন প্লাটফর্মে একযোগে ভাষণটি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তার সরকার দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
হাসিনা বলেন, ‘এটা কোনো ফাঁপা বাগাড়ম্বরপূর্ণ দাবি নয়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, তার সরকার প্রমাণ করেছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে সীমিত সম্পদের মধ্যে একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কিন্তু অপ্রিয় সত্য যে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থেমে নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা কীভাবে থামানো যায়, তা খুঁজে বের করতে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও লুকিয়ে আছে।’
তিনি বলেন,‘ ১৯৭১ সালে পরাজিত শক্তি এবং পঁচাত্তরের হত্যাকারী ও তাদের দোসররা এখনও তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে লেগে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘তাদের চলার পথে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ। যেকোনো কূটকৌশলে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলে পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য।’ তাই সাবধানে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির 'সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়' অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করছে।
'আমাদের কোনো প্রভু নেই, বরং আমাদের বন্ধু আছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালি জাতি কখনো কারো কাছে পরাজিত হবে না।
৭ জানুয়ারির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের প্রতি আস্থা রাখার জন্য জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করেছি তার ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন: যারা জনকল্যাণে নীরবে কাজ করে তাদের সম্মান জানাই: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ শাসন করছে।
কোভিড-১৯ মহামারি, অগ্নিসংযোগ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ১৫ বছরের যাত্রা পুরোপুরি নিষ্কণ্টক ছিল না।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সূচকে এবং কৃষি খাতে দেশের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করে চার বা ততোধিক লেনবিশিষ্ট মহাসড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
রমজানে দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং একই পরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি চিনি, ছোলা, ডাল ও ভোজ্যতেলের মতো বেশ কয়েকটি পণ্য মজুদ করেছে।
এছাড়া রমজানের শুরু থেকে রাজধানীর ২৫টি পয়েন্টে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবি সারাদেশে এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলা সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার এক কোটি পরিবারের জন্য ১ লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চাল বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে এবং প্রতিটি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি চাল পাবে।
তিনি বলেন, রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দাম কিছুটা বেশি ছিল। কিন্তু কিছুদিনের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক ও সাশ্রয়ী পর্যায়ে নেমে এসেছে।
হাসিনা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বাড়লে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা
ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ভারত: হাছান মাহমুদ
নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে ভারত যেভাবে সহযোগিতা করেছে, সেভাবে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতেও সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এ বৈঠক হয়।
বাংলাদেশ ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় এবং ভারতের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ আনতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
জলবিদ্যুৎ আমদানি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে এই সফরে চুক্তি হচ্ছে না। ভারত যেভাবে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে সহায়তা করেছে, ভুটান থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও ভারত সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের আগেই ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ ভুটানের রাজার সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করাই বিএনপির উদ্দেশ্য: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে ভুটানকে আবার বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল ইনিশিয়েটিভ) -এ যোগদানের জন্য এবং এয়ার-কানেক্টিভিটি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-থিম্পু পথে এখন সপ্তাহে মাত্র দুটি ফ্লাইট আছে। এটি বাড়ানো প্রয়োজন, কারণ ভুটান অত্যন্ত সুন্দর দেশ। আমি কয়েকবার গেছি, বর্তমান রাজার বিয়ে উৎসবেও যোগ দিয়েছি। গত বছর তিনি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার সময় যাত্রাবিরতিতে আমি তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছিলাম।’
মানুষ যাতে সড়ক পথে গাড়ি নিয়ে যেতে পারে, সে নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান হাছান মাহমুদ।
কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে জায়গা দেওয়া হবে সে বিষয়টিও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ দিন ভুটানের রাজার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি পুনর্নবায়নের কথা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই
২৫-২৮ মার্চ সফরে সোমবার ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা। এ দিন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি পদ্মা সেতু, শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
শেষদিন ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে রাজা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। ভুটানের রানী, পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তারা রাজার সফরসঙ্গী হিসেবে সফরে যোগ দিয়েছেন।
দেশে আরও ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু নেই
দেশে সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি।
তবে এ সময় নতুন করে ৩৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৪১১ জনে।
এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ২২ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু নেই
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এ সময়ে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩০ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৬৬২জনে।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু নেই
বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে গুরুত্ব দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া
বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) বিষয়ক আলোচনা ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের আগে বাংলাদেশের হাতে খুব বেশি সময় নেই।
তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের আসন্ন উত্তরণ এবং পরে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা হারানো কোরিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।’
রবিবার সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে কূটনৈতিক সংবাদ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের (আপটা) কিছু অংশ জিএসপির সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ যদি এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ করে, তবে আপটার আওতায় কোনো ট্যারিফ সুবিধা না পাওয়ায় কিছু পণ্য শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেন, শুধু জিএসপি সুবিধা বাড়ানো দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হতে পারে না। উভয় পক্ষকে ইপিএর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন ইপিএ বা কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ)। ‘আমার দৃষ্টিতে, এই ধরনের এফটিএ একই।’
কোরিয়ায় এফটিএ চালুর জন্য জাতীয় সংসদের অনুমোদনসহ অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ইপিএ শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
রাষ্ট্রদূত পার্ক বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ইপিএ নিয়ে ২০২৩ সালের শুরু থেকেই আলোচনা চলছে তবে বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে যৌথ গবেষণা শেষ করেছে এবং চীনের সঙ্গে এটি শেষ করার কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছে।
এর আগে রাষ্ট্রদূত ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সদস্যদের সঙ্গে এক ইফতার-কাম-নৈশভোজের আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই
ডিক্যাব সভাপতি নুরুল ইসলাম হাসিব আন্তঃকোরীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কূটনীতি, সফট পাওয়ার অ্যান্ড কালচার, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি এবং বহুপাক্ষিক যোগাযোগের মতো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের জানাতে দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন।
১৯৭২ সালের ১২ মে কোরিয়া বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ২০২৩ সালে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সোমবার তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, থিম্পুতে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন এবং ভোক্তা অধিকার বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়সংক্রান্ত আরেকটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা
ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তানদিন ওয়াংচুক, ভুটানের বাণিজ্যমন্ত্রী তাশি ওয়াংম্যাক এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেমা চোডেন নিজ নিজ পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বছরে ভুটানের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০টি করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভুটানের ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাদের জন্য প্রতি বছর দুটি আসনও প্রস্তাব করেছে। ভুটানে একটি কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনেও বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) প্রতি বছর ভুটানের কর্মকর্তাদের তিন বছরের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বিশেষ নিদর্শন হিসেবে ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কম্পিউটার ও ল্যাপটপ হস্তান্তর করে বাংলাদেশ।
এর আগে ভুটানের রাজা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ভুটানের রাজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক করেন।
এ ছাড়াও তাদের দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক হবে।
আরও পড়ুন: ভুটানের রাজাকে ঢাকায় লাল গালিচা সংবর্ধনা
২৭ মার্চ থেকে বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়
আগামী বুধবার (২৭ মার্চ) থেকে রাত ৯টার পরও মেট্রোরেল চালু রাখার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) এম. এ. এন সিদ্দিক আগামীকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংএ বিস্তারিত তথ্য জানাবেন।
আরও পড়ুন: রমজানের শেষ ১৫ দিন মেট্রোরেলের সময় বাড়বে এক ঘণ্টা
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৭ মার্চ থেকে মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন ৯টা ৪০ মিনিটে এবং উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন ৯টা ২০ মিনিটে ছাড়বে। বাড়তি সময়ে ১২ মিনিট পরপর ট্রেন চলাচল করবে। এতে চলাচলরত ট্রেনের সংখ্যা ১০টি বাড়বে। এখন দিনে ১৮৪ বার ট্রেন চলে। তখন চলবে ১৯৪ বার।
এখন মেট্রোরেল সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলে। পিক আওয়ারে (৭টা থেকে সাড়ে বেলা ১১টা এবং বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা) প্রতি ৮ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলাচল করছে। আর বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফ পিক আওয়ারে ১২ মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলাচল করছে।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলের ক্যান্টিন ১ হাজার টাকায় ভাড়া, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
যারা জনকল্যাণে নীরবে কাজ করে তাদের সম্মান জানাই: প্রধানমন্ত্রী
দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা নীরবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করে ও সম্মান জানাতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘দেশের গ্রাম ও শহরাঞ্চলে অনেক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ রয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের খুঁজে বের করুন, যারা নিজেদের জন্য নয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা কখনও প্রচারে আসতে পারে না বা প্রচারে আসতে চায় না।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা
দেশের জন্য গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই ভালো বিষয় হবে যদি সবাই নিজস্ব উদ্যোগে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করার চেষ্টা করে এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করা যায়। তিনি বলেন, 'এক্ষেত্রে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪ প্রাপ্ত সকলকে অভিনন্দন জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে (ভালো কাজের স্বীকৃতি দেখে) অনেক মানুষ দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে।’
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবদুস সাত্তার বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (মরণোত্তর) এবং মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু নাঈম মো. নজিব উদ্দিন খান (খুররম) (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা পদক-২০২৪ প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য ড. মোবারক আহমদ খান এবং চিকিৎসায় অবদানের জন্য ডা. হরিশঙ্কর দাস পদকে ভূষিত হয়েছেন।
সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় অবদানের জন্য মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান ও ফিরোজা খাতুনকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে অরণ্য চিরণ, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোল্লা ওবায়দুল বাকী ও এস এম আব্রাহাম লিংকনকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে রফিকুজ্জামান তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ গুরুত্বপূর্ণ উদ্বৃতি পাঠ করা হয়।
১৯৭৭ সাল থেকে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিবছর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা পদক দিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
বাণিজ্য-যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত ঢাকা-থিম্পু
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সাক্ষাৎকালে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বর্তমান চমৎকার স্তর নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে উভয় পক্ষ।
তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হন।
সোমবার(২৫ মার্চ) সকালে ঢাকায় আসেন ভুটানের রাজা।আরও পড়ুন: চার দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনের পর এটিই কোনো বিদেশি অতিথির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর।
একটি বিশেষ বিমানে রাজা এবং তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ঢাকায় অবতরণের পর তাদেরকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং ফার্স্ট লেডি।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের তৃতীয় রাজা টেলিগ্রামের মাধ্যমে স্বীকৃতির বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান।
সেই থেকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটি বিশেষ বহুমাত্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ভুটান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয় এবং ফলস্বরূপ, ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ভুটানের রাজা