বিশ্ব
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: দাবি ট্রাম্পের
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপশি, হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, হামাস যদি এই চুক্তি মেনে না নেয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এমন এক সময়ে ট্রাম্প এই ঘোষণা দিয়েছেন, যখন তিনি হোয়াইট হাউসে আগামী সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।-খবর এপি ও গার্ডিয়ানের
ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। ৬০ দিনের একটি অস্ত্রবিরতি চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় শর্তে রাজি হয়েছে ইসরায়েল—এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবো।’
হামাসকে কাতার ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা চূড়ান্ত প্রস্তাব পৌঁছে দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্যের ভালোর জন্য হলেও হামাস এই চুক্তি মেনে নেবে। কারণ, চুক্তি না মানলে পরিস্থিতি ভালো হবে না—বরং খারাপের দিকেই যাবে।’
এটিই সবচেয়ে ভালো ও চূড়ান্ত প্রস্তাব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প, যদিও আগের অভিজ্ঞতার বিবেচনায় হামাসের কাছে তা সন্দেহপ্রবণ মনে হতে পারে। কী কী শর্তে যুদ্ধ বন্ধে রাজি হয়েছে ইসরায়েল, তা এখনো পরিষ্কার না।
এরআগে গেল মার্চে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার আগে লড়াই বন্ধে হামাসকে চাপে রাখতে নাটকীয়ভাবে বারবার সময়সীমা বেঁধে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো শর্তে জিম্মিদের ছেড়ে দিতে তারা প্রস্তুত। কিন্তু ইসরায়েল বলছে, হামাসকে ভেঙে দেওয়া ও নিরস্ত্রীকরণ করলেই কেবল এই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।
১৮০ দিন আগে
ত্রাণকেন্দ্র থেকে ক্যাফে, কোথাও নেই ফিলিস্তিনিদের প্রাণের নিরাপত্তা
গাজা উপত্যকার প্রতিটি স্থানই ফিলিস্থিনিদের জন্য মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। ত্রাণকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি কোনো সতর্কতা ছাড়া এবার ক্যাফেতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় সোমবার (৩০ জুন) ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা ও গুলিতে কমপক্ষে ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সমুদ্রতীরবর্তী ক্যাফে আল-বাকাতে ৩০ জন এবং খাবারের সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জাওয়াইদা শহরের কাছে একটি ভবনে চালানো আরেক হামলায় ছয়জন নিহত হন বলে জানিয়েছে আল-আকসা হাসপাতাল।
এ ছাড়া, গাজা শহরের একটি সড়কে আরও দুটি বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হন বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সোমবারের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে। এরমধ্যে আল-বাকা ক্যাফেতে ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। তাছাড়া, ত্রাণকেন্দ্র ও হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ক্যাফেতে হামলা
আল-বাকা ক্যাফেটি ছিল যুদ্ধ শুরুর পর গত ২০ মাস ধরে খোলা থাকা গুটিকয়েক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি। এটি ছিল ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ ও মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার স্থান হিসেবে মানুষের একটি ভরসার জায়গা।
পড়ুন: রাতভর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭২
আল জাজিরা জানায়, ক্যাফেতে নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব ছাড়াও নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। সেখানে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন তারা।
এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন, ‘আমরা ক্যাফেতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ খুঁজে পেয়েছি। এই জায়গার কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক সম্পৃক্ততা ছিল না। এটি মানুষে ভরা ছিল, শিশুরাও ছিল একটি জন্মদিন পালনের জন্য।’
এপিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আলি আবু আতেইলা জানান, গাজা সিটির আল-বাকা ক্যাফে লক্ষ্য করে যখন বিমান হামলা চালানো হয়, তখন তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
আলি আবু বলেন, ‘কোনো সতর্কতা ছাড়াই, হঠাৎ একটি যুদ্ধবিমান এসে জায়গাটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়, ভূমিকম্পের মতো কাঁপিয়ে তোলে পুরো এলাকাটি।’
বিস্ফোরণে ক্যাফেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং স্থানে একটি বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়।
কোনো সতর্কতা ছাড়াই হামলা
গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, ক্যাফেতে হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। এই এলাকা অনেক বিপর্যস্ত ও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখানকার তাঁবুগুলোর মধ্যে ভীষণ গরম থেকে কিছুটা মুক্তির সুযোগ ছিল। বিস্ফোরণের তীব্রতার কারণে রক্তের দাগ এখনো মাটিতে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেক লাশ ও শরীরের অংশ খণ্ড খণ্ড অবস্থায় এখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার গাজা শহরের জয়তুন এলাকায় একটি খাদ্য বিতরণ গুদামেও হামলা চালানো হয়। সেখানে খাবার নিতে আসা অন্তত ১৩ জন নিহত হন। এ ছাড়াও গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা বসবাস করতেন।
সেখানে হামলার আগে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে এলাকাটি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল বলে জানান হামাদা আবু জারাদেহ নামে এক ব্যক্তি। তিনি হামলার আগে পালাতে সক্ষম হন।
হামদা বলেন, ‘আমরা জানি না কী করব, কোথায় যাব? ৬৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমরা পুরো পৃথিবী থেকে বিমুখ। প্রতিদিন মৃত্যুই আমাদের একমাত্র সঙ্গী।’
ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে হামলা
এপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলের হামলায় ১১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পড়ুন: গাজায় আগ্রাসন: যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খাবারের খোঁজে বের হওয়া আরও ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ তথ্য জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফান্ডের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্র থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধদের লাশ তাদের কাছে এসেছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিতর্কিত ও বিশৃঙ্খল ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের কারণে গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতাল আরও জানায়, রাফাহ শহরেও ওই ফান্ডের একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছেও এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নেতজারিম করিডরের কাছে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করার সময় আরও একজন নিহত হয়েছেন।
মনজের হিশাম ইসমাইল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জিএইচএফের খান ইউনিসের কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে জনতার ওপর গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ মাহমুদ মোকাইমার জানান, তিনি অন্যদের সঙ্গে হাঁটার সময় দেখতে পান ট্যাংক ও অন্যান্য যানবাহনে করে সেনারা দ্রুত ছুটে আসছে। তারা প্রথমে সতর্কমূলক গুলি ছুড়লেও পরে সরাসরি জনতার ওপর গুলি চালায়।
ইউসুফ বলেন, ‘তারা আমাদের লক্ষ্য করে এলোমেলোভাবে গুলি চালায়।’
তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন এবং তাকে উদ্ধার করতে আসা এক ব্যক্তিও গুলিবিদ্ধ হন। ইউসুফ আরও বলেন, ‘সেনারা ছয়জনকে ধরে নিয়ে গেছে, তার মধ্যে তিনটি শিশু। আমরা জানি না তারা এখনও বেঁচে আছে কি না।’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এসব হামলার বিষয়ে তথ্য পর্যালোচনা করছে।
এর আগে তারা দাবি করে, কেউ সন্দেহজনকভাবে চলাফেরা করলে বা সেনাদের খুব কাছাকাছি চলে এলে তারা সতর্কতামূলক গুলি চালায়—যেটি ত্রাণ সংগ্রহের সময়ও হতে পারে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় সীমিত ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এসব কেন্দ্রে হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সোমবার স্বীকার করেছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হয়েছেন। সেনাদের ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আলোকে’ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
এর আগে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গাজায় ত্রাণকেন্দ্রের কাছে দায়িত্ব পালনরত সেনাদের জনতার ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালাতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু সেনার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক সময় যারা কোনো হুমকির কারণ ছিল না, তাদেরও লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী গুলি চালানো হয়েছে।
হাসপাতালেও হামলা
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরে অবস্থিত আল-আকসা হাসপাতালের আঙিনাতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে হাজারো পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ও আল-জাজিরার যাচাই করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর হাসপাতালজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, আশ্রয় নেওয়া মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকে, তাঁবুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম হাসপাতালের কাছে থেকে বলেন, ‘এই বিশাল বিস্ফোরণের আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। হামলার স্থান আমাদের সম্প্রচার পয়েন্ট থেকে মাত্র ১০ মিটার দূরে।’
এটি প্রথমবার নয়; ইসরায়েলি বাহিনী এ হাসপাতালের আঙিনায় কমপক্ষে ১০ বার হামলা চালিয়েছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করেছে বলে জানান তিনি।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের দেয়ালের ভেতরে বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুতে বোমা ফেলেছে, এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। তাছাড়া, রোগীদের জীবন মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ মাসে ইসরায়েল বারবার গাজার অসংখ্য হাসপাতালকে টার্গেট করেছে। ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্যখাতকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
আবারো জমি দখল ও উচ্ছেদের আশঙ্কা
ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসে বাড়িঘর ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে, যা নতুন করে স্থল অভিযান শুরুর শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
একই সঙ্গে উত্তর গাজার বড় বড় এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের নতুন করে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল, যেখানে তারা এর আগেও অভিযান চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা, ৫ সন্তানের বাবা সালাহ (বয়স ৬০) বলেন, ‘বিস্ফোরণ থেমে নেই; ওরা স্কুল, ঘরবাড়ি সব বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হয়েছে। খবরের কাগজে শুনি যুদ্ধবিরতি নাকি আসছে, অথচ এখানে আমরা কেবল মৃত্যু ও বিস্ফোরণই দেখতে পাচ্ছি।’
গাজা শহরের জয়তুন এলাকার পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি ট্যাংক এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করেছে। একই সময়ে বিমান হামলায় চারটি স্কুল ধ্বংস করা হয়েছে। এর আগে ওই স্কুলগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জয়তুনে কমপক্ষে ১০ জন এবং গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আরও অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মতে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন অথবা জোরপূর্বক উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তুতি
এদিকে, এই হামলাগুলোর মধ্যেই নতুন যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী কাতার নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় ফেরার ব্যাপারে ‘গভীর আগ্রহ’ রয়েছে, তবে কিছু জটিলতা রয়ে গেছে।
দোহায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেন, ‘মূল বাধা হলো, দুপক্ষই আলোচনার টেবিলে ফিরছে না। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ফলে যে গতি তৈরি হয়েছে, তা এখন কাজে লাগানো যেতে পারে।’
তিনি জানান, দুয়েকদিনের মধ্যেই এই আলোচনা শুরু হবে এমনটা তারা আশা করছেন না। তবে আলোচনায় ফেরার উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে আশা প্রকাশ করেন মাজেদ আল আনসারি।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আলোচনায় ইরান ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্ভাবনাগুলো নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) ইসরায়েলি সেনাপ্রধান জানান, বর্তমান স্থল অভিযান প্রায় লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
এরপর, রবিবার (২৯ জুন) নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে থাকা যেসব বন্দি এখনও জীবিত বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে—তাদের উদ্ধার করতে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
ফিলিস্তিনি ও মিসরীয় সূত্রে জানা গেছে, মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে, তবে নতুন যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
এদিকে, হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, গত চার সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো খবর আসেনি। তারা একটি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা গাজার জনগণকে রক্ষা করবে এবং মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্যও তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
১৮১ দিন আগে
ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় থাইপ্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। একটি ফোনকল ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে নৈতিক স্খলনের অভিযোগের মুখে এবার তাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দেশটির সাংবিধানিক আদালত জানিয়েছে, পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্তের আহ্বান জানিয়ে ৩৬ সিনেটরের আবেদন বিবেচনা করা হয়েছে। এতে তার বিরুদ্ধে অসততা ও সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে নৈতিক অবনমনের অভিযোগ আনা হয়েছে।-খবর দ্য গার্ডিয়ানের
ব্যাংককে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের পেতংতার্ন বলেন, ‘তিনি আদালতের রায় মেনে নিয়েছেন। তবে দেশের ভালোর জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে সবসময় রয়েছে।’
এ সময়ে ক্ষুব্ধ থাই নাগরিকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তিনি। কম্বোডিয়ার সাবেক প্রভাবশালী নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ব্যাপক চাপে পড়েন থাইল্যান্ডের এই প্রধানমন্ত্রী। ওই আলাপে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ফোনালাপে হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বলেন, ‘যদি তার (হুন সেন) কিছু প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি সেটার ব্যবস্থা করে দেবেন।’ এ সময়ে থাই সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারদের নিয়েও সমালোচনামূলক মন্তব্য করতে শোনা গেছে তাকে।
এই ফোনালাপের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে কম্বোডিয়ার কাছে অতিমাত্রায় নতি স্বীকার করার অভিযোগ তুলেছেন সমালোচকরা।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কম্বোডিয়া শাসন করেছেন হুন সেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে এখনো তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তিনি পেতংতার্নের পরিবারের পুরোনো বন্ধু, যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সম্পর্কে তিক্ততা এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা সিনাওয়াত্রা পরিবারের এই বংশধরের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। চলতি মাসে তার জোটের একটি অংশ সরকার থেকে সরে গেলেও স্বল্প-ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন তিনি। পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথাও ভাবা হচ্ছিল।
তার পদত্যাগের দাবিতে শনিবার রাজধানী ব্যাংককে ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্চে যেখানে তার জনপ্রিয়তা ছিল ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ, বর্তমানে সেটা পড়তে পড়তে ৯ শতাংশে এসে নেমেছে।
পেতংতার্নের ধনকুবের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রাও আইনি ঝামেলার মধ্যে রয়েছে। দেশটির সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেস ম্যাজেস্টি (রাজকীয় মর্যাদার হানি) আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই আইন অনুসারে, কেউ থাই রাজপরিবারের সমালোচনা করলে তার ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
গেল দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন সিনাওয়াত্রা পরিবার ও তাদের বিরোধী রাজপরিবারপন্থি রক্ষণশীল সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
দুইবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। কিন্তু এক অভ্যুত্থানে ২০০৬ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তার বোন ইয়াংলাক সিনাওয়াত্রাও ২০১৪ সালে একটি অভ্যুত্থানের পর আদালতের রায়ে ক্ষমতা ছেড়েছেন।
১৮১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু: মার্ক কার্নি
মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করারোপের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। রবিবার (২৯ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এরআগে শুক্রবার কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর কানাডীয় শুল্কারোপের পরিকল্পনাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সরাসরি ও প্রকাশ্য আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
পরে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির প্রত্যাশায় দ্য ডিজিটাল সার্ভস ট্যাক্স বা ডিজিটাল সেবা কর নামের ওই করারোপের পরিকল্পনা বাতিল করার কথা জানায় কানাডা। সোমবার থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
মার্ক কার্নির কার্যালয় জানিয়েছে, কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন ট্রাম্প।
এক বিবৃতিতে কার্নি বলেন, ‘আজকের ঘোষণার কারণে আগামী ২১ জুলাই সামনে রেখে আলোচনা শুরু সহজতর হবে। চলতি মাসে কানানাস্কিতে জি৭ নেতাদের সম্মেলনে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল।’আরও পড়ুন: কানাডার নির্বাচনে জয় পেল প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির লিবারেল পার্টি
গেল মে মাসে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন কার্নি। সেখানে তাকে বিনয়ী দেখালেও দৃঢ় ছিলেন। এদিকে আলবার্টায় জি৭ সম্মেলনে কানাডা সফর করেন ট্রাম্প। সেখানে মার্ক কার্নি বলেন, বাণিজ্য আলোচনার জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র।
ডিজিটাল সেবা করের আওতায় অ্যামাজন, গুগল, মেটা, উবার এবং এয়ারবিএনবিসহ বিভিন্ন কোম্পানির কানাডীয় ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্জিত আয়ের ওপর ৩ শতাংশ হারে কর বসানোর কথা ছিল।
১৮২ দিন আগে
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না: ইরাভানি
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তির অধীনে শান্তিপূর্ণ জ্বালানির উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত।
রবিবার (২৯ জুন) সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার, এটি একটি অখণ্ড অধিকার এবং আমরা এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আলোচনার নাম নয়, এটি আমাদের প্রতি একটি নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।আরও পড়ুন: ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু
তবে ইরাভানি বলেন, “তেহরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এই আগ্রাসনের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর মতো কোনো উপযুক্ত পরিবেশ নেই এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার জন্য কোনো অনুরোধও নেই।”
জাতিসংঘে ইরানের এই দূত আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি কিংবা সংস্থার পরিদর্শকদের প্রতি তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি নেই।
যদিও কিছু ইরানি কর্মকর্তা এই পরিদর্শকদের অভিযুক্ত করেছেন ইসরায়েলের হামলাকে যৌক্তিকতা দিতে তারা সাহায্য করছে বলে। বর্তমানে আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে অবস্থান করছেন, তবে তারা দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।
১৮২ দিন আগে
রাতভর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭২
ইসরায়েলের রাতভর হামলায় গাজায় আরও অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ জুন) সারা রাত ধরে চলা হামলায় নিহতের ওই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের কাছে মুওয়াসি এলাকায় একটি শরণার্থী শিবিরের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় তিন শিশুসহ তাদের বাবা-মা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, গাজা সিটির ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামের কাছে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীনদের মধ্যে ১২ জন নিহত হন বলে জানিয়েছেন শিফা হাসপাতালের কর্মীরা।
একই দিন দুপুরে গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে একটি রাস্তায় হামলায় ১১ জন নিহত হন। এ ছাড়া মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে জটলায় হামলা হলে আরও দুজন নিহত হন বলে জানিয়েছে আল-আওদা হাসপাতাল।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা আগামী সপ্তাহে
অন্যদিকে, দীর্ঘ ২১ মাসের যুদ্ধের পর পুনরায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতির দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে: ট্রাম্প
শুক্রবার (২৭ জুন) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি এবং এটি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা করে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এরপর আরেকটি যুদ্ধবির কার্যকর করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকবারই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়, আবার তা স্থগিতও হয়।
এরই মধ্যে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর যে ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও প্রায় ৫০ জন গাজায় রয়েছেন, যদিও এদের অর্ধেকেরও কম জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর আবারও সাপ্তাহিক বিক্ষোভে অংশ নেন ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, জিম্মিদের মুক্ত না করে দিনের পর দিন গাজায় শুধু হামলাই চালানো হচ্ছে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় হামাসের হাতে জিম্মি নিমরোড কোহেনের ভাই ইয়োতাম কোহেন বলেন, ‘গাজায় আর কী করার বাকি আছে?’
তবে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের মতো গাজায়ও চুক্তির দিকে এগোনো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এদিকে, ইরান যুদ্ধের পর ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধ অবসানের দিকে এগোলে তার অবস্থানের আরও উন্নতির আশা করা হচ্ছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থিরা গাজায় যুদ্ধবিরতি চান না।
আরও পড়ুন: গাজায় আগ্রাসন: যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল
হামাস বারবার বলছে, গাজায় যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হলেই তারা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে নেতানিয়াহু বলছেন, হামাসকে নিরস্ত্র ও নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া তিনি যুদ্ধ শেষ করবেন না। এই দাবি অবশ্য হামাস বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। তবে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে এবার ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার পর নিহত ৬ হাজারের বেশি
২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে এ বছরের মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে চালানো হামলায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
ইসরায়েলের দাবি, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামাস সদস্যরা সাধারণ মানুষের মধ্যে অবস্থান নেয় বলে বেসামরিক হতাহতের দায় তাদেরও।
খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত শত শত মানুষ
এদিকে, দ্বিতীয় দফায় ইসরায়েলে হামলায় গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ২ মাসেরও বেশি সময় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখার পর গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ইসরায়েল অল্প পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
তবে এই ত্রাণ যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য আরেক মরণফাঁদ। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাস আগে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন খাদ্য বিতরণ শুরু করার পর থেকে অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা শুধু সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে এবং বেসামরিক লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলো তারা তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন: খাবারের জন্য বের হয়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা
খাদ্য সংগ্রহের জন্য হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি সেনা-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পেরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে হচ্ছে।
জাতিসংঘের উদ্যোগে সামান্য খাদ্য বিতরণের প্রচেষ্টাও নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর লুটপাট ও ত্রাণবাহী ট্রাক ঘিরে জনতার ভিড়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
শনিবারও গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মাঝামাঝি নেটজারিম করিডোরে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন দুজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
১৮৩ দিন আগে
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: মুসলমানদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছেন মামদানি
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে ইতিহাস গড়েছেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। তার এ সাফল্য নিউইয়র্কের ৩ লাখেরও বেশি দক্ষিণ এশীয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।
মামদানির দীর্ঘ ১৫ বছরের বন্ধু ও জনপ্রিয় কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘আমার মা তার পরিচিতদের টেক্সট দিয়ে মামদানির জন্য ভোট চেয়েছেন। এমনটা আগে কখনও দেখিনি। এই নির্বাচনে আমাদের পুরো পরিবার সম্পৃক্ত হয়েছে—যেন এটা আমাদের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
শুরুতে মামদানিকে অনেকেই আনকরা প্রার্থী মনে করেছিলেন। কিন্তু সিটির সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে ৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট এখন নিউইয়র্কের প্রথম এশীয় ও মুসলিম মেয়র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
ভারতীয় বাবা-মায়ের সন্তান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। পরে, ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব লাভ করেন।
হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘নিউইয়র্ক সবসময়ই বৈচিত্র্যের শহর, কিন্তু ৯/১১’র পর থেকে মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয়দের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, এই শহর কি আমাদেরও? এখন ২৫ বছর পর সেই একই শহরে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
মামদানির নির্বাচনি ক্যাম্পেইন ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। অনেকের কাছে তার জয় বর্ণবাদ ও বিদেশি বিদ্বেষের (জেনোফোবিয়া) বিপরীতে একটি ইতিবাচক বার্তা।
দক্ষিণ এশিয়ভিত্তিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘দ্য জাগারনট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্নিগ্ধা সুর বলেন, ‘মামদানির উত্থান শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছে।
মিশিগানের বাসিন্দা ও ভারতের জন্ম নেওয়া মুসলিম আমেরিকান থাসিন সরদার বলেন, ‘এই জয় আমাকে আবারও মানুষ ও জনগণের ওপর আস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে।’
নিউইয়র্কের ভোটার জাইনাব শাব্বির বলেন, ‘আমার পরিবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এত বড় শহরের মেয়র পদে একজন দক্ষিণ এশীয় মুসলিম জয়ী হওয়া দারুণ ব্যাপার।’
তবে শাব্বিরের জন্য মামদানির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘তার ক্যাম্পেইন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। অনেক মুসলিমই শুধু দেশের বাইরে রাজনীতিতে আগ্রহী, অথচ এখানেও আমাদের সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। মামদানি সেই সুযোগ তৈরি করছেন।’
প্রতিনিধি রো খান্না মামদানির ক্যাম্পেইনের প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি নিজের শিকড় ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাননি। হিন্দি গান, বলিউডের ভিডিওর মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। অথচ তার অর্থনৈতিক বার্তা ছিল খুব শক্তিশালী—বাসাভাড়া, জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি নিয়ে।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তানজিলা রহমান বলেন, ‘অভাবের মধ্যে নিউইয়র্কে বেড়ে উঠেছি। মামদানির মতো কাউকে দেখে মনে হয়েছে—অবশেষে কেউ আমাদের কথাও শুনছে।’
পারিবারিক পটভূমি ও বিতর্ক
মামদানির মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, বাবা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। কুইন্সে বড় হয়ে নামকরা ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
প্যালেস্টাইন ইস্যুতে তার শক্ত অবস্থান মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ালেও কিছু ইহুদি সংগঠনের সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। তবে কিছু ইহুদি রাজনীতিবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ইসলামবিদ্বেষের মুখে দৃঢ় অবস্থান
তবে মামদানি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রকাশ্যে ‘যুদ্ধাপরাধী’ আখ্যা দেওয়ায় কিছু মহলে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।মামদানির বিজয়ের পর ডানপন্থী মহলে আবারও অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষ উসকে ওঠেছে। তবুও, তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক ভোটার অংশগ্রহণ এই বিভেদ কাটিয়ে জয় এনে দিয়েছে বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
কমেডিয়ান হরি কন্দাবোলু বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম তাদের কণ্ঠস্বর শুনিয়েছে। শুধু ভোট দিয়েই নয়, পরিবার, বন্ধুদেরও যুক্ত করেছে। এটাই তো আসল বিজয়।’
১৮৪ দিন আগে
কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ‘অন্যায় কর’ আরোপের অভিযোগ এনে কানাডার সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কানাডার নতুন এই ডিজিটাল করকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সরাসরি ও প্রকাশ্য আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে ট্রাম্প ব্যক্তিগত সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে বলেন, ‘কানাডা খুবই কঠিন এক বাণিজ্যিক অংশীদার। এখন দেশটি আমাদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ডিজিটাল কর বসাচ্ছে। এটি আমাদের দেশের ওপর সরাসরি ও স্পষ্ট আক্রমণ।’
তিনি বলেন, ‘তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইউ) পথ অনুসরণ করছে। ইউ একই কাজ করেছিল এবং বর্তমানে তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। এই অনৈতিক করের কারণে, আমরা কানাডার সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য আলোচনা এখনই বাতিল করছি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে তাদের কী পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে কানাডাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দুর্লভ খনিজ সরবরাহ নিয়ে সফল চুক্তির ঘোষণা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরেই দেশটির শেয়ার বাজারে ব্যপক উন্নতি দেখা গেছে। এর মাঝেই ট্রাম্পের কানাডা বিষয়ক ঘোষণাটি এল।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বে আদেশ কার্যকর হচ্ছে
এর আগে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি চলতি মাসে অ্যালবার্টায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছিলেন, ‘আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা এগিয়ে নিতে দুই দেশই সম্মত হয়েছে।’
তবে আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া কানাডার নতুন ডিজিটাল সার্ভিসেস ট্যাক্স নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি থমকে গেছে। এতে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, মেটাসহ মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের বছরে আনুমানিক ৩০০ কোটি ডলার গুনতে হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উত্তর আমেরিকার দুই বড় অর্থনীতি ও অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক সহযোগী বা অংশীদারের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হলো বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৮৪ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বে আদেশ কার্যকর হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে দেশটির নিম্ন আদালতসমূহের ‘নেশনওয়াইড ইনজাংশন’ বা পুরো দেশে একসঙ্গে আদেশ জারির ক্ষমতা সীমিত করেছে। এর ফলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের উদ্যোগ আংশিক কার্যকরের পথ খুলে গেছে। এর আগে, ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করেছিলেন দেশটির নিম্ন আদালতের বিচারকরা।
শুক্রবার (২৭ জুন) সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়েছে, কোনো ফেডারেল আদালতের আদেশ পুরো দেশের জন্য একই সঙ্গে বাধ্যতামূলক নয়। এখন থেকে শুধু মামলার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংগঠনের ক্ষেত্রেই এসব আদেশ প্রযোজ্য হবে।
এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল। আগে দেশটির ৯৪টি জেলা আদালতের এক হাজারের বেশি বিচারক পুরো যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে যেকোনো সরকারি নীতিমালা স্থগিতের আদেশ দিতে পারতেন। এখন সেই ক্ষমতা সীমিত করা হলো।
তবে আদালত এখনও জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার আদেশ পুরোপুরি বৈধ কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়নি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করা অভিবাসীদের জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম বাতিলের ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিভিন্ন রাজ্য ও অধিকারকর্মীরা দাবি তোলেন।
ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন কয়েকটি অঙ্গরাজ্য, মানবাধিকার সংগঠন এবং অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করা বিভিন্ন গ্রুপ এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেছে। এরপর আদালত সেই আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে।
কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ রায়ের ফলে এই আদেশ এখন কেবল মামলাকারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশে ট্রাম্পের আদেশ আংশিকভাবে কার্যকর হতে পারে।
রায়ের পর এটিকে বড় জয় বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে ভুলভাবে পুরো দেশে আদেশ জারির পথ বন্ধ হলো। এখন আমরা প্রয়োজনীয় নীতিমালা কার্যকর করতে পারব।’
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন জানিয়েছে, আদালতের এ রায় সরকারের হাতে একটি ‘অবৈধ ও নিষ্ঠুর’ আদেশ আংশিক বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং নতুন আইনি লড়াই শুরুর আশঙ্কা রয়েছে।
১৮৬৮ সালে গৃহযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়, যা ১৮৯৮ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে আরও সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৪ দিন আগে
এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস এক সপ্তাহের মধ্যেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা জানান ট্রাম্প। তার দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপের পর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা মনে করি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি হতে পারে।’ তবে তিনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ সময় তা প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দপ্তর অবশ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছে না।
বাইডেন সরকারের সময় গাজায় যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছিল, সেটির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিলেন উইটকফ। তবে, মার্চে ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে আকস্মিক বিমান হামলা শুরু করলে সেই চুক্তি ভেঙে যায়।
এদিকে, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদক নুর ওদ শুনিয়েছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, ট্রাম্পের এই মন্তব্য গাজার ক্ষুধার্ত ও নিপীড়িত জনগণের জন্য আশার বাণী হতে পারে। তবে, বাস্তবে এই মুহূর্তে কোথাও কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর এই আলোচনা কিছুটা বেড়েছে। তবে ইসরায়েল এখনই গাজায় যুদ্ধ থামানোর কথা আলোচনা করতে চায় না।’
এই বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির কথা বললে উল্টো তিনিই রাজনৈতিকভাবে বড়সড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ওদ আরও বলেন, ‘আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে নেতানিয়াহুকে কোনো না কোনোভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিতে হতে পারে। এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রচেষ্টা মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই এগিয়ে নিচ্ছে।’
অন্যদিকে হামাস বলছে, ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে এবং তারা মার্চ থেকে যেসব অঞ্চল দখল করেছে, তা ছেড়ে দিতে হবে। এরপরই তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে।
হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ইসরায়েল যেন পুনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে না পারে, তারও নিশ্চয়তা চেয়েছে এই সংগঠনটি।
ইসরায়েলের কৌশল-বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এই সফরে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গাজা, ইরান ও নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আলোচনা করবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
১৮৪ দিন আগে