বিশ্ব
মার্কিন হামলার শিকার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।’
হামলার বিষয়টি ইরানের পারমাণবিক সংস্থা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে তেহরান।
নিচে ট্রাম্প ঘোষিত ইরানের তিনটি স্থাপনার বিবরণ ও এগুলোর পারমাণবিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব তুলে ধরা হলো—
নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা
ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ। এটি রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এটি ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, নাতাঞ্জে ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ সমৃদ্ধ করা হয়েছিল। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আর মাত্র এক ধাপ পেছেনে ছিল এটি।
আরও পড়ুন: ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র
এই স্থাপনাটির একটি অংশ ইরানের সেন্ট্রাল প্লেটোর নিচে অবস্থিত, যা বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য ভূগর্ভে নির্মিত। এখানে একাধিক সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড চালু রয়েছে, যা দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়।
মূলত, একটি সেন্ট্রিফিউজ একা খুব অল্প পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই ইউরেনিয়ামকে পর্যায়ক্রমে বেশি মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে হলে অনেকগুলো সেন্ট্রিফিউজকে একটি ক্যাসকেড বা ধাপক্রমিক পদ্ধতিতে সাজাতে হয়।
আইএইএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এসব সেন্ট্রিফিউজের বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ওই হামলাগুলোর ফলে তেজস্ক্রিয়তা কেবল সংশ্লিষ্ট স্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আশপাশের এলাকায় ছড়ায়নি বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইরান এখন নাতাঞ্জের দক্ষিণ সীমানার ঠিক বাইরে অবস্থিত কুহ-ই কোলাং গাজ লা বা ‘পিকঅ্যাক্স পর্বতের’ নিচে সুড়ঙ্গ খনন করছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এর আগেও স্টাক্সনেট ভাইরাসের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল নাতাঞ্জ। স্টাক্সনেট ভাইরাসটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বলে ধারণা করা হয় এবং এটি ইরানি সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়াও, ইসরায়েলের পরিচালিত দুটি পৃথক হামলার লক্ষ্যও ছিল এই স্থাপনাটি।
ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা
তেহরান থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফোরদো স্থাপনাটিতেও সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড রয়েছে, তবে এটি নাতাঞ্জের তুলনায় ছোট।
আইএইএ জানায়, ২০০৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত। তবে ইরান এ বিষয়ে জাতিসংঘকে জানায় ২০০৯ সালে।
ফোরদো স্থাপনাটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের স্থাপনাকে কেবল ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার মাধ্যমেই ধ্বংস করা সম্ভব, যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের জিবিইউ-৫৭ এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বোমা। এই বোমাটি প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড (১৩ হাজার ৬০০ কেজি) ওজনের এবং এটি মাটির গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরিত হয়, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ও সুড়ঙ্গ ধ্বংসের জন্য তৈরি।
আরও পড়ুন: ইরানের আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর এলাকা খালি করতে ইসরায়েলের সতর্কবার্তা
এই বোমাটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য, যা কেবল মার্কিন বিমান বাহিনী পরিচালনা করে এবং নর্থরপ গ্রুম্যান এটি উৎপাদন করে থাকে।
এর মানে, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া এমন অভিযান পরিচালনা সম্ভব নয়।
ইসফাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র
তেহরান থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২১৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ইসফাহান স্থাপনাটিতে হাজার হাজার পরমাণু বিজ্ঞানী কাজ করেন। এখানে একই সঙ্গে তিনটি চীনা গবেষণা চুল্লি এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণাগারও রয়েছে।
ইসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যার মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র।
আইএইএ জানায়, সেখানেও কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যায়নি।
আরও কিছু পারমাণবিক স্থাপনা
ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানোর খবর পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে রয়েছে বুশেহরে অবস্থিত ইরানের একমাত্র বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পারস্য উপসাগরের তীরে তেহরান থেকে ৭৫০ কিলোমিটার (৪৬৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত এটি। সেখানে আরও দুটি চুল্লি নির্মাণাধীন।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এই চুল্লিগুলো রাশিয়ায় উৎপাদিত ইউরেনিয়াম দিয়ে পরিচালিত হয় এবং আইএইএয়ের নজরদারির আওতায় রয়েছে।
এ ছাড়া, তেহরান থেকে ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর। এই চুল্লিটি পারমাণবিক রিয়্যাক্টর ঠান্ডা করতে হেভি ওয়াটার ব্যবহার করে।
হেভি ওয়াটারের (Heavy Water) রাসায়নিক নাম ডিউটেরিয়াম অক্সাইড (D₂O)। সাধারণ পানিতে (H₂O) হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু থাকে, যেগুলো সাধারণত প্রোটিয়াম নামে পরিচিত, যা হাইড্রোজেনের সবচেয়ে হালকা আইসোটোপ। অন্যদিকে, ভারী পানিতে এই হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর বদলে থাকে ডিউটেরিয়াম, যা হাইড্রোজেনের একটি ভারী আইসোটোপ। ডিউটেরিয়ামের পরমাণু ভর সাধারণ হাইড্রোজেনের চেয়ে দ্বিগুণ। এজন্য D₂O দেখতে পানির মতো হলেও এর ঘনত্ব, গলনাঙ্ক ইত্যাদি আলাদা। ভারী পানি পরমাণু চুল্লিতে নিউট্রন মডারেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া রয়েছে তেহরান গবেষণা চুল্লি। এটি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সদর দপ্তরে অবস্থিত। এটি প্রাথমিকভাবে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তবে প্রসারণ-সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবিলায় পরবর্তীতে কম সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামে রূপান্তর করা হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ধাক্কা হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বিস্তারের আশঙ্কাও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
১৯০ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নাগরিক ও সেনারা এখন বৈধ লক্ষ্যবস্তু: ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির হুঁশিয়ারি
ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত সব মার্কিন নাগরিক ও সেনা সদস্যকে এখন থেকে ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
রবিবার (২২ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ঘোষক বলেন, ‘এই অঞ্চলে অবস্থানরত প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক বা সেনা সদস্য এখন একেকটি বৈধ লক্ষ্যবস্তু।’
এ ছাড়া, আজ ভোরে দেশটির অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ঘোষণা দিয়েছে, ‘এখন থেকে যুদ্ধ শুরু হলো।’
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা মার্কিন নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং কৌশলগত সমুদ্রপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
আরও পড়ুন: শান্তি স্থাপন করুন, নইলে আরও হামলা আসছে: ইরানকে ট্রাম্প
খামেনির প্রতিনিধির পরিচয় দেওয়া হোসেইন শারিয়তমাদারি নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এখন আমাদের পাল্টা জবাব দেওয়ার পালা।’
শারিয়তমাদারির বরাত দিয়ে ইরানের কট্টরপন্থী দৈনিক কায়হান এক টেলিগ্রাম বার্তায় বলেছে, ‘বিলম্ব বা দ্বিধা না করে, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাহরাইনে অবস্থানরত মার্কিন নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো এবং একই সঙ্গে হরমুজ প্রণালীতে আমেরিকান, ব্রিটিশ, জার্মান ও ফরাসি জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি।
তবে, এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের যে ক্ষতি হবে, তা হবে অপূরণীয়।’
আরও পড়ুন: ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
পক্ষান্তরে, হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি প্রতিশোধের পথে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তার চেয়ে অনেক ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানের যেকোনো প্রতিশোধমূলক হামলার জবাবে আজ রাতে যা দেখা গেছে, তার চেয়েও অনেক ভয়ঙ্কর শক্তি প্রয়োগ করা হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে ইসরায়েল। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা এবং অপ্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে তারা।
১৯০ দিন আগে
শান্তি স্থাপন করুন, নইলে আরও হামলা আসছে: ইরানকে ট্রাম্প
ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের জন্য শান্তি স্থাপন করার এখনই সময়।
হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসা ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান এলাকায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১০টায় হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ওই ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘এই নামগুলো আমরা বহু বছর ধরে শুনে আসছি, যখন তারা একটি ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড গড়ে তুলছিল।’
‘আজ রাতে, আমি বিশ্বকে জানাতে পারি, ইরানে হামলা ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য।’
তার দাবি, ‘ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসের মদদদাতা বিশ্বের এক নম্বরে থাকা দেশটির পারমাণবিক হুমকি থামিয়ে দেওয়াই এ হামলার উদ্দেশ্য।’
আরও পড়ুন: ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প বলেন, ‘তেহরান যদি এখনই শান্তির পথ বেছে না নেয়, তবে ভবিষ্যতের হামলাগুলো হবে আরও ভয়াবহ।’
‘এভাবে আর চলতে পারে না। হয় শান্তি আসবে, না হয় ইরানের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি; গত আট দিনে আমরা যা দেখেছি, তার চেয়েও অনেক বেশি। মনে রাখবেন, এখনও অনেক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে অবশিষ্ট লক্ষ্যবস্তুগুলোতেও গতি এবং দক্ষতার সঙ্গে নির্ভুল হামলা চালাতে পারে। আর তা মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই করা সম্ভব।’
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে, এই হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানঘনিষ্ঠ ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী।
গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য হেজাম আল-আসাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ওয়াশিংটনকে এর ফল ভোগ করতে হবে।’
এই হামলার ঘটনায় বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক নেতারও সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ ঘটনাকে একটি ‘বিপজ্জনক উত্তেজনার বিস্তার’ আখ্যা দিয়ে এটি মধ্যপ্রাচের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
রবিবার (২২ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চরম অস্থিতিশীলতায় থাকা একটি অঞ্চলে এই হামলা উত্তেজনা আরও বাড়াবে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
এর আগে স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে ইরান।
১৯০ দিন আগে
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ ঘটনাকে একটি ‘বিপজ্জনক উত্তেজনার বিস্তার’ আখ্যা দিয়ে এটি মধ্যপ্রাচের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রবিবার (২২ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব এসব কথা বলেন।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। চরম অস্থিতিশীলতায় থাকা একটি অঞ্চলে এই হামলা উত্তেজনা আরও বাড়াবে। এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুতই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে সাধারণ নাগরিক, পুরো (মধ্যপ্রাচ্য) অঞ্চল ও বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে।’
গুতেরেস জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সংঘাত থেকে সরে আসার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘উত্তেজনা প্রশমন এবং জাতিসংঘ সনদসহ আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য বিধান অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংঘাত এড়িয়ে কূটনীতির মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে ইরান।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করার অজুহাতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এবার তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হলো ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ট্রাম্পের এই হামলার সিদ্ধান্ত তার নিজ রাজনৈতিক দলের ভেতর থেকেই সমালোচিত হয়েছে। এই সংঘাতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়া ট্রাম্পের যুদ্ধবিমুখ প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করবে বলেও সতর্ক করেছেন অনেকে।
১৯০ দিন আগে
ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিল যুক্তরাষ্ট্র
নানা টালবাহানার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়াল যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় চালিয়েছে ওয়াশিংটন। এতে চলমান সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (২২ জুন) ভোরে ফোরদো, ইসফাহান ও নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা অ্যাসেসিয়েটেড প্রেসের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
হামলার বিষয়টি ইরানের পারমাণবিক সংস্থা থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই স্থাপনাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ না করে বরং চালিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি করেছে ইরান।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্থগিত করার অজুহাতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এবার তেল আবিবের সঙ্গে যুক্ত হলো ইসরায়েলের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টেলথ বোমা ও জিবিইউ-৫৭ ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা প্রয়োজন ছিল, যা ভূগর্ভের গভীরেও আঘাত হানতে সক্ষম।
ট্রাম্প জানান, তিনি রাত ১০টায় (ইস্টার্ন টাইম) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই হামলাকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও বিশ্বের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখনই ইরানকে এই যুদ্ধ বন্ধে রাজি হতে হবে। ধন্যবাদ!’
হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করলেও ট্রাম্প সমর্থিত ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে, ফোরদোয় ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন থেকে নাতানজ ও ইসফাহানে ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
১৯০ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। শনিবার (২১ জুন) তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
দেশের মানুষকে বোমা হামলার মধ্যে রেখে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন আব্বাস আরাগচি।
হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানের চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ খুব খুবই বিপজ্জনক হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিলেও তা দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত রেখেছেন। তার আশা, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগে রাজি হবে।
আরও পড়ুন: আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
২০১৫ সালে বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি চুক্তিতে পৌঁছায় ইরান। এর পেছনে ছিল বছরের পর বছর ধরে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা।
আরাগচি আরও বলেন, ‘কূটনীতি অতীতেও কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও কাজ করতে পারে। তবে, আমাদের কূটনীতির পথে ফিরতে হলে এই ইসরায়েলি আগ্রাসন থামাতে হবে।’
১৯১ দিন আগে
ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দিতে সুপারিশ করবে পাকিস্তান
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত বন্ধে ভূমিকা রাখায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগামী বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
করাচিভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক ডনের খবরে বলা হয়েছে, এটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়নের নজির হিসেবে দেখা হচ্ছে।সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে পাকিস্তান সরকার জানায়, ‘ভারতের অপ্রত্যাশিত ও অবৈধ আগ্রাসনের সাক্ষী হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এটি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতার গুরুতর লঙ্ঘন ছিল। এর ফলে শিশু ও বৃদ্ধসহ বহু নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।’
ভারতের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ‘বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে সামরিক অভিযান চালায় পাকিস্তান। এটি ছিল একটি পরিমিত, দৃঢ় ও সঠিক সামরিক প্রতিক্রিয়া’ বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
পোস্টে আরও বলা হয়, এই প্রতিক্রিয়া দেশটির আত্মরক্ষা সম্পর্কিত মৌলিক অধিকার প্রয়োগ ও সতর্কতার সঙ্গে প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নেয়া হয়েছে। এতে আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং জনগণের ক্ষতক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
পোস্টটিতে আরও বলা হয়, একটি উত্তেজনাপূর্ণ আঞ্চলিক পরিস্থিতির মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসলামাবাদ ও দিল্লির সঙ্গে দৃঢ় কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার বিশাল কৌশলগত দূরদর্শিতা ও অসাধারণ রাষ্ট্রনেতার ভূমিকা দেখিয়েছেন।
এতে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্রুত অবনতির দিকে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে একটি বৃহত্তর সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হয়েছেন, যা এই অঞ্চল ও তার বাইরের কোটি মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারত।
পোস্টে বলা হয়, ‘এই হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তিনি (ট্রাম্পের) প্রকৃত শান্তির দূত হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। পাশাপাশি, এটি সংলাপের মাধ্যমে সংঘর্ষ সমাধানের বিষয়ে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ।’
১৯১ দিন আগে
আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
৮৬ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সামনে এবার তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা—সংঘাত, নাকি শান্তির পথ বেছে নেবেন তিনি? তার এই সিদ্ধান্ত কেবল ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ৩৫ বছরের শাসনামলে বহুবার দেশটির অভ্যন্তরীণ হুমকি উৎরেছেন খামেনি। তবে এবারই তিনি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি।
চিরশত্রু ইসরায়েল এখন ইরানের আকাশপথে মুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সামরিক নেতাদের হত্যা এবং পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ‘খামেনির আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই’ বলেও হুমকি দিয়েছেন।
সামনে রয়েছে দুটি পথ
খামেনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। তিনি চাইলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়াতে পারেন, যা আরও ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। অথবা কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে পারেন তিনি, যাতে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে না জড়ায়। তবে এ পথে গেলে তাকে সারা জীবনের সাধনা—পরমাণু কর্মসূচি বিসর্জন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করে না।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘হস্তক্ষেপ করলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’
ইরানকে বদলে দিয়েছেন খামেনি
১৯৮৯ সালে ইরানের ক্ষমতার শীর্ষে আসেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এ সময়অনেকেই তার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত নিচু স্তরের ধর্মীয় নেতা। ঘন ফ্রেমের চশমা আর ধীরস্থির স্বভাবের মধ্যে পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মতো জ্বালাময়ী নেতৃত্বগুণও ছিল না তার।
তবে, সেসব পাশ কাটিয়ে পূর্বসূরির চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় ধরে শাসনভার নিজের কাঁধে রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটিকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন খামেনি।
তিনি শিয়াপন্থী মোল্লা শাসনব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে একটি অভিজাত বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন এই ধর্মীয় নেতা।
গার্ড বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালায়। পাশাপাশি কুদস ফোর্সের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে লেবানন পর্যন্ত ইরানের অনুগত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলেছে বাহিনীটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
এমনকি ইরানের অর্থনীতির বড় অংশও নিয়ন্ত্রণ করে অভিজাত এই বাহিনী। বিনিময়ে তারা খামেনির একনিষ্ঠ ডান হাতে পরিণত হয়েছে।
দেশীয় সংকট কঠোর হস্তে দমন
৯০-এর দশকে সংস্কারপন্থীদের উত্থানের সময়কালে খামেনিকে প্রথম বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পরপরই সংস্কারপন্থীরা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং প্রেসিডেন্ট পদ দখলে নেয়। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ছিল।
খামেনি ও তার অনুগত গোষ্ঠী এটিকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। তবে তিনি কঠোর হাতে সংস্কারপন্থীদের রুখে দেন।
পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২২ সালের গণআন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। সর্বশেষ মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরের আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত ও নির্যাতিত হন।
ইরানকে আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেছেন
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত ইরানকে খামেনি একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেন।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সাদ্দাম হোসেনের পতনের ফলে শিয়াপন্থী রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়ারা ইরাকের ক্ষমতায় আসে। এটি ইরানের প্রভাব বিস্তারে অন্যতম বড় নিয়ামক হয়ে ওঠে।
ইরাক হয়ে ওঠে ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষের মূল কেন্দ্র। এই অক্ষের বাকি সদস্য হলো সিরিয়ার আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ২০১৫ সালের মধ্যে এই জোট তার সর্বোচ্চ শক্তিতে পৌঁছায়, যার মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলের দরজায় কড়া নাড়ছিল।
সুদিন আর নেই
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নজিরবিহীন হামলার পাশাপাশি ইরানের এই অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ইসরায়েল। তারপর থেকে গাজায় ক্রমাগত হামলায় ব্যাপকভাবে দুর্বল পড়েছে হামাস।
অন্যদিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপরও বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এমনকি গত বছর দেশটিতে একযোগে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে তারা।
পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্রে বোমা স্থাপন করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সিরিয়া থেকে। সম্প্রতি, ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে সুন্নি বিদ্রোহীরা। এখন দামেস্কে একটি ইরানবিরোধী সরকার ক্ষমতায় বসেছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে ইরানের গড়া ‘প্রতিরোধ অক্ষরেখা’ সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। তার মাঝেই এবার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরান।
আরও পড়ুন: ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
সবশেষ খবর অনুযায়ী, এই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও। ফলে আদর্শ রক্ষার এই লড়াইয়ের বর্তমান বাস্তবতায় খামেনি শেষ পর্যন্ত ইরানের স্থিতিশীলতায় সায় দেবেন, না কি আদর্শে অটুট থাকবেন—তা-ই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
১৯২ দিন আগে
ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজতে ইউরোপের তিন পরাশক্তি—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান। এই তিন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ই৩’ নামেও ডাকা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাসের উপস্থিতিতে শনিবার (২১ জুন) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।
বৈঠকের বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা শনিবার জেনেভাতে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএর পাশাপাশি ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইইউ প্রতিনিধি ছাড়াও ই৩, অর্থাৎ ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে তারা আরাগচির সঙ্গে কথা বলেন এবং পরমাণু আলোচনায় ফেরার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ইরানের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার পর উভয়পক্ষই সরাসরি বৈঠকে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বলেছেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।’ পরের দিন তিনি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের’ সঙ্গে মিলে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো বলেন, ‘এই বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আমরা তিন দেশই প্রস্তুত। আমরা চাই, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থায়ীভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হোক।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যে হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সরাসরি সুইজারল্যান্ডে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।
ইরানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ল্যামি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ইরান যেন কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র না পায়।… কূটনৈতিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় আছে।’
কায়া কাল্লাসও বলেছেন একই কথা। তার ভাষ্যে, ‘ইরান যাতে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো কূটনীতি।’
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ধারাবাহিক হামলা চালানো হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইরান। তাদের পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ’ দাবি করেছে দেশটি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
কূটনৈতিক পথ বন্ধ নয়
গতকাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খুব শিগগির নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার পর ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল করা হয়।
এর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলা চলাকালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা পুনরায় শুরু করবে না। তবে কূটনৈতিক পথ যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, সে কথাও উল্লেখ করেছে তেহরান।
এ ছাড়া জেনেভা থেকে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদক মিলেনা ভেসেলিনোভিচ জানান, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বকে যুদ্ধের দিকে গড়াতে না দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ট্রাম্পের অবস্থান
এদিকে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নেবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।’
তাই এ সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাতের একটি নিষ্পত্তি খোঁজার সুযোগ রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের সুসংরক্ষিত ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় হামলা চালানো হবে কি না, তা-ই এখন বিবেচনা করছেন ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ: দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
এই স্থাপনাটি একটি পর্বতের নিচে অবস্থিত এবং কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা দিয়েই এটিকে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব বলে ধারণা করা হয়।
১৯২ দিন আগে
খাবারের জন্য বের হয়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা
ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেও গাজা উপত্যকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ক্ষুধার জ্বালায় খাবারের খোঁজে ছুটে বেড়ানো গাজাবাসীর যেন কোথাও নিস্তার নেই। প্রতিদিনই ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯২ ফিলিস্তিনি। এ দিন ভোর থেকে হামলায় গাজা শহরে ও উত্তর গাজার নেতজারিম করিডোরের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় আরও ১৬ জন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দেওয়া খাবারের আশায় প্রতিদিনই এই এলাকায় জড়ো হন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা। এখানে হামলার ঘটনাকে ‘ত্রাণের সামরিকীকরণ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।এখানে ইসরায়েলি হামলার প্রত্যক্ষদর্শী বাসাম আবু শার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ রাতভর খাবারের আশায় সেখানে অবস্থান করছিলেন। বুধবার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা আমাদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। ট্যাংক, বিমান ও কোয়াডকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণের মাধ্যমে গোলাগুলি তীব্র হয়ে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে সাহায্য করতে পারিনি, এমনকি নিজেরাও পালাতে পারিনি।’
আরও পড়ুন: ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন গাজাবাসীরা
সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, এতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে।
প্রাণঘাতী হামলাগুলো যেন ‘দৈনন্দিন রুটিন’
কেন্দ্রীয় গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজযুম জানান, ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে হামলা এখন যেন দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত ক্রসিংগুলো সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখার ফলে গাজা এখন এক বিশাল ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানবিক সহায়তার সব উপকরণ ফুরিয়ে গেছে।
ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে ওই কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে এক বস্তা ময়দা, এক বোতল পানি বা খাদ্যসামগ্রীর জন্য, যেগুলোর পুষ্টিমান খুবই কম বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
তারেক আবু আজযুম বলেন, ইসরায়েলের এসব হামলা অব্যাহত থাকায় মানবিক করিডোরগুলো হত্যার ময়দানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসন: গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়াল
এদিকে, নেতজারিম করিডোর এলাকায় কিছু ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি সেনাবাহিনীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, যেটি তাদের কাছে হুমকি মনে হয়েছিল— এমন দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তাই তারা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। যদিও নিজেদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখায়নি তারা।
অন্যদিকে, আল শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ১৩ জন নিহত হন। সেখানে ফিলিস্তিনিরা তাদের বৈদ্যুতিক ডিভাইস চার্জ দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে জাবালিয়ার বহু বাসভবনে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার আরেক প্রতিনিধি হিন্দ খোদারি জানান, আল শাতি শিবিরে চার্জিং পয়েন্টে ইসরায়েলি হামলা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন গাজা অঞ্চলের বাস্তবতার প্রতিফলন।
তিনি জানান, গাজার পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়েছে যে, সেখানে মানুষ খাবারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। হিন্দ খোদারি বলেন, ‘প্রতিদিন খুবই সীমিত সংখ্যক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, আর মানুষ চরম হতাশায় যা পাচ্ছেন, তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।’
গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯টি লাশসহ ২২১ জন আহত ব্যক্তিকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৫ হাজার ৭০৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু।
১৯২ দিন আগে