বিশ্ব
খলিল মাহমুদকে আটক: ট্রাম্প টাওয়ারে ইহুদিদের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিল মাহমুদকে আটকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প টাওয়ারে বিক্ষোভ করেছেন এক দল ইহুদি। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ‘জিউস ভয়েস ফর পিস’ নামের একটি সংগঠন এই বিক্ষোভ করেছে।
এ সময়ে তাদের পরনে থাকা লাল টি-শার্টে লেখা ছিল, ‘ইহুদিরা বলছে, ইসরাইলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করুন’। তাদের হাতে ছিল ব্যানার আর ‘এখনই খলির মাহমুদকে মুক্তি দিন’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। গাজা যুদ্ধের সময় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খলিল।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলে, এরপরও যারা রয়ে গেছেন, তাদের মধ্য থেকে ৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘অনধিকার প্রবেশ, গ্রেফতারে বাধা ও প্রতিরোধের’ অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা খলিল (৩০) বিয়ে করেন এক মার্কিন নাগরিককে। তার বিরুদ্ধে কোনো আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে শনিবার নিউইয়র্কের সিটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
লুইজিয়ানার একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে তাকে রাখা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খলিলকে প্রথম আটক করা হয়েছে। আরও অনেককে ধরা হবে। যারা ‘সন্ত্রাসের পক্ষে, ইহুদিবিদ্বেষী ও আমেরিকাবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত, সেই সব শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে।
খলিলকে আটকের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের মধ্যে অভিনেতা ডেবরা উইংগারও আছেন। যদিও তাকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ইহুদিদের নিরাপত্তায় ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো আগ্রহ নেই। আমি অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছি, আমি খলিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।’
আরও পড়ুন: পুতিন কি রাজি হবেন এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে?
২৯০ দিন আগে
পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাই: জিম্মি সংকটের অবসান, ঝরল ২১ বেসামরিক প্রাণ
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় ছিনতাই হওয়া ট্রেনটি উদ্ধারে ৩০ ঘণ্টার অভিযান শেষ হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (১২ মার্চ) রাতে শতাধিক জিম্মিকে মুক্তির মধ্য দিয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় ২১ জন বেসামরিক ও চার সেনা নিহত হয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
পৃথক আরেক বিবৃতিতে ট্রেনটি উদ্ধার ও সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী আত্তা তারার।-খবর ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউনেরলেফটেন্যান্ট জেনারেল শরীফ তার বক্তব্যে জানান, মাশকাফ টানেলের কাছে আটকে থাকা ট্রেনটি থেকে অবশিষ্ট সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে ৩৩ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাই: ১৫০ যাত্রী উদ্ধার, ২৭ বিছিন্নতাবাদী নিহত
ট্রেনটিতে প্রায় ৪৪০ জন যাত্রী থাকার কথা উল্লেখ করলেও কতোজন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি।
তবে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডনকে জানান, উদ্ধার অভিযান কয়েক পর্বে ভাগ করে পরিচালনা করা হয়েছিল। প্রথম পর্বে শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়, পরে আরও ৮০ যাত্রীকে উদ্ধারের পর মাখ শহরে সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রায় এক ডজনের মতো যাত্রী ও দুই রেলওয়ে পুলিশ অপহরণকারীদের হাত থেকে পালিয়ে নিরাপদে বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় ফিরতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা যায়।
আইএসপিআরের ডিজি পাকিস্তানি গণমাধ্যম দুনিয়া নিউজকে জানান, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফ্রন্টিয়ার কর্পস ও এসএসজির সেনারা এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন।
তিনি জানান, সড়কপথে যোগাযোগ ও জনবসতি থেকে অনেক দূরের এলাকায় ঘটনাটি ঘটার কারণে সেখানে পৌঁছানো অনেক কঠিন ছিল। ছিনতাইকারীরা নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ট্রেন থামিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রী জিম্মি, দাবি না মানলে হত্যার হুমকি
নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতা জানান, এএসজি কমান্ডো অতি সতর্কতার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জিম্মিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজিত করে ৬৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করে।
তিনি জানান, প্রায় সব অভিযান সম্পন্ন হয়েছে আর নিরাপত্তা বাহিনী এখন অভিযানের সমাপ্তি পর্বে রয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে স্থানীয় গুদালার ও পিরু কোনেরি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে পেশওয়ারমুখী জাফর এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনের প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তাদের দাবি না মানা হলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেয় তারা।
পরে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
২৯১ দিন আগে
ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সেই যুবক এখন বিপাকে
গত বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে দেশটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় নির্ভীক চাহনির এক ফিলিস্তিনি যুবকের মুখ বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আন্দোলনের সংবাদে দেখা যায় ওই যুবকের দীপ্ত চেহারা।
সম্প্রতি আবার আলোচনায় ফিরেছে সেই চেহারা। কারণ তখনকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে এবার আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
ওই যুবকের নাম মাহমুদ খলিল। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ের শিক্ষার্থী। যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করেছিল ইসরায়েল, সেই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই উপক্যতাটিতে হামলা বন্ধে গত এপ্রিলের সংঘঠিত তীব্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এই যুবক।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা আটটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত গ্রুপ ‘আইভি লীগের’ একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অভিবাসী শিক্ষার্থী হিসেবে খলিলের এই সাহসিকতা বাস্তবিকই প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আবার অনেক সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছে তার এই কর্মকাণ্ড।
খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহ্যাটন ক্যাম্পাসের আন্দোলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। পাশাপাশি তিনি যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এই আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে আন্দোলনরতদের মুখপাত্র ও আলোচকের ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে খলিল বলেছিলেন, ‘আমরা সবার নজর কাড়তে চাই।’
খলিল সত্যিই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নজর কেড়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ এই শনিবার (৮ মার্চ) দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক।
মাহমুদ খলিলের মতো একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর চেহারা বোধহয় দেশটির প্রশাসনের বুকে শেলের মতোই বিঁধেছিল। এ কারণেই গ্রিনকার্ডধারী স্থায়ী বাসিন্দা এবং এক মার্কিনকে বিয়ে করার পরও তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করতে উঠেপড়ে লেগেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বর্তমানে তাকে লুইজিয়ানার জেনায় একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, খলিলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করায় অভিযুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযানের শুরু হয়েছে।
তবে ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত ও ফিলিস্তিনপন্থি মতামত দমনের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন অনেক মানবাধিকার কর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা।
খলিলের গ্রেপ্তারের খবরে মর্মাহত হয়েছেন আন্দোলন চলাকালে তার সহকর্মীরাও। তারা জানান, খলিল তার কূটনৈতিক জ্ঞানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিক্ষোভের উতপ্ত দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মধ্যস্ততার চেষ্টা করেছেন।
অ্যান্ড্রু ওয়ালার নামে খলিলের এক সহকর্মী বলেন, ‘তিনি (খলিল) ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার সঙ্গে যু্ক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন। সিরিয়াতে একটি বৃত্তির ফান্ডও পরিচালনা করেছিলেন খলিল।’
এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়ার আগে নিশ্চয়ই খলিলের অতীত নিয়ে পর্যাপ্ত অনুসন্ধান করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়ালার আরও জানান, খলিলের স্ত্রী গর্ভবতী; অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবীতে আসতে চলেছে তাদের প্রথম সন্তান।
গত সপ্তাহে খলিলের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে উল্লেখ করে ওয়ালার বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানা হওয়ার আশঙ্কা তিনি (খলিল) আগেই করেছিলেন।’
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে
সিরিয়ায় একটি ফিলিস্তিনি পরিবারে খলিলের জন্ম। সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন এই যুব্ক, কিন্তু তার স্বপ্নে বাধ সাধে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ।
২০১৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা সহায়তায় খলিলের দেওয়া এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিরিয়া থেকে পালিয়ে গিয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করে—এমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজে যোগ দেন তিনি। পরে লেবাননের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন খলিল।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময়ে তিনি মার্কিন প্রশাসনসহ সমালোচকদের নজরে আসেন।
শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় তাঁবু স্থাপন করেছিলেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবনের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছিলেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের হটাতে পুলিশের শরণাপন্ন হয়।
বিক্ষোভ চলাকালে ফিলিস্তিনি সমর্থক ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন খলিল। এরপর বিক্ষোভের মাঝে উঁচু স্বরে প্রতিবাদ জানানোর ফলে দ্রুতই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন তিনি। এই আন্দোলনকে যারা ইহুদীবিদ্বেষী হিসেবে দেখেছিলেন, তিনি তাদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন।
গত সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খলিল বলেন, ‘এই ফিলিস্তিনির দিকে তাকান, যে কখনও নিজের মুখ লুকায়নি—বলে আমি আসলে বলির পাঁঠা হয়ে গিয়েছি।’
অন্যদিকে, খলিলকে ক্যাম্পাসে ‘অরাজকতার হোতা’ হিসেবে বলে আখ্যা দিয়েছে কলাম্বিয়া ইহুদি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শৃঙ্খলা কমিটি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে।
সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিনকে ‘নরহত্যাকারী’ বলে সম্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় খলিল
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশেই মাহমুদ খলিলকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।
শনিবার আটকের পর খলিলকে লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সেখানে তিনি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
এ ঘটনার পর রবিবার (৯ মার্চ) এক্সে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমেরিকায় হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিনকার্ড বাতিল করবে প্রশাসন, যাতে তাদের নির্বাসন দেওয়া যায়।’
পরে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘মাহমুদ খলিলকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা উচিত।’
লেভিটের ভাষ্যে, ‘খলিল এমন একটি বিক্ষোভ সংগঠিত করেছেন, যা শুধু কলেজ ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করেনি, আমেরিকার ইহুদি শিক্ষার্থীদেরও হয়রানি করেছে। এছাড়া তাদের নিজ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি করেছে বিক্ষোভকারীরা।’
হামাসের সমর্থনে খলিল প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেন লেভিট।
তবে লেভিটের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার সঙ্গে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
ম্যারিয়ান আলওয়ান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অন্য কেউ বিক্ষোভ-সংশ্লিষ্ট নয়—এমন কিছু প্রচার করলে সেই দায় যাতে খলিলের ওপর না বর্তায়, এ কারণেই তিনি (খলিল) মুখ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন।’
এদিকে, খলিলের স্ত্রী আট মাসের গর্ভবতী বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। নিজের নাম না প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে খলিলের স্ত্রী বলেছেন, ‘আমার চোখে মাহমুদ খলিল একজন স্নেহপরায়ণ স্বামী এবং আমার গর্ভের সন্তানের বাবা।’
খলিলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাই। আমার প্রথম সন্তান যখন পৃথিবীতে আসবে, তখন আমার স্বামীকে আমি পাশে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।’
২৯১ দিন আগে
ট্রাম্পের হুমকি: গ্রিনল্যান্ডে অবিশ্বাস্য জয় পেল ডেমোক্র্যাটিট পার্টি
গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে অঞ্চলটির মধ্য-ডানপন্থি ডেমোক্র্যাটিট পার্টি। এমন এক সময় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপটিকে ‘যে করেই হোক’ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে নালেরাখ পার্টি। দুই দলই ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা চাইলেও মতভিন্নতা রয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।
পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দল ইনুইট আতাকাতিগিটের (আইএ) স্থলাভিষিক্ত হবে বিজয়ী ডেমোক্র্যাটিট পার্টি। গ্রিনল্যান্ডের সম্প্রচারমাধ্যম কেএনআর টিভি জানিয়েছে, ডেমোক্র্যাটিট পার্টি এবার ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অথচ চার বছর আগে তাদের এই ভোটের সংখ্যা ছিল ৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের মোকাবিলায় কানাডা কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিচ্ছে?
বিপরীতে নালেরাখ পেয়েছে ২৫ শতাংশ ভোট। ২০২১ সালের নির্বাচনে তাদের ভোট ছিল ১২ শতাংশ। অর্থাৎ নালেরাখ দলের ভোট বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। মার্কিন সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই দলটির মনোভাব উদার।
ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার জন্য আকস্মিক ভোটেও সমর্থন জানিয়েছে তারা। স্বাধীনতার প্রশ্নে নালেরাখের মনোভাব আগ্রাসী হলেও ডেমোক্র্যাটিটরা আরও মাঝারি গতিতে এগোতে চাচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটিট এমন সব দলের ওপর বিজয় অর্জন করেছে, যারা বহু বছর ধরে অঞ্চলটি শাসন করে আসছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামাজিক নীতির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন বাসিন্দাদের অনেকে।
ডেমোক্র্যাটিট দলের নেতা জেনস-ফ্রেডেরিক নেইলসেন (৩৩) বলেন, ‘আমি মনে করি, গ্রিনল্যান্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক বিজয়।’
নিজেদের ‘সোশ্যাল লিবারেল’ বলে পরিচয় দেন তিনি। স্বাধীনতার দাবি করলেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন সাবেক এই ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন।
দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণে এখন তিনি অন্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে দ্য ডেনিশ ব্রোডকাস্টিং কর্পোরেশন ডিআর জানিয়েছে। নেইলসেন বলেন, ‘নির্বাচনে এতো ভালো ফল করবো, তা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। আমি খুবই খুশি।’
বাইরের দেশ যখন গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে, তখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গেল ফেব্রুয়ারিতে আগাম ভোটের ডাক দিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুৎসি বোওরব এয়েদে। তিনিও এই কঠিন সময়ে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দেন।
আরও পড়ুন: গবেষণায় ট্রাম্পের তহবিল বন্ধের প্রতিবাদে বিজ্ঞানীদের বিক্ষোভ
তার দল ইনুইট আতাকাতিগিট ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবারের নির্বাচনে। গতবারের চেয়ে তাদের ভোট এবার উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। ২০২১ সালের নির্বাচনে দলটির ভোট ছিল ৩৬ শতাংশ।
এবার বড় ধরনের বিজয় প্রত্যাশা করেছিল ইনুইট আতাকাতিগিট, তারপরেই থাকার কথা ছিল সুইমুটের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে এই দুই দল। সুইমুট ভোট পেয়েছে ১৪ শতাংশ।
বিজয়ী ডেমোক্র্যাটিট পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েলস লুন্ড পৌলসেন। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে আসা বড় ধরনের চাপে থাকতে হবে অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ সরকারকে।
২৯২ দিন আগে
পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাই: ১৫০ যাত্রী উদ্ধার, ২৭ বিছিন্নতাবাদী নিহত
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের বোলান জেলার কাছে একটি ট্রেন ছিনতাই হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেড়শর বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন ২৭ বিচ্ছিন্নতাবাদী। বুধবার (১২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে ডন এমন খবর দিয়েছে।
কোয়েটা থেকে পেশওয়ারমুখী জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তাদের দাবি না মানা হলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।
কোয়েটা থেকে ১৫৭ কিলোমিটার দূরে মাশকাফ টানেলের কাছে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এই নজিরবিহীন জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ট্রেনটিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করেছে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য ছিলেন।
রেডিও পাকিস্তানের খবর বলছে, এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ১৫৫ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ২৭ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিহত হয়েছেন। বাকিদেরও নিঃশ্বেষ করে দিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ট্রেন থামিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রী জিম্মি, দাবি না মানলে হত্যার হুমকি
নিরাপরাধ যাত্রীদের কাছে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরা অবস্থান নিয়েছে বলেও খবরে দাবি করা হয়েছে। রেডিও পাকিস্তান জানিয়েছে, ‘সম্ভাব্য পরাজয় নিশ্চিত হয়ে সাধারণ যাত্রীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।’
তিনটি ভিন্ন জায়গায় নারী ও শিশুদের জিম্মি করে রেখেছে আত্মঘাতী হামলাকারীরা। যে কারণে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির দুর্গম এলাকা হওয়ায় অভিযান ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, জিম্মিদের উদ্ধারে বোলান পাসের দাদার এলাকায় তারা ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।
জিম্মিদের মধ্য থেকে হতাহতের পরিমাণ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কর্মকর্তারা বলছেন, গোলাগুলিতে লোকোমোটিভের চালক ও নিরাপত্তা বাহিনীর আট সদস্যসহ মোট ১০ জন নিহত হয়েছেন।
সামরিক অভিযানে কারা কারা মুক্ত হয়েছেন; তাদের পরিচয়ও জানা সম্ভব হয়নি বলে ডনের খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বলছে, তারাই ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনী পিছু না হটলে যাত্রীদের হত্যা করা হবে।
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকবী বলেন, ‘নিরাপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব নরপশু গুলি চালিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলুচিস্তান সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অঞ্চলটিতে কয়েক দশক ধরে সরকার, সেনাবাহিনী ও চীনা স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রায়ই হামলা চালিয়ে আসছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা প্রদেশটির খনিজ সম্পদের হিস্যা দাবি করে আসছেন।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করা বিএলএ গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজসম্পদ অন্যায়ভাবে শোষণ করছে পাকিস্তান সরকার।
ডনের তথ্যমতে, গত বছর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৬ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প
থিংকট্যাংক পাক ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর এবং চলতি বছরের শুরুতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সেই ২০১৪ সালের পর্যায়ে চলে গেছে।
এতে বলা হয়, যদিও ২০১৪ সালের মতো চলতি বছর পাকিস্তানের কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চল সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন অংশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে ওই অঞ্চলটিতেই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সবেচেয়ে বেড়েছে।
বিএলএ ছাড়াও বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) নামের আরেকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী অঞ্চলটিতে সক্রিয় বলে পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যম-সূত্রে জানা জায়।
২৯২ দিন আগে
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: ফের মার্কিন সামরিক সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন
ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইউক্রেন সম্মত হওয়ায় পরেই এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এমন খবর দিয়েছে।
বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কিয়েভ সম্মত হয়েছে। একই প্রস্তাব মস্কোকেও দেওয়া হবে।
রুবিও বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে। এবার মস্কোর সিদ্ধান্ত জানানোর পালা। মস্কো সম্মত না হলে তারা শান্তির পথে বড় একটি প্রতিবন্ধকতা হবে।’এ বিষয়ে ট্রাস্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ জানান, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি আলোচনায় বসতে ট্রাম্পের সঙ্গে কিয়েভ একমত বলে নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতেও আলোচনা শুরু হয়েছে।’
এছাড়া ইউক্রেনকে দেওয়া বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে তুলে নেওয়ায় ট্রাম্প সম্মতি দিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি যুবরাজের বৈঠক
মঙ্গলবারের এই বৈঠক কিছুদিন ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্কের তিক্ততা কিছুটা হলেও প্রশমিত করেছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে নজিরবিহীন বাকবিতণ্ডায় জড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ওভাল অফিসের একটি বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন পরে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ট্রাম্প।
চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে জেদ্দার এই বৈঠক ইউক্রেনের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেদ্দার বৈঠক সম্পর্কে হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একটি চুক্তি চূড়ান্ত রূপ নিতে পারে।’
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইউক্রেন সম্মত হওয়ায় তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন সম্মত হয়েছে, এটা ভালো।’ তিনি এ বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান।
এদিকে সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে জেলেনস্কি জানান, ‘আমাদের অবস্থান প্রথম থেকেই স্পষ্ট। ইউক্রেন দীর্ঘমেয়াদে শান্তি চায়। তবে সেই সঙ্গে নিরাপত্তাও চান ইউক্রেনীয়রা, যেন যুদ্ধ আবার ফিরে না আসে।’
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প
যুক্ররাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়ারমার্ক জানান, ‘আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি ফেরাতে একই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।’
তবে এই বৈঠক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া। যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আগেই জানিয়েছেন, ‘তারা সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতি চান না। বরং তারা স্থায়ী শান্তি চুক্তি চান।’
এছাড়া ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ও ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল তারা দখলে নিয়েছে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ছাড় দিয়ে তারা কোনো চুক্তি করবে না বলেও জানিয়েছে মস্কো। ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের ভূখণ্ডের এক–পঞ্চমাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। ২০১৪ সালের যুদ্ধে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে ক্রেমলিন রাজি আছে বলেও জানিয়েছে রুশ প্রশাসন।
২৯২ দিন আগে
পাকিস্তানে ট্রেন থামিয়ে প্রায় ৫০০ যাত্রী জিম্মি, দাবি না মানলে হত্যার হুমকি
পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে পেশওয়ারমুখী জাফর এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনের প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তাদের দাবি না মানা হলে সব জিম্মিকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে স্থানীয় গুদালার ও পিরু কোনেরি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানভিত্তিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
খবরে বলা হয়, ট্রেনটি থামানোর আগে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছে বন্দুকধারীরা। এতে ট্রেনের চালক আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে চরম আতঙ্কে সময় পার করছেন ট্রেনটির যাত্রীরা। ট্রেনটি বর্তমানে একটি টানেলের মধ্যে আটকা পড়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সেনা অভিযানে নিহত ৩০
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবর বলছে, দুর্গম কারাকোরাম পাহাড়ি এলাকায় ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে বন্দুকধারীরা। সেখানে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের রেলওয়ে পুলিশ বলছে, ট্রেনটি থামিয়ে রাখা হয়েছে। সেটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যেও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে, তবে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি একপ্রেস ট্রিবিউন।
হাসপাতালের আশপাশে জরুরি প্রটোকল সক্রিয় করা হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গম এলাকা বলে পরিচিত কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। অভিযান চালাতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গোলাগুলি শুরু করার আগে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) জানিয়েছে, তারাই ট্রেনটি থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী পিছু না হটলে যাত্রীদের হত্যা করা হবে।
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকবী বলেন, ‘নিরাপরাধ যাত্রীদের ওপর যেসব নরপশু গুলি চালিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলুচিস্তান সরকার জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অঞ্চলটিতে কয়েক দশক ধরে সরকার, সেনাবাহিনী ও চীনা স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রায়ই হামলা চালিয়ে আসছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা প্রদেশটির খনিজ সম্পদের হিস্যা দাবি করে আসছেন।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করা বিএলএ গত কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিচ্ছিন্নতাবদাী গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, বেলুচিস্তানের গ্যাস ও খনিজসম্পদ অন্যায়ভাবে শোষণ করছে পাকিস্তান সরকার।
আরেক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের তথ্যমতে, গত বছর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৬ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে সেনা অভিযানে ১০ জন নিহত
থিংকট্যাংক পাক ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের (পিআইপিএস) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর এবং চলতি বছরের শুরুতে সন্ত্রাসী হামলার কারণে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সেই ২০১৪ সালের পর্যায়ে চলে গেছে।
এতে বলা হয়, যদিও ২০১৪ সালের মতো চলতি বছর পাকিস্তানের কোনো সুনির্দিষ্ট অঞ্চল সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন অংশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালে ওই অঞ্চলটিতেই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সবেচেয়ে বেড়েছে।
বিএলএ ছাড়াও বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) নামের আরেকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী অঞ্চলটিতে সক্রিয় বলে পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যম-সূত্রে জানা জায়।
২৯২ দিন আগে
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি যুবরাজের বৈঠক
সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
স্থানীয় সময় সোমবার (৯ মার্চ) দেশটির জেদ্দা শহরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।-খবর আল-অ্যারাবিয়ার।
এদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য রুবিও উপকূলীয় শহরটিতে ভ্রমণ করেন।
গেল রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রুবিও জানান, সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত তিনি জেদ্দায় থাকবেন। এ সময় ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে’ ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: শূন্যহাতে ফিরলেও প্রশংসায় ভাসছেন জেলেনস্কি
আল-অ্যারাবিয়ার তথ্য অনুযায়ী, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি নিয়ে আরও অনেক কাজ করা এখনও বাকি রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সোমবার জেদ্দায় পৌঁছেছেন ও সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২৯৩ দিন আগে
ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আটক: যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদ খলিল নামে এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা। খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ও গ্রিনকার্ডধারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘঠিত বিক্ষোভের জড়িত থাকার কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা।-খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
গত শনিবার (৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। বর্তমানে তাকে লুইজিয়ানার জেনায় একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের গলফ রিসোর্টে হামলা
সেখানে তিনি পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
একজন শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারীর সঙ্গে এহেন কর্মকান্ডে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিনকে সমর্থন করায় তিনি সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অভিযোগ করে ফেডারেল সরকার যা করছে, তা অবৈধ ও অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন সমালোচকরা।
গ্রিনকার্ড থাকার পরও কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত হতে হয়?
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা গ্রিনকার্ড নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে খলিলের গ্রিনকার্ড থাকার পরও তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার শঙ্কা থাকায় এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে গ্রিনকার্ড মূলত কতটুকু সুরক্ষা দেয় অভিবাসীদের?
এ বিষয়ে কর্নেল ল স্কুলের ইমিগ্রেশন আইনের অধ্যাপক জ্যাকলিন কেলি-উইডমার বলেন, গ্রিনকার্ডধারীদের সাধারণত অনেক সুরক্ষা থাকে এবং নাগরিকত্ব ছাড়া এরা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত হওয়ার যোগ্য।’
তবে এই সুরক্ষারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের জন্য, ঠিকানা পরিবর্তনের তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিয়ে করলে গ্রিনকার্ডধারীরাও নির্বাসিত হতে পারেন বলে জানান অধ্যাপক জ্যাকলিন।মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নিবার্হী আদেশের আওতায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্পের মতে, গাজার ক্ষমতায় থাকা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে’ সমর্থন করে ওই শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার হারিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, এমনকি তাদের সঙ্গে কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী ও তাদের কয়েকটি সংগঠনও ছিল।
অবশ্য কখনো-কখনো আন্দোলনকারীদের হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতাদের সমর্থন করতে দেখা গিয়েছে। এই দুটি সংগঠনকেই যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে থাকে।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, যা দেশের জন্য হুমকি হতে পারে এই অজুহাতেই খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও খলিল কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন, তাকে এমন কোনো অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন অনুযায়ী, গ্রিনকার্ডধারীদের কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত না করেও তাদের ‘বহিষ্কারযোগ্য’ ঘোষণা করা যায় বলে জানান জ্যাকলিন।
আরও পড়ুন: কেমন কাটছে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর জীবন?
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি বা অ্যাটর্নি জেনারেলের যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন বা ভবিষ্যতে জড়িত হতে পারেন, তাহলে তাদের নির্বাসন দেওয়া যেতে পারে বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
তবে গত বছরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে মামলা হওয়ার মতো কোনো ঘটনা তার চোখে পড়েনি বলে মত দেন জ্যাকলিন। একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় কিভাবে খলিলকে সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমে অভিযুক্ত করা যায় এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এর জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলকে হামলায় সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই জেরে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ফিলিস্তিনিপন্থি ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। কয়েক মাস ধরে চলে এই বিক্ষোভ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের পক্ষের প্রধান আলোচকদের একজন ছিলেন মাহমুদ খলিল। এই ভূমিকার জন্য বেশ পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই ইহুদীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে ট্রাম্পের নিবার্হী আদেশের কার্যকারিতা শুরু হয়েছে বলে মনে করেন সমালোচকরা।
এ ঘটনার পর রবিবার (৯ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ‘আমেরিকায় হামাস সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিনকার্ড বাতিল করবে প্রশাসন, যাতে তাদের নির্বাসন দেওয়া যায়।’
এদিকে, খলিলের আইনজীবীরাও তার আটকের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। আদালত মামলাটি বিবেচনা করা পর্যন্ত খলিলকে নির্বাসন না দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটির একজন ফেডারেল জজ। আগামী বুধবার (১২ মার্চ) এই মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে।
২৯৩ দিন আগে
মাকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ ডাকল ৪ বছরের শিশু!
ছোটবেলা বাবা-মা শিশুদের শেখান কেউ কোনো অপরাধ করলে পুলিশ ডেকে তাকে ধরিয়ে দিতে হয়। অপরাধীদের জেলে যেতে হয় তাদের কৃতকর্মের জন্য। কেমন হয়, এই শিক্ষা যদি বাবা-মায়ের উপরই সবার আগে প্রয়োগ করে শিশু!
গত সপ্তাহে এমনই একটি মজার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে। আইসক্রিম খেয়ে ফেলার অপরাধে মাকে জেলে পাঠাতে পুলিশ ডেকেছে চার বছরের ছেলে। মাকে শেষমেষ জেলে যেতে না হলেও নিজে ঠিকই আইসক্রিম খাওয়ার অধিকার অর্জন করে নিয়েছে শিশুটি।
ডব্লিউএসএলএস ১০ নিউজের প্রতিবেদনে জানা যায়, ৯১১ (যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের জরুরি সেবা পাওয়ার ডায়াল নাম্বার) এ উইসকনসিনের মাউন্ট প্লেজেন্ট এলাকা থেকে একটি কল আসে। দায়িত্বরত এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা ফোনটি রিসিভ করলে শুনতে পায় একটি বাচ্চা বলছে, ‘আমার মা খুব খারাপ করেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে বাচ্চাটিকে কি হয়েছে সে ব্যাপারে তাকে খুলে বলতে বলে।
আরও পড়ুন: বিটিএস সদস্যকে চুমু খেয়ে বিপাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী
এদিকে মা তার আইসক্রিম খেয়ে তার সঙ্গে যে অন্যায় করেছে সেজন্য ন্যায়বিচার পেতে ছেলে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সে পুলিশকে বলে তার মাকে এসে নিয়ে যেতে। পুলিশ অফিসার তখনও বুঝে উঠতে পারছিল না আসলে কি অন্যায় করেছে বাচ্চাটির মা।
তবে তাকে বেশিক্ষণ ধোঁয়াশার মধ্যে থাকতে হয়নি। ওই বাচ্চার মা কোনোরকমে বাচ্চার থেকে ফোন নিয়ে নিজেই অপরাধ স্বীকার করে নিলেন, যে তিনি তার ছেলের আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছেন।
পরে তিনি পুলিশকে জানান, আসলে বাচ্চাটির বয়স মাত্র চার বছর। তার মা তার আইসক্রিম খেয়ে ফেলায় রাগ করে ৯১১ নম্বরে কল করার কথা বলে, তারা আটকানোর চেষ্টা করার আগেই সে কল দিয়ে ফেলেছে।
এদিকে ছেলে তো রেগে আগুন, তার আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছে। কত বড় অন্যায় করেছে মা! তাই সে মাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে তাদের কল করেছে। এই অন্যায় সে মেনে নিতে নারাজ, পুলিশকে আসতেই হবে।
এরপরে যদিও দুই নারী পুলিশ এসেছে, তবে তার মাকে জেলে নিতে নয়। অবশ্য পুলিশ এসে বোঝানোর পরে সে তার মন নিজেই পরিবর্তন করেছে। সে আর তাকে মাকে জেলে দিতে চায়নি। তবে তার অভিযোগ ঠিক জানিয়েছে পুলিশকে, সে একটুখানি আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল, তাকে খেতে দেওয়া হয়নি।
পরবর্তীতে ওই দুই পুলিশ অফিসার আইসক্রিম নিয়ে আরেকবার তার বাসায় গিয়ে তাকে সারপ্রাইস দিয়েছেন। আইসক্রিম পেয়ে মহাখুশি হয়ে পুলিশের সঙ্গে পোজ দিয়ে সে ছবিও তুলেছে।
২৯৩ দিন আগে