জীবনধারা
মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি
বিশ্বজুড়ে মাঙ্কি পক্স নিয়ে উদ্বেগের মাঝেই এটি নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বুধবার (১৪ আগস্ট) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আজ জরুরি কমিটির বৈঠকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এই অবস্থা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের ওপর উদ্বেগের পরিস্থিতি (পিএইচইআইসি) সৃষ্টি করেছে। আমি সেই পরামর্শ গ্রহণ করে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশ্ব জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছি।’
টেড্রোস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী পিএইচইআইসি হচ্ছে সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা। এটি এমন একটি বিষয় যাতে আমাদের সবার উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আফ্রিকায় এবং এই মহাদেশের বাইরেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই উদ্বেগজনক।’
ডব্লিউএইচওর তথ্যানুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত মাঙ্কি পক্সে আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে, ১৪ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই রোগে এখন পর্যন্ত ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মাঙ্কি পক্সের চলমান প্রাদুর্ভাবকে আফ্রিকা মহাদেশের জন্য জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (আফ্রিকা সিডিসি)। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা এল।
আরও পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
৫০০ দিন আগে
দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষ: গবেষণা
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, স্বাস্থ্যসেবা ও কাজে ফিরতে অক্ষম (কোভিড) রোগীদের পেছনে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১ শতাংশ।
কোভিড-১৯ আবির্ভূত হওয়ার চার বছর পর বিশ্বজুড়ে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের সারসংক্ষেপ জানানোর প্রচেষ্টা থেকেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিস্ট এবং ভিএ সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান জিয়াদ আল-আলী বলেন, গবেষণাটির লক্ষ্য নীতি নির্ধারণ ও এ বিষয়ে গবেষণা এগিয়ে নিতে একটি রোড ম্যাপ সরবরাহ করা।
আরও পড়ুন: নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ সংক্রমণের অর্ধেকই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
আল-আলী আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ গবেষক এবং রোগীদের নিয়ে গবেষণা করা তিন গবেষকের সঙ্গে গবেষণাপত্রটি লিখেছেন।
গবেষণার অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক দীর্ঘমেয়াদি কোভিড-১৯ এ ভুগছেন; অনেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি এবং এর চিকিৎসা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে রয়ে গেছে।
৫০৫ দিন আগে
প্রসঙ্গ জেনারেশন জেড: কারা এই জেন জি প্রজন্ম, কী তাদের বৈশিষ্ট্য
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশের মঞ্চে যুগপৎভাবে বদলেছে মানুষের জীবনধারণ ও দৃষ্টিভঙ্গি। পুরোনো জায়গায় নতুনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রগতিশীলতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ঐতিহ্যের ভিত্তি প্রস্তরে। সময়ের এই ধারাকে অব্যাহত রাখার তেমনি এক নিদর্শন জেনারেশন জেড। এই শব্দ যুগল যুগের চাহিদার সঙ্গে সমসাময়িক জীবনধারার সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করছে মানব সভ্যতার এক বিশাল শ্রেণীকে। চলুন, বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে জেন জি নামের এই প্রজন্ম নিয়ে চিত্তাকর্ষক কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
জেনারেশন জেড কী
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে এবং ২০১০ এর দশকের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণকারীদের বলা হয় জেনারেশন জেড বা সংক্ষেপে জেন জি। আরও সুস্পষ্ট করে বলতে গেলে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করেছন তারা এই প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেড সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠজনের বয়স ১২ বছর।
এদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের ক্যাটাগরি জেনারেশন ওয়াই, যাদেরকে বলা হয় মিলেনিয়াল্স। এদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে।
প্রজন্ম জেডের আরও একটি নাম হচ্ছে জুমার্স। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে জেডের পূর্বসূরীদের নাম। এখানে ‘জেড’ অক্ষরের সঙ্গে মূলত ‘বুমার্স’ শব্দের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। বুমার্স হলো বেবি বুমার্সের সংক্ষিপ্ত রূপ, যে প্রজন্মের আগমন ঘটে ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালে। এদের পরে আসে জেনারেশন এক্স। সেই অর্থে বুমারদের বলা যেতে পারে জেন জি’দের প্রপিতামহ। জেন জি-এর উত্তরসূরিরা জেনারেশন আলফা নামে অভিহিত, যাদের জন্মকাল ২০১০ থেকে ২০২৪।
জেড প্রজন্মের অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে আই বা ইন্টারনেট জেনারেশন, হোমল্যান্ড জেনারেশন, নেট জেন, ডিজিটাল নেটিভস বা নিও-ডিজিটাল নেটিভস, প্লুরালিস্ট জেনারেশন, এবং সেন্টিনিয়াল্স।
ইন্টারনেট এবং পোর্টেবল ডিজিটাল প্রযুক্তির মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে প্রযুক্তিগতভাবে অক্ষর-জ্ঞান না থাকলেও এরা ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে অভিহিত হয়। পূর্ববর্তী প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা যেখানে নিবদ্ধ ছিল বইয়ের মাঝে, সেখানে এই প্রজন্মের প্রত্যেকেই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্ত।
আরো পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
প্রজন্ম জেড-এর চমৎকার কিছু বিষয়
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রথম প্রজন্ম
১৯৯৭ সালে চালু হয় প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া সাইট সিক্স ডিগ্রি। যেখানে ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরিসহ ছবি আপলোড, শেয়ার এবং বন্ধুত্ব করা যেত। এরই বর্তমান রূপ এখনকার এক্স (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) এবং ইন্সটাগ্রাম।
এ প্রজন্ম স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের যুগ থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবের যুগের রূপান্তরটা দেখেছে। সাক্ষী হয়েছে কাগুজে পত্রিকার উপর নির্ভরতা এবং ধারাবাহিকের নতুন পর্বের জন্য পুরো সপ্তাহ ধরে অপেক্ষার অবসানের। স্ন্যাপ চ্যাট এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো দ্রুত, আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ কন্টেন্ট স্বাদ দিচ্ছে তাৎক্ষণিক ইচ্ছে পূরণের। এই মনোভাব পরিচালিত করছে মনোযোগের দ্রুত পরিবর্তনের দিকে। এতে করে দ্রুতগতির জীবনধারায় পাল্টে যাচ্ছে বিনোদন, সামাজিকীকরণ, এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম।
বিশেষত প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি নতুন কোম্পানিগুলোও গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে তাদের মনস্তাত্ত্বিক নিরীক্ষণে। যোগাযোগ, লেনদেন ও প্রতিক্রিয়া জানানোর কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় অপরিহার্য পুঁজিতে পরিণত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রে সৃষ্ট এই বিপণন ব্যবস্থা পাল্টা অবদান রাখছে সেই আচরণকে বজায় রাখতে।
আরো পড়ুন: সার্কেডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা
শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ নির্বিশেষে জেন জি’র প্রত্যেকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ভীষণ সচেতন। উদ্বেগজনিত ব্যাধি, বিষন্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যাগুলো নিয়ে এতটা খোলামেলা আলোচনায় আগে কখনও দেখা যায়নি। নিদেনপক্ষে পূর্ববর্তী প্রজন্মগুলোতে এসব ব্যাপারে একরকম হীনমন্যতা ও ভয় কাজ করত। এখানে অনেকাংশে ভূমিকা পালন করেছে সামাজিক মাধ্যম এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো। এগুলো নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং তারকাদের উন্মুক্ত কথপোকথোন মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনাকে স্বাভাবিক করে তুলেছে।
বিষয়টি শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। জেন জি সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়াতে অভ্যস্ত। এর ধারাবাহিকতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাস্থ্যগত সংস্থানগুলো, অভিজ্ঞ পরামর্শকেন্দ্র, এবং মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন তারই দৃষ্টান্ত। এ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে কাজের সময়সীমা এবং পরিমাণ নির্ধারণের ব্যাপারেও আলাদাভাবে গুরুত্ব পায় কর্মচারীর মানসিক অবস্থা। এই সার্বিক ব্যবস্থার আঙ্গিকে পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও সমস্যাগুলো জনসমক্ষে উঠে আসে ইতিবাচকভাবে। একই সঙ্গে উত্তরণের জন্য থাকে মানসিক সমর্থন এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিতকরণের প্রচেষ্টা।
আর্থিক বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
যুগ যুগ ধরে বাজারগুলোতে অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি, এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ঘাটতির মতো নিয়ন্ত্রণহীনতা সাক্ষী হয়েছে জেন জি। এমনি অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে তারা সংগ্রাম করতে দেখেছে মিলেনিয়াল বাবা-মাদের। আর্থিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাস্তববাদীতা মূলত এরই ফলাফল। শুধুমাত্র ব্যয়ের চেয়ে সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেওয়াই নয়, অর্থের সময় মানকে তারা ভীষণভাবে আমলে নেয়। তাছাড়া ২১ শতকের শুরু থেকে মুদ্রাস্ফীতি হারের উত্থান-পতন সতর্ক করে তুলেছে তাদেরকে। এগুলোর বিধ্বংসী প্রভাব তারা দেখেছে ছাত্র ঋণ, বাড়ি ভাড়া, এবং নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যে। তাই তারা সবকিছুর ওপরে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে অগ্রাধিকার দেয়। তাছাড়া এদের মধ্যে আশাবাদী জনগোষ্ঠীরা জীবনের কৃতিত্ব হিসেবে আর্থিক স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেয়।
প্রতিনিয়ত বিকশিত প্রযুক্তির কারণে তারা অ্যাপ ও সফ্টওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ব্যয়, বাজেট কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। অর্থের সময় মূল্যকে টেক্কা দিতে অল্প বয়স থেকেই দেখা যায় বিনিয়োগের প্রবণতা। সবচেয়ে যুগান্তকারী বিষয় হচ্ছে, পূর্ববর্তী প্রজন্ম যেখানে ঋণের প্রতি দুর্বলতা ছিল, সেখানে জুমাররা ঋণের সুবিধাকে সর্বদা পাশ কাটাতে পছন্দ করেন। এই আর্থিক বিচক্ষণতা এমনকি তাদের ছোট ছোট ব্যয়ের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়।
আরো পড়ুন: ঢাকার জনপ্রিয় ১০টি বুক ও স্টাডি ক্যাফে: বইপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য
ইন্টারনেট জুড়ে সামাজিক মাধ্যম ও রিভিউ সাইটগুলো যে কোনো কেনাকাটার আগেই পণ্যগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণার প্রয়াস যোগায়। এই প্রয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি এবং চাকরি খোঁজা পর্যন্ত বিস্তৃত। তারা মূলত আর্থিক স্বচ্ছলতাকে কেন্দ্র করে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাদের আগ্রহকে পরিচালিত করে। ফলে বাস্তববাদী শিক্ষা, অনলাইন সম্পদের ব্যবহার, বিনিয়োগ এবং উদ্যোক্তা সম্পর্কে জানার জন্য তারা ভিড় জমায় প্রাসঙ্গিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
৫০৬ দিন আগে
মাইলসের শাফিন আহমেদ: পপসংগীতের আকাশে চির উজ্জ্বল নক্ষত্র
সংগীতের পথে জীবনের প্রথম পদক্ষেপ, আবার সেই পথেই শেষ। কথাটি যেন অবিকল মিলে গেছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত শিল্পী শাফিন আহমেদের সঙ্গে। গত ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি কনসার্টে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৪ জুলাই ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন শাফিন আহমেদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ ও কিডনিসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। চলুন, দেশ বরেণ্য এই পপ-তারকার বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ব্যক্তি জীবনে শাফিন আহমেদ
শাফিন আহমেদ ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মা দেশের স্বনামধন্য সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞ কমল দাশগুপ্ত। স্বভাবতই শাফিনের বেড়ে ওঠাটা হয়েছে গানের মাঝেই। পারিবারিক গন্ডিতে তার ডাক নাম ‘মুনা’। এ ছাড়া সংগীতাঙ্গনের যারা তাকে ছোটবেলা থেকে চেনে তারা দেখা হলে প্রথমেই ‘মুনা’ নামেই ডাকতেন।
শাফিন আহমেদের গানের হাতেখড়ি হয় তারা বাবা-মায়ের কাছেই। বাবার কাছে তালিম নিয়েছেন উচ্চাঙ্গ সংগীতের, আর মা শিখিয়েছেন নজরুলগীতি। তার আনুষ্ঠানিক গানের শুরুটা হয়েছিল মাত্র ৯ বছর বয়সে। পরে বড়ভাই হামিন আহমেদসহ দুই ভাই পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সে সময় তার সামনে উন্মোচিত হয়েছিল পাশ্চাত্য সংগীতের বিস্তৃত পরিসর। আর এই অঙ্কুরেই শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ বিরতির পর ‘নীল জোছনা’ নিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন শাওন
সংগীতাঙ্গনে শাফিন আহমেদ
১৯৭৯ সালে মাইল্স ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর হামিন ও শাফিন দুজনেই যুক্ত হন ব্যান্ড দলের সঙ্গে। বেজ গিটার বাজানোর পাশাপাশি দলের প্রধান গায়ক ছিলেন শাফিন।
শুরুর দিকে তারা ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে (বর্তমান ঢাকা শেরাটন) নিয়মিত গান করতেন। তখন তাদের মনোনিবেশ ছিল শুধুমাত্র ইংরেজি গানের প্রতি। ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর মাইলসের প্রথম অ্যালবামটির সবগুলো গানই ছিল ইংরেজিতে।
১৯৮২ সালে ত্রিশ মিনিটের একটা ইন্সট্রুমেন্টাল শো’র জন্য বিটিভির পক্ষ থেকে ডাক আসে। তখন মাইলসের সেরা ছয়টি সুর রেকর্ড করে পাঠানো হয় বিটিভিতে। এই রেকর্ডগুলো টানা দুই বছর ভোর ৬টা থকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল বিটিভির সিগনেচার মিউজিক হিসেবে।
১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় মাইলসের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। সেই থেকে একের পর এক সৃষ্টি হতে থাকে কালজয়ী সব গান। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলো হলো- ‘ফিরিয়ে দাও আমারি প্রেম’, ‘আজ জন্মদিন তোমার’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘চাঁদ তাঁরা সূর্য’, ‘নীলা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘পাথুরে নদীর জলে’, ‘ধিকি ধিকি’, এবং ‘সে কোন দরদিয়া’। চার যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে এখনও এই গানগুলো দেশ জুড়ে সমান জনপ্রিয়। এগুলোসহ মাইল্সের প্রায় ৯০ শতাংশ গানের ভোকাল ছিলেন শাফিন।
আরও পড়ুন: আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সক্ষমতার চিত্র
৫২০ দিন আগে
আম্বানিপুত্রের বিয়ের চূড়ান্ত আয়োজন: অভিন্ন ঐতিহ্যে দেশি-বিদেশি তারকা ও বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিরা
ভারতীয় ঐতিহ্যের সব রঙ, দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় তারকা আর বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের রাজকীয় বিয়ের চূড়ান্ত আয়োজনে এগুলোর সবই থাকা চাই। শত হলেও এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়ে বলে কথা। বর ও কনের চার হাত এক করার লক্ষ্যে গত ৩ জুলাই থেকে যেন তারই মহড়া চলছে। উৎসবের মধ্যমণি অনন্ত-রাধিকা হলেও এখানে এমন সব তারকা ও ব্যক্তিদের একত্রিত করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র আম্বানিদের পক্ষেই করা সম্ভব। চলুন, সেই পরিচিত মুখগুলোর পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো এই আয়োজনের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
৫৩২ দিন আগে
বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
প্রতিবারের মতো এ বছরের বর্ষা মৌসুমেও বন্যাগ্রস্ত অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি সামলাতে হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বের বিভাগ সিলেটের অধিবাসীদের। বন্যার পানি ও শিল্পকারখানার বর্জ্যের সঙ্গে মিশ্রিত পানি সৃষ্টি করছে অস্বাস্থ্যকর বিপজ্জনক পরিবেশ। ফলে শঙ্কা বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস এ-এর মতো রোগের সংক্রমণের। ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলোকে। এমন ক্রমবর্ধমান সঙ্কটে প্রতিটি মহল্লা বা পাড়া, পরিবার, এমনকি ব্যক্তি পর্যায় থেকেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে করণীয়
পানি ফুটিয়ে নেওয়া
পানি থেকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য পরজীবীর মতো ক্ষতিকারক রোগজীবাণু নির্মূল করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে পানি ফুটানো। এর জন্য কমপক্ষে এক মিনিট থেকে সর্বোচ্চ তিন মিনিট পর্যন্ত পানি গরম করা উচিৎ। অতঃপর ঠান্ডা করে পান করা সহ প্রয়োজনীয় কাজে এই পানি ব্যবহার করা যাবে। ফুটানোর বিকল্প হিসেবে পানি পরিশোধন ট্যাবলেট বা পানির ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এগুলোর থেকে ফুটানোর মাধ্যমেই সবচেয়ে কার্যকরী ভাবে জীবাণু নির্মূল হয়। সর্বত ভাবে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্যার পর ডায়রিয়া বা কলেরার সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।
আরও পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
বন্যার পানি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা
পয়ঃনিষ্কাশন, রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য আবর্জনার কারণে বন্যার পানি দূষিত হয়। প্লাবিত রাস্তাঘাটে যাতায়াতের সময় এবং ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়লে হরহামেশাই মানুষ এই দূষিত পানির সংস্পর্শে আসে। আর এ থেকেই তৈরি হয় নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বন্যার পানিতে থাকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, যা বিভিন্ন ভাবে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই সংস্পর্শ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য পানিরোধী বুট এবং গ্লাভ্স পরা যেতে পারে। এছাড়া সংস্পর্শের সঙ্গে সঙ্গেই সাবান এবং পরিষ্কার পানি দিয়ে সংস্পর্শে যাওয়া শরীরের স্থানটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই সাবধানতা ত্বকের সংক্রমণের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।
ঘরবাড়ির মেঝে জীবাণুমুক্ত করা
অতিরিক্ত বন্যায় দূষিত পানি বাড়ির আঙ্গিনা সহ ঘরের ভেতরে ঢুকে যেয়ে সর্বত্রে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। গ্রামের ঘরবাড়ি এবং শহরের নিচ তলার বারান্দা ও ঘরগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাই বাড়ির চারপাশ সহ ঘরের মেঝে, ফার্নিচার, দরজার হাতল এবং পানির কলগুলো জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক। এর জন্য এক গ্যালন পানিতে এক কাপ পরিমাণ ব্লিচ মিশিয়ে তৈরিকৃত দ্রবণ দিয়ে স্থানগুলো মুছতে হবে। পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে দ্রবণটিকে কমপক্ষে ১০ মিনিটের জন্য ভালভাবে মিশতে দিতে হবে। এ সময় হাতে ডিস্পোজেবল গ্লাভ্স পরতে হবে, আর ধোয়া-মোছার সময় জানালা খুলে দিয়ে ঘরে বায়ুচলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
শুকনো খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণ
ভারী বর্ষণে এবং পরবর্তীতে বন্যার সময় দীর্ঘ সময় যাবৎ পানিবন্দি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিক ভাবে খাদ্যসামগ্রী, খাবার পানি এবং ঔষধপত্র সংগ্রহের উপায় থাকে না। তাই আগে থেকেই মুখবন্ধ পানিরোধী পাত্রে জরুরি খাবার এবং খাবার পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। টিনজাত এবং শুকনো খাবারের মতো অ-পচনশীল খাবার বা যেগুলোর জন্য খুব বেশি রান্নার প্রয়োজন হয় না এমন খাবার জমিয়ে রাখতে হবে। পানীয় এবং স্যানিটেশনের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পানি সঞ্চয় করতে হবে। সঞ্চয়ের তালিকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দরকারি প্রতিটি ঔষধও রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
বর্জ্য অপসারণ
নর্দমা এবং বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী বা ধ্বংসস্তূপের ময়লা-আবর্জনার যথাযথ নিষ্পত্তি দরকার। বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট বিন ব্যবহার এবং তা সময়মতো অপসারণ করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। ধোঁয়া ছড়াতে পারে এমন পোড়া উপকরণগুলোর নিষ্পত্তির সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত আবর্জনা সংগ্রহকারী কর্মীরা যথাসম্ভব দ্রুত বর্জ্য অপসারণে সক্রিয় থাকছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই বিষয়ে এলাকার সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেননা অব্যবস্থাপনার শিকার হওয়া বর্জ্য হেপাটাইটিস ই এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
বৃষ্টির পানি কাজে লাগানো
বন্যার সময় যখন পানির প্রায় সব কৃত্রিম উৎসগুলো দূষিত হয়ে যায়, তখন বৃষ্টির পানি হতে পারে সব থেকে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। খোলা জায়গায় মুক্ত ভাবে পড়ন্ত বৃষ্টির পানি সরাসরি একটি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করা যায়। যেখানে এই সুযোগ নেই সেখানে পানি সংগ্রহের পর তা একটি পরিষ্কার কাপড়ের মাধ্যমে ফিল্টার করতে হবে। অতঃপর কমপক্ষে এক মিনিট সিদ্ধ করে যাবতীয় রোগজীবাণু মেরে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: স্পঞ্জ সিটি: ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বন্যা-জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান
৫৩৬ দিন আগে
বর্ষাকালে সুউচ্চ ঝর্ণা-পাহাড়ে হাইকিং ও ট্রেকিং: ঝুঁকির কারণ ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
দেশের সুউচ্চ দুর্গম পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত এক অমোঘ আকর্ষণে কাছে টানে দুঃসাহসিক ভ্রমণপিপাসুদের। বিশেষ করে বর্ষাকালে ঝর্ণার পানিতে স্নান করার অভিজ্ঞতা নিতে মুখিয়ে থাকে হাইকার ও ট্রেকাররা। কিন্তু এই শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্যের প্রতি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে মৃত্যু ফাঁদ।
চলতি বছর ২১ জুন বান্দরবানের আলীকদমের মারাইংতাং পাহাড়ে খিঁচুনির পর রহস্যজনকভাবে মারা যান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইফতেখারুল আহমেদ আবিদ (২০)। গত বছর ১২ আগস্ট এই একই অঞ্চলের সাইংপ্রা পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে মারা যান ২৯ বছর বয়সি ট্যুর গাইড আতাহার ইসরাত রাফি।
এই মর্মান্তিক মৃত্যুগুলো একদিকে যেমন বেদনাদায়ক অন্যদিকে হাইকিং ও ট্রেকিং-এ উৎসাহী তরুণ প্রজন্মের জন্য নিরুৎসাহের কারণ। এই লক্ষ্যে দুর্ঘটনাগুলোর নেপথ্যের মূল কারণ এবং তা থেকে নিরাপদ থাকতে করণীয় নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, বর্ষাকালে হাইকিং ও ট্রেকিং-এ সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ এবং তা থেকে সতর্ক থাকতে জরুরি পদক্ষেপ জেনে নেওয়া যাক।
বর্ষাকালে হাইকার ও ট্রেকারদের মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণসমূহ
পিচ্ছিল ঝিরিপথ ও পাহাড় ধস
সারাদিন একটানা বৃষ্টিপাত উঁচু ঝর্ণার ধাপগুলোসহ ভেতরের পাহাড়ি ট্রেইলগুলোকে অত্যন্ত পিচ্ছিল করে রাখে। কাদা ও ভেজা শিলাগুলোতে যে কোনো মুহূর্তে পা পিছলে যেতে পারে। খুব কম হলেও পায়ের এখানে সেখানে শিলার ধারালো জায়গাগুলোতে লেগে জখম হতে পারে। এছাড়াও বৃষ্টির জমে থাকা পানি পাহাড়ি মাটির গঠনকে দুর্বল করে পাহাড়-ধস ঘটায়। এসব ভূমিধ্বস আকস্মিকভাবে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকি প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই ধসের নিচে পড়ার মতো মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
আকস্মিক বন্যা
অতি বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলা নদী এবং ছোট খালগুলো ভরে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে। এই আকস্মিক বন্যা ট্রেইলসহ সামনে পড়া সেতু এবং ক্যাম্পসাইটগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ভেসে যাওয়ার সময় প্রবাহিত পানির চাপে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা পাথর বা ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে। এর ফলে ট্রেকারদের ভয়ানক জখম হওয়াসহ মৃত্যুর হুমকি সৃষ্টি হয়।
ভারী বর্ষণে পথ খুঁজে পেতে সমস্যা
মুষলধারে বৃষ্টিতে এমনিতেই চারপাশের দৃশ্য আবছা হয়ে যায়। সেখানে ভারী বর্ষণে সর্পিলাকার ঝিরিপথ বা খালের সংকীর্ণ ধারাগুলো একেবারে অস্পষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার নিরাপদ ট্রেইলের সাইনবোর্ডগুলো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি স্থানীয়রাও প্রায় ক্ষেত্রে অতি বৃষ্টির সময় বিড়ম্বনায় পড়ে যান। আর এই ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে জোর করে পথ চলা মানেই দিকভ্রান্ত হয়ে বিপজ্জনক রাস্তায় চলে যাওয়া।
ক্ষতিকর বন্যপ্রাণী
ভারী বৃষ্টিপাতের সময় মানুষের মতো বন্যপ্রাণীরাও বন্যা থেকে বাঁচতে আশ্রয় খুঁজে। এ সময় বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড়ের মতো নানা ধরনের ক্ষতিকর বাস্তুচ্যুত বন্যপ্রাণী সামনে পড়তে পারে। চারপাশ পানিতে টইটম্বুর থাকার মুহূর্তে এগুলোকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এসময় অতর্কিতে এগুলোর যেকোনোটির ওপর একবার পা পড়া মানেই কামড় খাওয়া। এই বিষাক্ত আক্রমণে থাকে দ্রুত সংক্রমণের ভয়। আর প্লাবিত অবস্থায় এমন সংক্রমণে মাথা ঠান্ডা রেখে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার কথা ভাবা দুস্কর হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ: বাংলার দার্জিলিং যাওয়ার উপায় ও খরচের বৃত্তান্ত
অ্যাকিউট মাউন্টেন সিক্নেস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা
হাইট সিক্নেস, পোকামাকড় বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের তীব্র অ্যালার্জির মতো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকা ব্যক্তিদের পর্বতারোহণ এড়িয়ে চলা উত্তম। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়ে পাহাড়ি অঞ্চলে তীব্র মাউন্টেন সিক্নেসে আক্রান্তদের মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। অবিলম্বে এর চিকিৎসা না করা হলে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র অবস্থা তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকা ব্যক্তিদের প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।
৫৩৯ দিন আগে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট: ঘুরে আসুন বাংলাদেশের বৃহত্তম আমবাজার
সহায়ক আবহাওয়া ও উর্বর মাটির সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদ হয় সুস্বাদু ফল আমের। বিশেষত রাজশাহী বিভাগের নামটি সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে আছে সুমিষ্ট এই ফলটির সঙ্গে। তবে আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে দেশজুড়ে আমের সর্ববৃহৎ যোগান দাতা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই জেলারই কানসাট নামের ইউনিয়নটিতে বসে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমের বাজার। তাই আমের মৌসুমে ভ্রমণ করার জন্য এটিই সব থেকে উৎকৃষ্ট গন্তব্য। চলুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে ভ্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
কানসাটের নামকরণ
আগে এই অঞ্চলটির নাম ছিল কংসহট্ট। এখানকার রাজবাড়িটিকে স্থানীয়রা বলতো কুঁজো রাজার বাড়ি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই কংসহট্ট কালের বিবর্তনে বদলে বর্তমান কানসাট নাম পেয়েছে। বর্তমানে শিবগঞ্জে আগত পর্যটকরা যে কানসাট রাজবাড়িটি পরিদর্শনে যান, এটি মূলত সেই কুঁজো রাজার বাড়ি।
কানসাটের বিশেষত্ব
দেশের সর্ববৃহৎ আমের বাজারটি বসে এই কানসাটে। শুধু বাংলাদেশের বৃহত্তম বাজারই নয়, কানসাট গোটা এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আম বাজার। ছোট-বড়-মাঝারি সব মিলিয়ে এখানে প্রায় আড়াইশ’ আড়তে দিনভর চলে আমের বিকিকিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তদাররা আম কিনতে এখানে চলে আসেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এই হাট। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যত্র অনেকগুলো আমের হাট থাকলেও পাইকারি বাজারের জন্য কানসাটই সবচেয়ে বড় ও প্রসিদ্ধ।
আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন একশ’রও বেশি ট্রাক এখান থেকে আমভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে রওনা হয়। শুধু এই কানসাটেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার আম বেচা-কেনা হয়।
আরও একটি কারণে কানসাটের খ্যাতি রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে মিষ্টি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মালদহে একটি নামকড়া মিষ্টি রয়েছে এই স্থানের নামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো মালদহও আমের জন্য বিখ্যাত। আর আমের পরেই জেলার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত খাবার হচ্ছে কানসাট মিষ্টি।
ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টির কারিগর হচ্ছেন মহেন্দ্রনাথ সাহা, যিনি মূলত বাংলাদেশের শিবগঞ্জ জেলার কানসাটের এলাকার মানুষ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে শত শত মিষ্টি কারিগর পাড়ি জমিয়েছিলেন মালদহের উদ্দেশে। সে সময় অন্যান্যদের মতো মহেন্দ্রনাথের ছেলে বিজয় কুমার সাহাও মালদহে চলে যান। এরপর বাবার শেখানো রন্ধন কৌশল কাজে লাগিয়ে সেখানে তিনি কানসাট বানানো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের বাকলাই জলপ্রপাত ভ্রমণ: বাংলাদেশের অন্যতম সুউচ্চ ঝর্ণায় যাবার উপায় ও খরচ
সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কানসাটের মিষ্টি স্বাদ। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিজয় কুমারের ২ ছেলে জয়দেব সাহা ও বিশ্বজিৎ সাহা। ভারতের অন্যত্র এই মিষ্টি বানানো হলেও এদের কানসাটের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি।
৫৪০ দিন আগে
দৃকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রেস ফটো প্রদর্শনী ২০২৪
বাংলাদেশের সম্মুখ সারিতে কর্মরত আলোকচিত্র সাংবাদিকদের অর্জনকে উদযাপন এবং সম্মান জানাতে দৃক পিকচার লাইব্রেরি কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ প্রেস ফটো প্রদর্শনী ২০২৪ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকাস্থ দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করা হয়।
এবারের প্রদর্শনীতে ২০২২ সাল থেকে দৃকের ধারাবাহিক আয়োজন বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্টের (বিপিপিসি) ৩য় সংস্করণে নির্বাচিত ৩০টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
এ বছর ১৬ এপ্রিল ছবি আহ্বানের মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগিতাটি উন্মুক্ত করা হয়। এতে আলোকচিত্র সাংবাদিকরা ২০২৩ সালে তোলা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রায় ১ হাজারের বেশি ছবি জমা দেন।
আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিপিসি ২০২৪ এর অন্যতম বিচারক এবং দৃক পিকচার লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার কোনো প্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় আমার জানামতে গণমুখী সাংবাদিকতার ক্যাটাগরি নেই। মিডিয়ার মালিকানাসহ নানা কারণে তারকা বা প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ দলীয় প্রচারেই মিডিয়ার কাজ সীমাবদ্ধ থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের প্রদর্শিত ছবিগুলোর আলোকচিত্রীরা নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকেই এই কাজগুলো করেছে। তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করে বাংলাদেশের আলোকচিত্র আজ অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছে।’
প্রতিযোগিতার অন্য বিচারক ছিলেন- অমল আকাশ, শিল্পী, গায়ক, আন্দোলনকর্মী, সমগীত; মনিরুল আলম, আলোকচিত্র সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ইপিএ; শোয়েব ফারুকী, আলোকচিত্রী, শিক্ষাবিদ, ফটোব্যাংক গ্যালারি এবং তাসমিমা হোসেন, সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক।
আরও পড়ুন: ‘রেজ অ্যান্ড হোপ’: দৃকে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপিত
এবারে বর্ষসেরা আলোকচিত্র ২০২৩ বিজয়ী হয়েছেন ফোকাস বাংলার কুদ্দুস আলম এবং তিনি পুরস্কার পেয়েছেন ১ লাখ টাকা।
একই সঙ্গে ৩টি বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন আরও ৬ আলোকচিত্রী। বিভাগ বিজয়ীরা হচ্ছেন-
শিল্প, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া: কাজী গোলাম কুদ্দুস হেলাল, এফআইএপি এবং বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন পিয়াস বিশ্বাস, নিউজবাংলা২৪.কম।
রাজনীতি: নায়েম আলী, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এবং বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন মো. সাজিদ হোসাইন, দৈনিক প্রথম আলো।
জনমুখী সাংবাদিকতা: আবদুল গনি, দৈনিক ইত্তেফাক এবং বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন সৈয়দ মাহমুদুর রহমান, দৈনিক বাংলা।
প্রতিটি বিভাগ থেকে একজন বিজয়ী ও একজন বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার বিজয়ী পেয়েছেন যথাক্রমে ৫০ হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি তারা প্রত্যেকে পেয়েছেন সম্মাননা স্মারক ও সনদ।
দৃক ২০২৩ সাল থেকে আলোকচিত্র সাংবাদিকতায় প্রান্তিক গোষ্ঠীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য 'আদিবাসী জনগোষ্ঠী গ্র্যান্ট' প্রবর্তন করেছে। এ বছর এই গ্র্যান্টটি জিতেছেন আদিবাসী আলোকচিত্রী ডেনিম চাকমা, যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।
এবারের প্রদর্শনীতে ২০২৩ সালের প্রথম অনুদান বিজয়ী পদ্মিনী চাকমার কিছু বাছাইকৃত ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রদর্শনীটি ২৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন: ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’ নিয়ে দৃক গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী
৫৪১ দিন আগে
স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য যেসব খাবার উপকারী
একাডেমিক পড়াশোনা, গবেষণাধর্মী কাজ ও কর্মজীবনের উন্নতির জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি আরও একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে স্মরণশক্তি। প্রতিটি মানুষেরই স্বাভাবিক বিকাশের পরিচয় বহন করে এই শক্তি। শুধু তাই নয়, নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনে এর তুলনামূলক উপস্থিতির ভিত্তিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে বিশেষত্ব সৃষ্টি হয়। চর্চা বা সাধনার পাশাপাশি এই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কিছু পুষ্টিকর খাবার। সময়মতো সুফল পেতে এই খাবারগুলোতে শৈশব থেকেই অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। চলুন, স্মৃতিশক্তি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সেরা খাবারগুলোর তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে উপকারী ১০টি খাবার
হলুদ
যে কোনো রান্নায় বহুল ব্যবহৃত এই উপকরণে রয়েছে পুষ্টি উপাদান কারকিউমিন। এটি মূলত এক ধরনের যৌগ, যার মধ্যে আছে উৎকৃষ্ট প্রদাহ-বিরোধী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণে কাজে লাগে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় ও স্মৃতিশক্তি হারানোর ঝুঁকি হ্রাস করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে যাবতীয় বাধা অতিক্রম করে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলোকে সতেজ রাখে। এভাবে তরকারিতে নিয়মিত হলুদ ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। এটি আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ (স্মৃতিশক্তির পর্যায়ক্রমিক অবনতি) রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।
আরও পড়ুন: নিরাপদে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ১০টি উপায়
চর্বিযুক্ত মাছ
মলা, ঢ্যালা, আইলা, টুনা, সরপুটির মতো সামুদ্রিক মাছগুলো যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এই অপরিহার্য চর্বিগুলো মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওমেগা -৩ স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় ও মস্তিষ্কের কোষগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখে।
এই পুষ্টি উপাদান কোষগুলোর কাঠামোগত অখণ্ডতায়ও অবদান রাখে। নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া মস্তিষ্ক জনিত যাবতীয় সমস্যা রোধ করে সামগ্রিক মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য-উপাদানের একটি বৃহৎ অংশের যোগান দেয়। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ভারী খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ রাখা উচিৎ।
পালং শাক
ঘন পাতাযুক্ত এই সবুজ শাক ভিটামিন কে, ই, ও ফোলেট সমৃদ্ধ। ভিটামিন কে স্ফিংগোলিপিড গঠনে সহায়তা করে, যেটি মূলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ গঠন ও কোষের সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন-ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
আর ফোলেট জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোতে সাহায্য করে, যার কারণে বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের সাধারণ অবনতির ঝুঁকি কমে। নিয়মিত পালং শাক খাওয়া মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায় এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের বিরুদ্ধে মস্তিষ্ককে রীতিমতো দুর্গ বানিয়ে তোলে। প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত এক বেলা পালং শাক রাখা হলে দীর্ঘ মেয়াদে কাঙ্ক্ষিত জ্ঞানীয় সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
বাদাম
আখরোট, কাজু বাদাম, এমনকি চিনাবাদাম শুধু মস্তিষ্কের জন্যই নয়; সমস্ত দেহের জন্য বেশ উপকারী। এই বাদামগুলো ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মস্তিষ্ক-সহায়ক উপাদানে ভরপুর। ভিটামিন-ই মস্তিষ্কের কোষের অম্লতা-জনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর চর্বি মস্তিষ্কের ভেতরে কোষের গঠনে অংশ নেয় এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতায় সাহায্য করে। বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে, যা জ্ঞানীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সরাসরি অংশ নেয়। বাদাম স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি দারুণ সংযোজন হতে পারে। স্ন্যাক্স হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম নিত্যদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট। বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে এগুলোকে আরও মুখরোচক করে তোলা যায়।
আরও পড়ুন: মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম কেন এত দামি
গাজর
বিটা-ক্যারোটিনের এই চমৎকার উৎসটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। বিটা-ক্যারোটিন মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই স্ট্রেসের কারণে জ্ঞানীয় কার্যক্রমগুলোর ধীরে ধীরে অবনতি হয়। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কের যোগাযোগ সমুন্নত রাখে।
গাজরে থাকা ভিটামিন সি ফ্রি-র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে। বার্ধক্য-জনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত গাজর খাওয়া যেতে পারে। সালাদ, জুস, এমনকি রান্না করা খাবারের মাধ্যমেও গাজর অন্তর্ভুক্ত করা যায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়।
মুরগির ডিম
এই বহুমুখী ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারটি কোলিন ও ভিটামিন বি-১২ সহ একটি সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। কোলিন হলো অ্যাসিটাইলকোলিনের প্রধান উপাদান, যেটি স্মৃতি ধরে রাখা ও কোনো কিছু শিখতে সাহায্য করে। যে কোনো বয়সেই জ্ঞানীয় কার্যকারিতা অক্ষুন্ন রাখতে ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস রোধ করার জন্য পর্যাপ্ত কোলিন গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
ভিটামিন বি-১২ স্নায়বিক অংশগুলোর অখণ্ডতা বজায় রেখে মস্তিষ্ককে অটুট রাখে। এটি স্নায়ু তন্তুর সুরক্ষা এবং কোষগুলোর মাঝে পারস্পরিক যোগাযোগ নিশ্চিত করে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন মুরগির ডিম খাওয়া আবশ্যক। শুধু সকালের নাস্তাতেই নয়, অন্যান্য তরকারির সঙ্গে ডিমের অতিরিক্ত সংযোজন খাবারটিকে বেশ উপাদেয় করে তোলে। এছাড়া শুধু সিদ্ধ ডিমও প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কুমড়োর বীজ
পুষ্টির পাশাপাশি সুস্বাদু সবজিগুলোর মধ্যে চালকুমড়ো অন্যতম। এর বীজে আছে ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপে অংশ নিয়ে কোনো কিছু শেখা এবং স্মৃতি ধারণ প্রক্রিয়া চালু রাখে। এটি নিউরোট্রান্সমিটার সিগন্যালিং নিয়ন্ত্রণ তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন করতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক নিউরোপ্রোটেকশনে অবদান রাখে, যা যে কোনো পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য জরুরি।
কুমড়োর বীজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে দূরে রাখে। তাই স্মৃতিভ্রষ্ট থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত এই বীজ খাওয়া আবশ্যক। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে জুড়ে নিমেষেই এটি উপাদেয় মিশ্রণ তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
মসুর ডাল
ফোলেট, আয়রন ও ফাইবারে ভরপুর এই সহজলভ্য খাবারটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। সেরোটোনিন, ডোপামিন ও নোরপাইনফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার সংশ্লেষণের কাজ করে ফোলেট। এর মাধ্যমে মেজাজ, স্মৃতিশক্তি ও যাবতীয় জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে।
পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ স্মৃতিভ্রষ্ট সম্পর্কিত নানা ধরণের রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। অন্যদিকে আয়রনের কাজ হলো মস্তিষ্কে অক্সিজেন পরিবহন করে জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া চালু রাখা।
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যাবলির জন্য মস্তিষ্কের পাশাপাশি দেহের অন্যান্য অংশও ঠিক থাকা জরুরি। বিশেষ করে অন্ত্র সুস্থ থাকলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় রসদ থেকে বঞ্চিত হয় না। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করে ফাইবার।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ফুলকপি
ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ফুলকপি। ভিটামিন কে-এর কাজ মস্তিষ্কের কোষ গঠনে দরকারি উপাদান সরবরাহ করা। সালফোরাফেনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। ফুলকপিতে থাকা যৌগগুলো জ্ঞানীয় কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্মরণশক্তি উন্নয়নে সহায়ক। বার্ধক্যে স্মরণশক্তির অবনতি থেকে বাঁচতে কম বয়স থেকেই ফুলকপির খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। রান্না ছাড়াও সালাদে বা সাইড ডিশ হিসেবে ফুলকপি একটি উযুক্ত খাবার।
কমলা
নানা ধরনের সতেজ ফলের মধ্যে স্মরণশক্তির জন্য সহায়ক ফল হলো কমলা। বাদাম ও গাজরের মতো এটিও মস্তিষ্ককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে, কেননা এতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সহায়তা করে, যা সঠিক মানসিক অবস্থার জন্য দরকার।
এছাড়া কোলাজেন সংশ্লেষণেও এটি একটি আবশ্যিক উপাদান, কারণ এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষ ও রক্তনালীগুলোর গঠন বজায় থাকে। প্রতিদিন অন্তত একটি পুরো কমলা খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতাকে উন্নত রাখার সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
তাছাড়া বয়সের সঙ্গে জ্ঞানীয় অবনতির ঝুঁকি কমাতেও এই অনুশীলন আবশ্যক। সরাসরি ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি কমলার তাজা জুস একটি জনপ্রিয় কোমল পানীয়।
পরিশিষ্ট
এই ১০টি পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে। হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে কমলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি খাবারেই রয়েছে অনন্য পুষ্টিগুণ। পুরো সপ্তাহের খাদ্যাভাসে এই খাবারগুলোকে যুক্ত করার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে যে কোনো কাজের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তরোত্তর অনুশীলনও চালিয়ে যেতে হবে যুগপৎভাবে। এরই দৌলতে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত যে কোনো প্রতিযোগিতায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
৫৪৫ দিন আগে