জীবনধারা
ওমেগা-৩ ডিম কি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি?
দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ, অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি এমনকি মানসিক সুস্থতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। শরীরের অভ্যন্তরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নানাবিধ কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উপযুক্ত খাবার। পাশপাশি প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজে শরীরকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য প্রত্যেকেরই আলাদা নজর থাকে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি। তাই সঙ্গত কারণেই বিগত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে ওমেগা-৩ ডিম নিয়ে গুঞ্জনটা। ডিমের বাজারে ব্যাপক হারে উপস্থিতির কারণে এটি সাধারণ ডিমের বিকল্প হিসেবেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। চলুন, ওমেগা-৩ ডিম আসলেই স্বাস্থ্যসম্মতো কি না তা যাচাই করে নেওয়া যাক।
ওমেগা-৩ কী
পিইউএফএ (পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড) এর যতগুলো ধরন রয়েছে সবগুলো একটি নির্দিষ্ট পুষ্টিগ্রুপের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ গ্রুপটির মাধ্যমে সরাসরি বোঝানো হয় পিইউএফএকে। আর এই পুষ্টিগ্রুপের নাম ওমেগা-৩, যেটি মূলত মাছের তেল এবং অন্যান্য খাদ্য উৎসে পাওয়া যায়। অবশ্য অনেকেই মাছের তেল ও ওমেগা-৩ কে একই জিনিস ভেবে থাকেন। কিন্তু ওমেগা-৩ একটি পুষ্টি উপাদান, আর মাছের তেল হচ্ছে সেই পুষ্টির অনেক উৎসের মধ্যে একটি।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো ৩ ধরনের। আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ), আইকোস্যা-পেন্টিনোয়িক অ্যাসিড (ইপিএ) এবং ডোকোস্যা-হেক্সিনোইক অ্যাসিড (ডিএইচএ)। এগুলোর মধ্যে ইপিএ এবং ডিএইচএ প্রধানত প্রাণিজ খাবার বিশেষত সামুদ্রিক খাবারে (প্রধানত মাছ) পাওয়া যায়। আর এএলএ’র সর্বোত্তম উৎস হলো উদ্ভিদজাত খাবার, যেমন আখরোট, তিসির বীজ, সয়াবিন এবং ক্যানোলার তেল।
আরও পড়ুন: নিরাপদ ব্রয়লার মুরগি কী, কেন খাবেন
ওমেগা-৩ ডিম বৃত্তান্ত
যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া মুরগি যে ডিম দেয়, সেগুলোই মূলত ওমেগা-৩ ডিম নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে মুরগি পালনের সময় এদের খাদ্য তালিকায় তিসির বীজ অথবা মাছের তেল মেশানো হয়। মুরগির বেশি বেশি ওমেগা-৩ গ্রহণ করার ফলে তাদের টিস্যুগুলোতে এই ফ্যাটি অ্যাসিডের কার্যকারিতা শুরু হয়। তিসির বীজ হজমের সময় এতে থাকা এএলএ এবং ডিএইচএ উভয় ফ্যাটি অ্যাসিড ডিমের কুসুমে গঠনে অংশ নেয়। ফলস্বরূপ ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম তৈরি হয়।
ওমেগা-৩ মুরগির ডিম স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি
স্বাস্থ্যকর কোষ ঝিল্লি
মানবদেহের প্রতিটি কোষ প্রধানত ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ কোষ ঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত। এই ঝিল্লি দিয়ে কোষে সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রবেশ করতে পারে এবং একই সঙ্গে কোষ থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো দ্রুত বেরিয়ে যায়। এই কাজগুলোর সুষ্ঠু সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন হয় কোষ ঝিল্লির অখণ্ডতা এবং তারল্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতিতে কোষগুলো পানি এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। সেই সঙ্গে এগুলো অন্যান্য কোষের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। কোষ ঝিল্লিকে কার্যকরভাবে তার সর্বোত্তম অবস্থায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ওমেগা-৩।
আরও পড়ুন: গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন যেসব স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
ত্বকের সুরক্ষা
মানব ত্বক একটি বেষ্টনি দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, যেটি ত্বকের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ এবং এপিডার্মিসের ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে। যথেষ্ট পরিমাণে ওমেগা-৩ গ্রহণ এই বেষ্টনিকে আরও মজবুত করতে পারে। সেই সঙ্গে এটি ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির যোগান নিশ্চিত করে।
এছাড়া ত্বকের বেষ্টনিতে কোটি কোটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এগুলো বাইরে থেকে আগত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ত্বকের ভেতরে প্রবেশের আগেই ধ্বংস করে ফেলে। একটি ত্বকে ওমেগা-৩-এর পরিমাণ যত বেশি হয়, আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর বিরুদ্ধে এটি তত শক্তিশালী হয়।
হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস
ওমেগা-৩ এর গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড এএলএ হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে ‘প্ল্যাক’ কমায়। ধমনী প্ল্যাক হলো ধমনীর আভ্যন্তরীণ আস্তরণে এক ধরনের জমাট, যেটি সৃষ্টি হয় কোলেস্টেরল, চর্বি বা কোষীয় বর্জ্য পণ্যের মতো পদার্থের মাধ্যমে। এই জমাট বাধার কারণে ধমনী সরু এবং শক্ত হয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। প্ল্যাক ফেটে গেলে টিস্যুগুলোতে রক্ত না পৌঁছানোর কারণে সেগুলোতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে করে চূড়ান্ত অবস্থায় টিস্যুগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং হার্ট-অ্যাটক ও স্ট্রোকের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: চিনির কিছু স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প
টানা ৬ বছর ধরে এএলএ উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫৯ শতাংশ কমে যায়। প্রতিদিন ১ থেকে ১ দশমিক ২ গ্রাম করে এএলএ গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এতে করে হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকি ২০ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। এটি সুস্থ ব্যক্তির হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ডিম ও ফ্যাটি অ্যাসিডের স্বাস্থ্যকর সমন্বয়
সাধারণ ডিমের পুষ্টিগুণ
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ হোক বা না হোক, ডিম একাই প্রোটিন, ভিটামিন ডি, আয়রন এবং বি-১২ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে ভরপুর।
ডিমে থাকে কোলিন, যা মানবদেহের সুস্থ কোষঝিল্লি, মানসিক কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজন। এছাড়া এই কোলিন শরীরে হোমোসিস্টাইনের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন সংশ্লেষণ ও বিপাক ব্যাহত করার পাশাপাশি হোমোসিস্টাইন কোষের বিভিন্ন কার্যকারিতা বিশেষ করে ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ডিমে থাকা সেলেনিয়াম নামক খনিজটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য দরকার।
ভিটামিন বি এর পাওয়ার হাউজ হচ্ছে ডিম। এর মৌলিক উপাদান ফোলেট এবং রাইবোফ্ল্যাভিন শরীরের জন্য দরকারি খাবারগুলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। ফোলেট হোমোসিস্টাইনের মাত্রা কমাতে এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে অংশ নেয়।
এছাড়া ডিম ভিটামিন এ ও ই এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন এ রাতের দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা, কোষের সাধারণ বৃদ্ধি এবং ত্বকের সুস্থতায় কাজ করে। ভিটামিন এ এর সঙ্গে সম্পর্কিত দুটি উপাদান লুটেইন এবং জিয়াজান্থিন, যেগুলো পাওয়া যায় ডিমের কুসুমের হলুদ রঞ্জক পদার্থে। এগুলো চোখের রেটিনায় ম্যাকুলার অবক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে। ম্যাকুলার অবক্ষয় বার্ধক্যের সময় স্থায়ী ভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়।
আরও পড়ুন: কাঁসা, পিতল ও তামার তৈজসপত্র ব্যবহার কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত, বিজ্ঞান কী বলে?
ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ভিটামিন সি এবং সেলেনিয়ামের সঙ্গে মিলে শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেল মুক্ত করে। ফ্রি-র্যাডিকেলের কারণে প্রদাহ জনিত রোগ এবং টিস্যুর ক্ষয় হয়ে থাকে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিমের পুষ্টিগুণ
একটি ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিমে ৬০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে পারে, যা সাধারণ ডিমের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। এই ডিমগুলো সাধারণ ডিমের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সামান্য কম কোলেস্টেরল প্রদান করে। ওমেগা-৩-এর কার্ডিও-প্রতিরক্ষামূলক প্রভাবের কারণে এই ডিমগুলো উচ্চ কোলেস্টেরল থাকা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বেশ উপকারী।
এছাড়া ইপিএ এবং ডিএইচএ বিভিন্ন খাবার উৎসে পাওয়া যায়। কিন্তু এএলএ’র সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য উৎস হচ্ছে ডিমের কুসুম। তাই এএলএ’র উপরোক্ত উপযোগিতাগুলো পেতে হলে ওমেগা-৩ ডিম খেতে হবে।
আরও পড়ুন: শহরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলার সেরা কয়েকটি বিকল্প
শেষাংশ
ওমেগা-৩ এর এএলএ (আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড) পুষ্টি উপাদানের স্বাস্থ্যগুণের বিচারে ওমেগা-৩ মুরগির ডিম নিঃসন্দেহে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। বিশেষ করে ওমেগা-৩ এর অন্যান্য উৎসগুলোর তুলনায় ডিম সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার সব থেকে পরিচিত এবং উপাদেয় এই খাবারটি বাড়ন্ত বয়স থেকে শুরু করে সব বয়সেই প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। সেখানে ৫ গুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি বিকল্প দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে আরও বেশি সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁ-শপিং মলে প্রবেশের আগে যে বিষয়গুলোতে সাবধান থাকা জরুরি
৫৭৬ দিন আগে
এভারেস্টজয়ী ৬ বাংলাদেশি: লাল-সবুজের পতাকা হাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের অনুপ্রেরণা
৮ হাজার ৮৪৮ দশমিক ৮৬ মিটার উচ্চতার অতিকায় এভারেস্ট বিজয় হাজারও পর্বতারোহীর চিরঞ্জীব অভিলাষ। মৃত্যুঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই বিন্দুতে নিজেকে আবিষ্কারের নেশা যেন কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়ার নয়। আর তাই দুঃসাহসিক সব অভিযানের সাক্ষী হয়ে আছে চীন ও নেপালের সীমান্তবর্তী এই সামিট পয়েন্টটি। কখনও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে নেপাল হয়ে কিংবা উত্তর দিক থেকে তিব্বত হয়ে। দুটো পথেই অভিযাত্রী দলের চূড়ান্ত গন্তব্য হিমালয়ের মহালাঙ্গুর হিমাল সাব-রেঞ্জ।
হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো এই শিখরটি বাংলাদেশিদের জন্য একদমি নতুন নয়। এ নিয়ে মোট ৬বার এভারেস্ট চূড়া দেখেছে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। সেই পতাকাবাহীদের নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, এভারেস্টজয়ী ৬ বাংলাদেশিদের নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
যে ৬ বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছেন
মুসা ইব্রাহীম
মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণকারী প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক মুসা ইব্রাহীম। তিনি ২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশ সময় ৫ টা ৫ মিনিটে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখেন। এই অভিযানে তিনি ব্যবহার করেছিলেন তিব্বতের দিকে উত্তর আলপাইন রুটটি। বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে পৃথিবীর শীর্ষবিন্দুতে তিনি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর থেকে ৬৭-তম দেশ হিসেবে এভারেস্ট জয়ী দেশগুলোর তালিকায় নিজের অবস্থান করে নেয় বাংলাদেশ। অভিযানে মুসার সহযাত্রীরা ছিলেন ছয়জন ব্রিটিশ, তিনজন মন্টিনিগ্রো, একজন আমেরিকান এবং একজন সার্বিয়ান। চায়না তিব্বত পর্বতারোহণ সমিতি মুসার আরোহণকে প্রত্যয়িত করে।
আরও পড়ুন: এবার এভারেস্ট জয় করলেন চট্টগ্রামের বাবর
মুসা ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গন্ধমারুয়া (বসিন্তরী) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি অনার্স এবং মাস্টার্স করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মুসা নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক। তিনি পর্বতারোহণসহ দুঃসাহসিক নানা কার্যকলাপে যুবকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের জন্য ২০১১ সালে তিনি এভারেস্ট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।
মোহাম্মদ আবদুল মুহিত
২০১১ সালের ২১ মে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেন মোহাম্মদ আবদুল মুহিত। এর আগের বছর মুসা ইব্রাহীমের পাশাপাশি তিনিও এভারেস্ট জয়ের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেবার তার ভাগ্য সহায় হয়নি। কিন্তু এতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরের বছর বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের একজন সদস্য হয়ে আবারও নেমে পড়েন এভারেস্ট জয়ের যাত্রায়। ২০১১ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে তিনি শুরু করেন তার অভিযান এবং এইবার তিনি পৌঁছাতে পারেন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। খবরটি ঢাকায় অবস্থিত নেপাল দূতাবাসের মাধ্যমে নিশ্চিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচারণা বিভাগ। এরপর ২০১২ সালের ১৯ মে নেপাল তথা দক্ষিণ দিক দিয়ে আরও একবার এভারেস্ট জয় করেন মুহিত।
মুহিতের জন্ম ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুরে। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি নেন। মুহিত ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
আরও পড়ুন: রেকর্ড ভেঙে ১০ বার এভারেস্ট চূড়ায় লাকপা শেরপা
২০০৪ সালে কালাপাথর ট্রেকিং ও এভারেস্ট বেস ক্যাম্পয়ে অংশ নেন মুহিত। অতঃপর ভারতের দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক ও উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
২০০৯ সালে বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের মধ্যে তিনি প্রথমবারের মতো জয় করেন বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘চো ওয়ো’, যার উচ্চতা ৮ হাজার ২০১ মিটার।
নিশাত মজুমদার
বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী নারী নিশাত মজুমদার। তার সহযাত্রী ছিল লাকপা, পেম্বা দোর্জে, মিংমা নামের তিন শেরপা এবং মোহাম্মদ আব্দুল মুহিতের পরিচালিত একটি বড় দল। এই পুরো দলকে সঙ্গে নিয়েই তিনি ২০১২ সালের ১৯ মে’তে পাহাড়ের উত্তর দিকে পৌঁছান।
নিশাতের জন্ম ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জে। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
নিশাতের এভারেস্টে ওঠার নেপথ্যে ছিল তার প্রায় দশ বছরের প্রস্তুতি। ২০০৩ সালের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবে (বিএমটিসি) যোগ দেন। এই সংগঠনের সুবাদেই পরবর্তীতে একের পর এক অভিযানে অংশ নেন তিনি।
আরও পড়ুন: তাজিংডং ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও খরচ
২০০৭ সালে নিশাত প্রশিক্ষণ নেন ভারতের দার্জিলিং মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব থেকে। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০৮ সালে আরোহণ করেন হিমালয়ের ‘সিঙ্গু চুলি’তে।
২০২০ সালের ১১ জানুয়ারী নিশাত বঙ্গবন্ধু জাতীয় আ্যডভেঞ্চার উৎসব, ২০২০-এ বঙ্গবন্ধু আ্যডভেঞ্চার সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৮ সালে তিনি ভূষিত হন অনন্যা শীর্ষ দশের একজন হিসেবে।
অনন্যা শীর্ষ দশের মূল উদ্দেশ্য বিভিন্ন অঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের নারীদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া।
ওয়াসফিয়া নাজরীন
নিশাত মজুমদারের এভারেস্টের উত্তর প্রান্তে পৌঁছানোর ঠিক ৬ দিন পর নেপালের দিক দিয়ে স্বাধীনভাবে চূড়ায় পৌঁছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। এটি ছিল তার ৭টি মহাদেশের ৭টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের অভিযান ‘সেভেন সামিট’ এর একটি। ২০১৫ সালে প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি এই সেভেন সামিট শেষ করেন। ওয়াসফিয়া একই সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্টজয়ী নারী। তার চূড়ায় আরোহণের সময়টি ছিল ২০১২ সালের ২৬ মে সকাল পৌঁনে ৭টা। এছাড়া ২০২২ সালের ২২ জুলাই তিনি প্রথম বাঙালি এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কে২ জয় করেন।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় ভ্রমণ: বাংলার দার্জিলিং যাওয়ার উপায় ও খরচের বৃত্তান্ত
৫৮৭ দিন আগে
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সাগরের উন্মত্ত জলরাশির স্পন্দনের সাথে একাত্মতা হওয়ার উচ্ছাস আর বালুকাবেলায় রোদ্দুরের সোনালী আলিঙ্গন। এর আরেক নাম সমুদ্র বিলাসী অভিলাষ, যা সযত্নে লালন করে চলে প্রতিটি সৈকতপ্রেমী। কেবল ফিসফিস করে অসীম দিগন্তের সূর্যের শেষ বিন্দু দেখার প্রশান্তি নয়, এখানে আছে অনন্তে হারিয়ে যাওয়ার আধ্যাত্মিকতা। এরই প্রাচুর্য ধরে রাখে পর্বত শিখরের মহান মন্দিরগুলো। এই ঐশ্বর্য্যের পসরা ছড়িয়ে থাকা বসতিগুলো যেন প্রত্যহ গেয়ে যায় জীবনের গান। এ গানের সঙ্গে ঐকতানে বাজে সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের সুর। নৈসর্গিক কার্নিভালের এমন আয়োজনের দেখা মেলে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে। পর্যটনের জমজমাট বিপণীতে এখনো নিজের সপ্রতিভ উপস্থিতি ঘোষণা করে দ্বীপের আদিম পটভূমি। চলুন, দ্বীপাঞ্চলটির দর্শনীয় স্থানগুলোর পাশাপাশি জেনে নেওয়া যাক দ্বীপের যাবতীয় ভ্রমণবৃত্তান্ত।
বালি দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
ইন্দোনেশিয়ার বালি প্রদেশের এই দ্বীপটি জাভা থেকে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পূর্বে এবং বিষুব রেখা থেকে প্রায় ৮ ডিগ্রি দক্ষিণে অবস্থিত। জাভা ও এই দ্বীপের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বালি প্রণালী। দ্বীপটির বিস্তৃতি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১১২ কিলোমিটার। প্রশাসনিকভাবে ৫ হাজার ৭৮০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য্যমন্ডিত এই দ্বীপ।
‘বালি’ নামকরণের ইতিহাস
রাজা শ্রী কেশরী ওয়ারমাদেওয়া ৯১৩ সালে এই দ্বীপের নাম দিয়েছিলেন ‘বালি’। এটি মুলত সংস্কৃত শব্দ বলি থেকে এসেছে যার অর্থ ত্যাগ, পুনর্জন্ম বা উৎসর্গ। এই শব্দটি এই অঞ্চলে আবিষ্কৃত বিভিন্ন শিলালিপিতে পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে একটি দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল সানুরের ‘ওয়ালি দ্বীপা’ শব্দ খোদাইকৃত ব্লাঞ্জং স্তম্ভ। এই শিলালিপির কাজটি করা হয়েছিলো ৯১৪ সালে রাজা ওয়ারমাদেওয়ার শাসনামলে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন ভিসা পাওয়ার উপায়
বালি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার প্রথম শর্ত ইন্দোনেশিয়ার সিঙ্গেল বা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নেয়া। এই ভিসার আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন হবে, তা হলো-
ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সম্পূর্ণ পূরণকৃত ভিসা আবেদনপত্র (ফর্মটি পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে https://kemlu.go.id/download/)
ইন্দোনেশিয়ায় আগমনের তারিখে কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
বিগত ৬ মাসের মধ্যে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা একটি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সফ্ট কপি ১০০ থেকে ২০০ কিলোবাইটের জেপিইজি ফাইল হতে হবে
ফিরতি ট্রিপসহ ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার বিমান টিকেটের অনুলিপি
ভিসা ফি প্রদানের রশিদ
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ হিসেবে গত ৩ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২ হাজার মার্কিন ডলারের তহবিলের প্রমাণ। বাংলাদেশি টাকায় এই তহবিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৭ (১ মার্কিন ডলার = ১১৬ দশমিক ৪৯ বাংলাদেশি টাকা) টাকার সমতুল্য।
চিকিৎসা ব্যয় সঙ্কুলানের বিবৃতি পত্রসহ একটি ভ্রমণ বীমা
কোভিড-১৯ প্রোটোকল মেনে চলার বিবৃতি পত্র এবং টিকার সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়ার প্রমাণপত্র
আরও পড়ুন: আইসল্যান্ড ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভিসার মেয়াদ, ফি এবং আবেদন জমা
এই ভিসার মেয়াদ একক প্রবেশে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের জন্য বৈধ থাকে। ভিসার ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা। আবেদনের সমুদয় কাগজপত্র সহ ঢাকার ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস কাউন্টারে জমা করতে হবে।
সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আবেদন জমা নেয়া হয়।
ইমেইল ঠিকানার ([email protected]) মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যায়।
বালি দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতে বালি দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়। এই মৌসুমের ব্যাপ্তি এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত, তবে জুলাই ও আগস্টে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এ সময় হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে যাবতীয় ভ্রমণ পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে করতে হয়।
বালিতে আর্দ্র ঋতু থাকে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। ক্রিসমাস এবং নিউ ইয়ার ছাড়া বাকি সময়গুলোতে এখানে পরিব্রাজকদের চাপটা কম থাকে। তাই নিরিবিলিতে সমুদ্র বিলাসে যেতে হলে এই মৌসুমটাই উত্তম।
আরও পড়ুন: মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
৫৮৭ দিন আগে
ভিয়েতনাম ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভ্রমণ নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে দিতে পারে স্বস্তি ও মুক্তি। এশিয়ার মধ্যে আছে এমন কিছু ভ্রমণ গন্তব্য আছে যা সাধ্যের মধ্যে আপনাকে দিতে পারে অনন্য এক অভিজ্ঞতা। পাহাড়, সমুদ্র আর ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক অপূব সমন্বয় ভিয়েতনাম। নিরাপদ ও সুন্দর এই দেশটিতে রয়েছে জনপ্রিয় সব দর্শনীয় স্থান। চলুন, এই ভ্রমণ নিবন্ধে ভিয়েতনাম ঘুরতে যাওয়ার উপায় এবং আনুষঙ্গিক খরচের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভিয়েতনামের ভৌগলিক অবস্থান
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ৩ লাখ ৩১ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি দেশ ভিয়েতনাম। এর উত্তরে চীন এবং পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়ার স্থল সীমানা। আর সামুদ্রিক সীমানা ভাগ হয়েছে থাইল্যান্ডের উপসাগরের মধ্যে দিয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যে দিয়ে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে।
ভিয়েতনামের নামকরণের ইতিহাস
সর্বপ্রথম ২য় শতাব্দীতে ‘ন্যানিউ’ বা ‘নাম ভিয়েত’ শব্দের নিদর্শন পাওয়া যায়, যেটি মূলত বর্তমান ‘ভিয়েতনাম’ শব্দেরই উল্টো রূপ। এর মধ্যে ‘ভিয়েত’ শব্দটি প্রাচীন মধ্য চীনা ভাষার, যা সর্বপ্রথম দেখা যায় একটি কুঠারে শিলালিপি আকারে। কুঠারটি ছিল ১ হাজার ২০০ খ্রিস্টপূর্বে শ্যাঙ রাজবংশের শেষ দিকে ওরাকল নামের বিশেষ হাড় এবং ব্রোঞ্জের অংশ।
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম এবং ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে নিচু ইয়াংজি অববাহিকার ইউ রাজ্য ও এর জনগণকে বোঝানো হতো ‘ইউ’ বা ‘ভিয়েত’ শব্দ দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয় দক্ষিণ চীন এবং উত্তর ভিয়েতনামের অ-চীনা জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
১৭ এবং ১৮ শতকের মাঝামাছি সময়ে শিক্ষিত ভিয়েতনামিরা নিজেদেরকে প্রকাশ করতো ‘নোই ভিয়েত’ (ভিয়েত জনগণ) বা ‘নোই নাম’ (দক্ষিণের জনগণ) বলে।
‘ভিয়েত’-এর পরে ‘নাম’ শব্দটির উপস্থাপন সর্বপ্রথম দেখা যায় ১৬ শতকের কবিতা স্যাম ত্র্যাঙ তৃণ-এ। এছাড়া ১৬ ও ১৭ শতকে ১২টি পাথুরে স্তম্ভেও খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া যায় ‘ভিয়েতনাম’ শব্দটি।
১৯ শতকের শুরুর দিকে নুইয়েন রাজবংশের রাজা গিয়া লং ‘আনাম’ নামের রাজ্য দখল করেন। তিনি ‘আনাম’-এর নাম বদলে ‘ভিয়েত’ বা ‘ন্যানিউ’ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিং রাজবংশের সম্রাট জিয়াকিং তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কারণ নামটি কিং সাম্রাজ্যের সেনাপ্রধান ঝাও তুওর এলাকা ‘ন্যানিউ’ নামটির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এছাড়া এই ন্যানিউয়ের মধ্যে দক্ষিণ চীনের জায়গা গুয়াঞ্জি এবং গুয়াংডংও ছিল। পরবর্তীতে সম্রাট জিয়াংকিং অঞ্চলটির জন্য সেই ‘ভিয়েতনাম’ শব্দটি পছন্দ করেন।
১৮০৪ এবং ১৮১৩ সালের মধ্যে সম্রাট গিয়া লং ‘ভিয়েতনাম’ নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করেন। নামটির পুনর্ব্যবহার হয়েছিল ২০ শতকের গোড়ার দিকে ফ্যান বই চোউয়ের ‘ভিয়েতনামের ক্ষতির ইতিহাস’ বইতে। পরে ভিয়েতনামের জাতীয়তাবাদী দল বেশ জোরেসোরে নামটির প্রচারণা চালায়।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
এরপরেও ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ‘আনাম’ নামেই পরিচিত ছিল অঞ্চলটি। অতঃপর বর্তমান ভিয়েতনামের উত্তর মধ্য উপকূলীয় সাম্রাজ্য হুয়ে সরকার এই অঞ্চলের জন্য ‘ভিয়েতনাম’ নামকে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই নামটিই অপরিবর্তিত হয়ে আছে।
৫৯০ দিন আগে
কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
ঈদের আগের দিনগুলো মানেই পোশাক, উপহার এবং সুস্বাদু খাবারের কেনাকাটা। রঙিন ব্যানার ও আলোক-সজ্জার রাস্তাগুলো যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষিতে। এ দোকান সে দোকান ঘুরে প্রিয় জিনিসটি খুঁজে বের করার উন্মাদনা ঈদের আনন্দের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। আর এই কেনাকাটা বাংলার ঐতিহ্যবাহী শহর কলকাতায় হলে সেই উৎসব মুখরতার সঙ্গে যেন যোগ হয় ভ্রমণের আনন্দ।
শত বছরের সংস্কৃতি মিশে থাকা এই শহরের কোলাহলপূর্ণ বাজারগুলো যেন রঙ এবং স্বাদের চির অর্বাচীন ফেরিওয়ালা। শপিং উৎসাহী বাঙালিদের প্রত্যাশিত এই গন্তব্যকে নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, কলকাতায় গিয়ে কোথায় কী কিনবেন তা বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি শপিংমল
কলকাতা নিউ মার্কেট
ঔপনিবেশিক যুগের প্রাচীনতম বিপণীগুলোর মধ্যে অন্যতম এই শপিংমল যে কোনো উৎসবে কলকাতার ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। জুতা, শাড়ি, বিদেশি ফুল ও স্থানীয় প্রসিদ্ধ খাবারের দোকানগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। কেননা সুনামের পাশাপাশি এদের রয়েছে বিশদ সংগ্রহ। তাছাড়া একটি নির্দিষ্ট আইটেমের সব দোকান আলাদা আলাদা ব্লকে সুবিন্যস্তভাবে সাজানো। তাই ২ হাজারেরও বেশি দোকান থাকলেও পছন্দের জিনিসটি খুঁজে পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না ক্রেতাদের। লিন্ডসে স্ট্রিটে অবস্থিত এই সুপরিচিত জায়গাটি নিমেষেই খুঁজে পান বাইরে থেকে আগত পর্যটকরা।
আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের ক্রাবি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
গড়িয়াহাট বাজার
বালিগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বাজারটি গড়িয়াহাটের অন্যতম বিখ্যাত মল। দীর্ঘ প্রসারিত জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রাস্তার দুপাশে দোকানগুলো জামাকাপড়, গহনা এবং ইলেকট্রনিক আইটেমের বিশাল সংগ্রহশালা। বড় দোকান ছাড়াও ছোট ছোট অস্থায়ী তাঁবুগুলোতে বসে স্বল্প দামের বিপণী। দোকানের বাইরে ঝুলে থাকা নানা আইটেমের সঙ্গে চকচকে আলোগুলো মাঝের দীর্ঘ রাস্তাকে আলোকিত করে রাখে। এখানকার রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকানগুলোর অবস্থান এমন জায়গাতে যেন কেনাকাটার ফাঁকেই হুট করে যে কেউ খেতে বসে যেতে পারে।
অবনী রিভারসাইড মল
হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই ৫ তলা শপিংমলটি যেন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছে। এর ভেতরে ২০০টিরও বেশি ব্র্যান্ডেড স্টোর সারা দিন ধরে আটকে রাখে ক্রেতাদের। শুধু কি তাই! সুপারশপের মুদি থেকে শুরু করে প্যান্টালুনের পোশাক এবং আর্চিসের অনন্য উপহার সবকিছু পাওয়া যায় এখানে। এছাড়া সিনেমা উপভোগ করার জন্য আছে একটি পিভিআর থিয়েটার। কেনাকাটা করতে যেয়ে খিদে পেয়ে গেলে তার জন্যও রয়েছে জনপ্রিয় সব রেস্তোরাঁ এবং ফুড ক্যাফে।
আরও পড়ুন: আইসল্যান্ড ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
সাউথ সিটি মল
কলকাতা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে প্রায় ১০ লাখ বর্গফুটের জায়গা নিয়ে এই মলটির অবস্থান। এই অত্যাধুনিক মলে একচেটিয়াভাবে ব্যবসা করে চলেছে দেশ-বিদেশের নামকড়া সব ব্র্যান্ডগুলো। সম্প্রতি চালু হওয়া নতুন বিশাল ফুড কোর্টে জায়গা পেয়েছে মেইনল্যান্ড চায়না, চিলিস, স্টারবাক্স সহ স্বনামধন্য অনেক খাবারের ব্র্যান্ড। সারা বিপণী ঘুরতে যেয়ে স্বাদ বদলের জন্য রয়েছে মাল্টিপ্লেক্স। এখানে শপিং উৎসাহী ও সিনেমাপ্রেমি দু’শ্রেণীর মানুষেরই ভিড় হয়।
কোয়েস্ট মল
পার্ক সার্কাসের সৈয়দ আমির আলী এভিনিউয়ের এই অভিজাত মলটি তরুণ এবং ব্যবসায়ী উভয়কেই আকর্ষণ করে। ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা এই মল শহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মলগুলোর একটি। মান সম্পন্ন পোশাকের দোকানের পাশাপাশি খাবার, গেমিং, ও মাল্টিপ্লেক্স সুবিধা খুব কম সময়েই কোয়েস্ট মলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। এখানে আইনক্স মাল্টিপ্লেক্সে রয়েছে ছয়টি স্ক্রিন। এছাড়া রয়েছে চিলিস, বোম্বে ব্রাসেরি, স্মোক হাউস ডেলি, ও সেরাফিনার মতো কলকাতার সেরা সব রেস্তোরাঁ।
সিটি সেন্টার ১ শপিং মল
সল্টলেকের এই টুইন মলটিতে শহরের সব ধরণের লোকেরই সমাগম ঘটে। স্বভাবতই মলের প্রতিটি আউটলেটেই থাকে উপচে পড়া ভিড়। বিশাল এই মলের অন্যতম আকর্ষণ হল এর কেন্দ্রে জলাশয় সমৃদ্ধ কয়েকটি ধাপযুক্ত প্লাজা, যাকে কুণ্ড বলা হয়। এই বিরাট স্থাপনাকে ঘিরে দর্শনার্থীরা বসে সময় কাটাতে পারেন। মনোরম অভ্যন্তরীণ সজ্জার অ্যাম্ফিথিয়েটারে চলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। আর হাল ফ্যাশনের পোশাকের দোকানগুলো স্বতন্ত্র শৈলী নিয়ে আকৃষ্ট করে ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
৫৯৪ দিন আগে
থাইল্যান্ডের ক্রাবি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দ্বীপদেশের মনমুগ্ধতার নেপথ্যে রয়েছে রোদের আলোয় চিকচিক করা বালি আর আলোক ছটা দেওয়া ঢেউ। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালুকাবেলায় ঝিনুকের আঁকিবুকিগুলো যেন সাবধানে পা ফেলতে বলে সৈকতপ্রেমিককে। এরপরেও উপেক্ষা করা যায় না খালি পায়ে হাঁটা বা সূর্যস্নানের হাতছানি। সমুদ্রের বিশাল বিস্তৃতির উপর দিয়ে লালিমার দিগন্ত রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়া এক অদ্ভূত শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
এই প্রতিটি উপাচারকে সঙ্গে নিয়ে মহাদেশগুলোতে বিচিত্রভাবে সেজে ওঠে সমুদ্রবিলাস। এমনি একটি মহাদেশ এশিয়া, যেটি বিশ্বের সেরা দ্বীপদেশগুলো নিয়ে যুগ যুগ ধরে নিজের স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রেখেছে। এমনকি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জনপ্রিয় কিছু পর্যটন স্থান পরম যত্নে লালন করে চলেছে মনোরম সব সমুদ্র সৈকত। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ মিলবে থাইল্যান্ডের ক্রাবিতে গেলে। চলুন, অনন্য নান্দনিকতায় ভরপুর ক্রাবি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত জেনে নেওয়া যাক।
ক্রাবির ভৌগলিক অবস্থান
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের ক্রাবি প্রদেশের রাজধানীর নাম ক্রাবি। চুনাপাথরের কার্স্ট এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে অবস্থিত এই শহর থেকে ক্রাবি নদী ফাং নাগা উপসাগরের সঙ্গে মিশেছে। আন্দামান উপকূলের কাছাকাছি এই রিসোর্ট শহরটি ব্যাংকক থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
ক্রাবির নামকরণের ইতিহাস
এই শহরের নাম নিয়ে দুটি গল্প প্রচলিত আছে। প্রথম গল্পটি একটি প্রাচীন তলোয়ার নিয়ে। একবার এই স্থানের অধিবাসীরা এখানকার মাটি থেকে অতিকায় একটি তলোয়ার খুড়ে বের করে। এই তলোয়ারটি পরে প্রদেশের গভর্নরের কাছে পেশ করা হয়। এরপর আরও একটি তলোয়ার মাটি খুড়ে বের করা হয়, তবে এবারেরটা একটু ছোট ছিল। এটিও সেই গভর্নরের কাছে সোপর্দ করা হয়। গভর্নরসহ তখনকার সাধারণ মানুষ এই তলোয়ার দুটিকে বেশ মূল্যবান এবং পবিত্র বলে মনে করতেন। অতঃপর গভর্নরের নির্দেশে তলোয়ার দুটিকে আড়াআড়িভাবে ‘খাও কানাব নাম’ নামে একটি গুহায় স্থাপন করা হয়। এই তলোয়ার দুটির নাম ছিল ক্রাবি। যেটির নামেই পরবর্তীতে এই স্থানের নামকরণ হয়। বর্তমানে পর্যটকরা ক্রাবিতে ঘুরতে যেয়ে একবার হলেও এই তলোয়ার দুটিকে দেখে যান।
আরও পড়ুন: আইসল্যান্ড ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
দ্বিতীয় গল্পটি লুম্ফি নামের একটি গাছ নিয়ে। চীনা এবং মালয় বণিকরা এটিকে খো-লো-বি কিংবা কা-লু-বি উচ্চারণ করতো। কিন্তু এই দুই শব্দই ছিল ভুল। আর এই ভুল শব্দেই জায়গাটি কয়েক যুগ ধরে পরিচিত থাকে। পরে পাওয়া যায় যে, সেই ভুল শব্দগুলোর সঠিক শব্দ হচ্ছে ক্রাবি। অবশেষে এই নতুন নামেই জায়গাটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করে।
৫৯৫ দিন আগে
আইসল্যান্ড ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
কোনো পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য গৌণ হয়ে যায় যখন সেখানে ভ্রমণকালীন নিরাপত্তার প্রসঙ্গ আসে। একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে সে দেশের পর্যটন শিল্পের উপর। সামগ্রিকভাবে নিরাপদ ভূ-খণ্ড নিশ্চিন্তে ভ্রমণের রসদ যোগায়। এই দিক থেকে নিমেষেই শীর্ষস্থানটি পেয়ে যেতে পারে আইসল্যান্ড নামের দেশটি। কেননা ২০২৩ সালের বৈশ্বিক শান্তি সূচক অনুসারে দেশটি অর্জন করেছে সর্বনিম্ন স্কোর; ১ দশমিক ১২৪।
এই সর্বনিম্ন মান বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থার দিকে নির্দেশ করে। এ নিয়ে দেশটি টানা ১৬ বার বিশ্বের এক নম্বর শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে মনোনীত হলো। নর্ডিক এই দেশটিতে ঘুরে বেড়ানো নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, আইসল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানসহ যাবতীয় ভ্রমণ খরচ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আইসল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ দেশ আইসল্যান্ড। উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের মধ্যবর্তী আটলান্টিক রিজের উপর অবস্থিত এই দেশটি বিশ্বের ১৮-তম বৃহত্তম দ্বীপ। গ্রেট ব্রিটেনের পরে এটিই ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এর প্রধান দ্বীপ ১ লাখ ১ হাজার ৮২৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। সমগ্র দেশটির ১ লাখ ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৬২ দশমিক ৭ শতাংশই তুন্দ্রা অঞ্চল।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া ভ্রমণ: জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান, ঘুরতে যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
স্থলভাগের দিক দিয়ে উত্তর আমেরিকার তুলনায় আইসল্যান্ড ইউরোপের বেশি কাছাকাছি। কিন্তু জলভাগের দিক থেকে এটি উত্তর আমেরিকার দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের সবচেয়ে কাছে। তবে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং ভাষাগত কারণে আইসল্যান্ড ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
৫৯৭ দিন আগে
মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিধ্বস্ত জলরাশির ঐকতানের সঙ্গে রোদের আলোয় সোনালি বালির মৃদু আলিঙ্গন, এর সঙ্গে সাগরতলের জীববৈচিত্র্যের মাঝে নিজেকে পরখ করার নেশা কিছুতেই উপেক্ষা করার নয়। গভীর রাতে শীতল সৈকতে আকাশ ভরা তারার সমীপে নিজেকে সপে দেওয়ার মাঝেই যেন চির প্রশান্তি। এই প্রাকৃতিক উপাচারগুলো নিয়ে ভারত মহাসাগরের বুকে মালদ্বীপের প্রতিটি দ্বীপ সরবে জানান দেয় নিজেদের উপস্থিতির কথা। কিন্তু মাফুশি নামের দ্বীপটি যেন আদ্যোপান্ত শব্দহীন এক নৈসর্গ। খুব কম সময়ের মধ্যে মালদ্বীপের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হওয়া এই দ্বীপটি নিয়েই আজকের ভ্রমণ কড়চা। চলুন, মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণ নিয়ে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।
মাফুশি দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে ২৬ দশমিক ০৮ কিলোমিটার দক্ষিণে মাফুশি দ্বীপের অবস্থান। মাফুশি দ্বীপপুঞ্জের এই মধ্যমণির ১ হাজার ২৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৬৫ মিটার প্রশস্ত। অ্যাটলে অবস্থিত বাকি দ্বীপগুলোর তুলনায় এটি সব থেকে বড়।
মাফুশি দ্বীপ ৩টি এলাকায় বিভক্ত। স্থানীয় অধিবাসীদের এলাকা, পর্যটন এলাকা এবং দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে কারাগার এলাকা। পর্যটন এলাকাটি আবার বিকিনি সৈকত, পাবলিক সৈকত এবং ওয়াটার-স্পোর্টস সৈকতে বিভক্ত।
মাফুশি দ্বীপের ইতিহাস ও নামকরণ
এই দ্বীপবাসীরা মাছ ধরা সম্প্রদায় হিসেবে সুপরিচিত ছিল। দু-একজন পর্যটকের আনাগোণা হওয়া শুরু করতেই এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কম খরচে গেস্টহাউস পাওয়ার জন্য মাফুশি দ্বীপের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। প্রথম দিকে এই কারণেই স্থানীয় দ্বীপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
২০০৪ সালের বিধ্বংসী সুনামি দর্শনীয় জায়গাটির অনেক স্থাপনাই নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যটনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
‘মাফুশি’ নামটির উৎপত্তি মালদ্বীপের শব্দ ‘মা’ (maa) এবং ‘ফুশি’ (Fushi) থেকে। ‘মা’-এর অর্থ ‘বড়’ এবং ‘ফুশি’-এর অর্থ ‘দ্বীপ’। সমগ্র দেশের অন্যান্য অধ্যুষিত দ্বীপের তুলনায় এই দ্বীপটি বড় বলে এরকম নামকরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপের মাফুশি দ্বীপ ভ্রমণের উপায়
মালদ্বীপের পর্যটন ভিসা
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যেতে হলে প্রথমেই মালদ্বীপের ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশিদের মালদ্বীপ ভ্রমণের জন্য আগমনী ভিসা দেয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি পর্যটকদের দেশ ছাড়ার পূর্বে পর্যটন ভিসার জন্য কোনো রকম আবেদনের প্রয়োজন হয় না। তবে মালদ্বীপের বিমান বন্দরে অভিবাসন ছাড়পত্র পেতে কিছু প্রাথমিক শর্ত রয়েছে যেগুলো আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হয়। শর্তগুলো হলো:
- কমপক্ষে ১ মাস মেয়াদী একটি বৈধ পাসপোর্ট। এমনকি শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য।
- আসা-যাওয়ার টিকিট, অগ্রীম হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণপত্রসহ মালদ্বীপে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রমাণ অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃক অনুমোদিত ভিসা স্পনসরশিপ।
- পূরণকৃত ট্রাভেলার ডিক্লারেশন ফর্ম, যা ফ্লাইটের সময় ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে হয়। https://imuga.immigration.gov.mv/ethd লিঙ্কের মাধ্যমে ফর্মটি অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
এই শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে মালদ্বীপের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিনামূল্যেই বাংলাদেশিরা পেতে পারেন। এই পর্যটন ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন।
ঢাকা থেকে মাফুশি দ্বীপ যাতায়াত
ঢাকা - মালে রাউন্ড ট্রিপ বিমান ভাড়া নির্ভর করবে কিছু বিষয়ের উপর যেমন এয়ারলাইন্স কোম্পানি, বুকিংয়ের সময়, বিভিন্ন অফার, ইত্যাদি।
মালে থেকে মাফুশি দ্বীপ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য স্পিডবোট বা ফেরিতে যেতে হবে। স্পিডবোটের ভাড়া লাগবে ২৫ মার্কিন ডলার বা ২ হাজার ৭৫০ টাকা। এভাবে দ্বীপে পৌছতে প্রায় ৪৫-মিনিট সময় লাগবে। মালে শহরের ব্যাঙ্ক অফ সিলনের সামনে থেকে ৬ নম্বর জেটি থেকে পাওয়া যাবে এই স্পিডবোটগুলো।
আর সরকারি ফেরিগুলো শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলে এবং ভ্রমণপথে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় নেয়। ফেরিতে টিকেট খরচ নিতে পারে জনপ্রতি ২ মার্কিন ডলার বা ২২০ টাকা।
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
মাফুশি দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়
মালদ্বীপের অন্যান্য পর্যটন স্থানগুলোর মতো এখানেও সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে বেশি ভিড় থাকে। এই শুষ্ক মৌসুমে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে এবং সামগ্রিকভাবে কম আর্দ্রতা থাকায় ভ্রমণের পরিবেশ বেশ মনোরম হয়। আর এরপর থেকে; অর্থাৎ মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘলা থাকে।
কখনো কখনো ঝড়ে কবলে পড়তে হয় বলে এই সময়টি অনেকেই এড়িয়ে চলেন। তবে এই সময়গুলোর সবচেয়ে সেরা সুবিধা হচ্ছে- দ্বীপে ভ্রমণ খরচ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম থাকে।
৬০০ দিন আগে
বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশিদের ভারতের পর্যটন, চাকরি, শিক্ষা এবং চিকিৎসার সুবিধা গ্রহণের সর্বপ্রথম ও আবশ্যক শর্ত হচ্ছে ভারতীয় ভিসা। এই অনুমতিপত্র দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রটোকল রক্ষা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতে একাধিক প্রবেশের অনুমিত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ভারতে ভ্রমণসুবিধা আরও বাড়িয়ে দেয়। চলুন, এই সুবিধাগুলো পেতে বাংলাদেশ থেকে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়ার উপায় জেনে নেওয়া যাক।
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা কী?
ভারতের নাগরিক নন এমন কোনও ব্যক্তির জন্য ভারতে দুইবার প্রবেশের অনুমতিই হচ্ছে ডাবল এন্ট্রি ভিসা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারত হয়ে অন্য কোনও দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ভিসা ইস্যু করা হয়। এ সময় প্রতিবার প্রবেশের জন্য অনূর্ধ্ব ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন সময় দেওয়া থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এই ভিসাপ্রাপ্তদের ভারতে সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে পরে প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৯০ দিন বা ৩ মাস বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
যাদের জন্য ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা দরকার
বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যে সকল ব্যক্তিদের এই ভিসাটি প্রয়োজন তারা হলেনঃ--> বিমান/রেল/সড়ক/সমুদ্রপথে ভারতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেতে ইচ্ছুক--> চাকরী, ব্যবসা, শিক্ষা বা পর্যটনের কারণে ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া, মাল্টা, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিকের মত ইউরোপের দেশগুলোতে গমনকারী--> সাংবাদিক--> চলচ্চিত্র ও টিভি নাট্য কর্মী
আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ন্যূনতম ৬ মাসের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট। পাসপোর্টে কমপক্ষে ২টি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন হবে বিগত সমস্ত পুরাতন পাসপোর্ট। এগুলোর মধ্যে কোনো একটি হারিয়ে গেলে তার জিডি (জেনারেল ডায়েরি) কপি সঙ্গে থাকতে হবে।
- এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) বা জন্ম নিবন্ধনপত্র
- প্রার্থীর অনূর্ধ্ব ৩ মাসের মধ্যে তোলা রঙিন ছবি। ছবি হতে হবে ২/২ ইঞ্চি বা ৩৫০ বাই ৩৫০ পিক্সেল রেজুলেশনের। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্রেমে মাথা মাঝখানে রেখে চুলের উপর থেকে চিবুকের নিচ পর্যন্ত পুরো মাথা প্রদর্শিত হতে হবে। কোনও ছায়া পড়া যাবে না। ছবির স্ক্যান কপি জেপিইজি ফরমেটের হবে। আকার হবে সর্বনিম্ন ১০ কেবি (কিলোবাইট) আর সর্বোচ্চ ৩০০ কেবি।
- অনূর্ধ্ব ৬ মাসের ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস বা পানির বিল) বিলের কপি
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণস্বরূপ দেখাতে হবে:
- আন্তর্জাতিক ভ্রমণকার্ড যেমন- এসবিআই (স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া)
- ট্র্যাভেল কার্ড অথবা বিগত ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- কিংবা আবেদনকারী নামে ১৫০ মার্কিন ডলার, যা পাসপোর্টে চলমান বছরের অনুমোদনকৃত আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড-এ এন্ডোর্সমেন্ট করা থাকবে।
- আসা-যাওয়ার টিকেট এবং হোটেল বুকিং-এর নথি
- পেশা প্রমাণ স্বরূপ নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রশংসাপত্র, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য অবসরের কাগজপত্র
- তৃতীয় দেশের জন্য বৈধ ভিসা
আরও পড়ুন: ঈদ অবকাশ: ভিসা-মুক্ত এশিয়ায় সেরা ভ্রমণ গন্তব্য
পরবর্তীতে অনলাইন আবেদনপত্রের সময় আপলোডের জন্য এগুলোর স্ক্যান কপি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
অনলাইনে ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসার আবেদন পদ্ধতি
অনলাইনে ভিসার আবেদনপত্র পূরণের জন্য যে কোনও ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে হবে https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa লিঙ্কে। এখানে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এ সময় যে লগইন আইডি ঠিক করা হবে সেটি দিয়ে পরবর্তীতে প্রতিবার নিজের প্রোফাইলে প্রবেশ করা যাবে।
বাংলাদেশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া পরিচালিত ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) বা আইভ্যাক রয়েছে। এগুলো হলো- ঢাকা, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, বগুড়া, এবং ঠাকুরগাঁও।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, যশোর, এবং সাতক্ষীরার কাছাকাছি বসবাসকারী আবেদনকারীরা অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের সময় ঢাকা মিশন নির্বাচন করবেন। চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালীর কাছাকাছি বসবাসকারী আবেদনকারীরা নির্বাচন করবেন চট্টগ্রাম মিশন। রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, এবং বগুড়ার কাছাকাছি এলাকার আবেদনকারীরা নির্বাচন করবেন রাজশাহী মিশন। আর সিলেট মিশন যারা নির্বাচন করবেন তাদের অবশ্যই সিলেটের কাছাকাছি বসবাসকারী হতে হবে।
আরও পড়ুন: ঈদে ঘরে ফিরতে অনলাইনে প্লেন, বাস ও ট্রেনের টিকেট কাটার উপায়
অনলাইন আবেদন ফর্মের উপরে ডানদিকে ডিজিটাল ছবি আপলোড করতে হবে। প্রত্যেক আবেদনকারীর জন্য একটি একক ও অদ্বিতীয় ওয়েব ফাইল নাম্বার প্রদর্শিত হবে। এই নাম্বারটি ভবিষ্যতের রেফারেন্সের জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি।
কলাম-এ-এর ব্যক্তিগত বিবরণী অংশে নাম, জন্ম তারিখ সহ অন্যান্য বিবরণ পাসপোর্ট, এনআইডি বা জন্ম সনদে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী হতে হবে। কলাম-বি-এর পাসপোর্টের বিবরণী অংশে বর্তমান পাসপোর্ট অনুযায়ী পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু করার স্থান, তারিখ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। কলাম-সি-তে বর্তমান ঠিকানা, ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। এখানে বর্তমান ঠিকানা অবশ্যই ইউটিলিটি বিলগুলোতে উল্লেখিত ঠিকানার সাথে মিল হতে হতে হবে। বর্তমান ঠিকানাটি এমন হতে হবে যেখানে প্রার্থী কমপক্ষে ৬ মাস ধরে অবস্থান করছেন। কলাম-ডি-তে দিতে হবে পরিবারের বিবরণ। কলাম-ই ও এফ-এ ভিসা সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে।
রেফারেন্সের কলামে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে একজনের যোগাযোগের বিশদ বিবরণী দিতে হবে।
এই আবেদন ফর্মে কোনও ভুল হলে পুনরায় নতুন করে আবেদন করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। তাই ফর্ম পূরণের সময়ে সর্বাত্মকভাবে সচেতন থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন: দিল্লি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রক্রিয়াকরণ খরচ
বাংলাদেশের যে কোনও আইভ্যাক-এ ভিসার জন্য আবেদনকারী সকল ব্যক্তিকে অফেরতযোগ্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রদান করতে হয়। ডাবল এন্ট্রি ভিসার জন্য প্রক্রিয়াকরণ ফি ৮০০ টাকা। এর সঙ্গে কনভেনিয়েন্স ফি হিসেবে যুক্ত হয় স্থানীয় পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীর ধার্যকৃত চার্জ ২৪ টাকা।
অনলাইনে ফি প্রদানের জন্য যেতে হবে https://payment.ivacbd.com লিংকে। প্রবেশের সময় পরপর ২ বার ওয়েব ফাইল নাম্বার চাওয়া হবে। এরপর আবেদনের জন্য নির্বাচিত হাইকমিশন নির্বাচন করতে হয়। ভিসার আবেদন জমা এবং অর্থপ্রদানের জন্য কেন্দ্রের নাম একই হতে হয়।
তারপর ভিসা আবেদনের টাইপ নির্বাচন করে প্রার্থীর নাম, মোবাইল নাম্বার, ও ইমেইল আইডি সহ যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হয়।
আরও পড়ুন: সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
এবার চূড়ান্তভাবে পেমেন্টের পালা। এখানে বিভিন্ন ধরনের কার্ড, ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। এগুলো থেকে নিজের পছন্দ মতো যে কোনও মাধ্যমে ভিসা ফি পেমেন্ট করা যাবে। জমা সম্পন্ন হলে অনলাইন থেকে একটি পেমেন্ট স্লিপ দেওয়া হবে। এটি প্রিন্ট করে পরবর্তীতে আবেদনপত্রের সঙ্গে জমাদানের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
ভিসা আবেদনপত্র জমা
জমা সফলভাবে হলে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের উপরের ডানদিকে রিপ্রিন্ট অপশনে লগ ইন করতে হবে। এ সময় সেই ওয়েব ফাইল নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রয়োজন হবে। অতঃপর অনলাইনে আবেদনকৃত পুরো ফর্মটির প্রিন্ট নেওয়া যাবে। প্রিন্টকৃত নথিটিতে ছবির নিচের অংশে এবং ভিসা আবেদনের শেষ পৃষ্ঠায় সইয়ের অংশে সই দিতে হবে।
অতঃপর অনলাইন পেমেন্ট স্লিপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভিসা আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকে। সাধারণত ফর্ম পূরণের ৮ দিনের মধ্যে নির্ধারিত আইভ্যাক কেন্দ্রে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়।
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ও সাক্ষাৎকার
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার দিন প্রার্থীর ১০ আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক ডাটা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রার্থীর ছবি তোলা ও প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করা হয়। সব কাজ শেষে প্রার্থীকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দেওয়া হয়। এটি প্রদর্শনের মাধ্যমে পরবর্তীতে ভিসাসহ মূল পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়।
ভিসা প্রাপ্তি
বায়োমেট্রিক ও সাক্ষাৎকারের পর থেকে ভিসার সর্বশেষ অবস্থা https://indianvisa-bangladesh.nic.in/ visa/StatusEnquiry- লিঙ্কের মাধ্যমে জানা যেতে পারে।
এছাড়া ০৯৬১২৩৩৩৬৬৬ অথবা ০৯৬১৪৩৩৩৬৬৬ নাম্বারেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এ সময় প্রার্থীকে অবশ্যই তার স্টিকার নম্বর বা পাসপোর্ট নাম্বার বলতে হবে।
নির্দিষ্ট দিনে ভিসাসহ মূল পাসপোর্টটি প্রার্থী নিজে সংগ্রহ করতে পারেন অথবা তার মনোনীত ব্যক্তিও তার হয়ে সংগ্রহ করতে পারেন। এক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তির সঙ্গে সেই ডেলিভারি স্লিপ এবং মূল ব্যক্তির পক্ষ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের ক্ষমতা হস্তান্তর পত্র থাকতে হবে।
পরিশেষে
বিভিন্ন দেশে পর্যটন, শিক্ষা ও জীবিকা গ্রহণের জন্য ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা বাংলাদেশিদের জন্য এক উপযুক্ত প্রবেশদ্বার। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আইভ্যাকগুলো ভিসা প্রাপ্তির অপরিহার্য মাধ্যম। তাই প্রত্যেক আবেদনকারীর জন্য স্ব স্ব আইভ্যাক নির্ধারণ করা আবশ্যক। বর্তমানে আবেদন পদ্ধতি সম্পূর্ণ অনলাইন বিধায় প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোডের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সঠিক তথ্য দিয়ে অনলাইন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে। কেননা একমুখী আবেদনের এ প্রক্রিয়ায় সংশোধনের কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায়, জনপ্রিয় স্থান ও খরচ
৬০২ দিন আগে
অতিরিক্ত দাবদাহে যেভাবে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখবেন
গ্রীষ্মকালসহ অন্যান্য উষ্ণ ঋতুগুলোতে বহুতল আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে একদম উপরের তলার বাসিন্দারা। রোদের প্রখর তাপ সরাসরি ঘরের ছাদে পড়ায় তাপ জমে ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অস্বস্তিকরভাবে বেড়ে যায়। বৈশ্বিক উষ্ণতার ধারাবাহিকতায় চলমান গরমের অবিরাম প্রতাপ থেকে ছাদকে রক্ষা করা এখন আর ঐচ্ছিক বিষয় নেই। বাইরের তাপ থেকে গা বাঁচিয়ে ঘরের ভেতর থাকার জন্য ছাদকে ঠান্ডা রাখা এখন আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন, তীব্র গরম আবহাওয়াতে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
গ্রীষ্ম ও অন্যান্য উষ্ণ মৌসুমে ঘরের ছাদ ঠান্ডা রাখার ১০টি টিপ্স
ছায়াদানকারী উঁচু দেওয়াল বা নেট স্থাপন
খুব ঘন উপাদান সম্পন্ন কংক্রিটে তৈরি হওয়ায় ছাদের স্ল্যাবগুলো খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপ ধরে রাখে। এই তাপ পরিবাহিত হয় নিচের ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটি কক্ষে। তাই স্ল্যাব পর্যন্ত যেন সূর্যালোক পৌঁছাতে না পারে, তার জন্য উৎকৃষ্ট উপায় হচ্ছে ছাদে ছায়ার ব্যবস্থা করা। এর ফলে নিদেনপক্ষে ছায়াযুক্ত জায়গাগুলো আশেপাশের স্ল্যাবগুলো থেকে অনেক কম গরম থাকে।
এই ছায়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ছাদের সীমানার ধার ঘেষে উঁচু দেয়াল বা নেটের মাধ্যমে। এই নেট বা দেওয়াল বিভিন্ন নকশা দিয়ে আকর্ষণীয় করা যায়। সুতরাং ছায়াদানকারী এই স্থাপনা শুধু তাপ নিয়ন্ত্রণই করে না, সেই সঙ্গে দালানের সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি করে। তবে এখানে খেয়াল দেওয়াল বা নেটে হালকা রঙ দেওয়া হচ্ছে কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিৎ।
আরও পড়ুন: তীব্র গরমে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে উপকারী শাকসবজি
ছাদে বাগান করা
বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল ও শাক-সবজির গাছ দিয়ে সাজানো বাগানে তৈরি হয় সবুজ ছাদ। এই সবুজ ছাদ নিচের ফ্ল্যাটকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ছায়া দেয়। উদ্ভিদগুলো নিজেদের খাবার প্রক্রিয়ার কাজে সূর্যের আলো শুষে নেওয়ার কারণে ছাদের পৃষ্ঠসহ আশেপাশের বায়ুর তাপমাত্রা উভয়ই হ্রাস পায়। এতে করে ছাদের আর্দ্রতা অপসারিত হয়ে ছাদ ও নিজের ঘরের পরিবেশ সহনীয় অবস্থায় থাকে।
৬০৩ দিন আগে