হান্সি ফ্লিকের জাদুর ছোঁয়ায় যেন বদলে গেছে বার্সেলোনা। অসাধারণ ফুটবলে একের পর এক ম্যাচ জিতে চলেছে দলটি। লা লিগার সপ্তম ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে গেতাফের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় পেয়েছে হান্সি ফ্লিকের দল।

ম্যাচের ১৯তম মিনিটে লেভানডোভস্কির করা একমাত্র গোলটিই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।

লা লিগায় কেন উড়ছে বার্সেলোনা, মাঠের খেলায় এদিন তার স্পষ্ট প্রমাণ দেয় হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। বল দখলে একক আধিপত্য বিস্তার করে অসাধারণ সব পাস, ড্রিবলিং আর ক্রমাগত চাপে নানন্দিক ফুটবল উপহার দেয় কাতালান জায়ান্টরা।

আরও পড়ুন: বড় জয়ে অপরাজেয় যাত্রা অব্যাহত বার্সেলোনার

এদিন ম্যাচ শুরুর আগে চোটে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়া গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বার্সেলোনা।

এরপর খেলা শুরু হলে ম্যাচের প্রথম তিনটি শটই নেওয়ার সুযোগ পায় গেতাফে, তবে সেগুলোর দুটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় এবং অপরটি ঠেকিয়ে দেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক ইনিয়াকি পেনিয়া। এরপর দশম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বার্সেলোনা। ৩০ গজ দূর থেকে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে ক্রস দেন লামিন ইয়ামাল, তাতে প্রথম ছোঁয়াতেই হেডারে গোল পাওয়ার চেষ্টা করেন লেভানডোভস্কি, কিন্তু বল সরাসরি গেতাফে গোলরক্ষকের কাছে চলে যায়।

এর ৯ মিনিট পর গোল পেয়ে যান লেভানডোভস্কি। ডান পাশ থেকে সতীর্থের উড়ন্ত লং পাস ধরেই সামনে এগোতে থাকা জুল কুন্দেকে পাস বাড়ান লামিন। কুন্দে বক্সের ঢুকে গোললাইন থেকে গোলমুখে ক্রস দেন, সেখানে আলগা বল পেয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন ৩৬ বছর বয়সী এই পোলিশ স্ট্রাইকার।

এই গোলে লিগে ৭ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা হলো ৭টি, লা লিগায় এখন পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। পাঁচ গোল নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তারই সতীর্থ রাফিনিয়া এবং রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে।

২৩তম মিনিটে রাফিনিয়ার গোলমুখে বাড়ানো ব্যাকপাস থেকে গোল পেয়েই গিয়েছিলেন লামিন, কিন্তু তিনি বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে তা পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

২৬তম মিনিটে অসাধারণ বোঝাপড়ায় বক্সের ভেতরে ঢোকার মুখে রাফিনিয়াকে থ্রু পাস বাড়ান আলেক্স বালদে, কিন্তু বলে গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি ২৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলীয়।

তিন মিনিট পর রাফিনিয়ার আরও একটি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। এর দুই মিনিট পর লেভানডোভস্কির দ্বিতীয় গোলটি অফসাইডে কাটা পড়ে।

আরও পড়ুন: জিরোনায় বড় জয়ে মধুর প্রতিশোধ বার্সেলোনার

৩৩তম মিনিটে লেভানডোভস্কির আরও একটি দুর্দান্ত শট ফিরিয়ে দেন গেতাফে গোলরক্ষক দাভিদ সরিয়া। এরপর ৪১তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে লামিনের নেওয়া শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়।

এরপর প্রথমার্ধে কোনো পাশে আর তেমন কোনো সুযোগই তৈরি না হলে বিরতিতে যায় দুদল।

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেও ছন্দ ধরে রেখে খেলতে থাকে বার্সেলোনা। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে প্রথমবার আক্রমণে উঠে ভালো সুযোগ তৈরি করে বার্সেলোনা, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে পরপর দুবার ব্যর্থ হয় তারা।

এরপর ৫৯তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নান্দনিক বাঁকানো শট নেন লামিন, কিন্তু বল উপরের পোস্ট দিয়ে গোল ঢোকার আগমুহূর্তে দলকে বিপদমুক্ত করেন সরিয়া।

ম্যাচের এক ঘণ্টা পার হতেই উজ্জীবিত হয়ে ওঠে গেতাফে। এ সময় থেকে বার্সেলোনাকে সমানে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকে তারা।

৭১তম মিনিটে ফ্রি কিক থেকে রাফিনিয়ার অসাধারণ একটি শট অসাধারণভাবেই প্রতিহত করেন সরিয়া। ওই মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে লামিনের নেওয়া শট ক্রসবারে লাগে।

৭৮তম মিনিটে গোলমুখে আসা ক্রস উড়িয়ে মেরে ব্যবধান দ্বিগুণ করার নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন এরিক গার্সিয়া। ৮২তম মিনিটে কুন্দের আরও একটি দারুণ ক্রসে মাথা লাগিয়েও গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হন রাফিনিয়া।

আরও পড়ুন: বার্সার দায়িত্ব নিয়ে শিরোপা জিততে বদ্ধপরিকর ফ্লিক

৮৬তম মিনিটে ভালো একটি আক্রমণে উঠে বার্সা সমর্থকদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয় গেতাফে, কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে আক্রমণটি বৃথা যায়।

ম্যাচের এক মিনিট বাকি থাকতে পাল্টা আক্রমণে উঠে বার্সেলোনার রক্ষণ এলোমেলো করে দেয় গেতাফে। তবে শেষ সময়ে গেতাফে ফরোয়ার্ড কার্লস পেরেসকে নিরস্ত করেন ইনিগো মার্তিনেস।

এরপর অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে আরও একবার বার্সার রক্ষণে ভীতি ছড়ায় গেতাফে, কিন্তু গোল করতে না পারলে এক গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।

এই জয়ে লিগে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত রইল ফ্লিকের শিষ্যরা। সবশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে আর্নেস্তো ভালভার্দের কোচিংয়ে লিগের প্রথম ৭ ম্যাচ জিতেছিল বার্সেলোনা। সেবার লা লিগা শিরোপাও জেতে কাতালান ক্লাবটি।

এই জয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই রইল বার্সেলোনা। পাঁচ জয় ও দুই ড্রয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রিয়াল মাদ্রিদ; ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় আথলেতিক বিলবাও, আর এক ম্যাচ কম খেলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। এছাড়া সাত ম্যাচে চারটি ড্রয়ে চার পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে, ১৯তম স্থানে রইল গেতাফে। আগামীকাল রাতে সেল্তা ভিগোর মাঠে খেলতে নামবে দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা।