১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপের আসর পাঁচবার আয়োজন করা ইংল্যান্ডকে শিরোপা জয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৪ বছর। এর আগে তিনবার ফাইনালে আসতে পারলেও প্রতিবারই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। রবিবারও সহজে জয় পায়নি তারা।
বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকায় ১৫ মিনিট দেরিতে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে শুরু হওয়া ম্যাচটি ৫০ ওভারের খেলা শেষে টাই হলে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণে নেয়া হয় সুপার ওভারের আশ্রয়। কিন্তু ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবিশ্বাস্যভাবে সুপার ওভারও টাই হয়। শেষ পর্যন্ত খেলায় বাউন্ডারির (চার ও ছক্কা) হিসেবে কপাল পুড়ে নিউজিল্যান্ডের।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামে কিউইরা। তাদের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওপেনার মার্টিন গাপটিল ১৮ বলে ১৯ রান করে ক্রিস ওকসের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। পরে হেনরি নিকোলস ও কেইন উইলিয়ামসন যথাক্রমে ৫৫ ও ৩০ রান করে লিয়াম প্লাঙ্কিটের শিকারে পরিণত হন।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা কোনোভাবেই স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করেন।
ইংলিশদের পক্ষে ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কিট ৩টি করে এবং মার্ক উড ও জোফরা আর্চার ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
জবাব দিতে নেমে দলীয় ১০০ রান হওয়ার আগেই চার উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ১৭ রান করা জেসন রয়কে ফেরান ম্যাট হেনরি। আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, লোকি ফারগুসন ও জেমস নিশামের শিকারে পরিণত হন যথাক্রমে জো রুট (৩৬), জনি বেয়ারস্টো (৭) ও এউইন মরগান (৯)।
এ পর্যায়ে খেলার ভাগ্য সুতোয় ঝুলে ছিল। তবে বেন স্টোকস ও জশ বাটলার মিলে পঞ্চম জুটিতে ১১০ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে যান। ৬০ বলে ৫৯ রান করা বাটলার যখন ফারগুসনের বলে বদলি ফিল্ডার টিম সাউদির দুর্দান্ত ক্যাচে বন্দী হন তখন ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৩১ বলে ৪৬ রান।
শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একাকী লড়াই চালিয়ে যাওয়া স্টোকসের দৃঢ়তায় শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন দাঁড়ায় ২৪ রান। ৪৯তম ওভারে নিশাম ৯ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নিলে ম্যাচ চলে যায় কিউইদের দখলে।
শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ঠিক হয় ১৫ রান। ওভারের প্রথম ২ বলে রান নিতে ব্যর্থ হওয়া স্টোকস তৃতীয় বলে হাঁকান ছক্কা। তারপরই ঘটে সম্ভবত পুরো ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি। চতুর্থ বলে স্টোকসের ব্যাট থেকে আসে ২ রান, কিন্তু সীমানা থেকে উইকেটরক্ষককে উদ্দেশ করে গাপটিলের করা থ্রোটি স্টোকসের গায়ে লেগে হয়ে যায় চার। অর্থাৎ ২ রানের জায়গায় ইংল্যান্ড পায় মোট ৬ রান। শেষ দুই বলে আদিল রশিদ ও মার্ক ওডকে রান আউটে হারায় স্বাগতিকরা। কিন্তু তার মধ্যেই ২ রান এসে ম্যাচ টাই হয়ে যায়।
সুপার ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে ১৫ রান সংগ্রহ করেন স্টোকস ও বাটলার। জবাবে জোফরা আর্চারকে মোকাবিলা করে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে নিশাম ও গাপটিলও করেন ১৫ রান। অবিশ্বাস্য এ টাইয়ের পর নিয়ম অনুযায়ী খেলায় বেশি বাউন্ডারি হাঁকানো ইংল্যান্ড দেখা পায় অধরা শিরোপার।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে ছিল ২২ চার ও ২ ছক্কা এবং সুপার ওভারে ২ চারের মার। আর নিউজিল্যান্ড ১৫ চার ও ২ ছক্কা এবং সুপার ওভারে আরেকটি ছক্কার দেখা পায়।
৮৪ রানে অপরাজিত থাকা স্টোকস ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং দুটি শতকসহ ৫৭৮ রান ও অধিনায়কত্বে দক্ষতা দেখানোর সুবাদে নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার লাভ করেন।