প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশব্যাপী সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের অপরাধীরা যাতে বিচারের মুখোমুখি হয় ও শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, 'দেশের জনগণকে এই অপরাধীদের বিচার করতে হবে, আমি তাদের কাছে বিচার চাইছি।’
মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখে চোখের জল ফেলছেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন তারা এটা করল? এ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমি তা করে দেখিয়েছি, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যখন পরবর্তী স্তরে উন্নীত হচ্ছে তখন দেশকে পেছনে টেনে নিতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেন, এটা আমার প্রশ্ন এবং আমি জানি না এর উত্তর কে দেবে।’
আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, জনগণকে সেবা, সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য দিতে যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণ করতে সরকারকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে এবং এটি নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণ করা হয়েছিল।
যাদের আগে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো, মেট্রোরেল সেই গণমানুষের দুর্ভোগ লাঘব করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলে কেন এ ধরনের হামলা হচ্ছে, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
মেট্রোরেল ও এর সেবা আন্তর্জাতিক মানের বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কী ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এখানে! এ দেশের মানুষ এটা করতে পারে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু এখানে সেটা করা হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্র এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে তিনি মানুষের কল্যাণ ও সুখের জন্য সবকিছু করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগ নিশ্চিত করেছি। এসব উন্নয়নের সুফলভোগী কারা? দেশের গণমানুষ। মেট্রোরেলের ওপর এত ক্ষোভ কেন, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বোঝাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে যে বিষয়টি আদালতে রয়েছে এবং তাদের যেন হতাশ না হতে হয় সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত তারা থেমে থাকেনি, ধৈর্য ধরতে রাজি হয়নি। এখন তারা তাদের দাবি আদায় করে নিচ্ছে, প্রথমে এটা এক দফা ছিল, এখন আট দফা।’
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তাণ্ডব চালানোর সুযোগ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী কারা? এই মেট্রোরেল ও ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলো মেরামত করতে কতদিন লাগবে জানি না।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতার সময় ভাঙচুরের শিকার স্টেশনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এ পরিদর্শনের সময় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি এবং পুনরায় চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে গত ১৮ জুলাই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।