বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আগামী ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে পারে সরকার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা আশা করছি আহ্বান করা দরপত্রে বেশ কিছু কোম্পানি অংশ নেবে।’
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, দু-একদিনের মধ্যে দরপত্র প্রকাশের জন্য তা স্থানীয় পত্রিকায় পাঠানো হবে।
তারা বলছে, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও বিদেশে বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনের ওয়েবসাইটেও এটি প্রকাশ করা হবে।
এছাড়া পরিকল্পনা ও পদক্ষেপটির অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানাতে আগামী ১১ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে পেট্রোবাংলার।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, সরকার আগামী ৬ মাসের মধ্যে দরপত্র চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবে। অনেক বিদেশি সংস্থা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং দরপত্রে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দরপত্র চূড়ান্ত না করা পর্যন্ত কতগুলো সংস্থা দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আসছে তা বলা মুশকিল।’
সরকার অফশোর দরপত্রের প্রচারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই দেশের অফশোর এলাকায় হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে 'বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩' এর খসড়ায় অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে অফশোর হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা স্থগিত
দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনার আওতায় খসড়া মডেল পিএসসি ২০২৩-তে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল যে সেপ্টেম্বরে একটি দরপত্র প্রতিযোগিতা হতে পারে। তবে নির্বাচন খুব কাছাকাছি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এটি থেমে যায়। এমতাবস্থায় এটি স্পষ্ট হতে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা ছিল।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মার্চ মাসে দরপত্র আহ্বানের জন্য জ্বালানি বিভাগের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক ফারহানা শ্যারন জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে অফশোর গভীর ও অগভীর পানির গ্যাস ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন মডেল পিএসসি প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের আওতায় আলোচনার ভিত্তিতে দাম নির্ধারণের সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দামের সঙ্গে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়।
পেট্রোবাংলার এই কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ব্রেন্ট ক্রুডের ১০ শতাংশ দরে গ্যাসের দাম প্রস্তাব করতে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: মন্ত্রিপরিষদে অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানে খসড়া অনুমোদন
ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম যদি ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারে কেনাবেচা হয়, তাহলে প্রতি হাজার ঘনফুট (এমসিএফ)গ্যাসের দাম দাঁড়াবে সাড়ে সাত ডলার।
মডেল পিএসসি ২০২৩-এর নতুন বিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম সবসময় আন্তর্জাতিক তেলের দামের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সরকার ও পেট্রোবাংলাকে পিএসসির সর্বশেষ সংশোধনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছে ব্রিটিশ তেল ও গ্যাস পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি।
সরকারি সূত্র জানায়, দেশে মোট ৪৮টি ব্লক রয়েছে, যার মধ্যে ২৬টি দেশের অফশোরে অবস্থিত। ২৬টি অফশোর ব্লকের মধ্যে ১১টি অগভীর সমুদ্রের (এসএস) পানিতে এবং ১৫টি গভীর সমুদ্রের (ডিএস) জলসীমায় অবস্থিত।
অফশোর ব্লকগুলোর মধ্যে ২৪টি আইওসি’র জন্য উন্মুক্ত রয়েছে এবং দুটি ব্লক এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯ ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে- যেখানে সম্প্রতি খনন কাজ শুরু হয়েছে।
প্রায় ৯ বছর আগে সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও বাংলাদেশের অফশোর এলাকা এখনও অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে।
বর্তমানে দেশের ২২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ২ হাজার ৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে এবং প্রায় ৪ হাজার এমএমসিএফডির চাহিদা মেটাতে ১ হাজার ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস ঘাটতি রেখে বিদেশ থেকে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: অফশোর গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ প্রয়োজন: আইটিএফসি প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী