রবিবার অনুষ্ঠিত ২৯৯টি আসনের নির্বাচনে ২৯৮টির বেসরকারি ফল পাওয়া গেছে। এতে ক্ষমতাসীন মহাজোট পেয়েছে ২৮৫ আসন। বিএনপিকে সাথে নিয়ে গড়া ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসন নিজেদের করে নিতে পেরেছে।
সোমবার ভোর ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, বিএনপি ৫, গণফোরাম ২, বিকল্পধারা ২, জাসদ (ইনু) ২, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, তরিকত ফেডারেশন ১, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন।
রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচন স্থগিত ছিল।
নির্বাচনী সহিংসতায় নোয়াখালী, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, নাটোর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, গাজীপুর, সিলেট ও যশোর জেলায় আনসার সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন অভিযোগে ২২টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকদের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৪৯ জনসহ মোট ৫৭ প্রার্থী রবিবারের নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাদের প্রায় সবাই ভোটের মাঝখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।
তবে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। রবিবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ সন্তুষ্টির কথা জানান ওআইসির সহকারী মহাসচিব (অর্থনীতিবিষয়ক দূত) হামিদ অপিলয়ারু।
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘নিখুঁত পরিকল্পনা ও আয়োজনের’ ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি দল। রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা আরিজ আফতাব সাংবাদিকের বলেন, ‘(নির্বাচনে) অনেক উৎসবভাব দৃশ্যমান ছিল। আমরা যতোটুকু অনুভব করেছি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের খুব নিখুঁত পরিকল্পনা ও আয়োজন ছিল।’
অন্যদিকে, নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন। রবিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসভবনে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে এক বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করা হোক। এই নির্বাচনের কথিত ফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং সেই সাথে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি করছি।’
নির্বাচন কমিশন দাবি না মানলে কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল জানান, তাদের জোটের নেতারা সোমবার বৈঠকে বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আমাদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
এবারের নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ছিলেন ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৮১৯ জন। এদের মধ্যে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ জন পুরুষ এবং ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০৩ জন নারী।