তিনি বলেন, ‘আজ আমরা গৃহহীন এবং ভূমিহীন মানুষের মাঝে ঘর দিচ্ছি, এটি দেশের সবচেয়ে বড় উৎসব, বাংলাদেশে এর চেয়ে বড় উৎসব আর কিছু হতে পারে না। আমি সকলের কাছ থেকে দোয়া চাই যাতে আমরা দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’
‘মুজিববর্ষ’ এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষে সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর সরবরাহের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আজ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৬৬ হাজার ১৮৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: কোভিড: সাড়ে ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দৈনিক মৃত্যু দেখল দেশ
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ উদ্বোধনী কর্মসূচিতে যোগ দেন এবং দেশের ৪৯২ উপজেলার সাথে সংযুক্ত হন।
গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে সরকার। এটি এমন এক পদক্ষেপ যা প্রথমবারের মতো দেখল বিশ্ব।
বাড়িগুলোর প্রতিটি ইউনিটে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে, যা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য সবচেয়ে খুশির এবং আনন্দের কারণ আমি জনগণের মধ্যে সবচেয়ে বঞ্চিত অংশকে একটি বাড়ি ও ঠিকানা দিতে পেরেছি।’
‘আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে, বিশেষ করে শীতের এই মৌসুমে আমরা অসহায় মানুষগুলোকে ঠিকানা দিতে পেরে খুশি,’ বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
দীর্ঘ সময় ধরে আ’লীগ ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়ন গতি পেয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সরকার আগামী মাসে দরিদ্রদের মাঝে আরও এক লাখ বাড়ি বিতরণ করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রক্রিয়াটি খুব শিগগিরই শুরু হবে। এভাবেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় দেশে কোনো গৃহহীন মানুষ থাকবে না।’
এই বিশাল কার্যক্রমে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর অন্য কোথাও এত দ্রুততম সময়ে এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে কি না আমার জানা নেই।’
‘এমনকি আমাদের দেশেও এর আগে কোনো সরকার এই স্বল্প সময়ে এত বেশি বাড়ি তৈরি করতে পারেনি, এটি সাধারণ কাজ নয়। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার কারণে আমরা এই বিশাল কাজটি শেষ করতে পেরেছি,’ বলেন সরকার প্রধান।
তিনি আরও বলেন, সরকার সব স্তরের মানুষের জন্য কাজ করছে যাতে তারা একটি আদর্শ জীবনযাপন করতে পারে।
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারা দেশে গৃহহীন মানুষের মাঝে ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কেউ আশ্রয়হীন হবে না। আমরা আমাদের পক্ষে যা সম্ভব করব। আমাদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকায় আমরা সীমিত পরিসরে বাড়িগুলো তৈরি করছি, তবে প্রতিটি মানুষের জন্য কমপক্ষে একটি বাড়ি আমি সরবরাহ করব।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে এই দরিদ্র মানুষগুলো যখন তাদের নিজ ঘরে বাস করবে তখন তার (প্রধানমন্ত্রীর) বাবা এবং মায়ের আত্মা শান্তি পাবে, যারা দেশের মানুষের জন্য নিজেদের সারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজ তারাই ব্যর্থ: প্রধানমন্ত্রী
নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করব: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা লাখ লাখ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে অনেক কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও করোনভাইরাসের কারণে সরকার সেগুলো উদযাপন করতে পারেনি।
‘করোনাভাইরাস এক অর্থে অভিশাপ বয়ে এনেছে, তবে এটি অন্য অর্থে এটি আশীর্বাদও কারণ আমরা আমাদের সব মনোযোগ এই নির্দিষ্ট কাজে (গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় প্রদান) লাগাতে পেরেছি,’ বলেন তিনি।
যারা নতুন বাড়ি পেয়েছেন তাদের বাড়ির পাশে গাছ লাগানোর অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য তিনি দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৪৯২ উপজেলায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারের প্রত্যেকের মাঝে বাড়ির জমির মালিকানার দলিল হস্তান্তর করেন।
এ সময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।