বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা একটা সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই দেশে আর কোনো মাইনরিটি-মেজরিটি শুনতে চাই না। কিসের মেজরিটি আর কিসেরই-বা মাইনরিটি? বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করবেন তারা সবাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দেশের গর্বিত মর্যাদাবান নাগরিক।
তিনি বলেছেন, এই দেশে সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে কোথাও বাধার সম্মুখীন হবে না ইসলাম ধর্ম কারও ওপর জোর করে চাপানো যাবে না।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে নিজেদের বাপ-দাদার তালুক মনে করতেন, তারা চেতনার কথা বলতেন। চেতনার কথা বলে বলে এই জাতিকে তারা লুণ্ঠন করেছেন, গণহত্যা চালিয়েছেন, তাদের সন্তানেরা আকাম-কুকাম করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছেন। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে তারা বিদেশে পাচার করেছে।… যেখানেই মেগা উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই মেগা ডাকাতি করা হয়েছে।’
‘একটা পদ্মা ব্রিজ তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে তা দিয়ে কমপক্ষে চারটা পদ্মা ব্রিজ তৈরি করা যেত। তাহলে বাকি তিনটার টাকা গেল কোথায়? হিসাব একেবারেই পরিস্কার। দেশের টাকা দিয়ে যারা বিদেশে বেগম পাড়া গঠন করেছেন তারাই এই টাকা চুরি করেছেন।’
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রক্তের আমানত আমাদের রক্ষা করতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে। আমাদের সন্তানদের স্লোগান ছিল— উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’
‘আমরাও সর্বক্ষেত্রে ন্যায় বিচার চাই। আমরা বৈষম্য চাই না। আমরা আমাদের গর্বের সন্তানদের কথা দিচ্ছি, তোমরা যেমন জীবন দিয়ে জাতিকে আরেকবার স্বাধীনতা এনে দিয়েছ, আমরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে তোমাদের দাবি পূরণ করব ইনশাল্লাহ। আল্লাহ যেন এই তৌফিক আমাদের দান করেন।’
আরও পড়ুন: আ. লীগ সাড়ে ১৫ বছর দেশের পরিবর্তে নিজেদেরকে সাজিয়েছে: জামায়াত আমির
জামায়াত আমীর বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে আমরা এমন একটা জাতি গড়ব; তখন ইনশাআল্লাহ এই দেশের মানুষ আর বিদেশে চাকরির জন্য যাবে না। যেভাবে ১৭৫৭ সালের আগে সারা বিশ্বের মানুষ এদেশে চাকরির জন্য আসত। এই দেশ আবার তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে। আমরা সেই গৌরবটা ফিরিয়ে আনতে চাই।’
মদিনার সনদে দেশ পরিচালনার কথা জানিয়ে এই রাজনীতিক বলেন, ‘আল্লাহর সংবিধান সবাইকে সম-অধিকার দিয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান হচ্ছে মদিনার সনদ। মদিনার সনদের এক থেকে পাঁচ নম্বর পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধারাই মানুষের অধিকার সংরক্ষণের সনদ। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের অধিকার বিভক্ত করা যাবে না। ইসলামে কারো ওপর জুলুম চালানোর নির্দেশ নেই। পরিষ্কারভাবে মাদিনার সনদে তা বর্ণিত আছে।’
‘তাতে বলা আছে, সকল ধর্মের নাগরিককে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে দিতে হবে। বাইরে থেকে যদি (অন্য ধর্মের মানুষের ওপর) আক্রমণ করা হয়, মুসলমানদের দায়িত্ব হবে তাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করা। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে নারীদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করবে। কউকে জোর করে বোরকা পরাবে না। অন্য ধর্মের মা-বোনরা তাদের মতো করে পোশাক পরবে। কাউকে বাধ্য করা হবে না। যে যার মতো পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। এমন পরিবেশ হবে, যাতে সবাই গর্ববোধ করবে।’
দেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ডা. শফিকুর বলেন, ‘আমাদের ছাত্র সমাজকে কথা দিচ্ছি, তোমাদের হাতে এমন শিক্ষার মান তুলে দেওয়া হবে যে বেহুদা সার্টিফিকেট নিয়ে এ দ্বারে ও দ্বারে ঘোরা লাগবে না। শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ন্যায্য পাওনা বা কাজ তোমাদের হাতে উঠে যাবে। প্রত্যেক যুবক-যুবতীর হাতকে আমরা দেশ গড়ার কারিগরের হাত হিসেবে গড়তে চাই।’
কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল সুজা উদ্দিন জোয়াদ্দরের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মো. মোবারক হোসেন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন: মানবিক জাতি গঠনে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের জামায়াত সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার এ কে এম আলী মুহসিন, ড. আলমগীর বিশ্বাস, মাওলানা আবদুল মতিন, ঝিনাইদহ জেলা আমীর আলী আজম মোহাম্মদ আবু বক্কর, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল, মেহেরপুর জেলা আমীর, তাজউদ্দিন খান, মাগুরা জেলা আমীর এবিএম বাকের, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, রাজবাড়ী জেলা আমীর অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইমরান হোসাইন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী রবীন্দ্র নাথ।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা নায়েবে আমীর আব্দুল গফুর, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মো. সোহরাব উদ্দিন, মো. খায়রুল ইসলাম রবিন, অধ্যাপক মাজহারুল হক মোমিন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসাইন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি মো. আবু মুসা, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, মিরপুর উপজেলা আমীর মাওলানা খন্দকার রেজাউল করিম, দৌলতপুর উপজেলা আমীর মাওলানা বেলাল উদ্দিন, কুমারখালী উপজেলা আমীর আফতাব উদ্দিন, ভেড়ামারা উপজেলা আমীর মো. জালাল উদ্দিন, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা শরিফুল ইসলাম, খোকসা উপজেলা আমীর মো. নজরুল ইসলাম, ইবি থানা আমীর মো. রফিকুল ইসলাম, পেশাজীবী থানা সভাপতি মাহবুবুর রহমার হামীম, শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি এস এম মুহসিন প্রমুখ।