ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (রমনা বিভাগ) সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় গতকাল রাতে ১৭ বছর বয়সী ভুক্তভোগী কিশোরীর প্রেমিক ফারদিন ইফতেখার দিহানের বিরুদ্ধে তার বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এ লেভেলের ছাত্র দিহানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও তিন সন্দেহভাজনকে হেফাজতে নিয়েছি।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ
সাজ্জাদুর বলেন, ‘পুলিশ শুক্রবার দিহানকে ঢাকার এক আদালতে হাজির করে এবং তাকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছে।’
এর আগে, পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রেমিক দিহান এবং আরও তিনজনকে আটক করে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী গ্রুপ স্টাডি করার জন্য কলাবাগানে এক বন্ধুর বাসায় যায়। পরে দিহান মেয়েটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন এবং হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিত্সকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন যে ভুক্তভোগীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল।
সাজ্জাদুর বলেন, ‘আমরা এখনও তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নই। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানতে পারব।’
পুরো দেশের চিত্র
দেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনায় ৯৭ শতাংশ অপরাধীই বিভিন্ন উপায়ে মুক্তি পেয়ে যান।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণ চেষ্টা: প্রধান আসামি ৩ দিনের রিমান্ডে
চট্টগ্রামে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় খালাতো ভাই গ্রেপ্তার
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
আরও পড়ুন:কম্বল দেয়ার কথা বলে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণের দায়ে মুয়াজ্জিন গ্রেপ্তার
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।