কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ফের বাংলাদেশে মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্র সরকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-র মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের সাম্প্রতিকতম সরবরাহটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশী জনগণের জীবন রক্ষায়, জরুরি স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে এবং কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি স্বাস্থ্য সহায়তা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী পেশাজীবীসহ অন্যান্য সম্মুখসারির কর্মীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামসহ রোগীর শরীরের অক্সিজেন মাত্রা নিরূপণ করার যন্ত্র অক্সিমিটার রয়েছে। এই যন্ত্র ব্যবহার করে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা সহজেই নিরূপণ করা যাবে, ফলে তাদেরকে দ্রুত উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেছেন, "বিগত ৫০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। বর্তমান সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের সাথে থেকে এই মহামারি মোকাবিলায় লড়াই চালিয়ে যাব।"
আরও পড়ুন: চীন সরকারের দেয়া দ্বিতীয় ধাপের মেডিকেল সরঞ্জাম ঢাকায়
এর আগে, গত ৩ জুন, হোয়াইট হাউজ এই মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮০ মিলিয়ন আমেরিকান ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরাসরি ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে এশিয়ার জন্য বরাদ্দকৃত ৭ মিলিয়ন ডোজ রয়েছে।
এছাড়াও এই মাসে ইউএসএআইডি আরও ২ বার বিমানযোগে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। যার মধ্যে একটিতে বাংলাদেশের কোভিড মোকাবিলা প্রচেষ্টায় সহায়তার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের পাঠানো ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছিল। এই সরবরাহগুলো সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে মহামারির কারণে তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের চলমান প্রচেষ্টাকে সমৃদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র মহামারির শুরু থেকে বাংলাদেশে মহামারি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং এই কাজে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এখন পর্যন্ত উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা হিসেবে ইউএসএআইডি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ ডিওডি, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে ৮৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা করেছে। যার মধ্যে ২ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের সাম্প্রতিক জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই সহায়তা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার সামর্থ্য ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়াও কোভিড-১৯ রোগ ব্যবস্থাপনা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ চর্চাগুলো জোরদার করা, সরবরাহ ব্যবস্থা ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটানো, সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করছে যারা তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসাধারণের জ্ঞান বৃদ্ধিতে কাজে লাগছে।
আরও পড়ুন: চীনের ‘করোনাভ্যাক’ ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ
এছাড়াও বাংলাদেশকে কোভিড মোকাবিলায় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা সর্বাধুনিক ১০০টি ভেন্টিলেটর এবং বাংলাদেশ যাতে নিজেরাই ভেন্টিলেটর উত্পাদন করতে পারে সে লক্ষ্যে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গ্যাস অ্যানালাইজার দিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কয়েক লাখ ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই, কেএন৯৫ সার্জিকেল মাস্ক, ফেস শিল্ড বা মুখের বর্ম, হ্যাজমেট স্যুট, পুরো শরীর ঢাকার গাউন, মেডিকেল-গ্রেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার্জিকেল গ্লাভস, মেডিকেল গগলস) সংগ্রহ করে চিকিৎসা কেন্দ্র, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রথম সাড়াদানকারী ও শুল্ক পরিদর্শকদের মাঝে বিতরণ করেছে এবং বাংলাদেশব্যাপী কোভিড-১৯ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত হাজার হাজার চিকিৎসক ও অন্যান্য সম্মুখসারির কর্মীদের সেবার মান বাড়াতে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনায় বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩২ লাখ
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এই সহায়তাগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দেওয়া ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি স্বাস্থ্য সহায়তার সাথে যুক্ত হলো এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মানসম্মত, জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত হলো।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর. মিলার, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমেরিকা মি. তৌফিক ইসলাম শাতিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব-ইআরডি কবির আহমেদ, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার উপ পরিচালক ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মইনুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।