বৃহস্পতিবার দুপুরে ভার্চুয়াল একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এবং স্থানীয়ভাবে ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দ্বারা বিদেশফেরত কর্মীদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে নগদ এই অর্থ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
ব্র্র্যাক জানায়, ইতোমধ্যে এক হাজার ৫৪৫ জন বিদেশফেরত কর্মীর কাছে ৬১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাকী পাঁচ হাজার ৭০৫ জনের যাচাই-বাছাই চলছে। তারাও দ্রুততম সময়ের মধ্যে জরুরি এ অর্থ-সহায়তা পাবেন।
ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থায়ন, রয়েল ড্যানিশ দূতাবাস, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম-ব্র্যাকের যৌথভাবে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্প, চিলড্রেন ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ফাউন্ডেশন (সিফ) এবং ব্র্যাক ইউকে’র সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নগদ এই অর্থ প্রদান করা হচ্ছে।
মূলত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, লিবিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসকল শ্রমিক ফেরত এসেছেন তারা এ সহায়তা পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের টাঙ্গাইল জেলা রিইন্টিগ্রেশন সেন্টার (ডিআরএসসি) থেকে যুক্ত হয়ে সিঙ্গাপুর ফেরত কর্মী রাশেদুল হাসান রুমী বলেন, ‘আমি সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। কোম্পানির সাথে আরও ২ বছরের চুক্তি থাকলেও করোনা মহামারির কারণে কোম্পানির কাজ কমে আসে। তাই কোম্পানি ছুটি কাটানোর ঘোষণা দিয়ে আমাকে দেশে ফেরত পাঠায়। এখন পুরোপুরি বেকার। পরিবারের চারজন সদস্য আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল।’
সিরাজগঞ্জের শওকত হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালের এপ্রিলে চার লাখ টাকা খরচ করে ব্রুনাই যাই। চীনের নাগরিকদের সাথে কাজ করতাম। করোনাভাইরাসের কারণে ১৯ ফেব্রুয়ারী আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন আর্থিক অনটনের মধ্যে আছি।’
নরসিংদীর হোসেন মিয়া বলেন, ‘২০১৭ সালে ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। ২০২০ সালের ৭ মার্চ ছুটিতে দেশে চলে আসতে বাধ্য হই। ২৭ মে ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে যেতে পারছি না। এখন কোনো আয় না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছি।’
কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরতদের জরুরি সহায়তা কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন দৃশ্যমান কোনো সহায়তা যা সরাসরি কাজে লাগতে পারে। ব্রাকের নগদ অর্থ সহায়তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। সরকার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিদেশফেরতদের দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, ঢাকার ড্যানিশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন রেফিকা হেইতা, ব্র্যাকের সিনিয়র ডিরেক্টর কে এ এম মোর্শেদসহ অন্যান্যরা।