প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলাধুলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলার উন্নয়নে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।’
শনিবার (৫ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শহীদ শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া সংস্কৃতি ও খেলাধুলাকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশের ছেলে-মেয়েরা যাতে খেলাধুলায় আরও আগ্রহী হতে পারে তাই প্রতি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ও হকির মতো বিভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ১০ ব্যক্তি ও ২ সংগঠনকে শেখ কামাল ক্রীড়া পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, দেশের ফুটবল খেলার উৎকর্ষ সাধনে শেখ কামাল বিশেষভাবে অবদান রেখেছেন।
শেখ হাসিনা জানান, তার ভাই কামাল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
কামাল স্পন্দন ব্যান্ড দল গঠন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি জানান, তার ভাই ইলেকট্রিক অর্গানের মতো আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন লোকগানকে জনপ্রিয় করেছেন।
কামালের অভিনয় দক্ষতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি নাটকেও ভালো অভিনয় করতেন।
কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা অত্যন্ত শক্তিশালী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে তার নেতা হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না।’
ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার ভাই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আজ শেখ কামাল বেঁচে থাকলে হয়তো আমাকে এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না!
তিনি বলেন, স্থানীয় খেলোয়াড়রা সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সুনাম বয়ে আনছে।
আরও পড়ুন: শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে বিশেষ ডাকটিকিট প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী
দেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত পাশে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকার অন্যান্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে স্থানীয় ক্রীড়াকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বেসরকারি খাতকে স্থানীয় প্রতিভার সন্ধান করতে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন এরাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং দেশের গৌরব ও সুনাম বৃদ্ধি করবে।’
এসময় ‘শেখ কামাল: ক্ষণজন্মা এক নক্ষত্র’ শিরোনামের একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া বৃত্তি’ বিতরণ করেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন এই বৃত্তি দিচ্ছে।
মোট ৫০০ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ১২ হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা এবং একাদশ শ্রেণি থেকে অনার্স স্তরের শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ২৪ হাজার টাকা, অর্থাৎ প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: দক্ষ প্রযুক্তি-সচেতন জনশক্তি গড়ে তুলুন: স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সকে প্রধানমন্ত্রী
একই অনুষ্ঠানে তিনি ক্রীড়াঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদাপূর্ণ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কার-২০২৩ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং যুব ও ক্রীড়া সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন কিংবদন্তি হকি খেলোয়াড় ও বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের প্রথম অধিনায়ক আবদুস সাদেক এবং নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামালের জীবনের উপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।