পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি শুধু জাতিগত নির্মূলের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণই নয়, বরং ‘মুক্ত বিশ্বের নেতাদের এবং মানবাধিকার, মানবিক আইন এবং সমস্ত নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রবক্তাদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় শক্তির মাধ্যমে করা গণহত্যাও’।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ মোটেও যুদ্ধ নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি বর্বর ও সম্মিলিত শাস্তি এবং নিরপরাধ বন্দি নারী-পুরুষ এবং বিশেষ করে শিশুদের হত্যা করা, যারা যুদ্ধ করতে পারে না।’
শনিবার (১১ নভেম্বর) সৌদি আরবের রিয়াদে অষ্টম বিশেষ ইসলামিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে যৌথ আরব-ইসলামিক অসাধারণ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোমেন বলেন, এই যুদ্ধ শহর ও জনপদ এবং একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করছে। পরিকল্পিতভাবে একটি দখল করা স্থানের জনগণকে তাদের খাদ্য, বাসস্থান, পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং অবশ্যই একটি নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে এবং এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।’
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ-এর বিখ্যাত ইহুদিবাদী লেখক আরি শাভিতের ইসরায়েলি নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা হয়তো এখনও ফিরতে পারি। দখলদারিত্বের অবসান, ইসরায়েলিদের সেটেলমেন্ট বন্ধ, ইহুদিবাদের সংস্কার, গণতন্ত্র বাঁচানো, দেশ ভাগ করা এখনও সম্ভব হতে পারে। তা না হলে, আপনারা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং প্রত্যেক ইসরায়েলির অবশ্যই বিদেশি পাসপোর্ট আছে। আপনাদের অবশ্যই বন্ধুদের বিদায় জানাতে হবে এবং সান ফ্রান্সিকো, বার্লিন বা প্যারিসে যেতে হবে।’
মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে কোনো কর্ণপাত না করেই ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের নির্বিচারে হত্যা চলছে। আমি বিশ্বাস করি এই যৌথ শীর্ষ সম্মেলন দুর্বল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নির্মম যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, বাস্তব ও প্রভাবশালী শক্তিশালী বার্তা দেবে।’
তিনি বলেন, মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি এবং অন্যান্য ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণ, জাতিগত পটভূমি এবং বিশ্বাসের মানুষ সারা বিশ্বে এই গণহত্যার প্রতিবাদ করছে। তবুও জায়নবাদীদের একটি দল পরিকল্পিত হত্যা করেই যাচ্ছে।
গত ১৬ বছর ধরে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিড়ম্বনার বিষয় হলো এক সময় নির্যাতিত ইহুদি জনগণ; যাদের ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় দিয়েছিল, তারা এখন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, পরিবার ও আশা ধ্বংস করছে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ
প্রথমত, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। এই যুদ্ধ অন্যায় এবং সব ধরনের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
ইসরায়েলকে অবশ্যই নারী ও শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবাধ, দ্রুত ও নিরাপদ সরবরাহের জন্য একটি মানবিক করিডোর খোলা রাখা দরকার।
গাজার দখলদারিত্বের ফলে নিরীহ মানুষ মৌলিক প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চিত করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের দায় বহন করা উচিত।
তৃতীয়ত, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি নেতৃত্বকে দায়বদ্ধ রাখা। নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকা ফাঁকা করে দেওয়ায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এই ধরনের কাজের শাস্তি হওয়া দরকার, যাতে গাজায় চলমান সংঘাত একেবারের জন্য শেষ হয়। সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে, যাতে মানুষ তাদের নিজ ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস শুরু করতে পারে।
আরও পড়ুন: দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী