ভাঙন
‘কুশিয়ারার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক জনপদ’
সিলেটের বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা নদী গিলে খাচ্ছে মাইলের পর মাইল জনপদ। ইতোমধ্যে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর কবরস্তান। নদী তীর রক্ষা বাঁধও রয়েছে ঝুঁকির মুখে। চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, কুশিয়ারায় ভাঙন দেখা দিলেও তা রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
ভাঙন কবলিত উপজেলার আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাঙনস্থলে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।আরও পড়ুন: কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়ল ১৬০ কেজি ওজনের বাগাড়
কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার রাজু আলম বলেন, আমরা এই এলাকায় নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই। নদীতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে আশা করি নদী তীর রক্ষা বাঁধটি বাঁচবে। কুশিয়ারার ভাঙন ঠেকাতে নদী তীর রক্ষা বাঁধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট জেলার পূর্ব-উত্তর দিকে ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার উপজেলা। বিয়ানীবাজার উপজেলার উত্তরে জকিগঞ্জ ও দক্ষিণে বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য এবং পশ্চিমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। সিলেট সদর থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। প্রাচীনকালে বিভিন্ন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলার নানা অঞ্চল। সিলেট ছিল হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত এবং বিয়ানীবাজারের পূর্ব নাম ছিল পঞ্চখণ্ড। সিলেটের প্রথম রায় বাহাদুর হরেকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর ছেলে কৃষ্ণ কিশোর পাল চৌধুরী এই অঞ্চলে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে অসংখ্য নদী বয়ে চলেছে। তার মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে সুরমা, কুশিয়ারা ও সুনাই নদী। কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক নদীতে। জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশিয়ারা নদী।
প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হিসেবে সিলেটে পরিচিত বিয়ানীবাজার। এ উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে ভারতের বরাক নদী থেকে নেমে আসা কুশিয়ারা নদী। খরস্রোতা এ নদী যেদিকেই গেছে, তীর ভেঙে হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। নদী তীর রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সর্বগ্রাসী এ নদীর ভাঙন ঠেকাতে পারেনি।
আরও পড়ুন: সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়ন হয়ে ভাটির দিকে বয়ে গেছে কুশিয়ারা নদী। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে ভাঙছে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর। ইতোমধ্যে ভাঙনে নতীগর্ভে চলে গেছে রাস্তা, বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের বেশি নদী তীর রক্ষা বাঁধের কয়েক স্থানে ভেঙে যাওয়া জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দফায় দফায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নদী তীর রক্ষা বাঁধ সংস্কারের দাবি জানানো হলেও তা কাজে আসেনি।
স্থানীয়রা জানান, নদী তীর রক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ব্লক কিংবা জিও ব্যাগ ফেললে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরের মিজান আহমদ বলেন, দেখতে দেখতে কুশিয়ারা নদী আমাদের এলাকার কতকিছু গিলে খেল। আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর থেকে ভাটির দিকে আমুড়া ইউনিয়ন পর্যন্ত তিন সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকের বাড়িঘরও নদীতে হারিয়ে গেছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা অন্যত্র বাড়ি করলেও নদী তীরে দাঁড়ালে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।
আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাহার উদ্দিন বলেন, গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে নদীর গতিপথ অনেক পাল্টে গেছে। যেখানে জনবসতি ছিল সেখানে আজ নদী আর যেখানে নদী ছিল সেখানে ভরাট হয়ে গেছে। আমাদের চলাচলের রাস্তা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় যাতায়াতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরফ উদ্দিন বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হলে ঝুঁকিতে থাকা বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা আর গোরস্তান নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন কষ্ট করছে, তেমনি দিনে কিংবা রাতে রোগী নিয়ে যাতায়াতও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গোবিন্দশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন, নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বর্ষাকালে ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। শুকনো মৌসুমেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ওপরে মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি
১ মাস আগে
নড়াইলে নবগঙ্গার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে রাস্তায় আশ্রয় ভুক্তভোগীদের
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুরের ফুলি বিবির সম্পত্তি বলতে ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই ‘বাড়িটিই’। সেটিও চলে গেল নবগঙ্গার পেটে।
সর্বশান্ত ফুলি বিবি যেন দুঃখের অনুভূতিও হারিয়ে ফেলেছেন। উদাসভাবে চেয়ে থাকতে থাকতে বলেন, ‘এই বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা জমিও নেই, যে সেখানে একটু মাথা গোঁজার মতো জায়গা পাব। আমার বাড়ি গিলে নিয়েছে নবগঙ্গা নদী।’
হঠাৎ আবার সচেতন হয়ে উঠেন। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘কোথায় থাকব, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন আমার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকব। আকাশের নিচে ছাড়া আমার থাকার কোনো জায়গা নেই।’
একই অবস্থা নবগঙ্গার ভাঙনের শিকার তবিবুর শেখের। তিনি বলেন, ‘আমার সারাজীনের কষ্টের ফসল আমার এই বাড়িটুকু তাও নদীতে চলে গেছে। অনেক কষ্টে আমি বাড়িটা করেছিলাম। আমার আর কিছুই থাকল না। জানি না এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব।’
বসতবাড়ি আর ও আঙিনার সবজি খেতটুকুই ছিল হাসি বেগমের সম্বল। এসব হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হাসি বেগম বলেন, ‘আমার আার কিছুই নেই সব নদীতে চলে চলে গেছে। আশ্রয় নেওয়ার মতো এখন আমার রাস্তা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নেই। রাতে ঘুম নেই ঠিকমতো খাবার নেই, কীভাবে রাত দিন পার করছি আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।’
শুধু কাঞ্চনপুর নয়, নবগঙ্গার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা, ফসলি জমি, কাঁচাপাকা ঘর, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কালিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া মাহাজন সড়ক, বসত বাড়ি, বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।
বারইপাড়া মাহাজন সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হলে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার একর ফসসি জমি, ভেসে যাবে শত শত মাছের ঘের।
কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ মুক্তার বলেন, আমরা খুবই আতঙ্কে দিন পার করছি। আমাদের এই রাস্তা যদি ভেঙে যায় তাহলে আমাদের বাড়িসহ বাকি সবগুলো বাড়ি নদীতে চলে যাবে। সেই সঙ্গে আমাদের এলাকার সব পুকুর ঘেরসহ ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। আমাদের এলাকার প্রায় সবাই এই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
আরও পড়ুন: দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ঘাটে ভাঙনে ২০ মিটার বিলীন
২ মাস আগে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে বেড়েছে ভাঙনের আতঙ্ক।
উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক ছামাদ আলী বলেন, ‘বানের পানি নামছে। পানির নিচে তলিয়ে থাকা শাক-সবজির ক্ষতি নিয়ে অনেক চিন্তিত আমরা। এর মধ্যে পানি নামার পর নদী ভাঙন হতে পারে। ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটা হারিয়েছি, এবার যে আবার কপালে কী আছে কে জানে।’
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার পর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করে। এতে বন্যার ক্ষতি দৃশ্যমান হতে শুরু হয়।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রবিবার রাত থেকে তিস্তার পানি নামতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে, পানিবন্দি ২৫০০০ পরিবার
সোমবার দুপুর ১২টায় পাউবো জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইখুল আরিফিন বলেন, তিস্তাপাড়ে বন্যায় আগাম শীতকালীন শাক-সবজির অনেক খেত তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে এসব ফসলের বেশ ক্ষতি হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হতে পারে।
এছাড়া নদীর পানি কমতে শুরু করায় ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী।
লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র,
রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী রক্ষা বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা এলাকা মনির মিয়া জানান, ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকে পড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। বাঁধের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হচ্ছে।
পাকার মাথা এলাকার বাসিন্দা নবিয়ার রহমান জানান, আকস্মিকভাবে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির ধান চালসহ সবকিছু পানির নিচে। এখন বাঁধে এসে থাকতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। তিস্তাপাড়ে পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে জনপ্রতি ১০ কেজি হারে ১৫ টন জিআরের চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বেড়েছে ১৬টি নদ-নদীর পানি, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপরে
ভারী বর্ষণে পানি বাড়ায় খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ গেট
২ মাস আগে
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টি ও উজানের ঢল কমে আসায় তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির অনেটাই উন্নতি হয়েছে। তিস্তার পানি গত ২৫ ঘণ্টায় ৩৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে নদী অববাহিকার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও তলিয়ে আছে শতশত হেক্টর জমির আমন খেত।
এসব এলাকার কৃষকরা জানান, আকস্মিক বন্যায় আমন খেত তলিয়ে থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলমান বন্যায় জেলার ৪৩১ হেক্টর জমির আমন খেতসহ অন্যান্য ফসল নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় এসব ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
অন্যদিকে পানি বাড়া-কমার সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠছে তিস্তা পাড়ের ভাঙন।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, ব্রহ্মপু্ত্রের ভাঙনে ওই ইউনিয়নের খুদির কুটি গ্রামে তার নিজের বসতভিটাসহ ৬০টি পরিবারের বসতভিটা গত তিন দিনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ওই এলাকার আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, দোতলা বিশিষ্ট বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ওই স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, পানি কমার সঙ্গে ভাঙন শুরু হলেও কোনো ব্যবস্থা নেই প্রতিরোধে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তার অববাহিকার আব্দুল মজিদ নামের একজন বলেন, ‘দুই দিনের বন্যায় আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। মরিচের আবাদ তো শেষ। এছাড়াও তিস্তা নদী ভাঙছে। আমরা খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যার পানিতে প্রায় সাড়ে ৪০০ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত। এর মধ্যে রোপা আমনের ক্ষতি কম হলেও অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘এখন সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে ভাঙন রোধে জরুরি কাজের অনুমতি না থাকার কারণে কাজ করতে পারছি না। অনুমতি পেলে ভাঙনকবলিত এলাকায় কাজ করা হবে।’
২ মাস আগে
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমে তিস্তায় তীব্র ভাঙন
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি কমতে থাকায় তিস্তায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৪০ কিলোমিটার নদীপথে ১০টি স্পটে ভাঙনের কারণে শত শত ফসলি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়েছে। বিপাকে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।
এরই মধ্যে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ২০০ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে।
রাজারহাটের ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস প্রামাণিক জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন দিনে ইউনিয়নের খিতাব খাঁ বড় দরগা, বুড়ির হাট এলাকায় ব্যাপক ভাঙনে ২০টি বাড়ির বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। সেই সঙ্গে বড় দরগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, তিস্তার ভাঙনে তার ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ, তৈয়ব খাঁ এলাকার ১৩টি বাড়ির বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনও নদী ভাঙন চলছে।
উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, তার ইউনিয়নের কর্পূরা সরদার পাড়া এলাকার ৭টি বসতভিটা ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিপাতে জাপানে বন্যা ও ভূমিধস, বাস্তুচ্যুত শত শত মানুষ
একই উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের চর গোরাইপিয়ার, চর জুয়ান সুতরা, নগরপাড়া, পশ্চিম কিশোরপুর, বামনপাড়ায় ৪৫টি পরিবারের বসতভিটা তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।
একই উপজেলার বজরা ইউনিয়নের অবস্থা সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। তিস্তার ভাঙনে এই ইউনিয়নের সাদুয়া, দামারহাট, খামার দামারহাট, সাতা লস্কর, পশ্চিম বজরা, চর বজরা এলাকায় ব্যাপক ভাঙন চলছে। এরই মধ্যে ১০০ পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, ‘আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আবেদন পেলে এক থেকে দুই বান্ডিল ঢেউটিন সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে আমাদের কাছে কোনো বরাদ্দ নেই। আগস্টে বরাদ্দ পেলে সহযোগিতা করা যাবে।’
কুড়িগ্রাম পাউবোর নিবার্হী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘কুড়িগ্রামে ১০টি স্পটে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’
আরও পড়ুন: বন্যায় কুড়িগ্রামে কৃষিতে শত কোটি টাকার ক্ষতি
৪ মাস আগে
কাজে অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
ভাঙন ঠেকাতে যমুনা নদীর বাম তীর বরাবর ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ দিয়ে নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
দীর্ঘদিন টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ, বলরামপুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকা এবং মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে ছিল।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন অনেক কষ্ট করেছেন। নিশ্চিন্তপুর একটি গ্রাম ছিল সেই গ্রাম এখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক মানুষ নিজের বাড়ি-ঘর, জমি হারিয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। আজ তাদের খুশির দিন।
এসময় বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে শুরু করে আরিচা ঘাট পর্যন্ত একটি রিংরোড করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) যমুনা পাড়ে জিও ব্যাগ দ্বারা নদী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: পাট ও চামড়া খাতে বিনিয়োগে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের প্রতি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাস্তবায়িত এই প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কেউ অনিয়ময়ে জড়িত থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, আজকে স্থায়ী বাঁধের কার্যক্রম শুরু হলো নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে। এরপর সিসি ব্লক দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের শুরু হতে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করার জন্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই বাঁধের কাজ শুরু করতে না পারা আমার একটা অপূর্ণতা ছিল। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে স্থায়ী বাঁধের কাজটা শুরু করতে পারলাম। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ মোচন হতে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, নদীর পাশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে হয়তো অনেকের জমি লাগতে পারে। যাদের জমি সরকারি কাজে লাগবে ইউএনও'র মাধ্যমে তাদের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কাউকে বাধা না দেওয়ার অনুরোধ করে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের হাইকমিশনার ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
তিনি জানান, করোনা মহাসংকটের পর ইউক্রেন-রাশিয়া এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে পণ্য পরিবহনে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় সারাবিশ্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও জানান, যার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। সরকার সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালে রাখার চেষ্টা করছে।
আহসানুল ইসলাম বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে কিন্তু কেউ অন্যায়ভাবে অতি মুনাফার লোভে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
আসন্ন রমজান মাসে চিনি-তেল এবং খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পবিত্র এই মাসে বিশ্বের সব মুসলিম দেশ পণ্যের দাম কমিয়ে দেয় আর আমরা বাড়িয়ে দেই।
এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান।
টিটু বলেন, চক্রান্ত এখনো শেষ হয়নি। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলমান রয়েছে। আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাইলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
১০ মাস আগে
দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ঘাটে ভাঙনে ২০ মিটার বিলীন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে আকস্মিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। রবিবার থেকে ভাঙন শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত ৬ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ২০ মিটার এলাকা ভাঙনে ধ্বসে গেছে।
এসময় একটি জামগাছ, একটি আমগাছ, একটি বটগাছ ও টিউবওয়েল ছিল তাও পদ্মা নদীতে ধ্বসে গেছে।
এছাড়া আশপাশ এলাকায় অনেক জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন সোমবার দুপুরে দেখা যায়, ৬ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন স্থানীয় বারেক মৃধার মুদিখানা দোকান ও পেছনে তার বাড়ি। তার দোকানের সামনে এক পাশে বিআইডব্লিউটিএর অব্যবহৃত পন্টুন নোঙর করে রাখা, অন্য পাশে রয়েছে ৬ নম্বর ফেরিঘাট।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
বেশ এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় গত বন্যায় ভাঙন রোধে ফেলানো বালুভর্তি জিওব্যাগসহ ধ্বসে পড়ছে। স্থানীয় কয়েকজন ভাঙনস্থানে রাস্তার উপরে থাকা বালুভর্তি কিছু জিওব্যাগ ফেলার চেষ্টা করেন।
এছাড়া প্রায় ৩০ ফুট এলাকা জুড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের সকলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙন পরিস্থিতি দেখতে আসেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী।
স্থানীয় সিদ্দিক কাজী পাড়ার বাসিন্দা ও মুদি দোকানী বারেক মৃধা বলেন, রবিবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ বিকট আকারে শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। স্থানীয় অনেকের সঙ্গে ভয়ে দৌড়ে নদীর পাড়ে এসে দেখি আমার দোকানের সামনের বিশাল অংশজুড়ে পদ্মায় ধ্বসে গেছে। পাশেই ৬ নম্বর ফেরি ঘাটও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বালুভর্তি জিওব্যাগ ধ্বসে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, নদী থেকে মাত্র ৮-১০ হাত দূরে আমার দোকান। দোকানের সামনে অনেক জায়গাজুড়ে ফাটল নিয়ে বিকালে আরও ভেঙে যায়। এসময় তিনটি গাছসহ টিউবওয়েল ধ্বসে নদীতে যায়।
তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দোকান, বাড়িঘর কিছুই থাকবে না।
পদ্মার পাড়ের আরেক বাসিন্দা সরোয়ার মোল্যা বলেন, সকালে ভিড় দেখে দ্রুত নদীর পাড়ে এসে দেখি প্রায় ৫০ ফুটের বেশি এলাকা ভেঙে গেছে। আমরা চাই, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীর পাড়ের মুদি দোকানসহ ১০-১২টি পরিবারের বসতভিটা কিছুই থাকবে না।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
১ বছর আগে
বলেশ্বরের ভাঙন বিলীন ১০ একর ধানি জমি
বাগেরহাটের শরণখোলায় উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা এলাকায় বলেশ্বর নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বুধবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বলেশ্বরের ভাঙনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও ব্যাপক এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরেছে। এদিকে প্রবল ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ১০ একর ধানি জমি। এছাড়া ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শতাধিক পরিবার ও কয়েকশ একর জমি।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ বেড়িবাঁধের গাবতলা এলাকায় মূল বাঁধের নিচে ১০০ ফুট এলাকার বেশকিছু সিসি-ব্লকও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
এদিকে ৩৫/১ পোল্ডারের মূল বাঁধে এমন ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন যে- খুব দ্রুত নদী শাসন না করলে, মূল বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জোয়ার ও ভাটার টানে ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
১ বছর আগে
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঝুঁকিতে গুরুত্বপূর্ণ পাগলার বাজার
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পাগলার বাজার। জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার দুর্গম নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদ্মারচর গ্রামে অবস্থিত এই জমজামট বাজারটি।
চলতি বছরের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে বাজারের দেড়শটি দোকানের মধ্যে ২২টি দোকান নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে- পদ্মারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মারচর আবাসন প্রকল্প, আবাদি জমি ও শতাধিক বসতবাড়ি।
বাজারটি রক্ষায় এলাকাবাসী, ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীগণ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
সরজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নৌঘাট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা শ্যালো নৌকায় পৌঁছানো হয় পাগলার বাজার নামক স্থানে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে ৫০টি বাড়ি বিলীন
সেখানে গিয়ে দেখা যায় বাজারটির ভাঙন কবলিত দুর্দশা। বাজারের উত্তর-পশ্চিম ঘেঁষে ২২টি দোকানের স্থানটি নদীতে ধ্বসে পরেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি দোকান।
বাজারের ইজারাদার শাহাজুল হক জানান, ২০১২ সালে বাজারটি স্থাপন করা হয়। প্রথমে এমপির বাজার নামকরণ করা হলেও একজন অচেনা পাগলের আবির্ভাবের পর এর নাম হয়ে যায় পাগলার বাজার। এই বাজারের আশে পাশে কোন বাজার নেই। উত্তরে ৫ কিলোমিটার নৌপথে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা নারায়ণপুর বাজার।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণে রয়েছে ১০ কিলোমিটার নৌপথে যাত্রাপুর বাজার। এখানকার ১০টি চরের ২০ হাজার মানুষের কেনাকাটার জন্য রয়েছে একমাত্র এই বাজারটি। এটি ভেঙে গেলে বাজারের দেড়শ ব্যবসায়ী পরে যাবে চরম বিপদে। দুর্গম এলাকা জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে কোন কাজ করতে চায় না। আমরা বাজার, স্কুল ও আবাসনটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মানববন্ধন ও সমাবেশ আয়োজন করেছি।
বাজারের ব্যবসায়ী মানিক হোসেন ডাক্তার, জাহেদুল ইসলাম ও রফিকুল মাস্টার জানান, আমাদের পদ্মারচরটি প্রায় ৭০ বছরের পুরনো চর। এখানে প্রায় ২ হাজার ৬০০ পরিবারের বসবাস। এছাড়াও পাশেই রয়েছে ঝুনকারচর, দেবারী খোলা, পয়াস্তি ঝুনকা, অস্টআশির চর, রলাকাটা, বারোবিশ, নারায়ণপুর, মোল্লাপাড়া, ব্যাপারীর চর ও শান্তিয়ার চর। এসব চরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ক্রয়-বিক্রয় করে এই বাজার থেকে। এই বাজার ভেঙে গেলে ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতা ভীষণ বিপদে পরে যাবে।
এই বাজারের অরছব আলী, দুলাল, বুলু ও আলী হোসেন জানান, কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর। চরবাসীদের জীবন-জীবিকার সাথে হাট-বাজারগুলোর অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। জেলার দুর্গম ব্রহ্মপুত্র নদের ভেতরে স্থানীয়দের উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাগলার বাজারটি আশপাশের ১০টি চরের মানুষের একমাত্র ক্রয়-বিক্রয় ও সময় কাটানোর জায়গা। বিকাল হলেই লোকজন এক কাপ চা আর গল্প করার জন্য এখানে ছুটে আসেন। এছাড়াও সপ্তাহে হাট বসে শুক্রবার ও সোমবার। হাটটি বিলিন হলে বিপদে পড়বে ২০ হাজার মানুষ।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি। পাগলার বাজারে ভাঙনের কথা আমরা জানতে পারলাম। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আরও পড়ুন: রূপসায় নদী ভাঙন, ৫২৫ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে এলাকাবাসী
১ বছর আগে
ভিসা নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঙন ধরবে না: সালমান এফ রহমান
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভাঙন করবে না।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আইসিইউআরপি সম্মেলনে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সালমান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বাজারে সাড়ে ১৫ শতাংশ প্রতিযোগিতামূলক কর দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশি পণ্য। ওই বাজারে বাংলাদেশ কোনো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতারাই ভিসানীতিতে ফেঁসে গেছেন: খাদ্যমন্ত্রী
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের মতো যুক্তরাষ্ট্র জিএসপির মতো কোনো বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশকে দেয় না।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় মার্কিন ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন সালমান।তিনি বলেন, এই নীতির লক্ষ্য কেবল বাধাই নয়, নির্বাচনের সময় সহিংসতার ঘটনাও পর্যবেক্ষণ করা।
আরও পড়ুন: বিএনপির ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ করা উচিত: ওবায়দুল কাদের
১ বছর আগে