বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় এলাকা থেকে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোচা রবিবার উপকূলে আঘাত হানতে পারে, যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার (১০০ মাইল) এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াউকপিউয়ের মধ্যে ১৭৫ কিলোমিটার (১১০ মাইল) বেগে বয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাসকারী একটি ব-দ্বীপ দেশ। দেশটি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তূত রয়েছে। শনিবার থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইমরান বলেন, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় জরুরি সহায়তার জন্য কন্ট্রোল রুম প্রস্তুত রয়েছে। তিনটি বন্দরকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার শুকনো খাবার, চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ করেছে এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অধীনে ত্রাণ কাজে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তূত করেছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: এখনো শান্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী রাজেন্দ্র কুমার জেনামানি বলেছেন, ‘এই বছর উত্তর ভারত মহাসাগরে উদ্ভূত এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড়।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি মারাত্মক এবং সম্ভবত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের লাখ লাখ জেলে ও উপকূলীয় মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
পুনে শহরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে।
কোল বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মহাসাগর উষ্ণ থাকে এবং বাতাস অনুকূল থাকে, ততক্ষণ ঘূর্ণিঝড়গুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের তীব্রতা ধরে রাখবে।’
২০০৮ সালের মে মাসে নার্গিস নামের একটি ঘূর্ণিঝড় মিয়ানমারে আঘাত হানে, যার আঘাতে ইরাবতী নদীর ব-দ্বীপের আশেপাশের জনবহুল এলাকাগুলো বিধ্বস্ত হয়ে যায়। কমপক্ষে এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যায় এবং কয়েক হাজার বাড়ি ও ভবন পানিতে ভেসে যায়।
মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগের একজন পরিচালক হ্লা তুন বলেছেন, দেমটির কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের বিষয়ে সতর্ক করেছে, তাই বাসিন্দারা প্রয়োজনীয় সরবরাহ মজুত করে রেখেছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার সংবাদপত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি প্রতিক্রিয়া মহড়া চালানো হচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যেখানে দিয়ে ঝড়টি বয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ভোলাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ঝড়টি শুক্রবার কক্সবাজারের এক হাজার কিলোমিটার (৬০০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মিয়ানমারের সিত্তওয়ে থেকে ৯৩০ কিলোমিটার (৫৮০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীভূত ছিল এবং ৯ কিলোমিটার (৫ মাইল) বেগে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।
এতে বলা হয়েছে, মৎস্যজীবী ও জাহাজকে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তারা বলেছে, এর ফলে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বের কিছু অংশে ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়গুলো এখন অনেক দিন তাদের শক্তি ধরে রাখতে পারে, যেমন ২০২০ সালে পূর্ব ভারতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান; যা একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে।
ঘূর্ণিঝড় বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষ করে যদি তারা দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে।