জনগণকে দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বিচারকদের উদ্দেশ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মামলার বিচার করতে দেরি হলে ন্যায়বিচার শব্দের ন্যায় কথাটি আস্তে আস্তে অনেক ঝাপসা হয়ে যায়। এই ঝাপসাটা হতে দিবেন না। যখন পরিষ্কার থাকে তখই যাতে মামলাটা শেষ হয়, সেই কাজটা আপনারা করবেন। সেই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াবেন। আমি জনগণের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের কাছে এটুকু অনুরোধ করছি। আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকদের সুসম্পর্ক থাকলে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে এবং বিচার বিভাগ শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার, রাজধানীর ধানমন্ডির জিনজিয়ান রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের আয়োজনে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মো. গোলাম সারওয়ারকে আইন ও বিচার বিভাগে পূর্ণাঙ্গ সচিব হিসেবে পদায়ন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার চেষ্টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম চাওয়া ছিল, জনগণকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেয়া। কারণ তিনি কখনও ন্যায়বিচার পাননি। এমনকি মৃত্যুর পরও ন্যায়বিচার পাননি। সেক্ষেত্রে আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে, বিচার বিভাগকে এমনভাবে সাজানো, যাতে বাংলাদেশের জনগণের দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার পূরণ হয়। তিনি বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দায়ের করা মামলা ভিত্তিহীন: আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিচার বিভাগের স্বার্থে আপনারা সরকারের কাছে বা রাষ্ট্রের কাছে যেটাই চাবেন, সেটা দিয়ে দেয়া হবে। বিনিময়ে দ্রুত ন্যায়বিচার চাই। তিনি বলেন, আমরা পাকিস্তান আমলে দেখেছি, ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পর দেখেছি, কোন বিচার হয়নি। এইসব হত্যার বিচার না হওয়াটা আমাদের মনে ও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। জনগণের এই রক্তক্ষরণ আপনারা বন্ধ করবেন।
আনিসুল হক বলেন, জনগণের টাকা-পয়সায় দেশ চলে, তাদের পরিশ্রমে, তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করার কারণে আমরা এই অবস্থানে আছি। তাই তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতে হবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ হলো নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের সেতু বন্ধন। এই সেতু বন্ধন যাতে আরও দৃঢ় হয়, বিচারকদের যাতে কোন অসুবিধা না থাকে, সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে, বলেন আইনমন্ত্রী।
বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে সঠিকভাবে ন্যায়বিচার দিতে পারবে-একথা তিনি যেমন বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি বিশ্বাস করেন। এমনকি জাতির পিতাও এই বিশ্বাসকে ধারণ করে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন, বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বিশ্বাস করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে চলার জন্য নেতৃস্থানীয় এবং প্রত্যেকটা পদে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা উচিৎ। তাছাড়া যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন কর্মকর্তা থাকা প্রয়োজন। মো. গোলাম সারওয়ার দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার কারণেই আইন ও বিচার বিভাগের সচিব পদে আসীন হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, যুগ্ম সচিব ও এসোসিয়েশনের মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (আ্ইন) মাহাবুবার রহমান সরকার, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব শেখ গোলাম মাহবুব, কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলেট ট্রাইব্যুনালের সদস্য- বিচার (জেলা জজ) মো. সোহেল আহমেদ, বান্দরবান জেলার জেলা ও দায়রা জজ ফজলে এলাহি ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি মশিউর রহমান, ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবর রহমান, মো. সোহেল আহমেদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে এসোসিয়েশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে, নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে: আইনমন্ত্রী