আগস্ট মাসে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য টিএসসিতে সংগ্রহ করা ত্রাণের তহবিল থেকে আট কোটি টাকা সরবরাহ করা হবে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত টিএসসিতে সংগ্রহ করা ত্রাণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, গণত্রাণ কর্মসূচিতে মোট ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা জমা হয়। সংগ্রহ করা এসব অর্থ থেকে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। বর্তমানে দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা জমা রয়েছে।
অডিট ঘোষণা করেন পি কে এফ আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী চার্টার্ড অ্যাকাউন্টের পার্টনার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অডিটর গোলাম ফজলুল কবির।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের সহায়তায় নগদ ২০ কোটি টাকা ও ত্রাণ সংগ্রহ বিএনপির
অডিট অনুযায়ী আয়ের উৎস:
নগদ প্রাপ্ত ৯ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৭২৫ টাকা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ২১৬ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রাপ্ত ৯৯ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৯ টাকা। ডলার, স্বর্ণ, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য জিনিস বিক্রি বাবদ পাওয়া যায় ৬ লাখ ৬৭ হাজার ১১০ টাকা। সর্বমোট আয় ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৮৪ হাজার ৪২০ টাকা।
ব্যয়ের খাত:
রিলিফ কেনা বাবদ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ টাকা। অন্যান্য সংগঠনকে ডোনেশন বাবদ ১২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা। পরিবহন খরচ বাবদ ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ভলান্টিয়ারদের পেছনে খরচ বাবদ ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯৭ টাকা। প্যাকেজিং পণ্য কেনা বাবদ ১১ লাখ ২৪ হাজার ৯৪০ টাকা। অন্যান্য খরচ ৩ হাজার ১২০ টাকা।
এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে মোট ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে ৯ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩ টাকা।
এ বিষয়ে অডিটর গোলাম ফজলুল কবির বলেন, ‘আমাদের গত ১০ সেপ্টেম্বর অডিটের জন্য ডাকা হয় যা আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ করি। সব মিলিয়ে ২০ দিন সময় লেগেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বিশেষ প্রয়োজনে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছিল। পরে অফিসিয়াল যৌথ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে ট্রান্সফার করা হয়। এছাড়া ২ লাখ টাকার কয়েন আমাদের হিসাব করতে হয়, এরপর স্ক্র্যাপ, স্বর্ণ বিক্রি করেও অর্থ পাওয়া যায়। যা পরে যোগ হয়। আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ করতেই মূলত হিসাব দিতে দেরি হয়েছে।’
আয়-ব্যয়ে গড়মিল ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কিছু খুঁজে পাইনি যেটা নিয়ে প্রশ্ন করব। তাদের আয়-ব্যয় হিসাব স্বচ্ছ ছিল।’
সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমরা তহবিলের এই অর্থ সরকারের ত্রাণ মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেব। এর মধ্যে ৮ কোটি টাকা পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় করা হবে আর এর বাইরে যে টাকা সেটা দিয়ে উত্তরবঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গত ৪ তারিখ ত্রাণ কার্যক্রম স্থগিত করার পরও তহবিলে টাকা যুক্ত হয়েছে। কিছু চেক যেগুলো শুরুতে কোনো কারণে ক্যাশ করা যায়নি সেগুলো পরে ক্যাশ করা হয়েছে। যেমন আমাদের প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট ছিল না। সেকারণে চেকগুলো ব্যবহার করা যায়নি। কিন্তু পরে যখন অ্যাকাউন্ট করা হয় তখন সেগুলো ব্যবহার করা যায়। এজন্য আমাদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব করতে একটু সময় লেগেছে।’
হিসাব প্রকাশে দেরির বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য হিসাব প্রকাশে সময় নেওয়া হয়েছে। খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়ের হিসাব এখানে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের অনেকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছিল সেগুলোও এই হিসাবের আওতায় আনা হয়েছে। এই ২০ দিনে প্রতিটি দোকানে কখন কত টাকার জিনিস কেনা হয়েছে, কোথায় কত টাকার জিনিস দেওয়া হয়েছে, ভলান্টিয়ারদের পেছনে কত খরচ হয়েছিল, কতটি কয়েন ছিল, কত টাকার গহনা ছিল সব উঠে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটা টাকাও এদিক সেদিক হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এতদিন অনেক সমালোচনা শুনলেও প্রতিক্রিয়া দেখাইনি কেবল আজকের এই দিনের অপেক্ষায়।’
উত্তরবঙ্গের বন্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুধু খসড়া-দলিল পত্রে নয় এর স্থায়ী সমাধান চাই।’
আরও পড়ুন: বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: ত্রাণ উপদেষ্টা