গাজায় গণহত্যা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও প্রচারের মাধ্যমে জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক সম্প্রচার সংস্থা ডয়েচে ভেলেকে মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশন বাংলাদেশের সম্মেলন কক্ষে 'অনগ্রসর, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকের তথ্য অধিকার' বিষয়ক কর্মশালায় এ আহ্বান জানান তিনি।
তথ্য কমিশন বাংলাদেশ, ইউএস এইড, দি কার্টার সেন্টার যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানবাধিকার নিয়ে ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে কিছুদিন আগে গৃহযুদ্ধ মোকাবিলা করা দেশ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা হয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে যে কোনো সংস্থার অঙ্গীকারের প্রশংসা করি আমি। ডয়েচে ভেলে যদি মানবাধিকারের প্রতি এত অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে সেটির প্রমাণ দিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গণহত্যা হচ্ছে সেটার ওপর প্রামাণ্যচিত্র বানিয়ে মানবাধিকারের প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রমাণ করুক। একইসঙ্গে তাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটাও তারা প্রমাণ করুক।’
সেটি করতে না পারলে বাংলাদেশকে নিয়ে ডয়েচে ভেলের প্রামাণ্যচিত্র একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রামাণ্যচিত্র হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন এম এ আরাফাত।
তিনি বলেন, ‘একটা বিশেষ মহল বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি করেছে। যারা প্রকৃত অর্থে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের সমস্যা এবং তাদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলে না। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে খাটো করে দেখানোর যে অপচেষ্টা করে, তারই অংশ হিসেবে এই প্রামাণ্যচিত্র বানানো হয়েছে।’
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার প্রমাণ করে। জনগণের তথ্য চাওয়ার অধিকার এ আইন নিশ্চিত করেছে। যারা তথ্য নেবেন তারা অনেক সময় এ তথ্যের যথাযথ ব্যবহার করেন না। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে অধিকার চর্চা করতে গিয়ে অনেক সময় অনধিকার চর্চা হয়ে যায়।
তথ্যকে শক্তি উল্লেখ করে এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, অপতথ্য সাধারণ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। আর সঠিক তথ্য মানুষকে ক্ষমতায়িত করে। এ কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে অপতথ্য রোধে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, তথ্য অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়া স্মার্ট সমাজ অসম্ভব, টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। পরিবেশ-প্রতিবেশ মাথায় রেখে সকল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত অর্থে টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট সমাজ তৈরি হবে। একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি বলেই টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট অর্জনে আমরা এগোতে পারছি।
প্রধান তথ্য কমিশনার ডক্টর আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন দি কার্টার সেন্টারের চিফ অব পার্টি সুমনা সুলতানা মাহমুদা।
বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন।
আরও ছিলেন- সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, ইউএস এইডের অফিস পরিচালক অ্যালেনা তানসে, তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক, তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি এবং তথ্য কমিশনের সচিব জুবাইদা নাসরীন।
পরে প্রতিমন্ত্রী তথ্য কমিশনের তথ্য অধিকার নিউজ লেটার-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।