হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও তার দুই মেয়েকে শুক্রবার দেশ ছাড়ার সময় বাধা দিয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাবা ইমরান শরীফ ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরিকোকে তার মেয়েদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেয়।
ইউএনবিকে ইমরান বলেন, ‘এরিকো তাদের মেয়েদের নিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিমানবন্দরে পৌঁছেছি এবং আদালতের কপি দেখিয়েছি। যেখানে আদেশ জারি করা আছে যে দুই মেয়ের দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাসরিন নামে এক নারী এরিকোকে সাহায্য করেন। বিপদ টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।’
২ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মেয়েদের নিয়ে বিদেশে যাওয়ার আদেশ চেয়ে এরিকোর আবেদন খারিজ করে দেয়।
১৭ মে এরিকোর কৌঁসুলি শিশির মনির তার মক্কেলকে দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
আবেদন সূত্র বলছে, এরিকো তার মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশে অনেক দিন কাটিয়েছেন এবং জাপানে ছুটি কাটাতে বিদেশে যেতে চান।
একই সময়ে এরিকো তাদের দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না মানার জন্য ইমরানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে আবেদন জানান।
পরে ইমরান তার দুই সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়ার জন্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ করে এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনও দায়ের করেন।
১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ পারিবারিক আদালতে ইমরান ও এরিকোর দুই সন্তানের হেফাজতে নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
এই সময়ের মধ্যে, মেয়েরা বাংলাদেশে তাদের মায়ের সঙ্গে থাকবে বলে আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আর ইমরান তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারলেও দেশ ছাড়তে পারবে না।
আপিল বিভাগের আদেশে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে মেয়ে দুটি মায়ের হেফাজতে রয়েছে। তবে তাদের বাবা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন যে ইমরান ও এরিকোর জাপানে জন্ম নেয়া মেয়েরা বাবার কাছে থাকবে।
আদালত নির্দেশ দেন, মা ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়েদের আলাদাভাবে ১০ দিন করে বছরে তিনবার দেখা করতে পারবেন। এজন্য তার যাতায়াত ও থাকার খরচ বহন করতে হবে ইমরানকে।
গত ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো।
বিয়ের ১২ বছর পর গত বছরের ১৮ জানুয়ারি বৈবাহিক বিরোধের জেরে ধরে চিকিৎসক এরিকো ইঞ্জিনিয়ার ইমরানের কাছে তালাকের আবেদন করেন।
২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি তাদের তিন সন্তানের হেফাজতের জন্য টোকিও পারিবারিক আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন।
কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি জাপান থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ইমরান। এরপর জাপানের একটি আদালত শিশুদের তাদের মায়ের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।
গত ১৯ আগস্ট এরিকো দুই মেয়েকে হেফাজতে চেয়ে এখানে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।