পাশাপাশি, ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর রুটি-রুজি বন্ধের চক্রান্ত ‘বর্জ্যের টেন্ডার’ বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাফনের কাপড় পরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ হুমকি দেন তারা।
এসময় ময়লার টেন্ডার বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুতি জানান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: ঝুঁকির মধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আরও তিন দেশের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, ঢাকার বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি শুধু নির্ধারিত কনটেইনার থেকে ল্যান্ডফিলে ময়লা অপসারণের কাজ করছে। তাদের যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বাসা বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শুধুমাত্র শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ঝাড়ু দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
তাদের সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের পিডব্লিউসিএসপির প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাগরিকদের বাসা বাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে পৌঁছে দেয়। এজন্য শুধুমাত্র সেবা মূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিতাম। যা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অফিস ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো, বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঢাকা দুই সিটির ৮,০০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই নেত্রী বলেন, তবে আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য নগরবাসী তাদের হোল্ডিং করের সাথে মোট করের ২ শতাংশ বর্জ্যের জন্য দিয়ে থাকেন। তার সাথে আবার নতুন করে ১০০ টাকা ধার্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজের সাথে জড়িত ছিল তারা এখন কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কায় রয়েছে।
লাকী বলেন, এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। এতে দক্ষিণ সিটিতে আমাদের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেকার হয়েছে। তারা এখন কর্ম হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হচ্ছে। ময়লা সংগ্রহে এই সেবামূলক পুরো কাজ এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টেন্ডারে দেয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাধর কাউন্সিলর বা ঠিকাদারদের লোকজন সেই ১০০ টাকার পরিবর্তে কোথাও কোথাও ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। সিটি করপোরেশন কৌশলে তাদের কাউন্সিলরদের হাতে এই সেবামূলক কাজকে ব্যবসায় রূপান্তর করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দিয়েছে। এতে যেমন অতিরিক্ত করের চাপে পড়েছে নগরববাসী ঠিক একইভাবে এই করোনাকালে কর্ম হারাতে বসেছে আমাদের বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
দুই মেয়রের আচরণে হতবাক হওয়ার কথা জানান তিনি।
আগামী সাত দিনের মধ্যে টেন্ডার বাতিল করে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ও প্রত্যয়ন ফিরিরে না দিলে নগরীর বাসা বাড়ির ময়লা নেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শাহজালালে স্বর্ণের বারসহ ৩ পরিচ্ছন্নতাকর্মী আটক
তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন পিডব্লিউসিএসপিকে প্রয়াত মেয়র মো. আনিসুল হক ২০১৫ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওয়ার্ড ভিত্তিক সকল সংগঠনকে একত্রিত করে ময়লা নিয়ে কাজ করার জন্য এই ফাউন্ডেশনকে প্রত্যয়ন দেয়ার ক্ষমতা দেন।
কিন্তু প্রয়াত মেয়রের সেই উদ্যোগকে ধ্বংস করে ১৯ হাজার বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হরণ করে শুধু কাউন্সিলরদের ব্যবসার জন্য এখন ময়লা সংগ্রহের কাজকে টেন্ডারে দেয়া হচ্ছে, দাবি করেন নাহিদ আক্তার লাকী।