দক্ষিণ এশীয় টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটর কাউন্সিলের (এসএটিআরসি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনব্যাপী ২৪তম এসএটিআরসি সম্মেলনের প্রথম দিনে চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা হয়।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও ইরানসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৯টি দেশের টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক রেগুলেটরি সংস্থার প্রধান, টেলিকম অপারেটরস, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ ১০০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আরও পড়ুন: ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ পেলো টিআরএনবি
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উক্ত বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি’র মহাসচিব মি. জনাব মাসানোরি কন্ডো বলেন, এসএটিআরসি এর ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন যথাযথভাবে আয়োজনের জন্য বিটিআরসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সদস্য দেশসমূহের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের পাশাপাশি ভবিষ্যত লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
সৃজনশীল ও বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি প্লাটফর্ম তৈরিতে সদস্যসমূহকে সম্মিলিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সদস্য দেশসমূহ পারস্পারিক ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলার তথা- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি বাস্তবায়নে সদসদেশসমূহকে সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
কমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথোরিটি অব ইরানের পরিচালক আলী রেজা দরবিশি বলেন, পরিবর্তিত প্রযুক্তির যুগে ডিজিটাল রুপান্তর একটি বাস্তবতা এবং টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যত গঠনের অন্যতম।
ডিজিটাল কানেক্টিভিটি বাস্তবায়নে সদস্য দেশসমূহের মধ্য পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময়, বহুপক্ষীয় সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যত গঠনে টেলিযোগাযোগ খাতের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রণোদনার পাশাপাশি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার যুগে জনকল্যাণমূলক আইসিটি রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণে পলিসি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসএটিআরসি সদস্য দেশসমূহের মধ্যে জ্ঞান বিনিময়, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, টেলিযোগাযোগ খাতের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও টেসকই ডিজিটাল অবকাঠামো বাস্তবায়ন, টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন, টেলিযোগাযোগ খাতে পলিসি গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুবিধা গ্রহণের জন্য তরুণদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকায় দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি নিশ্চিতে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, তিন দিনের সম্মেলনে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশসমূহের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের বিকাশমান রুপান্তরে ক্ষেত্রে এসএটিআরসি’র এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ১৯৯৮ সালে কম্পিউটার প্রযুক্তির ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়ায় মাধ্যমে কম্পিউটার প্রযুক্তির ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হয়।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির বিস্তারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে: টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আফগানিস্তান টেলিকম রেগুলেটরি অথোরিটি (এআরটিএ) এর চেয়ারম্যান জনাব এস বরাত শাহ নাদিম, কমিউনিকেশন অথোরিটি অব মালদ্বীপ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ইলিয়াস আহমেদ, নেপাল টেলিকমিউনিকেশন অথোরিটি এর চেয়ারম্যান জনাব পুরুষোত্তম খানাল, পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথোরিটি এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ আপনার রেহমান, টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন অব শ্রীলংকা এর মহাপরিচালক জনাব দেলানা মধুশাঙ্ক দিসানায়েকে, কমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথোরিটি অব ইরানের পরিচালক আলিরেজা দরবেশ, টেলিকম রেগুলেটরি অথোরিটি অব ইন্ডিয়া এর সচিব ভি রঘুনন্দন, ভূটান ইনফো কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া অথোরিটি’র পরিচালক জনাব জিগমে ওয়াংডি।
সম্মেলনে এসএটিআরসি এর সহযোগী সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ, বাংলালিংক ডিজিটাল, গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, জিএসএমএ (হংকং), হুয়াইয়ে টেকনোলজিস, টেলিনর এশিয়া, টেলিনর পাকিস্তান, ইনমারসেট সিংগাপুর, আইটিইউ-এপিটি ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া, নোকিয়া সলিউশনস এন্ড নেটওয়ার্কস ইন্ডিয়া এবং থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিকস এন্ড কম্পিউটার টেকনোলজি সেন্টার সম্মেলনে অংগ্রহণ করেছে।
প্রথম দিনে নিয়ন্ত্রকদের গোলটেবিল বৈঠক: টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপ এবং উদ্ভাবন শীর্ষক দুটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আফগানিস্তান, ভূটান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করে নিজ নিজ দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
আগামীকাল নিয়ন্ত্রক-শিল্প সংলাপ: ভবিষ্যতের জন্য বর্ণালী শীর্ষক দুটি ডায়ালগসহ চারটি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে রেগুলেটরি প্রধানগণসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।
তিনদিন ব্যাপী এ সম্মেলনে মোট ৯টি সেশনে টেকসই ডিজিটাল ভবিষ্যত, ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে প্রবেশ ও গুণগত মান, ডিজিটাল অন্তর্ভূক্তি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা, স্যাটেলাইট ও টেরিস্ট্রিয়াল সেবায় তরঙ্গ ব্যবহার ও ৫জি প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ও কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে।
সদস্য দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতি বছর এ কাউন্সিলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসির জরুরি টিম গঠন