মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাইভে এসে নগরবাসীর প্রশ্নের মুখোমুখি হন তিনি। আলাপচারিতার সঞ্চালক ছিলেন অভিনেতা ফেরদৌস। তিনি সংযোগ ঘটিয়েছেন জনতার সাথে মেয়রের এই #জনতার_মুখোমুখি_নগরসেবক কর্মসূচির। মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, প্রতিমাসের ১ তারিখেই তিনি এমন লাইভ কর্মসূচিতে আসবেন, সরাসরি কথা বলবেন নগরবাসীর সাথে।
পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে পদক্ষেপ কী? ডেঙ্গু মশা বাড়ছে কেন? রিকশা নিয়ে কী ভাবছেন? বস্তির উন্নয়ন কীভাবে হবে? বেওয়ারিশ কুকুরগুলো কীভাবে বাঁচবে? খাল উদ্ধার হবে কী? এমন হাজারো প্রশ্ন নগরবাসীর। এক-দুই নয় রীতিমতো সাড়ে তিন হাজার প্রশ্ন কিংবা মন্তব্য এসেছে পৌনে দুই ঘণ্টার আলোচনায়। ধৈর্য ধরে পৌনে দুই ঘণ্টা লাইভে থেকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মো. আতিকুল ইসলাম।
কোনোটায় নগরবাসীর ভুল ধারণা ভাঙিয়ে দিয়েছেন। আবার তাৎক্ষণিক প্রতিশ্রুতিতে সমাধান দিয়েছেন, কোনোটির জন্য সময় চেয়েছেন। আবার কোনোটির জন্য চেয়েছেন নগরবাসীর সহযোগিতা। সবাইকে নিয়ে সবার ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মেয়র বলেছেন, আমি নগরবাসীকে সম্পৃক্ত করেই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ‘আমি নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু নগরবাসী সকলেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
ঢাকাকে কীভাবে পরিচ্ছন্ন নগরী করা হবে দর্শকের করা প্রশ্নের উত্তরের শুরুতেই মেয়র আতিকুল ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ স্লোগানটিকে সামনে আনেন।
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন উত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম ও প্রয়াত মেয়রের কথা। তার নেয়া কিছু উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন। তবে মেয়র বলেন, শহর ঢাকা এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে, কাজগুলো থেকে সুফল পাওয়া কষ্টসাধ্য। আঙ্গুল তুললেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দিকেই।
‘রাজউক নগরে বড় বড় ভবন করেছে কিন্তু এসব ভবনে সৃষ্ট ময়লা কোথায় ফেলা হবে সে ব্যবস্থা করেনি।’
মেয়র জানান, অটোমেশনে যাচ্ছে নগর পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রোড সুইপার কেনা হয়েছে।
প্রশ্ন এসেছিল খাল উদ্ধার ও দখলমুক্ত রাখার। মেয়র শেয়ার করলেন খাল পরিষ্কার করেত যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। একটি খালের ভেতর থেকে ২০০ ট্রাক ডাবের খোসা উঠানো হয়েছে। ৩৩টি জাজিম পাওয়া গেছে, উঠে এসেছে নষ্ট ফ্রিজ, টিভি। বললেন, এগুলো নগরবাসীই ফেলেছে। সুতরাং খাল উদ্ধার যেমন প্রয়োজন, তেমনি তা রক্ষণাবেক্ষণে নগরবাসীর সচেতনতাও জরুরি।
নগরের ময়লাকে কীভাবে সম্পদে পরিনত করা যায় সে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বর্জ্যবিদ্যুত উতপাদনের উদ্যোগের কথা জানালেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। রাজধানীর আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে এই বর্জ্যবিদ্যুত প্ল্যান্ট হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
খালগুলো দখলমুক্ত করার প্রশ্নে মেয়র বলেন, জনগণের শক্তি, প্রধানমন্ত্রীর শক্তি নিয়ে তিনি এসব দখলকারী পেশিশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। জানালেন, খালমুক্ত করে দুইপাশে ওয়াকওয়ে করে দেয়া হবে। গাছ লাগানো হবে। ৫ জনের হীনস্বার্থের কারণে ৫০০ জন কষ্ট পেতে পারে না, বলেন মেয়র।
এডিস মশা নিধন প্রশ্নে মেয়রের উত্তর- স্বাস্থ্য জনগণের মৌলিক অধিকার এ বিষয়ে প্রশ্নে আমি আনন্দিত। গতবছর দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এই মশার প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ে। আমরা অনেক প্রিয় নগরবাসীকে হারিয়েছি। তখন আমি সময় চেয়েছিলাম এবং এ বছর আমরা মশার লার্ভা ধ্বংসে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। তাতে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ততটা ছড়াতে পারেনি। তবে মেয়র সেই উদাহরণও সামনে আনলেন, যাতে তিনি এক ধনাঢ্য পরিবারের কথা তুলে ধরেন। বাড়ির সামনে যেমন ছিলো ঝকঝকে দামি দামি গাড়ি, পেছনটা ছিল ততোধিকই নোংরা, এডিস মশার আবাসস্থল।
‘তিনদিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন’ সিটি করপোরেশনের এই স্লোগান মেনে চলতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তবে করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে ফোর্থ জেনারেশন ওষুধের ব্যবহার, লার্ভিসাইড, এডাল্টিসাইড ব্যবহারের কথা জানিয়ে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মেয়র এসময় জানান, তিনি দায়িত্ব নিয়ে দেখেছেন ২২ বছর ধরে মশা নিধনে একই ওষুধ ব্যবহার করেছে সিটি করপোরেশন। আর তা সরবরাহ করে আসছিল মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আমরা সে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে পেরেছি,’ বলেন মেয়র আতিকুল।
সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন নিয়ে প্রাণিপ্রেমিদের উদ্বেগের বিষয়ে নিজে সহমর্মিতা প্রকাশ করে মেয়র আতিকুল বলেন, পশু-পাখি ও গাছের প্রতি তারও প্রেম রয়েছে। নগরে যারা পশুপালন করেন এমন অনেককে ডেকে পরামর্শ করে, রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে কিভাবে সুরক্ষা দেয়া যায় তার উপায় বের করা হয়েছে। কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ যার একটি অন্যতম পথ।
তিনি স্পষ্ট করে ঘোষণা দেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে একটি কুকুরও মেরে ফেলা হবে না।
নগরে মাথার উপর ঝুলে থাকা তার অপসারণ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এ ব্যাপারে আমার সোজাসাপ্টা কথা, যারা তার লাগিয়েছে তারাই খুলে নেবে।
সড়কগুলো ট্রাকের দখলে থাকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সড়কগুলো ট্রাকের দখলমুক্ত করা একটা যুদ্ধ। নগর এতটাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে যে এগুলো রাখার জায়গাও নেই। তবে এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন গুরুত্বের সাথে দেখছে ও সমাধান করবে, কথা দেন মো. আতিকুল ইসলাম।
বস্তিবাসীর জন্য নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে মেয়র জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বস্তিগুলোতে হাইরাইজ ভবন গড়ে তুলে সেগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
লাইভ অনুষ্ঠানে মেয়র জনগণের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।