সাজা থেকে খালাস চেয়ে আসামিদের করা পৃথক আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও বিচারপতি এসএম আব্দুল মবিনের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়।
আদালত রায়ে বলে, শুধু প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অবহেলাজনিত অপরাধ প্রমাণিত হয় না। এ ক্ষেত্রে যে অবহেলা হয়েছে তা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে পূরণযোগ্য। আর শিশুটির বাবার করা এক রিট মামলায় হাইকোর্ট ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় দিয়েছে এবং সেই টাকা ইতোমধ্যে তিনি পেয়েছেন। এ অবস্থায় আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআরের মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ওরফে শফিকুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। সেই সাথে তাদের ২ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। বাকি দুই আসামি খালাস পান। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিতরা।
রায়ের পর আসামি পক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘হাইকোর্ট চার আসামির দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়নি। তাই তাদের সবাইকেই খালাস দিয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আমিনুল ইসলাম জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল বিভাগে আপিল করবেন।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শাহজাহানপুরে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ২৭ ডিসেম্বর বিকালে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত জিহাদের বাবা নাসির ফকির শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
অন্যদিকে, জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিট করেন। পরে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শিশু জিহাদের পরিবারকে ৯০ দিনের মধ্যে ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা দিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এরপর দুই কর্তৃপক্ষ জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেয়।