পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে স্থানীয় সম্প্রদায়, সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এই আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সইয়ের ২৭ বছর পরও শান্তি অর্জিত হয়নি স্বীকার করে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহ্বান জানান তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. নাসিমুল গণি রচিত 'আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭: বাংলাদেশের অসমাপ্ত শান্তি বিনির্মাণ মডেল' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় ইন্টিগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল হাফিজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
উপদেষ্টা হোসেন ছোট ছোট বিষয়কে বড় ধরনের সংঘাতে পরিণত হওয়া থেকে রোধ করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মৌলিক শ্রদ্ধাবোধ ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি সেখানে মৌলিক শ্রদ্ধাবোধ ও বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠা করতে পারি, আমি মনে করি, ছোট ছোট ইস্যুতে বড় সংঘাত থাকবে না।
এই ভূমিতে শান্তি ফিরে পেতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উপদেষ্টা বলেন, তাদের স্বতন্ত্র গোষ্ঠীকেও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, সমান অধিকার এবং সমানভাবে সম্মান করতে হবে।
হোসেন অবশ্য মনে করেন, বিশেষ করে সন্দেহের মধ্যে এত বছর পাশাপাশি থাকার পর এর সমাধান (অবিশ্বাস) সহজ নয়।
তিনি বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন সন্দেহের মধ্যে পরস্পর পাশাপাশি বসবাস করেছি। প্রথম দিকে তা না থাকলেও দ্রুতই তা বেড়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, এ ভূখণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ‘তাদের সংস্কৃতিকে আমাদের সম্মান করতে হবে। এটা আমাদের একটা বৈচিত্র্য। আমাদের এটা (এই বৈচিত্র্য) মেনে নিতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে যেখানে আমরা একে অপরকে সম্মান করি; আমরা একে অপরের খেয়াল রাখি। শাসক কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এটি নিশ্চিত করতে হবে।’
আবদুল হাফিজ বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই ঘটুক না কেন, সীমান্তের ওপারে (ভারত ও মিয়ানমারে) বসবাসকারী একই সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
শান্তি এখনো অর্জিত হয়নি উল্লেখ করে আব্দুল হাফিজ বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ও পরামর্শ একই সঙ্গে চলতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শান্তি প্রক্রিয়ার সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, তারা বইটিতে চিহ্নিত পরিবর্তনগুলে মোকাবিলা করতে এবং এই অঞ্চলে একটি টেকসই শান্তি প্রচারের জন্য সরকারি সংস্থা, সুরক্ষা বাহিনী এবং বেসামরিক সমাজের মধ্যে আরও আলোচনাকে উৎসাহিত করে।
বইটির লেখক নাসিমুল গণি শান্তিচুক্তি সইয়ের আগে ও পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেন এবং চুক্তির শক্তিশালী ও দুর্বল উভয় দিক বিশ্লেষণ করেন।
হাফিজ বলেন, বইটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি রাজনৈতিক মাত্রা রয়েছে, কারণ মানুষ রাজনৈতিক পরিচয় চায়।
হাফিজ বলেন, এর একটি অর্থনৈতিক মাত্রা রয়েছে এবং একটি জাতিগত-ধর্মীয় মাত্রাও রয়েছে। যখন সেখানে বিদ্রোহ ও পাল্টা বিদ্রোহ রয়েছে এবং জমির মালিকানা নিয়ে এর গভীর সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে সই করা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বয়ে আনবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে চুক্তি সইয়ের ২৭ বছর পরও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা স্থিতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা দেখছি না।’