পার্বত্য চট্টগ্রাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে দুই বছর লাগতে পারে: বীর বাহাদুর উশৈ সিং
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি স্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এতে আরও ‘এক থেকে দুই বছর’ সময় লাগতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উশৈ সিং বলেন, ‘কেউ বা অনেকে বলেন যে শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। আমি মনে করি, পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি এটি সত্যি। আবার শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছ এটাও সত্য। বাকি ধারাগুলো পর্যবেক্ষণের শক্তিশালী জাতীয় কমিটি আছে। যেটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।’ এই কমিটিকে সহযোগিতা করে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর: সরকার চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে বলে আশাবাদী পাহাড়ি নেতারা
তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিটি মূলত দেখছে কোথায় ধীরগতি, বাধা রয়েছে। এসব সমাধান করে এগিয়ে যাচ্ছে কমিটি। যতটুকু বাকি আছে আমরা সবাই আন্তরিক হলে সমাধান করতে পারব।’
তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার কারণে দুই পক্ষ মিলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। বিষয়টিকে মন্ত্রী বিশ্বে প্রথম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট থেকেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়। যারা আন্দোলন করছিলেন তাদের যত সমস্যা সেগুলো শোনার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার কারণে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকটি বৈঠক হয়েছে জাতীয় কমিটির। এই দীর্ঘ সমস্যার সমাধানে আমরা একটি জায়গায় পৌঁছে সক্ষম হয়েছি।’
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
উশৈ সিং ইউএনবিকে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তার আন্তরিকতা, মমত্ববোধের কারণেই পার্বত্য এলাকা বর্তমান অবস্থায় এসেছে।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে দুই বছরও লাগতে পারে, আবার এক বছরও। আমরা চাচ্ছি কম সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে। এটিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন কোন কোন বিষয়ে হয়নি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে ভূমির বিষয়টি রয়েছে। এছাড়াও টুকিটাকি কিছু বিষয় আছে। তবে ভূমিই প্রধান। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, আমাদের আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বসেছিল। আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। আর কিছুটা বাকি আছে, আলোচনা করলে হয়তো বা এগিয়ে যেতে পারব, এই সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থানীয় কিছু সমস্যা সম্প্রতি হচ্ছে, ‘এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো অশান্তি চাই না। কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটছে, কিছু গ্রুপ আছে, চাঁদাবাজি আছে- এসব বিষয়ে মানুষের কোনো জানমালের ক্ষতি না হয় এ বিষয়ে আমরা খুবই সজাগ আছি। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের সমস্যা আমরা চাই না। সকল মানুষকে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী থাক আমরা তাই চাই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৩২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ
ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি: বিশিষ্ট নাগরিকরা বলছেন প্রত্যাশা অপূর্ণ রয়ে গেছে
প্রত্যাশা এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে উল্লেখ করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সকল প্রতিশ্রুতি পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে সই করেন। এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর। কিন্তু এখনও এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্কের শেষ হয়নি। এখনও মধ্যে অশান্ত পার্বত্য অঞ্চল। প্রতিনিয়ত ঘটছে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি।
চুক্তি সইয়ের ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পাহাড়িদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানান অভিযোগ।
তাদের অভিযোগ, চুক্তির মূল ধারাগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। হয়নি ভূমি সমস্যার সমাধান। পাহাড়ে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। রয়েছে নানা হতাশা ও বঞ্চনা।
আর পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তিতে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তৎকালীন শান্তি বাহিনীর আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর পক্ষে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি আজ
রাঙামাটি সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে শান্তিচুক্তির পক্ষের নিরীহ মানুষদের খুন, অপহরণ করে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজন পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা অনূকুল পরিবেশ এবং এখানকার মানুষের ভিতরে একটা সমঝোতার আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।
দীপংকর তালুকদার বলেন, শান্তিচুক্তির স্বপক্ষের সকল শক্তি সম্মেলিতভাবে কাজ করার একটা পরিবেশ তৈরি করা হলো প্রধান শর্ত। কিন্তু আমরা কি দেখছি, শান্তিচুক্তির একটা পক্ষ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তিন পার্বত্য জেলায় উঠে পড়ে লেগেছে। আজ পর্যন্ত এই শান্তিচুক্তির ২৫ বছরে অবৈধ অস্ত্রধারীদের হাতে যারা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে আসছে, তাদের হাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া অন্যকোন রাজনৈতিক দলের কোন কর্মী নিহত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তাহলে আওয়ামী লীগকে যদি নিশ্চিহ্ন করতে চায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যদি হত্যা করে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে এটা তো আমরা মনে করছি বোকার সঙ্গে বসবাস।
তিনি বলেন, শান্তিচুক্তি সই করে দুই পক্ষের ভেতরে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে; এটা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে পক্ষে বড় অন্তরায়। আমরা হতাশ না হয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবো, অস্ত্র হাতে নিবো এই ধরনের স্লোগান না দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা চাই যে সমস্ত অবাস্তবায়িত শর্ত ও ধারাগুলো আছে এগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।
তিনি আরও বলেন, এখনো দেখছি তাদের নৈরাজ্যমূলক আচরণ, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা, শান্তিচুক্তির পক্ষের শক্তিকে দুর্বল করা, গুলি করে মানুষ হত্যা করা; এইভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব নয়। শান্তিচুক্তি যারা সই করেছে, শান্তিচুক্তি যারা মানে; তাদের পক্ষে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যারা শান্তিচুক্তি মানে না, শান্তিচুক্তি বিরোধিতা করে, তাদের পক্ষে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই আস্থা ও বিশ্বাস রেখে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের সমস্যা কোনও দিনও সমাধান হবেনা।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য সমস্যা, কিন্তু প্রধান অন্তরায় নয়। প্রধান অন্তরায় হলো আমাদের মধ্যে আর সরকারের মধ্যে একটা বুঝাবুঝির অভাব। তাই এটার কারণে শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের কি ভাবনা সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার। সরকার যে ভাবে যাচ্ছেন সেভাবে যাবেন, নাকি যথাযথ রাস্তায় আসবেন। ঠিক ট্র্যাকে আসবেন, না ভুল ট্র্যাকে যাবেন। ভুল ট্র্যাকে গেলে তো সমাধান হবে না।
তিনি বলেন, সরকার যত সময়ক্ষেপণ করবে, ততই দলবাজি হবে, নানা অস্ত্রবাজি হবে, নানান চাঁদাবাজি হবে, আরও দল গজিয়ে উঠবে। তখন শান্তিচুক্তি পূর্ণবাস্তবায়ন আরও জটিল আকার ধারণ করবে। তাই আমরা চাই সরকার শান্তি চুক্তি যেসব ধারা অবাস্তবায়িত হয়ে আছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনুক।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য মিজ নিরূপা দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিতে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা তো প্রত্যেক বছরই বলছি। কিন্তু আমাদের প্রাপ্তির প্রত্যাশা যতটুকু ছিল, সেটা প্রায়ই পূরণ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মূল লক্ষ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তিনি বলেন, যে কোন দেশের সংবিধানে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার ও মত প্রকাশের অধিকার থাকে। কিন্তু আমাদের পার্বত্য এলাকার মানুষেরা এখানে তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছে না।
এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজি মজিবুব রহমান বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছরে এসেও পাহাড়ে জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টসহ (কেএনএফ) একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে। চলছে অস্ত্রের মহড়া, মহোৎসবে চলছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুম, খুন ও অপহরণ। তাদের হাতে পাহাড়ি-বাঙালি সকলে জিম্মি।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির শর্তানুযায়ী পাহাড় থেকে একটি ব্রিগেডসহ ২৩৮টি নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে ৩০টি বিভাগ ও বান্দরবান জেলা পরিষদে ২৮টি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চুক্তি করার সময় বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে তাদের অ-উপজাতি আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধায় উপজাতীয়দের নানা অগ্রাধিকার শর্তযুক্ত করে বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় নানা সুবিধা নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো বাংলাদেশের চেতনা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও উন্নয়ন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা দেশি-বিদেশি ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ যে শান্তির আশা করেছিল, মানুষের সে আশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হলে চুক্তি সইকারী দু’পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
পাহাড়ের বিরাজমান সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ও জনসংহতি সমিতি দু’পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষের।
এদিকে, শান্তিচুক্তি ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া শান্তি চুক্তি সইকারী অন্যতম সংগঠন জনসংহতি সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পের স্থলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তিন জেলায় তিনটি এপিবিএন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করে পর্যায়ক্রমে পুলিশ ক্যাম্পের বিস্তৃতি বাড়ানো হবে। এপিবিএনের সদর দপ্তর হবে রাঙামাটিতে। আর পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে র্যাবসহ আরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।’
বুধবার (২৫ মে) রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃংখলা সংক্রান্ত বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈ সিং এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, খাগড়াছড়ি জেলার সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ মামুন, ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসকগণসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: যারা নিয়ম মানবে তারাই মদের লাইসেন্স পাবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু
পার্বত্য চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই উৎসব শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ি বান্দরবান রাঙ্গামাটির মারমা সম্প্রদায় অত্যন্ত আনন্দ-উল্লাসে সাংগ্রাই উৎসব পালন করছে। পুরনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ উপলক্ষে মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে সুপ্রাচীন কাল থেকে।
মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পরে মারমা উন্নয়ন সংসদ ও মারমা যুব কল্যাণ সংসদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পানখাইয়া পাড়ায় এসে শেষ হয়।
আরও পড়ুন: নদীতে ফুল উৎসর্গের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসব শুরু
এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশিরুল হক ভূঁইয়া, সেনা বাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জিটুআই মেজর জাহিদ হাসান, পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী ও পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাজারো নারী-পুরুষের অংশগ্রহনে মারমা নৃগোষ্ঠীর মানুষের বর্ণিল পোষাকে বৈচিত্র্য ও বর্ণাঢ্যতা ছিল দেখার মতো। এরপর মারমাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকলা পরিবেশিত হয়।
পরে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা আয়োজন
রাঙামাটিতে ৫ দিনব্যাপী বৈসাবি মেলা আয়োজন
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু- বিষু (যা বৈসাবি নামেই বেশি পরিচিত) উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপি মেলা ও উৎসব শুরু হয়েছে।
সোমবার বিকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তন প্রাঙ্গনে যৌথভাবে বৈসাবি মেলার উদ্বোধন করেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ব্রিগেড কমান্ডার ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড ব্রি, জে, মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন, এনডিসি, পিএসসি, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক রেমলিয়না পাংখোয়া।
আরও পড়ুন: বড়দিন: রাঙামাটির খ্রিস্টান পল্লীতে উৎসবের আমেজ
পার্বত্যাঞ্চলের শান্তিতেও তারা খুশি নয়: তথ্যমন্ত্রী
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর (ইউএনবি)- তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সোমবার বলেছেন, দেশের শান্তি ও উন্নয়নে যারা খুশি নয়, পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিতেও তারা খুশি নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে খালি সেনাক্যাম্পে পুলিশ, বিজিবি মোতায়েন হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিত্যক্ত সেনাক্যাম্পগুলোতে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি: পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনও ‘অধরা’
তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মধ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। দেশের পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন কারণেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এ চুক্তি।
রাঙ্গামাটিতে নতুন করে এক ফার্মাসিস্টসহ ৫৬ জনের করোনা শনাক্ত
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার এক স্বাস্থ্যকর্মী করোনা শনাক্ত করা হয়েছে।