জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দরজায় কড়া নাড়ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের তৎপরতা যেন ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাচ্ছেন ভোট।
এসব প্রতিশ্রুতি, প্যানেল গঠন ও নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিন সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শেখ সাদী (ছাত্রদল), আরিফুজ্জামান উজ্জল (বাগছাস), আরিফ উল্লাহ (ছাত্রশিবির)। তিনজন প্রার্থীকে নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
শেখ সাদীর বাবার নাম আবু বক্কর সিদ্দিক এবং মা শেফালী বেগম। তিনি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বড়দহ হরিরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাকাইহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নাকাইহাট কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। শেখ সাদী হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তিনি অন্যতম অগ্রনায়ক হিসাবে কাজ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন শেখ সাদী। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সম্মানের শিখরে নিয়ে যেতে চান বলে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি নয়, বরং তারা পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এবারের জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হিসাবে মনোনীত সাদী বলেন, এবারের জাকসু নির্বাচনে আমরা ভালো ফলাফল আশা করছি। বিগত দিনগুলোর মতো শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে ছাত্রদল। সেইসঙ্গে নব্বইয়ের গৌরব ধরে রাখবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
দলীয় প্যানেল নির্বাচনে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে একটি পদের জন্য একাধিক করে যোগ্য প্রার্থী ছিল। ফলে আমরা সময় নিয়ে অভ্যন্তরীণ ভোটাভোটির মাধ্যমে সৎ, যোগ্য, মেধাবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে যারা সব সময় সোচ্চার ছিলো এবং সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের প্যানেল গঠন করা হয়েছে।’
নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য দলীয় কোনো উৎস থেকে অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এ নির্বাচনের জন্য কোনো ধরনের অর্থ বরাদ্দ পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশনের প্রণীত নীতিমালায় যে অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী নিজেরাই নির্বাচনী ব্যয় বহন করছি।’
সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন তাদের ভোট দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সাদী বলেন, আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু খুনি হাসিনার পতন পরবর্তী সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো— আমরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রায় ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের ফ্রী ‘হেপাটাইটিস বি’ ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের আওতায় এনেছি।
এই কাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকারের করা উচিত থাকলেও সেটি জাবি ছাত্রদল একক সংগঠন হিসেবে করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা
এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের জন্য মেয়েদের নাইট টুর্নামেন্ট আয়োজন, দুর্ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে গতিসীমা বিলবোর্ড লাগানোসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার্থে গাছে গাছ পাখিদের আবাসস্থল স্থাপন করেছেন বলে জানান সাদী।
এর বাইরেও বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকার দাবি করেন। এ বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সমর্থন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রচারণায় শিক্ষার্থীদের সাড়া পাওয়া নিয়ে তিনি জানান, আমরা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে যখন শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, তখন তাদের কাছ থেকে আমরা অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের সবর উপস্থিতি থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই আমাদের জানেন, এমনকি আমাদের ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। আমাদের অনুষদ ও বিভাগগুলোতে নিয়ম করে প্রচারণা চালাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি, সবাই সবার জায়গা থেকে আমাদের সহযোগিতা করছেন। আমাদের সিনিয়ররাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন। আশা করি আমরা শেষ পর্যন্ত এমন একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ পাবো এবং প্রশাসন একটা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবেন এমনটাই বিশ্বাস রাখি।’
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা সন্তোষজনক। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এই দিক থেকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা। এখানে কোনো ঝামেলা নেই। এখানে আমরা সব দলের প্রার্থীরা সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা চালাচ্ছি। আর নির্দিষ্ট একটা গন্ডির মধ্যে হওয়ায় বহিরাগত প্রবেশের সুযোগও কম। তবে ছুটির দিনগুলোতে কিছু লোক ঘুরতে আসে, এই ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কি কি কাজ করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে সবার আগে আমি তিনটি কাজ করব। প্রথমত, শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা (খাবারের মান, স্বাস্থ্য সেবা, যাতায়াতসহ এ ধরণের সকল সমস্যা) সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ও গবেষণায় কাঠামোগত মান উন্নয়ন। তৃতীয়ত, অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন নিশ্চিত করা।
সাদী আরও বলেন, ‘জাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য জাকসু সেল ও শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য আলাদা শিক্ষার্থী সেল গঠন করব। এমনকি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার শেষের দিকে ক্যারিয়ার কেন্দ্রীক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করব, যাতে তারা হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়েন।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জাকসু নির্বাচন কমিশনার।